তালিবানদের ক্ষমতা দখলে ভারতের হিন্দুত্ববাদিরা উল্লাসিত। ইসলাম কত বাজে তা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার "শোকেস" তালিবান। আর সেই ধারনাই স্টাম্পিং করছে অনলাইন উপভারতীয় মুসলমানরা। যারা কিন্ত বাংলাদেশে তালিবান শাসন কায়েম হলে ঢাকা বিমানবন্দরে সবার আগে লাইন দেবে। বা পশ্চিম বঙ্গে লাফিয়ে চলে আসবে। ঠিক বঙ্গজ কমিনিউস্টদের মতন। এরা কিউবা নিয়ে বগল বাজায়। কিন্ত কিউবার ফিদেলের মতন কোন শাসক ক্ষমতা দখল করলে, এরা কিন্ত সবার আগে বোটে চড়ে পালাবে।
আমি আগের দিন লিখেছি, আজও লিখছি, ভারতের হিন্দুত্ববাদিদের রাজনীতির সাথে যেমন ভারতীয় দর্শনের সংশ্রব নেই- ঠিক তেমনই তালিবানদের সাথে ইসলামের সংযোগ নেই।
আর যে যুক্তিতে তালিবানদের সাথে ইসলামের যোগ হিন্দুত্ববাদিরা পেতে পারে- ঠিক সেই যুক্তিতে হিন্দুত্ববাদিদের সাথে হিন্দু ধর্মের যোগ ও অনেক মুসলমানরা পেয়ে থাকে। সেই যোগসূত্রতা হচ্ছে ধর্ম নিয়ে অজ্ঞতা। কোন হিন্দুত্ববাদি নিজেকে হিন্দু ধর্মের ঘোষিত রক্ষক বললেই যেমন ধর্মটা তার হবে না-ঠিক তেমনই তালিবানরা ইসলামের নামে নারী বিরোধি কীর্তি কলাপ করলেই, সেটা ইসলামিক কুকীর্তি হয় না।
আসলে একটা ধর্ম বুঝতে যতটা ইতিহাস, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন জানতে হয়, সেই চেষ্টা কেউ করে না । ফলে অধিকাংশ লোকই ধর্মের বিষ্ঠার সাথেই বেশী পরিচিত। কারন ওই বিষ্টার সার দেশের শাসককূলের জন্য উৎকৃষ্ট। ফলে জালালুদ্দিন রুমি বা মৌলা বাখাসের কবিতা সমগ্র ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে না। তালিবানদের নৃশংসতা ইসলাম হয়ে ওঠে।
***বাকিদের জন্য ইসলামের ইতিহাসের একটা বেসিক ফুটনোট ***
যেকোন ধর্মের ইতিহাসকে ট্রেস করলে একটা সত্য খুবই পরিস্কার। এগুলি ছিল, সেযুগের প্রগতিশীল আন্দোলনের ধারা। সেই জন্যেই জনপ্রিয় হতে থাকে। ইসলাম তার ব্যতিক্রম না। কিন্ত সেই প্রগতিশীল ধারাটিকে হাতিয়ার করে যারা ক্ষমতায় বসে, তারাই সেই ধারাটিকে রিয়াক্টিভ এবং বিশাক্ত করে তোলে। ইসলাম মক্কার আলোকিত ব্যবসায়ী সম্প্রদায় হানিফদের ধর্ম সংস্কার আন্দোলন ছিল - যার জন্য ইসলামে স্যোশাল কনট্রাক্ট গুলি- সে বিয়েই হোক বা ব্যবসা- সব কিছুতেই চুক্তিপত্রের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর থেকেই বোঝা যায় ইসলামের উত্থানের পেছনে ছিল মক্কার ব্যবসায়ী সম্প্রদায়-যাদের ক্যারভান অবাধে লুঠ হত-ব্যবসার জন্য মারামারি হানাহানি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সেসব কাটিয়ে উঠে এক চুক্তিভিত্তিক সমাজ-আরবকে দিয়েছিল ইসলাম। যার জন্য উত্তরে ইস্টার্ন রোমান এম্পায়ার, পূর্বে শক্তিশালী সেসানিড, গেসানিডরা। তাদের তুলনায় আরবদের শক্তি কতটুকু ছিল সেসময়? অধিকাংশ সময় যুদ্ধে ১ঃ১০ এই রেশিওতে তারা যুদ্ধ করে জিতেছে? কেন? কারন দেখা গেছে, বিপক্ষের যোদ্ধারাই ইসলামের আইন মেনে নিতে চেয়েছে যেহেতু- সেখানে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে সাধারন মানুষের অনেক সুরাহা ছিল। কিন্ত এই প্রগতিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে রাশিদুন খালিফা থেকে একের পর এক খালিফারা ক্ষমতায় ফুলে লাল হলেন। অন্যদিকে ইসলামের মধ্যে থেকেই অনেক নতুন ধর্ম আন্দোলন উঠে আসছিল-যা আরো প্রগতিশীল।এইখানেই নবম-দশম শতক থেকে ইসলামের বিকাশ সম্পূর্ন বন্ধ করে দেন খালিফারা কারন ইসলামের নতুন ধর্ম আন্দোলন গুলিতে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ ব্যহত হচ্ছিল। ফলে সেই সময়ের সব থেকে প্রগতিশীল ধর্মকে অন্ধ মধ্যযুগীয় ধর্ম হিসাবে তুলে ধরা হতে থাকে একাদশ শতাব্দি থেকে। যেটা আজও তাই চলে আসছে। ফলে সবার মনে হতেই পারে ইসলাম খুব বাজে। কিন্ত আমি ইসলামের ইতিহাসে গভীরে গিয়ে দেখে অবাক হই- সেটি সেই সময় সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে ছিল- যেখানে সব স্যোশাল কনট্রাক্টকে চুক্তির মাধ্যমে আনার চেষ্টা-যা একটি আধুনিক পুঁজিবাদি রাষ্ট্রই বর্তমানে ভাবতে পারে।
No comments:
Post a Comment