ফেসবুক খুললেই হয় বাবা রাম রহিম, নইলে তিন তালাক, নাহলে দশমীতে কেন দূর্গা বিসর্জন নয়! যা বুঝছি, ধর্মের হাত থেকে ভারতীয়দের নিস্তার নেই!
সুপ্রীমকোর্টের তিন তালাক ব্যান ( তালাক-ই বিদ্যত) নিঃসন্দেহে আলোচনাযোগ্য ঘটনা। আমাকে যেটা অবাক করে- কোরানে কোন ইন্সটান্ট তালাক নেই। কোরানের তালাক তালাক-ই-সুন্নাহ। যাতে নুন্যতম তিনমাস ধরে নানান ধরনের বোঝাপড়ার পদ্ধতি লিপিবদ্ধ। তারপরেও মিয়াবিবি রাজী না হলে ডিভোর্স সিদ্ধ। তালাকের পরে যদি তারা আবার বিয়ে করতে রাজী হয়, সেটাও কোরান-সিদ্ধ। অন্যকাউকে বিয়ে করে ( হালাল বিবাহ), তবে আবার বিয়ে করতে পারবে এমন নিয়ম কোরানে নেই। অর্থাৎ পরিস্কার ভাবে যেটা দেখা যাচ্ছে ইসলামিক আইনবোর্ড বলে যে বস্তুটি ভারতে আছে-সেটি আসলেই পুরুষতন্ত্রের আখড়া-তাতে ইসলামিক বলে কিছু নেই। আসল উদ্দেশ্য নিজেদের মৌরসীপট্টা টিকানো-রাজনৈতিক ক্ষমতায় নিজেদের টেকাতে মুসলমানদের আরো অন্ধকারে ফেলে দেওয়া। বাংলার এক মন্ত্রী সিদিকুল্লা সুপ্রীম কোর্টের রায়ের বিরোধিতা করে বলেছেন, এই তালাক নাকি ভারতের সংবিধান সিদ্ধ। সামান্য একটু পড়াশোনা করলেই জানা যায় তালাক-ই-বিদ্যত, না সংবিধান সিদ্ধ, না ইসলাম সিদ্ধ। তার জন্যে পাকিস্তান, বাংলাদেশে বহযুগ আগে থেকেই এগুলো উঠে গেছে। অথচ সিদিকুল্লা, একদা বামপন্থীদের নয়ন মণি, বর্তমান সরকারের আরেক সংখ্যালঘু মন্ত্রীরত্ন রেজ্জাক মোল্লাদের পছন্দ হয় নি সুপ্রীম কোর্টের রায়। এর থেকে স্পষ্ট, এরা ইসলাম নিয়ে কিছুই জানে না-শুধু জানেন কিভাবে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে মুসলমানদের আরো অন্ধকার খাদে ফেলতে হয়।
স্যোশাল মিডিয়াতে দেখলাম একঝাঁক মুসলমান মনে করছেন তাদের ধর্মীয় জীবনে রাষ্ট্র ঢুকে অন্যায় করেছে। এটা নতুন কিছু না। সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে, বা বিধবা বিবাহের পক্ষে বেশী হিন্দুকে পাওয়া যায় নি। এই ধরনের ধর্মীয় বর্বরতা আইন করেই বন্ধ করতে হবে কারন জনগণ না জানে ধর্মগ্রন্থে কি আছে, না জানে প্রগতিশীলতা। তারা পুতুলনাচের পুতুল। যারা স্বেচ্ছায় সুতোটা ছেড়ে দিয়েছে অন্যের হাতে।
বাবা রাম রহিমকে নিয়ে কিছু বলার নেই। যা বুঝেছি, সব ভারতীয়র একজন গুরু লাগে। কারন এখানে ছোটবেলা থেকেই জনগন বসে আছে-কেউ বলে দেবে কি করিতে হইবে! বাবা মা যা বলে, ছেলে মেয়ে তাই করে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রাইভেট টিউটরদের তোতাকাহিনী। ফলে আধ্যাত্মিক পথেও ভারতীয়দের গুরুর দরকার । জীবনের রহস্য সন্ধানের লম্বা পথে কেউ পাড়ি দিতে রাজী না। সবাই মেইড-ইজি খুঁজছে। ফলে গুরুগিরি ভারতের বৃহত্তম ব্যবসা। রামদেব, বাবা রাম রহিম-এদের বিরাট বহুজাতিক ব্যবসা। সম্প্রতি শ্রী শ্রী রবীশঙ্কর নাম লিখিয়েছেন সেই দলে। যারা ছোটবেলা থেকে স্বাধীন ভাবে ভাবতে অক্ষম-মানসিক দিকদিয়ে খোঁড়া-তাদের ত গুরু লাগবেই। এই কোটি কোট জনতার অজ্ঞানতার সুযোগ কিছু চালাক লোকে নেবেই। ভারতে তাদেরই বলে গুরুদেব।
মমতা ব্যানার্জি দশমীর দিন বিসর্জন বন্ধ রাখতে চান-কারন এর আগে মহরম এবং দশমীর দিন একসাথে হওয়াতে দাঙ্গা হয়েছে। হিন্দু মুসলমান দুই দলেই এখন প্রচুর পেশাদার দাঙ্গাবাজ। বারুদ প্রস্তুত। আগুন লাগানোর অপেক্ষা। উনার উদ্দেশ্য যতই সৎ হৌক, রাজনৈতিক ভাবে ভুল সিদ্ধান্ত। কারন উনি স্বীকার করে নিলেন, দাঙ্গাবাজদের উনি ভয় পান, ভোট হারানোর ভয়। এর থেকে যদি কড়া হাতে বলতেন-ঐদিন দাঙ্গাবাজ দেখলেই গুলি চলবে- পশ্চিম বঙ্গ অনেকটাই সাম্প্রদায়িকতার রাহুমুক্ত হত। শাসক তার দুর্বলতা এই ভাবে প্রকাশ্যে নাকখঁত দিয়ে জানালে, দাঙ্গাবাজরা আরো বেশী উৎসাহিত হবে। সাম্প্রদায়িকতা হচ্ছে সেই বাঘ, যাকে বেশী খাওয়ালে, একদিন সে সব কিছুই খেতে চাইবে! এমনকি তার মালিককেও!
No comments:
Post a Comment