Friday, December 23, 2016

জলের সংকট

গত দুসপ্তাহ ভারতের নানান শহরে চরকির মতন ঘুরছি। আশঙ্কা ছিল ডিমনেটাইজেশনের বাজারে, ক্যাশ সংকটে ভুগিতে হইবে। কিন্ত তেমন কিছু হল না-বরং দেখলাম কোলকাতা বাদ দিলে, অন্য মেট্রোগুলোতে ক্যাশ ছাড়া বাঁচা সম্পূর্ন সম্ভব। অন্তত ট্রাভেলারদের পক্ষে।

কিন্ত যেটা আশংকাজনক বলে মনে হল-সেটা হচ্ছে সারফেস ওয়াটার রিজার্ভ। নদী, নালা, পুকুর-ভারতের সর্বত্র যাতা অবস্থা। এটা জানা ছিল গত ত্রিশ বছরে ভারতে নদীর জল ধারন ক্ষমতা কমেছে ৫৪%। আমারত দেখে শুনে মনে হচ্ছে ওটা ৯০% এর কাছাকাছি হবে।

ব্যাঙ্গালোর থেকে মাদুরাই গেলাম একদম আমেরিকান কোয়ালিটির এক্সপ্রেস ওয়েতে। পথে কাবেরী থেকে আরো কিছু নদীনালা। কোত্থাও কোন জল নেই।

কালনার কাছে গঙ্গা বড়াবর অনেকটা ঘুরলাম মটর সাইকেলে। চারিদিকে চড়া গজিয়েছে। ছোটবেলায় দেখতাম কালনা ভর্তি থাকত পুকুরে। এখন প্রতিটা পুকুরকে ইচ্ছা করে মজাচ্ছে তাদের মালিকরা। যাতে চড়াদামে বেচতে পারে। কারনে শহরে আর কোন জমি নেই।

পুনে শহরের বুকচিরে আছে অনেক নদী, ক্যানাল। কোথাও জল নেই। জলের স্তর নেমে গেছে আশঙ্কা জনক ভাবে। পুনে শহরে জলের সংকট বেশ তীব্র।

ব্যঙ্গালোরের লাইফ-লাইন অনেকগুলো লেক। একটা সেন্সর প্রোজেক্টের কর্মসূত্রে শহরের মধ্যের একটা লেকে গেলাম -নামটা বোধ হয় বেলান্দুর লেক। জলের অবস্থা বেশ খারাপ। শুনলাম ব্যাঙ্গালোরের প্রায় কুড়িটা ছোটবড় লেক বোঁজানো হয়েছে।

এত যা দেখছি ভারতে উন্নয়নের নামে আত্মহত্যা চলছে। চারিদিকে ঝকমকে মল। রাস্তাঘাট ভাল হচ্ছে। হাই রাইজ উঠছে। কিন্ত নদী, নালা জলের সোর্সগুলোকে যেভাবে হত্যা করা হচ্ছে, তাতে আর জাস্ট দশ বছর বাদে অধিকাংশ শহরে পানীয় জলের সাপ্লাইএর তীব্র সংকট দেখা দেবে। দিতে বাধ্য।

পৃথিবীতে মানব সভ্যতার ইতিহাসে, পরিবেশ ধ্বংশ করে ফুটে যাওয়ার লিস্টিটা ছোট না।

পরিবেশ নিয়ে চিন্তাভাবনা আছে। মোদি সরকার দেখছি ঠুটো জগন্নাথ পল্যুউশন বোর্ডকে একটু হলেও নাড়িয়েছে। ২৩০০ কোম্পানীর কাছে ক্লোজার নোটিশ গেছে। কালনা শহরেও শুনলাম, তৃনমূল এসে পুকুর বোঁজানো বন্ধ করেছে, যা সিপিএম আমলে ছিল বেশ র‍্যামপ্যান্ট। সবটাই শোনা কথা যদিও। এগুলো আশার কথা। আমি আশাবাদি।

ডিমনেটাইজশনের ফলে আশা করি জমি, বাড়ির উদ্ভট দাম ধ্বসে যাবে। এগুলো হলে হাই রাইজ তোলা বন্ধ হবে। ট্রাম্প বাবাজি যদি আউটসোর্সিং এ কার্পেট বম্বিং করে, তাহলে ব্যাঙ্গালোরের বাকি লেকগুলো অন্তত খাসি হওয়ার হাত থেকে বাঁচবে।

কখনো সখনো মনে হয়, এই উন্নতি না হলেই হয়ত দেশটা বেঁচে যেত।

Sunday, November 27, 2016

নির্মোহ দৃষ্টিতে ফিদেল ক্যাস্ত্রো

Blog link :  http://biplabbangla.blogspot.com/2016/11/blog-post_27.html

কমিনিউজম এবং ধর্ম, দুটোই দাঁড়িয়ে রূপকথা এবং তার অলীক সত্যের প্রচারের ওপরে। গুচ্ছ গুচ্ছ মিথ্যে জনগণকে খাইয়ে তৈরী হয় কমিনিউস্ট বা ধর্মীয় প্রফেটদের বিগার দ্যান লাইফ চরিত্র।

 আমি কিউবাতে যায় নি-যাওয়ার ইচ্ছা এখনো আছে ষোলআনা, বিশেষত ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জ আমার প্রিয় টুরিস্ট ডেস্টিনেশন। আগে আমেরিকা থেকে কিউবা যাওয়া সহজ ছিল না। ইদানিং ওবামা-রাউল চুক্তির দৌলতে এখান থেকে সরাসরি হাভানা যাওয়া যাচ্ছে। তবে আমার চেনাশোনা যেসব টুরিস্ট কিউবাতে গেছে, তাদের কাছ থেকে যা শুনেছি- হাভানাতে খাবারের শর্টেজ আছে এমনকি টুরিস্টদের জন্যও। তবে বেশ্যাদের রমরমা। মাত্র দশ ডলারেও শুতে রাজী হয়ে যায় যেকোন মেয়ে। কারন সবার বাড়িতেই খাবার দাবার থেকে বেসিক জিনিসের টানাটানি। কিউবান ইমিগ্রান্টদের কথা ছেড়ে দিলাম-তারা ত কাস্ট্রোর ওপর এমনিতেই খাপ্পা তাদের জীবন এবং পরিবার ধ্বংসের জন্য।


এবং মনে রাখবেন, আমি অন্যদের কথা বলছি না। বলছি ফিদেল কাস্ত্রোর মেয়ে আলিনা ফার্নান্ডেজের কথা। যিনি ৩৭ বছর বয়সে কিউবা থেকে স্পেনে পালান (১৯৯৪)। সেখান থেকে মিয়ামিতে । এখন মিয়ামিতে এক্সাইল কিউবান রেডিও শো হোস্ট করেন। উনি লিখেছেন উনার বাবার লেগ্যাসি - Castro's Daughter: An Exile's Memoir of Cuba।

     এলিনার লেখা থেকে যে ফিদেলকে পাওয়া যায় তা অনেক বিশ্বাসযোগ্য। বাবা সম্মন্ধে খারাপ কথা কোন মেয়েই বলবে না। এলিনাও বলেন নি। শুধু তার লেখায় যে ফিদেলকে পাওয়া যায় -সেই ফিদেল কোন বাবা না- একজন আদর্শবাদি নেতা। গোটা লেখাটাই একজন কন্যা তার পিতাকে খুঁজছেন, কিন্ত ফিরে পাচ্ছেন এক নেতাকে। 
লেখাটি খুবই বিশ্বাযোগ্য যখন দেখি কাস্ত্রো তার মেয়েকে ফেমিনিজমের শিক্ষা দিচ্ছেন এই ভাবে -তোমার মায়ের মত হয়ো না। সি ইজ টু নাইস ট্যু মি। ডোন্ট বি সো নাইস ট্যু এ ম্যান! 

   এলিনার লেখা থেকে পরিস্কার ফিদেল কমিনিউস্ট আদর্শের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন নি। প্রেসিডেন্টের কন্যা বা স্ত্রী-কোন আলাদা সুবিধা পায় নি হাভানাতে। এখন কমিনিজম রাষ্ট্রের জন্য একটি ব্যর্থ রাজনৈতিক আদর্শ-সেটি অন্য প্রশ্ন।

  এবার আসা যাক ফিদেলকে নিয়ে গড়ে ওঠা মিথ প্রসঙ্গে। সত্যিই কি কিউবাতে চিকিৎসাব্যবস্থা এত ভাল? 

   দুদিককার বক্তব্য শুনে যেটা পরিস্কার-কিউবা অনেক বেশী ডাক্তার তৈরী করতে সমর্থ হয়েছে-কিন্ত দেশে না আছে মেডিসিন, না আছে আধুনিক মেডিক্যাল ফেসিলিটি। অত্যাধুনিক ফেসিলিটি একমাত্র আছে টুরিস্ট এবং নেতাদের জন্য। সেটা ডলার কামানোর ধান্দায়। একজন সাধারন লোকের পক্ষে এন্টিবায়োটিক পাওয়া দুস্কর। কিন্ত তাও কিউবার লাইফ এক্সপেক্টেন্সি আমেরিকার থেকে ভাল। কিন্ত সেই তথ্যও কমিনিউস্ট গুপি কি না, তাই নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন [১] । 

  কিউবার খাদ্য সিকিউরিটি নিয়েও একই কথা। ৭০% খাদ্য আমদানি করতে হয়। কারন দেশের কৃষিকর্ম একদম প্রাচীন যুগের। এর একটা বড় কারন কিউবা সাসটেনেবল কৃষিতে বিশ্বাসী। কিন্ত সেটা করতে গিয়ে দেশটার খাদ্য উৎপাদন একদম তলানিতে। ইম্পোর্টই ভরসা। [২]

 ফিদেলের আগে কিউবা অনুন্নত ছিল এগুলো রূপকথা। কমিনিউস্ট বিপ্লবের আগে [৩]

  1.           কিউবার সাক্ষরতার হার ছিল ৭৮%
  2.           পার ক্যাপিটা ইনকাম ছিল উত্তর আমেরিকার মধ্যে পঞ্চম
  3.            লাইফ এক্সপেক্টেন্সিতে তৃতীয়
  4.             গাড়ী এবং টেলিফোন ওনারশিপে আমেরিকা, কানাডার পরেই ছিল কিউবা


 মোদ্দা কথা কিউবা নিয়ে বলতে উঠলে, বাঙালী বামেরা উচ্ছাসিত হয়ে ওঠেন। যদিও বাস্তব এটাই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে প্রতি মাসে কিউবানরা বোটে করে ফ্লোরিডাতে পালাচ্ছে। অন্যদিকে আমেরিকার কজন কিউবা কোন দেশ সেটা জানে কি না সন্দেহ। আর যদি বাম বাঙালীর প্রশ্ন তোলেন, তারাও ডলারের লোভে আমেরিকান এম্নাসীতেই লাইন দিয়ে থাকেন-কিউবাতে পড়াশোনা করতে গেছেন, এমন বাম বাঙালীর সন্ধান কেউ দিতে পারবে বলে মনে হয় না। কারন কিউবাতে সবা্র  ইনকাম ওই মাসে ২০ ডলার বা ১৫০০ টাকার কাছাকাছি। ওইকটা টাকার জন্য কোন বাম বাঙালী এখনো কিউবার ছাত্র হওয়ার দৌড়ে নাম লেখান নি-যদিও তারা ফিদেল এবং তার অলীক কিউবা নিয়ে ফেসবুক গরম করে থাকেন। তবে কি না অর্থ মর্হাঘ্য বস্তু-তা আদর্শবাদিদের ও ছাড়ে না। 

[১]http://www.nationalreview.com/article/432680/myth-cuban-health-care
[২]https://www.wfp.org/countries/cuba
[৩]http://www.nationalreview.com/corner/442483/cuba-castro






Friday, November 25, 2016

সুখের সন্ধানে

থ্যাঙ্কস গিভিং থেকেই আমেরিকাতে ছুটি ছুটি আবহে ঢিলেমি দিয়েই কাজ চলে। নির্বান্ধব প্রবাসে, এই ডিসেম্বর মাসটা আমার খুব প্রিয়। বাইরে সাদা বরফ। কাজের চাপ নেই। ফলে চিন্তাভাবনার অবকাশ অনেক। সাথে প্রিয় হুইক্সি থাকলে বিশ্বব্রহ্মান্ডের ভাবনা ঠেকায় কে!

আমার অনেক দিনই মনে হয় বেঁচে থাকাটা বেশ কঠিন কাজ। সেই সুকুমার রায়ের ফকিরের মতন। বাবা-মা-বৌ-বাচ্চা-প্রতিবেশী-প্রেমিকা-বস-কোম্পানী-অদ্য ফেসবুকের বন্ধু। প্রত্যাশার শেষ নেই। আর প্রত্যাশা মানেই কাজ। শুধু কাজ না-অনেক অনেক কাজ। তার মধ্যে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা। নৌকা বেশ চলছিল-হঠাৎ হঠাৎ চোরা শ্রোত, ঝড় এসব আছেই। এতকিছু ভাবার অবকাশ পেলেই আমি অবাক দাঁড়কাক। বেঁচে থাকাটা সত্যিই বিড়াম্বনা।

এমনিতে জীবনের কোন উদ্দেশ্য নেই। এই মহাবিশ্বের বয়স তের বিলিয়ান বছর। আকারে অসীম। এর মধ্যে স্থান কালের ভিত্তিতে আমরা সবাই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিন্দু। সেই রবীন্দ্রনাথ ও এক বিন্দু-এক ভিখারী যে জীবনে কিছু দিয়ে যেতে পারে নি-সেও আরেক বিন্দু। তাহলে এত খেটে লাভ কিসের? আলটিমেটলি কোনই লাভ নেই। বরং এত বাদ বিবাদে বিড়াম্বনা নিয়ে কষ্টেই বেঁচে থাকা।

সুতরাং কষ্ট নিয়ে বেঁচে থেকে লাভ নেই। বেঁচে থাকতে গেলে, আনন্দে মস্তিতে বেঁচে থাকার তাও মানে আছে। সুতরাং যেকদিন আছি, সুখের সন্ধান- পারস্যুট অব হ্যাপিনেসটাই আসল। বাকী সব কিছুই গৌন। দর্শন শাস্ত্রে এর একটা পোষাকি নাম আছে। হেডোনিজম। তবে হেডোনিজমে একটা টুইস্ট আছে। এরা মনে করে ভাব্বাদি সুখ না, বস্তুবাদি সুখ-যা সেন্সুয়াল প্লেজার থেকে আসে, সেটাই আসল। আমি অবশ্য বস্তুবাদি আর আধ্যাত্মিক-দুই ধরনের প্লেজারেই আনন্দ পাই।

সুখের সন্ধান ব্যপারটা নতুন কিছু না। আমেরিকান সংবিধানের প্রেনেতা থমাস জেফারসন ১৭৭৬ সালে স্বাধীনতার ঘোষনায়, কোন স্বর্গের সন্ধান বা অলীক জাতিয়তাবাদকে আশ্রয় করে আমেরিকার স্বাধীনতা দাবী করেন নি। সংবিধান এবং আমেরিকান রাষ্ট্রের ভিত্তি সেই পারস্যুট অব হ্যাপিনেস ।


সুতরাং কি কি জিনিস আনন্দ দেয়, তার একটা লিস্ট করা যেতে পারে। তবে যাহাই আনন্দ, তাহাই বিষাদের কারন ও বটে। সুস্বাথ্য ছাড়া কোন ভাবেই সুখী হওয়া সম্ভব না। সুতরাং স্বাস্থ্য সবার আগে। আর স্বাস্থ্য ভাল রাখা ম্যাজিক না। এর জন্যে খাটতে ত হবেই-সাথে সাথে খাওয়া দাওয়া নিয়ন্ত্রনে রাখতে হয়। অর্থাৎ কিছু কিছু সেন্সুয়াল প্লেজার না কমালে সুখী হওয়াটা বেশ কঠিন।

সুখী সুখী ভাবটা-অবশ্যই বায়োলজিক্যাল। হর্মোন এবং জেনেটিক্স প্রভাবিত। রিসার্চ বলছে সুখী থাকার ৫০% জেনেটিক্স। আমি একমত না। আমার পিতা অধিকাংশ সময় খুশীর থেকে অখুশী থাকেন বেশী। আমি কিন্ত বেশ খুশ মনেই থাকি অধিকাংশ সময়।

হার্ভাডের দীর্ঘ ৭৬ বছরের গবেষনা বলছে, সুখী থাকার সব থেকে শ্রেষ্ঠ উপায় সবার সাথে ভাল সম্পর্ক রাখা। বিশেষ করে যারা ছোটবেলায় বাবা-মায়েদের সাথে স্ট্রং বন্ডিং এর সুযোগ পেয়েছে, তারাই পরবর্তীকালে সুখী বেশী। সুতরাং একটা সুখী ফ্যামিলিই সুখী থাকার প্রথম এবং মুখ্য ধাপ।

টাকা পয়সা খরচ করেও সুখ কেনা যায়। তবে নিজের জন্য জামা কাপড় কিনে বা রেস্টুরেন্টে গিয়ে না। টাকা পয়সা যদি অন্যের দুঃখ দারিদ্র ঘোচাতে খরচ করা হয়। এটা বিবেকানন্দ রচনাবলীতে একাধিবার এসেছে। আশার কথা এই যে হার্ভাড বিজনেস স্কুলের গবেষনাও এক কথা বলছে। সুখী হতে চাইলে টাকা পয়সা দিয়ে চ্যারিটি করা অনেক বেশী কার্যকরী-নিজের পেছনে খরচ করার থেকে।

সাইক্রিয়াটিস্ট মার্টিন সেলিগ্যাম সুখী থাকার পাঁচটা ডাইমেনশন দিয়েছেন ঃ
  1. প্লেজার-খাদ্য, যৌন সুখ, আরামপ্রদ ঘুম। এর মধ্যে খাদ্য গুরুত্বপূর্ন। একাধিক স্টাডি প্রমান করেছে যারা ফল্মূল ভেজিটেবল বেশী খায়, তারা সুখী বেশী। ননভেজ খাওয়া দোষের না-কিন্ত সাথে সাথে যথেষ্ট ভেজিটেবল না খেলে বা ফল না খেলে, খাওয়ার ফলে সুখের থেকে দুঃখ বেশী হবে।
  2. এনগেজমেন্ট মডেল ঃ হাইকিং, দৌড়ানো, খেলাধূলা করা
  3. জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া-যতই ভুঁয়ো,ফলস হৌক, ধর্ম, কমিউনিজম এগুলো মানুষএর জীবনকে একটা বৃহত্তর অর্থ দেয়। ফলে এরা অনেক আপাত দুঃখেও সুখী থাকে।
  4. সাফল্য- সামনে কিছু পেশাদার বা অপেশাদার টার্গেট যাই থাকুক না-কেন-সেগুলো পূরন হলে সাময়িক সুখ আসে। এই জন্য সামনে বড় টার্গেট রাখতে নেই। ছোট ছোট ধাপ। নেক্স ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমি এই এই করব। এবং সেই ছোট ছোট কাজগুলো সাফল্যের সাথে হলেই মনে তৃপ্তি আসে।
  5. সম্পর্ক -নিঃসন্দেহে জীবনের সুখের মূল হচ্ছে বাবা মা ছেলে মেয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যের সম্পর্ক। এই সম্পর্কগুলো সুখী না হলে, সুখী জীবন অসম্ভব।

বিভিন্ন স্টাডিতে এটাও স্পষ্ট ধার্মিক লোকেরা নির্ধামিকদের থেকে মনের দিক দিয়ে বেশ কিছুটা বেশী সুখী থাকে। তবে এটাও নানান স্টাডিতে দেখা গেছে, এখানে ধার্মিক মানে যারা নামাজি, পূজারি, মন্দিরে মসজিদের যাচ্ছে-সেই টাইপের লোক না। ধার্মিক তারাই এইসব স্টাডিতে যারা ধর্মে বিশ্বাস করে নানান ধরনের চ্যারিটি করছেন কমিটেড ভাবে, মানুষের উপকারের সাথে জড়িত-তারা সাধারনত নির্ধামিকদের থেকে বেশী সুখী। আবার যেসব নির্ধামিকরা যেমন কমিনিউস্টরা ওউ একই রকম একটা জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে নিয়েছেন , সাধারন মানুষের জন্য কাজ করেন- তারাও খুশী। সুতরাং জীবনের একটা উদ্দেশ্য সেটা যাইহোক না কেন-সেটা না দাঁড় করতে পারলে, জীবনে সুখ অধরাই থেকে যাবে।

সুখই জীবনের অন্তিম লক্ষ্য এটা নিৎসে মানেন নি। তার মতে বিরাট কিছু প্রাপ্তি ভীষন কষ্ট এবং সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই আসে। এখন মোদি যেমনটা বলছেন-কালো টাকা শুন্য ভারত গড়তে জনগণকে অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হবে!

তবে যে যাই বলুক, যে যতই চাক তার ধর্ম, তার রাজনৈতিক আদর্শ পৃথিবী রাজ করবে-সেটি হবে না। কারন আস্তে আস্তে পৃথিবীব্যাপি "হ্যাপিনেস" সাবজেক্টটাকে আর সাবজেক্টিভ রাখা হচ্ছে না। অনেক গবেষনা চলছে। এতে আস্তে আস্তে অর্থনীতি , সমাজনীতি, আইন, খাদ্যভ্যাস এমন করে গড়া যাবে যাতে লোকেদের সুখের সন্ধান সহজ হয়। এই ব্যাপারে বিগ ডেটা আনালাইটিক আস্তে আস্তে স্টেজে অবতীর্ন। ফলে ধর্মের প্রভাব কমতে বাধ্য। কারন আস্তে আস্তে ধর্ম বাদ দিয়ে, সুখের সন্ধানের বিজ্ঞানই সামাজিক ও রাষ্ট্রের আইনের ভিত্তি হবে বা হতে বাধ্য।

আমি উদাহরন দিচ্ছি। যেমন ডিভোর্স আইন। হিন্দু ধর্মে ত ডিভোর্স আইনই নেই-ইসলামে যা আচ্ছে তা পুরুষকে খুশি রাখতে পারে, কিন্ত তা নারী বিদ্বেশী এবং মধ্য যুগীয়। বৃটিশ আইন ও এট ফল্ট ডিভোর্স-যা আদৌ ভাল না। অন্যদিকে কড়া টাইপের মনোগ্যামি আইনে অধিকাংশ নারী পুরুষ বিবাহিত জীবনে প্রায় জেল খানায় কাটায়। এবার পারস্যুট অব হ্যাপিনেস যদি আমাদের সমাজের সুপ্রীম অবজেক্টিভ হয়-তাহলে বিবাহ বা ডিভোর্স কিভাবে হওয়া উচিত?

এটি জটিল প্রশ্ন । কারন এই নিয়ে যথেষ্ট নৃতাত্ত্বিক গবেষনা হয় নি। ফলে এমন সব পারিবারিক আইনের আওতাই আমরা আছি, যাতে সুখের সন্ধান ত দূরের কথা, কোন রকমে ঝগড়া ঝাঁটি ছাড়া দিন গুজরান হলেই সবাই বাঁচে!

আমার ধারনা এই বিগডেটা এনালাইটিক অনেক কিছু নতুন দিশার সন্ধান দেবে স্যোশাল সায়েন্সের গবেষনাতে-যার থেকে আমরা আস্তে আস্তে বুঝতে পারব, বিবাহ ব্যাপারটা আউটডেটেড কি না-এখন যেভাবে ছেলে মেয়ে মানুষ হচ্ছে, সেটা ঠিক কি না। সেদিন এখনো আসে নি।






Thursday, October 27, 2016

বুড়িমার চকলেট বোম -অন্নপূর্ণা দাস ঃ বাঙালীর ব্যবসায়িক মানসিকতার ব্যবচ্ছেদ

বুড়িমার চকলেট বোম ছাড়া কালীপূজো, দূর্গোপূজো ?    আমরা মতন যারা আট বা নয়ের দশকে বেড়ে উঠেছি, পূজোতে বুড়িমার বোম ছিল সব থেকে বড় ব্র্যান্ড।  এই বুড়িমা কে নিয়ে কৌতুহল অনেকদিনের  -কিন্ত কোনদিন উনাকে নিয়ে কোন লেখা চোখে পড়ে নি। আজ প্রথম জানলাম উনার জীবন।  উনার সংগ্রাম। অদ্ভুত, অভূতপূর্ব বললে কম বলা হয়।

   উনার আদি বাড়ি ফরিদপুরে। অন্নপূর্ণা দাস।  ১৯৪৮ সালে উদবাস্তু হয়ে উত্তর দিনাজপুরে যখন ক্যাম্পে উঠলেন সাথে দুই ছেলে মেয়ে। স্বামী নেই। শাক সব্জি, ঘটি বাটি যা পারেন, তাই বেচে কোন রকমে সংসার চালিয়েছেন। অভুক্ত থেকেছেন অধিকাংশ সময়।

     সেই কঠিন পরিশ্রমের মধ্যেই বিড়ি বাঁধা শিখলেন সনাতন মন্ডলের কাছে। অভাবের চাপেই শিখেছিলেন কিভাবে বেচতে হয়। আস্তে আস্তে গড়ে তুললেন বিড়ি বাঁধার কারখানা।

   এরপরে বেলুড়ে মেয়ে জামাই এর কাছে এসে,  হরকুসুম গাঙ্গুলীর কাছ থেকে শিখলেন আলতা সিঁদুর বানানোর কাজ। আস্তে আস্তে অন্নপূর্ণা আলতা সিঁদুর ব্রান্ড ও তৈরী হল।

     অবশ্যই তার রাজ্যজোড়া খ্যাতি বুড়িমার চকলেট ব্রান্ডে।  এখানে তার গুরু বাজি বিশেষজ্ঞ আকবর আলি। পেয়ারীমোহন মুখুজ্যে রোডে তার তৈরী বাজির কারখানা এখন শিবকাশির বাজির সাথে পাল্লা দিচ্ছে। উনি শিবকাশিতেও কাটিয়েছেন বহুদিন বাজি তৈরী শেখার জন্য।

   যে ব্যবসাতে হাত দিয়েছেন, সোনা ফলিয়েছেন। না তার আই আই টি, আই আই এমের কোন ডিগ্রি ছিল না। ম্যাট্রিক পাশ ও না উনি। ব্যবসায়িক পরিবারে জন্ম-তাও না। নেহাত অন্ন সংস্থানের চাপে ফেরি করা শুরু। তাহলে কোন জাদুবলে সফল বুড়ি মা?

 যে কারন বিল গেটস বা মার্ক জুকারবার্গ সফল-ঠিক সেই কারনেই সফল বুড়ি মা। সোজা কোথায় ১০০% হ্যান্ডস অন। যা কিছু করেছেন-সেই তৈরী করা থেকে বেচা-নিজের হাতে। আজকাল কিছু কিছু আধুনিক ডিগ্রি সজ্জিত বাঙালী আন্তারপ্রেনারের সাথে সাক্ষাত হয়। তাদেরকে যখন তাদের নিজেদের প্রোডাক্ট নিয়েই জিজ্ঞেস করি -প্রযুক্তি থেকে বেচা-সব ব্যাপারেই দেখি, তারা কর্মচারীদের ওপর নির্ভরশীল। এরা বেশীদূর এগোবে না বলাই বাহুল্য।

 সাথে সাথে আরো একটা কথা না বললেই না। বাংলাতে "প্রোডিউসার ক্লাস" টির কোন সন্মান নেই। এই বাংলাতেই আইরন ওয়ার্ক্সের জন্য বিখ্যাত ছিল কর্মকাররা। তাঁতি, কুমোর, কর্মকার-একদা এদের দক্ষতায় বাংলার প্রোডাক্ট বিক্রি হত অন্য দেশে, অন্য রাজ্যে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, আধুনিক টেক্সটাইল কল, প্ল্যাস্টিকের উদ্ভব  এবং সাথে সাথে ক্যালকেশিয়ানদের কলোনিয়াল ক্যঙ্গোভারের দৌলতে, বাংলায় প্রডিউসার ক্লাসটিকে ইতিহাস এবং সমাজ নেহাতই অন্ত্যজ শ্রেনী হিসাবে অন্ধকূপে ফেলেছে। ফলে একজন কামার, বা কুমোর সে নিজের পেশাতে খুব সফল হলেও, তার ছেলেমেয়েকে সে নিজের পেশাতে না দিয়ে, চাকুরিজীবি করে তোলে। আমেরিকাতে গ্রামে গ্রামে এইসব প্রোডিউসার ক্লাসের লোকেরা একদা ছোট ছোট ফ্যাক্টরি গড়েছেন। চীনের হাতে মার খাওয়ার আগে, এইসব ছোট ছোট ফ্যাক্টরীগুলোই ছিল, ম্যানুফাকচারিং এর নার্ভ সেন্টার। এই ট্রান্সফর্মেশনটা পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্রেও কিছুটা দেখেছি। কিন্ত জমিদারিপ্রথা, আঁতেলেকচুয়াল এবং বামপন্থী মনোভাবের কুম্ভীপাকে ্বাঙালী প্রোডিউসার ক্লাশ প্রায় অন্তর্জলি যাত্রায়।

 ফলে বিখ্যাত বাঙালীর লিস্টে অন্নপূর্না দাসের স্থান হবে না কোথাও। সেখানে জ্বলজ্বল করবেন কথা ভেজে  খাওয়া, মাথায় আদর্শবাদি টুপি পড়া  শাসক শ্রেনীর হেগোপোঁদ চাটা বাঙালীকুশীলবরা। ঠিক সেই কারনেই বাঙালীর ভিখারিত্ব এবং মারোয়ারি শ্রেনীর দাসত্ব থেকেও মুক্তি নেই।







Saturday, October 22, 2016

বৈবাহিক জীবনের একঘেঁয়েমি-মনোগ্যামিশ সম্পর্ক

                                                                          (১)

ধরুন আপনি জানলেন, প্লেন ক্র্যাশের সম্ভাবনা ৫০%। তাহলে কি আপনি প্লেনে চড়বেন?

      কিন্ত আপনি বিয়ে করবেন-এটা জেনেও বর্তমানে যেকোন বিবাহে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার সম্ভাবনাই বেশী। আর সব ব্যর্থতাই যে ডীভোর্সে  গড়াচ্ছে- তাও না। অধিকাংশ ব্যর্থ বিবাহই রিফিউজি নিচ্ছে সেক্সলেস ম্যারেজ-অথবা ম্যারেজ অব কনভেনিয়েন্সে। শুধু ছেলেমেয়েকে মানুষ করার কারনে স্বামী স্ত্রী হিসাবে অভিনয় করে টিকে আছে অসংখ্য দম্পতি।

       এই অসুখ নতুন না। নেনা ওনিল এবং জর্জ ওনিল ১৯৭২ সালে তাদের বেস্ট সেলার "ওপেন ম্যারেজ" বইতে,  বিবাহ নামক অসুখের ব্যবচ্ছেদ করেন আদ্যপান্ত। তারা সিদ্ধান্তে আসেন-বিয়েটা সমস্যা না। মূল সমস্যা এই মনোগ্যামাস ম্যারেজের মনোটনাস  কমিটমেন্টে। উনাদের উপস্থাপনা ছিল এই যে বিবাহ বহির্ভুত যৌন জীবন মোটেও বৈবাহিক জীবনের অন্তরায় না। বরং স্বামী স্ত্রী উভয়েই যদি সজ্ঞানে তাদের পার্টনারদের নিজস্ব স্পেস দেন-তাহলে বরং অনেক বিয়ে বেঁচে যায়।  এই স্পেস দেওয়া মানে, মেনে নেওয়া  যে বৈবাহিক একঘেঁয়েমি কাটাতে তাদের পার্টনাররা "লিমিটেড" পরকিয়াতে লিপ্ত হবেন-কিন্ত সেটা তারা করবেন সংসারের প্রতি কোন অবহেলা না করেই!

    তবে ওনিল দম্পতির ওপেন ম্যারেজের ধারনা ধোপে টেকে নি-অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুল বুঝে ওপেন ম্যারেজ বলতে লোকেরা বুঝতে থাকে, এর মানে স্বামী স্ত্রী একজন থাকবে বটে-কিন্ত সেটা নেহাত সামাজিক কমিটমেন্ট। সেক্সের ক্ষেত্রে সম্পূর্ন নন-কমিটেড লাইফ স্টাইল। খুল্লাম খুল্লা পরকীয়া।

     ওপেন ম্যারেজেরও অনেক শ্রেনীবিভাগ সম্ভব। যেমন সুইঙ্গার লাইফ স্টাইল।  যেক্ষেত্রে স্বামী এবং স্ত্রী দুজনেই সম্মতি ক্রমে পার্টনার পাল্টায় যৌন উত্তেজনার খোঁজে।  আরেক ধরনের ওপেন ম্যারেজে,  স্বামী এবং স্ত্রী দুজনেই জানেন, তাদের পার্টনারের একাধিক যৌন সঙ্গী বা সঙ্গীনী আছেন-কিন্ত তারা সেই নিয়ে মাথা ঘামান না। দুজনেই দুজনকে স্পেস দিতে পছন্দ করেন।

 প্রশ্ন উঠবে যৌন উত্তেজনা বা যৌনতার মাধ্যমেই যখন সুখ খোঁজা হচ্ছে -তাহলে একসাথেই বা থাকা কেন?   এর মূল কারন অবশ্যই সন্তান পালন।  ছেলেমেয়ে মানুষ করার জন্য-কমিটেড পার্টনারশিপ দরকার। কিন্ত তার মানে কি যৌনতার ক্ষেত্রেও কমিটটেড পার্টনার হয়ে থাকতে হবে? ইমোশোনাল কমিটমেন্ট এবং সেক্সুয়াল কমিটমেন্ট কি একই সূত্রে বাঁধা?



                                                                     (২)


ওপেন ম্যারেজের ধারনা আমেরিকাতে গত অর্ধ দশক ধরে চললেও, তা মোটেও ব্যর্থ ক্লান্ত বৈবাহিক জীবনের সমাধান হয়ে উঠতে পারে নি। আমেরিকাতে খুব বেশী হলে ১-৫% নরনারী কোন না কোন সময়ে ওপেন ম্যারেজে ছিলেন। ওপেন ম্যারজে তাদের যৌন জীবন অনেক বেশী সুখী ছিল-তাই নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্ত সমস্যা এই যে -জেলাসি বা ঈর্ষার চক্করে প্রচুর পারিবারিক সমস্যা তৈরী হয়েছে-যার পরিণতি ডিভোর্স।

   এর সমাধানে সেক্সোলজিস্ট ড্যান  স্যাভেজ মনোগ্যামিশ ম্যারেজ বলে একটি নতুন ধারনা দেন ২০১০ সালে। উনি একজন সেক্সোলজিস্ট এবং সেই সূত্রে  দেখেন যে অনেক  ক্ষেত্রেই সাইক্রিয়াটিস্টরা একটু  আধটু  ম্যারিটাল ইনফিডালিটি বা পরকিয়া তার পেশেন্টদের জন্য রেকোমেন্ড করেন । ক্লিনিক্যাল সাইক্রিয়াটিস্ট মহলে, বহুদিন থেকেই কনসেনসাস এই যে  আসল সমস্যাটা মনে। দেহে অতটা না। অর্থাৎ একজন নারীর যে একাধিক যৌনসঙ্গী দরকার-সেই চাহিদাটা নেহাৎ ই মানসিক। অতটা দৈহিক না। সুতরাং বিবাহ বর্হিভুত  একটু আধটু ফ্লার্টিং, প্রেমালাপ-বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্যই দরকার।  কিন্ত দৈহিক সম্পর্কে জড়ালে, তা অবশ্যই সুখী যৌন জীবন দেবে -কিন্ত ডিভোর্সের চান্স ও বাড়বে যা ওপেন ম্যারেজের ক্ষেত্রে প্রমানিত।

 মনোগ্যামিশ ব্যপারটা এখন অনেক ম্যারেজ কাউন্সিলর রেকোমেন্ড করছেন দম্পতিদের। যারা সেক্সলেস  ম্যারেজ  ওই টাইপের ঝুলে থাকা সংসার ধর্মের বলদ হয়ে টিকে আছেন কোন রকমে।

                                                            (৩)

এবার আসল সমস্যাতে আসা যাক। বিয়ে করাটা কি প্রাসঙ্গিক ? রাষ্ট্রের দরকার সন্তান।  তার জন্যে দরকার বিবাহের। সেই কারনেই সন্তান মানুষের জন্য বাবা-মাকে একসাথে থাকতে বাধ্য করে সমাজ। সেটাকে বলে বিবাহ। ফ্রান্স বা আমেরিকাতেও একসাথে থাকা যেকোন দম্পতিকে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ দম্পতির সমান বলেই গণ্য করা হয়।  সন্তান মানুষ করা ছাড়া, দুজন নারী পুরুষের একসাথে থাকার কোন দরকার নেই। সিঙ্গল থাকলেই বরং তাদের যৌন জীবন অনেক বেশী সুখের হবে।

 কিন্ত সন্তান মানুষ করার জন্য-এই বাবা-মায়ের কনসেপ্টটাই বা এলো কোত্থেকে? রাষ্ট্র, বা সমাজ বা পেশাদার সংস্থার মাধ্যমে  কেন সন্তানের পালন পোষন সম্ভব না?

  ইনফ্যাক্ট এই চেষ্টা প্রথম হয় সোভিয়েত ইউনিউয়ানে-যার প্রথম আইডিয়া ছিল লেনিনের। লেনিন মনে করতেন, আইডিয়াল কমিউনিস্ট স্টেট এবং নারীর সমানাধিকারের জন্য "কমিউনিটি পেরেন্টহুড" জরুরী।  ১৯১৭-২২ এর মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ানে অনাধ ছেলে মেয়ের সংখ্যা ছিল ৭০ লক্ষ। এর একটা কারন অবশ্যই গৃহযুদ্ধ -অন্যকারন এই যে নভেম্বর বিপ্লবের আগুনে বিবাহ নামক পুরুষতান্ত্রিক প্রথাকেও পোড়ানো হয়।  এখন বিয়েকে উড়িয়ে দেওয়া সহজ-কিন্ত যৌন কামনাকে ত আর ওই ভাবে রিভোলোউশনারী হ্যান্ডল মেরে হস্তমৈথুনে সীমাবদ্ধ রাখা যায় না। ফলে ওই পিরিয়ডে প্রায় কুড়ি লক্ষ  পরিতক্ত্য সন্তানের জন্ম হয়েছে কুমারী মায়ের গর্ভে-কারন নতুন বিপ্লবী রাষ্ট্র বিয়েটাই তুলে দিতে চাইছিল।  এই সকল অনাথ সন্তানদের বলা হত Besprizornye বা বাস্টার্ড শব্দটির রাশিয়ান।

লেনিন এদের দ্বায়িত্ব নিতে চাইলেন-ফলে তৈরী হয় পৃথিবীর প্রথম কমিউনিটি অরফানেজ। কিন্ত প্রতিটা কমিউনিস্ট দেশে যা হয়-এখানেও তাই হল। প্রায় ৫ লাখ শিশু সন্তান এইসব অর্ফানেজে প্রথম দু বছরে মারা যায়। কারন না ছিল রিসোর্স-না ছিল কর্মীদের সদিচ্ছা। এর মধ্যে স্টালিন ক্ষমতায় এসেছেন। উনি লেনিনের মত  তাত্ত্বিক নেতা ছিলেন না । উনার পা ছিল মাটিতে। ফলে এইসব কমিউনিটি অরফানেজ বাতিল করে এই সব সন্তানদের দত্তক নিতে বাধ্য করেন স্টালিন। শুধু তাই না-১৯৩৭ সালের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ানে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক হয়-আবর্শন করতে গেলে স্পেশাল পারমিশন লাগত-এবং ডিভোর্স আইন ও কঠোর করা হয়। মোদ্দা কথা লেনিনের কমিউনিটি ভিত্তিক বিবাহ এবং সন্তান পালনের বৈপ্লবিক কর্মসূচীকে কবরে পাঠান স্টালিন যেহেতু তা অসংখ্য শিশু মৃত্যুর কারনে, রাষ্ট্রের ভিত টলিয়ে দিচ্ছিল। 

এর পরে আর কোন রাষ্ট্র কমিউনিটি পারেন্টিং নিয়ে পরীক্ষা চালায় নি। শুধু চালিয়েছিলেন গুরু রজনীশ-তার ওরেগাঁও আশ্রমে। যেখানে প্রায় ৭০০ শিশু, ওশো কমিউনিটিতে মানুষ হত। যাতে তাদের বাবা-মারা মুক্ত যৌন জীবন জাপন করতে পারে। কিন্ত সেখানেও ঈর্ষার কারনে, না তাদের ওপেন ম্যারেজ সিস্টেম সফল, না সফল হয়েছে কমিউনিটি পারেন্টিং। 

 ফলে আমরা যে তিমিরে -সেখানেই। মনোগ্যামিশ ম্যারেজই একমাত্র ভরসা!









Thursday, October 20, 2016

মমতার দ্বিতীয় টার্ম

কিছু কিছু বিপ্লব ঘটে নিঃশব্দে। যেমন এবারের রাজ্যসভা নির্বাচন। মমতার দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া, বাংলার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ন টার্নিং পয়েন্ট।  কারন এই নির্বাচনে, তৃনমূলের বিরুদ্ধে থাকা সব রাজনৈতিক বিরোধিতা কার্যত শেষ। সিপিএম সখ্যাত সলিলে । কংগ্রেস বহুদিন আগেও প্রান্তিক পার্টি ছিল-এখনো তাই। রাহুলের নেতৃত্বে বিশেষ কিছু হবার না-যদি না তারা প্রশান্ত কিশোরের মতন পেশাদার কাউকে নিয়ে আসে। কিন্ত সেখানেও গেরো-শোনা যাচ্ছে প্রশান্ত কিশোর দিদির জন্যই কাজ করতে বেশী আগ্রহী এবং দিদিও সেটাই চান! বাংলার বিজেপি একটা বিজে-মানে বিগ জোকস। লেট দেম বি!

  এই নিঃশব্দ বিপ্লব এই জন্যেই যে গত ছমাসে বাংলায় "রাজনৈতিক" ঘটনা, সংঘর্ষ বেশ কম। উস্কানিমূলক রায়োট লাগানোর চেষ্টা অব্যাহত। আমি জুলাই আগষ্টমাসে যখন কোলকাতায় ছিলাম এবং রাজারহাট, নিউটাউনে নতুন অফিস স্পেস খুঁজেছি-দেখলাম বহুপ্রজেক্ট দ্রুত গতিতে শেষ করার দিকে প্রমোটাররা অর্থাৎ তারা ধরেই নিয়েছেন কোলকাতায় এবার বহু কোম্পানী আসবে। পশ্চিম বঙ্গে গত চল্লিশ বছরে অনেক শিল্পগোষ্টিই কোন ম্যানুফাকচারিং বাড়ান নি। কারন রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশ অনূকূলে ছিল না। এখন তাদের অনেকেই বাংলায় এক্সপ্যানশনে আগ্রহী। কারন ম্যানপাওয়ার এখানে এখনো সস্তা।  পশ্চিম বঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন অন্য যেকোন রাজ্যের থেকে অনেক বেশী স্থিতিশীল।  বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নত। অনেকগুলো ওভার ব্রিজ হওয়াতে ট্রাফিকেও গতি বেশী।  তুলনামূলক ভাবে ব্যাঙ্গালোর শহরের অবস্থা দিনে দিনে আরো খারাপ হয়েছে।  ভারতের বন্ধ ক্যাপিটাল এখন ব্যাঙ্গালোর। কোলকাতা ভারত বন্ধের দিনেও বিন্দাস খোলা ছিল।

রাজনৈতিক সদিচ্ছা একটা রাজ্যকে বদলে দিতে পারে। আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে তামিলরা যেভাবে তামিল জাতিয়তাবাদি আন্দোলনের মাধ্যমে তামিলনাডুর প্রভূত উন্নতি করেছে, মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে বাঙালী জাতিয়তাবাদের উত্থানের মাধ্যমে বাংলাও সেই দিকে এগোচ্ছে।  বাঙালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী যারা না-যথা সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি-দিল্লীমুখী সব পার্টিকেই বাংলার লোকজন প্রত্যাখান করছে। এটা বহুদিন আগেই হওয়া দরকার ছিল।

  এর মধ্যেও চোরাগোপ্তা সাম্প্রদায়িক শ্রোত আছে-উস্কানি আছে উগ্র উর্দুভাষী মুসলমান এবং উত্তরভারত থেকে আগত হিন্দুদের কাছ থেকে।  এরাই দাঙ্গা বাধায়। দরকার হলে এদেরকে পার্শেল করে বিহারে পাঠানো হোক।



Thursday, October 6, 2016

সিভি রামনের পর ভারতে বিজ্ঞানে কোন নোবেল নেই

প্রতিবার এই নোবেলপক্ষে চাতকের মতন চেয়ে থাকি-কে কে জিতল-তাদের গবেষনার বিষয়টা কি-
বলতে বাধা নেই, প্রতিবারই আবিস্কার করি বিজ্ঞানের জগতে কতকিছু নতুন আবিস্কার হয়ে চলেছে-অনেক কিছুই খোঁজ রাখি নি। এবারের ফিজিক্সের নোবেল টপোলজিক্যাল ফেজ ট্রান্সিশনের ওপরে। এটা অবশ্য আমার এক অধ্যাপক বন্ধুর কাজের দৌলতে গত বছরই জেনেছিলাম। কিন্ত কেমিস্ট্রির নোবেল- আনবিক মোটরের ওপরে-এটা একদম অজানা বিষয়। পড়ে একদম হাঁ থেকে হাম্বল। কিভাবে অনু-পরমানু-ইলেকট্রনগুলি বিশ্বনাচের ছন্দে আমাদের শরীরে কোটি কোটি মোটর গড়ে তুলেছে-যার প্রভাবে কত শতকোটী শরীরবৃত্তীয় কাজ গুলি হয়ে চলেছে দিনরাত অবিরত।

প্রতিবার অপেক্ষা করি ভারত থেকে বিজ্ঞানে অন্তত কেউ নোবেল পাক। অলিম্পিকে ভারত গোল্ডমেডেল পায় না-কারন জেনেটিক গঠন, খাওয়া দাওয়া ঠিক না। বাবা-মায়েদের উৎসাহ নেই। কাঠামো নেই। জেনুইন কারন।

কিন্ত হারে--ভারতে হাইস্কুলে ত অঙ্ক, ফিজিক্স এবং কেমিস্ট্রিতে উৎসাহি ছেলের অভাব নেই। ভাল ভাল শিক্ষক প্রচুর। আই এস সি ব্যঙ্গালোর, টি আই এফ আরের মতন এত ভাল গবেষনাগার আছে। অধ্যাপকদের মাইনেও ত প্রচুর। তবুও কেন সিভি রমনের পরে, কোন নোবেল নেই ভারত থেকে? পরিকাঠামো, যথেষ্ট ভাল শিক্ষক-ছাত্র। তাহলে কি নেই ভারতে?

আমার সাথে অনেকেই একমত হবে না। কিন্ত আমি যেটা দেখছি এর কারন ভারতের স্কুলিং। বিজ্ঞানের আবিস্কার প্রবলেম সলভ করা যতটা, প্রবলেম খুজে পাওয়াও ততটা। ভারতের ছাত্ররা প্রবলেম সলভ করার ক্ষেত্রে এগিয়ে। কিন্ত প্রবলেম খুঁজে পাওয়াটার ক্ষেত্রে যোজন পিছিয়ে। এর মূল কারন ক্রিয়েটিভিটির অভাব।

ক্রিয়েটিভিটি শুধু বিজ্ঞান, অঙ্ক দিয়ে হয় না। কবিতা, আঁকা, গান, লেখা-এগুলোর মধ্যে যে সৌন্দর্য্য আছে, সেই একই সৌন্দর্য্যের সন্ধান খোঁজা এবং উপলদ্ধি প্রকৃতির মধ্যে-একজন সফল বিজ্ঞানীর জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ন।

ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার তিনটে জিনিসের জন্য, ভারতের ছাত্রদের মধ্যে সর্বোচ্চ লেভেলে ক্রিয়েটিভিটির অভাব থেকে যাচ্ছে

(১) হিউম্যানিটির সাবজেক্টগুলো গভীরে এবং গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হচ্ছে না-ক্রিয়েটিভ এক্টিভিটি যথা গান, অঙ্কন , গল্প লেখা-যাতে সৃজনশীলটা বাড়ে তাতে গুরুত্ব নেই।

(২) বিজ্ঞানের টিচিং হ্যান্ডসঅন না। ফলে শেখাটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক। এই জন্য রিয়ালিটির ( বাস্তবতা) অনুধাবন এবং সমাধানের মধ্যে একটা বিরাট পার্থক্য থাকছে

(৩) শুধু শেখা ভালো লাগে বলে শেখা উঠে যাচ্ছে। এবারের ফিজিক্সের নোবেল উইনিয়ার হ্যালডেন টপোলজি শিখেছিলেন, শুধু অঙ্ক করতে ভালবাসেন বলে। কৃষ্টালের ম্যাগনেটিজমের অন্যান্য মডেলগুলো দেখে বুঝেছিলেন-এখানে টপোলজির কেরামতি কাজে লাগিয়ে বেশ কিছু নতুন মডেল তৈরী করা যাবে। এই যে একটা সেলফ লার্নিং-কারন এই সাবজেক্টটা ভালো লাগে বলে শিখছি। এসব নেই আজকের অধিকাংশ বিজ্ঞানীর মধ্যে। সবাই পেপার পাবলিকেশনে ব্যস্ত। পেপার পাবলিশ করে কি আর ফান্ডামেন্টাল কাজ হয়?

ভাবা যায়। স্যার রমন নোবেল জিতেছিলেন ১৯৩০ সালে। তখন তার রিসার্চ বরাদ্দ ছিল শুন্য। মাইনের টাকায় ইনস্ট্রুমেন্ট "বানাতে" হত হাওড়ার ওয়ার্কশপে । তার সাগরেদ কে এস কৃষ্ণানের কোন রিসার্চ ফেলোশিপ ছিল না। টিউশনি করে খরচ তুলতেন। হয়ত এসব অনেক কিছুই ছিল না বলে ছিল বিজ্ঞানের প্রতি, প্রকৃতির প্রতি তীব্র ভালোবাসা। অজানাকে জানার আনন্দ। আর কেনা জানে আনন্দই সৃষ্টির উৎস। এই নিয়ে আমার আগে একটা লেখা আছে (https://mukto-mona.com/Articles/biplab_pal/cv_raman.htm)

আর এখনকার বিজ্ঞানীরা? সবাই পেপার পাবলিকেশনের ইঁদুর দৌড়ে। এতে কি আর বিজ্ঞানের প্রতি তীব্র প্যাশন আসে!!

তবুও আশা রাখি আই এস সি ব্যঙ্গালোর বা টি ওয়াই এফ আর থেকে কোন না কোন দিন কোন ভারতীয় নোবেল পাবে। আর যদি কোন বন্ধু বিজ্ঞানী পেয়ে থাকে ( দুজনের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে) , নাথিং লাইক দ্যাট! আশা ত করাই যায়।

Sunday, October 2, 2016

নিউক্লিয়ার যুদ্ধ-ভয়টা কোথায়?

                                                                   (১)
২৭ শে অক্টবর ১৯৬২। কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস চূড়ান্ত লগ্নে। আমেরিকার ৪০ টি ডেস্ট্র্যয়ার এবং ৪ টি ক্যারিয়ার ঘিরে রেখেছে গোটা কিউবাকে। নেভাল ব্লকেড।  খাবার এবং মেডিসিন ছাড়া অন্যকোন জাহাজকে কিউবাতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ক্রশ্চেভ মস্কো রেডিওতে বলছেন কেনেডি নেভাল ব্লকেডের মাধ্যমে কমিনিউস্ট রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন। অন্যদিকে আমেরিকা বলছে সোভিয়েত ইউনিয়ান কিউবাতে এস এস -৪ ইন্টারমিডিয়েট নিউক্লিয়ার ব্যালাস্টিক মিসাইল স্মাগল করে বসিয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসি টার্গেট এখন মস্কোর বাটন থেকে দশ মিনিট দূরে। সুতরাং সোভিয়েত ইউনিয়ানকে কিউবা থেকে নিউক্লিয়ার মিসাইল তুলতে হবে আগে। নইলে আমেরিকান নেভি সম্পূর্ন প্রস্তুত কিউবা আক্রমন করতে। আর তার জন্য যদি সোভিয়েত ইউনিয়ান নিউক্লিয়ার যুদ্ধে যায়-আমেরিকাও পালটা মার দিতে রেডি। বিশেষত তার হাতে ৫০০০ নিউক্লিয়ার ব্যালাস্টিক মিসাইল যেখানে সোভিয়েতের হাতে সেই ৬২ সালে মোটে শ তিনেক মিশাইল । এবং তাদের লক্ষ্যভেদের ক্ষমতাও দুর্বল।

 কিউবার পতন প্রায় আসন্ন। সেই দিনই ফিদেল ক্যাস্ত্রো ক্রসচেভের কাছে নিবেদন পাঠিয়েছেন,  কিউবাতে জমা করা নিউক্লিয়ার মিসাইলগুলি দিয়ে ক্যাপিটালিজমের পিতৃভূমি আমেরিকা ধ্বংস করুক।

I believe the imperialists' aggressiveness is extremely dangerous and if they actually carry out the brutal act of invading Cuba in violation of international law and morality, that would be the moment to eliminate such danger forever through an act of clear legitimate defense, however harsh and terrible the solution would be,--Castro  ,  Telegram to Khruschev , Oct 26

কিউবার প্রতিটি সক্ষম নাগরিককে অস্ত্র তুলে দেওয়া হল কাস্ত্রোর নির্দেশে। আমেরিকান নৌবহর আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে কিউবার দিকে। কিউবার দাবী তত প্রবল হচ্ছে যাতে সোভিয়েত ইউনিয়ান নিউক্লিয়ার মিশাইল ছুঁড়ে প্রতিহত করে, বাঁচিয়ে রাখে এই নবীন কমিনিউস্ট রাষ্ট্রকে

Direct aggression against Cuba would mean nuclear war. The Americans speak about such aggression as if they did not know or did not want to accept this fact. I have no doubt they would lose such a war. —Ernesto "Che" Guevara, October 1962

নিউক্লিয়ার যুদ্ধে আসন্ন ধরে নিয়ে আমেরিকার স্কুল কলেজে নিউক্লিয়ার এটাক হলে কি কি করতে হবে তার মহড়া শুরু গোটা আমেরিকা জুরে। কেনেডি বারংবার ভাষন দিচ্ছেন কিভাবে সোভিয়েত ইউনিয়ান গোটা বিশ্বকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ানে ক্রশ্চেভের হোলদোল নেই। তারকাছে ফিদেল এবং কিউবা তার মাস্টার চালের বোরে। কিউবাতে নিউক্লিয়ার মিশাইল পাচার করার  একটাই উদ্দেশ্য। কিউবাকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকার সাথে দরাদরি করা-যাতে ইটালি এবং তুরস্কে বসানো আমেরিকান মিসাইল তুলে নিতে বাধ্য করা যায়।

যুদ্ধ প্রায় শুরু, এমন অবস্থায় চারটে সোভিয়েত সাবমেরিনের উদয় হল ক্যারিবিয়ান সমুদ্রে। এগুলো ডিজেল সাবমেরিন, কিন্ত সাথে নিউক্লিয়ার টর্পেডো। উদ্দেশ্য, যুদ্ধ শুরু হলে, আমেরিকার নেভাল ব্লকেডকে আক্রমন করা।

 কিন্ত ডিজেল সাবমেরিন লুকিয়ে রাখা মুশকিল বিশেষত যেখানে আমেরিকার ১১ টি ডেস্ট্রয়ার সাবমেরিনগুলোকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। ডিজেল প্রযুক্তির সমস্যা এই যে, সাবমেরিনগুলোর ব্যাটারি চার্জ করার জন্য জলের ওপরে তিনদিনে একবার উঠতেই হয়। এই নয় যে সোভিয়েত ইউনিয়ানের নিউক্লিয়ার সাবমেরিন ছিল না তখন। কিন্ত কিছু দিন আগেই তাদের প্রথম প্রজন্মের নিউক্লিয়ার সাবমেরিন কে-১৯ এ ঘটেছে বিপুল এক্সিডেন্ট। নিউক্লিয়ার রিয়াক্টর ব্ল্যাস্ট হওয়া থেকে বেঁচে গেছে। কিন্ত নিয়ে গেছে ৩০ টি সাবমেরিনার সেনার প্রাণ। ফলে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন তখন কিছুদিনের জন্য ডিকমিশনড। 

 ওই চারটি সাবমেরিনের একটি বি-৫৯।  দুদিন জলের তিনশো ফুট নিচে। অসহ্য গরম। এই সাবমেরিনগুলো আর্টিক সাগরের প্রবল ঠান্ডায় অভ্যস্থ। ফলে এদের এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম বাজে। দুদিন ধরে জলের তলায় প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগেড তাপমাত্রায় ভাজা হচ্ছেন সাবমেরিন সেনারা। জলের রেশন শেষ হয়ে আসছে। কিন্ত ওপরে উঠলেই ধরা পরে যাবে আমেরিকার নেভির কাছে। এদিকে ব্যাটারি চার্জ মাত্র ২০% বাকি। 

আমেরিকান ডেস্ট্রয়ারগুলো ক্রমাগত ডেপথ চার্জ করে চলেছে। এর যেকোন একটা লাগলেই পঞ্চাশজন সেলরের  সলিল সমাধি নিশ্চিত।

আমেরিকান নেভির হাতে মৃত্যু নিশ্চিত-সাবের ভেতরে সাব হিউমান কন্ডিশন, এমন অবস্থায় সাবের ক্যাপ্টেন ঠিক করলেন, এবার নিউক্লিয়ার টর্পেডো ছাড়া উপায় নেই।  সোভিয়েত প্রোটোকল অনুযায়ী নিউক্লিয়ার মিশাইল সাব থেকে ছাড়ার জন্য তিনজনের সহমত দরকার--ক্যাপ্টেন, পলিটিক্যাল অফিসার এবং সেকন্ড অফিসার ভ্যাসিলি আর্কিপভ। ভ্যাসি আর্কিপভ সেকন্ড অফিসার হলেও, গোটা ফ্লিটের সর্বাধিনায়ক-এবং সেই সূত্রে তিনি ক্যাপ্টেনের বস। 

ক্যাপ্টেন এবং পলিটিক্যাল অফিসার একমত-এত যখন ডেপথ চার্জ মারছে আমেরিকান নেভি, যুদ্ধ নিশ্চয় শুরু হয়ে গেছে। ফলে নিউক্লিয়ার মিসাইল ছাড়া যাক।

ভ্যাসিলি একমত হলেন না। নিউক্লিয়ার পাওয়ার এবং রেডিয়েশন কি ভয়ংকর হতে পারে, তা সাক্ষাত দেখেছেন ভ্যাসিলি কে-১৯ বিস্ফোরনে-যাতে হারিয়েছেন ৩০জন কমরেড।  মস্কোর সাথে  কথা না বলে, নিউক্লিয়ার ট্রিগারে হাত দিতে চাইলেন না ভ্যাসিলি।

 এবং পৃথিবী বেঁচে গেল এক মহাযুদ্ধ থেকে, যার ফলে পৃথিবীর মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত ছিল। 

কিন্ত নিউক্লিয়ার টেনশন শুরু হলে সর্বত্র পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য ভ্যাসিলি আর্কিপভ থাকবেন না । বরং ফিদেল, চে বা রুজভেল্টের মতন রাজনৈতিক লোকজনই ক্ষমতায় সর্বত্র-যারা তাদের রাজনৈতিক গোলকে মানুষের জীবনের থেকেও বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এটা ইম্পিয়ারিলিস্টিক,  কমিনিউস্ট, হিন্দু এবং ইসলামিক রাজনীতির হলমার্ক। এবং সেইজন্যই নিউক্লিয়ার যুদ্ধের আবহ শুরু হওয়া বেশ ভয়ংকর।

                                   (২)


অনেকেই দেখছি লেখা লেখি করছে নিউক্লিয়ার যুদ্ধ শুরু হলে, ভারতে খুব বেশী হলে কিছু লোক মারা যাবে, কিন্ত পাকিস্তান সম্পূর্ন ধ্বংস হবে।

          খুব ভুল ভাবছেন জনগণ। পাকিস্তান নিজেও জানে নিউক্লিয়ার যুদ্ধে তাদের এডভ্যান্টেজ নেই। এবং নেই বলেই এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাটা বেশ ভয়ংকর -বিশেষত শক্র রাষ্ট্রের নাম যদি হয় পাকিস্তান।

  এর কারন স্যুটকেস নিউক। নিউক্লিয়ার মিশাইল ছুঁড়বে না পাকিস্তান-কারন তাতে তাদের নিজের দেশই ধ্বংস হবে। ভারতের হাতে কোনঠাসা হলে পাকিস্তান নিউক্লিয়ার সন্ত্রাসবাদকে কাজে লাগাবে।

   সুটকেস নিউক বহু পুরাতন প্রযুক্তি।  এটোমিক ডিমোলিশন মিউনিশন বলে মিনি এট্মিক বম্ব প্রযুক্তি নিয়ে আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ান কোল্ড ওয়ারের সময় বহু আকারে ছোট ছোট এটমিক বম্ব বানিয়েছিল। এর মধ্যে সব থেকে ভয়ংকর সোভিয়েতের তৈরী সুটকেস বম্ব । এগুলোর ওজন মোটে ত্রিশ কিলো-একটা ২০ বাই ২০ ইঞ্চির স্যুটকেস বা ল্যাপটপের সমান সাইজ।  ১ কিলোটনের কাছাকাছি ক্ষমতা। ব্ল্যাস্ট রেডিয়াস তিনশো ফুট। 

  এগুলো শহরের মধ্যে ফাটালে সঙ্গে সঙ্গে ১০০ মিটারের বিল্ডিং ধ্বসে যাবে। এক স্কোয়ার কিলোমিটারের মতন জায়গা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে। ধরুন এটা নিউমার্কেট বা হাওড়া স্টেশনে ফাটল। সঙ্গে সঙ্গে কয়েক লাখ লোকের মৃত্যু অবধারিত। এবং এই বোম ফাটানো কোন ব্যাপার না। কারন একটা হ্যান্ড সুটকেস স্মাগল করা এক দেশ থেকে অন্যদেশে খুবই সহজ।

 যার জন্য ২০০৮ সালে ইউ এনএর ভাষনে এটমিক এনার্জি কমিশনের চেয়ারম্যান এল বারাদি জানিয়েছিলেন, নিউক্লিয়ার যুদ্ধের সম্ভাবনা প্রায় নেই। কিন্ত নিউক্লিয়ার টেটরিজম সময়ের অপেক্ষা মাত্র। যদি নিউক্লিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়, তা নিউক্লিয়ার টেটরিজম দিয়েই হবে।

কতটা বাস্তব স্যুটকেস নিউক?  আমেরিকাতে ১৫ টা এমার্জেন্সি কোড আছে। যেমন সাইক্লোন, প্লেগ এপিডেমিক ইত্যাদি। এর মধ্যে নাম্বার -১ কোড নিউক্লিয়ার টেটরিজম। আমেরিকা এই নিয়ে একটা ইন্টালিজেন্স কমিটি বসিয়েছিল। তারা জানিয়েছে স্যুটকেস নিউক স্মাগল আটকানো কঠিন। ফলে স্যুটকেস নিউক কোন না কোন দিন টেররিস্টরা ফাটাবে এটা ধরে নিয়েই, আমেরিকা প্রস্তুতি নিয়েছে। 

ভারতের এই ধরনের কোন প্রস্তুতি নেই। ভারত বিপুল খরচ করেছে মিসাইল ডিটারেন্টে। এগুলো ফালতু খরচ। পাকিস্তান মিশাইল ছুঁড়বে না-কারন তাহলে তাদের মৃত্যুও নিশ্চিত। তারা স্যুটকেস নিউক বানিয়ে টেররিস্টদের দেবে। এদ্দিন দেয় নি, তার কারন সম্ভবত একটাই যে মিলিটান্টরা পাকিস্তানে তা উলটে ফাটাবে না, তার নিশ্চয়তা সম্ভবত নেই। কিন্ত কোনঠাসা হলে এসব বদলাবে। 

শান্তির কোন বিকল্প নেই। ভারত এবং পাকিস্তানের সাধারন লোকজন যাতে নিউক্লিয়ার অস্ত্র মুক্ত, ধর্মের জঞ্জাল মুক্ত , মিলিটারী মুক্ত একটা ভবিষ্যত পায়, সেটাই কাম্য হওয়া উচিত। 




















Thursday, September 29, 2016

যুদ্ধং দেহী

সেটা ১৯১6। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তৃতীয় বছর। ইংল্যান্ডে যুবকদের যুদ্ধে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। দেশজুরে দেশপ্রেমের বন্যা। কেম্বব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই তৈরী হয়েছে অস্থায়ী সেনাহাঁসপাতাল।

সেই গণহিস্টারিয়ার বাজারেও বেঁকে বসলেন বিশ্ববিখ্যাত গণিতবিদ এবং দার্শনিক বিট্রান্ড রাশেল। লাগাতার লিখতে লাগলেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে। বক্তব্য সিম্পল। এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাতে লাভবান দেশের শিল্পগোষ্ঠী- ইম্পিরিয়ালিস্ট ডিজাইনের চক্রান্তের শিকার সাধারন মানুষ।

ট্রিনিটি কলেজ থেকে বহিস্কৃত হলেন সেই বছর। ১০০ পাউন্ড ফাইন হল। বললেন ফাইন দেব না-জেলে যাব। সেটা হল না। বন্ধুরা ফাইন দিয়ে দিল। তাতেও দমলেন না-চালিয়ে গেলেন যুদ্ধবিরোধি, শান্তির পক্ষে প্রচার। এবার সত্যিই দেশোদ্রোহিতার অপরাধে ছমাসের জেল। জেলে বসেই লিখলেন তার অসমান্য বায়োগ্রাফি=

I found prison in many ways quite agreeable. I had no engagements, no difficult decisions to make, no fear of callers, no interruptions to my work. I read enormously; I wrote a book, "Introduction to Mathematical Philosophy"... and began the work for "Analysis of Mind" — The Autobiography of Bertrand Russel

ট্রিনিটিতে শান্তিকামী মানুষে পক্ষে শুধু রাশেলই ছিলেন না-ছিলেন থমাস হার্ডি। রামানুজমের মেন্টর। এই সময়টাতে যুদ্ধবিরোধি মনোভাবের জন্য ( না হার্ডি যুদ্ধ বিরোধি লেখালেখি করতেন না ) হার্ডিকে প্রায় একঘরে হতে হয় বৃটেনে। রামানুজমের ওপরে সদ্যমুক্ত সিনেমা, ম্যান হু নিউ ইনফিনিটিতে এর অসাধারন চিত্রায়ন করেছেন পরিচালক।

আরো ছিলেন আর্থার এডিংটন। আইনস্টাইন তখন শত্রু দেশের বিজ্ঞানী। জেনারেল থিওরী অব রিলেটিভিটি আবিস্কার করেছেন বছর চারেক আগে-কিন্ত সূর্য্যগ্রহণের অপেক্ষায় আছেন কখন তার তত্ত্ব প্রমানিত হবে। আগের সূর্য্যগ্রহনে কিছুই হয় নি-কারন যুদ্ধ চলছে। এডিংটন ঘোষনা করলেন-তিনিই করবেন আইনস্টাইনের তত্ত্বর পরীক্ষা। গোটা বৃটেন জুরে ঘৃণার শিকার হলেন এডিংটন -কিন্ত তিনি অনড়। ইতিহাস সৃষ্টি হল ১৯১৯ সালে। সাউথ আফ্রিকায় পূর্নগ্রাস সূর্য্যগ্রহণের তিনিই প্রথম প্রমান করলেন নক্ষত্রথেকে আসা আলোর রেখা, সূর্য্যের অভিকর্ষ বলে বেঁকে যাচ্ছে-আইনস্টাইনের সমীকরন মেনে। বিংশ শতাব্দির বিজ্ঞানের ইতিহাসের সব থেকে গুরুত্বপূর্ন ঘটনা। এডিংটন বলেছিলেন যুদ্ধ সভ্যতার পরিপন্থি-বিজ্ঞান সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার হাতিয়ার। তাই তিনি আর্ক এনিমি জার্মানীর বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাথে কাজ করেই প্রমান করবেন, এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, জাতি বৈরিতার উর্ধে উঠেই বিজ্ঞানীর সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

ফ্রাংকলি স্পিকিং আমি জাতিয়তাবাদ দেশপ্রেম ইত্যাদি ব্যপারে ভীত। দেশের প্রতি প্রেম ভালোবাসা নিঃসন্দেহে ভাল। কিন্ত ফেসবুকে যখন পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে গালাগাল ভেসে আসে, দেখি ঘৃণার বন্যা পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে, তখন নিজের মনেই অজান্তে কাঁপি-এত ঘৃণা কেন? পাকিস্তান এবং পাকিস্তানি এক না। পাকিস্তান দেশটা একটা কৃত্রিম সৃষ্টি-থাকাই উচিত না। ওটা পাঁচটা স্বতন্ত্র প্রদেশে ভাগ করে দেওয়া উচিত। বালুচ, সিন্ধ ওরা স্বাধীন হৌক। পাকিস্তানি মিলিটারীর থেকে মুক্তি পাক। এসব নিয়ে আমার দ্বিমত নেই। কিন্ত পাকিস্তানি কারা? বৃটিশ চক্রান্তের ফসল পাকি মিলিটারীর হাতে ধুঁকতে থাকা ভারতীয়দের মতন সাধারন মানুষ। তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা কেন? কেন বৃটিশদের বিরুদ্ধে না, যারা পাকিস্তান নামে একটা কৃত্রিম দেশ তৈরী করে দিয়ে গেল যাতে ভারতকে গোদের ওপর বিষফোঁড়া নিয়ে বাঁচতে হয়।

ইরাক আক্রমনের সময়, আফগানিস্থান আক্রমনের সময় আমেরিকান টিভিতেও জনগণকে দেশপ্রেমের আবেগে ভাশানো হয়েছে। তার পরবর্তীকালে কি হয়েছে আমরা জানি। ভারতে এখন সেই ফেজ। সব মিডিয়া, সর্বত্রই দেশপ্রেমের বন্যা বইছে। সার্জিক্যাল এটাক। এটাতে অবশ্য আমার দেশ আমেরিকা হচ্ছে এক্সপার্ট।

কিন্ত যে প্রশ্নটা আমরা করি না-সেটা হচ্ছে এই যে টেররিজম, সন্ত্রাস এর মূল ত শুধু অর্থ বা অস্ত্র না। ধর্ম এবং আদর্শবাদ ও বটে। এবং খুব পরিস্কার ভাবেই এর মূলে ইসলাম যা আরব সংস্কৃতির সাম্রাজ্যবাদের ধর্মীয় মোরক। কাশ্মীরের ৮০% জনগণ হিন্দু হলে, সেখানে সন্ত্রাসবাদের প্রশ্ন উঠত না-মিলিটারি ইন্টারভেনশনের দরকার ও হত না। সুতরাং এক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে রাজনৈতিক ইসলামকে ডাইল্যুইট করার কোন প্রচেষ্টা নেই কেন? বরং তারক বিশ্বাসের মতন যেসব নাস্তিকরা ইসলাম সম্মন্ধে স্পেডকে স্পেড বলার সাহস রাখেন তাদের জেলে ঢোকানো হচ্ছে।

সার্জিক্যাল এটাক নিয়ে যে উন্মাদনা তৈরী করা হচ্ছে, তাতে বুদ্ধিভ্রংশের উজ্জ্বল উদাহরন। কজন সন্ত্রাসী মারবে ভারতের সেনা বর্ডার পেরিয়ে? ১০, ১০০, ১০০০, ১০,০০০? দশ হাজার সন্ত্রাসী মরলে এক লাখ সন্ত্রাসী তৈরী হবে পরের বছর-যদ্দিন ওই ইসলামিক আদর্শ এবং শরিয়ার মোহ থেকে মুসলমান যুবকরা মুক্ত না হতে পারছে।

ভ্রান্ত রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় আদর্শের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কি দেশে সন্ত্রাসবাদ কমবে?

Tuesday, September 27, 2016

প্রেসিডেন্টিয়াল ডিবেট ২০১৬

প্রেসিডেন্টিয়াল ডিবেট ২০১৬ঃ
*************************
কর্মসূত্রে ইস্টকোস্টের ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল বেল্টে এদিক ওদিক ঘুরি। আমেরিকাতে ম্যানুফ্যাকচারিং বেল্ট গ্রামীন এলাকাতেই বেশী। দিগন্তজোড়া সবুজ ক্ষেত। তারই মধ্যে মধ্যে ইতিউতি ছোট ছোট ইন্ডাস্ট্রি মাথা তুলেছে। অনেকটা যেমন হতে পারত আমাদের সিঙ্গুর। কৃষি এবং শিল্পের সহাবস্থান।

  ট্রাম্প-হিলারী ডিবেটে, ট্রাম্পের  ট্রাম্পকার্ড বুঝতে, পেনসিল্ভেনিয়া ওহায়ো ইত্যাদি ইন্ডাস্ট্রিবেল্টের হাওয়াটা বোঝা উচিত। খুব পরিস্কারভাবে ট্রাম্প এই সুইং স্টেট গুলিতে সুইপ করতে পারে। আমি গত মাসে যতবার গেছি-গ্রামাঞ্চলের আনাচে কোনাচে ট্রাম্প ভলিউন্টারদের মোবিলাইজেশন চোখে পড়েছে। পেনসিলভেনিয়ার এইসব গ্রাম-শিল্পাঞ্চলের আনাচে কোনাচে এখন ট্রাম্প প্ল্যাকার্ড -মেকিং আমেরিকা গ্রেট এগেইন। হিলারী এখানে দুশো মাইলের মধ্যে চোখে পড়বে না যতক্ষন না আপনি পেনসিলভেনিয়ার দুই মহানগরে আসছেন-ফিলাডেলফিয়া এবং পিটসবার্গ। এর বাইরে হিলারী হাওয়া।

 কিন্ত কেন?  ট্রাম্প গতকালের ডিবেটে পেনসিল্ভেনিয়া, ওহায়ো এইসব এরিয়ার ধুঁকতে থাকা ব্যবসা নিয়েই খাতা খুলেছে। কিভাবে ন্যাফটা এবং গ্যাটের ফলে আমেরিকার শিল্পাঞ্চলে এসেছে বিপর্যয়। এগুলো কিন্ত একদম ঠিকঠাক-এইসব এলাকাগুলো সত্যি সত্যিই ম্যানুফাকচারিং আউটসোর্সিং এর জন্য আজ বিপর্যস্ত। গত বৃহস্পতিবার পেনসিলভেনিয়ার ওমন একটা গ্রামের রেস্টুরেন্টে বসে লাঞ্চ খাচ্ছিলাম। ওখানে পাশের টেবিলগুলোতে জোর আলোচনা-যাক এদ্দিন বাদে একজন এইসব এলাকার দূরাবস্থার কথা বলছে। এইসব এলাকাগুলো ট্রাম্প সুইপ করবে ধরে নেওয়া যায়। এবং সেটাই চিন্তার কারন। কারন এগুলি সুইং স্টেট।

 আমি গতকাল থেকে অনেক নিউজ মিডিয়া ফলো করছি-কোন সন্দেহ নেই হিলারী নিজেকে অনেক ভাল ভাবে উপস্থাপনা করেছেন। এবং প্রেসিডেন্ট পদের উনিই অনেক যোগ্যতর দাবিদার। কিন্ত গ্রাউন্ড রিয়ালিটি একটু অন্য। সুইং স্টেটগুলো্তে কিন্তু ট্রাম্প হিলারীকে প্রায় ধরে ফেলেছে। এবং সেই সুইং স্টেটগুলির ভোট পাওয়ার জন্য যা দরকার, ট্রাম্প ডিবেটের প্রথম দুমিনিটেই সেই আসল কাজটা করে ফেলেছেন। বাকী নব্বই মিনিট ওই এলাকার লোকেদের জন্য অপ্রয়োজনীয়।

 ডেমোক্রাটিক পার্টি এবং বেস নানান লিব্যারালদের এলায়েন্স। প্রোলেবার, ফেমিনিস্ট, সিভিল রাইট, এনভাইরনমেন্টালিস্ট, ইউনিয়ানিস্ট, লেফটিস্টদের কোয়ালিশন ডেমোক্রাটিক পার্টি।  এর মধ্যে লেফটিস্ট পার্টটাকে বার্নি এমন মাথা খেয়েছে, তাদের অনেকেই হিলারিকে ভোট নাও দিতে পারে। এটা ডেমোক্রাটিক পার্টির ২৫% কমিটেডবেসের ৫% মতন। হিলারির লয়াল বেস ফেমিনিস্ট এবং ব্ল্যাক রাইট মুভমেন্টের লোকেরা। এখন মেক্সিকান এবং এশিয়ানরাও। যারা আরো ১০%।  এইভাবে হিলারী লয়াল বেস দাঁড়াচ্ছে ৩০% এর মতন। ্কিন্ত বাকী ৪৫% সুইং ভোট।  যাদের অধিকাংশই তরুন তরুনী। তাদের  ৩০% অন্তত হিলারীকে টানতে হবে। এই জন্যে হিলারী ছাত্রলোনের ব্যপারে ফোকাস করছেন। কারন আমেরিকার শিক্ষিত তরুন তরুনীরা এডুকেশন লোনে জর্জরিত।

 ট্রাম্পের ইকোয়েশন অন্য। ট্রাম্প জানেন আসল ব্যটল গ্রাউন্ড সুইং স্টেটগুলো যথা ওহায়ো, পেনসিলভেনিয়া, ভার্জিনিয়া, ফ্লোরিডা। এর মধ্যে ট্রাম্প পেনসিল্ভেনিয়া এবং ওহায়ো টানতে পারবেন হিলারীকে তাদের দুর্দশার জন্য দায়ী করে। ভার্জিনিয়া জিততে গেলে ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টি জিততে হবে-কারন বাকি কাউন্টির অধিকাংশ এমনিতেই রিপাবলিকান। ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টিতে এত বেশী ডেমোক্রাট , ওখানেই বাকী সব কাউন্টির রিপাবলিকান ভোট  ব্যালান্সড হয়।  ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টির প্রায় ৩০% ভারতীয় এবং এশিয়ান। তাদের ৮৮% ডেমোক্রাটিক ভোটার। ফলে এদের টানতে ট্রাম্প এখন প্রোইন্ডিয়ান। এই ভারতীয়দের যেহেতু ৯৫% হিন্দু এবং মুসলমানদের ওপরে তাদের একটা জাত রাগ আছেই-সেটা কাজে লাগিয়ে, ট্রাম্প হয়ত ৫০-৬০% ভারতীয় ভোট পেলেও পেতে পারেন ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টিতে।  তবে ভারতীয়দের আবার ৪০% ভোটার রেজিস্ট্রেশন করে না-না হলে সিটিজেনশিপ নেয় না।

আপাতত বেশ ক্লোজ ইলেকশন। ট্রাম্প যদি মেগালোম্যানিয়াক নার্সিসিস্ট না হত, এই যাত্রায় হিলারী ভরাডুবি ছিল আসন্ন। হিলারী ট্রাম্পের চেয়ে প্রায় ২০ গুন বেশী টাকা তুলছেন-কিন্ত তবুও দেখা যাচ্ছে হিলারী ভল্যুইন্টার মুভমেন্ট শুধু মাত্র কালো সিভিল রাইট এবং ফেমিনিস্ট এক্টিভিস্টদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সেখানে ট্রাম্প কিন্ত গ্রামাঞ্চলে বিরাট ভলিউন্টিয়ার মোবিলাইজ করতে সক্ষম হয়েছেন।

 ট্রাম্প কনম্যান, মিডিয়া অভিনেতা।  ১০০% অবিশ্বাসযোগ্য।  ফলে তাকে বিশ্বাস করে যে আমেরিকাবাসী ঠকবে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্ত ট্রাম্প কিছু প্রশ্ন তুলেছেন-যা অন্যান্য রাজনীতিবিদরা তোলেন নি। উচিত ছিল। এবং সাধারন মানুষের রাগের ফল কি হতে পারে অন্যান্য রিপাবলিকান নেতারা বুঝেছেন এত দিনে।  হিলারীর সেই কাতারে যাওয়ার সম্ভাবনা কিন্ত উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।











Thursday, September 22, 2016

হাল্লার রাজা চলেছে যুদ্ধে

ভারত-পাকিস্থানে আবার যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার আবহ। প্রতিবারের ম ত এবারও! ভারতের পার্লামেন্ট আক্রমন করার পরেও যেখানে, কিস্যু হয় নি, বা ভার‍ত কিছু করে উঠতে পারে নি, কিছু সৈনিকের মৃত্যুতে কি আর হবে! দুদিন বাদে সবাই ক্রিকেট বলিউডেই ব্যাক করবে।

 পাকিস্তানের প্রতি পররাষ্ট্রনীতির ব্যপারে কংগ্রেস সম্পূর্ন ব্যর্থ। মোদিও যুদ্ধংদেহী ভাবে ভুল দিকে খেলছেন।

  সান জু, আর্ট অব ওয়ারে লিখছেন, সেই সেনাপতিই শ্রেষ্ট যিনি একটি তীর খরচ না করে, একটুও রক্তপাত না ঘটিয়ে বিজয়ে সমর্থ হৌন।

 উদাহরন ? রোনাল্ড রেগন। আমেরিকা কিভাবে জিতল ঠান্ডা যুদ্ধে? একটাও মিসাইল ছুঁড়তে হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ান ভাংতে? কিভাবে রেগান সমর্থ হলেন প্রতিদ্বন্দিকে ভেঙে দিতে?

  সবটাই প্ল্যানিং।  কমিনিউজমের প্রতি সাধারন মানুষের রাগ ত ছিলই-সেটাকে রেগান বাড়িয়ে দিলেন আমেরিকাতে কত কিছু আছে, আর সোভিয়েতের জীবনে কিছুই নেই। কমিনিউজমে সোভিয়েতের লোকেরা ভিখিরি। এমন একটা জনমত খুবই সতর্ক ভাবে তৈরী করতে সমর্থ হয় সিয়া। এর সাথে বাকী সোভিয়েত রাজ্যগুলোর স্বাধীনতার আকাঙ্খা ছিল বহুদিনের।

সোজা কথায় পাকিস্তান একটা কৃত্রিম রাষ্ট্র। এটকে একবার ভাঙা হয়েছে, আরেকবার পাঁচ টুকরো করে দিতে হবে।

 পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু-অথচ এর কোন রাজ্যের মাতৃভাষা উর্দু না। বালুচ, পুশতুন, পাঞ্জাবী, সিন্ধি-সবার ওপরেই জোর করে চাপানো হয়েছে উর্দুর অত্যাচার। এটা একটা মিলিটারী স্টেট। যে রাষ্ট্রের বাজেটের সিংহভাগ যায় মিলিটারী বাজেটে। শিক্ষা আর স্বাস্থ্য খাতে ১% ও খরচ করে না পাকিস্তান। পাঞ্জাবী আর মোহাজির ( যেসব মুসলমানরা ভারত থেকে এসেছিল)  রাষ্ট্রের, সেনার মাথায় বসে আছে। বালুচ, পুস্তুন, সিন্ধ্রিরা চাকর বাকর স্বভূমিতে।

 এই মুহুর্তে আমেরিকার দরকার নেই পাকিস্তানের। ফলে আজ নইলে কাল, পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদি রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষনা করবে আমেরিকা। এই মুহুর্তে পাকিস্তানের সব থেকে ভাল দোস্ত চীন। কারন চীনের কোম্পানীগুলো পাকিস্তানের সব কাজের বরাত পাচ্ছে। পাকিস্তানের খনিগুলোকে, যার অধিকাংশই বালুচিস্তানে অবাধে লুঠ করার পারমিশন পেয়েছে চীনা কোম্পানীগুলি। যারে কয় প্রোটেকশন মানি।

 ফলে পাকিস্তানকে ভাংতে এই চীনা ইন্টারেস্টকে নিউট্রিলাইজ করতে হবে। কূটনীতিতে তা সম্ভব না-কারন চীন এখন মহাশক্তিধর। একমাত্র ওয়ে আউট- বিক্ষুব্ধ,  বালুচ সিন্ধ্রিদের সাহায্য করা যাতে চৈনিক কোম্পানীগুলির বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ গড়তে পারে এবং চৈনিক কোম্পানীগুলি ভয়ে পালায়। একবার চীন বিজনেস ইন্টারেস্ট হারালে, পাকিস্তানকে তারা লাই দেবে না। কারন পাকিস্তানের তালিবান সন্ত্রাসবাদি  চীনের জিংসাং এবং গাঙসু রাজ্যের মুসলিম সন্ত্রাসীদের মধ্যেও আছে।

 পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধদেহী ভাব একদম বর্জন করা উচিত। তাহলে দেশ হিসাবে আবার পাকিস্তানিরা ঐক্যবদ্ধ হবে। বরং ভারত থেকে বিদ্রোহি বালুচিস্তান, সিন্ধ, পুস্তুনদের প্রতি অর্থ এবং অস্ত্র দেওয়া হৌক। ওইসব দেশের এক্সাইল সরকার, ভারতে থেকেই শুরু হৌক।

 যুদ্ধ বুদ্ধিমানদের পথ না-এটাও সান জুর কথা। যুদ্ধ ছাড়াই পাকিস্তানকে সোভিয়েত ইউনিয়ানের মতন শুইয়ে দেওয়া সম্ভব। ভারতের সেই পথেই হাঁটা উচিত।








Friday, September 9, 2016

অটোমেশন এবং আপনার শিশুর ভবিষ্যত

জীবনের প্রথম আঠারো বছরে টেলিফোন করার সুযোগ হয়েছে সম্ভবত দুই থেকে তিন বার।

না অবাক হওয়ার কিছু নেই। সেই ১৯৮০-৯০ সালে, স্যাম পিত্রোদার আগের জমানায় টেলিফোন মানে এলাহি ব্যপার। বড়লোক ব্যবসায়ীরাই রাখত। তখন একটা ফোন আসা মানে সারাদিনে বলার মতন ঘটনা- ট্রাঙ্ককল আসত।

ট্রাঙ্ককলটা কানেক্ট করে দিতেন টেলিফোন ওপারেটর। মানে ম্যানুয়াল সুইচিং। এই শহর থেকে অন্য শহরের এক কলের সাথে অন্যকল লাগিয়ে দিতেন টেলিকম অপারেটররা। আমার বড় মামা এবং বড় মাসী ছিলেন টেলিকম অপারেটর। উনাদের সাথে গেছি টেলিফোন অফসে মাঝে মাঝে । সারাক্ষন হ্যালে হ্যালে করছেন। আর এখান কার জ্যাক খুলে ওখানে লাগাচ্ছেন। একদম হাতে ধরে ক্রস কানেক্ট করা যাকে বলে।

রাজীব গান্ধী স্যাম পিদ্রোদাকে নিয়ে আসলেন। আস্তে আস্তে ম্যানুয়াল সুইচিং এর বদলে এল সিডটের তৈরী অটোমেটিক সুইচ বা ড্যাকস। পুরাতন কপার লাইনের বদলে মাইক্রোয়েভ লিংকে জোড়া হল শহর থেকে শহর।

রাজীব গান্ধী তদ্দিনে মারা গেছেন। কিন্ত তার আধুনিক চিন্তার সুফল পেতে শুরু করেছি আমরা। প্রথমে জেলা শহর এবং তারপরে করিমপুরের মতন প্রান্তিক শহরেও দ্রুত লাইন দেওয়া শুরু করে ডট বা ডিপার্ট্মেন্ট অব টেলিকম। তখনও ভিএসএনএল বিএসেনএল আসে নি। ফলে ১৯৯৩ সালের আগেও যেখান বাড়িতে নিয়মিত চিঠি লেখা অভ্যেস ছিল হোস্টেল থেকে- ১৯৯৪ এর পর থেকে সরাসরি এস টি ডি বুথে গিয়ে লাইন দাও। বাড়িতে ফোন কর।

অন্যদিকে পুরাতন ট্রাঙ্ককল লাইন গুলোকে তুলে দেওয়া হচ্ছে। তাই নিয়ে বড় মামা এবং মাসীর একটা চাপা টেনশন কি হয়- কি হয়। কারন অপারেটরের আর দরকার নেই। সেখানে এসে গেছে অটোমেটিক সুইচ। নেহাত সরকারি চাকরি। তবুও ভিয়ারেসের চাপ। সরকার চাপ দিচ্ছে টাকা নিয়ে অবসর নাও। ডটে প্রায় ধর্মঘট হত সেই সময়। কিন্ত ওই আদ্দিকালের ট্রাঙ্ককল ত চলার না। ফলে সামান্য রফা। টেলিফোন অপারেটেরদের কাউকে দেওয়া হল একাউন্টস দেখার কাজ-কেউ কেউ জেনারেটর তত্ত্ববধান শুরু করলেন। কম্প্রোমাইজড লাইফ। রিটারমেন্ট পর্যন্ত।

একটা সময় ছিল যখন শহরের ব্যবসায়ী মহলে বেশ খাতির পেতেন অপারেটররা। কারন ব্যবসায়ীদের ট্রাঙ্ককল তাদের হাত ঘুরেই আসত কি না! বড়মামার সাথে কালনার বাজারে গেলে টের পেতাম। কিন্ত হাইরে অটোমেশন! মেশিনের সাথে কি আর মানুষ পারে অসম প্রতি্যোগিতায়? একটা শহরে মাথা উঁচু করা চলা মানুষগুলো হঠাৎই হয়ে উঠলো প্রযুক্তির ঘোড়াতে লাথি খাওয়া কোনঠাসা বোরে।

সেই প্রথম কাছ থেকে দেখা কি করে প্রযুক্তি এবং অটোমেশন মানুষের চাকরি জীবন একদম বদলে দেয়-যে কাজ সারাজীবন ধরে তারা করতেন-পাঁচ বছরের মধ্যে ভ্যানিশ!

অটোমেশনের ফলে আমেরিকাতে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে গত ত্রিশ বছরে ৯০% শ্রমিক ভ্যানিশ। কিন্ত উৎপাদন বেড়েছে আড়াইগুন। একদম ছুমন্তর জাদু। ফলে লেবার ইউনিয়ানের সেই দাপট আর নেই আমেরিকাতে। তারা কোনঠাসা। বেশী ইউনিয়ানবাজি করলে কারখানা বন্ধ করে নতুন কারখানা খুলবে কোম্পানি-যা হবে সম্পূর্ন অটোমেটেড! ভারতেও এর ব্যতিক্রম হবে না। টাটা স্টিলে দেখেছি। ১৯৮৫ সালে ছিল ৭০,০০০ কর্মী। এখন উৎপাদন প্রায় তিনগুন, জামসেদপুর প্ল্যান্টে আছে মোটে ১১,০০০ কর্মী। তাও শুনলাম ৮০০০ উদবৃত্ত। তাদের ধরে ধরে সিকিউরিটির চাকরি দেওয়া হচ্ছে। কারন টাটারা দয়ালু। সচরাচর ছাঁটাই করেন না।

সুতরাং এইসব শ্রমিক আন্দোলন ইত্যাদি করে কিস্যু হবে না। শ্রমিকই ত উঠে যাচ্ছে। যারা টিকে যাবেন তারা স্কিল্ড, কর্মী। অনেক বেতন পান। তারা বেতন কম পেলে অন্যত্র ভাল কাজ নেবেন। তাদের ইউনিয়ানবাজি করার দরকার নেই।

সমস্যা আসলে অন্যত্র- একটা বিপুল আধা-বেকার শ্রেনী তৈরী হবে। স্কিল নেই বলে। এদের জন্য দরকার বিপুল বেকার ভাতা নইলে স্কিল ট্রেনিং। স্বাধীন ব্যবসা করার জন্য। কারন চাকরি ব্যপারটা বদলে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে সব চাকরিই প্রায় অনলাইন করা সম্ভব। ফলে ফ্রি ল্যান্সিং, কনসাল্টিং জনপ্রিয় হচ্ছে বেশী। পুরাতন মালিক শ্রমিক মডেল খুব অদক্ষ। আধুনিক মডেল হবে মালিক নিজেই পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে ফ্রি ল্যান্সার হায়ার করে ভার্চুয়াল টিম দিয়েই তার অধিকাংশ কাজ সারবে। বাকীটা রোবট, অটোমেশন।

আসলে আন্দোলনটা জরুরী দরকার স্কুল শিক্ষাটা আমূল বদলে দিতে। স্কুল থেকেই ছাত্রদের ব্যবসা ইঞ্জিনিয়ারিং আইন কোডিং শেখানো হোক। আল্টিমেটলি লাইফে অঙ্ক আর কমিউনিকেশন স্কিল ছাড়া আর কিছু লাগে না। এইসব মান্ধাতা আমলের ভূগোল, ইতিহাস, বিজ্ঞান রেখে লাভ নেই। ওগুলো উইকি করলে বা একটা ইউটিউব ডকু চালালে বেটার শেখা যায়। বরং বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিং শেখানোর মাধ্যমে ফিজিক্স শেখালে ছাত্ররা শিখবে অনেক ভাল। যেটা ফিনল্যান্ড করে। আমেরিকাও শুরু করেছে।

যারা শিক্ষা এবং স্কিল মিশন বাদ দিয়ে ভ্রান্ত শ্রমিক আন্দোলন এবং লাল সেলাম চালিয়ে যাচ্ছেন-তারা ইতিহাসের লিখন দেখতে পাচ্ছেন না। ৩৪ বছরের ব্যর্থতা থেকেও শেখেন নি। তাই জনগন তাদের আস্তেকুঁড়েতে ছুড়ে ফেলেছে।

আমি তৃণমূল সরকারের কাছ থেকে আশা করব বামফ্রন্ট সরকারের ভুলগুলো তারা করবেন না। ধর্মঘট বিরোধি পজিশন খুবই সদর্থক তৃনমূলের। এবার বাংলাকে উন্নত করতে স্টেপ টু দরকার- সেটা হচ্ছে স্কুল শিক্ষার বৈপ্লবিক পরিবর্তন করে তাকে কর্মমূখী এবং আধুনিক করা হোক।



মনে রাখবেন-আপনার শিশু যে চাকরিটি করবে আগামী দিনে-সেই চাকরির এখনো জন্মই হয় নি।

Wednesday, September 7, 2016

বাংলার শিল্প এবং মমতা ব্যানার্জি

মমতা ব্যানার্জি জার্মানীতে ব্রান্ড বাংলাকে তুলে ধরছেন-খুব আনন্দের কথা। বাংলার বর্তমান  সরকার শিল্প বান্ধব সেটাও ঠিক। মমতা জমানা ধর্মঘট রোগ থেকে মুক্ত।  কিন্ত বঙ্গে শিল্প এর পরেও না আসতে পারে শুধু দুর্বল কাঠামোর জন্য। আশা করি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এগুলোর দিকে নজর দেবেন-যে অসুবিধাগুলো আমি গত চার বছর কোম্পানী চালিয়ে বুঝেছি -কোলকাতায়  বিদেশী কোম্পানীর এফিলিয়েট ইউনিট চালানোর অসুবিধা

 (১)  সরকারি-রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারী সার্টিফিকেশন ইত্যাদি অফিসে এখনো বাস্তঘুঘুর বাসা। সরকারি অফিসের ওয়ার্ক কালচার আগের থেকে ভাল-কিন্ত আদপে এখনো বেশ খারাপ।

   (২) কোলকাতা কাস্টম অফিস নটোরিয়াস। যেহেতু দিদি এস ই জেড করবেন না-সেহেতু  গবেষনা বা ম্যানুফ্যাকচারিং এর জন্য কিছু পাঠালে, কাস্টম ভ্যালু দিয়ে পাঠাতে হয়। শুধু খামোকা ট্যাক্স দেওয়া না-কাস্টম ক্লিয়ারেন্সে অনেক সময় লাগে। দিল্লী কাস্টমস যেখানে ২-৩ দিনে ক্লিয়াএন্স দেয়, কোলকাতায় সময় লাগে সাত আট দিন। এবং অনেক ক্ষেত্রেই ভুল ভাল ফাইন চাপায়। ইনফ্যাক্ট আমরা এখন কুরিয়ার কোম্পানীকে চাপ দিয়ে দিল্লী দিয়ে কাস্টম ক্লিয়ারেন্স করায়।

   (৩) এস ই জেড না থাকার জন্য এখনে ১০০% এক্সপোর্ট বা গবেষনার জন্য কিছু কিনলেও ইম্পোর্টের ওপরে ডিউটি লাগে। এতে খরচ বাড়ে। ১০০% এক্সপোর্ট অরিয়েন্টেড কোম্পানীর জন্য বাংলা আদর্শ স্থান না যদ্দিন না এস এই জেড হচ্ছে।


 (৪)  সিপিএম জমানার ফল আউট-সাপোর্টিং শিল্পগুলোর খুব খারাপ অবস্থা। গোটা রাজ্যে একটাও আধুনিক পিসিবি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানী নেই। সব অন্য রাজ্য থেকে করাতে হয়। এতে খরচ বাড়ে।  একটা ভাল আধুনিক ওয়ার্কশপ পর্যন্ত নেই। যেটা আচ্ছে সেটা সরকারি-এবং সেখানে কর্ম সংস্কৃতি সেই সরকারি।  ভাল থ্রিডি প্রিন্টিং ফেসিলিটি নেই। একমাত্র আধুনিক ওয়ার্কশপ আছে আই আই টি খরগপুরে।  হাওড়াতে অনেক ওয়ার্কশপ কিন্ত সবই পুরাতন।

(৫) ভাল প্লাস্টিক মোল্ডার নেই। ভাল মোল্ডিং করাতে পুনে বা গুরগাউ ছুটতে হয়।

 আমার মনে হয় এই মুহুর্তে বাংলাতে একটা আধুনিক ম্যানুফাকচারিং হাব করার জরুরী-   প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপে। যেখানে আধুনিক পিসিবি, অত্যাধুনিক সিএন্সি, উন্নত মানের থ্রিডি প্রিন্টার, মোল্ডিং ফেসিলিটি থাকবে। ওবামা সরকার ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের উন্নতির জন্য গোটা আমেরিকাতে এরকম ২০ টা সেন্টার চালু করেছিল । একটা ছিল বাল্টিমোরে। তার থেকে আমার মতন অনেকেই উপকৃত হয়েছে।

 আরেকটা সমস্যা শিক্ষার মান কমে যাওয়া। বাংলার প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার মান আরো বাড়াতে হবে।  স্কুল লেভেল থেকেই অঙ্ক এবং বিজ্ঞান অন্যভাবে শেখানো হোক। স্কুলে স্কুলে প্রোগ্রামিং শেখা বাধ্যতামূলক করা হৌক। মেধাসম্পদ বাঙালীর আসল। এবং আসল মেধা তৈরী হয় স্কুল থেকে, কলেজ থেকে না।  স্কুল সিলেবাস এখনো আদ্দিকালের। এখানে ক্লাস ফাইভে আমার ছেলের সিলেবাসে স্টক মার্কেট স্টাটিস্টিক্স প্রবাবিলিটি শেখানো হচ্ছে একদম প্রাক্টিক্যাল উদাহরন দিয়ে। ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোজেক্ট করানো হয়। হাইস্কুলের ছেলেদের ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে ইন্টার্ন করতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

শুধু শিল্পপতিদের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করার চেয়ে যদি আমরা মেধাসম্পদকে উন্নত করতে পারি-শিল্প এখানে নিজে আসবে। শিল্পপতিরা মমতার কাছে ভিক্ষা করবেন।

মমতা ব্যার্নাজি বাংলার প্রথম স্বাধীন সেনাপতি। এর আগের সব মুখ্যমন্ত্রীর টিকিই বাঁধা ছিল দিল্লীর কাছে-নইতো ভ্রান্ত আদর্শের কাছে। দিদি সেসব থেকে মুক্ত এবং বাংলার জন্য এক অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছেন। আশা করব-উনার পরিষদ বর্গ উনাকে  সঠিক পথ দেখাবেন।