মিডলইস্ট পৃথিবীর আর্মপিট! সব গন্ডোগল ওখানে। ইয়েমেন, সিরিয়া,ইরাক- গৃহযুদ্ধের লাশকাটা ঘরে শুয়ে আছে। আমেরিকা এবং রাশিয়া ওখানে অস্ত্র বেচে ভাল লাভ করছে।
কিন্ত সমস্যাটা এখানেই। মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে শুধুই কি সামাজ্যবাদি শক্তির দোষ দিলেই পোস্টমর্টেম শেষ? এই প্রশ্ন কেন ওঠে না যেখানেই ইসলামিক দেশ, সেখানেই কেন গৃহযুদ্ধ, মৃত্যু এবং বিভীষিকা? কেন গণতন্ত্র নেই?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জার্মানী এবং জাপান মাত্র ১৫ বছরের মধ্যেই আমেরিকান সাহায্য নিয়ে আবার গণতান্ত্রিক শক্তি হয়ে প্রথম বিশ্বে ফিরে আসে। কিন্ত আফগানিস্থানে ওর থেকে বেশী সাহায্য নিয়েও কিস্যু হয় না। ইরাকেও কিস্যু হয় না। কেন? ইসলামিক সমাজ ব্যবস্থার ডি এন এতে দোষটা কোথায়?
পাশ্চাত্য সভ্যতার ভিত্তি কিন্ত খ্রীষ্ঠান ধর্ম না- সেটা হচ্ছে গ্রীক এবং রোমান সভ্যতা। ইনফ্যাক্ট ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের মতন গাধার ঘাড়ে ছিল মধ্যযুগে যখন ইউরোপিয় সভ্যতা মানে ছিল খ্রীষ্ঠান সভ্যতা। মানে অন্ধকারের যুগ। আজকের উন্নত পাশ্চাত্য সভ্যতার ভিত্তি কিন্ত প্রাচীন ক্ল্যাসিক্যাল গ্রীসের নগরদর্শন,যা বেশ কিছুদিন রোমান সভ্যতাতেও টিকে ছিল।
কিসের জন্য পাশ্চাত্য সভ্যতা, যা গ্রীস এবং রোমান সভ্যতা থেকে উদ্ভু- তা উন্নত জীবনযাত্রার জন্ম দিতে পেরেছে? ইসলামিক বা খ্রীষ্ঠান সভ্যতা, বা কমিউনিজম যা দিতে অক্ষম ? সেই দর্শনের গভীরে যাওয়া দরকার। গ্রীস এবং রোমান সভ্যতার ভিত্তি ছিল স্টয়কিজম ( Stoicism) ,
স্টয়কিজমের অনেক ধারা বর্তমান- যার মোদ্দা কথা সমাজ হবে জ্ঞান এবং বুদ্ধি নির্ভর। ধন সম্পতি, স্বাস্থ্য-সব কিছুই দরকার-কিন্ত সেটাও ওই বেসিক সূত্র মেনে যে ওসব কিছুই দরকার উন্নত বুদ্ধি চিন্তার চর্চায়। স্টয়কিজমের সাথে ইসলাম মার্ক্সবাদি বা খীষ্ঠান চিন্তার পার্থক্য হচ্ছে- স্টয়কিজম কোন গ্রান্ড ন্যারেটিভে বিশ্বাস করে না। যেমন ইসলামের ক্ষেত্রে "গ্রান্ড ন্যারেটিভ" হচ্ছে ইসলামিক জাস্টিস- যা দুনিয়াটাকে বিশ্বাসী অবিশ্বাসীতে ভাঙে। এবং ইসলামিক দেশের রাজনীতি কখনোই জ্ঞান ভিত্তিক বা ফ্যাক্ট ভিত্তিক হতে পারে না- তা্রা ওই ইসলামিক ভাবাদর্শের গ্রান্ড ন্যারেটিভেই পরিচালিত হয়। যা মধ্যযুগীয়। এটা কমিনিউস্টদের জন্যও সত্য। তারা সর্বদাই ফ্যাক্ট এবং জ্ঞান দুটোকেই বিকৃত করে, তাদের গ্রান্ড ন্যারেটিভ- শোষক এবং শোষিত- এই স্কিমাতে ফিট করতে।
ইসলামিক বা কমিনিউস্ট চিন্তার সমস্যা এই যে, তা তাদের ফলোয়ারদের ভাবতে শেখায় তারাই ভিক্টিম- তারা শোষিত অচ্যাচারিত। হয়ত কিছুটা ঠিক-কিন্ত তার অধিকাংশটাই না। বাস্তব হচ্ছে স্টয়িকিজমের লেন্সে ভাবলে "ফ্যাক্ট" হচ্ছে সব জীবনই সংগ্রাম। সেখানে শোষন নিপীড়ন যেমন আছে, তেমনই নিজের উদ্যোগে পরিশ্রমে সেখান থেকে উদ্ধার পাওয়ার রাস্তাও আছে। মুশকিল হচ্ছে মানুষ কমিউনিজম বা ইসলামে স্পেলে এসে গেলে, নিজের উন্নতি নিয়ে না ভেবে দল বেঁধে গুন্ডাগর্দি করে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলেই মন দেয় বেশী ( পড়ুন বৈপ্লবিক আন্দোলন, প্রতিবাদি আন্দোলন ইত্যাদি )। কারন ওই " অত্যাচারিত" ন্যারেটিভের বাইরে তারা ভাবতেই পারে না। সম্পদ তৈরী করার চেয়ে গুন্ডাগর্দি করে সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়াতেই আগ্রহ বেশী থাকে।
আজ দেশভাগের পেছনেও কিন্ত সেই ইসলামি ন্যারেটিভ। বৃটিশ আমলে বাংলাদেশের মুসলমান প্রজারা অত্যাচারিত ছিল সেই নিয়ে সন্দেহ নেই। ঠিক সেই কারনেই কৃষক প্রজা পার্টির সৃষ্টি- এবং অতি শিঘ্রই তা মুসলীমলীগের তিমির তলপেটে ইসলামিক ন্যারেটিভে গলিয়ে যায়। যার ফল এই যে মুসলিমরা হিন্দুদের হাতে অত্যাচারিত-তার ন্যারেটিভেই পূর্বপাকিস্তানের সৃষ্টি। সুতরাং সব গৃহযুদ্ধের পেছনে ( দেশভাগের পেছনেও) "আমরা অত্যাচারিত" এই ইসলামি ন্যারেটিভের ভূমিকাটাই মুখ্য। সেটা ভুল না ঠিক- সেই বিচারে আমি যাচ্ছি না। কারন স্টয়িকিজমের দৃষ্টিতে অমন ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট সিদ্ধান্ত সম্ভব না।
সিরিয়া ইরাক ইয়েমেন-সবর্ত্রই সেই ন্যারেটিভের খেলা। ওখানে শিয়া সুন্নী। ক্ষমতা দখল করে বসে আছে শিয়া সংখ্যালঘুরা-যার বেশী শিক্ষিত এবং উন্নত। ফলে সংখ্যাগুরু ধর্মান্ধ সুন্নীদের মধ্যে ওই অত্যাচারিত গ্রান্ড ন্যারেটিভ খাওয়ানো খুব সহজ। ফলে আইসিসি এবং গৃহযুদ্ধ। পোয়াবারো আমেরিকা রাশিয়ার অস্ত্র ব্যবসায়।
কোনটা ভাল খারাপ তার মধ্যে যাচ্ছি না। ইতিহাসের শিক্ষা এই যে রাজনীতি যদি জ্ঞান, বুদ্ধি এবং ফ্যক্ট দ্বারা পরিচালিত না হয়ে গ্রান্ড ন্যারেটিভ দ্বারা পরিচালিত হয় ( ইসলাম, কমিনিউজম, হিন্দুত্ব ইত্যাদি) তাহলে ধরে রাখুন গৃহযুদ্ধ আসন্ন। ঘরে আপনার আগুন লাগবেই। কেউ ঠেকাতে পারবে না।
No comments:
Post a Comment