Tuesday, March 8, 2022

পৌরাণিক পুতিন

  যুদ্ধর বয়স এখন বারোদিন।  বিদ্ধস্ত ইউক্রেনের অধিকাংশ শহর।  নির্বিচার গোলাবর্ষনের সামনে অসহায় শহরের অধিবাসীরা। জল, খাবার, ওষুধ, ইলেক্ট্রিসিটি কিছু নেই।  গোলাগুলির মধ্যে পালাবার পথ নেই। সিজ ফায়ার মরীচিকাময় ঘোষনা। 

কিন্ত  আপনার বা আমারই কি পালানোর পথ আছে? ক্রিকেট, বলিউড বা সাহিত্যে বা নিদেন পক্ষে নিজের কাজে মন দিলেই ভুলে যাবেন যুদ্ধ? এই যুদ্ধ আপনাকে আগুনের ছেঁক্যা দেবে না? 

কোভিড এখনো ভাল করে বিদায় নেয় নি। হংকং এ প্রতিদিন শয়ে শয়ে লোক মরছে।  কোন গোকুলে কোন  ডেডলি মিউটেশনের জন্ম হচ্ছে-কেউ জানে না। তবু মাস দুই আরাম করে নিশ্বাস নিতে পারব-আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।  ২০২০ সালের পর এই প্রথম মুক্ত বসন্ত।  বেশ একটা বাসন্তিক সেলিব্রেশেন মুড শুরু হওয়ার আগেই পুতিন শুরু করলেন, তার যুদ্ধ। তার লেগাসি। ভুক্তভুগী গোটা বিশ্ব। এখন খাবার তেল থেকে গাড়ীর তেল-সব কিছুতেই লাগবে আগুন। ছ্যাঁকা খাবে গোটা বিশ্ব। 

আমি বা আপনি কি এই যুদ্ধ আটকাতে পারি?  উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ। আপনাকে বা আমাকে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিতে হবে। আরো অনেক বেশী জানতে হবে কিভাবে রাজনৈতিক নেতা- এবং ব্যবসার দুষ্টচক্র একসাথে যুদ্ধ লাগায়। সাধারন মানুষ যুদ্ধ চায় না। রাশিয়াতে প্রায় ১১,০০০ লোক যুদ্ধ বিরোধি মিছিলে যোগ দিয়ে গ্রেফতার হয়েছে।  এদের অধিকাংসই সেইসব অভাগী বাবা-মা যাদের ছেলেদের পুতিন যুদ্ধে মরতে পাঠিয়েছেন।  ওই ১১,০০০ লোক যেদিন ১ কোটি হবে?  যেদিন রাশিয়ার সব লোক যুদ্ধবিরোধি মিছিলে হেঁটে গ্রেফতার হতে চাইবে-সেদিন কোন পুতিন রাক্ষস থাকবে না।

 ভারতীয় পুরাণ, রামায়ন, মহাভারত-সবই যুদ্ধকেন্দ্রিক।  যুদ্ধবাজদের সেখানে অনেক নাম।  অসুর, রাক্ষস, দৈত্য ইত্যাদি।  সেখানে সব যুদ্ধের কারন যুদ্ধবাজ কোন দৈত্য বা অসুর- যিনি নিজের সামরিক ক্ষমতার বলে অন্ধ।  যুদ্ধের কারনে জনসাধারনের দুর্দশার একফোঁটা সমবেদনা সেখানে প্রবেশ করে না। নিজের ছেলে যুদ্ধে মরলেও না! পুতিনের মধ্যে  ভারতীয় পুরানের সেই দৈত্যরাজদেরই খুঁজে পাচ্ছি। পুতিনের প্রেস কনফারেন্সের সাথে অদ্ভুত মিল দেত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর। অথবা মহিষাশুর। বা রাবনের। যারা কেউ বিশ্বাস করেন নি-এত অস্ত্র, এত ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা যুদ্ধে হারতে পারেন। রাবনের কথা ভাবুন। একে একে সব পুত্র ভাইদের হারাচ্ছেন যুদ্ধে। লঙ্কা পুড়ছে। তবুও তিনি লড়বেন। পুতিনের রাশিয়াতে এখন রুবল পুড়ছে। লোকেরা কাজ হারাচ্ছে কারন বিদেশীরা ব্যবসা গোটাচ্ছে।  তেলের ক্রেতারাও নিশেধাজ্ঞা জারি করল আজকে।  তবুও পুতিন লড়বেন!  কারন এই সব ডিক্টেটর রাক্ষসদের কাছে জীবনের দাম নেই। যেমন রাবন বলেছিলেন, মরতে ত সবাইকেই হবে-কিন্ত যুদ্ধ করেই মরব-কারন তাতেই আমার লেগ্যাসি বাঁচবে। পুতিনকে দেখে তাই মনে হচ্ছে। তিনি আবার সোভিয়েত ইউনিয়ান বা অতীতের জার সাম্রাজ্যকে ফিরিয়ে আনতে চান। সেটাই তার লেগ্যাসি! তার জন্য তিনি যুদ্ধ করবেনই করবেন। রাশিয়া ধ্বংস হলেও করবেন। কারন লেগ্যাসি!

 পুরানের রাবন, হিরন্যকশিপুর গল্প-আর আজকের পুতিনকে দেখে মনে হয়, মানুষ বদলায় নি।  বদলানোর অভিনয় করেই দিন কাটে আধুনিক সভ্যতার। 



No comments: