রাণী পদ্মাবতী মালিক মহম্মদ জায়সীর কল্পনার রাণী-সুতরাং তাকে নিয়ে বানানো সিনেমা নিয়ে দেশজুরে এত হানাহানি কেন - এই প্রশ্ন তুললে, এটাও ঊঠবে যীশু, কৃষ্ণ, মহম্মদ এরাও কেউ বিশুদ্ধ
ঐতিহাসিক চরিত্র নন । তারা বিরাজমান ভক্তের কল্পনায়, ভয়ে ভালোবাসায়। তাদের নিয়ে হানাহানির চোটে ত গোটা বিশ্বটাই এখন বারুদের ওপরে। সুতরাং এ আর নতুন কি?
পদ্মাবতী সিনেমা নিয়ে আপত্তি এই যে খিলজি একজন রাজপুত নারীর সাথে নাচাগানা করছেন স্বপ্নে-সেই সিনেমাটিক লিবার্টি নেওয়া যাবে না? কারন রাজপুত নারীর সাথে মুসলমান পুরুষ নাচলে রাজপুত নারীর মর্যাদা হানি হবে? ইতিহাস কি বলে তাহলে?
মেবারের শিশোদিয়া এবং রনথোম্বরের হাদাস বংশ ছাড়া এমনকোন রাজপুত রাজ বংশ নেই যারা নিজেদের মেয়ের বিয়ে মুঘল বংশে দেন নি। রাজ্যবাঁচাবার দায়ে, রাজ্যবাড়াবার দায়ে মুঘল সম্রাট এবং রাজপুত্রদের কন্যাদান করার জন্য রাজপুত রাজবংশগুলি লম্বা লাইন দিয়েছে এক সময়। আকবরপত্মী চম্পাবতী বা জোধাবাই ( মারিয়াম ), জাহাঙ্গীর পত্মী গোসাইনি -এই ভাবে লিস্ট চালালে, মুঘল হারেমে প্রায় তের জন বেগমের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা রাজপুত কন্যা ছিলেন।
আসলে সবটাই ছিল রয়াল পলিটিক্স।
শাহজাহানের মতন মুঘল সম্রাটরা সেই অর্থে আসলেই ৩/৪ ভাগ রাজপুত ( কারন তার ঠাকুমা এবং মা দুজনেই রাজপুত), ১/৪ ভাগ মুঘল। ইসলামিক আক্রমন থেকে বাঁচার জন্য রাজপুত মেয়েদের জহরব্রত ঐতিহাসিক কোষ্ঠকাঠিন্য-আসল সত্য এই যে রাজপুত রাজারা নিজেদের গদি বাঁচানোর জন্য, রাজত্ব সুরক্ষার জন্য বরাবরই দিল্লীর মসনদে তাদের রাজকন্যাদের রানী করে পাঠিয়েছেন। এখন এক কাল্পনিক পদ্মাবতীকে নিয়ে টানাটানি করে জহরব্রতর রূপকথাকে লালশালু দিয়ে ঢেকে বাচ্চাদের বাস পুড়িয়ে রাজপুত গৌরব বাড়বে?
মুশকিল হচ্ছে এসব কিছুই সেই অস্তিত্ববাদের সংকট। আসলে এই গ্লোবালাইজেশনের জাদুকাঠিতে রাজপুত, বাঙালী-মাই "খাঁটি আমেরিকান" -সব কিছুইত অবলুপ্তির পথে। ফলে কোথাও এক পদ্মাবতীর কল্পনাকে ঘিরে রাজপুত অভিমানের বেঁচে থাকার চেষ্টা। আমরা বাঙালীরাই কি খুব কম যায় না কি? নেতাজির জার্মান পত্মীকেই অধিকাংশ বাঙালী মেনে নিতে পারে নি ( বিসিরায়
ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে এমিলি শেঙ্কলকে টাকা পাঠিয়েছেন খুব গোপনে )। প্রিয়ংকা চোপড়া রবীন্দ্রনাথ-আন্না তারকরের প্রেম কাহিনী নিয়ে ছবি করবেন-তাই নিয়ে বিশ্বভারতী অসন্তুষ্ট। শোনা যাচ্ছে অনেক চুম্বন দৃশ্য কাটতে বাধ্য করেছে বিশ্বভারতী। বাঙালী পুরুষ ওই ভাবে প্রেম করতে পারে না কি! ছি!! সিনেমাতে আন্না তারকেরকে চুমু খেলে রবীন্দ্রনাথের জাত যাবে ! আপদ কি শুধু রাজপুতরা ? বাঙালীরা না ?
এসবই গ্লোবালাইজেশনের যুগে অস্তিত্বের সংকট! আসলেই আগামী শতাব্দিতে এইসব জাতি-ফাতির আলাদা কোন অস্তিত্ব আর থাকবে না।
No comments:
Post a Comment