Sunday, November 22, 2015

গণতন্ত্রের হত্যা

সিপিএমের প্রাত্তন বিধায়ক ধীরেন লেটের ওপর যে অত্যাচার করা হল-যেভাবে তাকে হিউমিলিয়েট করা হল- একজন সাধারন মানুষ হিসাবে তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সিপিএম গণতন্ত্রকে খুন করেছিল, ধীরেন বাবু একজন হামার্দ-কোন যুক্তিই যথেষ্ট হতে পারে না, তাকে পিটিয়ে কান ধরে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ।  এই ভাবে একজন সত্তর বছরের বৃদ্ধকে হেনস্থা করা -বা করার মতন সাহসের উৎস কি? অবশ্যই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। যারা এই ঘটনার পরেও বলছেন সিপিএম দোষী-তারাই গোলমাল পাকাতে চেয়েছিল!!


         তিনো নেতৃবৃন্দরা  কি ভুলে যাচ্ছেন যখন  ক্ষমতা থাকবে না, তাদের কেউ প্রকাশ্যে কান ধরে প্রায়শ্চিত করালে একটা কাক ও কাঁদবে না আলিন্দে? ভুলে যাচ্ছেন যে ক্ষমতা হারাবার পরেও তাদের পশ্চিম বঙ্গে থাকতে হবে?   সিপিএম  দোষী হলে,  পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করুক। নিজেদের দলের লেঠেল পাঠিয়ে হিউমিলিয়েট করার অধিকার কোন আইন বা কোন গণতন্ত্র দেয়? এত চেঙ্গিস খানের জমানা চলে এল। যেসব চৈনিক অধিপতিরা চেঙ্গিস খানের বশ্যতা স্বীকার না করে মোঙ্গল আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেত, তাদের হারানোর পরে চেঙ্গিস খান সেইসব রাজা এবং রাণীদের নগ্ন করে তাদের প্রজাদের মধ্যেই ঘোরাতেন। হিউমিলিয়েট করার মধ্যযুগীয় আনন্দ।  আনন্দবাজারে ধীরেন লেটের জবাবনন্দীতে এটাই পরিস্কার তিনোগুন্ডারা তাই করতে চেয়েছিল। উনি কান ধরে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়েছেন।

  আমি পশ্চিম বঙ্গে গণতন্ত্রের হত্যা নিয়ে আগে অনেক লেখা লিখেছি। এটাও পরিস্কার যে এর পেছনে মূল কারন ১৯৭৮ সালে জনতা সরকারের গড়া ন্যাশানাল পুলিশ কমিশনের সুপারিশ  কার্যকর করতে জ্যোতিবসুর ব্যর্থতা। উনারা ভাবেছিলেন, সারা জীবন রাজত্ব চলবে। একবারো ভাবেন নি, যদি পুলিশ নিরেপেক্ষ না থাকে, উনারা ক্ষমতা হারালে কি হবে। কিছুদিন আগে বিরোধি নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর বিরুদ্ধেও হাত উঠেছে। এত ক্ষমতা গুন্ডারা পায় কি করে যেখানে মন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন একজন বিরোধি নেতার জীবন ও সুরক্ষিত না? কারন অবশ্যই যে পুলিশ মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। যা অবশ্যই পার্টি নিরেপেক্ষ কোন সংস্থার হাতে থাকা উচিত। ইন্দ্রজিত গুপ্ত ন্যাশানাল পুলিশ কমিশনের রিপোর্ট মেনে-তাই চেয়েছিলেন। জ্যোতিবাবু পাত্তা দেন নি । ক্ষমতা মানুষকে অন্ধ করে। জ্যোতিবাবুকেও তা অন্ধ করেছিল। আজ যেমন ক্ষমতার মাদকতায় অন্ধের মতন আচরন করছে তৃণমূলের নেতৃত্ববৃন্দ।

 হয়ত ধীরেন লেটের জন্য আজ  বঙ্গের একটা চড়ুই পাখিও দুঃখ পাবে না। হয়ত এর জন্যে সিপিএমের জমানার গণতন্ত্র খুন করার সংস্কৃতিই দায়ী। কিন্ত এত কিছু হয়তর পরেও যে সমাজ একজন সত্তর বছরের বৃদ্ধ রাজনৈতিক নেতার চরম হেনস্থার বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে ব্যর্থ হবে, কালকে তাদের ঘরের মেয়েকে যখন গুন্ডারা বিবস্থ করবে প্রকাশ্য রাজপথে, তাদের পাশেও কেউ থাকবে না।  জনগন যদি পার্টি, রাজনৈতিক রঙের উর্ধে উঠে এই ঘটনার প্রতিবাদ না করে, তার ফল ভুগবে তারা নিজেরা।


   সিপিএমের বিরুদ্ধেই আমি লিখে চলেছি আজ এক দশক। তাদের হার্মাদ সমর্থকরা আমাকে সব থেকে জঘন্য ভাষায় খিস্তি মেরেছে । আমি এটাও নিশ্চিত যে তারাও গণতান্ত্রিক বিতর্কে না এসে  খিস্তি খাস্থা আর হিউমিলিয়েশনেই বিশ্বাস রাখে বেশী। কিন্ত আমি একবারো বলবো না, ধীরেন লেটের পার্টি নিজেদের পাপের ফল নিজেরা ভোগ করুক। কারন এই লুম্পেনগিরি আর পুলিশের পার্টির লেজুর হওয়া থামাতে না পারলে, পশ্চিম বঙ্গে গুন্ডারাজ আর স্বৈরতন্ত্র চলতেই থাকবে। যার থেকে রাজ্যকে মুক্ত করা দরকার। এর জন্যে সবার আগে দরকার নাগরিক সমাজের কন্ঠশ্বর। তাদের প্রমিনেন্ট মুখরা ত আবার টাকা আর পদ ছাড়া নাগরিক দ্বায়িত্ব পালন করেন না।

No comments: