বন্ধু এবং নেতৃত্ব- দুটোই আপনি চিনবেন সংকটে। দুঃসময়ে।
প্যান্ডেমিকের সামনে ট্রাম্পের রিয়ালিটি শো, মোদি ম্যাজিক, মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রীত্ব সবই ভ্যানিশ!
হু এর নেতৃত্ব, আই সি এম আর, সিডিসি-ইত্যাদি যেসব বিজ্ঞান সংস্থার লিড করা উচিত, আজকে তাদের আর কেউ বিশ্বাস করে না! কেন করবে? আজ যা বলছে, কালকে ১৮০ ডিগ্রি পালটি খাবে! একদিন প্রকাশিত হচ্ছে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন কাজ করে, পরের দিন অন্য আরেক গবেষনা বলছে কাজ করে না! ছমাস হতে চললো। ভাইরাস কি ভাবে একজন থেকে অন্য জন্যে সংক্রামিত হয়-সেটা পর্যন্ত কেউ সঠিক ভাবে বার করতে পারল না। কিভাবে ভাইরাস ছড়াচ্ছে-সেটাই যদি বিজ্ঞানীরা ঠিক ভাবে বার করতে না পারে, তাহলে রোগ ছড়ানো কিভাবে আটকাবে? আল্টিমেটলি এই ছফুট স্যোশাল ডিস্টানিং, মাস্ক পড়া ইত্যাদি আদৌ কাজ করে কি না-কারুর পক্ষে নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব না।
বেসিক্যালি এই ভাইরাস সব "অথোরিটির" প্যান্ট খুলে দিয়েছে। চোখ খুলে দেখাচ্ছে, আমাদের রাষ্ট্র, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য কাঠামোর করুন অবস্থা।
বর্তমানে আমেরিকাতে প্রতিদিন ৫০,০০০ ইনফেক্টেড হচ্ছে। ২০,০০০ এ নেমে এসেছিল। লকডাউন তুলে দিতে দুই সপ্তাহে ২০,০০০ থেকে বেড়ে ৫০,০০০। তবে ভাগ্য ভাল এই যে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০০ থেকে কমে গড়ে ৫০০ তে নেমেছে আমেরিকাতে। ভারত/পশ্চিম বঙ্গে এক অবস্থা। লক ডাউন একটু হাল্কা করতেই , অগ্ন্যৎপাতের মতন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাস।
এবার আপনার স্মার্টফোনের দিকে তাকান। গত দশ বছরে স্মার্টফোনের এত উন্নতি হয়েছে-হাতের মুঠোই আপনার পৃথিবী। স্মার্টফোনের যে ছোট ছোট সিলিকন ইউনিটগুলি ডেটা স্টোর করছে, ডেটা নিয়ে কাজ করছে, তার আয়তন কিন্ত করোনা ভাইরাসের থেকেও অনেক ছোট। সেগুলো মানুষের তৈরী আবিস্কার। তাই দিয়ে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বড়াই করছি- মুহুর্তের মধ্যে হোয়াটসাপএ পৃথিবীর অন্যপ্রান্তের কাছের মানুষটির সাথে ভিডও চ্যাট করছি!
অথচ মাত্র একটা ভাইরাসকে গোটা পৃথিবীর সব বিজ্ঞানী, ডাক্তার, রাষ্ট্রনেতা, প্রযুক্তিবিদ মিলেও কব্জা করতে পারছে না। কব্জা করাত দূরের কথা ভাইরাস কিভাবে ছড়াচ্ছে, সেটা পর্যন্ত ঠিক ভাবে জানে না।
প্রযুক্তি এবং জ্ঞানের দিকে দিয়ে দেখতে গেলে একটা স্মার্টফোন তৈরী করতে যে পরিমান বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি লাগে তার কাছে যে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি নিয়ে আমরা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইতে নেমেছি, তা নেহাতই শিশু।
এবং সমস্যাটা এখানেই। মানুষ বা বিজ্ঞানীরা পারে না তা না। গত দশ বছরে স্মার্টফোনের গবেষনা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এর পেছনে প্রায় ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। প্রচুর মেধা সেখানে কাজ করেছে। তার তুলনায় ভাইরাস বা প্যান্ডেমিক আটকানোর গবেষনায় এক বিলিয়ান ও খরচ হয় নি। অর্থাৎ স্মার্টফোনের উন্নতিতে , গুগুল, ফেসবুকের আরন্ডীতে মানবজাতি যা খরচ করেছে, ভাইরাস ঘটিত প্যান্ডেমিক ঠেকানোর জন্য গত দশ বছর তার দশমিক এক পার্সেন্ট ও খরচ হয় নি! ফলে প্যান্ডেমিক ঠেকানোর প্রযুক্তি, ঔষধ কোনটাই নেই। কিন্ত কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে যে প্রযুক্তির দরকার ছিল, তা স্মার্টফোনের তুলনায় নেহাতই শিশুতোষ।
এখানেই ক্যাপিটালিস্ট অর্থাৎ ধনতান্ত্রিক সিস্টেমের ব্যর্থতা পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। মুশকিল হচ্ছে আল্টারনেটিভ কোন সিস্টেম নেই যা দিয়ে বিজ্ঞান লদ্ধ ফল মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া যায়। স্যোশালিজম দিয়ে কিস্যু হবে না প্রমানিত। আবার ক্যাপটালিস্ট সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা আমরা দেখতে পাচ্ছি।
সুতরাং সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক সিস্টেম বদলাবে। সেটা সমাজতান্ত্রিক হবে না। কারন সোশালিজম ফেইল্ড এক্সপেরিমেন্ট। যেখানেই চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে সর্বত্র চূড়ান্ত ব্যর্থ। ক্যাপিটালিজম ও হবে না। ক্যাপিটালিজমের অবস্থা এখন শতাব্দি পুরাতন গাড়ির মতন। বাজারে নতুন মডেল নেই-ফলে পুরাতন যা চলে, তাই দিয়ে চালানো। কিন্ত সত্যিই গাড়ি আর চলছে না।
ধনতন্ত্র/মার্কেট ইকনমি থেকে উন্নততর কিছু আমাদের দরকার। সেটা অবশ্যই স্যোশালিজম না। উন্নততর রাজনীতি এবং উৎপাদন কাঠামো না আসলে, ভাইরাস, ভূমিকম্প, জলের অভাব, দূষন-সব কিছু মিলে এই সভ্যতাকে ধ্বংস করে দেবে।
No comments:
Post a Comment