Wednesday, February 24, 2016

কমরেড রোবট

                                                                                (১)
কালকে পেনসিলভেনিয়াতে একটা আধুনিক প্লাস্টিক প্ল্যান্টে ছিলাম গোটা দিন । এই প্ল্যান্টে আমেরিকার নামীদামী কসমেটিক ব্রান্ডের প্যাকেজ তৈরী হয়।  কোম্পানীর মোট রেভিনিউ ২০০ মিলিয়ান ডলারের ওপরে ।
 
   প্রায় ১০০ হাজার স্কোয়ারফিটের ক্লিন রুমে শখানেকের বেশী মেশিন। কোন ওপারেটর নেই। ফ্লোরের একটা রুটিনে দেখলাম তিনটে শিফটে সব মিলিয়ে মোটে ৬৫ জন শ্রমিক কাজ করে ।  এই যে শখানে মেশিন কাজ করছে-সব অটোমেটিক কন্ট্রোলে- মানুষ শ্রমিক শুধু প্রোডাক্টটা বেড়িয়ে এসে বক্সড হবার পরে, বাক্সটাকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে ট্রাকে রাখছে। কুলিগিরির কাজ। সস্তার রোবট এলে সেই কাজটাও থাকবে না।

  আর খুব বেশী হলে আছে দশজন মতন ইঞ্জিনিয়ার। তারা কন্ত্রোলরুম বা আর এন্ডি রুমে থাকে।

   ১৯৯০ সাল আমেরিকাতে যত শিল্প শ্রমিক ছিল-এখন আছে তার মাত্র ১০%।  কিন্ত উৎপাদন বেড়েছে তিনগুন। মালিকের লাভ বেড়েছে অনেক। শ্রমিকের বেতন যা বেড়েছে, ইনফ্লেশন আডজাস্ট করলে-তা প্রায় একই আছে। বাই দ্য ওয়ে-এটি পাবলিক কোম্পানী। সুতরাং মালিক বলতে এই ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডার সাধারন পাব্লিকই ধরা যাক।

  আজকে ইনফোসিসের সি ই ও বিশাল সিক্কার ইন্টারভিউ দেখছিলাম। ডঃসিক্কা-পরিস্কার বলছেন অটোমেশনের জন্য ভারতের আই টিতে এই বিশাল ফোর্স আর থাকবে ন। সবার লাভ বাড়বে, ব্যবসা বাড়বে-কিন্ত লোক কমবে। আই টির ক্ষেত্রে অবশ্য মাইনেও অনেকই বাড়বে-কারন আরো বেশী ভাল স্কিলের লোক দরকার হবে।

                                                                 (২)


আমি আসলে যে পয়েন্টে আসতে চাইছি- খুব পরিস্কার ভাবে আমেরিকাতে ( এবং ভবিষ্যতে ভারতেও)  পাঁচটি শ্রেনী দেখতে পাচ্ছি।

     (১) মালিক-যারা ব্যবসা বা প্রোডাকশনটার প্রিন্সিপাল শেয়ারহোল্ডার।

   (২)  অটোমেশনের সাথে যুক্ত ইঞ্জিনিয়ার এবং আই টির লোকজন

    (৩) তথাকথিত বুর্জোয়া শ্রেনী-ডাক্তার, উকিল, হরেক টাইপের কনসাল্টান্ট
   
     (৪) সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কর্মচারী-শিক্ষক, আধাসরকারি ওয়ার্কার -এরাও বুর্জোয়া-কিন্ত এদেরকে আমি আলাদা করছি।

      (৫)  একটা বিশাল সেকশনের উদয় হচ্ছে-যারা আন্ডারপেইড লেবার, পার্ট টাইম কাজ করে-কারন শ্রমিক কৃষকের কাজটাই অটোমেশনের সামনে  উবে গেছে। এরা প্রায় সবাই বাবা মায়ের সাথেই থাকেন-কারন বিয়ে করে আলাদা থাকার পয়সা নেই। ফুড স্টাম্প, সোশাল সিকিউরিটির টাকায় দিন আনে দিন খাচ্ছে,


  রাজনৈতিক মেরুকরনও এই পাঁচটি শ্রেনীর শ্রেনীস্বার্থ অনুযায়ী হচ্ছে। এর মধ্যে (১) এবং (২) শ্রেনীটি নিজেদের স্বার্থেই প্রোমার্কেট লিব্যারাল ইকোনমির সমর্থক।  কারন (২) শ্রেনীটি ভারত বা আমেরিকাতে যে মাইনে পায় বা পাবে, তার স্বচ্ছল ব্যবসায়ীদের থেকেও ভাল।  (১) এর ব্যবসার জন্য শুধু  (২) কে দরকার।  আগে যে মালিক শ্রমিক দ্বন্দ ছিল-অটোমেশন তা প্রায় হাওয়া করে দিয়েছে। ১ এর সাথে (২) এর দ্বন্দ হচ্ছে না। ভারতে কোন ভায়াবল আই টী ইউনিয়ান নেই। কোন আই টী ওয়ার্কার তা পাত্তা দেয় না। কারন আই টিতে ভাল চাকরি এবং মাইনে পাওয়ার শর্ত স্কিল-যার স্কিল আছে, তার সব আছে।

  সমস্যা হচ্ছে আমেরিকাতে চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত শ্রেনীটি যা ব্যাঙ্কের টেলর বা শ্রমিকের কাজ করে ভদ্র মাইনে পেত, তা আস্তে (৫) নাম্বারে তলিয়ে যাচ্ছে।  কারন তাদের চাকরি অটোমেশনে খেয়ে নিয়েছে। এটা ভারতেও হয়েছে। অনেকের বাবা মা সরকারি চাকরি করত-কিন্ত ছেলে মেয়েরা যেহেতু (২)-(৪) ক্লাসে উঠতে পারে নি-বসে গেছে।

 ফলে ৪ নাম্বার এবং ৫ নাম্বারদের মধ্যে একটা রাজনৈতিক জোটবন্ধন হচ্ছে-যাকে আমরা আমেরিকার নয়া বামপন্থা বলতে পারি। মনে রাখতে হবে, ৫ নাম্বার শ্রেনীটি আর কারখানার সাথে যুক্ত না-ফলে আমেরিকার পুঁজিপতিদের সরাসরি স্ট্রাইকের মাধ্যমে চাপ দেওয়ার ক্ষমতা আর এদের নেই। সেটা ভারতেও প্রায় এখন তাই।

  ৪ নাম্বার শ্রেনীটির দরকার বেশী মাইনে।  কারন এরা সরকারি চাকুরে। তা একমাত্র সম্ভব ট্যাক্স বেশী করে।  ফলে সিরিয়াস এবং এক্টিভ বামপন্থীদের অধিকাংশই শিক্ষক এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শ্রেনী থেকে আগত। কিন্ত নিজেদের মাইনে বাড়াও আন্দোলন করলে, এরা সমাজ বিচ্ছিন্ন হবে। ফলে (৫) নাম্বার শ্রেনীটির সাথে মেল বন্ধন করে এরা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে ট্যাক্স বাড়াতে চাইছে।

 এখানে খুব ইন্টারেস্টিং একটা ডেভেলেপমেন্ট হচ্ছে এই ৫ নাম্বার শ্রেনীটির মধ্যে বাম এবং ডানপন্থী উগ্রপন্থার প্রভাব বেশী। বার্নি স্যান্ডার্স এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাপোর্টার এদের মধ্যেই। অনেকেই ভাবছে তাদের বাজে দিনের জন্য দায়ী আমাদের মতন ইমিগ্রান্টরা যারা তাদের চাকরি খেয়েছে। কিন্ত আসলে ত তা না। চাকরি গেছে অটোমেশনে।

                                       (৩)

প্রশ্ন উঠবে,  ভারতেও কি এই (৫) নাম্বার শ্রেনীটির প্রাধান্য চলে এল?

 আমার আন্সার -ইয়েস। এদের ভোটেই মূলত জিতেছেন মোদি। কারন এই (৫) নাম্বার শ্রেনীটির আশু দরকার চাকরি। যার চাকরিই নেই-তারা মোটেও শোষন ইত্যাদির শ্লোগানে ভুলবে না। তারা ভাববে মোদির মতন বিকাশ পুরুষই ভাল-তাতে তাদের চাকরির সম্ভাবনা আছে। আর বামেরা আসলে চাকরি বাকরির কি দশা হবে-তা সবাই পশ্চিম বঙ্গ দেখেই বুঝেছে।

 বামেরা যদি জমি ফিরে পেতে চান-বস্তাপচা লেনিনবাদ বাদ দিয়ে- এই (৫) নাম্বার শ্রেনীটির দিকে তাকান। এটি নব্য উদয়-যারা শিক্ষিত-কিন্ত চাকরি খুঁজছে।

  ভারতের কৃষিতে অটোমেশন এবং সমবায় জরুরী দরকার। কারন ভারতের কৃষি এত পেছনে-এত বেশী লোক লাগে-খরচ সাংঘাতিক বেশী। অপচয় ও বেশী। ভারতের কৃষি বাণিজ্যে সমবায় আন্দোলন খুব দ্রুত দরকার- নইলে কৃষকের আত্মহত্যা এবং খাদ্যের দামের উচ্চরেখা কেউ আটকাতে পারবে না। ভারতে নতুন ধারার বাম আন্দোলন সমবায়কে ঘিরেই হতে পারত। তাতে অন্তত (৫) নাম্বার শ্রেনীটি দেখতে পেত বামেরা জীবিকা তৈরীর ব্যপারে সিরিয়াস।

ভারতের কমিরা মনে করতেই পারেন বিজেপি বা তিনুদের মধ্যে ইন্টেলেকচুয়াল নেই। ভারত বিরোধি স্লোগান-আন্তর্জাতিকতার শ্লোগান বুদ্ধিজীবির ব্যারোমিটার।  কিন্ত তাতে এই (৫) নাম্বার শ্রেনীটির কিছু যায় আসে না-কারন তারা ডেসপারেট একটা চাকরির জন্য। যাদের ভোট দিলে চাকরি বাকরি হয়, তাদেরকেই এরা ভোট দেবে।  শ্রমিক-মালিকের গল্প অনেকদিন শেষ।  ভারতের বামেরা যদ্দিন জেন এইন ইউ কেন্দ্রিক হোক কলরব করে যাবে,  তারা ততই (৫) নাম্বার শ্রেনীটির থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।







   







No comments: