বিপ্লব পাল, ২১শে ডিসেম্বর
ঠান্ডা ঠান্ডা মোলায়েম ওয়েদার। উত্তেজিত ঐতিহাসিক ফাইনালের ফাইনাল ফল আউট- জীবনের সব না পাওয়া ভুলিয়ে একটা বেশ এস্টাটিক ঐশ্বরিক আনন্দের পরশ চারিদিকে। রোমান কনসালরা জানতেন। রোমের অধিবাসীরা যখনই রাজনীতির জন্য, কোরাপ্ট এডমিনিস্ট্রেশনের জন্য ক্ষেপে যেতেন, রোমান সম্রাটরা দুই-তিন সপ্তাহের টানা গ্ল্যাডিয়েটর গেম লাগিয়ে দিতেন। জুলিয়াস সিজার থেকে এই ট্রাডিশনের শুরু-এবং দেখা যাচ্ছে দুই হাজার বছর বাদেও ঠিক সেই এক ঘটনা। অসাধারন লেভেলের খেলা মানুষকে তার দৈনন্দিন দুঃখের জগত, সংগ্রামের জগতকে ভুলিয়ে এক মায়াবী জগতে নিয়ে যায়।
তবে খেলোয়ার মেসি নিয়ে এই পোষ্ট না। লিখছি প্রেমিক মেসি, আন্তেনোলা রোকুজ্জোর স্বামী মেসিকে নিয়ে। শতাব্দির সেরা প্রেমিক বা সেরা স্বামীর জন্য যদি কোন গোল্ডেন বলদ ট্রফি থাকত, সেটাও মেসির সেদিন প্রাপ্য ছিল। এবং মেসি পুরুষকুলের একদম যাকে বলে-সব কিছু মেরে দিয়েছেন!
মেসির প্রেম কাহিনীর শুরু আর্জেন্টিনার শহর রোজারিও থেকে। রাজধানী বুয়েনো আয়ার্সের ৩০০ কিমি উত্তরে সান্তা ফে রাজ্যের রাজধানী রোজারিও। যেখানে মেসি এবং আন্তেনোলার একসাথে বড় হওয়া। মেসি পাঁচ বছর বয়স থেকেই আন্তেনোলাকে চেনেন। আন্তেনোলা সম্ভত মেসির এক স্থানীয় বন্ধুর বোন। একদম ছকে ফেলা বাল্যপ্রেম।
১২ বছর বয়সে মেসি রোজারিও ছেড়ে বার্সিলোনাতে। কিন্ত আন্তেনোলাকে ভোলেন নি। তখন মেসি সবে বার্সিলোনার জার্সি গায়ে তুলেছেন ১৮ বছর বয়সে (২০০৫)। এই পাঁচ বছর মেসি ছিলেন বার্সিলোনার ব্রহ্মাচর্য্যশ্রমে ফুটবল তপস্যারত- রোজারিওতে ফেরেন নি। খুব সম্ভবত আন্তেনোলার সাথে যোগাযোগ ও ছিল না। কিন্ত বাল্যের ফেলে আসা রোজারিও শহরের খুঁটিনাটি খবর রাখতেন। একদিন চোখে এল গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছে উরসুলা নজ। এই উরসুলা আন্তেনেলার বেস্ট ফ্রেইন্ড। মেসি তখন আর্জেন্টিনা এবং ইউরোপের ফুটবলে বিষ্ময় প্রতিভা। খবর পাওয়া মাত্রই আন্তোনেলাকে সারপ্রাইজ দিলেন। না ইমেলে না। বার্সিলোনা থেকে ফ্লাইটে রোজারিও। শুধুই আন্তোনেলাকে ইম্প্রেস করার জন্য। অর্থাৎ আন্তেনেলার প্রতি প্রেম ফল্গুধারার মতন বইছিল। কিন্ত পেশাদার ফুটবলে আবির্ভাবের আগে যে কঠোর পরিশ্রম এবং ডিসিপ্লিনের মধ্যে বার্সিলোনার নার্সারিতে ছিলেন- তার অভিকর্ষজ বল কাটিয়ে ডিস্টান্সড বাল্যপ্রেমের রিস্ক নেন নি। কিন্ত মনের গভীরে যে প্রেম ছিল-তা বাঁশগাছের রুটের মতন মাটির গভীরে বেড়েই চলেছিল!
২০০৫ সাল থেকে তাদের বাল্যপ্রেম নব্য প্রেমের রূপ নেবে। এর মধ্যে বিয়ের (২০১৭) আগেই দুবার বাবা হয়েছেন মেসি। দুই ছেলে থিয়েগো (২০১২) এবং মাতিও (২০১৫)র জন্ম দিয়েছেন আন্তেনোলা-যখন মেসির বয়স ২৫ এবং ২৭। ছোট ছেলে সিরোর জন্ম ২০১৮ সালে। একদম নিখুঁত ফ্যামিলি প্ল্যানিং, সব কটি বাচ্চা তিন বছরের গ্যাপে। আন্তেনোলাও মেসির জন্য লাইফে প্রচুর সাক্রিফাইস করেছেন। আন্তেনোলা সুন্দরী মডেল এবং ভাল ছাত্রী ছিলেন। ডেন্টিস্ট্রি পড়া শুরু করেও, শুধু মেসির সাথে থাকার জন্য, দাঁতের ডাক্তারি থেকে ড্রপ আউট করেন সেকেন্ড ইয়ারে।
মেসি কেমন পিতা? মেসিকে কোন পার্টিতে পাওয়া যায় না । মেসি শুধুই ফ্যামিলির সাথে ডিনার করেন। নইলে তার তিনজন ছেলের সাথে খেলে বেড়াচ্ছেন। ফুটবল এবং ফ্যামিলি- এর বাইরে তৃতীয় কোন মেসির সন্ধান কেউ পায় নি! ওইজন্যই লিখলাম, শতাব্দির সেরা স্বামীর স্বর্ণবলদটিও মেসির প্রাপ্য।
বিশ্বকাপ জেতারপর আপনার সবাই দেখেছেন মেসি সেলিব্রেশন করছেন-তার তিন সন্তান এবং বৌকে নিয়ে। সেই ছবি টিভি থেকে আমিও তুলেছি। গোটা বিশ্ব দেখেছে। একদম দারুন সুখী সংসারের ছবি দখতে কেনা ভালবাসে। সবাই দারুন দারুন করছে। খুব ভাল। এখানেই কিন্ত পুরুষকূলের দফারফা হয়েগেল, সেটা কেউ বুঝল না!
একজন বাংলাদেশী মেয়ে কিন্ত সাহস করে সমস্ত মেয়েদের মনের কথা লিখেই ফেলল- অহ, আমার জীবনেও যদি মেসির মতন কেউ থাকত--কি সুন্দর প্রেমিক! কি সুন্দর স্বামী----মেয়েটা লিখেফেলেছে। বাকী কোটি কোটি মেয়েরা ভাবছে!!
এখানে দুটো জিনিস মনে করাতে চাইছি। ডিভোর্স এবং সুখী দাম্পত্যের ওপর নানান দেশেই গবেষনা হয়েছে। দেখা গেছে, যাদের বাল্যপ্রেম তারাই দাম্পত্যে সব থেকে বেশী স্টেবল। এটা নিয়ে আগে আমি একটা দীর্ঘ ব্লগ লিখেছিলাম। কারন একমাত্র বাল্যপ্রেমই ১০০% খাঁটি। ভেজাল কম। মনের বিবর্তন একসাথে হয় বলে, আন্ডারস্ট্যান্ডিং অনেক বেশী। তাই মেসির স্টেবল প্রেম ব্যতিক্রম না-যেহেতু বাল্যপ্রেম।
দুই নাম্বার পয়েন্টটা খতরনাক। সেটা হচ্ছে এদ্দিন কিশোরী বালিকাদের মনে বিয়ে এবং বরের ধারনা আসত সিনেমার রোম্যান্টিক নায়কদের দেখে। সাইকোলজিতে এটিকে আইডিয়েশন প্রসেস বলে। অন স্ক্রিন প্রেমের ঝর্নাধারার সিঞ্চনে তাদের ধারনা জন্মায় বর বা প্রেমিকরা তাদের জন্য ঠিক এই ১,২,৩্্,১০, ১১, ১২্ নাম্বার কাজ গুলো করবে। বাস্তবের দাম্পত্য হয় ঠিক উলটো। এটা তাও অনেক মেয়ে মানিয়ে নিত-যে না ওসব সিনেমা নাটক নভেলে হয়। বাস্তবে স্বামী অত ভাল হওয়া সম্ভব না। কিন্ত এই বিশ্বকাপের পর-সব মেয়ে জেনেগেছে মেসির পিকচার পারফেক্ট প্রেম কাহিনী! এবারত সিনেমা গল্প নাটকের অজুহাত দেওয়া যাবে না- ভীষন গোলমেলে কাজ করে পুরুষ জাতির ভবিষ্যত ডুবিয়ে গেছেন মেসি।
আরেকজন ডুবিয়েছিলেন। বারাক ওবামা। একদম বিকেল পাঁচটা বাজলেই ওভাল অফিস ছেড়ে মেয়েদের নিয়ে বাস্কেটবল খেলতে নামতেন। তারপর মেয়েদের হোমওয়ার্ক করাতেন। তবে ওবামা সিনেমার হিরো নন বলে, সে যাত্রাই অনেক পুরুষ বেঁচে গেছেন। আমি বাঁচি নি। যদি কোন দিন একবার ও বলেছি, অফিসের চাপের জন্য, এটা করতে পারব না- উলটো দিক থেকে- তুমি ওবামার থেকে বেশী বিজি নাকি????????
তবে আমাদের জেনারেশন শেষ। পুরুষদের নতুন জেনারেশন মেসির চাপ নিক।
No comments:
Post a Comment