এটি বিশ্বের প্রথম ৫০ টি ইনোভেটিভ কোম্পানীর লিস্ট। লক্ষ্য করুন এর মধ্যে একটিও ভারতীয় কোম্পানী নেই। টাটা, আম্বানী কেউ নেই।
অথচ এই কোম্পানীগুলিতে প্রচুর ভারতীয় আছেন উচ্চপদে। ভারতে এই সব কোম্পানীগুলির বড় আরন্ডি আছে। অনেক ক্ষেত্রে ( গুগুল, ফেসবুক, মাইক্রোসফট) ভারতীয়রাই এই সব কোম্পানীগুলির মূল ইনোভেটিভ "ফোর্স"।
অথচ এদের একটও ভারতীয় না।
অনেকেই আশ্চর্য্য হবেন। ভারত এবং আমেরিকার শিল্প সংস্থায় দীর্ঘ কুড়ি বছর কাজ করার সুবাদে আমি একদম অবাক হই নি।
এর মূল কারন ভারতের ব্যবসা এবং শিল্প চালায় যে শ্রেনীটি-তারা মূলত মারোয়ারী, গুজরাতি, পার্শী এবং কিছু সিলেক্টিভ বিজনেস কমিউনিটি। শিল্প স্থাপন থেকে শিল্প চালনার ক্যাপিটাল কেবল মাত্র এই বিজনেস ফ্যামিলিগুলির হাতেই আছে। ভারতের মূল সমস্যা হচ্ছে ক্যাপিটাল যেসব ফ্যামিলিগুলোর হাতে, শিল্প পরিচালনা মূলত সেই সব ফ্যামিলির ছেলে মেয়েরাই করে। ইনভেস্টর এবং এক্সিকিউটিভ ক্লাসটা আলাদা না। যেমন ধরুন গোয়েঙ্কারা। ওদের ছেলেরাই চালাচ্ছে। আবার তারাই কোম্পানীর মালিক-কারন ক্যাপিটাল তাদেরই।
আমেরিকা/ইউরোপ বা জাপানে এমন হয় না। এখানে ক্যাপিটাল বা ওনারশিপ, পাবলিক বা প্রাইভেট হতে পারে। কিন্ত কোম্পানীর সিইইও বা যারা চালাবে-তারা মূলত পেশাদার। ফলে আমেরিকান কর্পরেট স্ট্রাকচার চলে মেরিটোক্রাসিতে। আমেরিকার সিইওরা কিন্ত একদম গ্রাউন্ড লেভেল থেকে উঠে আসা মানুষ।
ভারতে এলন্টি, ইনফোসিস কিছুটা ওইভাবে চলে। যার জন্য এদের কর্পরেট গভর্নেন্স ভাল। কিন্ত অধিকাংশ কোম্পানীতেই মালিকদের ছেলে মেয়ে ভাইপোরা উচ্চপদ অধিকার করে বসে আছে। গোয়েঙ্কা, আম্বানীরা এইভাবেই কোম্পানী চালাচ্ছে।
ভাবছেন এর সাথে ইনোভেশনের সম্পর্ক কি? আছে। ক্যাপিটালিস্ট স্ট্রাকচারে সব কিছুই পুঁজির সাথে গাঁটছাড়া। হাওয়াতে কিছু হয় না। ফ্যামিলি বিজনেসগুলো ভারতে ইনোভেশনের ওপর জোর দেয় না। তারা টেকনোলজি লাইসেন্সেই আস্থা রাখে। কারন তাতে রিস্ক কম। রিটার্ন অনেক বেশী। এটাই ভারতের বিজনেস ফ্যামিলি কালচার। এই কালচারে বড় হওয়া সিইওদের দুটো সমস্যা (১) ইনোভেশনের ক্ষেত্রে বিদেশী নির্ভরতা (২) মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রভু ভৃত্যের সামন্ততান্ত্রিক কালচার। বিড়লা, আম্বানী, টাটা, গোয়েঙ্কা -এদের সবার ব্যবসার ইতিহাস গোলমেলে। বৃটিশ আমলে কেউ আফিঙ, কেউ সোনা, কেউ তুলো, কেউ বেশ্যাদের স্মাগলিং করে টাকা করেছিল। আমবাগানে ত আর হঠাৎ করে কাঁঠাল ফলবে না। সে যতই চতুর্থ বা পঞ্চম জেনারেশনের আম বাগান হোক।
ফলে ট্যলেন্টেড লোকেরা এইসব কোম্পানীতে কাজ করতে যায় না। যায় সেকেন্ড রেটেড ট্যালেন্ট বা লিডারশিপ।
এবং এইভাবেই চলছে। ভারতের ফ্যামিলি কোম্পানীগুলো টেকনোলজি লাইসেন্স করে লাভ ভাল করে। কারন বিশাল মার্কেট। ভারতের বিশাল মার্কেট এক্ষেত্রে টেকনোলজি ইনোভেশনের সহায়ক না হয়ে অন্তরায় হয়েছে।
এখানেই ভারতের দুর্বল ক্যাপিটাল স্ট্রাকচারের সমস্যা। আমেরিকাতে একজন অভিজ্ঞ এক্সিকিঊটিভ নতুন আইডিয়া নিয়ে মার্কেটে ঢুকতে চাইলে পেশাদার ইনভেস্টর পাবেন। ভারতে ধরুন একজন মারোমাড়ী মালিকের অভিজ্ঞ বাঙালী এক্সিকিউটিভ দেখলেন সেই মার্কেটে নতুন আইডিয়া নিয়ে নতুন ধরনের ব্যবসা খুলতে পারেন। কিন্ত সেই বাঙালীকে টাকা কে দেবে? ভারতে ব্যবসার টাকা পুরোটাই মারোয়ারি, গুজরাতি, পাঞ্জাবীদের হাতে। তারা শুধু নিজেদের কমিউনিটিতে মূলত নতুন বিজনেসে টাকা খাটায়।
ফলে ভারতের শিল্প ব্যবসার সামন্ততান্ত্রিক কাঠামো-মানে ফ্যামিলি বিজনেস যাওয়ার না। আর ওটা না গেলে, ভারতে ২৪ টা কেন ২৪০টা আই আই টি খুললেও কিছু হবে না। আই আই টিয়ানদের মাথায় যদি মারোমারী গুজরাতি মালিক থাকে, সে লাভ-ক্ষতির হিসাব করা ম্যানেজার হবে। ইনোভেটিভ ইঞ্জিনিয়ার হবে না।
তবে নতুন স্টার্টাপ কালচারে ভারতে এসব বদলাচ্ছে। আস্তে আস্তে বদলাতেই হবে। কিন্ত সময় লাগবে। মুশকিল হচ্ছে চিনের সরকার তার প্রতিভাবান ইঞ্জিনিয়ারদের যে সাপোর্ট দিচ্ছে ভারতে তা অনুপস্থিত। অনেক আই আই টির ছাত্র স্টার্টাপ খুলছে। কিন্ত কোন সরকারি সাহায্য নেই। ইনভেস্টর ও কম। চীনকে শুধু গালাগাল দিলেই হবে না। চীনের সরকার কিভাবে প্রতিভাবান ইঞ্জিনিয়াদের টাকা দিয়ে কোম্পানী খুলতে সাহায্য করে- সেসব ও দেখে শিখতেই হবে। শুধু ওই মুখে জাতীয়তাবাদি ডায়ালোগ মেরে ভারত উঠবে না।
No comments:
Post a Comment