বাংলায় এখনো অনেক কমিনিউস্ট - যাদের কাছে স্টালিনের মতন কুখ্যাত খুনী পরম পূজনীয়। এদের স্টালিনের বিরুদ্ধে যতই বলুন, দেখবেন, ফাইনাল দাবী- হু হু বাবা, যাই বলনা কেন, স্টালিন না থাকলে হিটলারকে কে ঠেকাত ?
এটাও ইতিহাসের চূড়ান্ত অজ্ঞতা ছাড়া কিছু না। হিটলার আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ান - পশ্চিম এবং পূর্ব দুটো ফ্রন্টেই হেরেছেন। সেটাও বাদ দিচ্ছি। আসল ইতিহাস হচ্ছে গ্রেট পার্জের আগে ( যে গ্রেট পার্জের মাধ্যমে স্টালিন কয়েক লাখ উচ্চপদস্থ রাশিয়ানকে হত্যা করেছিলেন প্রতিবিপ্লব ঠেকানোর নামে ) সোভিয়েত ইউনিয়ান, জার্মানির থেকে ট্যাঙ্ক এবং ফাইটার প্লেন প্রযুক্তিতে এগিয়ে ছিল। কিন্ত স্টালিন রাশিয়ান বুদ্ধিজীবি গণহত্যা শুরু করলে, খুব স্বাভাবিক কারনেই সোভিয়েত ইউনিয়ান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানীর থেকে অনেকটাই পিছিয়ে যায় মিলিটারী প্রযুক্তিতে।
এখানে একটা প্রশ্ন অনেকেই করেন না। ১৯৩৯ সালে হিটলার স্টালিনের সাথে ভাগ করে খেলেন, পোলান্ড। পয়লা সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ , পোলান্ড আক্রমন করেন হিটলার। ১৮ ই সেপ্টেম্বর স্টালিন আক্রমন করলেন পোলান্ড। একটা স্বাধীন দেশকে টুকরো টুকরো করে হিঁচড়ে খাওয়ার জন্য চললো শতাব্দির দুই কুখ্যাত ফ্যাসিস্ট শক্তির আক্রমন। হিটলার দখল নিলেন পোলান্ডের পশ্চিম দিকের, স্টালিন পূর্বদিকের। দখলীকৃত পোলান্ডের জনগোষ্ঠি শতাব্দির দুই কুখ্যাত কসাইএর হাতে তখন। হিটলার এবং স্টালিন-দুই মহান ব্যক্তি (!) পোলান্ডের লোকজনকে ধরে নিয়ে গেল ক্রীতদাস বানিয়ে নিজেদের দেশে-বিনাপয়সায় খাটাবে বলে। যারা অনিচ্ছুক, তাদের ফেলা হল মেশিনগানের সামনে। পোলান্ডের জনগণের প্রতি যে যঘন্য আচরন এবং গণহত্যা হয়েছে-তাতে নৃশংসতার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন স্টালিন এবং হিটলার।
প্রশ্ন এটাই- ১৯৪১ সালে জুন মাসে হিটলার যদি সোভিয়েত আক্রমনই করবেন-তাহলে ১৯৩৯ সালে সোভিয়েতের সাথে ভাগ করে পূর্ব ইউরোপ খাচ্ছিলেন কেন? ১৯৩৯-১৯৪১, স্টালিন এবং হিটলারের সম্পর্ক বেশ গলায় গলায়-দুজনেই ভাগ করে দখল করছেন ইউরোপের ছোট ছোট দেশগুলি। হিটলার একটা দেশ দখল করেন ত, স্টালিন অন্যদেশ। ভাব এমন এই দুই জনই ইউরোপ দখল করে খাবেন। যদি ভবিষ্যতে সোভিয়েত আক্রমনের পরিকল্পনাই থাকে, তাহলে ত স্টালিনের শক্তিবৃদ্ধিতে সহায়তা করার কোন কারন ছিল না। ১৯৩৯ সালের মলটভ, রিবেনট্রপ চুক্তির মুল বক্তব্যই ছিল -চল যাই দুজনে মিলে ইউরোপ ভাগ করে নিই।
এর মূল কারন এই যে, স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে জার্মানী এবং সোভিয়েত ইউনিয়ান মুখোমুখী হয় ১৯৩৭ সালে। ওই যুদ্ধে সোভিয়েত বিমান বাহিনী জার্মান বিমান বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে। হিটলার বোঝেন, ইউরোপ দখল করতে গেলে সোভিয়েতের সাথে ভাগ করেই তা করতে হবে। এবং সেই মতন স্টালিন হিটলারের আগ্রাসণনের দোসর হতে রাজীও হলেন। তবে হিটলার তখনো যেটা জানেন না-স্টালিনের গ্রেট পার্জের ফলে সোভিয়েত বাহিনী ক্রমশঃ দুর্বল হয়েছে ১৯৩৪-১৯৪১। সেটা হিটলার দেখলেন যখন স্টালিন ফিনল্যান্ড আক্রমন করলেন, দখল করার জন্য ( 1939, 29 Nov) । ইতিহাসে এটি উইন্টার যুদ্ধ নামে খ্যাত।
ফিনল্যান্ড একটা ছোট্ট দেশ। সোভিয়েত দখলদারদের ঠেকানোর জন্য তাদের কাছে আছে মোটে ৩২ টি ট্যাঙ্ক, ১১৭ টা প্লেন। যেখানে রেড আর্মি পাঠিয়েছিল বিশাল বাহিনী- ৩৯০০ টি ফাইটার প্লেন, ২৫০০ এর কাছকাছি ট্যাঙ্ক। প্রথমে মনে করা হয়েছিল মাত্র এক সপ্তাহেই সোভিয়েত ইউনিয়ান দখল করবে ফিনল্যান্ড। কিন্ত না। ফিনল্যান্ড, প্রায় ছমাস রুখে দিয়েছিল রেড আর্মিকে। এতেই সবাই পরিস্কার ভাবে বুঝে যায়, স্টালিন গ্রেট পার্জের নামে যে ৩০,০০০ আর্মি অফিসারদের খুন করেছে, তাতে রেড আর্মির অবস্থা খুবই খারাপ। এতটাই খারাপ যে ফিনল্যান্ডের মতন এক পুঁচকে আর্মিও তাদের নাস্তানাবুদ করে। হিটলার দেখলেন এবং বুঝলেন, স্টালিনের সাথে শান্তিচুক্তি করে ডাঁহা ভুল হয়েছে। জার্মান প্যান্থার বাহিনীর সামনে রেড আর্মি শ্রেফ উড়ে যাবে। সুতরাং সোভিয়েত ইউনিয়ান ও পুরো দখল করা যাক। কারন পশ্চিমদিক তখন সম্পূর্ন জার্মানির দখলে। পূর্বদিকটাই বাদ যায় কেন?
সেই হিসাব মতন ১৯৪১ সালের ২২ শে জুন শুরু হল অপারেশন বার্বারোসা। হিটলার আক্রমন করলেন সোভিয়েত ইউনিয়ান। পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই বৃহত্তম যুদ্ধ। দুইদিক মিলিয়ে ছয় মিলিয়ান সৈন্য।
যুদ্ধ বলা ভুল। প্রথম ছদিন কোন যুদ্ধই হয় নি। রাশিয়ানরা মার খেয়ে পালিয়েছে, নইলে বন্দী হয়েছে। প্রথম ছদিনেই সোভিয়েত ইউনিয়ানের ৬৫০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে আসে জার্মান বাহিনী। রাশিয়ানরা প্রথম বাধাদিতে সক্ষম হয়, ড্যান্যুব নদীর ধারে। এবং এটি কাজে আসে। কারন বাধা পেয়ে, হিটলার সিদ্ধান্ত নেন, মস্কো দখল করে হবে কি? না আছে তেল, না আছে খাবার। বরং দক্ষিনে পাঠিয়ে দিলেন সেনাদের। ইউক্রেনের খাবার এবং তেল যুদ্ধের জন্য জরুরী। মস্কো বাদ দিয়ে দখল কর ইউক্রেন।
যাইহোক অক্টবর পর্যন্ত যুদ্ধ চলেছে এক তরফা। সব জায়গাতেই হারছিল রাশিয়ানরা। কোন বীরগাথা সম্ভব না। কারন রাশিয়ান ট্যাঙ্ক বা বিমান বাহিনী, জার্মানীর কাছে শিশুতুল্য। যুদ্ধের প্রথম তিন মাসেই প্রায় ৬০০ হাজার রেড আর্মি মারা যায়। সেখানে জার্মান বাহিনীর হতাহতের সংখ্যা ছিল নগন্য। মস্কোর মাত্র কুড়ি মেইল দূরে ক্যাম্প করে বসে আছে জার্মান বাহিনী। মস্কোর পতনের ভয়ে সবাই পালিয়েছে আরো পূর্ব দিকে।
এই অবস্থায় হঠাৎ করে আস্তে আস্তে যুদ্ধের মোড় ঘুরতে থাকে। এবং তার মূল কারন , সোভিয়েতের ইউনিয়ানের নতুন টি-৩৪ ট্যাঙ্ক।
অপারেশন বারবারোসা শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই টি-৩৪ ট্যাঙ্ক রেড আর্মিতে ছিল। এবং টি-৩৪ ট্যাঙ্ক এবং এর কামান তখন জার্মান ট্যাঙ্কের থেকে উন্নত। কিন্ত জার্মান ট্যাঙ্ক ঘায়েল করা সত্ত্বেও, টি-৩৪ যুদ্ধের গতি ঘোরাতে পারছিল না। মূল কারন এর মেকানিকাল গলদ। ট্যাঙ্ক প্রায় রাস্তায় খারাপ হয়ে বসে যেত। ফলে অধিকাংশ টি-৩৪ ট্যাঙ্ক যুদ্ধে না- শ্রেফ মেকানিক্যাল ম্যালফাংফশনিং এ হারিয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ান।
এর ও কারন আছে। মিখাইল কোশেন নামে এক আর্মি ইঞ্জিনিয়ার ১৯৩৭ সালে স্টালিনকে নেক্সট জেনারেশন ট্যাঙ্ক টি-৩৪ বানানোর প্রস্তাব রাখেন। স্টালিন তাকে ফান্ডিং দিলেন। কমিনিউস্ট দেশে যেহেতু মার্কেট কম্পিটিশন নেই, প্রতিযোগিতার আবহ বজায় রাখার জন্য একই প্রজেক্ট তিন চারটে সরকারি কোম্পানীকে দেওয়া হত। টি-৩৪ এর পাশাপাশি আরো চারটি নতুন প্রজন্মের ট্যাঙ্কের গবেষনার ফান্ডিং স্টালিন দিয়েছিলেন। তবে কমিনিউস্ট দেশে যা হয়- মিখাইলের ভাগ্যে জুটল খুব কম ফান্ডিং। কারন কমিনিউস্ট নেতাদের তেল মারাতে উনি দক্ষ ছিলেন না। এমন কি ১৯৩৯ সালে একবার তার প্রজেক্ট বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। কোশেনের সাথে স্টালিনের সম্পর্ক ছিল বেশ ভাল। সেই যাত্রায় স্টালিনের সাথে দেখা করে, কোন রকমে টি-৩৪ এর প্রজেক্টটি বাঁচিয়ে রাখলেন তিনি।
কিন্ত অপরেশন বার্বারোসাতে দেখা গেল একমাত্র টি-৩৪ ই প্রতিরোধে সক্ষম প্যান্থার বাহিনীর। এই ডিজাইন স্ল্যান্টেড আর্মার ভেদ করার ক্ষমতা ছিল না জার্মান আর্মির সেই সময় ( যদিও পড়ে টাইগার ট্যাঙ্ক এই ক্ষমতার অধিকারি হবে )। কিন্ত তাও সুবিধা করা যাচ্ছে না। যেখানে সেখানে মেকানিক্যাল ফেলিওরে বসে যাচ্ছিল টি-৩৪।
এদিকে যুদ্ধের কারনে গোটা টি-৩৪ ট্যাঙ্ক ফ্যাক্টরি রাতারাতি উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে উড়াল পর্বতে। পর্বতের প্রবল শীতে না খেতে পেয়ে কাজ করেছেন টি-৩৪ এর ইঞ্জিনিয়াররা। অনেকে মারাও গেছেন অত্যাধিক কাজের চাপে, ম্যালনিউট্রিশনে। কারন যে করেই হৌক টি-৩৪ এর ডিজাইন ডিফেক্ট সারাতেই হবে। স্টালিনের চাপ প্রচন্ড। এমন অবস্থা ডিজাইন ঠিক হয়েছে কি না বোঝার উপায় নেই- নতুন ডিজাইন-কোন ইঞ্জিনিয়ারিং টেস্ট হয় নি। সরাসরি ফ্রন্টে টী-৩৪। সেখানেই ফিল্ড টেস্ট! যুদ্ধ চলছে, তার মধ্যেই একের পর এক নতুন ডিজাইনের টি-৩৪ নেমে যাচ্ছে।
১৯৪১ সালের অক্টবর মাসেই বোঝা যায়, আস্তে আস্তে টি-৩৪ আর মেকানিক্যাল ফেলিওরের জন্য বসে যাচ্ছে না। ঠিক এই সময় থেকেই মার দিকে শুরু করে রেড আর্মি। কারন রিলাইয়েবল টি-৩৪ নিয়ে এবার জার্মান বাহিনীর মোকাবিলা করা আস্তে আস্তে সহজ হচ্ছিল।
সোভিয়েত বিজয়ের প্রধান এবং মুখ্য কারন ট-৩৪ ট্যাঙ্ক। তবে স্টালিনিস্ট রাশিয়া মিখাইল কোশেনকে পর্যাপ্ত ফান্ডিং দিলে, সোভিয়েত ইউনিয়ানে ঢুকতেই পারত না প্যান্থার বাহিনী। যাইহোক, উড়াল পর্বতের প্রবল ঠান্ডা অগ্রাহ্য করে টি-৩৪ এর ইঞ্জিনিয়াররা যে কাজ করে গেছেন, তার স্বীকৃতি তারা খুব বেশী পান নি।
এটাও ইতিহাসের চূড়ান্ত অজ্ঞতা ছাড়া কিছু না। হিটলার আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ান - পশ্চিম এবং পূর্ব দুটো ফ্রন্টেই হেরেছেন। সেটাও বাদ দিচ্ছি। আসল ইতিহাস হচ্ছে গ্রেট পার্জের আগে ( যে গ্রেট পার্জের মাধ্যমে স্টালিন কয়েক লাখ উচ্চপদস্থ রাশিয়ানকে হত্যা করেছিলেন প্রতিবিপ্লব ঠেকানোর নামে ) সোভিয়েত ইউনিয়ান, জার্মানির থেকে ট্যাঙ্ক এবং ফাইটার প্লেন প্রযুক্তিতে এগিয়ে ছিল। কিন্ত স্টালিন রাশিয়ান বুদ্ধিজীবি গণহত্যা শুরু করলে, খুব স্বাভাবিক কারনেই সোভিয়েত ইউনিয়ান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানীর থেকে অনেকটাই পিছিয়ে যায় মিলিটারী প্রযুক্তিতে।
এখানে একটা প্রশ্ন অনেকেই করেন না। ১৯৩৯ সালে হিটলার স্টালিনের সাথে ভাগ করে খেলেন, পোলান্ড। পয়লা সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ , পোলান্ড আক্রমন করেন হিটলার। ১৮ ই সেপ্টেম্বর স্টালিন আক্রমন করলেন পোলান্ড। একটা স্বাধীন দেশকে টুকরো টুকরো করে হিঁচড়ে খাওয়ার জন্য চললো শতাব্দির দুই কুখ্যাত ফ্যাসিস্ট শক্তির আক্রমন। হিটলার দখল নিলেন পোলান্ডের পশ্চিম দিকের, স্টালিন পূর্বদিকের। দখলীকৃত পোলান্ডের জনগোষ্ঠি শতাব্দির দুই কুখ্যাত কসাইএর হাতে তখন। হিটলার এবং স্টালিন-দুই মহান ব্যক্তি (!) পোলান্ডের লোকজনকে ধরে নিয়ে গেল ক্রীতদাস বানিয়ে নিজেদের দেশে-বিনাপয়সায় খাটাবে বলে। যারা অনিচ্ছুক, তাদের ফেলা হল মেশিনগানের সামনে। পোলান্ডের জনগণের প্রতি যে যঘন্য আচরন এবং গণহত্যা হয়েছে-তাতে নৃশংসতার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন স্টালিন এবং হিটলার।
প্রশ্ন এটাই- ১৯৪১ সালে জুন মাসে হিটলার যদি সোভিয়েত আক্রমনই করবেন-তাহলে ১৯৩৯ সালে সোভিয়েতের সাথে ভাগ করে পূর্ব ইউরোপ খাচ্ছিলেন কেন? ১৯৩৯-১৯৪১, স্টালিন এবং হিটলারের সম্পর্ক বেশ গলায় গলায়-দুজনেই ভাগ করে দখল করছেন ইউরোপের ছোট ছোট দেশগুলি। হিটলার একটা দেশ দখল করেন ত, স্টালিন অন্যদেশ। ভাব এমন এই দুই জনই ইউরোপ দখল করে খাবেন। যদি ভবিষ্যতে সোভিয়েত আক্রমনের পরিকল্পনাই থাকে, তাহলে ত স্টালিনের শক্তিবৃদ্ধিতে সহায়তা করার কোন কারন ছিল না। ১৯৩৯ সালের মলটভ, রিবেনট্রপ চুক্তির মুল বক্তব্যই ছিল -চল যাই দুজনে মিলে ইউরোপ ভাগ করে নিই।
এর মূল কারন এই যে, স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে জার্মানী এবং সোভিয়েত ইউনিয়ান মুখোমুখী হয় ১৯৩৭ সালে। ওই যুদ্ধে সোভিয়েত বিমান বাহিনী জার্মান বিমান বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে। হিটলার বোঝেন, ইউরোপ দখল করতে গেলে সোভিয়েতের সাথে ভাগ করেই তা করতে হবে। এবং সেই মতন স্টালিন হিটলারের আগ্রাসণনের দোসর হতে রাজীও হলেন। তবে হিটলার তখনো যেটা জানেন না-স্টালিনের গ্রেট পার্জের ফলে সোভিয়েত বাহিনী ক্রমশঃ দুর্বল হয়েছে ১৯৩৪-১৯৪১। সেটা হিটলার দেখলেন যখন স্টালিন ফিনল্যান্ড আক্রমন করলেন, দখল করার জন্য ( 1939, 29 Nov) । ইতিহাসে এটি উইন্টার যুদ্ধ নামে খ্যাত।
ফিনল্যান্ড একটা ছোট্ট দেশ। সোভিয়েত দখলদারদের ঠেকানোর জন্য তাদের কাছে আছে মোটে ৩২ টি ট্যাঙ্ক, ১১৭ টা প্লেন। যেখানে রেড আর্মি পাঠিয়েছিল বিশাল বাহিনী- ৩৯০০ টি ফাইটার প্লেন, ২৫০০ এর কাছকাছি ট্যাঙ্ক। প্রথমে মনে করা হয়েছিল মাত্র এক সপ্তাহেই সোভিয়েত ইউনিয়ান দখল করবে ফিনল্যান্ড। কিন্ত না। ফিনল্যান্ড, প্রায় ছমাস রুখে দিয়েছিল রেড আর্মিকে। এতেই সবাই পরিস্কার ভাবে বুঝে যায়, স্টালিন গ্রেট পার্জের নামে যে ৩০,০০০ আর্মি অফিসারদের খুন করেছে, তাতে রেড আর্মির অবস্থা খুবই খারাপ। এতটাই খারাপ যে ফিনল্যান্ডের মতন এক পুঁচকে আর্মিও তাদের নাস্তানাবুদ করে। হিটলার দেখলেন এবং বুঝলেন, স্টালিনের সাথে শান্তিচুক্তি করে ডাঁহা ভুল হয়েছে। জার্মান প্যান্থার বাহিনীর সামনে রেড আর্মি শ্রেফ উড়ে যাবে। সুতরাং সোভিয়েত ইউনিয়ান ও পুরো দখল করা যাক। কারন পশ্চিমদিক তখন সম্পূর্ন জার্মানির দখলে। পূর্বদিকটাই বাদ যায় কেন?
সেই হিসাব মতন ১৯৪১ সালের ২২ শে জুন শুরু হল অপারেশন বার্বারোসা। হিটলার আক্রমন করলেন সোভিয়েত ইউনিয়ান। পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই বৃহত্তম যুদ্ধ। দুইদিক মিলিয়ে ছয় মিলিয়ান সৈন্য।
যুদ্ধ বলা ভুল। প্রথম ছদিন কোন যুদ্ধই হয় নি। রাশিয়ানরা মার খেয়ে পালিয়েছে, নইলে বন্দী হয়েছে। প্রথম ছদিনেই সোভিয়েত ইউনিয়ানের ৬৫০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে আসে জার্মান বাহিনী। রাশিয়ানরা প্রথম বাধাদিতে সক্ষম হয়, ড্যান্যুব নদীর ধারে। এবং এটি কাজে আসে। কারন বাধা পেয়ে, হিটলার সিদ্ধান্ত নেন, মস্কো দখল করে হবে কি? না আছে তেল, না আছে খাবার। বরং দক্ষিনে পাঠিয়ে দিলেন সেনাদের। ইউক্রেনের খাবার এবং তেল যুদ্ধের জন্য জরুরী। মস্কো বাদ দিয়ে দখল কর ইউক্রেন।
যাইহোক অক্টবর পর্যন্ত যুদ্ধ চলেছে এক তরফা। সব জায়গাতেই হারছিল রাশিয়ানরা। কোন বীরগাথা সম্ভব না। কারন রাশিয়ান ট্যাঙ্ক বা বিমান বাহিনী, জার্মানীর কাছে শিশুতুল্য। যুদ্ধের প্রথম তিন মাসেই প্রায় ৬০০ হাজার রেড আর্মি মারা যায়। সেখানে জার্মান বাহিনীর হতাহতের সংখ্যা ছিল নগন্য। মস্কোর মাত্র কুড়ি মেইল দূরে ক্যাম্প করে বসে আছে জার্মান বাহিনী। মস্কোর পতনের ভয়ে সবাই পালিয়েছে আরো পূর্ব দিকে।
এই অবস্থায় হঠাৎ করে আস্তে আস্তে যুদ্ধের মোড় ঘুরতে থাকে। এবং তার মূল কারন , সোভিয়েতের ইউনিয়ানের নতুন টি-৩৪ ট্যাঙ্ক।
অপারেশন বারবারোসা শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই টি-৩৪ ট্যাঙ্ক রেড আর্মিতে ছিল। এবং টি-৩৪ ট্যাঙ্ক এবং এর কামান তখন জার্মান ট্যাঙ্কের থেকে উন্নত। কিন্ত জার্মান ট্যাঙ্ক ঘায়েল করা সত্ত্বেও, টি-৩৪ যুদ্ধের গতি ঘোরাতে পারছিল না। মূল কারন এর মেকানিকাল গলদ। ট্যাঙ্ক প্রায় রাস্তায় খারাপ হয়ে বসে যেত। ফলে অধিকাংশ টি-৩৪ ট্যাঙ্ক যুদ্ধে না- শ্রেফ মেকানিক্যাল ম্যালফাংফশনিং এ হারিয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ান।
এর ও কারন আছে। মিখাইল কোশেন নামে এক আর্মি ইঞ্জিনিয়ার ১৯৩৭ সালে স্টালিনকে নেক্সট জেনারেশন ট্যাঙ্ক টি-৩৪ বানানোর প্রস্তাব রাখেন। স্টালিন তাকে ফান্ডিং দিলেন। কমিনিউস্ট দেশে যেহেতু মার্কেট কম্পিটিশন নেই, প্রতিযোগিতার আবহ বজায় রাখার জন্য একই প্রজেক্ট তিন চারটে সরকারি কোম্পানীকে দেওয়া হত। টি-৩৪ এর পাশাপাশি আরো চারটি নতুন প্রজন্মের ট্যাঙ্কের গবেষনার ফান্ডিং স্টালিন দিয়েছিলেন। তবে কমিনিউস্ট দেশে যা হয়- মিখাইলের ভাগ্যে জুটল খুব কম ফান্ডিং। কারন কমিনিউস্ট নেতাদের তেল মারাতে উনি দক্ষ ছিলেন না। এমন কি ১৯৩৯ সালে একবার তার প্রজেক্ট বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। কোশেনের সাথে স্টালিনের সম্পর্ক ছিল বেশ ভাল। সেই যাত্রায় স্টালিনের সাথে দেখা করে, কোন রকমে টি-৩৪ এর প্রজেক্টটি বাঁচিয়ে রাখলেন তিনি।
কিন্ত অপরেশন বার্বারোসাতে দেখা গেল একমাত্র টি-৩৪ ই প্রতিরোধে সক্ষম প্যান্থার বাহিনীর। এই ডিজাইন স্ল্যান্টেড আর্মার ভেদ করার ক্ষমতা ছিল না জার্মান আর্মির সেই সময় ( যদিও পড়ে টাইগার ট্যাঙ্ক এই ক্ষমতার অধিকারি হবে )। কিন্ত তাও সুবিধা করা যাচ্ছে না। যেখানে সেখানে মেকানিক্যাল ফেলিওরে বসে যাচ্ছিল টি-৩৪।
এদিকে যুদ্ধের কারনে গোটা টি-৩৪ ট্যাঙ্ক ফ্যাক্টরি রাতারাতি উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে উড়াল পর্বতে। পর্বতের প্রবল শীতে না খেতে পেয়ে কাজ করেছেন টি-৩৪ এর ইঞ্জিনিয়াররা। অনেকে মারাও গেছেন অত্যাধিক কাজের চাপে, ম্যালনিউট্রিশনে। কারন যে করেই হৌক টি-৩৪ এর ডিজাইন ডিফেক্ট সারাতেই হবে। স্টালিনের চাপ প্রচন্ড। এমন অবস্থা ডিজাইন ঠিক হয়েছে কি না বোঝার উপায় নেই- নতুন ডিজাইন-কোন ইঞ্জিনিয়ারিং টেস্ট হয় নি। সরাসরি ফ্রন্টে টী-৩৪। সেখানেই ফিল্ড টেস্ট! যুদ্ধ চলছে, তার মধ্যেই একের পর এক নতুন ডিজাইনের টি-৩৪ নেমে যাচ্ছে।
১৯৪১ সালের অক্টবর মাসেই বোঝা যায়, আস্তে আস্তে টি-৩৪ আর মেকানিক্যাল ফেলিওরের জন্য বসে যাচ্ছে না। ঠিক এই সময় থেকেই মার দিকে শুরু করে রেড আর্মি। কারন রিলাইয়েবল টি-৩৪ নিয়ে এবার জার্মান বাহিনীর মোকাবিলা করা আস্তে আস্তে সহজ হচ্ছিল।
সোভিয়েত বিজয়ের প্রধান এবং মুখ্য কারন ট-৩৪ ট্যাঙ্ক। তবে স্টালিনিস্ট রাশিয়া মিখাইল কোশেনকে পর্যাপ্ত ফান্ডিং দিলে, সোভিয়েত ইউনিয়ানে ঢুকতেই পারত না প্যান্থার বাহিনী। যাইহোক, উড়াল পর্বতের প্রবল ঠান্ডা অগ্রাহ্য করে টি-৩৪ এর ইঞ্জিনিয়াররা যে কাজ করে গেছেন, তার স্বীকৃতি তারা খুব বেশী পান নি।
No comments:
Post a Comment