সিপিএম জমানার গপ্পো
*********************
(১)
সেটা ১৯৮৩ কি ৮৪। দ্বিতীয় বামফ্রন্ট জমানা। ব্যান্ডেল থেকে ট্রেনে হাওড়া যাচ্ছি। তখন ক্লাস ফাইভ কি সিক্সে।
জঙ্গী ট্রেড ইউনিয়ানের দাপটে ব্যান্ডেল হাওড়া লাইনে তখন প্রায় সব কারখানায় লক আউট। তাদের অনেকেই ট্রেনের হকারি করে কোন রকমে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্ত সেটাও বেশ টাফ লাইফ। যারা একটু আধটু হিন্দি বা চটুল গান করতে পারত, তাদের অনেকেই ট্রেনে গান বাজনা করে ভিক্ষা করতে লাগল। শ্রমিক থেকে ভিখিরিতে অধঃপতন ইতিহাসে মোটেও বিরল না-বরং পৃথিবীর সর্বত্রই হয়। বাম জমানার জঙ্গী ইউনিউয়ানবাজিতে পশ্চিম বঙ্গে ১৯৭৭ থেকে ৮৭ এর মধ্যে প্রায় ৮০% মেজর প্রোডাকশন ইউনিট হয় বন্ধ হয়, নইলে তালা ঝোলে। ছাঁটাই, লক আউট শ্রমিকদের যে কি হাল হয়েছিল-সেগুলো চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। আমি খুব অবাক হই -যখন দেখি বাংলার সাহিত্য, রাজনীতি কোন কিছুইতেই এই সব ছাঁটাই বাতিল শ্রমিকদের কোন স্থান নেই।
এই ঘটনা তাদের একজনকে নিয়েই।
শ্রমিক থেকে ভিখিরি-ট্রেনে গান গাচ্ছে-ভিক্ষে করছে-এসব তখন বিরল দৃশ্য না। সব ট্রেনেই দেখতাম। এই ঘটনাটা উল্লেখ করছি-কারন এখনো ভুলি নি।
সেদিন ও এক বছর ত্রিশের যুবক তখনকার হিট হিন্দি গানগুলো গাইছিল। সামনে গামছা -যে এক দুটাকা দিতে চায় দিক।
এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা-খানিকটা স্বগতোক্তির ঢংএ বেফাঁস মন্তব্য করে বসলেন-জোয়ান মরদ, এইভাবে কখনো ভিক্ষে করে? গতর লাগালে পারে ত!!
ছেলেটা ভালোই গাইছিল-হয়ত গান করে, কারখানার শ্রমিকদের থেকে আনন্দ অনেক বেশীই পায়। কথাটা কানে যেতেই -গানফান থামিয়ে চিৎকার করে উঠল ,
---আরে মাসীমা-এমন করছেন যেন আপনার ঘরে কোন বেকার নেই!!! আপনার ছেলে, ভাইপো , বোনপোর যে আমার হাল হবে না, গ্যারান্টি আছে মাসীমা?????
গোটা ট্রেনে পিন-ড্রপ সাইলেন্স। বোধ হয় মুহুর্তের জন্য হলেও গোটা কামরার লোকজন অনুভব করল-সব ঘরেই সক্ষম শিক্ষিত যুবক-অথচ পশ্চিম বঙ্গে তখন চাকরি নেই! চারিদিকে শুধু বেকারি।
পুরো ঘটনাটাই আমার কাছে এত শকিং- এখনো ভুলি নি।
(২)
ছোটবেলায় সিপিএম জমানার স্মৃতিচারন করতে গেলে প্রদীপকাকুর কথা সবার আগে মনে আসে। উনি আগে বাবার স্কুলের শিক্ষক সহকর্মী ছিলেন, পরে ট্রান্সফার নিয়ে মুর্শিদাবাদের লালবাগে যান। বাবা এবং প্রদীপ কাকু-দুজনেই খুব আদি কমরেড, সিপিএমের জন্মলগ্ন থেকেই একসাথে ছিলেন সিপিএমে।
যদ্দুর মনে আছে উনি জেলাকমিটিতে তখন-পার্টি কাজে করিমপুরে আসতেন। আসলে আমাদের বাড়িতেই থাকতেন ।
প্রদীপ কাকু আসলেই ছোটবেলায় বিশাল আনন্দ হত। কারন অন্য কিছু না-উনি প্রচুর গল্প শোনাতেন আমাকে। ব্যাটল অব স্টালিনগ্রাড, বলশেভিক রিভ্যলুউশন, লং মার্চের সব গল্প উনার কাছ থেকে ক্লাস ফাইভ সিক্সেই শুনেছিলাম। সেসব একেকজন শ্রমিক কৃষকের আত্মবলিদানের গল্প-কিভাবে তারা আত্মত্যাগের মাধ্যমে নিজের দেশকে রক্ষা করেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে।
সিপিএম ফ্যামিলিতে যেসব ছেলেমেয়েরা বেড়ে ওঠে এই সব রূপকথার গল্প শুনত শুনতে তাদের মনে কমিনিউজম, লেনিন, স্টালিন নিয়ে খুব উচ্চ ধারনার জন্ম হয়। স্বভাবতই তারা কমিউনিজমে আকৃষ্ট হয়ে ওঠে এটা না জেনে বা বুঝেই যে, এই সব আসলেই আষাঢ়ে গল্প- ঐতিহাসিক স্ক্রুটিনি করলে অন্য সত্য সামনে আসে।
যেমন হিটলারের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য স্টালিনকে হিরো বানানো। ইনফ্যাক্ট প্রদীপকাকু যে গল্পগুলো আমাকে ছোট বেলায় বলতেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও -- এই ফেসবুকের জমানাতেও দেখি লাখে লাখে কমিরা ওইসব রূপকথায় বিশ্বাস করে। কেউ ইতিহাসটা একটুও ঘাঁটতে রাজী না। আজ ইন্টারনেটের জমানায় একটু ইতিহাস ঘাঁটলেই যেকেউ জানতে পারবে
(ক) ১৯৩১ সালের জার্মান নির্বাচনে স্যোশাল ডেমোক্রাট এবং কমিনিউস্টরা একসাথে হলেই, হিটলারের নাজি পার্টির উত্থান আটকে দিতে পারত। কিন্ত স্টালিনের মনে হয়েছিল স্যোশাল ডেমোক্রাটরা হিটলারের থেকেও বেশী খতরনাক!! ফলে তখন জার্মানিতে , হিটলারের বিরুদ্ধে বামেদের জোট হয় নি। এর মূল কারন স্টালিনের ভূল রাজনীতি। কেন না তখন জার্মানির কমিনিউস্ট পার্টিও স্টালিনের অঙ্গুলিহেলনেই চলত।
(খ) ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত মিলিটারি এবং মিলিটারি টেকনোলজি দুটোই জার্মানির থেকে অনেক এগিয়ে। এর প্রমান স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে পাওয়া যায় যেখানে সোভিয়েত বিমান বাহিনী, জার্মান বিমান বাহিনীকে প্রায় ৭ ঃ ১ রেশিওতে হারিয়েছিল। কিন্ত ১৯৪২ সালে হিটলার যখন সোভিয়েত আক্রমন করে, তখন সোভিয়েত মিলিটারী খরখুটোর মতন উড়ে যায়। কি করে মাত্র পাঁচ বছরে জার্মান মিলিটারি সোভিয়েতের চেয়ে এত এগিয়ে গেল?? এর মূল কারন স্টালিন নিজে। উনি সেনাবাহিনীর বিশুদ্ধিকরন করতে গিতে ৯০% সক্ষম জেনারেলদের খুন করেছিলেন, যা ইতিহাসে গ্রেট পার্জ নামে খ্যাত। শুধু তাই না-সোভিয়েতের সক্ষম বিজ্ঞানীদের ও সাইবেরিয়াতে পাঠিয়েছিলেন। স্টালিনের হঠকারি কমিনিউস্ট কাজে শক্তিশালী সোভিয়েত বাহিনী অনেক দুর্বল হয়ে ওঠে-যার নমুনা হিটলার পেলেন যখন সোভিয়েত ফিনল্যান্ড আক্রমন করে নাকানি চোবানি খেল। ফিনল্যান্ডের যুদ্ধে সোভিয়েত সেনাদের বাজে পারফর্মেন্সের ফলে হিটলার বুঝতে পারেন, গেট পার্জের ফলে সোভিয়েত মিলিটারীর ভগ্নদশা। ফলে উনি আক্রমনে উৎসাহি হলেন। যদি স্টালিন গ্রেটপার্জের মতন কমিনিউস্ট কালিদাসি বুলডোজার না চালাতেন, সোভিয়েত ইউনিয়ান ১৯৪২ সালে জার্মানীর থেকে অনেক বেশী শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবেই থাকত-হিটলার কোন মতেই সোভিয়েত আক্রমনের সাহস পেতেন না।
অর্থাৎ হিটলারের উত্থান এবং সোভিয়েত আক্রমনের পেছনে স্টালিনের অবদান সর্বাধিক। স্টালিন সেই অর্থে আরেক ভিলেন-হিরো নন। অথচ গল্পগাছা রূপ কথা আধাসত্য চালিয়ে, তাকে হিরো বানিয়ে দিল কমিনিউস্টরা।
আমি শুধু কমিনিউস্টদের দোষ দিই না। হিন্দু ফ্যামিলিতেও এই ভাবে হিন্দুবীরদের নিয়ে মিথ ছড়ানো হয়। মুসলমান ফ্যামিলিগুলোতেই তাই। বাংলাদেশে বখতিয়ার খিলজীর মতন লুঠেরা ডাকাত হচ্ছে জাতীয় বীর!! এই ভাবে আস্তে আস্তে বাল্যমনে গেঁথে দেওয়া হয় "সুপিরিওরিটির" মিথ-কল্পকাহিনী। এইভাবেই ফ্যামিলি কালচারে তৈরী হয় কমিনিউস্ট হিন্দুত্ববাদি এবং ইসলামিস্টরা। কারন পরবর্তীকালে কেউই আর ধৈর্য্য ধরে ইতিহাসটা ঘেঁটে পড়ার চেষ্টা করে না।
তবে আশার কথা জমানা পালটাচ্ছে। আমাদের ছেলে মেয়েদের কাছে জ্ঞানের সোর্স গুগল, ইউটিউব এবং উইকিপেডিয়া-যা অনেক বেশী নিরেপেক্ষ এবং যেখান থেকে তারা সব ধরনেই পারস্পেক্টিভ পাবে।
ফলে আগামী প্রজন্মে এইসব কমিনিউস্ট, হিন্দুইস্ট, ইসলামিস্ট -ইত্যাদি ইস্ট দেবতায় তুষ্ট বালকের দল থাকবেন না বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। কারন এদের অস্তিত্ব মিথের -রূপকথার গল্পের ওপর দাঁড়িয়ে।
*********************
(১)
সেটা ১৯৮৩ কি ৮৪। দ্বিতীয় বামফ্রন্ট জমানা। ব্যান্ডেল থেকে ট্রেনে হাওড়া যাচ্ছি। তখন ক্লাস ফাইভ কি সিক্সে।
জঙ্গী ট্রেড ইউনিয়ানের দাপটে ব্যান্ডেল হাওড়া লাইনে তখন প্রায় সব কারখানায় লক আউট। তাদের অনেকেই ট্রেনের হকারি করে কোন রকমে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্ত সেটাও বেশ টাফ লাইফ। যারা একটু আধটু হিন্দি বা চটুল গান করতে পারত, তাদের অনেকেই ট্রেনে গান বাজনা করে ভিক্ষা করতে লাগল। শ্রমিক থেকে ভিখিরিতে অধঃপতন ইতিহাসে মোটেও বিরল না-বরং পৃথিবীর সর্বত্রই হয়। বাম জমানার জঙ্গী ইউনিউয়ানবাজিতে পশ্চিম বঙ্গে ১৯৭৭ থেকে ৮৭ এর মধ্যে প্রায় ৮০% মেজর প্রোডাকশন ইউনিট হয় বন্ধ হয়, নইলে তালা ঝোলে। ছাঁটাই, লক আউট শ্রমিকদের যে কি হাল হয়েছিল-সেগুলো চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। আমি খুব অবাক হই -যখন দেখি বাংলার সাহিত্য, রাজনীতি কোন কিছুইতেই এই সব ছাঁটাই বাতিল শ্রমিকদের কোন স্থান নেই।
এই ঘটনা তাদের একজনকে নিয়েই।
শ্রমিক থেকে ভিখিরি-ট্রেনে গান গাচ্ছে-ভিক্ষে করছে-এসব তখন বিরল দৃশ্য না। সব ট্রেনেই দেখতাম। এই ঘটনাটা উল্লেখ করছি-কারন এখনো ভুলি নি।
সেদিন ও এক বছর ত্রিশের যুবক তখনকার হিট হিন্দি গানগুলো গাইছিল। সামনে গামছা -যে এক দুটাকা দিতে চায় দিক।
এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা-খানিকটা স্বগতোক্তির ঢংএ বেফাঁস মন্তব্য করে বসলেন-জোয়ান মরদ, এইভাবে কখনো ভিক্ষে করে? গতর লাগালে পারে ত!!
ছেলেটা ভালোই গাইছিল-হয়ত গান করে, কারখানার শ্রমিকদের থেকে আনন্দ অনেক বেশীই পায়। কথাটা কানে যেতেই -গানফান থামিয়ে চিৎকার করে উঠল ,
---আরে মাসীমা-এমন করছেন যেন আপনার ঘরে কোন বেকার নেই!!! আপনার ছেলে, ভাইপো , বোনপোর যে আমার হাল হবে না, গ্যারান্টি আছে মাসীমা?????
গোটা ট্রেনে পিন-ড্রপ সাইলেন্স। বোধ হয় মুহুর্তের জন্য হলেও গোটা কামরার লোকজন অনুভব করল-সব ঘরেই সক্ষম শিক্ষিত যুবক-অথচ পশ্চিম বঙ্গে তখন চাকরি নেই! চারিদিকে শুধু বেকারি।
পুরো ঘটনাটাই আমার কাছে এত শকিং- এখনো ভুলি নি।
(২)
ছোটবেলায় সিপিএম জমানার স্মৃতিচারন করতে গেলে প্রদীপকাকুর কথা সবার আগে মনে আসে। উনি আগে বাবার স্কুলের শিক্ষক সহকর্মী ছিলেন, পরে ট্রান্সফার নিয়ে মুর্শিদাবাদের লালবাগে যান। বাবা এবং প্রদীপ কাকু-দুজনেই খুব আদি কমরেড, সিপিএমের জন্মলগ্ন থেকেই একসাথে ছিলেন সিপিএমে।
যদ্দুর মনে আছে উনি জেলাকমিটিতে তখন-পার্টি কাজে করিমপুরে আসতেন। আসলে আমাদের বাড়িতেই থাকতেন ।
প্রদীপ কাকু আসলেই ছোটবেলায় বিশাল আনন্দ হত। কারন অন্য কিছু না-উনি প্রচুর গল্প শোনাতেন আমাকে। ব্যাটল অব স্টালিনগ্রাড, বলশেভিক রিভ্যলুউশন, লং মার্চের সব গল্প উনার কাছ থেকে ক্লাস ফাইভ সিক্সেই শুনেছিলাম। সেসব একেকজন শ্রমিক কৃষকের আত্মবলিদানের গল্প-কিভাবে তারা আত্মত্যাগের মাধ্যমে নিজের দেশকে রক্ষা করেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে।
সিপিএম ফ্যামিলিতে যেসব ছেলেমেয়েরা বেড়ে ওঠে এই সব রূপকথার গল্প শুনত শুনতে তাদের মনে কমিনিউজম, লেনিন, স্টালিন নিয়ে খুব উচ্চ ধারনার জন্ম হয়। স্বভাবতই তারা কমিউনিজমে আকৃষ্ট হয়ে ওঠে এটা না জেনে বা বুঝেই যে, এই সব আসলেই আষাঢ়ে গল্প- ঐতিহাসিক স্ক্রুটিনি করলে অন্য সত্য সামনে আসে।
যেমন হিটলারের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য স্টালিনকে হিরো বানানো। ইনফ্যাক্ট প্রদীপকাকু যে গল্পগুলো আমাকে ছোট বেলায় বলতেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও -- এই ফেসবুকের জমানাতেও দেখি লাখে লাখে কমিরা ওইসব রূপকথায় বিশ্বাস করে। কেউ ইতিহাসটা একটুও ঘাঁটতে রাজী না। আজ ইন্টারনেটের জমানায় একটু ইতিহাস ঘাঁটলেই যেকেউ জানতে পারবে
(ক) ১৯৩১ সালের জার্মান নির্বাচনে স্যোশাল ডেমোক্রাট এবং কমিনিউস্টরা একসাথে হলেই, হিটলারের নাজি পার্টির উত্থান আটকে দিতে পারত। কিন্ত স্টালিনের মনে হয়েছিল স্যোশাল ডেমোক্রাটরা হিটলারের থেকেও বেশী খতরনাক!! ফলে তখন জার্মানিতে , হিটলারের বিরুদ্ধে বামেদের জোট হয় নি। এর মূল কারন স্টালিনের ভূল রাজনীতি। কেন না তখন জার্মানির কমিনিউস্ট পার্টিও স্টালিনের অঙ্গুলিহেলনেই চলত।
(খ) ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত মিলিটারি এবং মিলিটারি টেকনোলজি দুটোই জার্মানির থেকে অনেক এগিয়ে। এর প্রমান স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে পাওয়া যায় যেখানে সোভিয়েত বিমান বাহিনী, জার্মান বিমান বাহিনীকে প্রায় ৭ ঃ ১ রেশিওতে হারিয়েছিল। কিন্ত ১৯৪২ সালে হিটলার যখন সোভিয়েত আক্রমন করে, তখন সোভিয়েত মিলিটারী খরখুটোর মতন উড়ে যায়। কি করে মাত্র পাঁচ বছরে জার্মান মিলিটারি সোভিয়েতের চেয়ে এত এগিয়ে গেল?? এর মূল কারন স্টালিন নিজে। উনি সেনাবাহিনীর বিশুদ্ধিকরন করতে গিতে ৯০% সক্ষম জেনারেলদের খুন করেছিলেন, যা ইতিহাসে গ্রেট পার্জ নামে খ্যাত। শুধু তাই না-সোভিয়েতের সক্ষম বিজ্ঞানীদের ও সাইবেরিয়াতে পাঠিয়েছিলেন। স্টালিনের হঠকারি কমিনিউস্ট কাজে শক্তিশালী সোভিয়েত বাহিনী অনেক দুর্বল হয়ে ওঠে-যার নমুনা হিটলার পেলেন যখন সোভিয়েত ফিনল্যান্ড আক্রমন করে নাকানি চোবানি খেল। ফিনল্যান্ডের যুদ্ধে সোভিয়েত সেনাদের বাজে পারফর্মেন্সের ফলে হিটলার বুঝতে পারেন, গেট পার্জের ফলে সোভিয়েত মিলিটারীর ভগ্নদশা। ফলে উনি আক্রমনে উৎসাহি হলেন। যদি স্টালিন গ্রেটপার্জের মতন কমিনিউস্ট কালিদাসি বুলডোজার না চালাতেন, সোভিয়েত ইউনিয়ান ১৯৪২ সালে জার্মানীর থেকে অনেক বেশী শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবেই থাকত-হিটলার কোন মতেই সোভিয়েত আক্রমনের সাহস পেতেন না।
অর্থাৎ হিটলারের উত্থান এবং সোভিয়েত আক্রমনের পেছনে স্টালিনের অবদান সর্বাধিক। স্টালিন সেই অর্থে আরেক ভিলেন-হিরো নন। অথচ গল্পগাছা রূপ কথা আধাসত্য চালিয়ে, তাকে হিরো বানিয়ে দিল কমিনিউস্টরা।
আমি শুধু কমিনিউস্টদের দোষ দিই না। হিন্দু ফ্যামিলিতেও এই ভাবে হিন্দুবীরদের নিয়ে মিথ ছড়ানো হয়। মুসলমান ফ্যামিলিগুলোতেই তাই। বাংলাদেশে বখতিয়ার খিলজীর মতন লুঠেরা ডাকাত হচ্ছে জাতীয় বীর!! এই ভাবে আস্তে আস্তে বাল্যমনে গেঁথে দেওয়া হয় "সুপিরিওরিটির" মিথ-কল্পকাহিনী। এইভাবেই ফ্যামিলি কালচারে তৈরী হয় কমিনিউস্ট হিন্দুত্ববাদি এবং ইসলামিস্টরা। কারন পরবর্তীকালে কেউই আর ধৈর্য্য ধরে ইতিহাসটা ঘেঁটে পড়ার চেষ্টা করে না।
তবে আশার কথা জমানা পালটাচ্ছে। আমাদের ছেলে মেয়েদের কাছে জ্ঞানের সোর্স গুগল, ইউটিউব এবং উইকিপেডিয়া-যা অনেক বেশী নিরেপেক্ষ এবং যেখান থেকে তারা সব ধরনেই পারস্পেক্টিভ পাবে।
ফলে আগামী প্রজন্মে এইসব কমিনিউস্ট, হিন্দুইস্ট, ইসলামিস্ট -ইত্যাদি ইস্ট দেবতায় তুষ্ট বালকের দল থাকবেন না বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। কারন এদের অস্তিত্ব মিথের -রূপকথার গল্পের ওপর দাঁড়িয়ে।
1 comment:
lekhata bhalo. ta voter aage likhte ki fatchilo? :D
Post a Comment