বিজেপির লোকজন যেভাবে রাস্তা ঘাটে অফিস আদালতে ইউনিভার্সিটিতে "কমি" দেখলেই পেটাচ্ছে-খুব স্বাভাবিক ভাবেই ১৯৩২-৩৩ সালে জার্মানির পুনারাবৃত্তি বলেই মনে হচ্ছে। ১৯২৪ সাল থেকেই নাজি বাহিনীর স্টর্ম ট্রুপার, যাদের কাজ ছিল কমি ধরের পেটানো বনাম জার্মান কমিনিউস্টদের রটকম্প বাহিনী-যারা গোপনে নাজি এস এস ক্যাডারদের পেটাত বা হিটলারের মিটিং ভঙ্গ করত-তাদের স্ট্রীট ফাইট জার্মানির রাজনীতির নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। তবে হিটলারের ওয়ার্কার পার্টি বা জার্মান কমিনিউস্ট পার্টি-কেওই খুব কল্কে পায় নি ১৯২৯ সাল পর্যন্ত। এরা ভোটে ২-৫% পেত । কিন্ত ১৯২৯ সালের বিশ্বব্যাপী মন্দায়, জার্মানিতে দলে দলে বেকারি বাড়ে এবং জনগণ গনতান্ত্রিক পার্টী গুলির ওপর আস্থা হারায়। জার্মানিতে নাজি এবং কমিদের ঘোষিত পজিশন ছিল, ক্ষমতায় এলে তারা এক দলীয় পার্টির শাসন চালু করবে। তবুও রাইট উইং কনসার্ভেটিভ পার্টি এবং সোশ্যাল ডেমোক্রাটিকগুলি এদের ব্যান না করে, এদের সাথে কোয়ালিশন গড়ে ক্ষমতা দখলে ব্যস্ত ছিল বেশী।
১৯৩২ সালে কমিদের সাথে নাজিদের মারামারি সাংঘাতিক রূপ নেয়- ৯৭ জন কমিকে খুন করে নাজিদের এস এস। অন্যদিকে কমিদের রটকম্প ৪২জন এস এস নেতাকে খুন করে বদলা নেয়। বেসিক্যালি জার্মানিতে তখন গণতন্ত্র চুলোয় যাক- খুন খারাপি করেই ক্ষমতা দখল করতে হবে এই ভাবটা জাঁকিয়ে বসে। এবং গণতান্ত্রিক পার্টিগুলি এর বিরুদ্ধে আইন করেও তুলে নিতে বাধ্য হয় কোয়ালিশন রাজনীতির বাধ্যবাধকতায়।
হিন্দুত্ববাদিদের যেমন পলিটিক্যাল পার্টি বিজেপি, মগজধোলাই এর আঁতুরঘর এবিভিপি, আর ক্যালানো বাহিনীর নাম বজরং দল-তেমন হিটলারের পলিটিক্যাল পার্টির নাম ছিল ন্যাশানাল স্যোশালিস্ট ওয়ার্কারস পার্টি, মগজধোলাই হত হিটলার ইয়ুথ বাহিনীতে, আর ক্যালানোর জন্য ছিল স্টমট্রুপার। সুতরাং এইসব দেখে থার্ড রাইখের পদধ্বনি শোনা বিচিত্র কিছু না। যেভাবে ছাত্র, সাংবাদিক শিক্ষক, আইনজীবিদের ওপরে হামলা হচ্ছে, এবং রাষ্ট্রের পুলিশ এগুলো প্রশয় দিচ্ছে, তাতে থার্ড রাইখের স্মৃতি ফিরে আসতেই পারে।
তবে সব বিবেচনা করে,আমি মনে করি, ভারতে থার্ড রাইখ ফেরার সম্ভাবনা নেই।
(১) হিটলারের নাজি পার্টি এবং জার্মান কমিনিউস্ট পার্টির মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য কমই ছিল-কারন দুটো পার্টিই ছিল ওয়ার্কারস পার্টি। আমেরিকার বিরুদ্ধে। পুঁজির বিরুদ্ধে। স্টেট ক্যাপিটালিজমের পক্ষে। জাতীয়করনের পক্ষে। ইনফ্যাক্ট ইহুদিদের ঘৃণা করার ব্যপারটা বাদ দিলে, দুটো পার্টীর ইকনোমিক এজেন্ডা আলাদা কিছু ছিল না। গোয়েবেলস এর ডায়ারী পড়লেই জানা যাবে হিটলার এবং নাজি পার্টি কমিদের গালাগাল করলেও, স্তালিনের "কাজের" ভক্ত ছিল-বিশেষত যে নিঁখুত ভাবে তিনি একনায়ক তন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে সব কিছুর জাতীয়করন করেছিলেন। ইনফ্যাক্ট স্টালিন ও হিটলারকে ১৯৩০-৩২ সাল পর্যন্ত মিসগাইডেড কমি বলেই মনে করতেন। জার্মান কমিনিউস্ট পার্টি চলত স্টালিনের নির্দেশে। ১৯৩০ সালেই স্যোশাল ডেমোক্রাটদের সাথে হাত মিলিয়ে ক্ষমতা দখল করতে পারত জার্মানীর কমিনিউস্ট পার্টি। হিটলারে ভবলীলা তখনই সাঙ্গ করে দেওয়া যেত । কিন্তু স্টালিনের মনে হল হিটলার আসলেই অনেক বেশী " কমিদের কাছে" -কিন্ত স্যোশাল ডেমোক্রাটরাই আসল শত্রু! আর জানেনই ত- বং কমিদের ব্রেইন যেমন দিল্লীর কেশব ভবনে বাঁধা থাকে-তখন জার্মান কমিদের ব্রেইন, গান এবং টাকা বাঁধা স্টালিনের কাছে। স্টালিন নির্দেশ দিলেন দরকার হলে নাজিরা ক্ষমতা দখল করে করুক-কিন্ত স্যোশাল ডেমোক্রাট একদম না।
কমিনিউস্টরা কোনদিনই প্রাক্টিক্যালের ভাল ছাত্র না-তারা থিওরিটিক্যাল হস্তমৈথুনে বিশ্বাসী চিরকাল। কারন নাজিরা এসেই প্রথমে সব ব্যবসার জাতীয়করনের ঘোষনা দেবে বলেছিল-যার সাথে কমিদের ঘোষিত পজিশনের কোন পার্থক্য ছিল না। তারপরে নাজি এবং জার্মান কমি-দুই পার্টীই ছিল আমেরিকান ক্যাপিটালিজমের বাপান্ত করা পার্টি। মেইন ক্যাম্প যারা পড়েছেন-তারা দেখবেন হিটলার আমেরিকান ক্যাপিটালিজমকে ফ্রান্সের থেকে কম বাপান্ত করেন নি। সেই ১৯৩০ সালে স্টালিন মনে করতেন, তিনি কোন না কোনদিন নাজি এবং কমিদের মিশিয়ে দিয়ে জার্মানীতে বলশেভিক বিপ্লব ঘটাবেন-হাও নেইভ!
ভারতের অবস্থা মোটেও এক না। বিজেপি ও নাজি পার্টি হতে পারবে না-মোদির হিটলার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই জন্যে নেই যে বিজেপি মোটেও ওয়ার্কারস পার্টি না-তারা ধণতান্ত্রিক পার্টি-পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে তারা না। হিটলার তার স্টিম সংগ্রহ করেছিলেন জার্মানির খেটে খাওয়া মানুষদের কাছ থেকে-কারন তিনি সবার জন্য চাকরি, বিনে পয়সায় চিকিৎসা ও শিক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতা এসেছেন। এবং সেগুলো করেও ছিলেন। তিনি বামেদের থেকেও বড় সোশ্যালিস্ট ছিলেন! তার পার্টির নাম কিন্ত ন্যাশানালিস্টিক স্যোশালিস্ট পার্টি। তার পলিশি ছিল প্রোপিপল-এন্টিক্যাপিটালিস্ট। জার্মানির খেটে খাওয়া জনগণই ছিল, তার ক্ষমতার উৎস।
বিজেপি কিন্ত জনবিচ্ছিন্ন-খেটে খাওয়া লোকেদের কাছ থেকে। হিন্দুত্বের ঢপ দিয়ে নাজি বা হিটলার হওয়া যায় না। সেটা হতে গেলে আডানি আম্বানীদের পদসেবা না করে জনগণের জন্য সরকারি চিকিৎসা , শিক্ষা, চাকরীর সরকারিকরন করতে হয়। সেটা যেহেতু নেই, ফান্ডামেন্টালি বিজেপি আসলেই কিছু ঢপের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে। তাসের ঘরের মতন ভেঙে যাবে বিজেপি। হিটলারের পলিসি বেস কিন্ত ছিল সলিড- প্রোপিপল।
(২) দ্বিতীয় ব্যপারটা হচ্ছে ১৯৩০-৩৩ সালের জার্মানিতে মন্দা ছিল প্রবল। চারিদিকে বেকার। ফলে গণতান্ত্রিক পার্টিগুলি এবং গণতন্ত্রের প্রতি সাধারন জনগণ আস্থা হারায়। ভারতের সেই অবস্থা নেই। এখানে গণতন্ত্রের প্রতি লোকের আস্থা হারায় নি তা দিল্লী এবং বিহারের ভোটেই প্রমাণিত। ফলে অগনতান্ত্রিকতাকে জনগণই প্রশয় দেবে না। এবং দিলে বিজেপি যেভাবে দিল্লীতে জামানত খুইয়েছে সেই ভাবে হারবে।
সুতরাং হিটলার যেভাবে স্টর্মত্রুপার দিয়ে কমি পেটাতেন, সেইভাবে চলতে গেলে ভারতে জনপ্রিয়তা হারাবে বিজেপি।
No comments:
Post a Comment