আমেরিকান লেখক উইল ডুরান্টের হিরোস অব হিস্ট্রি বা ইতিহাসের নায়ক বলে একটা বিখ্যাত বই আছে। বইটিতে ইতিহাসের সকল মহানায়কদের জীবন দর্শন এবং ইতিহাস পাবেন। ডুরান্ট দর্শনের ইতিহাস লিখে বিশ্বখ্যাত হন।
বইটির মুখবন্ধে ডুরান্ট রবীন্দ্রনাথের ওরা কাজ করে থেকে কবিতার লাইন গুলি তুলে দেন। উনি নিজে ছিলেন প্রগতিশীল বামপন্থী। ওই বইতে স্টালিন লেনিন থেকে খীষ্ট, মহম্মদ সবার সমালোচনা পাবেন। উনি লিখেছেন, মানুষের মধ্যে যদ্দিন এই ঐতিহাসিক বীরপূজো চালু থাকবে-তদ্দিন মানুষ সঠিক ইতিহাসের সন্ধান পাবে না। কারন ইতিহাস তৈরী করে সাধারন মানুষ, বিজ্ঞানী শিল্পীরা।
এক সাক্ষাতকারে ডুরান্টকে একজন জিজ্ঞেস করলেন-আছা উনবিংশ শতাব্দিতে কোন ব্যক্তিকে আপনি প্রকৃত হিরো মনে করেন? ডুরান্ট বল্লেন এডিসন। কারন ওর আবিস্কৃত বিদ্যুতেই পৃথিবী পাল্টেছে। সাংবাদিকটি একটু ঢোঁক গিলে বললো-আচ্ছা তাহলে চিন্তার জগতে নিশ্চয় আপনি কার্ল মার্ক্সের নাম নেবেন? ডুরান্ট বল্লেন না আমি ডারুইনের নাম নেব। কারন মার্ক্সের থিসিস পুরোটাই বিবর্তনের ওপরে দাঁড়িয়ে-আর সেই ধারনার বৈজ্ঞানিক জনকই আসল ঐতিহাসিক ব্যক্তি।
এই জন্য আমেরিকান ইতিহাসে জীবনী গ্রন্থে বীরপূজো থেকে বাচ্চাদের রেহাই দেওয়া হয়। আমার ছেলেকে গত এক সপ্তাহ ধরে আমেরিকান সংবিধানের জনক থমাস জেফারসনের জীবনী গ্রন্থ পড়াচ্ছি। সেই বইতে পদে পদে জেফারসনের সমালোচনা। যেমন উনি সংবিধানে লিখলেন সব মানুষ সমান-কিন্ত যখন প্রেসিডেন্ট হলেন, রেড ইন্ডিয়ানদের নিধন করার জন্য ডিক্রি জারি করেছিলেন। নিজের দাসের ও মুক্তি দেন নি।
আমার বাবাও আমাকে সেই ক্লাস ফোর থেকে নেতাজির বই দিয়েছে। বাড়িতে কম বেশী ১০ টা নেতাজির বই ছিল। একটা বইতেও পাই নি নেতাজি আন্দামান নিকোরর দ্বীপপুঞ্জে জাপানীদের খুন ধর্ষন ঠেকাতে সম্পূর্ন ব্যর্থ ছিলেন!! কারন উনি উনার প্রভুদের বিরুদ্ধে যেতে পারেন নি স্ট্রাটেজীক কারনে! ইন্টারনেটের মাধ্যমেই সেটা জানতে হয়েছে।
বীরপূজো বাজে জিনিস। দেশপ্রেমিকদের নিয়ে চর্চা হোক। আরো বেশী হোক। কিন্ত একজন মানুষ মানুষই। তার দোষ, দুর্বলতা থাকবে না-তা অসম্ভব। তাকে ভগবান হিসাবে পূজো করটা আসলেই এক ধরনের রাজনৈতিক খেলা। এবং তাতে জনগন আরো বেশী করে রাজনীতির বোরেতে পরিণত হয়। নেতাজি পূজো নয়, তাকে মানুষ হিসাবেই মুল্যায়ন করা হৌক।
No comments:
Post a Comment