(১) বিরোধি রাজনীতির ভবিষ্যতরেখা ঃ
জোট ঘোঁটে সিপিএমের লাভ-ক্ষতি নিয়ে চারিদিকে প্রচুর জটলা। কিন্ত কঠিন বাস্তবটা সিপিএমের কেউ মেনে নিতে চাইছে না।
একজন নির্বোধ ও বোঝে, পশ্চিম বঙ্গের রাজনীতি এখন বাই-পোলার। হয় মমতার পক্ষে নইলে বিপক্ষে। আগে যেমন ছিল হয় সিপিএম না হলে এন্টিসিপিএম। এর মাঝখানে হিন্দুত্ববাদি, দিল্লীর কংগ্রেস, বিশুদ্ধ বিপ্লবী কমি-কেউ হুল ফোটাতে পারে নি। কারনটাও স্বাভাবিক। বাইপোলার রাজনৈতিক বিন্যাসে ভোটের ময়দানে টিকতে গেলে, দুই পোলের মধ্যেই থাকতে হবে। নইলে আউট।
সুতরাং বৃন্দাকারাত, বিমান বোস চান বা না চান-সিপিএমকে মমতা বিরোধি জোটে থাকতেই হবে। আর যদি সেই জোটে সিপিএম না যায়, তাদের ভবিষ্যত সুসি। ২০২১ এ একটাও সিট পাবে না। ওইসব বালছালের কমি আদর্শ দেখে এই রাজ্যে ভোট হবে না-হবে আপনি মমতার পক্ষে না বিপক্ষে। সিম্পল-ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট। মমতার পক্ষে-বিপক্ষের বাইরের কোন স্পেক্ট্রাম পশ্চিম বঙ্গের রাজনীতিতে আর নেই-আগে যেমন সিপিএমের পক্ষে-বিপক্ষের বাইরে কিছু ছিল না। এটাই পশ্চিম বঙ্গের রাজনীতির আজ শেষ কথা।
একই কথা বিজেপির জন্যও সত্য। অমিত শাহ পরিস্কার ভাবেই তিনো বিরোধিতায় যেতে চান না। ফলে এই রাজ্যে বিজেপির ভবিষ্যত শুন্য। আবার যদি ধরা হয় বিজেপি আলাদা ভাবে তিনো বিরোধিতায় নামল। তাহলে যদ্দিন না পর্যন্ত, তারাই ক্রেডিবল মমতা বিরোধি পার্টি-তদ্দিন পর্যন্ত কিস্যু হবে না। কারন মমতা বিরোধিরা চাইবে, বিরোধি ভোট একটা বাক্সে জমা হোক।
সিপিএম এন্টি-সিপিএমের দিনেও বিজেপির হাল ছিল একই। ওই বাই-পোলার রাজনীতির দুনিয়ায়, দুটোপোলের মধ্যে একটাতে না থাকলে ১০% ভোট আর ৫ টা সিটই অনেক বেশী। এর বেশী এগোবে না পার্টি।
মমতা এবং মমতা বিরোধি এই বাইপোলার জগতে মমতার কিছু আনফেয়ার এডভ্যান্টেজ আছে। যেমন তৃণমূল আঞ্চলিক দল-এবং মমতার সিদ্ধান্তই ফাইনাল। ফলে তৃনমূল কখনোই দিল্লী, সেন্ট্রাল কমিটি এইসব নিয়ে টাইম নষ্ট করে না। বাকী অধীর, সূর্য্যকান্ত এবং দিলীপের অনেক দিল্লী ট্রাকশন।
সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি-কেওই আলাদা ভাবে মমতাকে হারাতে সক্ষম না। অন্যদিকে বিজেপির ১০% ভোট ব্যাঙ্কটা দরকার মমতা বিরোধি শিবিরের।
তাহলে ভবিষ্যতে মমতা বিরোধি পোলের বিবর্তন কি ভাবে হবে?
ইনফ্যাক্ট -একটাই সমাধান আছে। সেটা হচ্ছে অধীর বা অশোকের নেতৃত্বে বাংলা বাঁচাও মঞ্চ টাইপের মমতা বিরোধি "পার্টী" ।
জোটের ঘোঁটে কিছু হবে না। নতুন আঞ্চলিক পার্টি না হলে মমতাকে রোখা অসম্ভব। কংগ্রেস বা বিজেপির কেও কোনদিন সিপিএমকে ভোট দেবে না। সেটা এই জোটেই পরিস্কার। নিজেদের পার্টিতে থাকলে অধীর এবং অশোকের কোন রাজনৈতিক ভবিষ্যত নেই। এই ধরনের বাংলা বাঁচাও পার্টি হলে, সেই পার্টিটা মমতা বিরোধি ভোটের সবটা পাবে। ঠিক যেমন ভাবে মমতা সিপিএম বিরোধি ভোট নতুন পার্টির তলায় একত্র করেছিলেন-তাতে বাম, ডান, বুর্জোয়া সবাই সামিল হতে পেরেছিল। জোটে বিরোধি ভোট একত্র করা মুশকিল আছে। কিন্ত নতুন একটা পার্টি তৈরী হলে-যার একমাত্র বুলস আই মমতা বিরোধিতা-সেই পার্টি কিন্ত হিন্দুভোট, বামভোট , বুর্জোয়া ভোট একত্র করতে পারে।
মমতাকে হারাতে চান ২০২১ সালে? ওয়েল মমতাকেই অনুসরন করুন। মার্ক্স, গান্ধী, শ্যামাপ্রসাদের ভূতেদের সাহায্যে বিরোধিরা জিতবে না।
(২)
বিজেপির ভবিষ্যত ঃ
নেই। আগেই লিখেছি-বাংলা এখন মমতা বনাম মমতা বিরোধিদের বাইপোলার ওয়ার্ল্ড। আপনি হয় এর ভেতরে নইলে বাইরে। কালিয়াচকের দাঙ্গার কারনে একটা সিট তুলেছে মুসলিম ভোটের বিভাজনের কারনে। ওই একটা সিটেই হিন্দুভোট কনসলিডেশনের আভাস আছে। সেটা ভবিষ্যতের মডেল হতে পারে ? মনে হয় না।
আরএসপি, সিপিয়াই, ব্লক-সরকারি বামেরা ?
মমতা বিরোধি বাংলা বাঁচাও পার্টি তৈরী না হলে , এদের বিধায়কদের প্রায় সবাই মমতা ক্যাম্পেই জয়েন করবে। যেখানে রাজনৈতিক ভবিষ্যত নেই সেখানে কেউ থাকে না।
বিপ্লবী বামেরা ?
কিস্যু যায় আসে না। তারা তাদের <১% ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতে দেখতে স্কুল কলেজে নতুন মুর্গীর সন্ধানেই বাকী জীবন কাটাবেন।
কংগ্রেস ?
গোটা দেশে কংগ্রেস এবং গান্ধী ফ্যামিলি ভিত্তিক রাজনীতি এখন অপ্রাসঙ্গিক। বাংলা বাঁচাও টাইপের নতুন পার্টি ছাড়া কংগ্রেসের নেতাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত শুন্য।
সিপিএম ?
এ রাজ্যে সিপিএমের এখনো ১৫-২০% কমিটেড ভোটবেস আছে। সেটা কম না। কিন্ত এই বেসটা মমতা বিরোধি রাজনৈতিক পোলের অংশ না হতে পারলে, টিকবে না। এবং জোট তার সমাধান না। পার্টিটা খোল নলচে বদলাতে হবে। সম্পূর্ন ভাবে প্রথম থেকে শুরু করতে হবে এদের। যার ভিত্তি হোক কোয়াপরেটিভ মুভমেন্ট, লোকাল গভর্ন্যান্স, সরকারি চিকিৎসা এবং সরকারি শিক্ষা নিয়ে আন্দোলন। এই মহুর্তে সিপিএমের নেতৃত্ব এবং বেসটি একটি সুবিধাবাদি ভদ্রলোক ক্লাসের লোকজন-যারা স্কুলের চাকরি চান। এই অবস্থা চলতে থাকলে পার্টিটা তুলে দেওয়া ভাল। গৌতম দেব, অশোক বাবুরা যদি এটা বোঝেন-পার্টির ভবিষ্যত নেই-সুতরাং তাদের নিজেদের ভবিষ্যত হচ্ছে একটা মমতা বিরোধি পার্টি তৈরী করা সমভাবাপন্ন কংগ্রেসীদের নিয়ে-তবেই সিপিএমের সমর্থকদের কিছু আশা ভরসার স্থল তৈরী হতে পারে। আদারওয়াইজ সিপিএম ইজ ডেড।
(৩)
শিল্প এবং চাকরির ভবিষ্যত ঃ
অবশ্যই ভাল হবে। আমি চাইনা কোলকাতায় সবুজ ধ্বংস করে ব্যাঙ্গালোর গুরগাঁও এর মতন গুচ্ছ গুচ্ছ কোম্পানী এবং ভাল চাকরি আসুক। এবং তারপরে মাত্র দশ বছরে জলের লেভেল নেমে গিয়ে শহরটাই ধ্বংশ হৌক।
গত ৩৪ বছরে সিপিএম রাজ্যটাকে ছিবড়ে করে দিয়েছিল শ্রমিক আন্দোলনে। সবাই এই রাজ্যকে ভয় পেত শ্রমিক আন্দোলনের কারনে। স্ট্রাইকের পর স্ট্রাইক ডেকে রাজ্যের কর্ম সংস্কৃতি ধ্বংস করা হয়েছে। কে আসবে এই রাজ্যে শিল্প গড়তে?
মমতা ব্যানার্জি শ্রমিক আন্দোলন এবং নির্বোধের বন্ধ সংস্কৃতি আটকেছেন সফল ভাবে। শিল্প স্থাপনের এটা ছিল প্রথম শর্ত। সেই শর্ত এখন পশ্চিম বঙ্গে বিদ্যমান। পশ্চিম বঙ্গে বামেরা ধ্বংশ না হওয়া পর্যন্ত কিস্যু হত না। সেটা হয়েছে। এখন ইনভেস্টমেন্ট আসবে।
এবার দরকার দ্বিতীয় শর্তে। আইন শৃঙ্খলা এবং সিন্ডিকেটের হাত থেকে শিল্পকে বাঁচানোর। শেষের দিকে এই কাজটিও ভাল ভাবেই করেছেন মমতা। একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে। শিল্প না আসলে সিন্ডিকেটের ও ইনকাম নেই। কোলকাতার রিয়াল এস্টেট মার্কেট ধ্বংস। ৪০ থেকে ৬০% দাম কমেছে বাড়ির। স্পেকুলেশনের জন্য কেউ আর ফ্ল্যাট বানাচ্ছে না। সিন্ডিকেটই বা টাকা পাবে কোথাথেকে?
সুতরাং এস এই জেড মানা ছাড়া মমতার হাতে দ্বিতীয় কোন গতি নেই। পার্টির্ব আভ্যন্তরীন চাপেই উনি সিলেক্টিভলি মেনে নেবেন।
যেটা বেশী দরকার-সেটা হচ্ছে বাঙালীদের মধ্যে থেকে আন্তারপ্রেনার তুলে আনা-উদ্যোগপতি তৈরী করা। প্রান্তিক শহর গুলিতে ছোট ছোট কারখানা খুলুক। ৩৪ বছর ধরে লাল ঝান্ডার ভয়ে সেসব হয় নি। অনেকে ভয়ে তাদের ছোট কারখানা সম্প্রসারন করতেন না। তারা আশাকরি এবার সাহস পাবেন যে সিপিএম এখন শেষ-শ্রমিক আন্দোলনের ভয় নেই।
এই রেজাল্ট পশ্চিম বঙ্গের জন্য পজিটিভ। ভীষন ভাবেই পজিটিভ। বাম শক্তির সম্পূর্ন ধ্বংস ছাড়া রাজ্যের প্রগতি ছিল অসম্ভব। সেটা এখন ১০০% এচিভড। সুতরাং এবার শুধু গড়ার পালা।
No comments:
Post a Comment