গণতন্ত্রে বাঙালী শুধুই মুর্গী হয়েছে- ডিম খেয়েছে অন্যরা!
বিপ্লব পাল - ১১/১৯/২০২০
আনন্দবাজারের আজ তিনটে খবর-তিনটেই বাঙালী ভাবাবেগে সুড়সুরি কাটা
(১)বাইডেন বাঙালির মাহাত্ম্য বোঝেন, দিল্লি বোঝে না - এর উত্তর আমি কাল দিয়েছিলাম। ক্যাপিটালিজমে পুঁজিই সব। পজিশনগুলি বোরে মাত্র। শুধু আজকের প্রতিবেদনে প্রণব মুখার্জির নাম এসেছে দিল্লীতে বাঙালীর মুখ হিসাবে। উনি বাংলার জন্য গণিখানের মতন বিশেষ কিছু করেছেন বলে জানা নেই। উনার থেকে প্রতিভাবান রাজনীতিবিদ বাংলায় অনেকেই ছিলেন । কিন্ত কেউ আম্বানীর দাক্ষিন্য পায় নি। ধিরুভাইকে প্রণব টেনেছেন। আম্বানীরা বিশ্বাসঘাতকতা করে না। তারাও প্রণব আঙ্কলকে দিল্লীতে রেখেছে। ভারতের পুঁজিবাদিদের কাছে প্রণব বড়ই কাছের লোক ছিলেন। ফলে তার উত্থান এবং চেয়ারে টান পড়ে নি। শুধু প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন নি। কারন গান্ধী ফ্যামিলি এমন কাউকে বসাবে না, যাতে তাদের চেয়ার টলে। আম্বানী থেকে গান্ধী-সবটাই হিসাব মত চলে উঠেছেন প্রণব। এতে আম্বানীর বিস্তর লাভ হয়েছে। কিন্ত বাঙালীর কি লাভ হয়েছে -আম বাঙালী জানে বলে আমার মনে হয় না। কিন্ত আনন্দবাজার জানে।
(২) দুই বিজ্ঞানী মৃনাল কান্তি দাশগুপ্তকে নিয়ে। মৃনালবাবু-অমল রায় চৌধুরীর মতন প্রতিভাবান কেউ নন। উনার গাইড ছিলেন রবার্ট হ্যানএব্রি ব্রাউন -যিনি একজন বিখ্যাত রেডিও এস্ট্রোফিজিসিস্ট । ইংল্যান্ডে ম্যাঞ্চেস্টর বিশ্ববিদ্যালয়ে পি এই চ ডি করার সময়, উনার গ্রুপ রেডিও এস্ট্রনমির ওপর একটি গুরুত্বপূর্ন আবিস্কার করে-যার ব্যাখ্যা আমরা খুব সম্প্রতিই পেয়েছি-কিভাবে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যকহোল র্যাডিয়াল জেটের মাধ্যমে রেডিও বিপুল রেডিও তরঙ্গ বিকিরন করে। এই ভদ্রলোককে নিয়ে দুটো সমস্যা আছে। এক, উনি ওই পিইএচডির তিন বছরে যা করেছেন, তাই উনার সারা জীবনের রিসার্চ! কোলকাতায় ফিরে আর বলার মতন কিছুই করতে পারেন নি। কিছু করতে পারেন নি বললে ভুল হবে। সিপিএমের লেজুড় হয়ে রাজ্যের অনেক গুরুত্বপূর্ন পদে ছিলেন। এবং দুই, আরেকজন বাঙালীকে নোবেল প্রাইজ থেকে বঞ্চিত করেছেন। তিনি হচ্ছেন ডাক্তার সুভাষ মুখোপাধ্যায়। যিনি ১৯৭৮ সালে প্রথম টেস্ট টিউব বেবি দুর্গার জন্ম দেন। কিন্ত সেই সময় সিপিএম সরকার তার কাজ মৌলিক না ঢপের সেটা বিশ্লেষনের জন্য এক কমিটি বসায়। এই কমিটিতে ছিলেন মৃনাল দাশগুপ্ত। কমিটি কোন কিছু ভাল করে ইনভেস্টিগেট না করেই নাকচ করে দেয় সুভাষ বাবুর কৃতিত্ব। অপমানে অবহেলায় আত্মহত্যা করেন সুভাষ বাবু।
বাকীটা পাঠকই বিচার করুন।
(৩) তৃতীয় সুড়সুরি স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি বিশ্বের প্রথম ২% বিজ্ঞানীর নামের একটা লিস্ট বার করেছে। সেই লিস্টে ১ লাখ ৬০ হাজার বিজ্ঞানীর নাম আছে। এর মধ্যে ১৪৬০জন বিজ্ঞানী ভারতের। তাদের মধ্যে শ দুইয়েক বাঙালী আছেন।
পুরো ব্যপারটা এইভাবে ভাবুন
ভারতের জন সংখ্যা পৃথিবীর ২০%, অথচ টপ বিজ্ঞানীর লিস্টে ১% ও নেই।
আরেকটা লিস্ট আছে প্রথম ৫০০ জন বিজ্ঞানীর। সেই লিস্টে ভারতের ৩ জন ও নেই।
এগুলো বাদই দিলাম। লিস্ট জিনিসটাই ঢপের। কিন্ত এখনো ভারতকে তার ৯০% প্রযুক্তি বিদেশ থেকে কিনতে হয়। কৃষকদের জন্য কতটুকু আবিস্কার হয়েছে? সর্বত্র যে টোটো চলে তার ব্যাটারি আসে চীন থেকে।
যে বিজ্ঞান সমাজের কাজে লাগে না, দেশের কৃষক মজুরদের কাজে আসে না, তাতে কি লাভ? কিছু মৌলিক গবেষনা অবশ্যই থাকা উচিত। কিন্ত আরেকটা অমল রায়চৌধুরী বা সত্যেন বোস কি তৈরী হচ্ছে? এক সবেধনমনি অশোক সেন আছেন। কিন্ত তারও বয়স হল।
(১)
এবার আরেকটু ভাবুন- আনন্দবাজার কোনদিন লেখে নি
১) বাঙালীর দুই আবেগের জায়গা মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল। এই দুটো ক্লাবের মালিকানার জন্য কোন বাঙালী শিল্পপতি পাওয়া গেল না। কি করে পাওয়া যাবে? কোন বাঙালী শিল্পপতিই নেই! এদের মালিকানা এখন মারোয়াড়িদের হাতে।
২) সব ভাল বাংলা সিনেমা তৈরী হয় শ্রীকান্ত মোহতা, শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্ম। বাংলার সংস্কৃতিও সম্পূর্ন মারোয়ারিদের হাতে
৩) ভারতের প্রথম ১০০ টি বিজনেসম্যান ( নেট ওয়ার্থে) এর মধ্যে মাত্র একজনও বাঙালী নেই। ৫৪ নাম্বারের কিরন মজুমদার শ আছেন-কিন্ত তিনি নিজেকে গুজরাতি বলেই দাবী করেন ( যদিও তাদের ফ্যামিলি বহুদিন পূর্বে বাংলা থেকেই গুজরাতে গেছিল )
আমি যে ১-৩ পয়েন্ট দিলাম, তাতে সত্যিই বোঝা যায় বাঙালী সম্পূর্ন পুঁজিহীন ভিখিরীর জাতে পরিনত হয়েছে বহুদিন। বাংলা ভাগ হল কেন ? দিল্লীতে বাংলার স্বার্থ দেখার কেউ সেদিন ছিল না ? কারন বাঙালীর পুঁজি ছিল না। ফলে নেতাজির পর, বাংলা থেকে ন্যাশানাল লেভেলের কোন নেতা ওঠে নি। শ্যামাপ্রসাদের হিন্দু মহাসভা বাংলাতেই ভোট পায় নি।
আজ গুজরাতের পুঁজি আছে বলেই বর্তমান ভারতের সব থেকে শক্তিশালী দুই নেতা গুজরাতি। গান্ধীজি শুধু নিজের ক্যালিতে গান্ধী হোন নি- তার গান্ধী করে তোলার পেছনে বিড়লার পুঁজির বিরাট ভূমিকা ছিল। শুধু সেটা নিয়েই আমি আরেকটা লম্বা লেখা লিখতে পারি। এখানে শুধু একটা খুচরো উদাহরন দিচ্ছি। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী গড়তে গিয়ে একদা প্রায় দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলেন। ভারতে ঘুরে ঘুরে নাচের শো করে টাকা তুলছিলেন। তার এই কষ্টের কথা জানতে পেরে, সেই যুগে ৬০,০০০ টাকা পাঠান গান্ধী। সেই টাকা দিয়েছিল বিড়লারা। গান্ধীকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ধারনা /লেখা এই ঘটনার আগে এবং পরে একটু চেক করে দেখবেন। নেতা বানাতে হয়। তাতে টাকা লাগে।
বল্লভ ভাই প্যাটেলের পেছনে গুজরাটি পার্শি পুঁজি ছিল।
নেহেরুর পেছনে পার্শী, সিন্ধ্রী, কাশ্মীরি পুঁজি ছিল।
নেতাজির পেছনে কিস্যু ছিল না। টাটাদের ব্যাকাপ পেতে উনি চেষ্টা করেছিলেন। পান নি। ফলে উনার প্রবল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও, কংগ্রেস তাড়িয়ে দিল।
প্রনব মুখার্জির পেছনে ছিল আম্বানীর পুঁজি।
এখন মোদি , শাহের পেছনে আদানী আম্বানীর পুঁজি।
শুধু ক্যারিশমাতে কেউ নেতা হয় না। পেছনে পুঁজির সাপোর্ট ও লাগে। গণতন্ত্রে সেটাই বাস্তব। বাঙালীর পুঁজি নেই। ফলে ন্যাশানাল লেভেলে নেতা নেই।
কিন্ত সুরসুড়ি আছে। যারা নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ ইত্যাদিদের নিয়ে বাঙালীর আবেগকে ১০০% এক্সপ্লয়েট করে ভুলিয়ে দেবে একটা জাতির মর্যাদা, প্রতিষ্ঠা , রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য সবার আগে দরকার পুঁজি। ফাঁকা আবেগ না। পুঁজি যদি না থাকে, ডজন খানেক নোবেল লরিয়েট, আর সৌমিত্রর মতন এক্টর থেকেও কিস্যু হবে না।
সৌমিত্ররা দিনের শেষে সেই হনুমান চল্লিশার বিজ্ঞাপনই করবে।
No comments:
Post a Comment