Sunday, May 31, 2015

জনৈক প্রবাসীর অনধিকার চর্চার কৈয়ফত

রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক -ফেসবুকে লেখাটাই আজকাল আপদ ।  মৌমাছির ঝাঁক ধেয়ে আসে  হুল নিয়ে। আমি প্রবাসী বাঙালী। তাদের বক্তব্য পশ্চিম বঙ্গ নিয়ে, ভারত নিয়ে এগুলো আমার অনধিকার চর্চা। দেশে না থাকলে দেশের রাজনীতি নিয়ে চর্চা করার অধিকার আমার নেই!  ইগনোর করেছি বহুদিন। ইদানিং ব্যপারটা বিরক্তির পর্যায়ে লেবু কচলানো। লেবু কচলালে তিঁতোই হয়, তবুও গালাগাল কাদা ছোঁড়াছুড়ি থেকে একটা লম্বা কৈফয়ত নামানো বেটার মনে হল।

অভিজিত রায় হত্যাকান্ডে আমি বাংলাদেশীদের রিয়াকশন দেখেছি। অধিকাংশ লোকের বক্তব্য ছিল-কেন অভিজিত রায় বাংলাদেশের উন্নতির জন্য কাজ না করে, আমেরিকা থেকে আস্তিকতা, নাস্তিকতা নিয়ে ক্যাঁচাল করেছে!  অধিকাংশ বাংলাদেশীর মত ছিল, আমেরিকা থেকে অভিজিত রায়ের বাংলাদেশ চর্চা আসলেই অনাধিকার চর্চা! কি আর বলবো। যারা ওকে চিনতেন তারা বিলক্ষন জানেন ওর দেহটা ছিল আমেরিকাতে, মনটা সব সময় ছিল বাংলাদেশে। অভিজিতের হৃদয় মনের সবটাতেই ছিল বাংলাদেশ। প্রবাসী ভারতীয়, বাংলাদেশী-সবার দেহটাই শুধু বিদেশে। মন এবং হৃদয় সব সময় বাল্যের নন্দনকাননে!
 
যারা প্রবাসী বাঙালীদের বিরুদ্ধে হুল ফোটাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই আর্থ সামাজিক ইস্যু গুলো নিয়ে গভীরে ভাবেন নি।   বারবার এককথা লিখে যাতে লেবু কচলাতে না হয় -তাই নিজের দুসেন্ট লিখে ফেললাম ।

    (১)  প্রথম গুরুত্বপূর্ন বিষয় দেশের ট্যাক্স পেয়ারের টাকায় পড়ে বিদেশে গিয়ে থেকে, ভারতের কি লাভ হল? এটা কি দেশের সাথে প্রতারণা করা হল না? ট্যাক্সটা ত পাচ্ছে আমেরিকা!

      --অবশ্যই যৌত্বিক প্রশ্ন।  কিন্ত উলটো সাইডের আর্গুমেন্টটাও জানা উচিত। ভারতে আজকের শিক্ষিত তরুন তরুনীরা করে খাচ্ছে আই টি শিল্পের জন্য। ভারতে এই বিশাল আই টি শিল্পের ৬৫% ক্লায়েন্ট হচ্ছে আমেরিকা।  আউটসোর্সিং শিল্পের ইতিহাস পড়লে দেখা যাবে, আমেরিকা প্রবাসী ভারতীয়রা  আই টি শিল্পের উত্থানের মূল কান্ডারী।

            যদি ভারত থেকে ইনারা আমেরিকাতে না যেতেন-সেখানকার ব্যবসা এবং প্রযুক্তির স্কিল গুলি রপ্ত না করতেন- আজকে ভারতের আই টি শিল্প যেখানে, তার ৯০% ও তৈরী হত কিনা সন্দেহ আছে। কারন সেক্ষেত্রে আই টি আউটসোরসিং এর হাব হত ইস্টার্ন ইউরোপ, রাশিয়ান ফেডারেশন।

   

 এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে, যেখানে গ্লোবালাইজেশন কাজে লাগিয়েই ভারতের অধিকাংশ নতুন উন্নত চাকরি তৈরী হচ্ছে সেখানে  পৃথিবীর অন্য দেশে কাজ করতে যাওয়াটাই কাম্য।  কারন সেটা না  হলে সেই দেশের সার্ভিস ব্যবসা, ভারতে আসা মুশকিল আছে।

   (২) দ্বিতীয় প্রশ্ন ভারতের অর্থনীতিতে একজন প্রবাসী কি ভাবে অবদান রাখে?

 আমি যেহেতু ব্যবসায়ী এবং আমার ডেভেলেপমেন্ট সেন্টার এবং কর্মীদের অধিকাংশ ভারতেই ( মুষ্টিমেয় কিছু ইস্টার্ন ইউরোপে )-আমার ক্ষেত্রে উত্তরটা সরাসরি দেওয়া যায়। সেটা সমস্যা না। প্রশ্ন হচ্ছে বাকী প্রবাসীরা যারা ব্যবসা করে না-শুধু চাকরি করে-তারা কি ভারতের অর্থনীতিতে কিছু দিচ্ছে না?

  ভারতের অর্থনীতিতে প্রবাসী ভারতীয়দের অবদান, ভারতে থাকা ভারতীয়দের দ্বিগুনের কিছু বেশী। আমেরিকান ভারতীয়দের ক্ষেত্রে এটি দশগুন। এই তথ্যগুলো যাচাই করে দেখে নিন


  •                          ২০১২-১৩ সালে ২২ মিলিয়ান প্রবাসী ভারতীয় পাঠিয়েছিল ৭২ বিলিয়ান ডলার। যা ভারতে আসা এফ ডি আই (৪৫ বিলিয়ান ঃ২০১২) এর থেকে অনেক বেশী। শুধু তাই না,  এই টাকাটা ভারতের জিডিপির ৪%।  অর্থাৎ ২% এন আর আই, ভারতের জিডিপির ৪% অবদান রাখে। যা গড়ে দ্বিগুনের বেশী।
  •  ৭২ বিলিয়ানের ৩০% ছিল  উত্তর আমেরিকা থেকে ( ইউ এস, কানাডা)। এখানে থাকে তিন মিলিয়ান ভারতীয়। সুতরাং 0.3%  ইন্ডিয়ান আমেরিকান , ভারতের জিডিপিতে শুধু রেমিটান্সের মাধ্যমে 4 % x0.3 =1.2%  দিচ্ছে। অর্থাৎ শুধু রেমিটান্সের মাধ্যমেই একজন ইন্ডিয়ান আমেরিকান একজন ভারতবাসীর চেয়ে চার গুন বেশী অবদান রাখছে।
  •  এবার রেমিটান্স ছাড়াও ব্যবসার মাধ্যমে ভারতে টাকা আসছে প্রবাসীদের জন্য। ইনফ্যাক্ট এফ ডি আই এবং আউটসোর্সিং রেভিনিউএর একটা বড় অংশ প্রবাসী আমেরিকান ভারতীয়দের জন্যই আসে। সেটা ফ্যাক্টর ইন করলে, ভারতের অর্থনীতিতে প্রবাসী ইন্ডিয়ান আমেরিকানরা গড়ে একজন ভারতীয়র চেয়ে দশগুনের বেশী অবদান রাখছে।

 
    শুধু নাম্বার দিয়ে দেখলে, অবশ্য শর্ট সাইটেড হবে । আমেরিকার কোম্পানীগুলি সব সয় ভারতে নতুন নতুন ডেভেলেপমেন্ট সেন্টার খুলছে-এবং ভারতে খুলবে না ইস্টার্ন ইউরোপে খুলবে-এই সিদ্ধান্তগুলির পেছনে, ওইসব কোম্পানীর ভারতীয় কর্মীরা সব সময় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন।  আমি অবশ্যই চাইব, আমেরিকার অধিকাংশ বিজনেসে ভারতীয় কর্মী থাকুক-যাতে তারা যখন আউটসোর্সিং এর সিদ্ধান্ত নেবে তখন যাতে ভারত প্রাধান্য পায় তাদের জন্য।

(৩)  এর পরেও প্রশ্ন  ওঠে।  ব্যবসা করা ত নিজের মুনাফার জন্য। এটা কি ভারতের জন্য কিছু করা হল ??

  আমি সবিনয়ে নিবেদন করতে চাই, সৎ ভাবে মুনাফা অর্জনের মধ্যে হীনতা কিছু দেখি না।  ছোটবেলা থেকে আমাদের সামনে যেসব চরিত্র মূলোর মতন ঝোলানো হত-নেতাজি, বিবেকানন্দ-এরা নিঃস্বার্থ ত্যাগের মূর্ত প্রতীক । এর থেকে বাঙালীদের মনে বধ্যমূল ধারনা যারা নিঃস্বার্থ ত্যাগী তারা মহান, যারা মুনাফার জন্য ব্যবসা করে-সবাই চোর ডাকাত ধান্দাবাজদের দলে। এর মূল কারন ভারতের ব্যবসায়ী শ্রেনীটী বেসিক্যালি ওই টাইপের। এই জন্য বিবেকানন্দ আমেরিকাতে এসে বলেছিলেন, আমেরিকাতে ব্যবসায়ীরা সন্মানের দিক দিয়ে প্রথম সারিতে-কারন তারা দেশ গড়ার কারিগর। আর ভারতে ব্যবসায়ী বলতে লোকে মূলত চোর ছ্যাঁচড়দের বোঝে।

যারা নিঃস্বার্থ ত্যাগীদের প্রথম সারিতে রাখবেন--তাদের নিয়ে আমার আপত্তি নেই। শ্রদ্ধাই আছে। তবে আমরা নশ্বর মানুষ। অর্থনীতি নিঃস্বার্থ ত্যাগে চলে না। তা চলে মুনাফার তেলে।  মুনাফার ভাল খারাপ দিক সবই আছে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ন সত্য এটাই, মার্কেট এবং গ্লোবালাইজেশনকে অস্বীকার করা মানে ব্যক্তি এবং জাতি হিসাবে শ্রেফ আত্মহত্যা। তবে আত্মহত্যা বাজে, বেঁচে থাকা ভাল। এমন তত্ত্বের জনক আমি নই । সুকুমার রায়ের ফকিরের খেতেও কষ্ট হত। সেও তার দৃষ্টিকোন থেকে ঠিক। কারন জীবনের পরম উদ্দেশ্যত আসলেই নেই। সবটাই আপাত। তাই জীবনে কি করা উচিত সেই মেঠো বিতর্কে না গিয়ে আপাতত ধরা যাক নশ্বর সাধারন মানুষ হিসাবে আমার চাহিদা সামান্যই-সেটা হচ্ছে নিজের পোলাপানদের জন্য খাদ্য, শিক্ষা এবং চিকিৎসার নিরাপত্তা। তাই আমি এমন একটা সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য কাজ করতে চাই, যেখানে শুধু আমার সন্তানের জন্য না-বাকী সবার জন্যও এই নিরাপত্তা থাকবে। ভেবে দেখুন ভারতের অবস্থা-খাদ্যে অসম্ভব ভেজাল, শিক্ষা শেষ করে দিচ্ছে প্রাইভেট টিউশন আর প্রাইভেট স্কুল কলেজ গুলো-আর চিকিৎসা? কোলকাতায় নার্সিং হোমে ভর্তি হওয়া আর কসাই খানায় ছাগল হিসাবে নাম লেখানো একই ব্যপার। এমন নয় যে আমেরিকা স্বর্গ। এখানেও ভেজাল আছে। কিন্ত ভারতের তুলনায় তা অনেক অনেক গুনে ভাল। ভারতে এই সব পরিসেবাতে অসম্ভব দুর্নীতি-- কারন মার্কেটের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রন নেই। চোরেরা চালাচ্ছে এইসব ব্যবসা। এর মূল কারন  ব্যবসার ক্ষেত্রে যেসব সংস্কারের দরকার ছিল তা হয় নি। মোদিজি কত বল্লেন তিনি ভারত থেকে এই সব আদ্যিকালের আইন কানুন তুলে দেবেন। তা উনার এক বছরে দেখলাম উনি শুধু বাতেলা মেরেছেন-বরং কাল সার্ভিস ট্যাক্স ১২% থেকে বেড়ে ১৪% হল! আচ্ছে দিন! ব্যবসা করতে যদি এত সার্ভিস ট্যাক্স দিতে হয়-কে আর আইন মেনে ব্যবসা করতে চাইবে?  এত সার্ভিস ট্যাক্স দিয়ে একমাত্র তারাই ব্যবসা করতে পারবে যারা চুরি করতে সক্ষম!

        ক্যাপিটালিজমকে পরিস্কার ভাবে স্বীকার না করলে কিভাবে কি করে ক্যাপিটালিজমের গলায় ঘন্টা লাগাবেন?  মার্কেট নিয়ন্ত্রন করা কঠিন কাজ-আমেরিকাও করতে হিমসিম খায় । কিন্ত আমেরিকাতে খাদ্য-ড্রাগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফ ডি এ এতটুকু অন্তত করেছে যে খাদ্য এবং মেডিসিনে ভেজাল নেই । ওই টুকু বেসিক নিরাপত্তা দিতেও ব্যর্থ ভারতের সিস্টেম।

           ক্যাপিটালিজমের তীর্থ ক্ষেত্রে আমার ছেলেকে প্রাইভেট স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে না। আর ভারতে একজন রিক্সাওলাও তার ছেলেকে প্রাইভেট স্কুলে পাঠাচ্ছে!! শিক্ষাক্ষেত্রে কি মারাত্মক অবস্থা!

             মার্কেটকে নিয়ন্ত্রন করার মধ্যেই আমেরিকার এই সাফল্য। আর মার্কেটকে নিয়ন্ত্রন করতে হলে প্রথমেই স্বীকার করতে হবে, মার্কেটই মূল চালিকা শক্তি-তাই সমাজ এবং রাষ্ট্রের সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রন মার্কেটের ওপর থাকার দরকার। মার্কেট বাজে, মুনাফা বাজে-তাই রোম্যান্টিক বামপন্থী সুলভ দিন বদলের কবিতা এবং গানে ডুব দিলে-মার্কেট চোর ডাকাত এবং দৈত্য রূপেই জীবনে উদিত হবে। সেটাই ভবিতব্য হয়েছে পশ্চিম বঙ্গের জনজীবনে।

আমেরিকাতে আসার আগে আমিও বামপন্থী চিন্তাতেই চালিত ছিলাম।  আমেরিকাতে আসার পরে বিবেকানন্দ একশো বছর আগে যা দেখেছি্লেন-  আমি ও তাই দেখলাম ।  এই সমাজ চলে ব্যবসার ওপরে এবং ব্যবসায়ীদের দ্বারা। আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতা পিতারা সবাই একেকজন  উদ্যোগপতি। বেঞ্জামিন ফ্যাঙ্কলিন আধুনিক ডাক ব্যবস্থা থেকে আরো অনেক নতুন সিস্টেমের জনক সেকালে। একালের আমেরিকা তৈরী হয়েছে  থমাস এডিসন, নিকোলা টেসলা, হেনরী ফোর্ডদের হাত ধরে যার বাটন আজ বিল গেটস,  স্টিভ জবস -মার্কজুকারবার্গ দের হাতে। আমাদের ছোটবেলার হিরো ছিলেন বিবেকানন্দ, নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ। যারা একাধারে কর্মবীর, স্বার্থত্যাগী, নিস্পাপ চরিত্র!! আমেরিকাতে হিরো আবিস্কারক উদ্যোগপতিরা। আমেরিকাতে লেখকদের মধ্যেও যদি আমি দেখি-ধরুন মার্ক টোয়েনের কথা। উনি একাধারে লেখক আবার উদ্যোগপতি। উনার আধুনিক ছাপাখানার পেটেন্ট ছিল।

 সব থেকে বড়  কথা আমেরিকাতে এডিসন-টেসলাদের পূজো করা হয় না। এরা নিস্পাপ নিঃস্বার্থ চরিত্র ছিলেন এমন মূলোও ঝোলানো হয় না। বরং থমাস এডিসন এসি কারেন্ট আটকাতে কিভাবে নিকোলা টেসলাকে বাম্বু দিয়েছিলেন, সেই কাহিনী এখানে অনেক বেশী প্রচলিত।  এডিসন থেকে বিল গেটস-এদের সবার চরিত্রে যেটা আমার চোখে পড়েছে এরা আবিস্কার করেছেন, কোম্পানী গড়েছেন আবিস্কারের, নতুনের আনন্দে।  নতুন কিছু সৃষ্টির আনন্দ আমেরিকান সমাজে প্রবল।  আমার আশেপাশের যত সফল উদ্যোগপতি দেখি তাদের একটা বড় অংশই এই নতুনের আনন্দে চালিত। টাকা পয়সা, ক্ষমতা এবং রিকগনিশনের দিকটা অবশ্যই আছে-কিন্ত এসব ছাপিয়ে কাজ করার যে আনন্দ এদের মধ্যে দেখেছি-এটাই আমার মূল কারন আমেরিকান সমাজে থেকে যাওয়া। শুধু টাকা বানাবার জন্য কেও এডিসন বা স্টিভ জবস হয় না।  একজন কবি বা পেইন্টার সৃজনশীলতার যে আনন্দ পান, একজন উদ্যোগপতিও ব্যবসা বা প্রযুক্তিতে নতুনের সৃঞ্জন করে একই আনন্দ পান।  টাকায় সেই শক্তি নেই যা সৃজনশীলতার আনন্দে আছে।

মোদ্দা কথা ইতিহাসে আমার যেটুকু সামান্য জ্ঞান, তাতে এটা পরিস্কার--- একটা জাতিকে যত কম ভাববাদি আধ্যাত্মিক মূলো দেখানো হয় ততই ভাল। আধ্যাত্মিক মূলোতে ভাল কবিতা, গান ইত্যাদি হতে পারে-কিন্ত রাজনীতি এবং অর্থনীতি সম্পূর্ন ধ্বসে যাবে।

(৪) তৃতীয় প্রশ্ন- ব্যবসা যদি করতে হয়-আন্তার প্রেনার কালচার যদি কাম্য হয়-তাহলে ভারতে নয় কেন? কেন আমেরিকাতে?

   প্রথমত, আমি যত  আমেরিকান-ভারতীয় উদ্যোগপতিকে জানি,  তাদের সবার ব্যবসার কিছু অংশ ভারতে আছে। সুতরাং ব্যবসা সবাই ভারতেও করছে। ভারতে ব্যবসা করাটা ইস্যু না।

   প্রশ্ন ওঠে এবং ওঠা উচিত-আমেরিকার এই আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর সংস্কৃতি আমরা ভারতে, ভারতের উন্নতির জন্য পৌছে দিতে পারছি কি না?

   এখানেই প্রবাসী ভারতীয়দের বিশাল ব্যর্থতা। এই পয়েন্টটা একটু ডিটেলসে লেখা দরকার। আমেরিকাতে প্রায় সব আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর কোম্পানীতে সি ই ও থেকে ঝাড়ুদার পর্যন্ত সবাই কর্মী। আমরা এখানে সবাই আগে প্রথমে একজন কর্মী, তারপরে বন্ধু, তারপরে বস।  ভারতে কোম্পানীর ম্যানেজমেন্ট এবং মালিকেরা যেভাবে কর্মীদের সাথে ব্যবহার করে তা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য না। সবাই স্যার স্যার করছে!!  আমি অনেক আমেরিকান-ভারতীয় উদ্যোগপতিকেই জানি যারা ভারতে আমেরিকান ওয়ার্ক কালচার আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর কারন মিডল ম্যানেজমেন্ট। তারা বলে যে যদি ভারতে আমেরিকান সাম্যের বানী আনা হয় ওয়ার্ক প্লেসে, তাহলে কেও নাকি আর  ম্যানেজারদের কথা শুনবে না! তাই নাকি ভারতে  ওই স্যার, তেল মারা কালচার, ভয় দেখানো কালচার চালু রাখতে হবে!! ভীষন ডিসগাস্টিং হোপলেস সিচুয়েশন এটা। যেহেতু আমাদের আমেরিকাতেই থাকতে হয় এবং আমরা ভারতের ম্যানেজারদের ওপর নির্ভরশীল-এই একটা স্থলে কিছুতেই ভারতে আমেরিকান ওয়ার্ক কালচার এবং ওয়ার্ক প্লেসে সাম্যের যে বানী সেটা আনা সম্ভব হচ্ছে না। " আমরা সবাই কর্মী, আমাদের এই কর্মজগতে" -এই মহান আমেরিকান সংস্কৃতিটি ভারতে আনতে প্রবাসীদের দ্বায়িত্ব বিরাট। কিন্ত তারা ভারতে ফিরে, সেই ব্রাহ্মন্যবাদি কালচারে ফিরে যান। এটা দুর্ভাগ্যজনক।

 এর একটা মূল কারন ভারতে কাস্ট সিস্টেম, ব্রাহ্মন্যবাদ একদম রক্ত মজ্জায় ডুবে গেছে। ফলে একজন কর্মী- ম্যানেজার হওয়া মাত্রই নিজেকে ব্রাহ্মন ভাবতে থাকে। সে আর শুদ্রের কাজ করবে না !! আমেরিকাতে আমরা নিজেরা নিজেদের ল্যাব পরিস্কার করি, পোষ্ট অফিসের সব কাজ নিজেরাই করি-ওয়ার্ক শপেও নিজেরাই যায়। আবার এলগোরিদম ও আমরাই লিখি। ভারতে কোন একজন ইঞ্জিনিয়ারকে যদি বলা হয় মেশিনটা এদিক থেকে ওদিকে সরিয়ে দে-সে অপমানিত বোধ করবে।

           দুহাজার ছয় সালে পুনেতে একটা পার্টনার কোম্পানীতে  ট্রেনিং দিতে গেছি। একটা ফাইভ স্টার হোটেলের কনফারেন্স  হল বুক করে ট্রেনিং হচ্ছে। আমি গাড়ি থেকে নামলাম। হাতে  বিশাল সুটকেস ।  নিজেই সুটকেসটা টানতে টানতে কনফারেন্স রুমের দিকে এগোচ্ছি। হঠাৎ দেখি এক ভারতীয় ম্যানেজার হাঁপাতে হাঁপাতে আমার দিকে ছুটছে। কাছে এসে বলে স্যার করছেন কি। এটা আমেরিকা না। আপনি যদি নিজেই এই ভারী বাক্স টানতে টানতে সবার সামনে
 কনফারেন্স রুমে ঢোকেন,  এই সব ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে আপনার আর ইজ্জত থাকবে না। আপনি হচ্ছেন গিয়ে মূল বক্তা। আপনাকে ভারতে ওয়েট রেখে চলতে হবে।  এসব শোনার পরে আমার মাথা বঁই বঁই করে ঘুরছিল-মনে মনে আবৃত্তি করলাম "হে মোর দুর্ভাগা দেশ! "।

(৫)  আমেরিকাতে আমরা আরামের জীবন বেছে নিয়েছি-ভারতের জীবন অনেক কষ্টের বলে-
এই অভিযোগ ও সত্য না। ফাক্ট হল ভারতে অনেক চাকর বাকর থাকে বলে, আমি ত দেখি টাকা থাকলে ভারতেই সুখ সুবিধা বেশী। আমার ত ভারতে গিয়ে আর ফিরতে ইচ্ছা করে না। সব সময় ভাল ভাল খাদ্য পানীয়-কেও না কেও রান্না করে দিচ্ছে, সব কিছু কাজ করে দিচ্ছে। এখানে সকালে উঠে বাগানে গাছের যত্ন নেওয়া, সার দেওয়া, ঘাস কাটা থেকে ব্রেকফাস্ট নিজেকেই তৈরী করে নিতে হয়। উইকেন্ডে ভাল মন্দ খাওয়া হয় পার্টিতে -কিন্ত বাকী দিনগুলোতে ফ্রীজের বাসি খাবারেই ক্ষুদানিবৃত্তি। এরপরে ছেলে মেয়েদের বিশাল এক্টিভিটি-কখনো ছেলেকে নিয়ে সকারে ত মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে। ভীষন বিজি এবং হেক্টিক জীবন। এর থেকে ভারতের জীবন অনেক ভাল।

কিন্ত ওই সমস্যা-নিরাপত্তা নেই। ব্যবসায়ীদের জীবনে আরো নিরাপত্তা নেই। তাদের পুলিশ, রাজনীতিবিদ, গুন্ডা ম্যানেজ করে বাঁচতে হয়।

আমার এই লেখার উদ্দেশ্য এটা বলা না যে সব ভারতীয়র আমেরিকাতে আসা উচিত। অথবা আমি যা করছি, বাকী ভারতীয়দের ও তাই করা উচিত। বরং আমি উল্টোটাই বলব। সবাই তার নিজের মতন করে সুখের সন্ধান করুক। সবাই নিজের মতন করে জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজবে। সুকুমার রায়ের ফকির সাহেব ও ঠিক, বিল গেটস ও ঠিক। বেঠিক সেই ব্যক্তি-যে ভাবে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ একটা মনোলিথিক আদর্শের মোল্ডে চলবে । হিন্দুত্ববাদি, ইসলাম এবং কমিনিউস্টদের সাথে আমার বিরোধিতা মূলত এই কারনে। কারন এরা মনে করে মানুষ, সমাজ এবং রাষ্ট্রের তাদের মত করে, তাদের আদর্শে চলা উচিৎ। সব মানুষকে এক ছাঁচে গড়ার চেষ্টাটাই সব থেকে বড় ভুল।

Saturday, May 30, 2015

নরেন্দ্রপুরের রেজাল্ট -সহযোগিতাই আসল প্রতিযোগিতা

নরেন্দ্রপুরের রেজাল্ট বারবার আলোচনাতে আসছে। এগুলো অর্থহীন কারন নরেন্দ্রপুরে মাধ্যমিকে সেরারা ভর্তি হয়, তাই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। কিন্ত যদি নরেন্দ্রপুরের কিছু আলোচনাতে আসা উচিত-সেটা হচ্ছে সেখানে কি করে একজন অন্যজনের কাছ থেকে শেখে। দেখলাম একজন ইন্টারভিউতে লিখেছে- সহযোগিতাই আসল প্রতিযোগিতা নরেন্দ্রপুরে। নরেন্দ্রপুর জীবনে যে শিক্ষা সব থেকে বেশী কাজে এসেছে-সেটা হচ্ছে ওই বাকীদের কাছ থেকে শেখা।  সবাই সবার কাছ থেকে শেখে। আমি কারুর কাছে কেমিস্ট্রির জন্য গেলাম ত সে আমার কাছে একটা ফিজিক্সের প্রবলেম নিয়ে এল। আমরা সবাই ছিলাম একাধারে শিক্ষক এবং ছাত্র-এবং শেখার স্কোপ থাকে এই দ্বৈত ভূমিকাতেই।

 একটা ছোট্ট গল্প না বললেই না। নরেন্দ্রপুরে একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি হওয়ার পরে প্রথম দুই মাস সবাই গাঁতাতে বসে যায়। চাপা টেনশন থাকে-প্রথম বাই মান্থলিতে এতগুলো ভাল ছেলের মধ্যে কে কি করবে। আর পরীক্ষার প্রশ্নের মান মুলত জে ই ই ধাঁচের হয়।  ত আমার ক্ষেত্রে যেটা হল, এত কিছু পড়েও , প্রথম বাই-মান্থলিতে অঙ্কতে ধেরালাম।  পরিস্কার মনে আছে ৫০ এ ২২ কি ২৩ পেয়েছিলাম। অঙ্ক ছিল আমার ফেভারিট সাবজেক্ট। খুব ঘাবরে গিয়ে ভাবলাম দেখি যারা ৪৫+ পেয়েছে তারা কি করে করল। এদের মধ্যে একজন ছিল সৌম্য জানা। যে কোনদিন সারাদিন এক ঘন্টার বেশী পড়ত না। ফুটবল খেলত। আমরা না খেলে  জে ই ই এর জন্য গাঁতাতাম। ও সামান্য মাত্র চর্চা করেই পুরো ক্রাক করল -এদিকে আমি গাড্ডা খেলাম ( ইনফ্যাক্ট ৯০% ছেলেই আমার কাতারে বাজে করেছিল প্রথম বাই-মান্থলিতে) -এটা বেশ লাগছিল।

 আমাদের একটা বড় স্টাডিরুম ছিল। ওখানে সৌম্য ফুটবল খেলে আটটার সময় পড়তে বসত।  আমি ঠিক করলাম দেখি ওর পড়ার পদ্ধতিটা কি । সেই মোতাবেক ওর পেছনের বেঞ্চে বসে আমি লক্ষ্য করতে থাকলাম ও আসলে কি করছে!  দেখালাম খুব সাধারন একটা অঙ্কের বই নিয়ে ও প্রতিটা ধাপের রেজাল্ট গুলো লিখে যাচ্ছে-মানে আমরা যেটা খাতায় করি-ও মনের মধ্যে সেটা করে নিয়ে শুধু উত্তর গুলো লিখে মিলিয়ে নিচ্ছে-আর অধিকাংশ সময় ভাবনার জগতে আছে। মোটেও খাতা পেনের সাথে লড়াই করছে না। কিছু না মিললে থিওরীর বেসিকে ফিরে যাচ্ছে।
সৌম্য আমাদের ব্যাচে আই আই টিতে অলইন্ডিয়াতে ১৪ র‍্যঙ্ক করেছিল-পশ্চিম বঙ্গ থেকে ওটাই ছিল হায়েস্ট।

আমি বুঝলাম, আমার শেখার পদ্ধতিতে বিরাট গলদ আছে। পুরো প্রসেসটা মুভির মতন মাথায় থাকা উচিত-এবং ধাপগুলোর প্রসেসিং ও মাথায় না হয়ে খাতায় হয়ে খুব বেশী লাভ হয় না।এর পর থেকে আমিও গাঁতানো ছেড়ে দিলাম-এবং আমাকেও দিনে দুঘন্টার বেশী আর কোনদিন পড়তে হয় নি। নরেন্দ্রপুরে সহপাঠীদের কাছ থেকে এই ছোট ছোট শেখাগুলো একটা গোটা জীবন বদলে দিতে পারে। অন্তত আমার ক্ষেত্রে দিয়েছিল। রেজাল্টে জীবন অতটা পালটায় না-যতটা পালটায় এই ছোট ছোট শেখাগুলিতে।

Tuesday, May 26, 2015

অভিজিত রায়রা নিওকন এজেন্ট? নিউ এথিস্ট মুভমেন্ট নিও-কনদের বি উইং ?

মুক্তমনা নাস্তিকরা নিওকনদের এজেন্ট- তারা পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদি ব্লুপ্রিন্টের বি টিম-এই বামাতি অভিযোগ মুক্তমনার জন্মলগ্ন থেকেই শুনে আসছি। এগুলো এতই হাস্যকর কথাবার্ত্তা-এর জন্য কলম খরচ করাও বেকার। অভিজিত নিজেই বহুলেখাতে এই অভিযোগের উত্তর দিয়েছে।  আমি আমার মত করে এদের উত্তর দিয়েছি। ইনফ্যাক্ট মুক্তমনার জন্মলগ্নে সেতারা হাশেম ছন্দনাম ( যিনি নিউউয়ার্ক প্রবাসী জনৈক মহিউদ্দিন সাহেব) নিয়ে এক বামাতি, এইসব অভিযোগ করতেন সদালাপে।  অভিজিত এবং আমি দুজনেই এই ধরনের বামাতি বিভ্রান্তির উত্তর বহুবার দিয়েছি। বাংলার বামেরা যে বস্তুবাদি দর্শন থেকে বহুদিন আগে থেকেই কক্ষচ্যুত-এই নিয়ে আমার বা অভিজিতের কোন কালেই সন্দেহ ছিল না।

   আমি দুভাবে এর উত্তর দেব। প্রথমটা বিশুদ্ধ মার্ক্সবাদি-লেনিনবাদি তাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিক অবস্থান থেকে। দ্বিতীয়টা আমার নিজের অবস্থান এই ইস্যুতে।

 মার্ক্সবাদ লেনিনবাদি অবস্থান ঃ
    
 ধর্ম নিয়ে মার্ক্সবাদিদের "প্রাক্টিক্যাল"  অবস্থান কি হবে এই বিভ্রান্তি বহুদিনের। তবে লেনিন বা এঙ্গেলেসের এই নিয়ে কোন বিভ্রান্তি ছিল না। লেনিন এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য খুব পরিস্কার ভাবে অনেক বক্তব্য রেখেছেন যার মধ্যে সব থেকে সোজা সাপ্টা হচ্ছে ( Attitude of the worker's party to religion : https://www.marxists.org/archive/lenin/works/1909/may/13.htm )- মার্ক্সবাদ বস্তুবাদি দর্শন। যেকোন বস্তবাদি দর্শনের অ আ ক খ হচ্ছে তাকে ধর্মের ভাববাদি দর্শনের বিরোধিতা করতেই হবে "We must combat religion—that is the ABC of all materialism, and consequently of Marxism. But Marxism is not a materialism which has stopped at the ABC. Marxism goes further. It says: We must know how to combat religion, and in order to do so we must explain the source of faith and religion among the masses in a materialist way-লেনিন, ১৯০৯। 

  ইনফ্যাক্ট মুক্তমনারা লেনিনবাদের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমালোচনা করলেও ধর্মের ক্ষেত্রে মুক্তমনা বা আমার ব্যক্তিগত অবস্থান লেনিনের বক্তব্যের সাথে শতকরা ১০০ ভাগ সহমত। সুতরাং আজকের বাংলার বামাতিরা যে লেনিন নিয়ে একদম চর্চা করে না-তারা পতিত লেনিনবাদি সেটাত জলের মতন স্পষ্ট।

  এবার দেখা যাক সোভিয়েত রাশিয়া কি ভাবে ইসলামিক জঙ্গিবাদ এবং ইসলামের ভাববাদকে ট্যাকল করেছিল লেনিনের লাইনে। শুধু বললেই ত হয় না।  সোভিয়েত রাশিয়া কি প্রাক্টিক্যাল পথ দেখিয়েছে সেটাও গুরুত্বপূর্ন।  সোভিয়েত রাশিয়া কিভাবে বস্তুবাদি পথে ইসলাম নিয়ে গবেষনা করত -তার একটা সিনোপসিস আমার এই প্রবন্ধে আছে (    http://blog.mukto-mona.com/2013/07/28/36539/ ) -আমি এখানে তার ইতিহাস আরেকটু লিখব।

    প্রথম কথা লেনিনের বক্তব্য বুঝতে গেলে, আমাদের বুঝতে হবে "বস্তুবাদির দৃষ্টিতে" ধর্মের বিশ্লেষন বলতে কি বোঝায়?  এক কথায় এর মানে ইসলামের ইতিহাস-কোরান-ধর্ম গ্রন্থ ইত্যাদিকে দেখতে হবে সপ্তম শতকের আরবে ঘটিত ঐতিহাসিক শ্রেনী সংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে। মহম্মদের যে আল ইসলাম আর্মি-যার জন্যে তিনি কোরানের মাধ্যমে দরিদ্র জনগণকে সংগঠিত করলেন -মক্কা মদিনার ধনী শ্রেনীটির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করলেন-তার আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটটি ইতিহাসের ধারাবাহিকতাতে ভাল করে জানা উচিত।

 সোভিয়েত ইউনিয়ান জারিস্ট রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদি নীতি অনুসরন করে এসেছে- অসংখ্য উপজাতি যারা রাশিয়ার আশেপাশে থাকত এবং জারের আমলে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয় -তাদের সোভিয়েতের অন্তর্ভুক্ত করে। এদের অধিকাংশই ছিল মুসলিম ( তাতার, চেচেন ইত্যাদি)। মুসলিম অধ্যুশিত এই উপনিবেশগুলিতে কিভাবে কমিনিউজমের দৃষ্টিতে ইসলামকে দেখা যায়, সেই প্রচেষ্টা প্রথম থেকেই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ানে।

 এই ব্যপারে পথিকৃত জিনাতুল্লা ন্যাভশিভরানভ (১৯২৩) নামে এক তাতার।  উনি দেখান ইসলামের ইতিহাসে কমিনিউজমের অসংখ্য ছাপ বিদ্যমান-বিশেষত সুফী আন্দোলনের মধ্যে কমিনিউজমের অনেক "এলিমেন্ট" আছে। উনি ইতিহাস থেকে দেখান সুফীরা বারবার রাষ্ট্রের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে-সব থেকে বড় উদাহরন সিমানোভার শেখ বদরিউদ্দিন যিনি ১৪১৬ সালে অটোম্যান সম্রাটদের অত্যাচারের বিরোধিতা করে শহিদ হন।

  মিখাইল রেইনার (১৯২৬) দেখান ইসলাম আসলেই আরবের ব্যবসায়ী শ্রেনীর , ব্যবসার প্রয়োজনে উদ্ভুত আইনের পদাবলী। তার ভাষায় ইসলামের আল্লা হচ্ছে একজন স্মার্ট ক্যাপিটালিস্ট। তার মতে হজ্জ আদতে ছিল মক্কার ট্রেড ফেয়ার। উনি দেখান  কোরানের আদি আয়াত গুলোতে দেখা যাবে বিজনেস এবং ফ্যামিলি কনট্রাক্টের ওপর বেশী জোর দেওয়া হয়েছে-স্পিরিচুয়ায়ল প্রাক্টিস গুলি বেশ অনাড়াম্বর। ইনফ্যাক্ট ইসলামের আদিতে নামাজ বা মসজিদের কোন উল্লেখ নেই। উল্লেখ আছে সঠিক কনট্রাক্ট, সঠিক মেজারমেন্ট, মডারেট প্রফিট ইত্যাদি এমন কিছু বিষয়ে যা রেগুলেটেড মার্কেটের জন্য বা বাজার চালু রাখতে সব থেকে বেশী দরকার। রেইনারের মতে ইসলামের জনপ্রিয়তার মূল কারন এই যে তা সেই সময়ে  বাজার অর্থনীতি চালু রাখার জন্য একটি আইনানুগ রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্ম দিতে সক্ষম হয়।

 বেইলেভ এই তত্ত্বটিকে আরেকটু উন্নত করেন (১৯৩০)। উনি দেখান ইসলাম মোটেও সর্বহারা না -আসলেই এটি ছিল উঠতি শিক্ষিত বুর্জোয়াদের আন্দোলন মূলত বড় ব্যবসায়ী শ্রেনীদের বিরুদ্ধে। তার মতে আদি ইসলামে বুর্জোয়া মধ্যবিত্ত শ্রেণীকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই জন্য সুদ বিলুপ্ত করা হল-কিন্ত দাস প্রথা চালু রাখা হল । কেন? কারন এই বুর্জোয়া শ্রেনীটি ছিল দাসমালিক  এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শ্রেনী। 

 মোদ্দা কথা সোভিয়েত ওরিয়েন্টালিস্টরা ইসলাম এবং সকল ধর্মকে আর্থ সামাজিক আন্দোলন এবং সামাজিক বিবর্তন হিসাবেই দেখেছেন।

 আমার নিজস্ব বক্তব্য ঃ 

ধর্মের অবস্থানের প্রশ্নে লেনিন এবং সোভিয়েত স্কুলের ঐতিহাসিকদের সাথে সহমত হলেও ,  ধর্ম নিয়ে আরো কিছু দৃষ্টিভংগী যোগ করার প্রয়োজন অনুভব করি।  

   (১) মানুষের জীবনের কোন পরম উদ্দেশ্য নেই ।  কিন্ত আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ সেই জীবনের উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত। জীবনের উদ্দেশ্য কি এই প্রশ্নের উত্তর কোন বস্তুবাদে নেই । ভাববাদেও নেই। কিন্ত ভাববাদিরা দাবী করে তাদের কাছে উত্তর আছে। এই ঢপবাজির জন্য ভাববাদ জিতে যায়। সেটা অধিকাংশ সাধারন লোকেরা বুঝতে পারে না। তারা চাইছে জীবনের উদ্দেশ্যের " রেডিমেড উত্তর"। জীবনের উদ্দেশ্য কি বলে দাও। এই জায়গায়টায় কোন বস্তুবাদি দর্শন ফোকাস করে না। কারন এই প্রশ্নের উত্তর বস্তুবাদ থেকে সম্ভব না।  যার জন্য হাজার বস্তুবাদ করার পরেও রাশিয়াতে চার্চ ফিরে আসে। 

   (২) বামেদের সাথে ইসলামের জোট কিন্ত খুব স্বাভাবিক ঘটনা। এর কারন আসল লড়াইটা এখন চলছে -ব্যক্তিস্বতন্ত্রবাদ/ ইন্ডিভিজুয়ালিজম বনাম কালেক্টভিজমের সাথে। ক্যাপিটালিজম বনাম কালেক্টিভিজমের লড়াইটাই এই শতাব্দির মুখ্য লড়াই হতে চলেছে। ইসলাম বা কমিনিউজম  কালেক্টিভিজমের ভাববাদি এবং বস্তুবাদি রূপ।

 বেসিক্যালি ব্যপারটা এরকম-ক্যাপিটালিজমের কোন অল ইনক্লুসিভ মডেল নেই। ক্যাপিটালিস্ট গ্রোথের সুফল মধ্যবিত্ত শ্রেনী পর্যন্ত নামছে-কিন্ত প্রান্তিক শ্রেনীটির কাছে পৌছচ্ছে না। ফলে ধনের বৈষম্য বিকট আকার ধারন করেছে।

  আপনার কাছে টাকা থাকলে, ডাক্তার উকিল, খাদ্য সেক্স যা চান-সবই সহজলভ্য ক্যাপিটালিজমে। আর টাকা না থাকলে সব কিছুর জন্য আপনি সমাজ থেকে, রাষ্ট্র থেকে সাহায্যর ওপর নির্ভরশীল। ফলে এই বঞ্চিত প্রান্তিক শ্রেনীটির কাছে ( যাদের কমিনিউস্টরা সর্বহারা বলেন ) "কমিউনিটির মাধ্যমে" একটা স্বর্গরাজ্য স্থাপনের বিরাট আপিল আছে।  কমিনিউস্ট জন্নত হচ্ছে ক্লাসলেস সোসাইটি। আর ইসলামিক জন্নত হচ্ছে মৃত্যুর পরে সেই স্বর্গরাজ্য যেখানে নারী আর মদের অফুরন্ত অনন্ত ফোয়ারা। 

এর মধ্যে গোদের ওপর দুটো বিষফোঁড়া- প্রথমত অটোমেশনের ফলে সম্পদ বাড়ছে-কিন্ত চাকরি কমছে। এদিকে মুসলিম অধ্যুশিত দেশগুলিতে জনসংখ্যা বেড়েছে হুহু করে। অধিকাংশ মুসলিম দেশে খাবার জোটানোই কঠিন অধিকাংশ নাগরিকের।

 ফলে ক্যাপিটালিস্ট ওয়ার্ল্ড অর্ডারের ওপর রাগ ক্রমবর্ধমান পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই। কিন্ত যেহেতু হাতের কাছে কোন অলটারনেটিভ সিস্টেম নেই-কমিনিউজম জন্নতের বেলুন সোভিয়েত ফাটিয়ে দিয়েছে-সেহেতু বিচ্ছিন্ন ভাবে এইসব ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠছে-যার মূল চরিত্র তিনটি  (১) ক্যাপিটালিজমের মুল ধজ্জাধারী আমেরিকার বিরোধিতা  (২) ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করে ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতিষ্ঠা (৩) নারী স্বাধীনতা বাতিল করে, সম্পূর্ন পুরুষতন্ত্রে ব্যাক করা।

  প্রশ্ন হচ্ছে কিসের ভিত্তিতে বামেদের সাথে ইসলামিক জঙ্গীদের এই সখ্যতা ? এখানে বামেদের সাথে কমন শুধু (১) পয়েন্টটা-আমেরিকা বিরোধিতা। ২ নাম্বার পয়েন্টে কিছুটা মিল আছে-বামেরা ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করে ধর্মীয় অনুশাসনের জায়গায় কমিনিউস্ট অনুশাসন বা পার্টির প্রতি চূড়ান্ত বশ্যতা চালাতে আগ্রহী।

   মূল ইস্যু হচ্ছে ক্যাপিটালিজমের উদ্ভাবনী শক্তির কাছে আসলে ইসলাম এবং বামেরা কোনঠাসা। ক্যাপিটালিজমের ক্ষতিকর দিক গুলি অবশ্য সত্য।  ক্যাপিটালিজম নিয়ে মানুষের সীমাহীন হতাশাটাও বাস্তব। কিন্ত ইসলাম এবং কমিনিউস্টদের লোক টানার মুল ভিত্তি আসলে আজগুবী রূপকথা।   অধিকাংশ মুসলিম মনে করে হজরত মহম্মদের আমলে যে রাষ্ট্র তৈরী হয়, তাতে লোকে ভাল জাস্টিস পেত। এখন পায় না। ফলে সব ধর্মীয় মুসলিম সেই শরিয়া ভিত্তিক সমাজে ফিরতে চাইছে। যদিও সেই সমাজটা সম্পূর্ন এক কাল্পনিক জগত। কিন্ত তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারন তারা দেখছে গণতান্ত্রিক সমাজে চারিদিকে দুর্নীতি আর দুর্নীতি। যে চোর ডাকাতি করতে পারে সেই রাজা। ফলে অমন এক অলীক কাল্পনিক শরিয়া সমাজের প্রতি তাদের ঝোঁক স্বাভাবিক। সোভিয়েত যে ফানুস ছিল, তা অবশ্য ফেটে গেছে। ফলে কমিনিউস্টদের রূপকথা শোনার কেও আর নেই। ফলে তাদের হালে পানি নেই। কিন্ত ইসলামিক জন্নতের ফানুস ফাটেনি-যেহেতু তা পরকালে!  ফলে যুক্তিবাদের প্রসার ছাড়া এই ধরনের আজগুবি চিন্তাধারা কমার আর কোন উপায় নেই। 

ভারত এবং হিন্দু ধর্মের অবস্থান একটু আলাদা।  হিন্দু ধর্মের নির্যাস ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর দাঁড়িয়ে। যদিও বর্তমানে হিন্দুত্ববাদিরা এটাকে ইসলামের মতন কালেক্টিভিজমের অংশ হিসাবেই দেখেন। ফলে জোর করে গরুর মাংস খাওয়া ব্যান করতে হয়। কিন্ত হিন্দু ধর্ম আচার ভিত্তিক না-তার মূল বক্তব্য সেলফ রিয়ালাইজশন বা ব্যক্তিগত উপলদ্ধির জগত। ফলে এই ধর্ম ক্যাপিটালিজম বা ইন্ডিভিজুয়ালিজমের সাথে খাপ খায় ভাল। এইজন্য ল্যাটিন আমেরিকার বামেরা বহুকাল আগে লেনিন ছেড়ে যীশু "গরীব বন্ধু" ইমেজ থেকে নয়া -ল্যাটিন বামপন্থার সূচনা করেছে। তা মাটির বামপন্থা বলে খাচ্ছে ভাল। ভারতের বামেরা হিন্দু ধর্ম নিয়ে এখনো খাবি খাচ্ছে।

 ভারতের বামেরা এই ধরনের "হিন্দু ধর্ম " সহায়ক বাম আন্দোলন করতে ব্যর্থ - কারন হিন্দু ধর্মে কমিনিজমের এলিমেন্ট গুলি দুর্বল।  যদিও ইসলামিক বামপন্থী আন্দোলন পৃথিবীর সব মুসলিম দেশেই মেইন স্ট্রিম একদম। এতে ভাল কিছু হয় নি। ইসলাম আস্তে আস্তে বামপন্থাকে গিলে ফেলেছে।

 (৩) আমি ব্যক্তিগত ভাবে ধণতান্ত্রিক সমাজের পক্ষে। ইসলাম এবং কমিনিজমের তথা যে কোন কালেক্টভিজমের বিপক্ষে। এর মানে এই না যে মার্কেট এবং ধণতন্ত্রের ত্রুটি নেই-এবং সেই ত্রুটিগুলি আমি স্বীকার করি না।

  ইতিহাস পর্যালোচনা করে আমার মনে হয়েছে-আমাদের আজকের এই যে বস্তুবাদি উন্নতি- খাদ্য এবং চিকিৎসা সুরক্ষা-এর মূলে আছে প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের আবিস্কার। প্রথমত প্রযুক্তির এই আবিস্কার কোন কালেক্টিভিজমের মধ্যে সম্ভব না। সোভিয়েত এর জ্বলন্ত্ব প্রমান। ইন্ডিভিজুয়ালিস্টিক সমাজ ছাড়া মার্কেট বিকাশ করে না-আর মার্কেট ছাড়া আবিস্কার বাজারে আসে না।   দ্বিতীয়ত ক্যাপিটালিজমের সমস্যাগুলি প্রযুক্তির আবিস্কারের মধ্যে দিয়েই সমাধান করা সম্ভব। এর উদাহরন আমরা দেখছি।  আজকে যে ওপেন ডেমোক্রাসি বা ডিরেক্ট ডেমোক্রাসি আসছে-তা কিন্ত সম্ভব হচ্ছে এই ফেসবুক বা টুইটারের জন্যই। ধণতন্ত্রই ধণতন্ত্রের সমস্যাগুলি দূর করবে এটাই বাস্তবের ইতিহাস। কমিনিউজম বা অন্য কোন জন্নত দর্শন চালিয়ে যখন ধণতন্ত্রের সমস্যাগুলির সমাধান করার চেষ্টা হয়েছে, তখন আদতেই গণহত্যা ছাড়া আর কিছু হয় নি। ইউক্রেনের হলডোমার জেনোসাইড এর উজ্জ্বল উদাহরন। 

 বামাতিদের ভ্রান্ত অবস্থানের বিরুদ্ধে এতটা লেখার দরকার ছিল বলে মনে হয় না। কারন বাঙালীদের মধ্যে বামেদের প্রভাব আস্তে আস্তে অনেক হ্রাস পেয়েছে। আরো পাবে। কারন দুই নৌকায় পা দিয়ে কোন নৌকা চালানো সম্ভব না।




      

Saturday, May 23, 2015

মার্কেট এবং জঙ্গল

মানুষ এক সময় দলবদ্ধ ভাবে শিকার করে খেত। এটা আমরা সবাই জানি। কিন্ত যেটা উপলদ্ধি করি না, হান্টার গ্যাদারার সমাজে বেঁচে থাকতে অনেক বেশী লড়াই করতে হত-এই সব তাত্বিক ঢপবাজি, ধর্ম,  মাধ্যমিক, আই এস সি, আই আই টির সার্টিফিকেটের জোরে ক্ষুদা নিবৃত্তি হত না।  ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকাতে শীত নামার আগে অনেক খাবার স্টক করতে হত । দীর্ঘ চার মাসের শীতে কিছুই জুটত না । ভেবে দেখুন। একটা পাহাড়ি হরিনকে দুঘন্টা ধরে তাড়া করে না মারতে পারলে, অভুক্ত থাকতে হত আমাদের পূর্ব পুরুষদের। সুতরাং তাদের মন প্রান হাত পা, সম্পূর্ন ফোকাসড থাকত খাবার জোটাতে। পশুপাখীদের হার মানানোতে। মাথাটা কাজ করত সব সময়।

   দশ হাজার বছর আগে যখন মানুষ কৃষিকাজ শিখল-খাবারের নিরাপত্তা এল-তখন থেকে দুটো জিনিস পরিলক্ষিত (১) মানুষের ব্রেনের আকার আর বাড়ে নি-বা কেও কেও গবেষনাতে বলছেন কমেছে কারন মানুষকে প্রতিটা মুহুর্ত আর ব্রেইনকে কাজে লাগাতে হচ্ছে না-যা শিকারিদের করতে হত   (২) তখন থেকেই সমাজ রাষ্ট্র রাজনীতি ভূত ভগবান বৈষমাই, ধর্ম, প্রফেটের জন্ম।

 সুতরাং আজকের যে ধর্মান্ধ এবং ধর্মের সমস্যা আমরা দেখছি ( বা তাত্ত্বিক অন্ধদের ও আমরা দেখছি), সেটা দূর করতে শিকারি সমাজ বা প্যালিওলিথিক সমাজের দিকে আমাদের তাকাতে হবে। মূল সমস্যা হচ্ছে, যেহেতু খাদ্য এবং পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে ছোটবেলা থেকেই, বাচ্চা বয়স থেকে কৃষি সমাজে ছেলে মেয়েদের ব্রেইনটা শিকারী সমাজের তুলনায় অনেক অকার্যকর থাকছে । আমাদের ব্রেইনের ইলাস্টিসিটি খুব বেশী, তাকে যত ব্যবহার করা যায় সে তত দক্ষ হবে। বদ্ধ পুকুরের জলে যেমন শেওলা জমে, ঠিক তেমনি কৃষিভিত্তিক সমাজের শিশুদের জড় বুদ্ধিতে খুব সহজেই ধর্ম কমিনিউজম ন্যাশানালিজম  গিলিয়ে দেওয়া যায়।

বর্তমানে সেই শিকারি সমাজের মতন সজাগ ব্রেইন লাগে একমাত্র তাদের যাদের দৈনন্দিন ব্যবসা করে টিকে থাকতে হয়।  শিকারি সমাজের মতন এখানেও কাস্টমার ফস্কালে খাদের নীচে । বড়ব্যবসায়ী শ্রেনীর কথা আলাদা। কিন্ত ছোট ছোট ব্যবসায়ী শ্রেনীটি শিকারি সমাজের মতন ছোট ছোট কাস্টমার ধরেই বেঁচে থাকে। এটাও ঠিক এই শ্রেনীটি যত বাস্তববাদি হয়, বিজ্ঞান/সাহিত্য/সংস্কৃতির চল এদের মধ্যে নেই । কিন্ত দেশপ্রেম, ধর্ম , সমাজতন্ত্র ইত্যাদি ইজমের প্রশ্নে এই শ্রেনীটি দুধ এবং জল খুব সজজেই আলাদা করতে পারে নিজেদের অভিজ্ঞতায়।

 এইজন্যে আমি মনে করি ধনতন্ত্র এবং মার্কেটের প্রসারের সাথে সাথে ধর্মের শেষের সেদিন আগত। মার্কেট হচ্ছে সেই আদি জঙ্গল।  একজন মানুষকে যত সমাজ রাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়া নিজের বুদ্ধিতে বাঁচতে হবে, চাকরি বা নিশ্চিত ইনকাম থাকবে না-প্রতিটা মুহুর্ত তাকে পরিস্থিতির বাস্তব বিশ্লেষন করে পেটে ক্ষুদা নিবৃত্তি করতে হবে, ধর্ম সহ বিজাতীয় ইজমের কুপ্রভাব মানুষ মন থেকে এমনিতেই দূর হবে।

ধর্ম দেশপ্রেম কমিনিউজম এগুলি পরজীবি শ্রেনীর ইউটোপিয়ান বিলাস। সেই জন্যে কমিনিউস্ট পার্টিতে শ্রেমিক কৃষকের স্থলে সেই পরজীবি শ্রেনীদের উৎপাত।  ধর্ম সহ সব আইডিওলজির ধারক এবং বাহক এই পরজীবি বুদ্ধিজীবিরা। 

Thursday, May 21, 2015

জঙ্গীবাদ এবং গণতন্ত্রের ব্যর্থতা

অভিজিত রায়, ওয়াশিকর রহমান বাবু, অনন্তের হত্যাকান্ড নিঃসন্দেহে একটা বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ। কিন্ত মাথাটা আওয়ামী লীগের না বাংলাদেশে আই সি সিস সিম্প্যাথাইজারদের সেটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে । অভিজিতের মৃত্যুর আগেও হাসিনা কোনঠাসা ছিলেন গণতন্ত্রের প্রশ্নে। ইউ এন থেকে ইউরোপের নানান দেশ তাকে চাপ দিচ্ছিল খালেদার সাথে বসতে। এখন সেই চাপ উধাও। বাংলাদেশে ব্লগার হত্যা এমন ভাবে বিদেশে প্রচারিত, এখন হাসিনার ওপর চাপ জঙ্গী দমনের জন্য। বিদেশে কেও আর বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে চিহ্নিত না । এটা হাসিনার সামনে বিরাট সুযোগ। তিনি আগামী মাসগুলিতে চোর পুলিশ খেলিয়ে বিদেশীদের চোখে "আমি নইলে চলিবে না " কনসেশন আদায় করে নিতে পারবেন। ব্লগার হত্যার প্রেক্ষাপটে বিদেশী রাষ্ট্রদূতরা আর বাংলাদেশে গণতন্ত্র নিয়ে হাসিনার  ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন না ।

আসলে এই সংসদীয় বুর্জোয়া রাজনীতিতে সব পার্টিই ভোটপন্থী। এরা নানান ভোটিং ব্লককে তুষ্ট করার চেষ্টা করে।  কারন ক্ষমতা পাওয়া মানেই কোটি কোটি টাকার বরাত পাওয়া। কোন আদর্শের যদি ভোটিং ব্লক থাকে তবেই এরা সেই আদর্শের কথা শুনবে।  বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলমান যেখানে সপ্তম শতাব্দির আরবে বাস করতে চান, সেখানে ক্ষমতাসীন পার্টি কি করে প্রগতিশীল চিন্তাধারাতে চলবে ?

মুশকিল !  কি যে হচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না । শুনছি বাংলাদেশের মিলিটারীর মধ্যে একটা অংশ নাকি জঙ্গীদের সাথে-তারা দক্ষিন বাংলাদেশে আগে আই সিসের ফ্ল্যাগ ওড়াবে। বাংলাদেশের মিলিটারী এবং প্যারামিলিটারির একটা অংশ নাকি জঙ্গিদের সাথে যোগ দেবে। গৃহযুদ্ধ  আসন্ন ? এগুলো কন্সিপিরেসি থিওরী? অভিজিত-বাবু-অনন্তের মৃত্যুর পরে কোনটা যে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, আর কোনটা যে বিশ্বাসযোগ্য-কিছুই বুঝছি না । কারন এদের হত্যাকারীরা ধরা পড়ছে না । ফলে আওয়ামী লীগ-জঙ্গী আঁতাতের প্রশ্ন উঠছে। কারন স্বাভাবিক বুদ্ধিতে সেখানেই লাভের গুড়ের গন্ধ পাচ্ছে সবাই।

পশ্চিম বঙ্গে ইসলামিক জঙ্গীদের দুটো উইং কাজ করছে। একটা হচ্ছে সরাসরি বোমা বন্দুক একশন কমিটি। এরা আবার স্থানীয় রাজনৈতিক পার্টির পেয়ারের লোক। কারন এদের বাহুবলেই ভোট হয় আজকাল। অন্যটা হচ্ছে এদের শিক্ষিত ইন্টেলেকচুয়াল উইং-তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে বঞ্ছনার প্রশ্ন গুলি তুলে ( যে বঞ্চনাগুলিও বাস্তব রূঢ়  সত্য ), একটা বিরাট অংশের মুসলিমকে খেপিয়ে তুলছে।  ওপরে দেখাচ্ছে জামাতের নামে মুসলমানদের অধিকার নিয়ে এরা কাজ করছে।  এরাই হাসিনার বিরুদ্ধে কোলকাতায় সমাবেশ ডাকছে।  বাংলাদেশের দক্ষিন বঙ্গে আই সিসের সমর্থকরা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে সমর্থ হলে, পশ্চিম বঙ্গে চব্বিশ পরগণা, নদীয়া এবং মুর্শিদাবাদে কাষ্মীরের মতন পরিস্থিতি তৈরী হবে। বদ্বীপের এই সব জেলাগুলিতে মুসলমানদের সংখ্যা বেশী-কিন্ত অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষমতা হিন্দুদের হাতে। ফলে এই সব জেলাগুলিতে কাষ্মীরের স্টাইলে মুজাদিহিন তৈরী হবে। কাশ্মীরি পন্ডিতদের মতন এইসব জেলাগুলি থেকে হিন্দু বিতরন আর কয়েক দশকের অপেক্ষা। ছোটখাট যেসব দাঙ্গা হচ্ছে-সেগুলো বড় ভুমিকম্পের আগের মৃদু কম্পন।

 মূল সমস্যাটা অবশ্যই সেই ধনের বৈষম্য এবং সমাজের প্রান্তিক শ্রেনী- পিলসূজ-সেই দরিদ্র নিপীড়িত জনগণের জন্য গণতন্ত্রের ব্যর্থতা । যেখানে এই শ্রেনীটাকে ভাঙিয়ে বাকি সবাই লুঠছে। যন্ত্র সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে এরা আরো প্রান্তিক।  এদের কায়িক শ্রমের প্রয়োজন ও আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হতে চলেছে। আমি দেখেছি,  ১৯৮০ সাল থেকে একজন শিক্ষকের মাইনে বেড়েছে প্রায় ২৫ গুন, ইনফ্লেশন এডজাস্ট করলে সেটা ছগুনের কাছাকাছি। সমসায়মিক সময়ে একজন কৃষি শ্রমিকের লেবার চার্জ বেড়েছে মোটে ছগুন, ইনফ্লেশন এডজাস্ট করলে সেই বৃদ্ধি কিছুই না । আর যারা ফ্যাক্টরি মালিক , তাদের ধনের বৃদ্ধি সম্ভবত কয়েকশোগুন, হাজারগুন ও হতে পারে। এই বঞ্চনাকে ধর্মের নামে চালিয়ে দিয়ে এই বঞ্চিত শ্রেনীকে ধর্মের বুলডগ বানানো খুব সহজ।

 ধর্ম এবং জঙ্গীবাদকে আমরা যত ইচ্ছা গালাগাল দিতে পারি, কিন্ত, আমাদের নিজেদের দোষটাও দেখা উচিত।  বাস্তবে, আমরা সবাই স্বার্থপর -যে যার মতন নিজেদেরটা গুছিয়েছি । এই হত দরিদ্র শ্রেনীটি কিভাবে আছে, কিভাবে দিনানিপাত করে, তার কোন খোঁজ আমরা কোন দিন নিই নি। আজ তারা তখন একটি বিশেষ ধর্মের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জঙ্গী হচ্ছে, আমরা নিরাপদ দূরত্ব থেকে ইসলামিক জঙ্গীপনা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে শুধু লিখে চলেছি। যে মানুষের শরীরে পুষ্টি নেই, তার শরীরে ভাইরাসের আক্রমন সবার আগে হবে। এই জন্যেই জন্ম হয়েছে আই সিসের। সিরিয়াতে দীর্ঘদিন সুন্নীরা বঞ্চিত হয়েছে শিয়াদের ছড়ি ঘোরানো অব্যাহত থাকায়। আসল সমস্যা বস্তুবাদি বঞ্চনার সমস্যা। এবং অপরাধী আমরা নিজেরাও----রবীন্দ্রনাথের ভাষায়-

  সঙ্গী হয়ে আছো যেথায় সঙ্গীহীনের ঘরে
  সেথায় আমার হৃদয় নামে যে
   সবার পিছে, সবার নীচে
    সব-হারাদের মাঝে। 

Monday, May 18, 2015

রাণা রাজনীতি

রাণা প্রতাপ সিংকে নিয়ে হিন্দুত্ববাদি এবং বামেদের রাজনীতি এই মহৎ প্রানএর অপমান। প্রথমত রানা প্রতাপ হিন্দুত্বের কারনে আকবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন নি।  না ছিলেন তিনি হিন্দুত্ববাদি। মুঘল বিরোধি মুসলমান মিলিশিয়ার সাহায্য  ( উদাহরন বৈরাম খানের পুত্র রহিম খান ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ এলায়েন্স) ও তিনি নিয়েছেন আকবরের বিরুদ্ধে নিজের স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে। আবার নিজের রাজপুত ক্ল্যানের রাজাদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করেছেন সেই স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে। মোদ্দা কথা সাম্রাজ্যবাদের বিরদ্ধে রানা প্রতাপ এক অমর জ্যোতি। ঘাসের রুটি খেয়ে গাছের তলায় কাটিয়েছেন (  মধ্যে তাও জুটটো না ) মুঘল বাহিনীর তাড়া খেয়ে ।  জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে নিদারুন দারিদ্রে বনে জঙ্গলে । আদিবাসী জঙ্গলবাসী ভীলেদের সাহায্য নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন গেরিলা আর্মি। এসব কোন কিছুই করার দরকার ছিল না । আকবর প্রায় ছবার সন্ধি প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন । চিতোরের দূর্গ ফেরত দিতেও রাজী ছিলেন আকবর ।  কিন্ত স্বাধীনচেতা প্রতাপ তার ভাইদের মতন সাম্রাজ্যবাদি শক্তির হাতে আত্মসমর্পন করেন নি।  অনাহারে অর্ধাহারে বনে কাটিয়েছেন-কিন্ত সাম্রাজ্যবাদি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছেন। একটা সময় এসেছিল-যখন একজন রাজপুত ও তার পক্ষে ছিল না । শুধু ভীল আদিবাসিদের নিয়ে বনে থেকে তিনি গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছেন। ইনফ্যাক্ট যেটা চেপে যাওয়া হয় বা রাজপুতরা চেপে যায়- রানা প্রতাপ একবার বলেছিলেন এই সব ভেরুয়া রাজপুত রাজন্যবর্গ যারা আকবরের শয্যায় কন্যা পাঠিয়ে নিজেদের বাঁচিয়ে রেখেছে, তাদের চেয়ে জঙ্গলবাসী ভীলেরা শতগুনে ভাল -যারা কোনদিন কারুর আধিপত্য স্বীকার করে নি। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধি আইকনের প্রশ্নে  তিনি ভারতের চে গুয়েভেরা।

 তাকে নিয়ে কিছু আর্মচেয়ার বাঙালী বামেদের পোষ্ট দেখলাম।  সেই সব আর্মচেয়ার বাম বাঙালী যারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গলা ফাটিয়ে আমেরিকান কোম্পানীতে চাকরি করেন বা আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেলোশিপের জন্য চাতক পাখির মতন চেয়ে থাকেন। তাদের পক্ষে অবশ্য রানা প্রতাপ এবং তার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধি স্বাধীনচেতা প্রানকে বোঝা অসম্ভব। কারন তারজন্য আরামকেদারা ভাল খাদ্য বাসস্থান ছেড়ে বনে জঙ্গলে অর্ধাহারে অনাহারে থেকে গেরিলা যুদ্ধের অভ্যেস করতে হয়। এসি রুমে ফেসবুক করতে করতে বামেদের রানা প্রতাপের মতন মহৎ প্রানকে গালি দেওয়াতে আমি অবাক নই -কারন স্বাধীনচেতা সেই হতে পারে যে প্রানের মায়া  ত্যাগ করে স্বাধীনতার জন্য সর্বস্ব ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। সেটা তাত্ত্বিক স্বমেহনে অভ্যস্ত ভোগবাদি বামেদের কাছে আশা করাটা অন্যায়।

 পাশাপাশি বিজেপি যেভাবে রানা প্রতাপকে হিন্দুবীর হিসাবে তুলে ধরছে তার ও নিন্দা করছি। তিনি হিন্দুত্বের কারনে আকবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন নি। হিন্দুরাজাদের বিরুদ্ধেও তিনি যুদ্ধ করেছেন। রুঢ় সত্য এই যে সমগ্র রাজপুতানা তাকে একা ছেড়ে দিয়েছিল এবং তিনি আদিবাসী ভীলদের নিয়ে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধি যুদ্ধ চালিয়েছেন।

Friday, May 15, 2015

ভোটপুত্র

অভিজিতের মৃত্যুতে গর্জে উঠেছিল হাজারো কন্ঠ-প্রত্যাশা ছিল রাষ্ট্র এবং শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেরা মিলে কোনঠাসা করে দেবে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদিদের। ওয়াশিকার রহমান বাবুর খুনের পর বাংলাদেশের রাজপুত্র জানালেন, তিনি আসলেই ভোটপুত্র। নাস্তিকেদের খুনীরা যেহেতু গুরুত্বপূর্ন ভোটব্যাঙ্ক, রাষ্ট্র নাস্তিক খুনের ক্ষেত্রে নীরব দর্শক থাকবে। সেইদিনই উৎসাহিত সন্ত্রাসবাদিরা খুন করলো অনন্তবিজয় দাশকে।

    সেই সব গর্জে ওঠা  প্রতিবাদি কন্ঠে আজ সুর বদল। ভীতু ইঁদুরের মতন গর্তে ঢুকে গেছে।  সবাই আমাকে বলছেন -অভিজিত বা অনন্তরা কিন্তু বড্ড র‍্যাডিক্যাল ছিল! কি দরকার ছিল ইসলামিক ধর্মানুভূতিতে আঘাত করার ?  ধর্মানুভূতিতে আঘাত করে তোমরা ( মুক্তমনারা ) কি উপকার করছ মুসলিম সমাজের?

   প্রশ্নটি যৌত্বিক । উত্তর আরো সোজা।  ধর্মানুভূতি যে সমাজে প্রবল-বস্তবাদি উন্নয়নের রাজনীতি সেখানে অসম্ভব। পশ্চিম বঙ্গের রাজনীতিই ধরুন। যে পার্টি যত ইসলামিক মৌলবাদের হেগো পোঁদ চাটতে পারবে, মুসলিম ভোটের জোরে তারাই ক্ষমতাই আসবে। চিটফান্ডের জেরে পশ্চিম বঙ্গে সংসারের পর সংসার ছারখার হয়ে গেল-অথচ যে পার্টির চৌর্য্যবৃত্তির জন্য আজ রাজ্যবাসীর এই সব্বোনাশ, তারা মুসলিম ভোট এবং গুন্ডাদের কৃপায় মসনদে বহাল তবিয়তে। হ্যা, কারন সেই ধর্মানুভূতি। বিজেপির বাড়ন্ত-কারন সেই ধর্মানুভুতি। অভিজিত বা আমি বা মুক্তমনার কোন সদস্য  বস্তুবাদি প্রাপ্তির আশায় এসব লিখি নি। বরং প্রান হাতে নিয়েই সত্য কথাগুলো আমরা লিখেছি।

    এই কণ্ঠ বদলে আমি বিস্মিত নই । এল্যান ব্লুম লিখছেন বুর্জোয়াদের সঠিক সংজ্ঞা জান ?  বুর্জোয়া হচ্ছে সেই লোক যে মৃত্যুভয়ে সর্বদা এত ভীত সব সময় "কায়দা করে" নিজেকে বাঁচাতে ব্যস্ত [

Nietzsche, Nihilism and the Philosophy of the Future-পেজ ৬৯ ] । 

  সুতরাং যখন এটা পরিস্কার রাষ্ট্রযন্ত্র এবং সাধারন মুসলিমরা নাস্তিক খুনের পক্ষে, পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি-ফেসবুকের অধিকাংশ নাস্তিক প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলেছে। আফটার অল এই খুনীদের নেটওয়ার্ক সর্বত্র। অসংখ্য টেটর সেল। এরা সবাই আত্মঘাতী জঙ্গী। ওপরতলার নির্দেশ এলেই কোতল করতে নেমে যাবে।

 মুশকিল হচ্ছে সেই ভয়ের কথা বলতে পারছে না -এখন শুরু করেছে অভিজিত রায়, বাবু, অনন্তের চিন্তাধারা নাকি র‍্যাডিক্যাল ছিল!! এগুলো ডাঁহা মিথ্যে কথা। অভিজিত রায় কোন বিকল্প রাজনীতি বা সমাজের কথা লিখে যায় নি।  অনন্ত বিজ্ঞান নিয়েই লেখালেখি করত। এরা বন্দুক হাতে কাউকে মারতে বলেছে? বলেছে জীবন , রাষ্ট্র বা সমাজের উদ্দেশ্য এই হওয়া উচিত? যেমনটা কমিনিউস্ট বা ধর্মীয় র‍্যাডিক্যালরা বলে? এরা শুধু ধর্মের নামে ধাপ্পাবাজি গুলো চোখ খুলে দেখিয়েছে।
 ধর্মের ধাপ্পাবাজি, কুসংস্কার তুলে দেখানো-বিজ্ঞানের চর্চা কবে থেকে র‍্যাডিক্যাল চিন্তাধারা হল ??

 ন্যা-এগুলো মোটেও র‍্যাডিক্যাল না । র‍্যাশানাল চিন্তাধারা। আর আসল সত্যটা হল, বুর্জোয়াদের আসল ভীত রূপটা এখন বেয়াব্রু। সরি এতগুলো মহৎ প্রানের দুবার মৃত্যু আমি হজম করতে পারবো না ।

    ভয় অবশ্যই সবার আছে। কিন্ত ধার্মিক উগ্রপন্থীরা যদি মৃত্যুভয় জয় করে থাকে, আর নাস্তিকরা যদি মৃত্যুভয়ে সর্বদা ভীত থাকে, তাহলে ত বলতেই হবে, যে দর্শন মৃত্যুভয় দূর করেছে -সেই দর্শন অনেক বেশী শক্তিশালী!  তা সে দর্শনে যতই জল থাকুক না কেন! আফটার অল লাইফ একটা এক্সিডেন্ট ।জীবনের কোন পরম উদ্দেশ্য নেই । একজন প্রকৃত এথিইস্ট মৃত্যুভয়ে ভীত হতে পারে না -কারন যে জীবনের কোন উদ্দেশ্য নেই -সেই জীবন থাকা বা না থাকার মধ্যে তাহলে পার্থক্যটা কি? পার্থক্য খুব সামান্য। যেটুকু সময় বাঁচছি, সেইটুকু সময় জীবনটাকে কোন মহৎ উদ্দেশ্যে কাজে লাগাতে পারছি কি না । 

 ইতিহাসের শিক্ষা এটাই- যে দর্শন যুক্তিতে বা বুদ্ধিতে বা মানবতায় সেরা -- সেই দর্শন সামাজিক বিবর্তনে নির্বাচিত নাও হতে পারে । যে দর্শনের মিলিটারী ক্ষমতা বেশী,  রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেস বেশী, সেই দর্শন বিবর্তনের নিয়মে জয়ী হয়। যুক্তিবাদি বিজ্ঞানমুখী দর্শনের পেছনে কোন মিলিটান্সি বা মিলিটারী ফোর্স না থাকলে, বিজ্ঞান মুখী সমাজ আসবে না । ইউরোপ বা আমেরিকাতে বিজ্ঞানমুখী সমাজ বিবর্তিত হয়েছে এর মূল কারন এই সমাজগুলি কলোনী দখলের জন্য উন্নত মিলিটারী এবং যন্ত্রশিল্পের ওপর নির্ভর ছিল এক সময়।  সুতরাং আজকের যে ধর্মীয় উগ্রবাদি তৈরী হয়েছে, তাদের ডান্ডা না মারা পর্যন্ত আটকানো যাবে না । যুক্তি, লেখা, ফেসবুক স্টাটাসে কিছু হবে না । প্রশ্ন হচ্ছে বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে ?  উত্তর লুকিয়ে আছে সেই মার্কেটে। মার্কেট যদি দেখে, উগ্রপন্থার জন্য সে বাংলাদেশে বাণিজ্য করতে পারছে না -এবং শেখ হাসিনা উগ্রপন্থী দমনে ব্যর্থ,  আব্দেল সিসির মতন মিলিটারী শাসক বসিয়ে, মার্কেট নিজের প্রয়োজনে উগ্রপন্থী ক্লীন করবে। 

   মার্কেট নিজের প্রয়োজনে এই উগ্রপন্থীদের তৈরী করেছে-নিজের প্রয়োজনেই সে তাদের ধ্বংস করবে। এটাই নির্মম বাস্তব। আমরা শুধুই কুর্ম অবতার।

Tuesday, May 12, 2015

ধর্ম সংস্কার

অনেকেই মনে করেন ধর্মের যেহেতু অনেক ভার্সান সেহেতু সাধারন ধার্মিকদের ধর্মের উগ্রপন্থা ভার্সান থেকে দূরে রাখলেই সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত সমাজ গড়া যাবে। এইসব চিন্তাধারা নেহাতই বালখিল্যতা। উনবিংশ শতাব্দি থেকে হিন্দু ধর্মে ক্রমাগত সংস্কার হয়েছে-রামমোহন, বিবেকানন্দ, দয়ানন্দ স্বরস্বতী-অনেকেই এলেন। ফল কি হল ? নামো,  সাক্ষী মহারাজ ? রামকৃষ্ণ মিশনের অধিকাংশ শিষ্য কুসংস্কারাচ্ছন্ন। মিশন ও অদ্বৈত বেদান্ত ছেড়ে কুমারী পূজা ইত্যাদিতে ঘটা করে বেশী। বাঙালী যেটুকু সংস্কারমুক্ত হতে পেরেছে তার পেছনে আছে সেই শিল্প বিপ্লব যার কারনে মেয়েরা চাকরী করতে বেড়িয়েছে।  যেকোন পরিবর্তন আসে উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তনে-এবং তার থেকে উদ্ভুত মার্কেট ফোর্স থেকে। আর ধর্ম থেকে মুক্তির ব্যপারটার সাথে নারী মুক্তির যোগ ১০০%।

 না -ধর্মের কোন অসাম্প্রদায়িক ভার্সান হতে পারে না । কারন ধর্মের মূল বক্তব্য "ক্লাব কালচার" । আমার ক্লাব শ্রেষ্ঠ তাই আমি এই ক্লাবের মেম্বার। ইসলাম শ্রেষ্ঠ বলে না মানলে কেও কেন মুসলিম হবেন? তার যদি অদ্বৈত বেদান্ত ভাল লাগে তিনি তাই হবেন। সুতরাং ধর্ম মানতে গেলে সাম্প্রদায়িকতা আসবেই।

     আর যিনি মুসলমান তাকে ত হজরত মহম্মদের জীবনী ( সুন্নত ) এবং কোরান মানতেই হবে!!   এবং হজরত মহম্মদের জীবনী মানলে তার দ্বারা কৃত অজস্র খুন, যৌন দাসী রাখা থেকে আরো অনেক কিছু অমানবিক আচরন আসবেই। যাদের অনেক কিছু আজকের আই সি সিস এবং অভিজিত-বাবু-অনন্তের খুনীরা করছে।  একেই মহম্মদ চরিত্র কাল্পনিক-তার ওপর আরো কাল্পনিক অলীক চাপিয়ে আপনি কি সংস্কার করবেন একটা ধর্মের?  একটা বড় ঢপবাজির লাইটার ভার্সান ? এগুলো হাস্যকর চিন্তা। বড় ঢপবাজির জায়গায় ছোট ঢপবাজি চালানোর নাম ধর্মীয় সংস্কার।

  ফুকোর একটা রাজনৈতিক শক্তির তত্ত্ব আছে। যার মূল বক্তব্য হল পাওয়ার বাই কনসেসাস। ধর্ম ঠিক, সন্ত্রাসবাদিরা ভুল এই তত্ত্ব এই জন্যেই খাটে না -কারন সন্ত্রাসবাদিদের শক্তির মূল উৎস এই কনসেনসাস যে ইসলাম বা ধর্ম মহান। এখানে মডারেট এবং এক্সট্রিমিস্ট সবাই এক।  এটাই মৌলবাদিদের আসল শক্তি।

  সাথে সাথে নিৎসের বক্তব্যটাও দেখা দরকার।  মানুষ ধার্মিক এর সব থেকে বড় কারন ছোটবেলা থেকে বাবা মা ভয় দেখিয়ে, তাদের ইশ্বর বা আল্লা নামে ব্রেইন ড্যামেজ করেছে। এই "ভয়" এর জন্য তারা ধার্মিক। কিন্ত একটা রাষ্ট্র শক্তি বা মার্কেটের শক্তি যখন তাকে দেখাবে ধার্মিকদের জন্য চাকরি নেই -আছে মৃত্যু-সে পার্থিব ভয়ে অপার্থিব ভয়কে জয় করবে। এটাই চীন এবং রাশিয়াতে হয়েছিল কমিনিউস্ট জমানায়। ভয় একজন মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রন করে। সেটাই ইসলামিক সন্ত্রাসীরা চালাচ্ছে। পুতিন পালটা ভয় দেখানোয় রাশিয়াতে প্রায় একমিলিয়ান মুসলিম ইসলাম ত্যাগ করেছে। চীনের পশ্চিম দিকের মুসলিম অধ্যুশিত রাজ্যগুলিতেও রাষ্ট্র যন্ত্রের কারনে, লোকে ইসলাম ত্যাগ করছে। সুতরাং ভয়টাই আসল। বাকীটা ফালতু।  মানুষ হচ্ছে পরিবর্তনশীল। ভয়ের কারনে সে আজ হিন্দু বা মুসলিম। রাষ্ট্র উলটো ভয় দেখালে, সে উল্টোদিকেই হাঁটবে। উদাহরন রাশিয়া এবং চীন।

Tuesday, May 5, 2015

নদীয়ার কালীগঞ্জে দাঙ্গা-ধর্ম না অন্য কিছু?

নদীয়ার কালীগঞ্জের দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে আবার সাম্প্রদায়িক উত্তাপ ছড়াচ্ছে ফেসবুকে।

দাঙ্গার সময় আমরা ব্ল্যাঙ্কেটলি ধর্মীয় মৌলবাদ, উগ্রতা ইত্যাদিকে দায়ী করি।  প্রশ্ন হচ্ছে সেটা কি সত্যিই বস্তুবাদি বিজ্ঞানসম্মত চিন্তা?

 পরিসংখ্যান অন্যকথা বলবে। ভারতে রাজনৈতিক দাঙ্গায় সব থেকে বেশী লোক মরেছে পশ্চিমবঙ্গে। এই ব্যপারে রাজ্যটি বেশ ধারাবাহিক ।  নক্সাল, কংসাল, তিনো থেকে সিপিএম সবাই এই সুমহান নাম্বার ওয়ান পজিশন ধরে রেখেছেন।

 জাতি এবং ধর্মীয় দাঙ্গা নিয়ে যত বৈজ্ঞানিক কাজ হয়েছে [Pandey, Gyanendra (2006). The Construction of Communalism in Colonial North India. Oxford India,  ] তার অধিকাংশ কিন্ত বলছে দাঙ্গার কারন বস্তুবাদি। দক্ষিন এশিয়াতে এর মূল কারন মাথাপিছু সম্পদের অপ্রতুলতা । কেশপুরের দাঙ্গা দিয়েই আমরা কেসস্টাডি করতে পারি । দেখা যাবে কেশপুর সহ অধিকাংশ স্থলে মূল সমস্যা হল-  গ্রামে ফ্যামিলি  প্ল্যানিং এর  অভাবে মাথাপিছু জমি কমেছে। ১৯৮০ সাল নাগাদ, মাথাপিছু ২-৩ বিঘা থাকলে একজন কৃষকের সারা বছর চলে যেত। একটা ছ সাত জনের ফ্যামিলির জন্য পনেরো ষোল বিঘা যথেষ্ট ছিল। বর্তমানে পশ্চিম বঙ্গে সংখ্যলঘু প্রধান এলাকাতে, মাথাপিছু জমির পরিমান একবিঘার কমে এসে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে পশ্চিম বঙ্গের গ্রামে দুটো জিনিস দেখা গেছে  (১) মুসলিম ফ্যামিলিগুলি থেকে অনেক বেশি সংখ্যায় ছেলেরা কেরালা, গুজরাটে মাইগ্রেট করেছে (২) প্রতিবেশী হিন্দু প্রধান গ্রামগুলি থেকে জমি কিনে সামাল দিতে হচ্ছে। জমি কেনার টাকা আসছে বিদেশে বসবাসকারী ছেলেদের কাছ থেকে। পশ্চিম বঙ্গে তিন ফসলি জমির দাম অস্বাভাবিক বেশী। সেই ক্ষেত্রে যদি দাঙ্গা লাগিয়ে হিন্দুদের তাড়ানো যায়, তাহলে জমি কিছুটা না অনেকটা সস্তায় পাওয়া যায়। আমার নিজের কাকু মুর্শিদাবাদের গ্রামে মুসলিমদের উপদ্রব সামলাতে না পেরে জলের দামে জমি বিক্রি করে শহরে এসে উঠেছিল।  মুসলিম প্রধান এলাকাতে হিন্দুদের প্রোটেকশন দিতে পুলিশ বা রাজনীতিবিদ কেওই সক্ষম না । এসব এলাকাতে যেসব সংখ্যালঘু হিন্দুরা থাকে, তাদের প্রোটেকশন দেয় সহৃদয় প্রতিবেশী মুসলিম ফ্যামিলিগুলি। কিন্ত ইদানিং আরবের টাকায় এবং বাংলাদেশী জামাতিদের অনুপ্রবেশে এইসব গ্রামে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার ( যেমন  জলে ফলিডল দেওয়া, গাছ কেটে নেওয়া) এত বেড়েছে, সহানুভূতিশীল মুসলমানরাই হিন্দু বন্ধুদের বলছেন গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে।


 ইনফ্যাক্ট পশ্চিমবঙ্গে জীবিকার সুরাহা না হলে দাঙ্গার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।

 ইজিপ্ট থেকে সিরিয়া, বাল্টিমোর থেকে নাইজেরিয়া-সর্বত্রই দাঙ্গার মূল কারন সম্পদের অপ্রতুলতার জন্য, চূড়ান্ত দারিদ্রের মধ্যে বড় হওয়ার কারনে- নিজের জীবন বা অন্যের জীবনকে অতটা গুরুত্বপূর্ন বলে এরা মনে করে না । ধর্ম এবং সাম্প্রদায়িকতা হচ্ছে সেই ক্ষোভের  বারুদে আগুন জ্বালানো।

এই মুহুর্তে দুটো কাজ দরকার দ্রুত। গ্রামের দিকে ফ্যমিলি প্ল্যানিং। কৃষক মনে করে সন্তান মানে এক্সট্রা লেবার। ফলে চাষীরা ফ্যামিলি প্ল্যানিং এ বিশ্বাসী না । যদি পশ্চিমবঙ্গ সরকার এটা করতে ব্যর্থ হয়, রাজ্যটা গাধার ঘারে যাবেই।  দ্বিতীয়টা হচ্ছে গ্রামে কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ। যেটা পশ্চিম বঙ্গে একদম হয় নি-পুঁজির অভাবে এবং বামপন্থী সুলভ লেবার প্রবলেমের জন্য। ফলে সম্পদের অপ্রতুলতা আরো তীব্র হয়েছে।  এটাই মূল কারন পশ্চিমবঙ্গ রাজনৈতিক দাঙ্গা এবং হত্যায় শীর্ষে।

ধর্মীয় মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এগুলো কোন রোগ না -রোগের লক্ষন । আসল কারন গ্রামের দিকে জনসংখ্যা অনুপাতে জীবিকার অভাব।