বাধ্যতামূলক সিকিউরিটি কার্ডকে কেন্দ্র করে যাদবপুরের ছাত্র আন্দোলন সম্পূর্ন ভুল দিকে টার্ন নিচ্ছে। একটি আন্দোলন স্টিমগাড়ীর মতন কু ঝিক ঝিক করতে করতে একেটি মাইলস্টোন পার করে। স্টিম ইঞ্জিনটি বাদে ট্রেনটি শুধুই লাইনে শুয়ে থাকা বগি। আন্দোলনের স্টিম ইঞ্জিনটি বুঝতে না পারলে, এর সলিল সমাধি শুধুই সময়ের অপেক্ষা। যাদবপুরের ছাত্রদের পেছনে জনগনের স্বতস্ফূর্ত সমর্থন ছিল মূলত একটা কারনে। আপামর বাঙালী জনগন সিপিএম থেকে পরিবর্তন চেয়ে আরো ভয়াবহ সিপিএমের কবলে এখন। হ্যা, তৃনমূলের এই ফ্যাসিস্ট নিপীড়নকে সাধারন মানুষ "আরো ভয়ংকর সিপিএম" হিসাবেই দেখছে। যাদবপুরের ছাত্রদের পেছনে মানুষের স্বতস্ফূর্ত সমর্থনের স্টিম ইঞ্জিনটাও সেখানেই। ২০০৫ সালে ছাত্রদের পিটিয়েছে সিপিএম, এখন তৃনমূল। ছাত্ররা যেভাবে সরকারী ফ্যাসিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, তাদের পেছনে মানুষের পূর্ন সমর্থন এই জন্যেই আছে। কারন মানসিক ভাবে সাধারন মানুষ যাদবপুরের ছাত্রদের সাথে একাত্ম। তারাও প্রথমে সিপিএম, এখন তার থেকেও ভয়ংকর সিপিএম তৃনমূলের কুম্ভীপাকে। এর থেকে নিস্তারের পথ সাধারন মানুষের হয়ত জানা নেই-কিন্ত যাদবপুরের ছাত্ররা কিঞ্চিত হলেও আশার আলোকবর্তিতা দেখাতে কিছুটা সক্ষম।
অর্থাৎ যদ্দিন আন্দোলনের অভিমুখ থাকবে তৃনমূল এবং সিপিএম বিরোধি-এই আন্দোলনে স্টীম এবং কয়লা জোগানের অভাব থাকবে না। এদের নিয়ে সাধারন মানুষের হতাশাই বাস্প যোগাবে।
কিন্ত কিছু এনার্কিস্ট প্ররোচিত হয়ে ছাত্রদের ভুল পথে চালনা করা হচ্ছে। আন্দোলনের অভিমূখ ঘোরানো হচ্ছে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যেখানে হাইকোর্ট ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তায় আই ডি কার্ড চালু করতে নির্দেশ দিয়েছে ক্যাম্পাসে। এমন কোন ছাত্র অভিভাবক আছেন যারা হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে যাবেন বা মনে করেন এই রায় ছাত্র ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য খারাপ? ওই মেয়েটির বাবা তৃনমূলের মিছিলে যেতেই আন্দোলনের এক টায়ার লিক হয়েছিল। এবার যদি সমস্ত অভিভাবকরাই এই কারনে আন্দোলনের বিরুদ্ধে চলে যায়, গোটা আন্দোলনটাই পথে বসবে। ভুললে চলবে না বাবা-মায়ের কষ্টোপার্জিত অর্থেই পড়াশোনা করছে যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরা। তারা এদ্দিন সমর্থন যুগিয়েছেন তাদের সন্তানদের আন্দোলনে-কিন্ত তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেখানে হাইকোর্ট করতে বলেছে-তার বিরুদ্ধে গিয়ে তারা বিপ্লবী বাপ হবেন, এমন আশা করতে নির্বোধদের মধ্যেও নির্বোধতর হতে হয়।
সারদা কান্ডে সুদীপ্তসেন কে পালাতে সাহায্য করার জন্য মুকুল এবং শুভেন্দু অভিযুক্ত। প্রধান বিরোধি নেতার মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন রোশনারা মিশ্র। কামদুনী থেকে পাড়ুই কান্ডে হাইকোর্ট সম্পূর্ন ভাবে অনাস্থা জানিয়েছে রাজ্যপুলিশের ওপর। সাধারন মানুষের নিরাপত্তাহীন। তারা রাগে ফুঁসছে তৃনমূলের বিরুদ্ধে। সেখান থেকে যাদবপুরের আন্দোলনকে বিচ্ছিন্ন করে হাইকোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলে-কেসটা অরভিন্দ কেজরিওয়ালের মতন হবে। অতি আদর্শবাদের চক্করে বাস্তব ভুলে শেষে এখন প্যান্ট খুঁজে পাচ্ছেন না। মমতার বিরুদ্ধে হাইকোর্টই একমাত্র ভরসা জোগাচ্ছে-আর সেই হাইকোর্টের বিরুদ্ধে পথে নামলে, যেসব জনগণ বর্তমান সরকারের, সিস্টেমের বিরোধিতায় সাহস সমর্থন জোগাচ্ছিলেন, তারা বিভ্রান্ত হবেন। সব থেকে বড় কথা ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরা সমর্থন তুলে নিলে, আন্দোলনের সবকটা টায়ার পাংচার হবে। এখনত শুধু একটা গেছে।
পশ্চিম বঙ্গে বামেদের ভোট ৪৮% থেকে ৪২%-সেখান থেকে ৩৮, থেকে ২৭ হয়ে সদ্য উপনির্বাচনে ১৪% এ নেমেছে মাত্র চার বছরে। কারন পশ্চিম বঙ্গে বামেদের রাজনীতি এবং বাস্তব জ্ঞানের তীব্র অভাব। বামেরা যেভাবে বাস্তব জ্ঞানের অভাবে বাঘ থেকে বিড়াল হয়েছেন পশ্চিম বঙ্গে-এবার ইঁদুর হওয়ার দিকে এগোচ্ছেন-তাদের কথা শুনে বাস্তবজ্ঞান তিরোহিত হয়ে আন্দোলন চালা্লে, যাদবপুর আন্দোলনের ও একই হাল হবে।
No comments:
Post a Comment