আজ সকালে একজনের সাথে কথা হল। বেচারা প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বিটেকের পরে এম টেক, এম বিএ সব কিছু করে ফেলেছে। এর পরেও চাকরি মেলে নি-এখন একটা ছোট্ট প্রাইভেট ফার্মে মোবাইল ডেভেলেপার হিসাবে হাজার পনেরোই কাজ করছে। যে কাজের জন্য ক্লাস এইট পাশ বিদ্যাই যথেষ্ট।
মফঃশহরগুলোতে ঘরে ঘরে ছেলে মেয়েরা এম এ, এম এস সি , বি এড পাশ করে বসে আছে কবে এস এস সি হবে! অনেকেরই বয়স আস্তে আস্তে বাড়ছে। যাদের ফ্যামিলিতে অপেক্ষা করার অবস্থা না, তাদের অনেকেই প্যাথোলজি, ট্রাভেল টুরিজমে ইত্যাদি টেকনিক্যাল কোর্স করে ভারতের অন্যত্র চাকরি পেয়ে চলে যাচ্ছে। একদম যাচ্ছেতাই অবস্থা ঘরে ঘরে।
উলটো চিত্রও আছে। গত ছবছর পশ্চিম বঙ্গে ধর্মঘট নেই। ফলত, কোলকাতার আশেপাশের ছোট ছোট ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটগুলো কিন্ত আস্তে আস্তে বাড়ছে। তারা ওয়েল্ডিং, ফিটিং এর জন্য অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান পাচ্ছে না। আমি এমন প্রোডাকশন ম্যানেজার ও জানি দুবার কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েও লোক পাচ্ছে না। লাল জমানার শিল্প শ্মশান বাংলা ছেড়ে, ফ্যাক্টরি টেকনিশিয়ানরা পশ্চিম বঙ্গের বাইরে বহুদিন হল চলে গেছে। বাংলা তথা পশ্চিম বঙ্গের ওপরে ভরসা নেই অধিকাংশ প্রবাসী বাঙালীর। ফলে অবস্থার উন্নতি হলেও কেউ ফিরতে চাইছে না! আই টি প্রোগ্রামিং এর ক্ষেত্রেও এক অবস্থা। একটু এডভান্সড প্রোগ্রামার দরকার হলেই কোলকাতায় কাউকে পাওয়া যায় না। যত উচ্চকোটির বাঙালী প্রোগ্যামার পাবেন, সব প্রবাসে। কেউ কোলকাতায় ফিরতে চাইছে না। অথচ কোলকাতা এখন ব্যাঙ্গালোর পুনের চেয়ে ভাল শহর। কিন্ত চাকরি হারালে অন্য চাকরি নাও পেতে পারে বলে, কেউ ফিরতে চায় না কোলকাতায়। ৩৪ বছরের সিপিএম জমানায় কি ক্ষতি হয়েছে বাংলার বলে বোঝানো মুশকিল। বাম-মোহ-মদে একটা ইন্টেলেকচুয়াল প্রজন্ম সম্পূর্ন হারিয়েছি আমরা ।
সমস্যাটা কোথায়? আজকে যারা ক্লাস সেভেন এইটে পড়ছে-তারা জব মার্কেট ঢুকবে ২০২৭-২০৩০ সাল নাগাদ। তখন কিসের জব বাজারে চলবে কেউ জানে না। বাপ-দাদারা যে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছে, সেই জীবিকাটাই থাকবে না। প্রযুক্তি এবং অটোমেশনের গতি এখন এতটাই দ্রুত। এমন কি যাদের বাপের দোকান আছে, তারাও নিরাপদ না। ইকর্মাস ছোবল মেরেছে সেখানেও। আমার চেনা এক গড়িয়াহাটের এক দোকানি জানালেন পুজোর মরশুমে বিক্রি কমেছে অন্তত ৩০%। কারন ইকর্মাসে জিনিসপত্র অনেক সস্তা।
তাহলে আমাদের বাচ্চাদের কোন পথ দেখাবো? তথ্যই এখানে সহায়ক। গত চার বছরের ট্রেন্ড যা-তাতে চারটি স্কিল স্কুল থেকে আয়ত্ব করলেই বাচ্চাদের ভাল। ১) পাইথন /জাভা স্ক্রিপ্ট কোডিং ২) ওপেন সোর্স ইলেকট্রনিক্স, যেমন র্যাসবেরী পাই এর ওপর কোডিং ৩) স্টাটিস্টিক্স বা সংখ্যাতত্ব এবং সেই সংক্রান্ত কোডিং ও এলগোরিদম ৪) ক্রিয়েটিভ কমিনিউকেশ স্কিল-পাতি কথায় গল্প বলার ক্ষমতা। যা বেচতে এবং মার্কেটিং এ লাগে।
স্কুল কলেজের সিলেবাস, শিক্ষক, পরিবেশ, পদ্ধতি এই মুহুর্তে সম্পূর্ন ইউজলেস। কারন ভারত এবং বাংলায় যারা শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে জড়িত তাদের কারুর আইডিয়া নেই জব মার্কেট নিয়ে। হয়ত সেটা সম্ভব ও না। কারন পৃথিবী এবং প্রযুক্তি বদলাচ্ছে দ্রুত।
No comments:
Post a Comment