সত্যপাল সিং ভারতের মানবসম্পদ রাষ্ট্রমন্ত্রী। তার দাবী ডারউইনের বিবর্তন তত্ব ভুল, গোঁজামিল। স্কুল সিলেবাস থেকে তুলে দেওয়া উচিত। মানবসম্পদকে মানবআপদ বানানোর এমন ঐকান্তিক ইচ্ছা প্রকাশ করে মন্ত্রীমশাই এখন সংবাদ শিরোনামে।
অন্যকোন গোনন্দন বাহন এমন উক্তি করলে, পাত্তা না দিলেও চলত। কিন্ত উনি হচ্ছেন মানবসম্পদ মন্ত্রী-স্কুল সিলেবাস থেকে ডারুইনকে তোলার চেষ্টা করতেই পারেন। এবং করবেনই না বা কেন। আমেরিকাতে গত দশকে রিপাবলিকান অনেক রাজনীতিবিদ, যাদের ইভাঞ্জেলিক্যাল খ্রীষ্ঠানদের ভোটে জিতে আসতে হয়- তারা অসংখ্যবার চেষ্টা করেছেন আমেরিকার স্কুল সিলেবাস থেকে ডারুইনকে মুছে দিতে। তবে তারা প্রতিবার অসফল-কারন আমেরিকার ধর্মনিরেপেক্ষ সংবিধান তাদের বিরুদ্ধে ঢাল হিসাবে দাঁডিয়ে গেছে। অসংখ্য মামলা মকদ্দমার পরে, অসংখ্য বিজ্ঞানীরা আদালাতে দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য প্রমান দেবার ফলে আমেরিকাতে ধর্ম উন্মাদরা আপাতত আর ডারুইনকে নিয়ে ঘাঁটায় না।
পাকিস্থান এবং বাংলাদেশের সেই সৌভাগ্য হয় নি। অধিকাংশ মুসলিম দেশের ছাত্রছাত্রীদেরই সেই সোভাগ্য নেই-কারন মুসলমান দেশগুলির অধিকাংশই ইসলামিক রাষ্ট্র। ফলে "কোরানের সাথে সাংঘার্ষিক" এই অজুহাতে মুসলিম দেশগুলিতে স্কুল সিলেবাসে ডারুইন বাতিল । মনে রাখা উচিত, বায়োলজির সব থেকে গুরুত্বপূর্ন সাবজেক্ট হচ্ছে বিবর্তনবাদ। সেটা না শিখেই মুসলিম দেশগুলি থেকে ছেলেমেয়েরা বায়োলজির ডিগ্রি পায়-তারা যে কি শেখে আল্লা মালুম! এবং সুশিক্ষিত মুসলমানরাও এই ব্যপারে নীরব-কারন বাকী সবার মতন তারাও ইষ্ট হ্যাপী জনগণ-নিজের পেট, সংসার নিয়েই বেশী ব্যস্ত- সন্তান ধর্মীর শিক্ষার কারনে ব্রেইন ওয়াশড হচ্ছে-ফলে ভবিষ্যতে আই সিস প্রচারকের খপ্পরে এসে সন্ত্রাসবাদি হয়ে উঠতে পারে-সেই টুকু বুদ্ধিও তাদের নেই। কারন এই ধরনের সন্ত্রাসবাদিদের বিরুদ্ধে একমাত্র যুক্তিবাদি মনই বিরোধিতা করতে পারে। আর বিবর্তন স্কুল থেকে তুলে দেওয়া মানে ছাত্রছাত্রীদের যুক্তির মাজাটাই ভেঙে দেওয়া।
ডারুইনের ওপরে কোরান, বাইবেল সবার রাগ। কারন বিবর্তন বিজ্ঞান একবার কেউ জানলে, আব্রাহামিক ধর্মগুলো তার কাছে রূপকথার গল্প বলে মনে হবে। ধর্মান্ধ খ্রীষ্ঠান এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভ্রান্ত যুবকেরা ইন্টারনেট ভর্তি করে দিয়েছে বিবর্তনের বিরুদ্ধে অজস্ত্র অভিনব "গবেষনা পত্রে" । যদিও বাস্তব সত্য হল এই সব শিক্ষিত অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমেরিকার বিজ্ঞান সমাজ একসময় রুখে দাঁড়িয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন, যদি বিবর্তনের বিরুদ্ধে কারুর কিছু প্রমান থাকে তাহলে তারা সেটা বিজ্ঞানের জার্নালে পাঠাক। সেটা হবার না। কারন বিবর্তন এতটাই সুপ্রতিষ্ঠীত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব-যে তার বিরুদ্ধে কোন বৈজ্ঞানিক গবেষনা পত্র কেওই দিতে পারবে না। কেউ পারেও নি। এদের সব "ডারউইন বিরোধি গবেষনা ইন্টারনেটেই পাওয়া যায়"-কোন বিজ্ঞানের জার্নালে পাবেন না।
মনে রাখতে হবে বৈজ্ঞানিক সত্য কখনোই পরম সত্য না । বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুযায়ী সেই সত্যে ভেজাল থাকবেই-কিন্ত সেই ভেজালকে আস্তে আস্তে কমানোই বিজ্ঞানীদের ধারাবাহিক কাজ। ডারউইনের তত্ত্ব ব্যতিক্রম না। বিবর্তনের ওপরে এখনো অনেক কাজ চলছে-ডারুইন যে বৃক্ষশাখায় বিবর্তনের ধাপ গুলো দেখেছিলেন-নব্য গবেষনাতে নতুন বৃক্ষের সন্ধান পাওয়া গেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। কিন্ত তার মানে বিবর্তন বিজ্ঞান ভুল না-তার মানে এই যে প্রতিদিনই এই শাখাটি আরো উন্নত এবং সঠীক জ্ঞানের সন্ধানে রত। আরেকটা আবদার অনেক মিসিং লিংক নেই। খুবই অশিক্ষিত ধরনের যুক্তি। কারন বর্তমানের বিবর্তন চর্চা -ডি এন এ নির্ভর। যেহেতু ডি এন এ সিকোয়েন্সিং থেকেই যেকোন প্রানীর বিবর্তন বৃক্ষটী খুব ভাল করে বোঝা যায়।
আমি বহুদিন থেকেই লিখছি, হিন্দুত্ববাদ মানে হচ্ছে হিন্দু ধর্মকে ইসলাম-২ ভার্সনে রুপান্তরিত করা। এদ্দিন পর্যন্ত হিন্দুত্ববাদিরা অন্তত ডারুইনের বানরের লেজ টানেন নি। ওদের মধ্যে একটা জাকির নায়েকের কমতি ছিল যে মানুষের অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়ে , তার নিজের ধর্মের লোকেদের অন্ধকূপে ফেলবে। জাকির নায়েকের একটা হিন্দু ভার্সন না পাওয়া গেলে, হিন্দুত্ববাদিদের ইসলাম-২ তে রূপান্তর সম্পূর্ন হচ্ছিল না- সত্যপাল হতে পারেন হিন্দু ধর্মের সেই জোকার ফিগার।
তবে আশার কথা, ফেসবুকে দেখলাম, আমার পরিচিত অনেক শিক্ষিত বিজেপিই সত্যপালকে গাল দিচ্ছেন। এটা নিঃসন্দেহে ভাল দিক। তবে গুজরাতের স্কুল সিলেবাসে হিটলার এবং নাজিদের প্রশংসা করে যেসব চ্যাপ্টার আছে-তার বিরুদ্ধে ইনারা নীরব। অবশ্য এব্যাপারে শুধু হিন্দুত্ববাদিদের দোষ দিই না। পশ্চিম বঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই লেনিন-স্টালিন নামে শতাব্দির দুই কুখ্যাত খুনীর ভজনা, তাদের নামে রাস্তা ধূপজপ সবই চালু আছে।
আমি এই প্রসঙ্গ এই জন্যেই তুললাম যে স্কুলে ছাত্র অবস্থা থেকে বাচ্চাদের মাথার দখল নিতে উদ্যত অসংখ্য রাজনীতি-ধর্ম ব্যবসায়ী। এর বিরুদ্ধ সংহত প্রতিবাদে সাধারন মানুষকেই অংশ নিতে হবে। সতপাল সিং এর বিরুদ্ধে সাধারন বুদ্ধিমান মানুষ প্রতিবাদে ফাটছে-অথচ কংগ্রেস নীরব-ধর্মীয় ভোট হারানোর ভয়! গুজরাতের সিলেবাসে হিটলারের প্রশংসার বিরুদ্ধেও নীরব কংগ্রেস! সুতরাং সাধারন মানুষের প্রতিবাদই একমাত্র ভরসা।
No comments:
Post a Comment