Friday, September 21, 2012

আম আদমি ! ও রিয়ালি?


আম আদমি ! ও রিয়ালি?
 -বিপ্লব
মনমোহনের ভাষন শোনার পর, মমতার ফেসবুক স্টাটাস আপডেট- সবাই আম আদমির নাম করে, আম আর ছালা চুরিতে ব্যস্ত!

  চারিদিকে বাম বাঙালী, তৃণমূলী বাঙালী এবং প্রবিজ্ঞ বাঙালীর কথা শুনে মনে হতে পারে রিটেলে বিদেশী বিনিয়োগ মানে দেশের সর্বনাশ হল বলে! দেশের সাধারন দোকানদাররা, যারা দুয়ানা করে খাচ্ছিল, তারা এবার গেল!

প্রথমেই বলে রাখি –আমি কংগ্রেসের তথা মনমোহনের গুণমুদ্ধ কেও নই। চারিদিকে যেভাবে সরকারটাই চুরি হয়ে গেছে, মনমোহন তার নিজের অপদার্থতার চূড়ান্ত প্রমান দিয়েছেন।  নৈতিক দ্বায়িত্ব মেনে কয়লা বা কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারীতেই তার পদত্যাগ করা উচিৎ ছিল। কমনওয়েলথ গেমসের বাজারে, এক বছর আগে থেকেই ডিল নিলাম হচ্ছিল এবং ফরের দল খেলছিল। গোটা দিল্লী জানত এই খেলার মহা খেলুড়েটে কে আর মনমোহন জানতেন না?  অসম্ভব।  সুতরাং সর্দারজী নিজে চোর না হলেও, চুরি ডাকাতি গায়ে মাখেন না-এটা নিয়ে আমাদের কারুর কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়।  এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী চোর ও ডাকাত দের এত মমত্ব দিয়ে পুষিলে, তার যোগ্যতা নিয়ে সংশয় থাকবেই।

কিন্ত এই সর্দারজির জন্যেই ভারত আজকে জগৎ সভায় মুখ উঁচু করে চলে। এই সর্দারজির জন্যেই ভারতে আজ ৫০ লাখের বেশী সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়ার এবং মাইক্রোসফট থেকে পৃথিবীর সব সেরা কোম্পানীগুলির অফিস ভারতে। এই সর্দারজির জন্যেই ভারতের তরুন মধ্যবিত্ত সমাজ ভাল চাকরির স্বপ্ন দেখতে শিখেছে। এবং ভারতে আজকে যেটুকু অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে, তার মূলে অবশ্যই বিদেশী বিনিয়োগ যা মনমোহনের সংস্কারের পথেই এসেছে। কারন একমাত্র বিদেশী বিনিয়োগের মাধ্যমেই ভারত বিশ্বের অর্থানীতির সাথে যুক্ত হতে পারে, যা উৎপাদন উন্নততর করে।  সুতরাং যেসেব সেক্টর বিদেশী বিদেশী বিনিয়োগের জন্যে খুলে দেওয়া হয়েছে,  সেখানে আমরা চমকপ্রদ উন্নতি দেখেছি। সফটোয়ার বা ফার্মা সেক্টর এর সব থেকে বড় উদাহরণ।

 এবার প্রশ্ন হচ্ছে খুচরো ব্যাবসায় বিদেশী বিনিয়োগ, ভারতের দোকানদার দের ক্ষতি করবে কি না। তাদের রুটি রোজগার মারবে কি না। বিশেষত যখন ভারতের ১৩% লোক দোকানদারি করেই খাচ্ছে।
  এর সোজা উত্তর সেই ১৩% এর মধ্যে অন্তত ৫-৬% ব্যাবসা হারাবে। আনন্দবাজার বা প্রধানমন্ত্রী যতই আশ্বাস দিক,  আমার আমেরিকাতে দেখা অভিজ্ঞতা হল কোন নতুন শহরে ওয়ালমার্ট আসলে, স্থানীয় ব্যাবসার ৮০% পাঠ তোলে। আমি অন্তত ৪ টি এমন কেস চোখে দেখেছি।  ভারতে সেটা ২০% মতন হবে কারন এক কোটির বড় শহর ছাড়া এই ধরনের বড় রিটেল খোলার অনুমতি বিলে দেয় নি। তাছারা ভারতে এই সব বড় শপ, শহরের অনেক বাইরেই করতে হবে। সুতরাং বিগরিটেলে ভারতের ছোট ব্যবসায়িদের ক্ষতি কিছু হবে-কিন্ত সেটা আমেরিকার অনুপাতে কমই হবে।

 কিন্ত এসবের পরেও আমি নিশ্চিত ভাবেই মনে করি বিগ রিটেলে বিদেশী বিনিয়োগ ১০০% সঠিক সিদ্ধান্ত।
 
   [১]  উন্নততর উৎপাদন এবং বন্টন রাজনীতি করে আটকানো সবসময় মূঢ়তা। কারন, এতে উৎপাদন কমে। ভারতে জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক বেশি দাম। আমেরিকাতে অধিকাংশই দ্রব্যই ভারতের থেকে সস্তা যেখানে আমেরিকাতে লো কস্ট ম্যানপাওয়ারের কস্ট ভারতের প্রায় ২০ গুন। কারন বিগ রিটেলের সিস্টেম। সেখানে সাপ্লাই চেন থেকে ডেলিভারি সব সিস্টেমে হবে-ফলে অসংখ্য মিডলম্যান সেই বিগরিটেল ট্রেনে কাটা পড়বে। এবং ভল্যুয়মে বিক্রি হলে মার্জিন অনেক কম রেখে বিক্রি সম্ভব-উৎপাদক সরাসরি ডেলিভারি দিতে পারবে।  যার ফলে আস্তে আস্তে ভারতে অনেক দ্রব্যের দাম কমবে।  

 বেসিক্যালি ব্যাপারটা হবে এই- ভারতের ১৩% লোক মধ্যসত্ত্বভোগী ছিল-এবার তাদের টাকা না দিতে হওয়াতে, খুচরো জিনিসের দাম অবধারিত ভাবে কমবে। যা আমরা আমেরিকাতে দেখেছি। সুতরাং আম আদমীর প্রশ্ন উঠলে কৃষক এবং সাধারন মানুষের জন্যে রেটেলে বিদেশী বিনিয়োগ আশীর্বাদ। অভিশাপ না।  সুতরাং রিটেলে বিদেশী বিনিয়োগ আমআদমীর পক্ষেই।

 [২] প্রশ্ন হচ্ছে এই ১৩% দোকানদার দের, আমাদের সাহাবাবু দের কি হইবে?
 কোন ভণিতা না করেই বলা যাক, তাদের দোকানদারি ছেরে অন্য ব্যবসা দেখতে হবে।  উন্নততর উৎপাদন প্রক্রিয়া আসলে, অনুন্নত উৎপাদনের সাথে যারা জড়িত, তাদের কর্মনাশ হয়। এটা ইতিহাসের স্বাভাবিক গতি। আমরা কি দেখিনি গত ২০ বছর কেরানী বলে পেশাটা উঠে গেছে?  এখন গ্রামীন শহরের বড় দোকানগুলিতেও খাতা দেখাশোনা করার ব্যাপার নেই। কম্পুটার চলছে। যারা খাতা লিখত, তারা অতীত। তরুন যুবকেরা সবটাই কম্পুটার একাউন্টিং করছে।  অথচ এই সেই দিনও কমরেডরা আকাশ বাতাস মুখরিত করেছিলেন কম্পুটারের বিরুদ্ধে ----কম্পুটার আসলে লোকের চাকরি যাবে! আসলে সেই কম্পিউটারই ভারতের নতুন কর্মপন্থা খুলে দিলে। রিটেলেও তাই হবে। সেখানে বিনিয়োগ আসলে উন্নত রিটেলের সাথে অনেক উন্নত পরিশেবা আসে, যেখানে চাকরির সংস্থান হবে।

 এই ভাবেই কলকাতা তলিয়ে গিয়েছিল ব্যাঙ্গালোরের অনেক অনেক নীচে।  নতুন উৎপাদন ব্যবস্থা আসলে, পুরাতনের কর্মনাশ হয়। এটা না হলে ত সভ্যতাই এগোবে না!  হাল বসে যাবে বলে আমরা জমিতে ট্রাক্টর চালাতে দেব না? এটাত সভ্যতার গতি হতে পারে না।  ইতিহাস বলে যে সমাজ উন্নততর উৎপাদন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়, তারা ধ্বংস হয় কালক্রমে।

[৩] সব থেকে বড় কথা সভ্যতা গতি বিগ রিটেলেও না। সভ্যতার গতি ইকমার্স রিটেলে। যা ভারতে বিরাট ভাবে ঢুকেছে।  সাহাবাবুরা চান বা না চান, তাদের দোকানের বয়স আর ২০ বছরের বেশি না। ভারতেও ইকমার্স এবং ইডেলিভারি আগামী ১০ বছরে সাঁই সাঁই করে উঠবে। ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানগুলি দেওলিয়া হবে সবার আগে।  দোকানদারির মতন যে পেশা ইন্টারনেট যুগের সাথে সামঞ্জস্য না, সেই পেশাকে টেকানোর জন্যে একটা জাতিকে পিছিয়ে দেওয়া কি ঠিক হবে? দোকানদারের ছেলেরা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে লোকাল ইডেলিভারি ব্যবসা শুরু করুক। সেটাই হবে সভ্যতার গতি।
মোদ্দা কথা মমতা যদি কয়লা কেলেঙ্কারীতে ইউ পি এ ছাড়তেন, আমি সমর্থন করতাম।  কিন্ত মমতা বিরোধিতা করছেন এমন একটা ইস্যুতে যা ভারতকে পেছনের দিকে ঠেলবে।  



No comments: