(১)
গণতন্ত্রের প্রথম শর্তই হচ্ছে ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা। প্রত্যেকের জীবনের উদ্দেশ্য কি এক হবে? কখনোই না। সুতরাং মতের ভিন্নতা থাকবে। এবং রামধেনুর মতন এই ডাইভার্সিটিকে ধারন করতে না পারলে কোন গণতন্ত্রই সমৃদ্ধ হবে না।
ফেসবুকে যেদিকেই দেখি-সর্বত্র অসহিষ্ণুতা। সংরক্ষনের বিরুদ্ধে মত রাখলেই আপনি কাস্টিস্ট। যেন যারা সংরক্ষনের পক্ষে, তাদের যুক্তিই ১০০% ঠিক। এগুলো ভুল ভাল ধারনা। কোন আর্গুমেন্ট বা কাউন্টার আর্গুমেন্টই ১০০% কারেন্ট হতে পারে না। কারন প্রতিটা আর্গুমেন্টের সাথেই জীবনের উদ্দেশ্য জড়িত এবং সেটা যেহেতু সবার জন্য এক না-মতের ভিন্নতা থাকবেই।
ভারতের লিব্যারাল এবং রক্ষনশীল গোষ্ঠি -দুটোই অগণতান্ত্রিক-অর্ধশিক্ষিত। সংরক্ষনের বিরুদ্ধে লিখলে কাস্টিস্ট বলে ট্যাগাবে, ৪৯৮ এর মতন কালা আইনের বিরুদ্ধে লিখলে সেক্সিস্ট বলে ট্যাগাবে, মার্কেটের পক্ষে লিখলে নিওলিব্যারাল বলে ট্যাগাবে। একই ভাবে ভারতের কোন ব্যাপারে সমালোচনা করলে আপনি পাকিস্তানপন্থী। হিন্দু ধর্মের সমালোচনা করলে আপনি সিকুলার। ইসলামের সমালোচনা করলে আপনি ইসলামোফোবিক।
মুশকিল হচ্ছে বিরুদ্ধ পক্ষকে যারা এইভাবে ট্যাগাতে ভালোবাসে-আপনি নিশ্চিত ভাবে জানবেন, তাদের ঘটে কিস্যু নাই। ইস্যুভিত্তিক বিতর্ক করার ক্ষমতা নেই বলে ট্যাগাতে ভালোবাসে।
(২)
রোহিতের মৃত্যুতে রিসার্ভেশন বিতর্ক আবার সামনে আসছে-তার কুৎসিত রূপটাও দেখছি।
প্রথমেই লিখে রাখি আমি সংরক্ষনের পক্ষে। কিন্ত তা যেন হয় অর্থনৈতিক অবস্থানের পরিপেক্ষিতে। এস সি , এস টিদের সংরক্ষন থাকুক- কিন্ত অবশ্যই যেন তা হয় তাদের অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে। সংরক্ষনের মূল কারন পিছিয়ে পড়া শ্রেণীদের জন্য আপওয়ার্ড মোবিলিটি। সুতরাং শহরের প্রতিষ্ঠিত এস সিদের জন্য সংরক্ষন করে গ্রামের পিছিয়ে থাকা এস সিদের কি লাভ? আঙুল ফুলে কলাগাছ করা এই রিজার্ভেশন পলিশিতে আসলেই ত, গরীব দলিতদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটা বুঝতে কি পি এই চ ডি করতে হয়? আলটিমেটলি বর্তমানের এস সি পলিসি , দলিতদের মধ্যে বড়জোর 5% এর কাজে আসছে-যাদের টাকা আছে। বাকী ৯5% দলিত, গরীব-তাদের কি লাভ হচ্ছে এই পলিসিতে ?
ইনফ্যাক্ট এটাত নতুন কিছু না। ওবিসি রিজার্ভেশনের জন্য অর্থনৈতিক ক্রাইটেরিয়া চালু আছে। ২০১৫ সালের নিয়মে, যেসব ওবিসির হাউসহোল্ড ইনকাম ১৫ লাখের বেশী বা ক্লাস ওয়ান বা টু অফিসার-তারা রিজার্ভেশনের আওতাই আসে না। এই আইন এসসি দের জন্যও না আনার ত কিছু দেখি না।
আমি যেটা লিখছি-সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি কে জি বালকৃষ্ণান-তার একটি রায়ে একই কথা লিখেছেন ( ২০০৮) ঃ
“Though for the purpose of convenience, the list is based on caste, it cannot be said that backward class has been identified solely on the basis of caste. The only possible objection that could be agitated is that in many of the castes included in this list, there may be an affluent section (creamy layer) which cannot be included in the list of SEBCs.”
এগুলো সত্য সন্দেহ নেই। অভিযোগগুলো ততোধিক ফালতু। আমার জানা এমন কেউ নেই-যারা কর্মক্ষেত্রে বা ছাত্র অবস্থায় বুলিং এর শিকার হন নি। কর্পরেট পলিটিক্স ত আরো মারাত্মক। সেখানে সবাই সবার পেছনে লাগে। আমি ত গ্রাম থেকে এসেছি। কলেজ লাইফে অনেক বন্ধুই আমার গ্রাম্যতা নিয়ে হাঁসি ঠাট্টা করেছে। ইংরেজি ভাষা জ্ঞান-সব ব্যাপারেই খোঁটা খেয়েছি। তাতে কি ছেঁড়া যায়? এর জন্যে কাউকে এস সি হতে হয় না। কে কি বলল তাতে কি যায় আসে? যে বক্তা মূর্খ, তার মূর্খামি দায়, তার নিজের। আমি ভারতীয় বলে এখানে সাদারা আমার পেছনে লাগে নি? তাতে কি যায় আসে? যারা পেছনে লেগেছে, অনেকে তারাই পববর্তী কালে আমার ভাল বন্ধু হয়েছে। যে কোম্পানীতেই গিয়েছি-অনেক সাদা লোকই প্রথমে পেছনে লেগেছে। কিন্ত আস্তে আস্তে প্রত্যেকেই আমি নিজের বৃত্তে এনেছি। কর্মক্ষেত্রে সন্মান অর্জন করতে হয়- রিজার্ভেশনের মাধ্যমে ওই ভাবে কাউকে সন্মান দেওয়া সম্ভব না। আমার এক রেড নেকের কথা মনে আছে। আমি ক্যালিফোর্নিয়াতে যখন প্রথম জয়েন করি, সে আমার বিরুদ্ধে আমাদের জার্মানির হেডকোয়াটারে নালিশ করেছিল। যাইহোক জার্মানরাও গাধা না। আস্তে আস্তে যেটা হল-লোকটা কাজ করত সেলসে-ও দেখলো-ওর সেলস বৃদ্ধি করতে, আমি খুব কাজের লোক! ফলে তার বাড়িতে এক সাথে বিয়ার খাওয়া থেকে শুরু করে, তার ডিভোর্স ঠেকানোর জন্য মাঠে নামতে হয়। এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিলাম আমরা। ধণতন্ত্র খুব দড়ের জিনিস-এখানে প্রতিটা সম্পর্কই স্বার্থের। ওই ভাবে কাস্টের কারনে কেই কাউকে পেছনে ফেলবে না।
তবে সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোতে জাত ফাতের সমস্যা থাকতেই পারে । কিন্ত মার্কেটের আগমনে, তা আস্তে আস্তে কেটে যেতে বাধ্য।
এবার বিবাহের প্রশ্নে আসি। অভিযোগ এস সিদের সাথে উচ্চবর্নের লোকেরা বিয়ে দিতে চায় না। এই অভিযোগ সঠিক। এর মূল কারন এরেঞ্জড মেরেজ। এই জন্য আমি আইন করে এরেঞ্জড মেরেজ তুলে দেওয়ার পক্ষে। এরেঞ্জড মেরেজ আরো অনেক কারনেই ক্ষতিকর-সেটা নিয়ে আগেই লিখেছি। কিন্ত তার জন্য চাকরিতে বড়লোক এস সিদের সংরক্ষন? কোন যুক্তিই যথেষ্ট না।
(৪)
বেসরকারি ক্ষেত্রে সংরক্ষনের প্রশ্ন উঠেছে। কারন আগামী দিনে সরকারি চাকরি আস্তে আস্তে অনেক কমে যাবে। সুতরাং এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
আমেরিকাতে গর্ভমেন্ট ঠিকাদার ( নন-মিলিটারী) দের ক্ষেত্রে কিছুটা সংরক্ষন চালু আছে অন্যভাবে। ওখানে প্রজেক্ট প্রপোজাল মুল্যায়নের সময় পয়েন্ট সিস্টেম থাকে-যে কোম্পানীর মালিকানা কাদের-তাদের মাইনরিটি স্টাটাস কি। এক্ষেত্রে হায়েস্ট স্টাটাস থেকে রেড ইন্ডিয়ান এবং এক্স মিলিটারিদের। কিন্ত তা হয় মালিকানার ভিত্তিতে। ফলে এই ডিসিতে পুরো সিস্টেমটাই রিগড। রেড ইন্ডিয়ানদের কোম্পানী সামনে রেখে, অন্যরা প্রজেক্ট তোলে। তাতে রেড ইন্ডিয়ান মালিকের লাভ-কাট মানি।
ভারতে সরকার সেরকম কিছু চালু করতেই পারে-তবে সিস্টেম পুরো দুদিনেই রিগড হয়ে যাবে।
বেসরকারি ক্ষেত্রে সরকার মোটেও ঠিক করতে পারে না-একজন কোম্পানী কাকে নেবে। প্রতিটা কোম্পানীর নিজস্ব স্ট্রাটেজি থাকে হায়ারিং এ। আমি নিজে মফঃশহর থেকে উঠে আসা গরীব ছেলে মেয়েদের পছন্দ করি বেশী। এই পক্ষপাতিত্ব যদি ডিসক্রিমিনেশন হয়, মেনে নিতে রাজী আছি। কারন ওটা আমার ব্যবসার কারনেই দরকার। আমার অভিজ্ঞতা বলে এই ছেলে মেয়েগুলি কাজের হয় বেশী।
তবে আমি মনে করি, ভারতের প্রোডিউসার ক্লাসগুলিকে উৎসাহ, সরকারি সাহায্য দেওয়া উচিত বেশী। এদের অনেকেই ওবিসি শ্রেনীর। চাষী, তাঁতি, কুমোর,ছুতোর-এদের জন্য ত সরকার কিছু করলো না-অথচ এরাই গ্রামীন অর্থনীতির ব্যকবোন।
তবে এদের ছেলে মেয়েদের সরকারি চাকরি দেওয়া, অর্থনীতির ক্ষতি করা। দরকার এদের ছেলেমেয়েদের জন্য স্কিল মিশনের, লোনের-যাতে এরা আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর দক্ষ হয়ে, লোনের মাধ্যমে বাপের কারখানাকেই উন্নত করতে পারে। ভারতের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কিন্ত সেই ধরনের পরিকল্পনা কই?
অথচ সংরক্ষনের নামে একটা শহুরে এস সি শ্রেনী ঘি খাবে-এটাই হচ্ছে এদের বক্তব্য। এবং এই অবিচারের বিরুদ্ধে বলতে গেলে আপনি হয়ে যাবেন কাস্টিস্ট।
গণতন্ত্রের প্রথম শর্তই হচ্ছে ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা। প্রত্যেকের জীবনের উদ্দেশ্য কি এক হবে? কখনোই না। সুতরাং মতের ভিন্নতা থাকবে। এবং রামধেনুর মতন এই ডাইভার্সিটিকে ধারন করতে না পারলে কোন গণতন্ত্রই সমৃদ্ধ হবে না।
ফেসবুকে যেদিকেই দেখি-সর্বত্র অসহিষ্ণুতা। সংরক্ষনের বিরুদ্ধে মত রাখলেই আপনি কাস্টিস্ট। যেন যারা সংরক্ষনের পক্ষে, তাদের যুক্তিই ১০০% ঠিক। এগুলো ভুল ভাল ধারনা। কোন আর্গুমেন্ট বা কাউন্টার আর্গুমেন্টই ১০০% কারেন্ট হতে পারে না। কারন প্রতিটা আর্গুমেন্টের সাথেই জীবনের উদ্দেশ্য জড়িত এবং সেটা যেহেতু সবার জন্য এক না-মতের ভিন্নতা থাকবেই।
ভারতের লিব্যারাল এবং রক্ষনশীল গোষ্ঠি -দুটোই অগণতান্ত্রিক-অর্ধশিক্ষিত। সংরক্ষনের বিরুদ্ধে লিখলে কাস্টিস্ট বলে ট্যাগাবে, ৪৯৮ এর মতন কালা আইনের বিরুদ্ধে লিখলে সেক্সিস্ট বলে ট্যাগাবে, মার্কেটের পক্ষে লিখলে নিওলিব্যারাল বলে ট্যাগাবে। একই ভাবে ভারতের কোন ব্যাপারে সমালোচনা করলে আপনি পাকিস্তানপন্থী। হিন্দু ধর্মের সমালোচনা করলে আপনি সিকুলার। ইসলামের সমালোচনা করলে আপনি ইসলামোফোবিক।
মুশকিল হচ্ছে বিরুদ্ধ পক্ষকে যারা এইভাবে ট্যাগাতে ভালোবাসে-আপনি নিশ্চিত ভাবে জানবেন, তাদের ঘটে কিস্যু নাই। ইস্যুভিত্তিক বিতর্ক করার ক্ষমতা নেই বলে ট্যাগাতে ভালোবাসে।
(২)
রোহিতের মৃত্যুতে রিসার্ভেশন বিতর্ক আবার সামনে আসছে-তার কুৎসিত রূপটাও দেখছি।
প্রথমেই লিখে রাখি আমি সংরক্ষনের পক্ষে। কিন্ত তা যেন হয় অর্থনৈতিক অবস্থানের পরিপেক্ষিতে। এস সি , এস টিদের সংরক্ষন থাকুক- কিন্ত অবশ্যই যেন তা হয় তাদের অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে। সংরক্ষনের মূল কারন পিছিয়ে পড়া শ্রেণীদের জন্য আপওয়ার্ড মোবিলিটি। সুতরাং শহরের প্রতিষ্ঠিত এস সিদের জন্য সংরক্ষন করে গ্রামের পিছিয়ে থাকা এস সিদের কি লাভ? আঙুল ফুলে কলাগাছ করা এই রিজার্ভেশন পলিশিতে আসলেই ত, গরীব দলিতদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটা বুঝতে কি পি এই চ ডি করতে হয়? আলটিমেটলি বর্তমানের এস সি পলিসি , দলিতদের মধ্যে বড়জোর 5% এর কাজে আসছে-যাদের টাকা আছে। বাকী ৯5% দলিত, গরীব-তাদের কি লাভ হচ্ছে এই পলিসিতে ?
ইনফ্যাক্ট এটাত নতুন কিছু না। ওবিসি রিজার্ভেশনের জন্য অর্থনৈতিক ক্রাইটেরিয়া চালু আছে। ২০১৫ সালের নিয়মে, যেসব ওবিসির হাউসহোল্ড ইনকাম ১৫ লাখের বেশী বা ক্লাস ওয়ান বা টু অফিসার-তারা রিজার্ভেশনের আওতাই আসে না। এই আইন এসসি দের জন্যও না আনার ত কিছু দেখি না।
আমি যেটা লিখছি-সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি কে জি বালকৃষ্ণান-তার একটি রায়ে একই কথা লিখেছেন ( ২০০৮) ঃ
“Though for the purpose of convenience, the list is based on caste, it cannot be said that backward class has been identified solely on the basis of caste. The only possible objection that could be agitated is that in many of the castes included in this list, there may be an affluent section (creamy layer) which cannot be included in the list of SEBCs.”
He added: “When socially and educationally backward classes are determined by giving importance to caste, it shall not be forgotten that a segment of that caste is economically advanced and they do not require the protection of reservation.”
যদিও এই রায় ছিল ওবিসিদের নিয়ে, এটাত দলিতদের জন্যও প্রযোজ্য।
এস সি , এস টির মধ্যে এই আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া শ্রেনীটিকে বাদ দেওয়া নিয়ে অনেক মামলা হয়েছে। কিন্ত দলিত শ্রেনী যে সত্যই পিছিয়ে আছে, তার সব থেকে বড় প্রমান এই যে প্রতিটা ক্ষেত্রে, দলিতদের মধ্যে ক্রিমি লেয়ারটা দুধের সর খাওয়ার ধান্দায় বাকী আসল গরীব দলিতদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে।
২০১৪ সালে রাজস্থান হাইকোর্টে এই নিয়ে পিটিশন মুভ করা হয়--সরকার জবাব দিক কেন ওবিসির ক্রাইটেরিয়া গুলো এস সি, এস টিদের মধ্যেও থাকবে না? কিন্ত সেক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে রাজনীতিই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০০৬ সালে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি জাস্টিস ওয়াই কে সাভরাওয়ালও সংবিধানের পরিপ্রেক্ষিতে একই নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্যসরকারগুলিকে ""It is made clear that even if the state has compelling reasons, the state will have to see that its reservation provision does not lead to excessiveness so as to breach the ceiling limit of 50 per cent or obliterate the creamy layer of extended reservation indefinitely,"
(৩)
এবার আসি দলিতদের বঞ্চনা, সোস্যাল আঊটকাস্টিং ইত্যাদি নিয়ে। যাদবপুরের এক অধ্যাপক, যিনি ক্লাসে পড়াতে পারেন না, আনন্দবাজারে অনেক কাঁদুনি গেয়েছেন-এস সি বলে তাকে অনেক বঞ্চনা চ্যালেঞ্জের শিকার হতে হয়েছে।এগুলো সত্য সন্দেহ নেই। অভিযোগগুলো ততোধিক ফালতু। আমার জানা এমন কেউ নেই-যারা কর্মক্ষেত্রে বা ছাত্র অবস্থায় বুলিং এর শিকার হন নি। কর্পরেট পলিটিক্স ত আরো মারাত্মক। সেখানে সবাই সবার পেছনে লাগে। আমি ত গ্রাম থেকে এসেছি। কলেজ লাইফে অনেক বন্ধুই আমার গ্রাম্যতা নিয়ে হাঁসি ঠাট্টা করেছে। ইংরেজি ভাষা জ্ঞান-সব ব্যাপারেই খোঁটা খেয়েছি। তাতে কি ছেঁড়া যায়? এর জন্যে কাউকে এস সি হতে হয় না। কে কি বলল তাতে কি যায় আসে? যে বক্তা মূর্খ, তার মূর্খামি দায়, তার নিজের। আমি ভারতীয় বলে এখানে সাদারা আমার পেছনে লাগে নি? তাতে কি যায় আসে? যারা পেছনে লেগেছে, অনেকে তারাই পববর্তী কালে আমার ভাল বন্ধু হয়েছে। যে কোম্পানীতেই গিয়েছি-অনেক সাদা লোকই প্রথমে পেছনে লেগেছে। কিন্ত আস্তে আস্তে প্রত্যেকেই আমি নিজের বৃত্তে এনেছি। কর্মক্ষেত্রে সন্মান অর্জন করতে হয়- রিজার্ভেশনের মাধ্যমে ওই ভাবে কাউকে সন্মান দেওয়া সম্ভব না। আমার এক রেড নেকের কথা মনে আছে। আমি ক্যালিফোর্নিয়াতে যখন প্রথম জয়েন করি, সে আমার বিরুদ্ধে আমাদের জার্মানির হেডকোয়াটারে নালিশ করেছিল। যাইহোক জার্মানরাও গাধা না। আস্তে আস্তে যেটা হল-লোকটা কাজ করত সেলসে-ও দেখলো-ওর সেলস বৃদ্ধি করতে, আমি খুব কাজের লোক! ফলে তার বাড়িতে এক সাথে বিয়ার খাওয়া থেকে শুরু করে, তার ডিভোর্স ঠেকানোর জন্য মাঠে নামতে হয়। এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিলাম আমরা। ধণতন্ত্র খুব দড়ের জিনিস-এখানে প্রতিটা সম্পর্কই স্বার্থের। ওই ভাবে কাস্টের কারনে কেই কাউকে পেছনে ফেলবে না।
তবে সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোতে জাত ফাতের সমস্যা থাকতেই পারে । কিন্ত মার্কেটের আগমনে, তা আস্তে আস্তে কেটে যেতে বাধ্য।
এবার বিবাহের প্রশ্নে আসি। অভিযোগ এস সিদের সাথে উচ্চবর্নের লোকেরা বিয়ে দিতে চায় না। এই অভিযোগ সঠিক। এর মূল কারন এরেঞ্জড মেরেজ। এই জন্য আমি আইন করে এরেঞ্জড মেরেজ তুলে দেওয়ার পক্ষে। এরেঞ্জড মেরেজ আরো অনেক কারনেই ক্ষতিকর-সেটা নিয়ে আগেই লিখেছি। কিন্ত তার জন্য চাকরিতে বড়লোক এস সিদের সংরক্ষন? কোন যুক্তিই যথেষ্ট না।
(৪)
বেসরকারি ক্ষেত্রে সংরক্ষনের প্রশ্ন উঠেছে। কারন আগামী দিনে সরকারি চাকরি আস্তে আস্তে অনেক কমে যাবে। সুতরাং এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
আমেরিকাতে গর্ভমেন্ট ঠিকাদার ( নন-মিলিটারী) দের ক্ষেত্রে কিছুটা সংরক্ষন চালু আছে অন্যভাবে। ওখানে প্রজেক্ট প্রপোজাল মুল্যায়নের সময় পয়েন্ট সিস্টেম থাকে-যে কোম্পানীর মালিকানা কাদের-তাদের মাইনরিটি স্টাটাস কি। এক্ষেত্রে হায়েস্ট স্টাটাস থেকে রেড ইন্ডিয়ান এবং এক্স মিলিটারিদের। কিন্ত তা হয় মালিকানার ভিত্তিতে। ফলে এই ডিসিতে পুরো সিস্টেমটাই রিগড। রেড ইন্ডিয়ানদের কোম্পানী সামনে রেখে, অন্যরা প্রজেক্ট তোলে। তাতে রেড ইন্ডিয়ান মালিকের লাভ-কাট মানি।
ভারতে সরকার সেরকম কিছু চালু করতেই পারে-তবে সিস্টেম পুরো দুদিনেই রিগড হয়ে যাবে।
বেসরকারি ক্ষেত্রে সরকার মোটেও ঠিক করতে পারে না-একজন কোম্পানী কাকে নেবে। প্রতিটা কোম্পানীর নিজস্ব স্ট্রাটেজি থাকে হায়ারিং এ। আমি নিজে মফঃশহর থেকে উঠে আসা গরীব ছেলে মেয়েদের পছন্দ করি বেশী। এই পক্ষপাতিত্ব যদি ডিসক্রিমিনেশন হয়, মেনে নিতে রাজী আছি। কারন ওটা আমার ব্যবসার কারনেই দরকার। আমার অভিজ্ঞতা বলে এই ছেলে মেয়েগুলি কাজের হয় বেশী।
তবে আমি মনে করি, ভারতের প্রোডিউসার ক্লাসগুলিকে উৎসাহ, সরকারি সাহায্য দেওয়া উচিত বেশী। এদের অনেকেই ওবিসি শ্রেনীর। চাষী, তাঁতি, কুমোর,ছুতোর-এদের জন্য ত সরকার কিছু করলো না-অথচ এরাই গ্রামীন অর্থনীতির ব্যকবোন।
তবে এদের ছেলে মেয়েদের সরকারি চাকরি দেওয়া, অর্থনীতির ক্ষতি করা। দরকার এদের ছেলেমেয়েদের জন্য স্কিল মিশনের, লোনের-যাতে এরা আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর দক্ষ হয়ে, লোনের মাধ্যমে বাপের কারখানাকেই উন্নত করতে পারে। ভারতের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কিন্ত সেই ধরনের পরিকল্পনা কই?
অথচ সংরক্ষনের নামে একটা শহুরে এস সি শ্রেনী ঘি খাবে-এটাই হচ্ছে এদের বক্তব্য। এবং এই অবিচারের বিরুদ্ধে বলতে গেলে আপনি হয়ে যাবেন কাস্টিস্ট।
No comments:
Post a Comment