Sunday, May 22, 2016

সিপিএম এবং মাস্টারমশাই ক্লাস!

সিপিএমের পতনে যাদের দুঃখে পেট এবং হৃদপিন্ড ফেটে যাচ্ছে, তাদের জন্য দুচার লাইন !
************
    আমি মনে করিনা, ১৯৭৭ সালে যে পার্টিটাকে চিনতাম এটা সেই পার্টি। ১৯৭৭ সালে সিপিএম যখন ক্ষমতায় আসে আমার বয়স চার। তখনো পার্টিতে শিক্ষকদেরই প্রাধান্য। কিন্ত এইসব শিক্ষকরা চরম দারিদ্রের মধ্যে লড়াই করতে করতে উঠে এসেছেন। আমার বাবা মাও ছিলেন সেই কাতারের শিক্ষক যারা জীবন সংগ্রামের শিক্ষা বই এর পাতা থেকে না-জীবন থেকেই নিয়েছেন । তখন কংগ্রেসের আমলে শিক্ষকদের বেতন ছিল খুব কম এবং তাও চার থেকে ছমাস বাদে পেত শিক্ষকরা।

     যেহেতু শিক্ষক শ্রেনী ছিল সিপিএমের ভিত্তি,বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এসে প্রথমেই শিক্ষকদের বেতনক্রম এবং নিয়মিত বেতনের ওপর জোর দেয়। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কারন প্রতিটা পার্টীই তার বেসকে দেখে ( আমেরিকাতেও )। তাছারা শিক্ষকরা জাতির মেরুদন্ড।  এগুলো সিপিএমের ভাল কাজ।

     কিন্ত সিপিএম যেটা ভুল করে বসল-সেটা হচ্ছে পার্টির কোটেরি বা ভরকেন্দ্র-সেখানে না থাকল ব্যবসায়ী, না শিল্পপতি, না শ্রমিক, না কৃষক। এজ ইফ শিক্ষকরা সব জানেন। ভাল ভাল সব পরিকল্পনা হয়েছে-কিন্ত কোনটাতেই লিডারশিপ বা প্ল্যানিং ছিল না। কারন শিক্ষক নেতৃত্বের পক্ষে ওসব লিড করা সম্ভব ছিল না।

  আরেকটা মারাত্মক ভুল,  হাসপাতালের মতন সার্ভিস সেক্টরে তাদের পেটোয়া কোয়ার্ডিনেশন কমিটিগুলির হাতে পরিচালনার ভার সম্পূর্ন তুলে দেওয়া। অবস্থা এতটাই বাজে ছিল-আমার যারা ডাক্তার আত্মীয় ছিলেন, তারা ক্লাস ফোর স্টাফ বা নার্সদের বকতে ভয় পেতেন। সরকারি হাসপাতালগুলো মাত্র পাঁচ বছরের মধেই নরকে পরিণত হয়-কারন সরকারি স্টাফেরা বুঝে গেছে পার্টিতে মিটিং এ মিছিলে মুখ দেখাতে হবে। কাজের কোন দাম নেই। আর এর পরিনতি হল, মহান কমিনিউস্ট নেতা জ্যোতিমোষ সহ পার্টির উচ্চনেতাদের কেওই সরকারি হাসপাতালে নিজেরাই ভর্তি হতে সাহস পেলেন না!  ফলে সিপিএমের ওই আইডিওলজিক্যাল গ্রাউন্ড যে সম্পূর্ন পাতলা পায়খানা সেটা কিন্ত বামফ্রন্ট শাসনের প্রথম দশ বছরেই পরিস্কার হয়। মুখে বলব সমাজতন্ত্রের কথা, আর এত বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও নিজেরা যাব প্রাইভেট হাসপাতালে-আর ছেলে মেয়েদের পড়াবো প্রাইভেট স্কুল কলেজে-এই ধরনের কাজ করলে, একজন সমাজতন্ত্রী আর ক্লাউনের মধ্যে কি পার্থক্য থাকে? আপনি আচরি ধর্ম না হলে সবটাই জোকারগিরি।

 প্রথম দুই বামফ্রন্ট মন্ত্রীসভায় দুবৃত্তায়ন হয় নি। কিন্ত বাজারে চাকরি ত নেই। সব অফিস কোলকাতা ছেড়ে মুম্বাই এ চলে গেছে প্রথম পাঁচ বছরেই। এদিকে স্কুলের চাকরি লোভনীয়। ফলে স্কুল কলেজের চাকরিতে স্বজন পোষন শুরু হল । এইখান থেকেই পার্টির পচনের ১০০% শুরু। এইখান থেকেই পার্টির সম্পূর্ন ফোকাস হয়ে দাঁড়াল কিভাবে নিজেদের লোকেদের চাকরি দিয়ে ভবিষ্যত নিশ্চিত করা যায়। শিল্পায়ন নিয়ে কোন চিন্তাই নেই! প্রগতিশীল চিন্তাভাবনাকে ছড়ানোর অনেকগুলো মঞ্চ প্রথম এবং দ্বিতীয় বামফ্রন্ট মন্ত্রীসভায় কাজ করেছে । যেমন যুবকল্যান মঞ্চ। এরা বহুদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রগতিশীল আদর্শগুলোকে ছড়ানোর চেষ্টা করেছে এক সময়। কিন্ত ওই যে-আস্তে আস্তে পচন শুরু হওয়ার পরে-সব কিছুই ধ্বংস হয়। আলটিমেটলি পার্টিটা ছিল-কিভাবে রিগিং করে জিততে হবে-আর নিজেদের ছেলেমেয়েদের সরকারি চাকরি পাওয়াতে হবে। শিক্ষা, কৃষি, প্রগতিশীল চিন্তা-এই সব নিয়ে একটু আধটু হোলদোল প্রথম দশ বছরে দেখতাম। আস্তে আস্তে সব কিছু হারিয়ে সিপিএম মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকদের স্কুল আর সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার পার্টিতে পরিণত হয়।

 একেতে অশোক মিত্রর মতন মহান পন্ডিতরা তাত্ত্বিক ভাবে পশ্চিম বঙ্গের ভবিষ্যত প্রজন্মের পেছন মেরে গেছেন- তবে পার্টির লোকগুলো তখনো ভদ্রলোক। কিন্ত ১৯৮৮-৯০ এর পরে যেসব ক্যাডার ঢুকল বেনোজলের মতন-সব হার্মাদ। ১৯৯৬ সালে এস এফ আই এর জাতীয় সম্মেলনে গিয়ে উঠতি ছাত্রনেতাদের সাথে তিনদিন থাকার অভিজ্ঞতা হয়।  সব থেকে নিকৃষ্ট মানের ছাত্রপ্রতিনিধি ছিল পশ্চিম বঙ্গের। যেগুলো পাতি পাড়ার মস্তান। কিন্ত পাঞ্জাব, কেরল, অন্ধ্রের কমরেড ছাত্ররা ছিলেন বেশ আদর্শবাদি এবং শিক্ষিত।  আমি সেদিনই বুঝেছিলাম, পশ্চিম বঙ্গে সিপিএম একদিন না একদিন শেষ হবেই। তবে ভারতে শেষ হবে না। এমন  গরীব দেশে কমিনিউজমের একটা প্রয়োজনীয়তা এবং এপিল থেকে যাবেই।

 যে সিপিএম এখন টিকে আছে তা ১৯৭৭ এর ছায়া ছাড়া কিছু না। সেই ১৯৭৭ সালেও সিপিএম যে খুব কর্মদক্ষ পার্টি ছিল তা না। কারন পার্টির র‍্যঙ্ক আন্ড ফাইলে ব্যবসা, শিল্প এবং কৃষি বোঝার মতন নেতা তখনো ছিল না।  কিন্ত তখন  লোকগুলো সৎ ছিল-জেনুইন দারিদ্রের সাথে যোগ ছিল তাদের।

  যাইহোক, সিপিএমের পক্ষে আর ফেরা সম্ভব না এই রাজ্যে। কারন তাদের বাম স্পেসটা মমতা ব্যানার্জি সম্পূর্ন ভাবেই নিয়ে নিয়েছেন। সিপিএমের বেসটাই চলেগেছে তৃনমূলে এবং রিভার্স সিফটের সম্ভাবনা নেই-কারন সিপিএম তার বেসটাকে ইগনোর করেছে প্রায় কুড়ি বছর।

 সব পার্টিরই মৃত্যু হয়। সিপিএম তার ব্যতিক্রম হতে পারে না। ডেভিল হ্যাজ প্লেইডস ইটস রোল।  পার্টি অফিস গুলো, যার অধিকাংশ বেয়াইনি, সেগুলো পার্টির তরফ থেকেই কোচিং সেন্টার বা বিজনেস সেন্টারে পরিনত করার অনুমতি দিক পার্টি। জনগণের বিরুদ্ধে যে পাপ তারা করেছেন, পার্টিঅফিস গুলো জনগনের ব্যবহারের জন্য খুলে দিয়ে, পাপের প্রায়শ্চিত্ত করুন তারা।

1 comment:

Dipanjan Datta said...

Ekdam thik katha bolechen. Ami nije ekjon school shikkhok. 2006 sale SSC parikkha diye chakrite jog diyechilam. Takhon CPM er jake bale bhara sangsar. Nijer chokhe dekhechi ABTA kara kichu shikkhaker dambho. Emon habbhab tara korten jeno gota duniya onader matamat o adorsho mene chale. Bakira sab bethik. Eder biruddhe kichu katha bolte gelei nek najore pore jete hoto. 2011 sale khamota theke sare jaoar 5 bachor pareo era nijeder matamat akre dhore pore ache. Ami to mone kori prithibite arshola ar CPM dutoi khub prachin. Kintu arsholar tao paribartan hote pare, CPM er konodin hobe na. Kuor banger matoi era eder mandhata amoler drishtibhangi akre pore thakbe. Khub bhalo likhechen apni.