আদানী বনাম হিন্ডেনবার্গ- নেপথ্য ভাষন
বিপ্লব পাল, ২৯শে জানুয়ারী
(১) তারা তাদের রিসার্চ জন সমকক্ষে এনেছেন এবং আদানী গ্রুপকে তা ভুল প্রমানিত করতে আহ্বান করেছেন
(২) এর আগে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ প্রায় ১৭টি কোম্পানীর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ এনেছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল নিকোলা ট্রাক কোম্পানী। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোর্টে জালিয়াতি প্রমানিত। নিকোলার মালিক ট্রেভর মিল্টন এখন আমেরিকার জেলে যাওয়ার অপেক্ষায়। তার অপরাধ কোর্টে প্রমানিত। সুতরাং হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ কর্পরেট জালিয়াতি ধরার জন্য পৃথিবীর সব থেকে সমর্থ কোম্পানী। তাদের ট্রাক রেকর্ড ১০০%।
(৩) হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ, আদানীগোষ্টিকে আমেরিকান কোর্টে মামলার জন্য আহ্বান করছে প্রকাশ্যে। তারা জানে আদানীর সেই ক্ষমতা নেই। কারন সব কর্পরেটের পাছাতেই গু লেগে থাকে। তা শেয়ারহোল্ডাররা জানে না। কোর্টে গেলে, সেসব ও বেড়িয়ে আসবে। সেই রিস্ক আদানী নেবে না। সুতরাং এখনো পর্যন্ত আদানী গোষ্টী হিন্ডেনবার্গের একটি অভিযোগ ও খন্ডাতে কোর্টের দ্বারস্থ হয় নি। শুধু মিডিয়াতে বক্তব্য রেখেছে।
(৪) হিন্ডেলবার্গ রিসার্চ শর্টসেলার ফার্ম। অর্থাৎ তারা শেয়ারবাজারে বেট করেছে আদানীর শেয়ার ভ্যালু কমবে। এবং তাদের বেট ফেইল করলে হিন্ডেলবার্গ রিসার্চ হাজার হাজার কোটি টাকা হারাবে। সুতরাং, তারা সব দিক না দেখে এই রিসার্চ রিপোর্ট ছাড়ে নি। ভুল হলে, তাদের প্রচুর লসের সম্ভাবনা।
আদানী গোষ্ঠীর শেয়ার জালিয়াতি থেকে ভারতের কি কি শিক্ষা নেওয়া উচিত, সেটাও হিন্ডেল্বার্গ রিসার্চ রিপোর্টেই আছে -
(১) ভারতের শেয়ার মার্কেটে এক্টিভিস্ট শর্ট সেলার কম। ফলে ভারতের শেয়ার মার্কেটে জালিয়াতির সম্ভাবনা ১০০%। কারন ভারতের মার্কেট কন্ট্রালাররা সবাই রাজনৈতিক পার্টির সাপোর্টে ক্ষমতায় আসে। আদানির জালিয়াতি ভারতের মার্কেট কন্ত্রোলার (সেবি) ধরতে গেলে, সেবির চেয়ারম্যানের চাকরি যাবে আগে।
(২) আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক। ইন্সাইডার ট্রেডিং, মানি লন্ডারিং থেকে একাউন্টিং জালিয়াতি। এগুলো সেবি দেখেও দেখে নি। তার কারন ও হিন্ডেল্বার্গ রিপোর্ট বলছে- যারাই আদানি গোষ্ঠির বিরুদ্ধে বলতে গেছে তারা চাকরি হারিয়েছে, না হলে জেলে, নইলে স্বর্গে!
(৩) সুতরাং এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে , ভারতে মার্কেট কনফিডেন্স ফেরাতে হিন্ডেল্বার্গের আহ্বান-যে ভারতে এক্টিভিস্ট শর্টসেলার আরো সক্রিয় হোক-যারা কর্পরেট জালিয়াতির ধরবে এবং তার থেকে শর্ট সেলিং করে লাভ করবে। এতে মার্কেটের ওপর বিশ্বাস আরো বাড়বে।
তবে ব্যপারট এত সহজ সরল না। এটা সামনের খেলা। এর পেছনে আছে আরো নেপথ্য সমীকরন।
#১ বিজেপির টাকার উৎস কে বা কারা সবাই জানে। এটাও সবাই জানে আগামী ১০ বছরে বিজেপিকে সরারনোর সম্ভাবনা কম। তার কারন ও সেই টাকার উৎস। তারা টাকা দিয়েই রাজনীতি মিডিয়া সব কিনে নিয়েছে। সুতরাং ভারতের বিদেশ নীতি কন্ট্রোল করতে গেলে, সেই টাকার উৎসে নিয়ন্ত্রন দরকার। ভারত প্রায় স্বাধীন ভাবে বিদেশ নীতি নির্ধারন করছিল- রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে তা প্রমানিত।
এখানে আরেকটা জিনিস অনেকেই জানে না। আদানীর ইনভেস্টর বা লোনারদের মধ্যে এখন ৬০% ই বিদেশী। দেশী ব্যাঙ্কগুলো এখন মাইনরিটি। তাদের মধ্যে অধিকাংশই মিডল ইস্টের তেলের টাকা-সভারেন ফান্ড।
ভারতের বিদেশনীতি এবং ভারতের রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করতে [ যা যে কোন বিদেশী শক্তিই চাইবে] আদানীকে নিয়ন্ত্রনে আনা জরুরী-কারনে সেক্ষেত্রে বিজেপিকে নিয়ন্ত্রন করা যাবে অনায়াসে।
# ২ যদি ধরেও নিই আদানী ১০০% জালিয়াতি করেছে শেয়ার ম্যানিপুলেট করে- যেটা দেখতে হবে, আদানীর টাকা কোথায় যাচ্ছে। এই টাকাতে ভারতে ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নত হচ্ছে। ভারতের বিমান বন্দর, পোর্ট, এনার্জি, গ্রিন এনার্জি এই সব সেক্টরে আদানী টাকা ঢালছে- যাতে ভারতের উন্নতি হয়। আমি মুম্বাই, দিল্লী এয়ারপোর্ট দেখে চমকে গেছি। এগুলি আদানীর তৈরী।
# ৩ পাশাপাশি এটাও ঠিক ভারতের পাবলিক ব্যাঙ্কগুলো যথা স্টেট ব্যাঙ্ক, এল আই সি, যারা আদানীকে টাকা ধার দিয়েছে- তারা বর্তমানে বিপদে। কতটা এই বিপদ তা আগামী দিনের ইতিহাস বলবে। তবে আদানী গোষ্ঠির দেউলিয়া হবার সম্ভাবনা নেই। কারন তাদের পোর্ট এনার্জি সিমেন্ট ব্যবসা বেশ লাভেই চলে। শেয়ারের দাম কম হলেও , তারা মনোপলি ব্যবসার জন্য ধার শোধ করতে এখনো সমর্থ। সুতরাং জনগনের টাকা মার যাবে-সেই ভয় এখনো নেই। আদানী কিন্ত টাকার সদ্বাব্যবহার করেছে ইনফ্রাস্টাকচারে টাকা ঢেলে।
তাহলে আদানী গোষ্ঠির উত্থানে ভারতের ক্ষতি ঠিক কোথায়? মূলত দুটো জায়গায়
(১) তারা ব্যবসা এবং রাজনীতি দুটো ক্ষেত্রেই মনোপলি তৈরী করেছে। দিদি মোদি -দুজনেই তার পকেটে। ফলে আদানীর কোন জালিয়াতি ভারতের কোন সরকারের পক্ষে চেক করা সম্ভব না।
(২) এতে বাকি ছোট ছোট অন্য শিল্প গোষ্ঠির প্রচুর অসুবিধে। তারা আদানিকে তাদের ব্যবসা বেচে দিতে বাধ্য হচ্ছে এবং হবেও। এতে মার্কেটে কম্পিটিশন কমছে। যা মার্কেটের জন্য ভাল না।
(৩) ১ ও ২ কারনের জন্য ভারতে বিদেশী ইনভেস্টররা ক্রমাগত পিছু হটবে।
আদানির পজিটিভ সাইড হচ্ছে-তারা সেই সেব সেক্টরে টাকা ঢালছে- যা ভারতে সবার আগে দরকার। ইনফ্রাস্ট্রাকচার। এয়ারপোর্ট সিপোর্ট এনার্জি। গণতন্ত্রের দরুন ভারতে এসব সেক্টরের অগ্রগতি খুব দুর্বল ছিল। কারন জমি অধিগ্রহন করে ইনফ্রা বানানো গণতন্ত্রে কঠিন কাজ। সেটা আদানি পারছে টাকার জোরে-সব পলিটিক্যাল পার্টিকে পকেটে পুরে। সেটা ভাল না খারাপ, তাও ইতিহাস বলবে। ইতিহাসের গতি এতটা রৈখিক ও নয়।
সুতরাং ওই ভাবে ব্ল্যাক হোয়াইট চশমা পরে, আদানীকে নিয়ে সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। ৩৬০ ডিগ্রি ভাবলে অনেক নতুন চিন্তা বেড়িয়ে আসবে। সবটাই আসলে ক্ষমতার লীলাখেলা। সেক্সপিয়ার ধার করে লিখি-uneasy lies the head that wears the crown
তবে হ্যা -রাজায় রাজায় যুদ্ধ হবে, উলুখাগরার ( রিটেল ইনভেস্টর-জনগন) প্রাণ যাবে। এত চিরকালই হয়ে এসেছে।
No comments:
Post a Comment