Tuesday, May 17, 2016

পশ্চিম বঙ্গে আধুনিক শিল্প স্থাপনের সমস্যা

কাল পশ্চিম বঙ্গের মসনদে যিনিই বসুক না কেন, আগামী পাঁচ বছরে পশ্চিম বঙ্গে শিল্পের হাল না ফেরালে, ২০২১ সালে সেই পার্টি ক্ষমতায় ফিরবে না। আমি নিশ্চিত মমতা ব্যানার্জি এবং সূর্য্যকান্ত মিশ্র দুজনেই যথেষ্ট অবগত যে এই রাজ্যের জনগণ চাইছে-খুব বাজে ভাবেই চাইছে নতুন চাকরীর সৃষ্টি । কিন্ত শিল্প বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পশ্চিম বঙ্গের বেহাল অবস্থা এখনো কাটে নি।  ধার করে স্কুল আর আফিসের চাকরি দিয়ে বেকার সমস্যার সমাধান হবে না।

               মূল সমস্যা ইনফ্রাস্টাকচার খুব দুর্বল। আই টির জন্য ভাল অফিস স্পেসের আকাশছোঁয়া ভাড়া। সেক্টর ফাইভের প্রাইম স্পটগুলো এখন ফিনিশড অফিসের জন্য পার স্কোয়ারফিট সব কিছু মিলিয়ে ৬০-৮০ টাকা পার স্কোয়ারফুট। যেখানে সমমানের অফিসের খরচ ব্যাঙ্গালোরে ৩০-৪০ টাকা প্রতি স্কোয়ার ফুট। 

   সেক্টর ফাইভে অধিকাংশ স্ট্রাকচার আনফিনিশড। আনফিনিশড স্ট্রাকচার ফিনিশ করার খরচ ১৫০০-২০০০ টাকা প্রতি স্কোয়ারফিটে।  ২০০০ স্কোয়ার ফুট অফিস তৈরীর খরচ পরবে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। এবার কেউ যদি সেই অফিসটা ভাড়া নেওয়ার জন্য খোঁজে, তাহলে কেন এত টাকা খরচ করবে?

   তবে অফিস কিনতে চাইলে, সেক্টর ফাইভে, ডিল ভাল। কেউ যদি অফিস এখানে কিনতে ইচ্ছুক হয়, তাহলে সেটা অনেক বেশী ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য।

  ইন্টারনেটের অবস্থা সেক্টর ফাইভে খুব বাজে। এখানে সব নেট ইনফ্রাস্টাকচারের প্রায় সবটাই ওয়েবেলের হাতে। ব্যাঙ্গালোরে যেখানে ৫০ এম বিপিএস লাইন মাসে ৫০০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, সেক্টর ফাইভে ৮ এম বিপিএস পেতে গেলে মাসে ১৫০০০ টাকার বেশী লাগছে। তাও সেই লাইন সপ্তাহে দুবার খারাপ হয়। ফলে আমাদের প্রায় তিনটে লাইন রাখতে হয়।

  প্রোডাক্ট কোম্পানীগুলোর জন্য কোলকাতা দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠতে পারে। ভারতে সব কাস্টমসের মধ্যে কোলকাতা কাস্টমসের ক্লিয়ারেন্স সব থেকে বাজে এবং স্লো।  কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ঠিক ঠাক না হলে প্রোডাক্ট কোম্পানী চালানো দায়ের।  মমতা ব্যানার্জি এস ই এজ বন্ধ করার জন্য পশ্চিম বঙ্গে প্রোডাক্ট কোম্পানী করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এস এই জেড স্টাটাস থাকলে কাস্টম ক্লিয়ারেন্সের বাওয়ালগুলো থাকত না। কিন্ত সেক্ষেত্রে সিপিএমই কি এস এই জেডের পক্ষে?

মানব সম্পদের ক্ষেত্রে কি অবস্থা ?  খুব হাইএন্ডের ম্যানপাওয়ার কলকাতায় পাওয়া  দুস্কর।  কারন ব্রেইন ড্রেইন যা হওয়ার তা গত দুদশকে ব্যপক ভাবে হয়েছে। ব্যাঙ্গালোর বা পুনে থেকে কেউ কোলকাতায় ফিরবে না বা ফিরতে চায় না।  তবে যদি ট্রেনিং দিয়ে ইনটার্ন তুলে জুনিয়ার ম্যানপাওয়ারে কাজ চলে, তাহলে কোলকাতা বেশ ভাল চয়েস।

এবার আসা যাক এসোসিয়েটেড ইনফ্রাস্টচারে। সফটোয়ারে কিছু লাগে না-কিন্ত হার্ডওয়ার কোম্পানীর ক্ষেত্রে লাগে। কোলকাতায় মাল্টিলেয়ার পিসিবি বানাতে পারে এমন কোম্পানী নেই। হাউসিং/প্যাকেজিং  বানানোর ছোটখাট কোম্পানী আছে কিন্ত তাদের দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের ফিনিশিং হয় না।  এদিক দিয়ে পুনে গুঁড়্গাও এবং ব্যাঙ্গালোর অনেক এগিয়ে। এই সব কারনে কোলকাতায় প্রোডাক্ট ডেভেলেপমেন্ট প্রায় খুব কঠিন।

 ক্ষমতায় যেই আসুক, আমি পশ্চিম বঙ্গের ব্যাপারে আশাবাদি।  কেউ অন্তত মমতা ব্যানার্জির কানে তুলুক যে এস এই জেডে ব্যপারে গোঁ ধরে উনি এই রাজ্যের প্রোডাক্ট শিল্পের বারোটা বাজাচ্ছেন। শুধু দিদিকে দোষ দিলে ত হবে না-তার কোটেরিরা তাকে কি বোঝাচ্ছে সেটাও গুরুত্বপূর্ন। আশাকরি সারদা, নারদায় ঠেকে দিদি বুঝবেন তার আশেপাশের লোকেরা নির্ভরযোগ্য না হলে, তার সমস্ত কঠিন পরিশ্রম জলে যাবে।


No comments: