Saturday, October 10, 2020

রায়চৌধুরী সমীকরন থেকে পেনরোজ হকিং সিঙ্গুলারিটি তত্ত্ব -পর্ব-১

                                                                     (১)
রজার পেনরোজ বেশ ঘন ঘন কোলকাতায় এসেছেন গত দুই দশক। মূলত তার ব্লক ব্লাস্টার বেস্ট সেলার " এম্পায়ার নিউমাইন্ডের" দৌলতে কিশোর বয়স থেকেই তার নাম শুনেছেন অধিকাংশ বুদ্ধিজীবি বাঙালী।্পেনরোজের  কোয়ান্টাম কনসাসনেসের কনজেক্টচার খায় না মাথায় দেয়, সেটা না বুঝলেও, অজানা অচেনা চেতনার বিজ্ঞান যে বিজ্ঞানের চেনাজানা পথে বোঝা যাবে না, সেটুকু পেনরোজ পড়েই জেনেছি কলেজ জীবনে। 

 রজার পেনরোজ নোবেল না জিতলেও কিছু যায় আসত না। তিনি গণিত এবং অঙ্কে এতকিছু নতুন ধারনা, নতুন সমাধানের জন্ম দিয়েছেন ( পেনরোজ টাইলিং, পেনরোজ লুকাস আর্গুমেন্ট ইত্যাদি)  সেগুলোর ফর্দ বানালে মনে হবে,  সেটা বুঝি একটা গোটা দেশের এক শতাব্দির অবদান!  তার কাজ নিয়ে জার্নালিস্ট সিমপ্লিফিকেশনে লেখা বেশ কঠিন, কিন্ত ইচ্ছা রইল পরে লিখব। 

 রজার নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন ব্ল্যাকহোলের পদার্থবিদ্যায় তার অবদানের জন্য- যা পেনরোজ হকিং সিঙ্গুলারিটি তত্ত্ব নামে খ্যাত।  যার উৎসে আছে এক বাঙালী বিজ্ঞানীর নাম- অধ্যাপক অমল রায়চৌধুরী-যিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে বহুদিন অধ্যাপনা করেছেন।  এই তথ্যটুকু নানান ওয়েব্জাইনের দৌলতে সবাই জেনে গেছে। কিন্ত কোন লেখাতেই রায়চৌধুরী সমীকরন এক্সাক্টলি কি- সেটা নিয়ে কোন সহজ আর্টিকল চোখে পড়ল না।  যেহেতু, তার কাজ ডিফারেন্সিয়াল জিওমেট্রি নিয়ে, এটা সহজ করে বোঝানো বেশ কঠিন। আমি এই প্রবন্ধে চেষ্টা করছি,  সহজ করে বোঝাতে, যাতে একটা সাধারন ধারনা হয়। ( তবে লিখতে গিয়ে বুঝলাম কাজটা বেশ কঠিন)। 

                                                                              (২)
আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরী অব রিলেটিভিটির প্রকাশকাল ১৯১৫। ঘনঘোর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মধ্যেই আইনস্টাইন সুন্দর একটি টেন্সর সমীকরন দিলেন-কিভাবে মাস অর্থাৎ ভরের প্রভাবে স্থান-কালের জ্যামিতিটাই বদলে যাবে। 

কিন্ত সমীকরন হচ্ছে একটা সিস্টেম কিভাবে আচরন করবে সেটা বোঝানোর জন্য বিভিন্ন রাশিগুলির ( যেমন নক্ষত্রের ভর, গ্যালাক্সির ভর, তাদের স্থান কালের জ্যামিতির নানান প্যারামিটার)  মধ্যে যে সম্পর্ক, সেটির গণিতিক রূপ।  অর্থাৎ পদার্থবিদ্যা বা বিজ্ঞানে ইকোয়েশন হচ্ছে ( বা যেকোন গণিতের জন্যই ইহা সত্য- তা বিজনেস গণিত হলেও ) মেকানিকের স্ক্র ড্রাইভার বা ইলেক্ট্রিশিয়ানের মাল্টিমিটার।  
টুল বা তাত্ত্বিকদের সেই যন্ত্র হচ্ছে ইকোয়েশন-যেটা দিয়ে তারা মহাবিশ্বের প্রকৃতির রহস্যের ঘোমটা খুলবেন। 

তা ধরুন আইনস্টাইন ১৯১৫ সালে শুধু জেনারেল থিওরী অব রিলেটিভিটির সমীকরনটাই দিয়ে গেলেন। তাতে কিন্ত সমাধান নেই। কিভাবে আইন্সটাইনের সমীকরনের সমাধান করা যায়, সেটা আরেকটা বিরাট ইতিহাস গত একশো বছর ধরে। 

তত্ত্ব-সমীকরন দিলেই ত বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন না। কারন তত্ত্ব/ সমাধান  তৈরীর মূলে থাকে "এসাম্পশন"-অসংখ্য অনুমান। সেই অনুমান ঠিক কি করে বুঝবেন?

  সুতরাং  আইনস্টাইন শুধু রিলেটিভিস্টিক গ্রাভিটেশনের সমীকরন দিয়ে দেবেন এবং বিখ্যাত হবেন, ব্যপারটা মোটেও অত সহজ না ১৯১৫ সালে।   তার সমীকরনের অসংখ্য সমাধান থাকলেও, তাকে দুটি ক্ষেত্রে সমীকরনটা সমাধান করতে হল যেখানে পরীক্ষালদ্ধ প্রমান সম্ভব--

          আইনস্টাইনের হাতে যে ডেটা ছিল, যা নিউটনিয়ান ফিজিক্স দিয়ে ব্যখ্যা করা যায় না- সেটা হচ্ছে মার্কারী বা বুধের প্রিশেশন।  সমস্ত গ্রহ সূর্যের চারিদিকে উপবৃত্তাকার কক্ষে ঘোরে। এটা আমরা জানি। এই উপবৃত্তাকার কক্ষপথ একটা সমতলে থাকে।মুশকিল হচ্ছে এই যে সমতলে সমস্ত গ্রহ ঘুরছে, সেই সমতলটি আবার একটু আধটু দুলতে থাকে-বেশ নিয়ম মেনে, লাট্টুর মতন। এর কারন বুধের ওপর অন্যান্য গ্রহদের টান ( তা সূর্য্যের থেকে যতই কম হোক না কেন)।  

   যোশেফ ভার্নিয়ার ( যার নামে ভার্নিয়ার স্কেল), ১৮৫৯ সালে জানালেন, নিউটনিয়ান মেকানিক্স দিয়ে এই  প্রিশেসন ডেটা মিলছে না। উনি ১৬৯৭ থেকে ১৮৪৮ সাল পর্যন্ত মার্কারির সমস্ত প্রশেশনের ডেটা নিলেন।  দেখাগেল মার্কারির প্রিশেন এঙ্গল- অর্থাৎ এই যে হেলছে দুলছে নিজের অক্ষ থেকে, যতটা এঙ্গলে হেলেছে তা ৫৭০ সেকেন্ডের কাছাকাছি। নিউটনিয়ান মেকানিক্স দিয়ে ৫৪০ পর্যন্ত ব্যখ্যা করা যাচ্ছে । ৩০ সেকেন্ডের পার্থক্য ( বর্তমানে আমরা জানি এক্যুরেট ৪২ সেকেন্ডের পার্থক্য থাকে)- কোন ব্যখ্যা নেই।

  ১৯১৫ সালেই তার সেই ভীষন জটিল সমীকরনের বেশ সহজ সরল এক সমাধান করে ( এবং যা করতে গিয়ে তাকে এক গুচ্ছের অনুমানের সাহায্য নিতে হয়) আইস্টাইন  দেখালেন এই ৩০ সেকেন্ডে পার্থক্য, তার জেনারেল থিওরী অব রিলেটিভিটি  ব্যখ্যা করতে পারছে। 

 কিন্ত বিজ্ঞানীরা তাকে বিশ্বাস করবে কেন? রেজাল্ট জানা থাকলে, অনুমান গুলি ম্যানুপুলেট করা সহজ। সুতরাং তার সমীকরন যতই সুন্দর হোক, দরকার ছিল এই সমীকরন থেকে "প্রেডিক্ট" করা কোন ঘটনা -যা নিউটনিয়ান মেকানিক্স দিতে পারবে না-এবং এস্ট্রোনমাররা তা পরীক্ষা করে দেখতে পারবেন।

 হেনরী ক্যাভেন্ডিশ ( হ্যা আমাদের সেই বিখ্যাত কেমিস্ট যিনি হাইড্রোজেন আবিস্কার করেছিলেন) ১৭৯৭ সালে দেখান যে নিউটনিয়ান মেকানিক্সএর একটি প্রতিপাদ্য হচ্ছে, সূর্য্যের মতন বৃহৎ ভরের বস্তুর কাছ দিয়ে আলো আসার সময় বেঁকে যাবে। ১৯১১ সালে আইনস্টাইন দেখালেন,  ( তখন ও জেনারেল রিলেটিভিটি আসে নি) এর মান হবে , এক সেকেন্ডের কিছু কম। এবং তার প্রেডিকশন জোহান সোল্ডনারের সাথে মিলে যাচ্ছে যিনি ১৮০০ সালে একই প্রেডিকশন করেছিলেন।

 কিন্ত ১৯১৫ সালে  জেনারেল থিওরী আবিস্কার করার সাথে সাথে আইনস্টাইন বুঝলেন, ১৯১১ সালের কাজ ভুল।  আসলে সূর্য্যের প্রভাবে যে নক্ষত্রের আলো বেঁকে যাবে ( নইলে আলোর সরলরেখায় চলা উচিত চিরকাল ) তার মান 1.75 সেকেন্ড। 

 কি করে তা মাপা যাবে? তার জন্য সূর্য্যগ্রহন হওয়া দরকার। পূর্নগ্রাস সূর্য্যগ্রহনের সময় যদি দূরের নক্ষত্রগুলোকে দেখি যা সূর্য্যের দিকে আছে তখন, তাদের আলো কতটা বেঁকেছে জানা সম্ভব। কাজটা বেশ কঠিন। কারন পার্থক্য মাত্র 1.75 second-খুব ক্ষুদ্র এবং সূক্ষ্য। 

 মুশকিল হচ্ছে সেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। সূর্য্যগ্রহন বন্ধুদের দেশে না হলে যুদ্ধের বাজারে এই পরীক্ষা করা অসম্ভব। আমেরিকান এস্ট্রনমাররা ১৯১৬ সালে রাশিয়ায় সূর্য্যগ্রহনের সময় এটা পরীক্ষা করার চেষ্টা করেন-কিন্ত  টেলিস্কোপ কেড়ে নিয়ে দেশে ফেরত পাঠিয়েছিল রাশিয়া (১৯১৭)। 

   এদিকে বৃটিশ এস্ট্রোনমার আর্থার এডিংটন এই পরীক্ষা করতে চাইছেন। কিন্ত রাষ্ট্র বলছে এইসব বিজ্ঞান ছাড়-এখন যুদ্ধে যাও।  এডিংটন যুদ্ধে সৈনিক হিসাবে গেলেন না।

শুধু তাই?  শত্রু রাষ্ট্র জার্মানীর বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কাজ পরীক্ষা করতে চাইছেন। তাকে বৃটেনের মিডিয়া জাতির শত্রু হিসাবে দাগিয়ে দিল।  বিজ্ঞানীর কাজ ত দূরের কথা, প্রায় জেলে ঢুকতে চলেছিলেন আর্থার এডিংটন। কিন্ত শান্তিবাদি হিসাবে তিনি অনড়!

 যাইহোক যুদ্ধ শেষ হলে, তিনি পরীক্ষা করার অনুমতি এবং গ্রান্ট পেলেন।  সেটা ১৯১৯ সাল।  মে ২৯, ১৯১৯ সেই বিখ্যাত দিন। অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিন আফ্রিকা-দুই জাগাতেই সূর্য্যগ্রহনের সময় নক্ষত্রদের আলোর অপরসরনের পরীক্ষা হয়।  দুই জায়গায় রেজাল্ট এক ।  1.75 second. ৩০শে মে সমস্ত বিশ্বের নিউজপেপারে এল আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিটির এই অদ্ভুত আবিস্কার।  

   বিজ্ঞানীরা এবার নিশ্চিত আইনস্টাইনের সমীকরন নির্ভুল, নিখুত এবং সুন্দর।

                                                                       (৩)

  কিন্ত এই সমীকরন নিখুঁত হওয়াটাই আবার অনেক সমস্যার জন্ম দিল। ভীষন জটিল এই টেন্সর সমীকরন। এখানে ভর, নিউটনের সমীকরনের মতন নিরীহ ঠুঁটো জগন্নাথ না। ভর এখানে এনার্জি মোমেন্টাম টেন্সর। এইটা না বুঝলে রয়চৌধুরী সমীকরন বোঝা মুশকিল। 


আইনস্টাইনের ফিল্ড ইকোয়েশনে ভর হচ্ছে " টেন্সর ফিল্ড"।  টেন্সর ফিল্ড বোঝার আগে ভেক্টর ফিল্ড বোঝা যাক।  ধরুন একটা চার্জ অন্য চার্জকে টানছে বা দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। আমরা সবাই জানি ওটা ইলেক্ট্রোস্টাটিক ফিল্ড।  সোজা ভাষায় কোন এক ডিরেকশনে ফোর্স থাকলে, সেইদিকে বস্তুর ত্বরন থাকবে। এটা ভেক্টর ফিল্ডের সহজ উদাহরন। 

  টেন্সর ফিল্ড আরো জেনারালাইজড। ধরুন একটা বাঁশ। আপনি দুমড়াচ্ছেন। মানে ক্লক ওয়াইজ বা এন্টিক্লক ওয়াইজ একটা ফোর্স দিচ্ছেন। তার মানে কি বাশটা শুধুই ওই ক্লক ওয়াইজ বাঁ এন্টি ক্লক ওয়াইজ দুমড়াবে? 

 মোটেও না। আপনি ঘোরানোর জন্য ফোর্স দিচ্ছেন-কিন্ত বাশটার ফাটল তৈরী হল ধরুন ওপর নীচ। ভার্টিকাল। কারন ম্যাটেরিয়ালের একদিকে ফোর্স দিলে, ডিফর্মেশন অন্য অনেক দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। ক্ল্যাসিকাল পদার্থবিদ্যায় এই ধরনের  শিয়ার, টর্সন ইত্যাদি নানাবিধ ফোর্স্ফিল্ড দেখতে পাবেন।

 আরেকটা উদাহরন দিই।  ধরুন জলঘোলা করছেন। আপনি বল প্রয়োগ করছেন বৃত্তাকারে-কিন্ত জল উথাল পাতাল হচ্ছে। অর্থাৎ একদিকে ফোর্স দিলেন, কিন্ত প্রভাব ছড়াচ্ছে সব দিকে। 

 এই ধরনের  ঘটনাগুলিকে ব্যখ্যাকরার জন্য গণিতের  দুটি জিনিস খুব প্রয়োজনীয় 

   এক,  টেন্সর। যা একধরনের ম্যাট্রিক্স এবং একদিকের বলপ্রয়োগ অন্যদিকে কিভাবে ছড়ায় তার একটা "রিপ্রেজেন্টেশন" বা নোটেশন দেয়। সমাধান দেয় না কিন্ত!

  দুই রিকি ফ্লো। রিকি ফ্লো দাঁড়িয়ে আছে রিকি কার্ভেচার টেন্সরের ওপর। 

  ওই যে বল্লাম বাঁশকে দুমড়ে মুরছে দিচ্ছেন। জলকে ঘুলিয়ে দিলেন। কি হচ্ছে এফেক্টটা? বাঁশটা ছিল সিলিন্ডার- কিন্ত তার তল গুলিকে সব ঘেঁটে দিয়েছেন। তারা বেঁকে দুমড়ে মুছড়ে গেছে। জলঘোলা করার সময় ভাবুন। জলের তল ছিল সমতল। কিন্ত সেই তলের জ্যামিতি সব আলাদা করে দিলেন ফোর্স চালাতে। 

   রিকি টেন্সর ডিফারেনশিয়াল জিওমেট্রির সব থেকে গুরুত্বপূর্ন রেজাল্ট। ভাবছেন ডিফারেন্সিয়াল জ্যামিতিটা কি?   ওইযে বল্লাম জল বাঁশ মাটি-এদের ওপর বলপ্রয়োগে যখন এদের জ্যামিতি বদলে দিচ্ছেন তখন কি হচ্ছে ? ক্রমাগত তাদের তলের পরিবর্তন হয়ে চলেছে।  এই পরিবর্তনশীল তলের জ্যামিতিকে ধরার জন্য রিকি টেন্সর লাগে।

 আবার ফিরে আসি আইনস্টাইনে। উনার সমীকরন বলছে বস্তুর ভরের জন্য স্থান কালের যে জ্যামিতি  তা দুমড়ে মুছরে দিচ্ছে ।  তাহলে আইনস্টাইনের সমীকরনটা এইভাবে ভাবুন 

     ভর, অর্থাৎ এনার্জি-মোমেন্টাম টেন্সর , স্থান কালের রিকি টেন্সরগুলোকে বদলে দিচ্ছে। তাহলে  আইনস্টাইনের ফিল্ড ইকোয়েশন  হবে এই রকম 

   স্থানকালের রিকি কার্ভেচার টেন্সরের পরিবর্তন =কনস্টান্ট  x মাস টেন্সর 

  বাদিকেরটা আসলে লেখা হয় আইনস্টাইন টেন্সর হিসাবে যা রিকিটেন্সরের সাথে গ্রাভিটেশনাল  মেট্রিক গুন করে পাওয়া যায়। আর কনস্টান্টের ভ্যালু , উনিভার্সাল গ্রাভিটেশনাল কনস্টান্ট/ (আলোর বেগের) ^4 

 মোদ্দা কথা আইনস্টাইনের সমীকরন মানে বিভিন্ন টাইপের মাস- মানে নক্ষত্র, গ্যালাক্সি এরা কিভাবে স্থানকালের জ্যামিতিকে বদলে দিচ্ছে, সেটা বলে দেয়। 

       আইনস্টাইনের সমীকরন এত জটিল , উনি নিজেও ভাবেন নি কেউ এর সমাধান করবে। কিন্ত জার্মান গণিতজ্ঞ কার্ল সোয়াজচাইল্ড কয়েকমাসের মধ্যেই প্রথম গ্রহনযোগ্য সমাধান আনলেন দুটো স্পেশাল কেসে 
    
        এক, যদি ভর একটি গোলক হয় ( সূর্য্য বা অধিকাংশ নক্ষত্র প্রায় গোলক)।
         দুই,  যদি ভর একটি পয়েন্ট মাস হয়। মানে ধরুন একটি কনা, যার ভর সূর্য্যের থেকেও বেশী। 

   তার সমাধানে একটা অদ্ভুত প্যারামিটার এল, যাকে এখন আমরা সোয়ার্জচাইল্ড রেডিয়াস বলব। ব্যপারটা এই, সোয়ার্জচাইল্ড সমাধানে দুটো টার্ম থাকে- একটা ( 1-r_s/r)   [ 1/(1-r/r_s)] । এর মানে দাঁড়ায় এই যে ধরুন সূর্য্যের যে ভর, তাতে সূর্য্যের ব্যাসার্ধ্য যদি ৩ কিমি হত, তাহলে সূর্য্যের জন্য তার আশেপাশের স্থান-কাল পুরো দুমরে মুছরে শেষ হয়ে যেত-মানে সব এত বেশী গ্রাভিটেশনার পুল তৈরী হত, সেখানে আলো আটকে যাবে। সব কিছু আটকে যাবে। পৃথিবীর যা ভর, তাতে তার সোয়ার্জ চাইল্ড র‍্যাডিয়াস ৯ মিলিমিটার মোটে। অর্থাৎ পৃথিবীর সবকিছুকে একটা ৯ মিলিমিটার ব্যসার্ধের গোলকের মধ্যে পুরদিতে পারলে, তার মধ্যে আলো আটকে যাবে। 

  যাইহোক অদ্ভুত প্রতিভা ক্ষনজন্মা জার্মান ইহুদি বিজ্ঞানী সোয়ার্জ চাইল্ডের।  তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। উনি নিজের ইচ্ছায়  জার্মান কামান বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। কামান বাহিনীর অঙ্ক করেন দিনে।  বাতাসের গতিবেগের ওপর নির্ভর করে কত ডিগ্রিতে কামান ছাড়ালে, কোথায় গোলা পৌছাবে।     রাশিয়ান ফ্রন্টে। এটা তার যুদ্ধের কাজ। কিন্ত রাশিয়ান ফ্রন্ট অনেক শান্ত। অধিকাংশ সময় কাজ নেই। তাই বসে বসে অঙ্ক করেন।  ১৯১৫ সালে আইন স্টাইনের ফিল্ড সমীকরন দেখে আনন্দে সেই নিয়েই পরে রইলেন একমাস । যে সমীকরন সমাধান করা প্রায় অসম্ভব মনে হয়েছিল আইনস্টাইনের কাছে,  তার কাজ দেখে আইনস্টাইন আনন্দে বিহ্ববল । সোয়ার্জচাইল্ডকে জানালেন তিনি ভাবতেই পারেন নি মাত্র একমাসের মধ্যে কেউ তার সমীকরনের এত ভাল সমাধান দেবে।

 তবে ওই সোয়ার্জচাইল্ড র‍্যাডিয়াসের ব্যপারটাই উনি বিশ্বাস করলেন না। তার মনে হল এমন বাস্তবে হওয়া সম্ভব না। 

  দুর্ভাগ্য এই যে এর কয়েকমাস বাদেই সোয়ার্জচাইল্ড মারা যান।  কিন্ত ব্ল্যাকহোলের প্রথম তাত্ত্বিক তিনিই। 

  রায়চৌধুরী তার সমীকরন দেন ১৯৫৫ সালে।  ১৯১৫-৫৫, প্রায় চল্লিশ বছর আইনস্টাইনের সমীকরনের আরো অনেক সমাধান আসবে। 

  ১৯২২ সালে ফ্রিডম্যান দেখালেন, তার সমাধানে এই মহাবিশ্ব সম্প্রসরানশীল। হাবল ১৯২৯ সালে সেটার প্রমান দিলেন। লার্মাট, রেইন্সনার, নর্সডার্ম, কের- এরাও গুরুত্বপূর্ন সমাধান দিয়েছেন। 

  তাহলে রায়চৌধুরী এক্সক্টলি কি করলেন যার জন্য তার সমীকরন এত গুরুত্বপূর্ন? 

   আসলে উনার কাজের গুরুত্ব বুঝতে গেলে প্রথমেই বুঝতে হবে, এদ্দিন (১৯৫৫) পর্যন্ত আইনস্টাইনের সমীকরনের যত সমাধান এল, তাতে মহাবিশ্বের এই বস্তুগুলিকে স্টাটিক-মানে স্থির ভরের স্থির বস্তু হিসাবে ধরা হত।  কিন্ত আসলেই ত সূর্য্য থেকে সব নক্ষত্র স্থির না- তাদের ঘুর্নন আছে-আবার গ্যালাক্সিতেও কক্ষপথে ঘুরছে। 

 সেক্ষেত্রে রিকি কার্ভেচারের কি হবে?  এটাই আমরা দেখব পরের পর্বে।