Friday, January 29, 2016

স্মার্ট সিটি- পশ্চিম বাংলা নেই

(১)
ভারত সরকার ১০০ টি শহরকে স্মার্ট সিটি প্রোজেক্টে আনতে চাইছে। এর মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ২০ টি শহরকে তারা  বেছে নিয়েছে প্রথম ধাপে।  টোটাল ৫৪,০০০ কোটির ইনভেস্টমেন্ট। প্রথম কুড়িটা শহরের মধ্যে পশ্চিম বঙ্গের কোন শহর নেই।

  আমি মোটামুটি বুঝছে চাইছি, ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে এটা কতটা হাইপড, কতটা কার্যকরী। প্রথম কুড়িটা শহরের মধ্যে না থাকার জন্য পশ্চিম বঙ্গের কি ক্ষতি ।


(২)
 স্মার্ট সিটি বলতে কি বোঝায় সেটা বোঝার চেষ্টা করি আগে। আই ট্রিপলি , ভারত সরকার, ইউ এন, আমেরিকা সর্বত্র-স্মার্ট সিটির সংজ্ঞা আলাদা বা তেমন কোন সংজ্ঞা নেই। মোদ্দা কথা হচ্ছে এমন শহরের পরিকাঠামো হবে সেন্সর নির্ভর-যাতে ট্রাফিক কনট্রোল, দূষন কন্ত্রোল , সরকারি কাজকর্ম, গারবেজ ডিসপোজাল, ড্রেনেজ সিস্টেম, স্ট্রিট লাইট-সব কিছুতেই সেন্সর নির্ভর অটোমেশন থাকবে। এই পুরো সেন্সর নির্ভর ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেমকে পপুলার টার্মে আই ও টী বা ইন্টারনেট ওব থিংস বলা হয়।


 মুশকিল হচ্ছে এর কতটা বাস্তব-কতটা সত্যি? স্মল স্কেলে সিউল, হংকং, ক্যান্সাস সিটি অনেক শহরেই স্মার্ট সিটি নিয়ে পরীক্ষা হয়েছে। কিন্ত অনেক কম পরিসরে-যেমন সিওলে ৩০০,০০০ স্কোয়ার ফিটের ওপরে শহরের দুটো আই টি পার্কে এটা করা হয়েছে। যা শহরের মোট আয়তনের ১%  
 হবে কি না সন্দেহ।

 এই খানেই প্রশ্ন ওঠে এটা কতটা হাইপ-কতটা ট্যাক্স পেয়ারের টাকা নষ্ট।  এই টাকাটা এখানে ব্যয় করা যুক্তি সঙ্গত কি না।

 প্রথমত বলে নেওয়া ভাল, হাইপ কিছুটা আছে। কারন বর্তমানে প্রযুক্তির যা অবস্থা, তাতে একটা শহরের খুব সামান্য অংশই হয়ত স্মার্ট করা সম্ভব হবে। কিন্ত যদি সঠিক ভাবে প্ল্যান করা যায়-তাহলে এই লিমিডেট বাজেটেও অনেক কিছু করা সম্ভব, যা ১০০% শহরবাসীর কাজে লাগতে পারে।

 এবার স্মার্ট সিটির প্রযুক্তি নিয়ে কিছু বলি। সব কিছুই দাঁড়িয়ে আছে যে প্রচুর সস্তার ওয়ারলেস সেন্সর লাগিয়ে ডেটা হল করে স্মার্ট ডিসিশন এবং কন্ত্রোল হবে।  মুশকিল হচ্ছে ওই সস্তার সেন্সরের জায়গাটি ব্যথার। এমনিতে সিঙ্গল সিলিকন বা সেন্সর অন চিপ ( বা সক বলে) এর দৌলতে সেন্সর ইলেকট্রনিক্স খুব সস্তা। কিন্ত সেন্সরে সব থেকে ব্যথার জায়গাটা হল হাউসিং বা মাউন্টিং। এটার পেছনে প্রচুর খরচ যায়।  এই এরিয়াটা ফার্টাইল। প্রতিদিন কিছু না কিছু নতুন প্রযুক্তি আসছে। এছাড়াও সেন্সর ডেটা থেকে ডিশিসন নেওয়াটা সহজ হলেও , সেই নিয়ে কোন কিছু কন্ত্রোল করা এখনো চাপের।

 কিন্ত প্রযুক্তি মানেই প্রতিদিন কিছু না কিছু নতুন আসছে। আজ যা সমস্যা কাল নাও হতে পারে

 (৩)
 ভারতে স্মার্ট সিটি প্রকল্প একটা বড় ব্যপার এটা বুঝলাম ব্যঙ্গালোর আই ও টি নেক্সট ২০১৫।  অনেকগুলো সেশন ছিল -সরকারি কর্তা, আই বিএমের লোকজন প্রচুর স্লাইড দেখাচ্ছিল । এগুলো অবশ্য  সবই প্রায় টোকা-যা বুঝালাম এরাও হাইপেই চলছে। তবে আশার কথা যে অনেক গুলো স্টার্টাপ তৈরী হয়েছে ব্যাঙ্গালোরে যারা বেশ কিছু ফোকাসড এরিয়াতে কাজ করছে। যেমন একটা স্টার্টাপ সিটি লাইটিং নিয়ে কাজ করছে-কি করে এনার্জি সেভ করা যায় বা লাইটগুলোকে বেশীদিন টেকানো যায়। ইনফ্যাক্ট ওদেরকে কিছু সেন্সর আমরা দিচ্ছিও পাইলটের জন্য। আরেকটা কোম্পানী মিউনিসিপ্যাল ওয়েস্ট ডিসপোজাল নিয়ে কাজ করছে।  ভরসার জায়গা এইটাই যে এই ৫৪,০০০ কোটি টাকার ইনভেস্টেমেন্টের জন্য ভারতেই অনেক আধুনিক কোম্পানী তৈরী হবে-  যারা ভারতের সমস্যাগুলি নিয়ে কাজ করবে। এর থেকে ভাল কিছু হয় না। সুতরাং কিছুটা হাইপ হলেও, এর অনেক ভালো দিক ও আছে।

  স্মার্ট সিটি প্রকল্প সফল হবে যদি প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা বুঝে-কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ন দিকে ফোকাস রাখা যায়। যেমন স্ট্রিট লাইটিং, ট্রাফিক কন্ট্রোল বা পল্যুউশন কন্ট্রোল।

(৪)
 পশ্চিম বঙ্গে কোন একটা শহরে শুরু হলে এটা ভাল হত এই কারনে যে এতে কিছু ছেলে চাকরি পেত। বিশেষত সেন্সর মাউন্টিং এর মতন মেকানিক্যাল কাজের জন্য বেশ কিছু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের চাকরির সুযোগ হত। এছাড়াও পশ্চিম বঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয় গুলি কিছু প্রোজেক্ট করার সুযোগ হারালেন।

 অবশ্যই পশ্চিম বঙ্গের কিছু বামেরা কুতর্ক জুরেছে-এসব করে কি হবে-মিড ডে মিলে বা নেগ্রাতে টাকা ঢালা হৌক।  এগুলো অজ্ঞানের  বিলাপ। দারিদ্রের মূল কারন অপচয় এবং অপবন্টন-সাথে কোরাপশন। এগুলি ঠিক করার শ্রেষ্ঠ উপায়  আওটি। যেমন ধরুন চাষের খরচ বাড়ার মূল কারন সেচের জলের অপব্যবহার। আইওটি প্রযুক্তির মাধ্যমে মাটীর আদ্রতা ট্রাক করে স্পেনে ওরা সেচের জলের পরিমান ৯০% কমাতে পেরেছে।  এতে ভারতে শুধু টাকা এবং ইলেক্ট্রিসিটিই বাঁচত না- ভূর্গভস্থ  জলের হালত ও ভাল থাকত।

 স্মার্ট সিটির থেকেও ভারতে বেশি দরকার স্মার্ট কৃষি। তবে এটা নিয়েও ভারত সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও ভারতে জমির পরিমান এত কম- সমবায় পদ্ধতি না শুরু হলে ভারতের কৃষিকে আধুনিক করা খুব মুশকিল। যেমন ধরুন আমেরিকাতে দেখেছি জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন মেশিন দিয়েই  ২০০ একর জমিতে একদিনে বীচ  রোপন করে দিচ্ছে। ভারতে ওই কাজ করতে নুন্যতম ৫০০ ম্যান ডে লাগবে-খরচ প্রায় ১ লাখ টাকার বেশী। ফলে ভারতে কৃষিজ ফসলের দাম উর্ধমুখি। এবং তাতেও চাষিরা আত্মহত্যা করছে-কারন চাষের খরচ এত বেশী যে ফসলে দাম একটু বাড়াতে কোন লাভই নেই। এক্ষেত্রে ভারতের সামনে একমাত্র সমাধান সমবায় এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার-যাতে অনেক কম খরচে বেশী ফসল হবে। চাষীদের জন্য মায়াকান্না কেঁদেত লাভ নেই। ফসলের দাম বেশী হলে, আপনারাই চেঁচাবেন। সুতরাং একমাত্র সমাধান কি করে সমবায় এবং উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষের খরচ  ৯০% কমানো যায়। এতে পরিবেশ ও বাঁচবে।  এবং এই ৯০% রিডাকশন সম্ভব-যদি সঠিক পরিকল্পনা নেওয়া যায়।

 (৫)
  পশ্চিম বঙ্গের কোন শহর প্রথম কুড়িটা প্রোজেক্টে নেই-কারন তাদের প্রোজেক্ট প্রপোজাল ভাল হয় নি। রাজ্যের কর্ম সংস্কৃতির যা হাল, তাতে এতটা আশা করা বোধ হয় অন্যায়।  সুতরাং এটা প্রশাসনিক ব্যর্থতা হিসাবেই দেখতে হবে।

  এই ব্যর্থতা থেকে বেড়োতে-রাজ্য সরকার এই লাইনের এক্সপার্ট দিয়ে একটা কমিটি তৈরী করুক-তাদের তত্ত্বাবধানে প্রপোজাল তৈরী হৌক।


 


 




Monday, January 25, 2016

ট্যাগানো-চ্যাংরামো এবং সংরক্ষনের অবান্তর গণতন্ত্র

(১)
  গণতন্ত্রের প্রথম শর্তই হচ্ছে ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা। প্রত্যেকের জীবনের উদ্দেশ্য কি এক হবে? কখনোই না। সুতরাং মতের ভিন্নতা থাকবে। এবং রামধেনুর মতন এই ডাইভার্সিটিকে ধারন করতে না পারলে কোন গণতন্ত্রই সমৃদ্ধ হবে না।

   ফেসবুকে যেদিকেই দেখি-সর্বত্র অসহিষ্ণুতা।  সংরক্ষনের বিরুদ্ধে মত রাখলেই আপনি কাস্টিস্ট। যেন যারা সংরক্ষনের পক্ষে, তাদের যুক্তিই ১০০% ঠিক। এগুলো ভুল ভাল ধারনা। কোন আর্গুমেন্ট বা কাউন্টার আর্গুমেন্টই ১০০% কারেন্ট হতে পারে না। কারন প্রতিটা আর্গুমেন্টের সাথেই জীবনের উদ্দেশ্য জড়িত এবং সেটা যেহেতু সবার জন্য এক না-মতের ভিন্নতা থাকবেই।

  ভারতের লিব্যারাল এবং রক্ষনশীল গোষ্ঠি -দুটোই অগণতান্ত্রিক-অর্ধশিক্ষিত। সংরক্ষনের বিরুদ্ধে লিখলে কাস্টিস্ট বলে ট্যাগাবে, ৪৯৮ এর মতন কালা আইনের বিরুদ্ধে লিখলে সেক্সিস্ট বলে ট্যাগাবে, মার্কেটের পক্ষে লিখলে নিওলিব্যারাল বলে ট্যাগাবে। একই ভাবে ভারতের কোন ব্যাপারে সমালোচনা করলে আপনি পাকিস্তানপন্থী।  হিন্দু ধর্মের সমালোচনা করলে আপনি সিকুলার। ইসলামের সমালোচনা করলে আপনি ইসলামোফোবিক।

  মুশকিল হচ্ছে বিরুদ্ধ পক্ষকে যারা এইভাবে ট্যাগাতে ভালোবাসে-আপনি নিশ্চিত ভাবে জানবেন, তাদের ঘটে কিস্যু নাই। ইস্যুভিত্তিক বিতর্ক করার ক্ষমতা নেই বলে ট্যাগাতে ভালোবাসে।

(২)
 রোহিতের মৃত্যুতে রিসার্ভেশন বিতর্ক আবার সামনে আসছে-তার কুৎসিত রূপটাও দেখছি।

  প্রথমেই লিখে রাখি আমি সংরক্ষনের পক্ষে। কিন্ত তা যেন হয় অর্থনৈতিক অবস্থানের পরিপেক্ষিতে। এস সি , এস টিদের সংরক্ষন থাকুক- কিন্ত অবশ্যই যেন তা হয় তাদের অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে। সংরক্ষনের মূল কারন পিছিয়ে পড়া শ্রেণীদের জন্য আপওয়ার্ড মোবিলিটি। সুতরাং শহরের প্রতিষ্ঠিত এস সিদের জন্য সংরক্ষন করে গ্রামের পিছিয়ে থাকা এস সিদের কি লাভ?  আঙুল ফুলে কলাগাছ করা এই রিজার্ভেশন পলিশিতে আসলেই ত,  গরীব দলিতদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটা বুঝতে কি পি এই চ ডি করতে হয়? আলটিমেটলি বর্তমানের এস সি পলিসি , দলিতদের মধ্যে বড়জোর 5% এর কাজে আসছে-যাদের টাকা আছে। বাকী ৯5% দলিত, গরীব-তাদের কি লাভ হচ্ছে এই পলিসিতে ?

   ইনফ্যাক্ট এটাত নতুন কিছু না। ওবিসি রিজার্ভেশনের জন্য অর্থনৈতিক ক্রাইটেরিয়া চালু আছে। ২০১৫ সালের নিয়মে, যেসব ওবিসির হাউসহোল্ড ইনকাম ১৫ লাখের বেশী বা ক্লাস ওয়ান বা টু অফিসার-তারা রিজার্ভেশনের আওতাই আসে না। এই আইন এসসি দের জন্যও না আনার ত কিছু দেখি না।

  আমি যেটা লিখছি-সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি কে জি বালকৃষ্ণান-তার একটি রায়ে একই কথা লিখেছেন ( ২০০৮) ঃ

  “Though for the purpose of convenience, the list is based on caste, it cannot be said that backward class has been identified solely on the basis of caste. The only possible objection that could be agitated is that in many of the castes included in this list, there may be an affluent section (creamy layer) which cannot be included in the list of SEBCs.”
He added: “When socially and educationally backward classes are determined by giving importance to caste, it shall not be forgotten that a segment of that caste is economically advanced and they do not require the protection of reservation.”

 যদিও এই রায় ছিল ওবিসিদের নিয়ে, এটাত দলিতদের জন্যও  প্রযোজ্য। 

  এস সি , এস টির মধ্যে এই আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া শ্রেনীটিকে বাদ দেওয়া নিয়ে অনেক মামলা হয়েছে। কিন্ত দলিত শ্রেনী যে সত্যই পিছিয়ে আছে, তার সব থেকে বড় প্রমান এই যে প্রতিটা ক্ষেত্রে, দলিতদের মধ্যে ক্রিমি লেয়ারটা দুধের সর খাওয়ার ধান্দায় বাকী আসল গরীব দলিতদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে।

 ২০১৪ সালে রাজস্থান হাইকোর্টে এই নিয়ে পিটিশন মুভ করা হয়--সরকার জবাব দিক কেন ওবিসির ক্রাইটেরিয়া গুলো এস সি, এস টিদের মধ্যেও থাকবে না?  কিন্ত সেক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে রাজনীতিই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।  ২০০৬ সালে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি জাস্টিস ওয়াই কে সাভরাওয়ালও সংবিধানের পরিপ্রেক্ষিতে একই নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্যসরকারগুলিকে ""It is made clear that even if the state has compelling reasons, the state will have to see that its reservation provision does not lead to excessiveness so as to breach the ceiling limit of 50 per cent or obliterate the creamy layer of extended reservation indefinitely,"

  (৩)
   এবার আসি দলিতদের বঞ্চনা, সোস্যাল আঊটকাস্টিং ইত্যাদি নিয়ে। যাদবপুরের এক  অধ্যাপক, যিনি ক্লাসে পড়াতে পারেন না, আনন্দবাজারে অনেক কাঁদুনি গেয়েছেন-এস সি বলে তাকে অনেক বঞ্চনা চ্যালেঞ্জের শিকার হতে হয়েছে।

 এগুলো সত্য সন্দেহ নেই। অভিযোগগুলো ততোধিক ফালতু। আমার জানা এমন কেউ নেই-যারা কর্মক্ষেত্রে বা ছাত্র অবস্থায় বুলিং এর শিকার হন নি। কর্পরেট পলিটিক্স ত আরো মারাত্মক। সেখানে সবাই সবার পেছনে লাগে।  আমি ত গ্রাম থেকে এসেছি।  কলেজ লাইফে অনেক বন্ধুই আমার গ্রাম্যতা নিয়ে হাঁসি ঠাট্টা করেছে। ইংরেজি ভাষা জ্ঞান-সব ব্যাপারেই খোঁটা খেয়েছি। তাতে কি ছেঁড়া যায়? এর জন্যে কাউকে এস সি হতে হয় না। কে কি বলল তাতে কি যায় আসে? যে বক্তা মূর্খ, তার মূর্খামি দায়, তার নিজের। আমি ভারতীয় বলে এখানে সাদারা আমার পেছনে লাগে নি? তাতে কি যায় আসে?  যারা পেছনে লেগেছে, অনেকে তারাই পববর্তী কালে আমার ভাল বন্ধু হয়েছে। যে কোম্পানীতেই গিয়েছি-অনেক সাদা লোকই প্রথমে পেছনে লেগেছে।  কিন্ত আস্তে আস্তে প্রত্যেকেই আমি নিজের বৃত্তে এনেছি।  কর্মক্ষেত্রে সন্মান  অর্জন করতে হয়- রিজার্ভেশনের মাধ্যমে ওই ভাবে কাউকে সন্মান দেওয়া সম্ভব না। আমার এক রেড নেকের কথা মনে আছে। আমি ক্যালিফোর্নিয়াতে যখন  প্রথম জয়েন করি, সে আমার বিরুদ্ধে আমাদের জার্মানির হেডকোয়াটারে নালিশ করেছিল। যাইহোক জার্মানরাও গাধা না। আস্তে আস্তে যেটা হল-লোকটা কাজ করত সেলসে-ও দেখলো-ওর সেলস বৃদ্ধি করতে, আমি খুব কাজের লোক! ফলে  তার বাড়িতে এক সাথে বিয়ার খাওয়া থেকে শুরু করে, তার ডিভোর্স ঠেকানোর জন্য মাঠে নামতে হয়। এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিলাম আমরা। ধণতন্ত্র খুব দড়ের জিনিস-এখানে প্রতিটা সম্পর্কই স্বার্থের। ওই ভাবে কাস্টের কারনে কেই কাউকে পেছনে ফেলবে না।

  তবে সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোতে জাত ফাতের সমস্যা থাকতেই পারে । কিন্ত মার্কেটের আগমনে, তা আস্তে আস্তে কেটে যেতে বাধ্য।

 এবার বিবাহের প্রশ্নে আসি। অভিযোগ এস সিদের সাথে  উচ্চবর্নের লোকেরা বিয়ে দিতে চায় না। এই অভিযোগ সঠিক। এর মূল কারন এরেঞ্জড মেরেজ। এই জন্য আমি আইন করে এরেঞ্জড মেরেজ তুলে দেওয়ার পক্ষে।  এরেঞ্জড মেরেজ আরো অনেক কারনেই ক্ষতিকর-সেটা নিয়ে আগেই লিখেছি। কিন্ত তার জন্য চাকরিতে বড়লোক এস সিদের সংরক্ষন?  কোন যুক্তিই যথেষ্ট না।

 (৪)
 বেসরকারি ক্ষেত্রে সংরক্ষনের প্রশ্ন উঠেছে। কারন আগামী দিনে সরকারি চাকরি আস্তে আস্তে অনেক কমে যাবে। সুতরাং এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

 আমেরিকাতে গর্ভমেন্ট ঠিকাদার ( নন-মিলিটারী) দের ক্ষেত্রে কিছুটা সংরক্ষন চালু আছে অন্যভাবে। ওখানে প্রজেক্ট প্রপোজাল মুল্যায়নের সময় পয়েন্ট সিস্টেম থাকে-যে কোম্পানীর মালিকানা কাদের-তাদের মাইনরিটি স্টাটাস কি। এক্ষেত্রে হায়েস্ট স্টাটাস থেকে রেড ইন্ডিয়ান এবং এক্স মিলিটারিদের। কিন্ত তা হয় মালিকানার ভিত্তিতে। ফলে এই ডিসিতে পুরো সিস্টেমটাই  রিগড। রেড ইন্ডিয়ানদের কোম্পানী সামনে রেখে, অন্যরা প্রজেক্ট তোলে। তাতে রেড ইন্ডিয়ান মালিকের লাভ-কাট মানি।

 ভারতে সরকার সেরকম কিছু চালু করতেই পারে-তবে সিস্টেম পুরো দুদিনেই রিগড হয়ে যাবে।

 বেসরকারি ক্ষেত্রে সরকার মোটেও ঠিক করতে পারে না-একজন কোম্পানী কাকে নেবে। প্রতিটা কোম্পানীর নিজস্ব স্ট্রাটেজি থাকে হায়ারিং এ।  আমি নিজে মফঃশহর থেকে উঠে আসা গরীব ছেলে মেয়েদের পছন্দ করি বেশী। এই পক্ষপাতিত্ব যদি ডিসক্রিমিনেশন হয়, মেনে নিতে রাজী আছি।  কারন ওটা আমার ব্যবসার কারনেই দরকার। আমার অভিজ্ঞতা বলে এই ছেলে মেয়েগুলি কাজের হয় বেশী।

 তবে আমি মনে করি, ভারতের প্রোডিউসার ক্লাসগুলিকে উৎসাহ, সরকারি সাহায্য দেওয়া উচিত বেশী।  এদের অনেকেই ওবিসি শ্রেনীর। চাষী, তাঁতি, কুমোর,ছুতোর-এদের জন্য ত সরকার কিছু করলো না-অথচ এরাই গ্রামীন অর্থনীতির ব্যকবোন।
 
 তবে এদের ছেলে মেয়েদের সরকারি চাকরি দেওয়া, অর্থনীতির ক্ষতি করা। দরকার এদের ছেলেমেয়েদের জন্য স্কিল মিশনের, লোনের-যাতে এরা আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর দক্ষ হয়ে, লোনের মাধ্যমে বাপের কারখানাকেই উন্নত করতে পারে।  ভারতের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কিন্ত সেই ধরনের পরিকল্পনা কই?

 অথচ সংরক্ষনের নামে একটা শহুরে এস সি শ্রেনী ঘি খাবে-এটাই হচ্ছে এদের বক্তব্য। এবং এই অবিচারের বিরুদ্ধে বলতে গেলে আপনি হয়ে যাবেন কাস্টিস্ট।






Saturday, January 23, 2016

ঐতিহাসিক বীরপূজো বন্ধ হৌক

আমেরিকান লেখক উইল ডুরান্টের হিরোস অব হিস্ট্রি বা ইতিহাসের নায়ক বলে একটা বিখ্যাত বই আছে। বইটিতে ইতিহাসের সকল মহানায়কদের জীবন দর্শন এবং ইতিহাস পাবেন। ডুরান্ট দর্শনের ইতিহাস লিখে বিশ্বখ্যাত হন।

বইটির মুখবন্ধে ডুরান্ট রবীন্দ্রনাথের ওরা কাজ করে থেকে কবিতার লাইন গুলি তুলে দেন। উনি নিজে ছিলেন প্রগতিশীল বামপন্থী। ওই বইতে স্টালিন লেনিন থেকে খীষ্ট, মহম্মদ সবার সমালোচনা পাবেন। উনি লিখেছেন, মানুষের মধ্যে যদ্দিন এই ঐতিহাসিক বীরপূজো চালু থাকবে-তদ্দিন মানুষ সঠিক ইতিহাসের সন্ধান পাবে না। কারন ইতিহাস তৈরী করে সাধারন মানুষ, বিজ্ঞানী শিল্পীরা।

এক সাক্ষাতকারে ডুরান্টকে একজন জিজ্ঞেস করলেন-আছা উনবিংশ শতাব্দিতে কোন ব্যক্তিকে আপনি প্রকৃত হিরো মনে করেন? ডুরান্ট বল্লেন এডিসন। কারন ওর আবিস্কৃত বিদ্যুতেই পৃথিবী পাল্টেছে। সাংবাদিকটি একটু ঢোঁক গিলে বললো-আচ্ছা তাহলে চিন্তার জগতে নিশ্চয় আপনি কার্ল মার্ক্সের নাম নেবেন? ডুরান্ট বল্লেন না আমি ডারুইনের নাম নেব। কারন মার্ক্সের থিসিস পুরোটাই বিবর্তনের ওপরে দাঁড়িয়ে-আর সেই ধারনার বৈজ্ঞানিক জনকই আসল ঐতিহাসিক ব্যক্তি।

এই জন্য আমেরিকান ইতিহাসে জীবনী গ্রন্থে বীরপূজো থেকে বাচ্চাদের রেহাই দেওয়া হয়। আমার ছেলেকে গত এক সপ্তাহ ধরে আমেরিকান সংবিধানের জনক থমাস জেফারসনের জীবনী গ্রন্থ পড়াচ্ছি। সেই বইতে পদে পদে জেফারসনের সমালোচনা। যেমন উনি সংবিধানে লিখলেন সব মানুষ সমান-কিন্ত যখন প্রেসিডেন্ট হলেন, রেড ইন্ডিয়ানদের নিধন করার জন্য ডিক্রি জারি করেছিলেন। নিজের দাসের ও মুক্তি দেন নি।

আমার বাবাও আমাকে সেই ক্লাস ফোর থেকে নেতাজির বই দিয়েছে। বাড়িতে কম বেশী ১০ টা নেতাজির বই ছিল। একটা বইতেও পাই নি নেতাজি আন্দামান নিকোরর দ্বীপপুঞ্জে জাপানীদের খুন ধর্ষন ঠেকাতে সম্পূর্ন ব্যর্থ ছিলেন!! কারন উনি উনার প্রভুদের বিরুদ্ধে যেতে পারেন নি স্ট্রাটেজীক কারনে! ইন্টারনেটের মাধ্যমেই সেটা জানতে হয়েছে।

বীরপূজো বাজে জিনিস। দেশপ্রেমিকদের নিয়ে চর্চা হোক। আরো বেশী হোক। কিন্ত একজন মানুষ মানুষই। তার দোষ, দুর্বলতা থাকবে না-তা অসম্ভব। তাকে ভগবান হিসাবে পূজো করটা আসলেই এক ধরনের রাজনৈতিক খেলা। এবং তাতে জনগন আরো বেশী করে রাজনীতির বোরেতে পরিণত হয়। নেতাজি পূজো নয়, তাকে মানুষ হিসাবেই মুল্যায়ন করা হৌক।

Thursday, January 21, 2016

দলিত রাজনীতি এবং বর্ণবাদের উপকথা

http://biplabbangla.blogspot.com/2016/01/blog-post_21.html
(১)
  রোহিত ভেমুলার মৃত্যুতে ভারতের জাতপাতের রাজনীতি উত্তাল । আরো খোলসা করে লিখলে, ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে গেছে সব রাজনৈতিক পার্টি।

     প্রশ্ন হচ্ছে ভারতের এই দলিত শ্রেনীটির উৎপত্তি কোথায় ?  ব্রাহ্মণ্যবাদ, ব্যাদে আছে-অনেক কিছুই বলা যায়। কিন্ত এটাও সত্য পৃথিবীর সব দেশের ইতিহাসেই দলিতরা ছিল-এখনো আছে। খোদ আমেরিকাতেই কালোদের স্থান, ভারতের দলিতদের মতন। শুদ্রদের অস্তিত্বের কারন মনুবাদি হিন্দুধর্ম-এমন মনে করাটা সরলীকরন। কারন এই দাসশ্রেনীর অস্তিত্ব ইতিহাস জুরে পৃথিবীর সকল দেশে । শুধু ভারতেই এটার ওপর ধর্মীয় সীলমোহর মারা আছে।  সুতরাং এই বর্ণবাদের একটা সঠিক ঐতিহাসিক নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষন দরকার। কেন কোন দেশে দলিত বা বর্ণবাদের জন্ম হয়?

       পৃথিবীর প্রাচীন তিনটি সভ্যতা-ইজিপ্ট, মেসোপটেমিয়া এবং সিন্ধু সভ্যতা। এই তিনটি সমাজে দাসেরা এল কি করে? মানুষ যখন প্যালিওলিথিক স্টেজে, বনেবাদারে ঘুরছে-সেই হান্টার গ্যাদারার সমাজে ত দাসেরা ছিল না। দাসেদের উৎপত্তি হল কৃষিকাজ শুরুর সাথে সাথে?

  সত্যিই কি তাই ? কৃষিভিত্তিক সমাজ শুরু হতেই কি সভ্যতাতে মানুষ "ক্রীতদাস" দের দেখলো?

   এটা বুঝতে প্রথমেই এই তিন অতীত নদী সভ্যতা-যা উন্নতির চরম শিখরে উঠেছিল-তাদের দিকে তাকাতে হবে।

  সিন্ধু সভ্যতাতে দুটো জিনিসের সন্ধান পাওয়া যায় নি। এক, অস্ত্র। দুই দাস প্রথা। পাশাপাশি রাজা বা রাজপ্রাসাদের ও সন্ধান পান নি প্রত্নতাত্ত্বিকরা।

    মিশরের প্রাচীন সভ্যতা-তিন ভাগে বিভক্ত। ওল্ড, মিডল এবং নিউ কিংডম।  বিখ্যাত পিরামিডের জন্ম এই ওল্ড কিংডমে ( খৃঃ পূ ২৬৮৬-২১৮১)।   পিরামিড করতে হাজারে হাজারে শ্রমিক লেগেছে-কিন্ত তাদের কেউ ক্রীতদাস ছিল না। এই সময়ে মিশরে ক্রীতদাসের নজির নেই। তবে ৮০% লোক ছিল ভূমিদাস। কিন্ত মিডল কিংডমের ( খৃঃ ২০৫৫-১৬৫০) সময় থেকে ফারাওরা নুবিয়া, কানান এবং সিরিয়া আক্রমন এবং আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন।  এই সময় থেকেই মিশরীয় সভ্যতাতে ক্রীতদাসের দেখা পাওয়া যাবে-যুদ্ধে পরাজিত জাতির লোকেদের ক্রীতদাস হিসাবে রেখে দেওয়া হত। এছাড়াও ধার শোধ করতে না পারলে, লোকে ক্রীতদাস হতে বাধ্য হত-তবে সারা জন্মের মতন না। ধার শোধ করতে যদ্দিন থাকতে হয়।

   কিন্ত নিউ কিংডমে মিশরে ক্রীতদাস ব্যবসার রমরমা শুরু।  ফারাও তৃতীয় টিসমোস অসংখ্য ক্রীতদাসের মালিক ছিলেন-যা উনি মূলত হাইতি এবং ন্যুবিয়ানদের  যুদ্ধে হারিয়ে পেয়েছিলেন।

  মোদ্দা কথা, মিশর সাম্রাজ্য যেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির রূপ নেওয়া শুরু করে-বাণিজ্যের শুরু হয়-ঠিক সেই সময় থেকেই ক্রীতদাস বা আজন্ম দাসবৃত্তির ধারনা মিশরীয় সভ্যতায় আসতে শুরু করে।
 শুধু কৃষিভিত্তিক সমাজে ক্রীতদাস আসে না। যখন সেই সমাজ আস্তে আস্তে সাম্রাজ্যবাদি হয় বা সাম্রাজ্যবাদি শক্তির পদানত হয়-ঠিক তখনই সভ্যতার মধ্যে ক্রীতদাসের জন্ম। এটা আরো পরিস্কার হয় মেসোপটেমিয়ার ইতিহাস থেকে।

      ইনফ্যাক্ট ভারতে  যখন হরপ্পা মহেঞ্জোদারোতে ক্রীতদাসহীন, শ্রেনীহীন কৃষিসমাজ চলছে-সমসাময়িক ( খ্মৃঃপূ ২৩০০) মেসোপটেমিয়ার উরু, আকাদ এবং মারী শহরে ক্ষত্রিয়, ব্রাহ্মন, বৈশ্য, শূদ্র -এই চারটি শ্রেণীর পরিস্কার অবস্থান।  তার সাথে ছিল ক্রীতদাস, তবে বৈশ্য আর শুদ্র শ্রেনীকে আকাডেমিয়ান সম্রাজ্যে বলত আপার আর লোয়ার কাস্ট।

    (২)
 তাহলে ভারতে বর্নবাদ এলো কোথা থেকে?  সিন্ধু সভ্যতায় বর্ণবাদ ছিল না-এটা নিয়ে কোন দ্বিমত নেই। কিন্ত ওই সময়,  মেসোপটেমিয়াতে একদম বর্তমান ভারতের বর্নবাদ চালু ছিল। সেটাও বহুল প্রমানিত।  তাহলে কি কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে এই বর্ণবাদ ভারতের বাইরে থেকেই এসেছে?

  বর্তমানের হিন্দুত্ববাদিরা মানতে চান না আর্য্য সভ্যতা -যা ঋকবেদ নিয়ে ভারতে ঢুকলো-তারা ভারতের বাইরের ! ঋকবেদে ত চারটে শ্রেনীর পরিস্কার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে-যা সিন্ধু সভ্যতায় নেই।  যদি হিন্দুত্ববাদি ঐতিহাসিকদের কথা সত্য হয় যে আর্য্যরা বা ঋকবেদ ভারতের বাইরে থেকে আসে নি -তাহলে ঋকবেদের সমসাময়িক সময়ে ( ৩০০০-১৫০০ খৃঃপূ )  ভারতে কেন বর্নবাদের সাপেক্ষে কোন প্রত্নতাত্বিক উদাহরন নেই -যেখানে ঋকবেদে বর্নবাদের উল্লেখ আছে প্রায় সর্বত্র?

  স্যার উইলিয়াম জোন্স এরিয়ান ইনভেশন তত্ত্বের জনক। সংস্কৃত শিখতে গিয়ে উনিই প্রথম লক্ষ্য করেন ঋকবেদের আদি সংস্কৃতের ভাষার সাথে ল্যাটিনের অসংখ্য মিল। ইনফ্যাক্ট ইটালীয়ান শিখতে গিয়ে, আমিও অবাক হয়েছিলাম ল্যাটিনের সাথে সংস্কৃতের এত অজস্র মিল আছে দেখে। এর পরে এই নিয়ে ঐতিহাসিকদের অজস্র কাজ আছে- প্রোটো ইন্ডো ইরানিয়ান সংস্কৃতির সাথে মেলে এমন দুটি মধ্য এশিয়ার সভ্যতাও আবিস্কৃত [  সিন্থাস্থা এবং আন্দ্রনোভো কালচার] । আর্য্যরা যে বহিরাগত সংস্কৃতি-তার অজস্র আধুনিক ইতিহাস উইকিপেডিয়াতেই পাওয়া যাবে ( https://en.wikipedia.org/wiki/Indo-Aryan_migration_theory ) ।

 তবে হিন্দুত্ববাদিদের আশা ভরসাতে শেষ পেরেক  ঠুকেছে জেনেটিক্স রিসার্চ। দেখা যাচ্ছে ভারতের ব্রাহ্মনদের সাথে ইউরোপিয়ান ওয়াই জিনের মিল খুব সাংঘাতিক রকমের বেশী। শুদ্রদের সাথে কিন্ত সেই মিল নেই!  হার্ভাডের মাইকেল উইজেল এই ব্যপারে কাজ করেছেন-যাতে দেখা যাচ্ছে ভারতীয়দের দুটী জেনেটিক গ্রুপ স্পষ্ট।  একটি ভারতীয় এবোরিজিনাল-অন্যটি ককেশিয়ান বা মধ্য এশিয়ান অরিজিন। এই আর্টীকলে সব ডিটেলেসে পাবেন ( http://www.livescience.com/38751-genetic-study-reveals-caste-system-origins.html )।  আরো দুটি আর্টিকল দেখে নিতে পারেন আর্য্য এবং বর্নবাদি সিস্টেমের উৎস কিভাবে জেনেটিক্স রিসার্চের মাধ্যমে জানা হয়েছে

   ক) Time Magazine :http://world.time.com/2013/08/27/what-dna-testing-reveals-about-indias-caste-system/

   খ)  Link of the original paper : http://www.cell.com/AJHG/abstract/S0002-9297%2813%2900324-8

  " Most Indian groups descend from a mixture of two genetically divergent populations: Ancestral North Indians (ANI) related to Central Asians, Middle Easterners, Caucasians, and Europeans; and Ancestral South Indians (ASI) not closely related to groups outside the subcontinent. The date of mixture is unknown but has implications for understanding Indian history. We report genome-wide data from 73 groups from the Indian subcontinent and analyze linkage disequilibrium to estimate ANI-ASI mixture dates ranging from about 1,900 to 4,200 years ago. In a subset of groups, 100% of the mixture is consistent with having occurred during this period. These results show that India experienced a demographic transformation several thousand years ago, from a region in which major population mixture was common to one in which mixture even between closely related groups became rare because of a shift to endogamy."

 অবশ্য ভারতে হিন্দুত্ববাদিরা অতীতে প্লেইন এট্মবোম ইত্যাদি ছিল বলেও বিশ্বাস করেন! যাদের ঘিলুর দৌঁড় ক্লাস ফোরের বেশী না-তাদের এত কিছু মাথায় ঢুকবে বলে মনে হয় না।

 (৩)
 এবার ইতিহাস থেকে আসি বর্তমানে। বলা হচ্ছে আই আই টি গুলোতে নাকি সিডিউলড কাস্টের ওপর অনেক অত্যাচার অবিচার হয়। তা হয়। সে নিজের চোখেই দেখেছি। কিন্ত তার কারন দলিত রাজনীতি। এই নয় যে আই আই টির অধিকাংশ ছেলেরা বর্ণবাদি। কোটা সিস্টেমের মাধ্যমে, দলিতদের প্রতি ঘৃণা তৈরী হয় অটোমেটিক্যালি।

 কারনটা লিখি। আই আই টিতে মুসলমান-হিন্দু জেনারেল কাস্টের মধ্যে ভাই ভাই সম্পর্ক। কিন্ত দলিতদের প্রতি উষ্মা । কেন ? কেন হবে না ? আপনি যদি দেখেন, আপনার বাবা একজন সাধারন চাকুরে-একটা ছেলে বহু খেটে কোন রকমে আই আই টিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে, আর পাশের ঘরে একটা ছেলে, এসসি কোটাতে কম্পুটার সায়েন্স পড়ছে-তার সাথে তার খাওয়া থাকা ফ্রি-এবং তার বাবা আই এ এস অফিসার। আপনার রাগ হবে না? রাগ না হওয়াটা কি অস্বাভাবিক?  এগুলোর জন্যেই আই আই টি ক্যাম্পাসে দলিতদের ওপরে  বাকীদের রাগ। যদি এই কোটা সিস্টেমে অর্থনৈতিক ক্রাইটেরিয়া থাকত যে গরীব দলিতের ছেলে মেয়েদের জন্য এই কোটা-আমি গ্যারান্টি দিয়ে লিখতে পারি, আই আই টি ক্যম্পাসে এমন এন্টি দলিত ফিলিংস থাকত না। কিন্ত যখন একজন ছেলে দেখছে, তার থেকে অনেক বড়লোকের ছেলে এস সি কোটাতে  বিনা পয়সায় পড়ছে, সে রাগতে বাধ্য। আই আই টিতে এস টি কোটাতে যেসব ছেলেরা আসে তারা খুব গরীব। কীন্তু দলিত কোটাতে আসা ছেলে মেয়েদের মধ্যে ৯০% বেশ বড়লোক ঘরের।

  এর মধ্যে দলিত ছাত্রদের মধ্যে একটা ক্ষুদ্র শ্রেনী আছে, যাদের চির জীবনের ধারনা, তারা এস সি বলে মার্কস পায় না। স্যারেরা ফেইল করিয়ে দিচ্ছে!!  তারা নির্যাতিত!  এদের সবাই প্রায় জীবনে ব্যর্থ হয়েছে।  আমরা দলিত, তাই ভিক্টিমাইজ - এই ভাবে সর্বত্র ভিক্টিমাইজেশন তত্ত্ব নিয়ে চললে, তাদের মেন্টাল ব্রেইক ডাউন হতেই পারে।  কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু বর্ণবাদি প্রফেসর থাকেন-সেটাও সত্য। কিন্ত তারা ব্যতিক্রম। নিয়ম কখনোই না।

 এবার বলবেন মশাই আপনি দলিত না-দলিতদের ব্যথা কি বুঝবেন? আমি উত্তর দেব আপনি বুলশিট বকছেন। আমি উঁচু কাস্টের লোক নই-বরং দলিত না হলেও নীচু কাস্টেই আমার জন্ম।  কিন্ত তাতে কি? সমাজে কখনো কি কিছু ঘটেছে, যাতে আমার কাস্ট সামনে এসেছে?  আসল কাস্ট সামাজিক অবস্থান। আমার দাদু ছিল প্রাইমারী স্কুলের হেডমাস্টার, ঠাকুর্দা পাট ব্যবসায়ী। বাবা-মা দুজনেই হাইস্কুলের টিচার। সেই সামাজিক অবস্থানই আমার আসল কাস্ট।  স্কুল কলেজে একজন ব্রাহ্মন ও জেনারেল কোটাতে ঢুকেছে-আমিও জেনারেল কোটাতে ঢুকেছি -ফলে একজন ব্রাহ্মনের সাথে আমার কখনোই কোন দূরত্ব তৈরী হয় নি। কিন্ত এটাই হত-যদি কোটাতে ঢুকতাম। তাহলে এই এন্টি দলিত ফিলিংস জেনারেল  ছাত্রদের মধ্যে ঢোকানোর জন্য দায়ী কে? দলিত রাজনীতি। যারা অর্থনৈতিক বা সামাজিক ক্রাইরেটিয়া না রেখে কোটা সিস্টেম তৈরী করেছে।  একজন ধনী বা উচ্চশিক্ষিত এস সি ছেলে মেয়েদের জন্য কেন কোটা সিস্টেম থাকবে? তাতেত গরীব হরিজনদের পথই বন্ধ করা হচ্ছে!!!

  আমাদের প্রত্যন্ত নদী শহর করিমপুরে ব্রাহ্মন ছিল মাত্র কয়েকঘর। তিনটে পুরুত বামুন ফ্যামিলি ছিল। তারা এবং আমাদের ঝি রা -দুই পক্ষই থাকত শহরের ধারে কলোনীতে যেখানে গরীবেরা থাকে। ফলে আমিও ছোট বেলাতে ভাবতাম বামুনরা মানে  ঝি চাকরদের মতন গরীব শ্রেনী!

 এই সেন্স অব ভিক্টিমাইজেশনের আবহ তৈরী করাটা খুব বাজে-রাজনীতি। এবং তাতে আসলেই দলিত ছাত্রদের ও ধ্বংস করা হয়।

      আমার ছেলে এখানে ফুটবল খেলে। মাঠে বেশ রেশিয়াল স্লার এবং বুলিং হয়-মাঝে মাঝে আমার ছেলে এসে অভিযোগ করেছে আগে।  আমি ওকে কি বলবো ?  আমি পরিস্কার বলেছি-যারা এসব রেশিয়াল স্লারিং করে তারা অশিক্ষিত, অজ্ঞ। ইগনোর। তাদের প্রতি রাগলে, খেলায় ফোকাস নষ্ট হবে। আর ও যেহেতু গোলকীপার খেলে, বিরোধি টিমের উদ্দেশ্যই থাকে গোলকিপারের মনঃসংযোগ নষ্ট করা।  যদি বেশী করে, বা ফিজিক্যালি কিছু হয়-তার জন্যে রেফারি আছেই। আমি এটাও তাকে বলেছি-এগুলো জীবন এবং খেলার অংশ। লোকে ফোকাস নষ্ট করার চেষ্টা করবে-কিন্ত নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে সাফল্যের জন্য।  পৃথিবীর প্রায় সব মহান ব্যক্তিই অন্যায় অবিচার বুলিং এর শিকার হয়েছে ছাত্র বা পেশাদার জীবনে। কিন্ত তারা সেটা নিয়ে ওবসেসড হয়ে বসে থাকে নি। নিজেদের কাজটা ভাল ভাবে করে গেছে।


 ফেসবুকে কিছু লোকজন সেটাই দেখছি সারাদিন  দলিত ছাত্রদের জন্য সেন্স অভ ভিক্টিমাইজেশন ফিলিং তৈরী করছে। তাতে কি দলিত বিরোধিতা কমবে? কিছু কমবে না। দলিত বিরোধিতা কমাতে গেলে দলিত কোটাতে অর্থনৈতিক অবস্থানের ক্রাইটেরিয়া ঢোকাতেই হবে।










    

Thursday, January 14, 2016

ডাক্তার এবং

ডঃ অভিষেক ঝাঁকে পেটানো কেন্দ্র করে যে পোষ্ট দিয়েছিলাম, তাতে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে যে জনরোষ টের পেলাম, তা রীতিমত ভয়বহ। অনেকেই মনে হল ডাক্তার পেটানোতে খুশী হয়েছে!! কি ভয়ংকর । একজন লিখেছে-আপনি কি জানেন পেশেন্ট হিসাবে ভোগার কি অসহ্য যন্ত্রনা? আরেক জন লিখেছেন-আপনি কি জানেন কোলকাতার ডাক্তাররা রুগীকে মুর্গী বলে?

  কোন সন্দেহ নেই শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের বাণিজ্যায়নের জন্য নার্সিং হোম এবং ডাক্তার নিয়ে লোকের অভিজ্ঞতা তিক্ত। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকারের মধ্যে না ফেলে যদি বাণিজ্যিক পন্য হিসাবে দেখা হয়-এই সমস্যাগুলো আসবে। কিন্ত তার জন্যে ডাক্তাররা কতটুকু দায়ী?  কিছু অসৎ ডাক্তার অবশ্যই আছে-কিন্ত সেটাত সব পেশাতেই আছে। তার জন্যে সব ডাক্তারকে পেটাতে হবে? এগুলোত সামাজিক ব্যধিতে পরিনত আজ।

 এবার আরেকটা মৌলিক প্রশ্নে আসি। অধিকাংশই মত প্রকাশ করেছেন, ডাক্তারদের কাজে তারা খুশী নন।

 এবার উলটো দিকটাও দেখা যাক।

 (১) আজকালকার দিনে সহজ কোন কারনে কেউ ডাক্তারের কাছে যায় না। যায় যখন সব ওষুধ ট্রাই করেও কিছু হচ্ছে না। মুশকিল হচ্ছে একজন রুগীকে সঠিক ভাবে ডায়াগনোজ করতে-যা যা টেস্ট দরকার বা ডাক্তারের যে সময় দেওয়া উচিত সেটা একজন ডাক্তার দেয় কি না। আমি যেটা দেখেছি, ভারতে ডাক্তারের সংখ্যা এত কম, একজন ডাক্তারকে এত রুগী দেখতে হয়-সেটা সম্ভব না।

 (২) দ্বিতীয় সমস্যা-ডাক্তার মানেই সমাধান-রুগী সুস্থ হবে-এই ধারনা ছাড়তে হবে। চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতি হয়েছে সন্দেহ নেই-কিন্ত এখনো তা শৈশবেই। একটা ওষুধ একজনের জন্য কী ভাবে কাজ করবে-তা নির্ভর করে সেই মানুষটির জেনেটিক গঠন, লাইফ স্টাইলের ওপরে। একজন ডাক্তার এখন যে ডাক্তারী করেন, তা অনেকটাই আন্দাজে-ট্রায়াল এন্ড এররে।  একটা প্রেসক্রিপশন আদৌ কাজ করবে কি না-তার জন্যে যে ডেটা বা রেকোমেন্ডেশন সিস্টেম দরকার-যা মানুষের জেনেটিক গঠন,  লোকটির পাস্ট হিস্ট্রি এবং লাইফস্টাইল জেনে কাজ করবে-সেটা এখনো আমেরিকাতেও গবেষনার পর্যায়ে আছে। যদ্দিন না মেডিকাল সায়েন্স ওই লেভেল না যাচ্ছে, একজন ডাক্তার তার অভিজ্ঞতা দিয়ে যা করা সম্ভব তাই করছেন। সেটা নাও কাজ করতে পারে। তার জন্যে হালার ডাক্তার বলাটা নেহাত মূর্খামি এবং অজ্ঞতা। মেডিক্যাল সায়েন্সের বর্তমান লিমিটেশন না বুঝলে মুশকিল আছে।

 (৩)  মেডিক্যাল সায়েন্স দ্রুত চেঞ্জ হচ্ছে। পাঁচ বছরে বদলে যাচ্ছে। ডাক্তারদের অনেকেই সেই চেঞ্জের সাথে নিজেদের আপডেট করেন না। তাদের আপডেট বলতে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির মেডিকেল রেপরা যা বোঝাচ্ছেন।  ওই ভাবে ত হয় না। মুশকিল হচ্ছে তারা নিজেদের আপডেট করবেন না ই বা কি করে?  কোলকাতায় ত শুনলাম অর্থাভাবে ভালো জার্নাল আসাও বন্ধ। এই ভাবে কি কিছু হয় না কি?

 (৪) আরো একটা বিরাট চেঞ্জ আসছে মেডিক্যাল সায়েন্সে। সেটা হচ্ছে এখন আমাদের সব "রান টু ফেলিউর" মডেল। মানে রুগীর রোগ হলে-তবে ডাক্তারের কাছে আসা। কিন্ত রোগ ত এমনি এমনি হয় না-তার ও পূর্বলক্ষণ থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পূর্বলক্ষন পর্যাতে রোগ ধরতে পারলে চিকিৎসার খরচ কমে। আগে থেকেই রোগটা আটকানো যায়। ভবিষ্যতের যে মেডিক্যাল আওটি সিস্টেম আসছে, তাতে একজন লোক অন্তত ১০ টা থেকে ২০টা সেন্সর তার দেহেই প্লাগ ইন করে ঘুরবে-এবং তার কিছু হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আগেই জেনে যাবে। এতে ডাক্তারদের কাজটা অনেক সহজ হবে।

  মোদ্দা কথা ডাক্তার মানেই রোগ সেরে যাবে- এই ধরনের এটিচুড বদলাতে হবে। মেডিক্যাল সায়েন্সের বর্তমান লিমিটেশন না বুঝলে মুশকিল ।

 প্রশ্ন হচ্ছে আমি ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ডাক্তারদের হয়ে বলছি কেন ?  এমন ভাবার কারন নেই আমি ভুক্তভোগী নই। আমার মার, বাবার ভুল চিকিৎসা হয়েছে। আমেরিকাতে আমার স্ত্রীর ও ভুল চিকিৎসা হয়েছে।  যদিও আমি মেডিক্যাল লাইনে খুব কমই জানি-তবুও আই ও টি ফিল্ডে পেশাগত কারনে, মেডিক্যাল সায়েন্সের ভবিষ্যত এবং বর্তমান গবেষনাতে কিছু পড়াশোনা করে এটাই বুঝেছি-এই ডায়াগনোসিসটা যদিও মোটামুটি করা যায়, প্রেসক্রিপশনটা এখনো হাতুড়ে পর্যায়েই আছে। যদ্দিনা মেডিক্যাল ডেটাসায়েন্স এবং আই ও টির উন্নতি না হচ্ছে, ডাক্তারদের কাছ থেকে খুব বেশী  নির্ভুল প্রেসক্রিপশন আশা করাটাই অন্যায়।  ওটা সম্ভবই না। যদি কোন ডাক্তার নিজের প্রেসক্রিপশন নিয়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী থাকেন-তিনিও অজ্ঞ-আর যে রুগী ভাবছে  প্রেসক্রিপশন মানেই রোগ সেরে যাবে সেও অজ্ঞ। এই অজ্ঞতা যত দ্রুত দূর হয় তত সবার মঙ্গল। 

Thursday, January 7, 2016

কালিয়াচকে দাঙ্গা

কালিয়াচকের দাঙ্গার এত ছবি-এত আস্ফালন চারিদিকে-এই প্রবন্ধটা লিখতে বাধ্য হলাম।

 মালদহের ওই দাঙ্গা নিয়ে লিখছি না। লিখছি-কিশোর বয়সে নদীয়া মুর্শিদাবাদ বর্ডারে দাঙ্গার অভিজ্ঞতা নিয়ে। কারন এই পরজীবি কোলকাতাবাসীদের ন্যাকামো আর সহ্য করা যাচ্ছে না।

 সেটা বোধ হয় ১৯৮৬ বা ৮৭। আমি ক্লাস সেভেন এইটে পড়ি।

 আমার বাড়ি ছিল করিমপুরে। এটা বর্ডার এরিয়ার স্মাগলিং টাউন। তুলো চিনি প্রতিদিন পাচার হত বাংলাদেশে। মুসলমানরা বাংলাদেশ-ভারত বর্ডারে মাল-এপার -ওপার করে । হিন্দুরা তাদের বিজনেসে টাকা খাটায়।  এমনিতে স্মাগলাররা ভাই ভাই। কিন্ত বাটোয়ারা নিয়ে বাওয়াল হলে দুচার পিস লাশ থানায় ঢোকে।

  এইভাবে এক হিন্দু ব্যবসায়ীর লাশ ফেলল একদিন। মোস্ট লাইকলি লোকটা স্মাগলিং এ টাকা খাটাত-আমাদের করিমপুরের খরে নদী পেরিয়েই মুর্শিদাবাদ। সেখানে ১০০% মুসলিমদের বাস। লোকটার বোধ হয় টাকা মার গেছিল-সে আদায় করতে গিয়ে ঝগড়া বা কিছু একটা গন্ডোগল হয়-এবং কিছুদিন বাদে বক্সীপুরের গ্রামগুলো থেকে তার গলাকাটা লাশ উদ্ধার । ফলে প্রাথমিক ভাবে একটা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা কিছুদিন ধরে শহরে চলছিল। এদিকে করিমপুর শহরে যারা দিন মজুর, বিজনেসে ডেইলি লেবার-তারা সবাই মুসলমান এবং আসে ওপার থেকেই। করিমপুর শহরে আবার একটাও মুসলিম নেই। আমাদের সময় তিন হাজার দোকান ছিল-একটা মুসলমানের দোকান ও দেখি নি। ফলে শহরের মধ্যে মুসলিম লেবাররা ছিল ভালনারেবল। এই উত্তেজনা চলার তিন দিনের মাথায়-করিমপুর শহরে কোথাও জনাচারেক মুসলিম লেবারকে পেটানো হয়-ওই খুনের প্রতিশোধ হিসাবে। ওই সময় ওখানে আর এস এস বা হিন্দুদের কোন সংগঠন ছিল না।

 সেই চারটে লোক কোন রকমে নদী পেরিয়ে পালিয়ে যায় প্রাণে বেঁচে। বাকী লেবারাও সেদিন পালিয়েছিল। কিন্ত পরের দিন পুরো উত্তেজনা হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার রূপ নেয়।

 এদিকে আমাদের বাড়ি হচ্ছে নদীর ধারে। যেদিন প্রচুর গন্ডোগল হচ্ছে-বাড়ির তিনতালার ছাদের উঠে দেখি-যদ্দুর চোখ যায় নদী পেরিয়ে পাটক্ষেত্রে শুধু লোক আর লোক -লাঠি, হেঁসো নিয়ে নদীর ওপারে দাঁড়িয়। আমার ধারনা অন্তত দশ হাজার লোক লাঠি আর হেঁসো নিয়ে ওপারে আস্ফালন করছে। এপারে দুই জীপ পুলিশ। বলা বাহুল্য লোকগুলো নদী পার করা শুরু করলে-ওই কটা পুলিশে কিছু হত না। আমাদের পালাতে হত। বাড়ি পুড়ত। না পালালে, আমাদের লাশ পড়ত।  আমি সাধারনত ভয় পাওয়ার পাবলিক না। তবে সেদিন বেদম ভয় পেয়েছিলাম। কারন নদীর ধারে বাড়ি হওয়াতে প্রথম কোপটা আমাদের বাড়ির ওপরেই আসত।

 তবে সেই দাঙ্গা থামে সিপিএমের  হস্তক্ষেপে। ততক্ষনে এপার আর ওপারের বিধায়করা এসে গেছেন। ডোমকল আর করিমপুরের বিধায়ক সিপিএম হওয়াতে লাভ হয় এই যে উনারা পরিস্থিতি সামাল দেন। এরপরে অবশ্য এমন বাজে অবস্থা কোনদিন হয় নি। পার্টি ম্যানেজ করত দুই সাইড।

কিন্ত টেনশন ছিল পাক্কা একবছর । বাবার স্কুল ছিল মুর্শিদাবাদে-বাড়ি থেকে তিন মাইল দূরে । কিন্ত সাইকেলে যেতে হত মুসলিম অধ্যুশিত গ্রাম পেরিয়ে। এইপার থেকে তিনজন হিন্দু শিক্ষক যেতেন। তাদের লাশ হওয়ার সম্ভাবনা তখন প্রবল। সেই জন্যে বাবারা ১০ মাইল ঘুরে যেতেন স্কুলে। প্রায় একবছর । সব থেকে দুর্ভাগ্য-বাবা ওই জোনেই পার্টি করেছেন সিপিএমের জন্মদিন থেকে। কিন্ত বাবার সিপিএম বন্ধুরাই পরামর্শ দিয়েছিল ঘুরে যেতে। কারন একজন বদলোকই লাশ ফেলার জন্য যথেষ্ঠ। আবার প্রায় একমাস ধরে ওপার থেকে মুসলিম লেবারদের এপারে আসা বন্ধ ছিল। যা আস্তে আস্তে খোলে।

  না। এসব ঘটনা কোনদিন কোন পেপারে আসে নি। সেকালে ফেসবুকও ছিল না।

  তবে ওই দশ হাজার লোক লাঠি আর দা নিয়ে কোপাতে আসছে-সেই দৃশ্য ভুলবো না। সেই জন্য আমার কাছে দাঙ্গা বাস্তব-ভীষন রকমের বাস্তব।

 কোলকাতার বাবুরা বা বুদ্ধিজীবিরা চিরকাল পরজীবি। তারা বামপন্থী? এগুলো ভুল্ভাল ধারনা। বৃটিশ আমলে তারা ছিল বৃটিশ অনুগ্রহের দাস। ১৯৭৭ সালে সিপিএম যখন জেতে গোটা রাজ্যে-কোলকাতায় সিপিএমের ফল ভাল হয় নি। কোলকাতা আস্তে আস্তে বাম হয়েছে যখন বামেরা ক্ষমতায় গিয়ে, অনুগ্রহ বিতরন শুরু করেছে। কোলকাতার বুদ্ধিজীবিরা শ্রেফ পাওয়ার আশাতে বাম ছিল। এখন পাওয়ার আশাতে মমোপন্থী। যেদিন বিজেপি আসবে ক্ষমতায়-কোলকাতার সংখ্যাগরিষ্ঠ বুদ্ধিজীবির আলখাল্লার রঙ গেরুয়া হবে। এখন যারা " এই ইসলামফোবিয়া ভালো নয়" বলছেন ( ওই শান্তিনিকেতনী স্টাইলে এই গরু সরে যা না )-বিজেপি ক্ষমতায় এলে, তারাই দেখবেন বলছে-বাট আপনারা কি দেখতে পারছেন না শান্তির ধর্মের লোকেদের উৎপাত?

 তাই এইসব কলকাতাবাসী বুদ্ধিজীবি পরচুলাগুলোকে ফেলে দিতে হবে সামনের দিকে তাকাতে গেলে। মোদ্দা কথা হিন্দু এবং মুসলিমদের মধ্যে সমস্যা আছে স্বীকার করতে হবে। মুসলিম প্রধান এলাকাতে হিন্দুদের বাস করা অসম্ভব এবং হিন্দু প্রধান এলাকাতে মুসলিমদের ঘর ভাড়া দেওয়া হয় না-এগুলো করুন বাস্তব। সিপিএমের ৩৪ বছরে সাম্প্রদায়িকতা চাপা দেওয়া হয়েছিল । কমে নি। কারন ধর্মের ভিত্তিতে আঘাত হানতে ভয় পেতেন কমরেডরা । পাছে ভোটাটা হারন। এখন অবশ্য আম এবং ছালা-দুটোই হারিয়েছেন তারা।

 ধর্মকে আঘাত না করতে পারলে কিছু হবে না। ইসলাম আরবদের ট্রাইবাল কালচার-আবার হিন্দু ধর্মের অতীত ও সেই ট্রাইবাল কালচার। ইসলাম ভাল মানলে, ইসলামের প্রফেটের লুঠতরাজ , ৮০ টি যুদ্ধ, যৌনদাসী রাখা-সব কিছুই ভাল হয়ে যায়। মানছি সেকালে ওগুলো ছিল আরবের প্রথা। কিন্ত একালের মুসলমানেরা যে সেই আদিম আরব সমাজের আইনে বিশ্বাস রাখে এটাও ত বাস্তব!  যে ধর্মের নবীই ৮০টা যুদ্ধ করেছেন বিধর্মীদের বিরুদ্ধে, সেই ধর্মের লোকেরা অস্ত্র ধরবে না? ইয়ার্কি নাকি?  ঠিক তেমন হিন্দু ধর্ম ভাল-এটা মানলে জাতপাতের অত্যাচার সহ আরো অনেক মনুবাদি সংস্কারকে ভাল বলে মানতে হয়। এবং এই যে লোকে এত বেদ বেদ করে। কোন  হিন্দু ঋক বেদ পড়ে নি। ঋক বেদের অনেক ছত্রেই আর্য্যদের উস্কে দেওয়া হয়েছে অনার্য্যদের ওপরে লুঠপাট করার জন্য। দুই ধর্মের ভিত্তিতেই যেখানে দাঙ্গা, যুদ্ধ, হিংসা-সেখানে তারা পাশাপাশি থাকলে দাঙ্গাত হবেই। দুই ধর্মেই দাঙ্গা লাগানোতে এলাহি সমর্থন আছে। থামাবেন কি করে?  এই ধরনের গোঁজামিল দিয়ে হিন্দু মুসলমানের ঐক্য হবে না।

 বৈদিক হিন্দু ধর্ম এবং ইসলাম-এই দুটোই বাঙালীর জীবনে, বহিরাগত। বাঙালীরা যেদিন বুঝবে, তাদের পূর্বপুরুষদের একটা উন্নত ধর্ম ছিল-যা বৈদিক বা ইসলাম না। যা আউল বাউলে গানে মুখরিত করত বাংলার মাঠ, ঘাট, নদী-সেই সহজিয়া ধর্মের স্বাদ যেদিন প্রতিটা বাঙালী পাবে-অনুভব করবে, তারা হিন্দু বা মুসলমান না-গর্বিত বাঙালী-সেইদিন সাম্প্রদায়িকতার ভূত এই সমাজ থেকে নামবে।  স্পেডকে স্পেড বলা শিখতে হবে। সিপিএমের ৩৪ বছরের ব্যর্থতা থেকে কবে শিখব আমরা? সাম্প্রদায়িকতা দূর করার একটাই রাস্তা-হিন্দুত্ব, ইসলামিৎ ছেড়ে শুধু ভাষাতে না-জীবন দর্শনেও বাঙালী হতে হবে।










Saturday, January 2, 2016

সঙ্গীনী নির্বাচন-বিজ্ঞান ও আধুনিক বাস্তবতা

সঙ্গীনী নির্বাচন-বিজ্ঞান ও আধুনিক বাস্তবতা
******************
(১)
 প্রাণের সংজ্ঞার মূলেই প্রজনন।
 জীবনের কোন পরম উদ্দেশ্য বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে নেই। কিন্ত  জীবের আছে। সেটা হচ্ছে সন্তানের প্রতিপালনে সৃষ্টিকে বা নিজের স্পেসিসকে টিকিয়ে রাখা।

  রুক্ষ নিরস বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব থাক। বাস্তব হচ্ছে নরনারীর মেটিং সিলেকশন বা এই সঙ্গী বা সঙ্গিনী নির্বাচন নিয়ে অসংখ্য গবেষনা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক গবেষনার খুব উর্বর ক্ষেত্র এটি।  আমি এই ফিল্ডের এক্সপার্ট নই-কিছু রিভিঊ পেপার পড়েছি এই মাত্র।

  এই প্রবন্ধ লেখার কাজটা বেশ জটিল। কারন বাঙালী বা ভারতীয়দের মধ্যে মেটিং সিলেকশন নিয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ আগে ত কিছুই ছিল না । বর্তমানে কিছু চোখে আসে।

 তবে বৈজ্ঞানিক কাজ দিয়ে বিরক্ত করবো না। আমার মূল বক্তব্য সময় এবং সমাজ বদলাচ্ছে। ফলে সঙ্গী এবং সঙ্গীনী নির্বাচনের কাজটা কিন্ত আরো কঠিন হচ্ছে। কেন কঠিন হচ্ছে এবং কিভাবে এগোলে "সাফল্য" আসবে-এটা বুঝতেও  সঙ্গী সঙ্গিনী নির্বাচনের বিজ্ঞানটা জানা থাকলে সুবিধাই হবে।

সমস্যা হচ্ছে আমাদের সমাজে একজন ছেলে গাঁতিয়ে পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ার বা পেশাদার কিছু একটা হল। এরপরে বাবা মা এরেঞ্জড মেরেজ দিয়ে দিচ্ছে। ছেলেটিকে স্ত্রী নির্বাচনের জন্য প্রায় খাটতেই হল না। সে পনেরো থেকে কুড়িটা বছর ধরে গাঁতিয়ে কেরিয়ার তৈরী করছে কিন্ত মেট সিলেকশনে তার ইনভেস্টমেন্ট প্রায় শুন্য।  বৌ খোঁজার জন্য বাবা-মা একটু খেটে পেপারে এড দিচ্ছে-তারাই খাটছে- ছেলেটি গলায় ঝোলাচ্ছে।

এটা খুব অবাস্তব  অবৈজ্ঞানিক একটা সিস্টেম যা বেশীদিন চলার কথা না-এবং চলছেও না। আমার অধিকাংশ আই আই টির ব্যাচমেটরা আজ উচ্চপদে সমাজে উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত। এদের মধ্যে বৈবাহিক অসন্তোষে অনেকের জীবনই আজ নরক।  আমি সেইসব কাদা না ঘেঁটে এটাই বলতে চাইছি-জীবনে ভাল কলেজ, ইউনিভার্সিটি বা চাকরি যতটা গুরুত্বপূর্ণ -তার থেকেও অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ন সঠিক সঙ্গী বা সঙ্গিনী নির্বাচন। আমার এইসব বন্ধুরা সেটা করে নি। ভেবেছে পেপারে বিজ্ঞাপন দিলেই আই আই টির ছাত্রদের কি আর পাত্রীর অভাব হবে? এই ধরনের সরলীকৃত ভুল ধারনার খেসারত দিচ্ছে আমার অনেক বন্ধু।

 সঙ্গী বা সঙ্গীনী নির্বাচনে ভুল মানে ভাল কেরিয়ার সম্পূর্ন মুল্যহীন-ফালতু। এটা না বুঝলে ভবিষ্যতে আরো দুঃখ আছে কপালে।
[ ওয়েব ঃ http://biplabbangla.blogspot.com/2016/01/blog-post.html ]

                               (২)

 পার্টনার সিলেকশনের বেসিক সায়েন্সটা এবার একটু শেখা যাক। আমি কিছু কিছু টার্ম ব্যবহার করব-যা একাডেমিক্সে স্বীকৃত।যারা আরো ডিটেলেস জানতে চান-তারা মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের  ডেভিড গিয়ারীর এই রিভিউ পেপারটা পড়ে নিন -মানব সঙ্গী নির্বাচনের বিবর্তন (http://web.missouri.edu/~gearyd/MatechoicePDF.pdf)। এতে ভাল সার সংক্ষেপ পাবেন।

পেরেন্টাল ইনভেস্টমেন্ট বা ছেলেমেয়ে বড় করার বিনিয়োগ ঃ মেট সিলেকশনের মূল অধিকাংশ সিদ্ধান্তই হয় ছেলে মেয়েকে বড় করতে বাবা বা মা কি করছে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জগতে মা যেহেতু বহুদিন শিশুকে গর্ভে রাখে, এক্ষেত্রে মেয়েদের ভূমিকা এবং ইনভেস্টমেন্ট অনেক বেশী। এছারাও বাকি ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছ সন্তান মানুষ করতে তাদের খাদ্য, শিক্ষা এবং নিরাপত্তা দেওয়া। যেটা মানব জগতে কৃষিভিত্তিক সমাজে পিতার দ্বায়িত্ব। তবে আধুনিক শিল্পোন্নত সমাজে না।

 সন্তানের ক্ষেত্রে মেয়েদের যেহেতু বিনিয়োগ বেশী-সেহেতু অধিকাংশ স্তন্যপায়ীদের মতন মানব সমাজেও মেয়েরাই নির্বাচন করে তাদের পুরুষ সঙ্গী। মূলত তারাই সিলেক্তটর -তবে এর দুটো ব্যাতিক্রম হয়-

 (১) অপারেশনাল সেক্স রেশিও ( OSR) -অর্থাৎ মেটিং এর জন্য পাওয়া যাচ্ছে এমন যৌনক্ষম নারী ও পুরুষের সংখ্যা। অধিকাংশ সমাজেই এটি মেয়েদের পক্ষেই থাকে। অর্থাৎ মেয়ে কম থাকে।  কারন মেয়েরা গর্ভধারনক্ষম থাকে চল্লিশ পর্যন্ত। সেখানে পুরুষের বীর্য্য সক্ষম প্রায় সত্তর পর্যন্ত। কিন্ত কিছু কিছু ক্ষেত্রে যুদ্ধ বা রোগের জন্য এর ব্যতিক্রম হয়েছে।

(২) আরেকটা হচ্ছে প্র্যাক্টিক্যাল ওপেরাশনাল সেক্স রেশিও। যেমন ধরুন পুরুষের সংখ্যা অনেক বেশী থাকলেও, কৃষিভিত্তিক সমাজে খুব কম সংখ্যক পুরুষের পর্যাপ্ত জমি থাকে। অর্থাৎ যারা এই পেরেন্টাল ইনভেস্টমেন্ট ঠিক ঠাক করার ক্ষমতা রাখে।  সেই ক্ষেত্রে সমাজে এই উচ্চশ্রেণীর পুরুষরাই সিলেক্টর ।

  আমাদের বাংলা এবং ভারতের মেটিং সিলেকশন, পণপ্রথা আগে যা ছিল-তা বুঝতে (২) নাম্বার পয়েন্টটা সাহায্য করবে।

 কিন্ত আমাদের দেশের সমাজ এখন কৃষিভিত্তিক থেকে শিল্প সমাজের পথে।  যখন একটা সমাজ কৃষিভিত্তিক থেকে শিল্প ভিত্তিক হচ্ছে-যেখানে জমি না, পুরুষের চাকরিটাই মুখ্য -- তখন মেটিং সিলেকশনের ভিত্তি কি?

  এক্ষেত্রে প্রাক্টিক্যাল রেশিও মেয়েদের ফেবারে চলে যাবে। অর্থাৎ তারাই হবে নির্বাচক। যেহেতু পেরেন্টাল ইনভেস্টমেন্ট করতে পারে এমন পুরুষের সংখ্যা অনেক বাড়ছে।

 সুতরাং এই আধুনিক সমাজে কোন পুরুষ, সঙ্গীনী নির্বাচনে সফল হবে?

 কালচারালি সাকসেস্ফুল মেল বা সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে সফল পুরুষ।  যারা এই ধণতান্ত্রিক সমাজে মই এর উচ্চধাপে উঠছেন। অর্থাৎ যারা উচ্চপদে ভাল চাকরি করছেন বা বানিজ্যিক দিয়ে সফল বা রাজনৈতিক ভাবে সফল, মেয়েদের কাছে তারাই পাত্তা পাবেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটা সত্য হলেও কিছু ব্যতিক্রম থাকবে-সেটাও লিখছি।

 শিল্পভিত্তিক সমাজেও দুটো ভাগ আছে। যে রাষ্ট্রগুলি প্রচুর সামাজিক নিরাপত্তা দেয়, যেমন ইউরোপের রাষ্ট্রগুলির ক্ষেত্রে -অর্থাৎ রাষ্ট্রই পেরেন্টাল ইনভেস্টমেন্ট করে  অনেকটা--- সেক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে মেয়েরা এই কালচারালি সাকসেস্ফুল পুরুষ বলতে ঠিক কি নির্বাচন করবে?

 ইনফ্যাক্ট এই একটি ক্ষেত্রেই প্রেম বা রোমান্সের ভূমিকা থাকছে। মেটিং সিলেকশনের ক্ষেত্রে রোম্যান্সের ভূমিকা নিয়ে যারা কাজ করেছেন, তাদের অনেকেই ( লি-২০০২) দেখিয়েছেন পার্টনার সিলেকশনের ক্ষেত্রে রোম্যান্স একটি লাক্সারী আইটেম-তবে যে সমাজে রাষ্ট্র সন্তানের অনেকটা দ্বায়িত্ব নিচ্ছে-সেই ক্ষেত্রে পার্টনার সিলেকশনের ক্ষেত্রে রোম্যান্টিক পুরুষরা কল্কে পায়। যেমন ইউরোপিয়ান সমাজে।

কিন্ত আমেরিকার ক্ষেত্রে এটা সম্ভব না-ভারতের ক্ষেত্রেত একদম ই না। কারন এসব দেশে ছেলে মেয়ে পড়ানোর খরচ বা চিকিৎসার খরচ খুব বেশী।  ফলে এইসব দেশে রোম্যান্টিক পুরুষের থেকে যারা ফাইনান্সিয়াল নিরাপত্তা বেশী দিতে পারবে, তাদেরই নির্বাচন করবে মেয়েরা। সুতরাং ভারত বা বাংলাদেশের সমাজে রোম্যান্টিক পুরুষ প্রেম হয়ত পাবে-কিন্ত স্ত্রী পাবে না। যদ্দিন না এই দেশগুলি শিশুনিরাপত্তে দিতে না পারছে।

 দেখতে কেমন পুরুষ মেয়েরা নির্বাচন করে-কেন করে? এটি খুব সুপ্রতিষ্ঠিত -যহেতু এই নিয়ে প্রচুর গবেষনা হয়েছে।

"Women prefer men who are somewhat taller than average, and have an athletic (but not too muscular) and symmetric body shape, including a 0.9 waist-to-hip ratio (WHR), and shoulders that are somewhat wider than their hips (Barber, 1995; Beck, Ward-Hull, & McClear, 1976; Cunningham, Barbee, & Pike, 1990; Gangestad et al., 1994; Hatfield & Sprecher, 1995; Oda, 2001; Pierce, 1996; Singh, 1995a). The facial features that women rate as attractive include somewhat larger than average eyes, a large smile area, and prominent cheek bones and chin (Barber, 1995; Cunningham et al., 1990; Scheib, Gangestad, & Thornhill, 1999). These physical traits appear to be good indicators of genetic variability (which is important for disease resistance), a lack of illness during development, and current physical health (Barber, 1995; Thornhill & Gangestad, 1993). For instance, the development of prominent cheek bones and a masculine chin is related to androgen levels and androgen/estrogen ratios during puberty (Fink & PentonVoak, 2002; Tanner, 1990). Chronic illness during this time can suppress androgen secretion, which would result in the development of less prominent cheekbones, a more feminine-looking chin, and, as a result, lower rated physical attractiveness (Thornhill & Gangestad, 1993)."

 নতুন কিছু গবেষনাতে বলছে না। সেই টল ডার্ক হ্যান্ডসামের গল্প। চওড়া কাঁধ, চাবুকে চিবুক, লম্বা চোখ। কেননা এগুলো শক্তিশালী জিনের লক্ষণ। শক্তিশালী জিন মানে যে জিন রোগ প্রতিরোধে সক্ষম।

 সুতরাং মেয়েরা যে সুন্দর পুরুষ খোঁজে সেটা এমনি এমনি না। সুন্দর পুরুষ সুস্বাস্থ্যের লক্ষন।

 কিন্ত সব কিছু ত একসাথে পাওয়া যায় না-সুন্দর পুরুষ-আবার প্রচুর কামাচ্ছে বা সমাজ উচ্চপ্রতিষ্ঠিত। সেক্ষেত্রে মেয়েরা কি করে?

 অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়েরা উচ্চপ্রতিষ্ঠিত পাত্রই বেচে নেবে সুন্দর দেখতে গরীব পাত্রর থেকে। একাধিক গবেষনা আছে এই নিয়ে

তবে ব্যতিক্রম আছে

  (১) ইউরোপিয়ান ওয়েল ফেয়ার স্টেটে  যেখানে রাষ্ট্র পেরেন্টাল ইনভেস্টমেন্ট করে
  (২) যেক্ষেত্রে মেয়েটি ধনী পরিবারের বা মেয়েটি নিজেই উচ্চপ্রতিষ্ঠিত।

 আরো একটা গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার জেনে নেওয়া ভাল।  বিয়ের সঠিক সময়। এটাও কঠিন প্রশ্ন । হাঙ্গেরীতে হওয়া একটা সামাজিক গবেষনাতে দেখা যাচ্ছে যেসব মেয়েরা উচ্চশিক্ষা নিয়েছে, এবং উচ্চশিক্ষিত ছেলেদের বিয়ে করেছে-এতে অবশ্য একটু বিয়ে করতে লেট হয়েছে-তাদের মধ্যে ডিভোর্স কম এবং তারা বিবাহিত জীবনে অনেক বেশী সফল। এটা আমেরিকাতেও প্রমানিত।  একই ফান্ডা "স্ট্রেইট"  ভারতে লাগাতে গেলে, উলটো বিপদের সম্ভবনা আছে।  সুতরাং বুঝেসুঝে । মোটামুটি যেটা সত্য -সেটা হচ্ছে- বৈবাহিক জীবনে সফল হতে গেলে ছেলে মেয়ে দুজনেরই উচ্চশিক্ষিত হওয়া আবশ্যক। এটাই শিল্পোন্নত সমাজের বাস্তব। কিন্ত নারী বা পুরুষ যদি উচ্চশিক্ষা শেষ করে ধরুন ২৫ বা ২৭ বছর বয়সে বাজারে নামে-তখন ভাল মালত উঠে গেছে!! সুতরাং দুটোর মধ্যে কম্প্রোমাইজ দরকার। একটা অপশন পার্টনার সিলেকশন করে বহুদিন এনগেজড থেকে উচ্চশিক্ষার শেষে বিয়ে করা। যাতে শিক্ষা শেষে পাত্র পাত্রীর জন্য ভিক্ষা করতে না হয় !! আরেকটা অপশন বিয়ে করে উচ্চশিক্ষা চালানো। কোন অবস্থাতেই মেয়েদের উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা উচিত না। উচ্চশিক্ষিত মা, একজন সন্তানের জন্য বেস্ট পেরেন্টাল ইনভেস্টমেন্ট।

   (৩)
এবার বিজ্ঞানকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে কিছু বাস্তবিক কথা লিখি।

 মোদ্দা কথা আগামী দিনে বাঙালী মধ্যবিত্ত এবং উচ্চমধ্যবিত্ত সমাজে মেয়েরাই ছেলেদের সিলেক্ট করবে। উল্টোটা হবে না-কারন প্রাক্টিক্যাল ওপারেশনাল সেক্স রেশিও এখন মেয়েদের ফেবারে। যেসব ছেলে ওইসব এরেঞ্জড মেরেজের আশাতে বসে থাকবে, তাদের কপালে ভাল কিছু জোটার চান্স কম। সুতরাং একজন ছেলে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের জন্য বা ভাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন বা ভাল কোম্পানীতে চাকরির জন্য যেভাবে কষ্ট এবং পরিশ্রম করে, লাইফ পার্টনার তোলার জন্য সেই পরিশ্রম না করলে-তার সব কেরিয়ারই জলে যাবে। ভাল কেরিয়ারের জন্য, ভাল পার্টনার আবশ্যক।
মুশকিল হচ্ছে পরীক্ষার জন্য ত কোচিং সেন্টার আছে- পাত্রী তোলার শিক্ষাটা কে দেবে?

এটা আমাদের সমাজে বিরাট সমস্যা। আমি কিছু টিপস দিতে পারি মাত্র।

 প্রথমত স্টার্ট আর্লি। উচ্চমাধ্যমিক বা কলেজ থেকেই শুরু করা উচিত।  আমার বন্ধুদের মধ্যে যাদের বাল্যপ্রেম, তারা কেরিয়ারেও সফল। এর একটা বড় কারন ইমোশনাল স্টেবিলিটি। তবে প্রেমে পড়েই উচ্চশিক্ষা না সেরে বিয়ে করার জন্য লাফালে বিপদ বেশী। উচ্চশিক্ষার সাথে কম্প্রোমাইজ কখনোই না।

 দ্বিতীয়ত স্যোশালাইজেশন স্কিল খুব জরুরী। এটার জন্য স্কুল কলেজের কালচারাল সব ফেস্টে অংশ নিতে হবে।
 নাটকে অংশগ্রহণ করতে হবে। আবৃত্তি, সঙ্গীত, অঙ্কন এগুলো অবহেলা করে পরীক্ষার জন্য পড়লে কিছু হবে না। নিজেকে প্রকাশ করার সব কলা শিখতে হবে-এ ব্যপারে নাটক খুব সাহায্য করে।

 তৃতীয়ত খেলাধুলাতে অংশ নিয়ে শরীর বানাতে হবে। মেয়েরা কি ধরনের  পুরুষ শরীর কেন পছন্দ করে-তা আগেই লিখেছি। পেটে ভুঁড়ি থাকবে, আর মেয়েরা আকৃষ্ট হবে-এমন ভাবা মূর্খামি।

 চতুর্থত ভাল সাহিত্য পড়া খুব জরুরী। সাহিত্য না পড়লে একজন মেয়ের মনের গঠন বুঝবে না-তার সমস্যা গুলো বুঝবে না। এটা শুধু ইম্প্রেস করার ব্যপার না। একজনকে গভীরে না বুঝতে পারলে-সেই বা তোমাকে পাত্তা দেবে কেন?


পঞ্চমত -কিভাবে এপ্রোচ করতে হয়। ধর একটা মেয়েকে ভাল লেগে গেল। তাকে কি ডিরেক্ট গিয়ে বলবে?
একদমই না। তাতে ১০০% ব্যর্থ হবে। মনে রাখবে কেউ ওই ভাবে সিদ্ধান্ত নেয় না। প্রথমেই বন্ধু হয়ে মিশতে হবে।
এরপরে আস্তে আস্তে তাকে বুঝতে হবে। এখানেই সাহিত্য এবং বাচিক ভঙ্গী খুব কাজের।

ষষ্টত রান্না, ঘর সংসারের কাজ। এগুলো মেয়েলি কাজ বলেই চলে আমাদের সমাজে। মেয়েরা যখন নির্বাচনে ভূমিকায়, তখন তারা অবশ্যই জানতে চাইবে ছেলেটি রান্না করে কি না। রান্না করা ভাল আর্ট। এগুলো ছেলেদের ও শেখা উচিত।

 এবং শেষে সাহস ও অধ্যাবসায়।  মেয়েরা "না"  বললেও হাল ছাড়লে চলবে না। ব্যারাক ওবামাকেও মিশেল ওবামা প্রথমে না বলছিল। ফ্রেডরিক রুজভেল্টের স্ত্রীও তাই। তবে দেখতে হবে যেন মেয়েটি দ্বিধায় আছে। লেগে থাকার নামে বিরক্ত করাটাও উচিত না। তাতে হিতে বিপরীত হবে।

 আবার অনেক ক্ষেত্রেই হতে পারে মেয়েটির হয়ত একটি বয়ফ্রেন্ড আছে । সেক্ষেত্রে কি এপ্রোচ করা উচিত? অবশ্যই। কারন হতেই পারে, অপশন নেই বলে মেয়েটি ওই ছেলেটির সাথে ঘোরে। হয়ত সে তাকে চায় না। বিবর্তনের নিয়মেই নারী চায় পুরুষ তার জন্য প্রতিদ্বন্দিতাতে নামুক।  তুমি জয়েন্টের টপ র‍্যাঙ্কের জন্য কম্পিট করবে-আর একজন ভাল মেয়ের জন্য প্রতিযোগিতা থাকবে না? অবশ্যই থাকবে। সেই জন্যেই ১-৪টে পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ন।

দিন বদলাচ্ছে। যেসব পুরুষ এই বদলানো দিনের সাথে নিজেকে বদলাতে পারবে, তারাই সফল হবে জীবনসঙ্গীনীর ক্ষেত্রে।

 আমি যা লিখলাম, তা খুব সরলীকরন। বেদবাক্য একদম না। বুঝেসুঝে।