জীবিকা এবং জীবন- ২ ঃ ভাল ডিগ্রী, ভাল ইউনিভার্সিটি কি জীবনে নিরাপত্তা দিতে পারে ?
(১) দ্যা বিগ লেফ --
গত তিনমাসে আমেরিকার সর্ববৃহৎ আই টি কোম্পানীগুলিতে লে-অফ - অর্থাৎ ছাঁটাই এর স্ট্যাটিসস্টিক্স --
গুগুল ১২,০০০
মাইক্রোসফট ১০,০০০
ফেসবুক ১১,০০০
আই বি এম ৩৯০০
সেলসফোর্স ৮০০০
বুকিং ডট কম ৪১০০
টুইটার ৩৭০০
কারভানা ৪০০০
সিসকো ৩৭০০
# ১ এটা টিপস অব আইসবার্গ-হিমশৈলের চূড়া। এই বছর এই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত শুধু আমেরিকাতে আই টিতে লেওফের সংখ্যা প্রায় ১০৪ হাজার। ডিসেম্বর শেষ হওয়া পর্যন্ত এই সংখ্যা দাঁড়াবে ৬ লাখের কাছাকাছি। মেটা, গুগুল, আমাজন প্রথম দফা লেওফ সম্পূর্ন করেছে। দ্বিতীয় দফা, মার্চ মাসেই আসছে। মেটা এবং আমাজন তা ঘোষনা করেও দিয়েছে।
পয়েন্ট টু নোট-১ ঃ আমাজন, গুগুলে যারা চাকরি করতে গেছে- তারা সবাই ভাল ইউনিভার্সিটির ভাল টপ ছাত্রছাত্রী। এই যে গত তিনমাসে প্রায় তিন লাখ ছাঁটাই হয়েছে এসব "ব্র্যান্ড কোম্পানী" থেকে, তাদের প্রায় সবাই ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাল ছাত্র-ছাত্রী।
পয়েন্ট টু নোট-২ ঃ এরা মোটেও এদের পারফর্মান্স বাজে ছিল, বা ভাল কাজ করতে পারছিল না বলে ছাঁটাই হয়েছে তা না। এরা সবাই বাজারের পরিস্থিতির শিকার।
# ২ প্রশ্ন হচ্ছে লে অফ হচ্ছে আমেরিকাতে- কিন্ত ভারতে আই টিতে সদ্য পাশ করা ছাত্রছাত্রীরা এটা নিয়ে চিন্তিত হবে কেন? ভারতের আই টি মার্কেটের ৮০% আমেরিকা নির্ভর। আমেরিকাতে আই টি বাজেট কমলে, ভারতের আই টি জবে চাপ আসবেই। এছাড়া ভারতের ইউনিকর্ন স্টার্টাপগুলিতে গত বছর লেওফের সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়েছে।
এবছর যারা ফোর্থ ইয়ার বিটেকে আছে, তাদের সামনে খুব কঠিন সময়। তাদের তিনটে বুলেট ডজ করতে হবে চাকরি পেতে গেলে। এক, আমেরিকাতে আই টি বাজারে মন্দার কারনে, ভারতের আই টি কোম্পানীগুলি ফ্রেশার হায়ারিং ফ্রিজ করে দিয়েছে। কারন তাদের বেঞ্চের % এখন বেড়েই চলেছে। দুই, আগের বছর যারা অফার লেটার পেয়েছিল-তাদের অনেককেই এখনো জয়েনিং পায় নি। কিছু কিছু কোম্পানী-তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে-যেহেতু তারা প্রভিশনাল পিরিয়ডে ছিল। অর্থাৎ আগের ব্যাচের ছেলেমেয়েরাই এখন রাস্তায়। তাদের সাথে ফ্রেশারদের প্রতিযোগিতায় যেতে হবে। তিন, চ্যাট জিপিটি। চ্যাট জিপিটির জন্য সব কোম্পানীই জানে তাদের "বডির" সংখ্যা কম লাগবে। এই পরিস্থিতিতে কেউ নতুন হায়ারিং করবে না। সবাই এখন "দেখি" মুডে পযে আছে। দুদিন বাদে হায়ারিং ত দূরের কথা ব্যাপক ছাঁটাই ভারতেও শুরু হবে। আসলেই শুরু হয়ে গেছে। ভারতে এগুলো হচ্ছে চোরাগোপ্তা ভাবে। যেমন ফলস রেজুমে এসবের আছিলায় ( রেফা- এক্সেঞ্চার ইত্যাদি)।
(২)
সুতরাং কেসটা হল এই যে ভাল ইউনিভার্সিটির ভাল ডিগ্রি ( কম্পিউটার সায়েন্স) নিরাপত্তা দিতে পারে না।
কিন্তু তাহলে নিরাপত্তা কোথায়?
ধরুন আই টি মার্কেটের প্রায় ৬০% ছাঁটাই হবে আগামী ৪ বছরে। বাকী ৪০% টিকে যাবে এবং তাদের মাইনে আরো অনেক বাড়বে। এই টিকে থাকা ৪০% কারা ? বা ছাঁটাই ৯০% ও হতে পারে চ্যাট জিপিটি টাইপের ইনোভেশনের জন্য। কিন্ত এই বাকী ১০% সারভাইভার কারা?
দেখুন মার্কেটে আপডাউন থাকবেই। মার্কেট কখনো ভাল, কখনো খারাপ হবে। কিছু জব অবলুপ্ত হবে। আরো নতুন জব তৈরী হবে। এটাই নিয়ম।
কিন্ত বাস্তব হচ্ছে, এত ছাঁটাই এর পরও মার্কেটে ভাল সফটোওয়ার ইঞ্জিনিয়ারের প্রচন্ড অভাব। তাদের চাহিদা এত ছাঁটাই এর মধ্যেও বিপুল।
বাই দ্যা ওয়ে- যেসব কোম্পানীগুলো ছাঁটাই করছে-তারা হায়ার ও করছে! বেসিক্যালি মধ্যম মেধা ছেঁটে আরো উচ্চমেধা ছেঁকে তোলার চেষ্টা করছে।
সুতরাং প্রশ্ন হচ্ছে - ভারতের কনটেক্সটে ভাল সফটোয়ার, ভাল কোডার হতে গেলে কি ভাল ইউনিভার্সিটি বা ভাল ডিগ্রি লাগবে?
একদম না। এখন সব বড় কোম্পানীই [ আমাজন, গুগুল, মাইক্রোসফট টেসলা] ঘোষনা করে দিয়েছে, তাদের ডিগ্রিধারী দরকার নেই। শুধু তাদের নির্ধারিত কোডিং টেস্ট পাশ করতে হবে।
ধরুন কেউ প্রাইভেট কলেজেও আই টি বা কম্পুউটার সায়েন্সে বিটেক করল না! তার কি সফটয়ার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কোন ভবিষ্যত নেই?
২০০% আছে। ইনফ্যাক্ট কলেজে যা ইঞ্জিনিয়ারিং শেখানো হয়, তা ফালতু। কেউ যদি সত্যিকারের সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়- তার দরকার একটি কোম্পানী- যেখানে কাজ শেখার স্কোপ আছে। এখন পাড়ায় পাড়ায় মোবাইল এপ কোম্পানি- সেখানে ঢুকে শিখলেই বেটার হবে। দরকার একজন ভাল মেন্ট্রর বা গুরুর। ডিগ্রি একটা ন্যাপকিন পেপার। সেটা যেকোন ওপেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করে নিলেই হল। ইউটিউব, ইউডেমিতে শেখা অনেক অনেক বেশী ভাল। শিখে কাজ করার একটা স্কোপ দরকার। হায়ার সেকেন্ডারী পাশ করে, সেটা পাড়ার মোবাইল কোম্পানীতে শুরু করাই ভাল। তারপর আস্তে আস্তে আরেকটু বড়, আরো বড় এইভাবে কোম্পানী চেঞ্চ করে শিখতে হবে। সাথে সাথে যেসব প্ল্যাটফর্মে কোডিং শেখানো হয় [ সবই প্রায় বিনাপয়সায়, যেমন গুগুল জ্যাম, মাইক্রোসফটের কোডিং শেফ] সেখানে অন লাইনে শিখতে হবে। এইভাবে চললে, যখন তার সমবয়সীরা একটা বিটেক ডিগ্রির পেপার নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে, তখন সে, পকেটে চারটে চাকরি নিয়ে ঘুরবে!
পশ্চিম বঙ্গে [ বা ভারতেও] সরকারি বা বেসরকারি কলেজ গুলোতে একজন কোডিং শিক্ষক ও নেই- যা গুগুল জ্যাম লেভেলের ৫০% প্রশ্ন ক্লিয়ার করতে পারবে, বা ছাত্রছাত্রীদের হেল্প করতে পারবে। ভারতের যেসব ছাত্ররা গুগুল জ্যামে ভাল পারফর্ম করছে, নিজেদের উৎসাহে, নিজেদের চেষ্টায় করছে। তাদের প্রাণখোলা স্যালুউট!
অর্থাৎ স্কিল শেখাটাই আসল-বাকি সবকিছুই বর্তমানে নকল। আমি কদিন আগে একটা পডকাস্ট করেছিলাম-কেন বিটেক পাশ করার পর, একজন সতীর্থ, অন্যজনের থেকে পাঁচ বছর বাদে পাঁচগুন ইনকাম করবে।
যে ছেলেটি অন্য সতীর্থর থেকে পাঁচগুন ইনকাম করবে সে কি ক্লাসের ফার্স্ট বয়? মোটেও না। যে কেরিয়ারে স্কিল শেখাকে, কোম্পানীর ব্রান্ড ইত্যাদির থেকে বেশী গুরুত্ব দেবে, সেই জিতবে এই টিকে থাকার খেলায়। আমি ভিডিওটি এখানে দিলাম।
No comments:
Post a Comment