কথাটা নতুন নয়-বামেরা এককালে আকাশ বাতাস মুখরিত করেছে দেশ বিক্রীর আষাঢ়ে
গল্পে। মনমোহন যেদিন ভারতে বিনিয়োগের দরজা খুলেছিলেন-সেদিন ও কিছু বাম এসব করেছিল।
আজ তারা ভুতেদের দলে। কারন এই বিদেশী বিনিয়োগের হাত ধরেই ভারত গত দুদশকে দ্রুত
উঠেছে।
অধুনা বাম, মমতা দিদিও একই অর্ন্তজলি পথের
পথিক।। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। গণতন্ত্রে উনার সেই অধিকার আছে এবং আমি বলবো
মমতার এই কেন্দ্রবিরোধি অবস্থান গণতন্ত্রের জন্যে ভাল হলেও দেশের জন্যে ভাল না।
বিদেশী বিনিয়োগে সত্যিই কি দেশ বিক্রি
হয়? আসুন আমরা একটু যুক্তি তথ্যের সাহায্যে বুঝি!
·
পৃথিবীতে সব থেকে
বেশি বিদেশী বিনিয়োগ হয় আমেরিকাতে। আমেরিকা সব দেশের কাছে বিক্রি হয় গেছে? কি
হাস্যকর। এরপর সব থেকে বেশি বিনিয়োগ হয়
চীনে। সেই দেশটাও কাল বিক্রি হয়ে গেল? পৃথিবীর সর্ববৃহৎ দুই দেশে বিদেশী বিনিয়োগ
সর্বাধিক!
·
১৯৯১ সাল থেকে ভারতে সিরিয়াস বিদেশী বিনিয়োগ আসতে থাকে।
আজকে যে সফটোয়ারের মধ্যবিত্ত শ্রেনী তৈরী হয়েছে-সেটা পুরোপুরিই বিদেশী বিনিয়োগের
হাত ধরে। সেদিন মনমোহন যদি জ্যোতিবোসের কথা শুনতেন ( আজকের জ্যোতি হচ্ছে মমতা )
তাহলে যে ছেলেগুলো আজকে প্লেনে চড়ে বিদেশে ঘুরছে, বড় ফ্ল্যাট কিনছে এরা বড়জোর কোন মারোয়ারী ফার্মে পাঁচ হাজারি
চাকরি করত। এই সত্য অস্বীকার করবে কে?
·
বিদেশী বিনিয়োগ ছাড়া কোন বিজনেসে আধুনিক প্রযুক্তিই বা আসবে
কোথা থেকে? ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও, চলছে না চলবে না তে কি ভারত এগিয়েছে? প্রযুক্তিই একমাত্র দেশকে এগিয়ে দেয়। বিদেশী
বিনিয়োগ না হলে ভারতে প্রযুক্তি নির্ভর সমাজের উত্থান আরো মন্থর হবে।
·
এটা প্লোবালাইজেশনের যুগ। কালকে ওবামা যদি আমেরিকানদের কথা
মেনে, যে আমেরিকানদের চাকরি যাচ্ছে, তাই আউটসোর্সিং বন্ধ করার আইন আনেন, তাহলে
ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণী পথের ভিখিরী হয়ে যাবে একদিনে। কিন্ত আমেরিকান লোকেদের যতই
মনবাঞ্ছা থাক আউটসোর্সিং বন্ধ করার জন্যে আমেরিকান রাজনৈতিক নেতৃত্ব তা করে না।
কারন সেটা করলে, আমেরিকা আর প্রতিযোগিতার মার্কেটে টিকতেই পারত না। তাতে আরো বেশি আমেরিকানের চাকরী যেত-এবং
আমেরিকা নেতৃত্ব পজিশন ও হারাত। কিছু সাহাবাবু দের ব্যাবসার ক্ষতি হবে, সেই যুক্তি
মেনে চললে, ভারত পিছিয়ে পড়বে। যেভাবে আজ পশ্চিম বঙ্গ ব্যাঙ্গালোরের অনেক পেছনে চলে গেছে।
সুতরাং গ্লোবাইজেশনের যুগে, এই ধরনের প্রটেকশনিজম
অর্থহীন। এই ব্যাপারে মার্ক্সের কথাকেই
আরেকবার স্বরণ করি
“Moreover, the
protectionist system is nothing but a means of establishing large-scale
industry in any given country, that is to say, of making it dependent upon the
world market, and from the moment that dependence upon the world market is
established, there is already more or less dependence upon free trade. Besides
this, the protective system helps to develop free trade competition within a
country. Hence we see that in countries where the bourgeoisie is beginning to
make itself felt as a class, in Germany for example, it makes great efforts to
obtain protective duties. They serve the bourgeoisie as weapons against
feudalism and absolute government, as a means for the concentration of its own
powers and for the realization of free trade within the same country.
But, in general, the
protective system of our day is conservative, while the free trade system is
destructive. It breaks up old nationalities and pushes the antagonism of the
proletariat and the bourgeoisie to the extreme point. In a word, the free trade
system hastens the social revolution. It is in this revolutionary sense alone,
gentlemen, that I vote in favor of free trade.”
মার্ক্স বহুদিন আগে যা বলে গিয়েছিলেন তা আজও
সত্য। সেই সত্যটা হল এই, বিদেশী বিনিয়োগে খেটে খাওয়া মানুষের অবস্থার পরিবর্তন হয়
না-তারা দেশজ বুর্জোয়াদের বদলে বিদেশী বুর্জোয়াদের হাতে শোষিত হবে। আর এই ধরনের
বিদেশী বিনিয়োগের বিরোধিতা করবে দেশীয় বুর্জোয়া শ্রেনী-অর্থাৎ দেশীয় দোকানদাররা। ভারতে আজ আমরা সেটাই দেখছি।
মার্ক্স যে কারনে মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে ছিলেন,
আমিও সেই কারনেই মুক্ত এবং অবাধ বাণিজ্যের পক্ষে।
ভারতের উন্নতির সব থেকে বড় অন্তরায় দেশীয় মারোয়ারি , পারিবারিক
ব্যাবসায়ীরা। বিদেশী বিনিয়োগের সামনে এরা উড়ে যাবে। এরা এত অসৎ এবং দল পাকিয়ে রেখেছে-মমতার
মতন রাজনীতিবিদ দের কিনে রেখেছে, এদের না
ওঠাতে পারলে ভারতের ব্যাবসাতে সৎ মেধাবী ছেলে মেয়েদের আসা অসম্ভব। সুতরাং দেশীয় এই পারিবারিক ব্যবসায়ী শ্রেনীর
ধ্বংস করার জন্যে বিদেশী বিনিয়োগ আসুক এবং ভারতে আমেরিকার মতন সাধারন ঘর থেকে
মেধাবী পরিশ্রমী ব্যাবসায়ি শ্রেনী উঠে আসুক।
No comments:
Post a Comment