Wednesday, September 7, 2016

বাংলার শিল্প এবং মমতা ব্যানার্জি

মমতা ব্যানার্জি জার্মানীতে ব্রান্ড বাংলাকে তুলে ধরছেন-খুব আনন্দের কথা। বাংলার বর্তমান  সরকার শিল্প বান্ধব সেটাও ঠিক। মমতা জমানা ধর্মঘট রোগ থেকে মুক্ত।  কিন্ত বঙ্গে শিল্প এর পরেও না আসতে পারে শুধু দুর্বল কাঠামোর জন্য। আশা করি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এগুলোর দিকে নজর দেবেন-যে অসুবিধাগুলো আমি গত চার বছর কোম্পানী চালিয়ে বুঝেছি -কোলকাতায়  বিদেশী কোম্পানীর এফিলিয়েট ইউনিট চালানোর অসুবিধা

 (১)  সরকারি-রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারী সার্টিফিকেশন ইত্যাদি অফিসে এখনো বাস্তঘুঘুর বাসা। সরকারি অফিসের ওয়ার্ক কালচার আগের থেকে ভাল-কিন্ত আদপে এখনো বেশ খারাপ।

   (২) কোলকাতা কাস্টম অফিস নটোরিয়াস। যেহেতু দিদি এস ই জেড করবেন না-সেহেতু  গবেষনা বা ম্যানুফ্যাকচারিং এর জন্য কিছু পাঠালে, কাস্টম ভ্যালু দিয়ে পাঠাতে হয়। শুধু খামোকা ট্যাক্স দেওয়া না-কাস্টম ক্লিয়ারেন্সে অনেক সময় লাগে। দিল্লী কাস্টমস যেখানে ২-৩ দিনে ক্লিয়াএন্স দেয়, কোলকাতায় সময় লাগে সাত আট দিন। এবং অনেক ক্ষেত্রেই ভুল ভাল ফাইন চাপায়। ইনফ্যাক্ট আমরা এখন কুরিয়ার কোম্পানীকে চাপ দিয়ে দিল্লী দিয়ে কাস্টম ক্লিয়ারেন্স করায়।

   (৩) এস ই জেড না থাকার জন্য এখনে ১০০% এক্সপোর্ট বা গবেষনার জন্য কিছু কিনলেও ইম্পোর্টের ওপরে ডিউটি লাগে। এতে খরচ বাড়ে। ১০০% এক্সপোর্ট অরিয়েন্টেড কোম্পানীর জন্য বাংলা আদর্শ স্থান না যদ্দিন না এস এই জেড হচ্ছে।


 (৪)  সিপিএম জমানার ফল আউট-সাপোর্টিং শিল্পগুলোর খুব খারাপ অবস্থা। গোটা রাজ্যে একটাও আধুনিক পিসিবি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানী নেই। সব অন্য রাজ্য থেকে করাতে হয়। এতে খরচ বাড়ে।  একটা ভাল আধুনিক ওয়ার্কশপ পর্যন্ত নেই। যেটা আচ্ছে সেটা সরকারি-এবং সেখানে কর্ম সংস্কৃতি সেই সরকারি।  ভাল থ্রিডি প্রিন্টিং ফেসিলিটি নেই। একমাত্র আধুনিক ওয়ার্কশপ আছে আই আই টি খরগপুরে।  হাওড়াতে অনেক ওয়ার্কশপ কিন্ত সবই পুরাতন।

(৫) ভাল প্লাস্টিক মোল্ডার নেই। ভাল মোল্ডিং করাতে পুনে বা গুরগাউ ছুটতে হয়।

 আমার মনে হয় এই মুহুর্তে বাংলাতে একটা আধুনিক ম্যানুফাকচারিং হাব করার জরুরী-   প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপে। যেখানে আধুনিক পিসিবি, অত্যাধুনিক সিএন্সি, উন্নত মানের থ্রিডি প্রিন্টার, মোল্ডিং ফেসিলিটি থাকবে। ওবামা সরকার ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের উন্নতির জন্য গোটা আমেরিকাতে এরকম ২০ টা সেন্টার চালু করেছিল । একটা ছিল বাল্টিমোরে। তার থেকে আমার মতন অনেকেই উপকৃত হয়েছে।

 আরেকটা সমস্যা শিক্ষার মান কমে যাওয়া। বাংলার প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার মান আরো বাড়াতে হবে।  স্কুল লেভেল থেকেই অঙ্ক এবং বিজ্ঞান অন্যভাবে শেখানো হোক। স্কুলে স্কুলে প্রোগ্রামিং শেখা বাধ্যতামূলক করা হৌক। মেধাসম্পদ বাঙালীর আসল। এবং আসল মেধা তৈরী হয় স্কুল থেকে, কলেজ থেকে না।  স্কুল সিলেবাস এখনো আদ্দিকালের। এখানে ক্লাস ফাইভে আমার ছেলের সিলেবাসে স্টক মার্কেট স্টাটিস্টিক্স প্রবাবিলিটি শেখানো হচ্ছে একদম প্রাক্টিক্যাল উদাহরন দিয়ে। ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোজেক্ট করানো হয়। হাইস্কুলের ছেলেদের ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে ইন্টার্ন করতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

শুধু শিল্পপতিদের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করার চেয়ে যদি আমরা মেধাসম্পদকে উন্নত করতে পারি-শিল্প এখানে নিজে আসবে। শিল্পপতিরা মমতার কাছে ভিক্ষা করবেন।

মমতা ব্যার্নাজি বাংলার প্রথম স্বাধীন সেনাপতি। এর আগের সব মুখ্যমন্ত্রীর টিকিই বাঁধা ছিল দিল্লীর কাছে-নইতো ভ্রান্ত আদর্শের কাছে। দিদি সেসব থেকে মুক্ত এবং বাংলার জন্য এক অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছেন। আশা করব-উনার পরিষদ বর্গ উনাকে  সঠিক পথ দেখাবেন।

No comments: