Thursday, January 14, 2016

ডাক্তার এবং

ডঃ অভিষেক ঝাঁকে পেটানো কেন্দ্র করে যে পোষ্ট দিয়েছিলাম, তাতে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে যে জনরোষ টের পেলাম, তা রীতিমত ভয়বহ। অনেকেই মনে হল ডাক্তার পেটানোতে খুশী হয়েছে!! কি ভয়ংকর । একজন লিখেছে-আপনি কি জানেন পেশেন্ট হিসাবে ভোগার কি অসহ্য যন্ত্রনা? আরেক জন লিখেছেন-আপনি কি জানেন কোলকাতার ডাক্তাররা রুগীকে মুর্গী বলে?

  কোন সন্দেহ নেই শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের বাণিজ্যায়নের জন্য নার্সিং হোম এবং ডাক্তার নিয়ে লোকের অভিজ্ঞতা তিক্ত। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকারের মধ্যে না ফেলে যদি বাণিজ্যিক পন্য হিসাবে দেখা হয়-এই সমস্যাগুলো আসবে। কিন্ত তার জন্যে ডাক্তাররা কতটুকু দায়ী?  কিছু অসৎ ডাক্তার অবশ্যই আছে-কিন্ত সেটাত সব পেশাতেই আছে। তার জন্যে সব ডাক্তারকে পেটাতে হবে? এগুলোত সামাজিক ব্যধিতে পরিনত আজ।

 এবার আরেকটা মৌলিক প্রশ্নে আসি। অধিকাংশই মত প্রকাশ করেছেন, ডাক্তারদের কাজে তারা খুশী নন।

 এবার উলটো দিকটাও দেখা যাক।

 (১) আজকালকার দিনে সহজ কোন কারনে কেউ ডাক্তারের কাছে যায় না। যায় যখন সব ওষুধ ট্রাই করেও কিছু হচ্ছে না। মুশকিল হচ্ছে একজন রুগীকে সঠিক ভাবে ডায়াগনোজ করতে-যা যা টেস্ট দরকার বা ডাক্তারের যে সময় দেওয়া উচিত সেটা একজন ডাক্তার দেয় কি না। আমি যেটা দেখেছি, ভারতে ডাক্তারের সংখ্যা এত কম, একজন ডাক্তারকে এত রুগী দেখতে হয়-সেটা সম্ভব না।

 (২) দ্বিতীয় সমস্যা-ডাক্তার মানেই সমাধান-রুগী সুস্থ হবে-এই ধারনা ছাড়তে হবে। চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতি হয়েছে সন্দেহ নেই-কিন্ত এখনো তা শৈশবেই। একটা ওষুধ একজনের জন্য কী ভাবে কাজ করবে-তা নির্ভর করে সেই মানুষটির জেনেটিক গঠন, লাইফ স্টাইলের ওপরে। একজন ডাক্তার এখন যে ডাক্তারী করেন, তা অনেকটাই আন্দাজে-ট্রায়াল এন্ড এররে।  একটা প্রেসক্রিপশন আদৌ কাজ করবে কি না-তার জন্যে যে ডেটা বা রেকোমেন্ডেশন সিস্টেম দরকার-যা মানুষের জেনেটিক গঠন,  লোকটির পাস্ট হিস্ট্রি এবং লাইফস্টাইল জেনে কাজ করবে-সেটা এখনো আমেরিকাতেও গবেষনার পর্যায়ে আছে। যদ্দিন না মেডিকাল সায়েন্স ওই লেভেল না যাচ্ছে, একজন ডাক্তার তার অভিজ্ঞতা দিয়ে যা করা সম্ভব তাই করছেন। সেটা নাও কাজ করতে পারে। তার জন্যে হালার ডাক্তার বলাটা নেহাত মূর্খামি এবং অজ্ঞতা। মেডিক্যাল সায়েন্সের বর্তমান লিমিটেশন না বুঝলে মুশকিল আছে।

 (৩)  মেডিক্যাল সায়েন্স দ্রুত চেঞ্জ হচ্ছে। পাঁচ বছরে বদলে যাচ্ছে। ডাক্তারদের অনেকেই সেই চেঞ্জের সাথে নিজেদের আপডেট করেন না। তাদের আপডেট বলতে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির মেডিকেল রেপরা যা বোঝাচ্ছেন।  ওই ভাবে ত হয় না। মুশকিল হচ্ছে তারা নিজেদের আপডেট করবেন না ই বা কি করে?  কোলকাতায় ত শুনলাম অর্থাভাবে ভালো জার্নাল আসাও বন্ধ। এই ভাবে কি কিছু হয় না কি?

 (৪) আরো একটা বিরাট চেঞ্জ আসছে মেডিক্যাল সায়েন্সে। সেটা হচ্ছে এখন আমাদের সব "রান টু ফেলিউর" মডেল। মানে রুগীর রোগ হলে-তবে ডাক্তারের কাছে আসা। কিন্ত রোগ ত এমনি এমনি হয় না-তার ও পূর্বলক্ষণ থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পূর্বলক্ষন পর্যাতে রোগ ধরতে পারলে চিকিৎসার খরচ কমে। আগে থেকেই রোগটা আটকানো যায়। ভবিষ্যতের যে মেডিক্যাল আওটি সিস্টেম আসছে, তাতে একজন লোক অন্তত ১০ টা থেকে ২০টা সেন্সর তার দেহেই প্লাগ ইন করে ঘুরবে-এবং তার কিছু হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আগেই জেনে যাবে। এতে ডাক্তারদের কাজটা অনেক সহজ হবে।

  মোদ্দা কথা ডাক্তার মানেই রোগ সেরে যাবে- এই ধরনের এটিচুড বদলাতে হবে। মেডিক্যাল সায়েন্সের বর্তমান লিমিটেশন না বুঝলে মুশকিল ।

 প্রশ্ন হচ্ছে আমি ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ডাক্তারদের হয়ে বলছি কেন ?  এমন ভাবার কারন নেই আমি ভুক্তভোগী নই। আমার মার, বাবার ভুল চিকিৎসা হয়েছে। আমেরিকাতে আমার স্ত্রীর ও ভুল চিকিৎসা হয়েছে।  যদিও আমি মেডিক্যাল লাইনে খুব কমই জানি-তবুও আই ও টি ফিল্ডে পেশাগত কারনে, মেডিক্যাল সায়েন্সের ভবিষ্যত এবং বর্তমান গবেষনাতে কিছু পড়াশোনা করে এটাই বুঝেছি-এই ডায়াগনোসিসটা যদিও মোটামুটি করা যায়, প্রেসক্রিপশনটা এখনো হাতুড়ে পর্যায়েই আছে। যদ্দিনা মেডিক্যাল ডেটাসায়েন্স এবং আই ও টির উন্নতি না হচ্ছে, ডাক্তারদের কাছ থেকে খুব বেশী  নির্ভুল প্রেসক্রিপশন আশা করাটাই অন্যায়।  ওটা সম্ভবই না। যদি কোন ডাক্তার নিজের প্রেসক্রিপশন নিয়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী থাকেন-তিনিও অজ্ঞ-আর যে রুগী ভাবছে  প্রেসক্রিপশন মানেই রোগ সেরে যাবে সেও অজ্ঞ। এই অজ্ঞতা যত দ্রুত দূর হয় তত সবার মঙ্গল। 

No comments: