Saturday, July 15, 2017

কম্পিউটার প্রোগ্রামিং স্কুল লেভেল থেকেই শেখা ভাল

 আমার আগের লেখাটার ( ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরির ভূত ভবিষ্যত) পরিপ্রেক্ষিতে এটা ক্ল্যারিফিকেশন নোট। অনেকেই জানিয়েছেন, “কোর” ইঞ্জিনিয়ারদের ভবিষ্যত কি ( যেন তাদের প্রোগ্রামিং জানার দরকার নেই) বা ছোটবেলা থেকে কম্পুটার ল্যাঙ্গুয়েজ শিখে কি হবে?

বাচ্চাদের  ছোটবেলা থেকে কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজ কেন শেখানো উচিত -আমার এই সিদ্ধান্তে পেছনে, অবশ্যই আমার নিজের অভিজ্ঞতা।  আমেরিকাতে এখন সরকারি স্কুলগুলোতে ক্লাস সেভেন থেকে শেখাচ্ছে-তবে তা ইলেক্টিভ।

(১) আমি যতটুকু শিশুমনের সাথে পরিচিত-ওরা নিজেরা কিছু করতে ভালবাসে- যা এবস্ট্রাক্ট না-নিজেরা খেলার ছলে পরীক্ষা করে দেখতে পারে। প্রোগ্রামিং শেখালে ওরা নিজেরাই নিজেদের মতন করে নানান খেলা তৈরী করতে পারবে।  বাচ্চাদের প্রোগ্রামিং শেখানো হয় এখন ওই গেম তৈরী খেলার ছলেই।  চোখের সামনেই ওরা দেখে ওদের “সৃষ্টি” কেমন আলাদিনের প্রদীপের মতন “ম্যাজিক” দেখাচ্ছে।
এমনিতেই আজকালকার বাচ্চারা ভিডিও মোবাইল গেমে প্রচুর সময় নষ্ট করে, যা তাদের মানসিক বিকাশের সহায়ক ত নয়ই, বরং নেশাটা ড্রাগ এডিক্টের মতনই খারাপ। ওদের একটা খেলা দরকার, যা খেলে, ওরা শিখবে।
প্রথম কারনটা অবশ্যই পজিটিভ ইনভল্ভমেন্ট।

(২) বাচ্চাদের সামনে আপনি রোল মডেল হিসাবে কাকে তুলে ধরবেন? আমি যেহেতু আন্তারপ্রেনার, আমার সামনে রোল মডেল নিঃসন্দেহে বিল গেটস, স্টিভ জবস, মার্ক জুকারবার্গ।  পৃথিবীকে এরাই বদলেছেন বেশী গত ত্রিশ বছরে। এদের বায়োগ্রাফিতে অনেক জিনিস কমন 
     -কেউ পড়াশোনা বা ডিগ্রি কমপ্লিট করেন নি-এদের সবাই ড্রপ আউট। এরা এই পোষাকি ব্যাচেলর, মাস্টার্স বা পিএইচডি ডিগ্রির ধার ধারেন নি।
    - এবং সবাই ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, প্রসেসর প্রোগ্রামিং শিখেছেন -এবং সেগুলোই ছিল এদের বাল্যকালের “অবশেসন”।  ছোটবেলায় ইলেকট্রনিক্স এবং কম্পিঊটারের সাথে এদের শুধু পরিচিতিই ছিল না-এরা ছিলেন খুদে মাস্টার। স্টিভ জবস যখন ক্লাস এইটে, বিশ্ববিখ্যাত জেরক্স কোম্পানী তাকে ইনটার্ন হিসাবে নিয়েছিল মাইক্রোপ্রসেসর সারানোর জন্য! মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে বিল গেটস কম্পুটার প্রোগ্রামিং এ তুখোর ছিলেন যখন গোটা আমেরিকাতেই কম্পুউটারের সংখ্যা হাতে গোনা যেত। 
     এরা যে অনায়াসে হার্ভাডের মত বিশ্ববিদ্যালয়ের ( হার্ভাডের র‍্যাঙ্কিং গোটা বিশ্বের নাম্বার ওয়ান-যেখানে ভারতের কোন বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম একশোতেই নেই!)  কম্পিউটার সায়েন্সের বিটেক ডিগ্রিকে লাথি মারতে পেরেছেন-তার কারন একটাই।  এরা কম্পুটার সায়েন্স এতটাই ভাল জানতেন, ডিগ্রির দরকার ছিল না এদের। চাকরির ও না। পাশ আউট করার আগেই বিল গেটস, নিজের ওপারেটিং সিস্টেম লিখে সেটা বেচেও দিয়েছেন একটা বড় কোম্পানীকে।

 ছোট বেলা থেকে প্রোগ্রামিং না শিখলে, এসব হত না।

(৩)  আমার নিজের অভিজ্ঞতাটা লিখি। কর্মসূত্রে অসংখ্য ছোট ছোট স্টার্টাপের ফাউন্ডারদের সাথে আমার আলাপ। আধুনিককালে  আমেরিকাতে “সফল” টেক স্টার্টাপের সংখ্যা যদি দেখি, তাদের ফাউন্ডারদের অধিকাংশই নিজেরা খুব ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটারে দক্ষ। যারা শুধু ব্যবসায় সাফল্য পেয়েছেন, তারা ব্যবসাটা ছোট বেলা থেকেই করছেন।
 পরের দিকে এসে শিখে, লোকে সফল হয় নি এমন না। তবে সংখ্যাটা কম।

 আমি নিজে প্রোগ্রামিং শিখেছি পিএইইচডির শুরুর দিকে, মানে তেইশ বছর বয়সে। এই নয় যে বেশী বয়সে ওটা শেখা যায় না। অবশ্যই যায়। কিন্ত সেটা প্রশ্ন না। প্রশ্ন হচ্ছে কোন লেভেলে শিখলে সে নিজেই নতুন কিছু করার ক্ষমতা রাখবে?
 ইঞ্জিনিয়ারিং শেখার তিনটে লেভেল আছে।

   এক চাকরির জন্যে শেখা-যেখানে খুব বেশী না শিখলেও চলে।
 দুই পড়ানোর জন্য বা শিক্ষকতার জন্য শেখা-সেখানে আরেকটু বেশী শিখতে হয়,

  তিন -নিজে প্রোডাক্ট বানানোর জন্য শেখা।  লেভেল এক দুই এর সাথে তিনের পার্থক্য আকাশ পাতাল।

 লেভেল থ্রিতে পৌছাতে গেলে, কম্পুটার প্রোগ্রামিং ছোটবেলা থেকেই শুরু করতে হবে।

(৪) অনেকে বলছেন যারা বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী বা “কোর ইঞ্জিনিয়ারিং” এ যাবে তাদের ও শিখতে হবে? উত্তর হচ্ছে হ্যা। কারন এটা একটা  নতুন ভাষা শিক্ষা, যার প্রয়োজন সর্বত্র। আমি নিজেও কোর ইঞ্জিনিয়ারিং এই কাজ করি-এবং সেখানেও নতুন যা কিছু হচ্ছে, তা সিম্যুলেশন এবং অটোমেশন নির্ভর। সেখানে প্রোগ্রামিং এবং ম্যাথেমেটিক্স ছাড়া গতি নেই। ব্যবসাও আস্তে আস্তে বিজনেস আনালাইটিক্স নির্ভর । সেখানেও ভাল অঙ্ক না জানলে কিস্যু হবে না।

অনেকেই কোর ইঞ্জিনিয়ারিং শেখার ছলনায়, প্রোগ্রামিং শিখতে চায় না। এটা ভুল পদক্ষেপ।  সিমুলেশন এবং অটোমেশনের দৌলতে কোর ইঞ্জিনিয়ারিং এখন প্রোগ্রামিং নির্ভর।

প্রযুক্তির কাঁধে ভর দিয়ে দিন বদলাচ্ছে দ্রুত। আপনারা যেভাবে করে খাচ্ছেন, আজ থেকে দশ বিশ বছর বাদে, নতুন প্রজন্ম সেই ভাবে টিকবে না।  আস্তে আস্তে  টিসিএস, ইনফি ইত্যাদি বড় বড় কর্পরেশনের অস্তিত্বই থাকবে না-যদিও থাকে, তা থাকবে শুধু মাত্র  টেকনোলজি ইন্ট্রিগ্রেটর হিসাবে-যেখানে কর্ম সংস্থান হবে কম, খুব কম। অধিকাংশ  ছেলেমেয়েরা নতুন নতুন প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস ডিজাইন করেই জীবিকা নির্বাহ করবে। এটা ভাল দিক। কিন্ত সেই ক্ষেত্রে যারা ছোটবেলা থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখেছে বনাম যারা মুখস্থ করে ডিগ্রি নিয়েছে, তাদের পার্থক্য অনেক।

 আর এটা ভবিষ্যত না বর্তমান। আমেরিকা এবং ভারতে আমি সেই সব আন্তারপ্রেনারদের দেখা পাচ্ছি, যারা ছোট বেলা থেকেই কোম্পানী খুলে বসে আছে, প্রোডাক্ট বানাচ্ছে। অনেকেরই কোন ডিগ্রি নেই। আর তাদের হয়ে কাজ করছে ডিগ্রিধারী ইঞ্জিনিয়াররা।

শিক্ষিত- সেত বাজারে মেলে ভুরিভুরি।
প্রতিভা- সেটাও বাজারে অনেক।

সাফল্যের রসায়ন দুটো- প্যাশন এবং পারসিভ্যারেন্স ( কোন কিছু ভালবেসে করা এবং লেগে থাকা)। 

শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং কেন-কবিতা, সাহিত্য, সিনেমা বানানো, ডাক্তারি, ওকালতি কোন কিছুই নিবিড় চর্চা ছাড়া হয় না। ৫% প্রতিভা, ৯৫% গায়ের ঘাম ঝড়াতে হয়।


এগুলো শিশু বয়সে বাচ্চাদের মধ্যে ঢোকাতে গেলে, তাদের এমন কিছু দিতে হবে, যাতে তারা এই দুটো গুনের অধিকারী হয়। 

No comments: