ধন্যবাদ আনিস খানকে। কালকেই লিখেছিলাম বাংলায় সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্পে জল ঢালতে বাঙালী পরিচয় বা বাঙালী আইডেন্টিটি সামনে আনা জরুরী। এটা দেখে ভাল লাগল, তার মতন একজন শিল্পদ্যোগী, বাঙালী আইডেন্টিটি সামনে আনার দ্বায়িত্ব নিজের পরিসরে পালন করছেন। ঘরে বাইরের নিখিলেশের কথা মনে এল।
হিন্দু বা মুসলমান কোন পরিচয় হতে পারে না। প্রাচীন ভারত, গ্রীস, রোম-কোথাও ধর্মীয় পরিচিতি বলে কিছু ছিল না। মানুষের ধর্মাচরন ছিল, আধ্যাত্মিক জিজ্ঞাসা ছিল। সবটাই ব্যক্তিগত।
মুসলমানরা যখন ভারতে প্রথম আসে-তারা ভারতীয়দের জিজ্ঞাসা করত তোমাদের ধর্ম কি? আসলেই ত কোন ধর্ম ছিল না ভারতে-প্রত্যেকের নিজস্ব উপাসনা, নিজের মতন করে সত্যকে খোঁজা। এটাই ভারতীয় দর্শনের শাস্বত বানী। ফলে উত্তর না পেয়ে, মুসলমানরা বললো-ওকে-তাহলে এটা হচ্ছে হিন্দু ধর্ম। কারন পার্শী শব্দে হিন্দু মানে সিন্দুনদের ওপারে যারা থাকে। হিন্দু শব্দটা কোন হিন্দু গ্রন্থে নেই-কারন ওই শব্দটা মুসলমানদের দান। মুসলমানদের দেওয়া সেই হিন্দু আইডেন্টিটি নিয়ে-আজ তাদের সাথেই লড়াই!
রোম সম্রাট কনস্টানটাইন প্রথম খ্রীষ্টান ধর্মের জনপ্রিয়তা এবং পরিচিতিকে কাজে লাগান উত্তরের উপজাতিগুলোকে রোমান সাম্রাজ্যের বশবর্তী করতে। খ্রীষ্ঠান সাম্রাজ্যবাদের সেই মডেলটাই আরো উন্নতাকারে নিয়ে আসে সপ্তম শতাব্দির আরবের বাসিন্দারা। খৃষ্টান এবং মুসলমান -এই দুই পরিচিতির যুদ্ধ আরো তীব্র হয় তিনটে ক্রশেডের মধ্যে দিয়ে। যেহেতু গত এক হাজার বছর এই দুটো ধর্মই গোটা পৃথিবী দখল করতে চেয়েছে -রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতিতে ধর্মীয় পরিচয় আস্তে আস্তে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ন হয়েছে। ইউরোপে রেনেসাস এবং শিল্প বিপ্লবের ফলে রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে হঠানো গেছে ঠিকই-কিন্ত ৫৬ টা মুসলমান দেশ এবং ভারতে ধর্ম আষ্টেপৃষ্টে বেঁধেছে রাজনীতিকে।
বাঙালী একটা লোকের পরিচিতি বা আইডেন্টি হতে পারে-কিন্তু হিন্দু বা মুসলমান কি করে একটা লোকের পরিচিতি হয় -তা আমার বোধগম্য না। সেটা রাজনৈতিক চক্রান্ত ছাড়া কিছু না। আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি, বাংলা খাবার খাই-তাই আমরা বাঙালী। আমি মন্দিরে যাই-তাই হিন্দু-বা মসজিদে যাই, ইসলামিক অনুশাসন মেনে চলি, তাই মুসলিম-এগুলো অবোধের নির্বোধ বুদ্ধি। বা জোর করে ব্রেইন ওয়াশ করে শিশু বয়স থেকে শেখানো হয় ধর্ম গ্রন্থের মাধ্যমে, রাষ্ট্রের সহযোগিতায়। হ্যা-এই ব্রেইন ওয়াশ বন্ধ না হলে, এই যে কোটি কোটি ধর্মান্ধ তৈরী হচ্ছে, তাদের সামাল দিতে পারবে না কোন পুলিশ, কোন মিলিটারি।
কেন হিন্দু, মুসলমান পরিচিতিটা ফেক? ইল্যুউশন? ভ্রুম?
কারন আমি যে বাঙালী পোস্ত খাই, ইলিশ খাই-সেটা সত্য। খাবারের অস্তিত্ব আছে। হিন্দু-মুসলমানরা যেসব জিনিস মানে ধর্মের নামে-তার সবটাই রূপকথা। অতীতের রাজনীতির কারনে সাজানো রূপকথা। এইসব গল্পে বিশ্বাস করে পরিচিতি? এর মানে স্পাইডারম্যানের গল্পে বিশ্বাস করে স্পাইডারম্যান ফ্যান ক্লাবের সদস্য হয়ে ঘোষনা করা- ওটাই আমার পরিচয়! এইসব গাঁজাখুরি গল্প যদি মানুষের পরিচিতির ভিত্তি হয়, একবিংশ শতাব্দিতে, তাহলে গোড়ায় গলদ। সরি, কোন মিলিটারি, কোন বিজেপি আপনাদের বাঁচাতে পারবে না। আরেকবার দেশভাগের মতন দাঙ্গা বাঁধবে। কারন যে পরিচিতির ভিত্তিটাই মানুষের মাথায় টুপি পড়িয়ে, ছোটবেলা থেকে ব্রেইন ওয়াশ করিয়ে তৈরী হয়েছে-তার মিথ্যাচার, মিথটাকে টিকিয়ে রাখতে দাঙ্গা বাধাবেই। আজ না হলে কাল। কাঠকয়লার আগুন-ধিকি ধিকি করে জ্বলে। খড় পরলেই ঘরবাড়ি ব্যাবসা জ্বালিয়ে সাফ করে দেবে।
ধর্ম বিশ্বাস, আধ্যাত্মিকতা বা নিজের সন্ধান সবার মধ্যেই ওই সুরসুড়ি আছে। নাস্তিকের ও আছে। আমার ও আছে। আমার বিশ্বাস সততায়, বুদ্ধিতে পরিশ্রমে। ওইটুকুতে বিশ্বাস করেই, বাকী জীবনটা কাটানো সম্ভব। উপনিষদ পড়তে আমার ভাল লাগে-কিন্ত তার জন্যে নিজেকে হিন্দু বলে পরিচিতি দেব কেন? কারন ইমানুয়েল কান্টের ক্রিটিক অব পিউর রিজন, আমার একই রকম ভাল লাগে। এটাত নিজের জানার জন্য ব্যক্তিগত যাত্রা। প্রতিটা মানুষের ধর্ম, সে হিন্দুই হৌক বা মুসলমান হোক, তার ব্যক্তিগত যাত্রা- পারসোনাল জার্নি। সেই জন্যেই ১৬০ কোটি মুসলমানের ১৬০ কোটি ইসলাম। কোন দুজন মুসলমান পাবেন না-যার ইসলাম হুবহু এক। কোন দুজন হিন্দু পাবেন না-যাদের হিন্দু ধর্ম হুবহু এক। কারন ধর্ম একটা ব্যক্তিগত জার্নি-তা কখনোই পরিচিতি বা আইডেন্টিটি হতে পারে না।
কিন্তু দুজন বাঙালী পাবেন -আনিশ খান এবং আশীষ রায়-যারা সর্ষে ইলিশ খেয়ে ঢেঁকুর তুলবে। গাইবে- আমি বাংলায় গান গাই। কারন ইলিশ এবং গান-দুটোই বাস্তব।
No comments:
Post a Comment