ক্ষুধিত ড্রাগন ---
বিপ্লব পাল, দোশরা আগষ্ট , ২০২২
তাইওয়ান। কেরালার মতন আয়তনের ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র। আড়াইকোটি লোকের বাস। পৃথিবীর ৫৪% সেমিকন্ডাক্টর চিপ এখানেই তৈরী হয়, শুধু একটি কারখানায়। জনপ্রতি ইনকামে দেশটি ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের ওপরে।
এখন গোটা পৃথিবীর প্রশ্ন, ইউক্রেনের পর কি তাইওয়ান?
তাইওয়ান স্বাধীন রাষ্ট্র কি না- সেটা কেউ ঠিক করে বলতে পারবে না। কারন তাইওয়ান এবং চীন-দুটি দেশের সংবিধান বলে চীন আসলে একটিই! তাইওয়ান বলে বৃহত্তর চীন আসলে আমাদের অংশ। চীন বলে তাইওয়ানের অস্তিত্ব নেই-তারা আমাদের অংশ। শুধু তাই না। ভারত, আমেরিকা-বা যেকোন বহুজাতিক কোম্পানি-যারাই চীনের সাথে ব্যবসারত সবাইকে এই মর্মে সাইন করতে হয়-তারা ওয়ান চীন পলিসি স্বীকার করতে বাধ্য!
এত জটিল পরিস্থিতি কি করে হল? ১৮৯৪ সালের আগে তাইওয়ান ছিল, চীনের চেং সাম্রাজ্যের অংশ। ওই বছর জাপান দ্বীপটি দখল করে, নাম দেয় ফরমোসা আইল্যান্ড। কিন্ত ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হারার পরে, জাপান দ্বীপটি আবার চীনকে ফিরিয়ে দেয়। তখন চীনের জেনারেল চিয়াং কাইসেক। মাও এবং চিয়াং কাইসেক দুজনেই চীনের পিতা সান ইয়াত সেনের শিষ্য। মাওএর রেড আর্মি, চীনের ন্যাশানাল আর্মিকে কোনঠাসা করা শুরু করলে, চিয়াং কাইসেক তাইওয়ানে আশ্রয় নেন (১৯৪৯) এবং ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশটিকে শাসন করেন। চিয়াং কাইসেক এবং আমেরিকা ও পাশ্চাত্যের দেশগুলি ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দাবী করে এসেছে, এই তাইওয়ানই হচ্ছে আসল রিপাবলিক অব চাইনা। কিন্ত সোভিয়েতের সাথে চীনের সম্পর্ক খারাপ হতেই, আমেরিকা সুযোগ বুঝে, চীনকেই আসল রিপাবলিক অব চাইনা বলে স্বীকৃতি দেয়। ভারত এই কাজটি করে সিকিএমের অন্তর্ভুক্তির সময়। সিকিমের অন্তর্ভুক্তি কে চীন মেনে নেয়। বিনিময়ে ভারতকে স্বীকার করতে হয় ওয়ান চিন পলিসি।
কিন্ত আমেরিকা, তাইওয়ান্কে মিলিটারি প্রোটেকশন দিতে থাকে। কারন সাউথ চাইনা সি। দক্ষিন চীনের এই সমুদ্র দিয়ে ৩০% গ্লোবাল বানিজ্য চলে। তিন ট্রিলিয়ান ডলারের। তার সাথে সেমিকন্ডাক্টর চীপ। যার লিডার তাইওয়ানের ন্যাশানাল সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানী বা টি এস এম সি। পৃথিবীর সব স্মার্টফোনের চিপ এখানেই তৈরী হয়। ফলে তাইওয়ান চীনের হাতে হাতছাড়া হলে, আমেরিকার দুকুল যাবে। গোটা পৃথিবী চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাবে।
চীন হঠাত করে এত তাইওয়ান নিয়ে লাফাচ্ছে কেন? কারন তাইওয়ানের বর্তমান লিডার- তাই জেন ওয়াং। এই মহিলা, বলে দিয়েছেন, এই ওয়ান চাইনা খেলা বন্ধ করতে হবে। তাইওয়ান আলাদা দেশ, চীন আলাদা দেশ। তাইওয়ানের কোন ইচ্ছা নেই নিজেদের আসল রিপাবলিক অব চাইনা বলে দাবী করার ( যা তাইওয়ান পাসপোর্টে লেখা থাকে)। মুশকিল হচ্ছ ১৯৯৪ সালে চুক্তি অনুযায়ী তাইওয়ান এবং চীন- অহিংসভাবে, চুক্তির মাধ্যমে ধীরে ধীরে মিশে যাওয়ার কথা-কারন উভয় দেশের নেতৃত্ব স্বীকার করত- তারা এক এবং অখন্ডচীনে বিশ্বাসী। এই ভদ্রমহিলা বলছেন-ঐতিহাসিক রোম্যান্টিসিজম বাদ দিয়ে বাস্তবে নেমে আসুন। তাইওয়ানের কোন অখন্ড চীনের খোয়াব নেই।
তাই জেন ওয়াং হচ্ছেন তাইওয়ানের জেলেনাক্সি। ইউক্রেন এবং রাশিয়ার পিতা- ভ্লাদিমির দ্য গ্রেট। তাতে কি? দুটো দেশ এখন আলাদা, সেটাই বাস্তব। তাই জেন ও তাই বলছেন। দুই দেশের পিতা সান ইয়াত সেন। কিন্ত দুটো দেশ এখন আলাদা।
এই অখন্ড চীন ব্যপারটা গোলমেলে। এর মানে চেং সাম্রাজ্যের সময় চীনের সীমানা। যার মধ্যে লাদাখ, অরুনাচল-ইত্যাদি ভারতের অঞ্চলগুলোও আসে। সুতরাং অখন্ড চীনের এই খোয়াব ভারতের জন্যও ভাল না।
আমেরিকা চীন যুদ্ধ কি লাগবে? লাগতে পারে। তাইওয়ান ইউক্রেন না। আমেরিকাকে প্রোটেকশন দিতেই হবে। চীনের মিলিটারি ক্ষমতা বেড়েছে অপ্রতিরোধ্য ভাবে। কিন্ত এখনো চীন আমেরিকার সমান না। আজ না হলে কাল, চীন যুদ্ধে যাবে। কিন্ত এখন না। আমিরিকাও সেটা জানে। সুতরাং চীনকে থামাতে হলে এখনই থামাতে হবে। কিভাবে? যদি চীন উস্কানিতে পুতিনের মতন স্টেপ নিয়ে বসে। সুতরাং এখন ন্যান্সি পলোসি গেছেন। কাল বাইডেন যাবেন। উস্কানি আনলিমিটেড চলতে থাকবে। চিন ও পেশী দেখাবে।
সব মিলিয়ে জিওপলিটিক্স গোলমেলে। ড্রাগন এখন ক্ষুদার্থ। সে অরুনাচল থেকে তাইওয়ান-যা কিছু চেং ডাইন্যাস্টির ছিল-সব কিছু খেতে চাইছে। ভারত, আমেরিকা, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ইন্দোনেশিয়া-এই রাষ্ট্রগুলির একসাথে চীন বিরোধি জোট করা ছাড়া উপায় নেই।
আশা ভরসা আছে। চীন কোরাপ্ট অলিয়ার্গিতে চলে না। কমিনিউস্ট পার্টির নেতারা সাধারন মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি থেকে উঠে আসা। নীল রক্তের বাহক নন। এরা যুদ্ধ চান না। নিজেদের সন্তানরা ব্যবসা বানিজ্য করে বিলিয়ানার হলেই এরা খুশী। সেটাই এদের মোক্ষ। যুদ্ধবাজ এরা নন। এরা ধান্দাবাজ কমিনিউস্ট। সুতরাং ফোঁস করবে। কিন্ত কামরাবে না।
No comments:
Post a Comment