আমার ধর্ম,
আমার ধর্মের অপমান ইত্যাদি
-১/২১/২০২১
হিন্দুত্ববাদের
উত্থানের সাথে সাথে “আমার ধর্ম হিন্দু ধর্ম” -এই ধারনাটা বেশ ঘণীভূত এখন। চারিদিকে
সেটাই ঘিন ঘিন করছে । এই ধরনের উগ্রতা ইসলামে
দেখা যেত। খ্রীষ্ঠান ধর্মে আগে ছিল। ইসলামে এটা “কৌম”-কমিউনিটি বা সম্প্রদায়।
ভারতে যেভাবে
অতীতে ঐতিহাসিক ভাবে ধর্মাচরন হত ( বা এখনো হয়)- তা নিতান্তই ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম
যাত্রা। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের গুরু কৌটিল্য ব্রাহ্মন, কিন্ত তিনি বিয়াল্লিশ বছর বয়সে
জৈন সন্ন্যাসী হয়ে সব কিছু ত্যাগ করলেন। বিম্বিসার ছিলেন অভাজিকা নামে এক লুপ্ত নাস্তিক্য
ধর্মের লোক। সম্রাট অশোক বৌদ্ধ ধর্ম নিয়েছেন পরে-ছোটবেলায় ধর্ম নিয়ে কোন চিন্তা তার
মাথায় ছিল না।
অর্থাৎ ভারতের
সংস্কৃতি্র আদিতে মানুষের ধর্ম পরিচয়, যে আমি
হিন্দু আমি বৌদ্ধ এমন ছিল না। হিন্দুর সন্তান মানে সেও বাবার মতন হিন্দু হবে বা বৌদ্ধ
বাবার সন্তান বৌদ্ধ ধর্ম পালন করবে-এসব ছিল না। কারন ধর্ম সাধনাকে ভারতবর্ষ চিরকাল
ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক উপসনা হিসাবেই দেখেছে
। বৌদ্ধ, জৈনরা প্রথম সম্প্রদায় তৈরী
করে। কিন্ত তা ছিল সন্ন্যাসী সম্প্রদায়। কারন ভারতবর্ষের সাধারন মানুষ সংসার ধর্ম শেষ
করে বানপ্রস্থে আধ্যাত্মিক জীবনের সন্ধানে যেত।
প্রত্যেকের আধ্যাত্মিক জার্নি ছিল নিজস্ব। তার নিজের পথের সাথে পরিবারের ধর্মেরই
কোন সম্পর্ক থাকত না। রাষ্ট্রের ধর্ম অনেক দূরের ব্যপার।
খ্রীষ্ঠান ধর্মের উত্থানের সাথে সাথে রাষ্ট্রের “ধর্ম”
এবং “ধর্ম সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক ক্ষমতা” এই দুটো জিনিস ইতিহাসে আমদানি হয়। ইসলামে “ধর্ম
এবং রাষ্ট্র” বা ধর্ম পরিচালিত রাষ্ট্রের ধারনা খ্রীষ্টান ধর্ম থেকেই নেওয়া এবং রাষ্ট্রের
ধর্ম সেখানে আরো মজবুত । ইসলামে যেহেতু ধর্ম এবং রাজনীতি একই সূত্রে বাঁধা সেহেতু মুসলিম
দেশগুলিতে ইসলাম রাজনীতির সেন্টাল থিম। তবে সেখানে ইসলামিক পার্টিগুলি ভোট নাও পেতে পারে। তার একটা কারন এই যে -সাধারন দলগুলিও ইসলামের নামেই
রাজনীতি করে। যেমন বাংলাদেশে জামাতিরা ভোট পায় না। তার কারন কি এই যে বাংলাদেশের লোকেরা
সেকুলার? আমার তা মনে হয় না। এর কারন এই যে আওয়ামি লীগ বা বি এন পি এতটাই ইসলাম মেনে
চলে যে , বাংলাদেশের সাধারন লোকেরা আলাদা কোন
ইসলামিক জামাতের প্রয়োজন অনুভব করে না।
আজকে হিন্দুরা
যে মুসলমানদের মতন সর্বত্র হিন্দু ধর্মের অবমাননা দেখতে পাচ্ছে-তা ইসলামের হনুকরন।
সঙ্গদোষ। ধর্মের হাত ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতা পেলে, লোকে ওটা করে-যেমন মুসলমানরা এদ্দিন
করে এসেছে। কিন্ত পাশাপাশি এটাও ঠিক- ইসলামের জন্মের দুশো বছরের মধ্যে সুফী আন্দোলনের
জন্ম হয়েছিল ইসলামকে রাজনীতি মুক্ত করতে। কিন্ত সেটা হওয়ার না-কারন ইসলামের উত্থান
একই সাথে রাজনৈতিক-ধার্মিক শক্তি হিসাবে। ইসলামে থিওলজি রাজনীতির থেকে আলাদা করা যায়
না যেহেতু কোরানের ছত্রে ছত্রে রাজনৈতিক নির্দেশ, শাসন পরিচালনার নির্দেশ-অর্থাত একটি
পূর্নাঙ্গ রাজনৈতিক তত্ত্ব দেখা যায়।
কিন্ত ভারতের
কোন ধর্মই তা ছিল না। ভারতের ধর্ম সাধনার শুরুই হয় ইহজাগতিক সব কিছু থেকে মুক্ত হতে!
সংসার ত্যাগ করতে। ইসলামের ইতিহাসে কোন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য নেই -যিনি সিংহাসন ছেড়ে
জৈন সাধক সন্ন্যাসী ভিখিরি হয়েছেন। তার কাছে ধর্ম হচ্ছে “ব্যাক্তিগত সাধনা” যা সংসার
মায়া মোহ ত্যাগ করেই শুরু হয়। ফলে বিয়াল্লিশ বছর বয়সেই তিনি সিংহাসন ত্যাগ করেন। সংসার
ত্যাগ করেন। সম্রাট অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধের পর,
অনুতাপে নিজের খোদাই করা এডিক্টে নিজে বলে গেছেন, এত প্রানী হত্যার দায় নিয়ে তিনি অনুতপ্ত।
তাকে কলিঙ্গবাসী যেন ক্ষমা করে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোন রাজা রাজ্যজয়ের পর, সেই রাজ্যের
অধিবাসিদের কাছ থেকে ক্ষমা চান নি। ভারতের
দুই পৌরানিক গ্রন্থেও রাজনীতি এবং ধর্মের স্থান সুনির্দিষ্ট। রাবন বধের পর, লক্ষনকে
রাম বল্লেন যাও রাবনের কাছে গিয়ে রাজনীতির শিক্ষা নাও। লক্ষন প্রথমবার রাবনের মাথার
কাছে এলেন। রাবন কিছুই বল্লেন না। রাম লক্ষনকে বল্লেন-আচ্ছা শিক্ষাটা নিচ্ছে কে?? গুরুর
শিক্ষা পায়ের কাছে বসে নিতে হয়। এবার লক্ষন রাবনের পায়ের কাছে বসলেন। রাবন মৃত্যুর
আগে লক্ষনকে রাজনৈতিক শিক্ষা দিয়ে যান। আমি
যত রামায়ন মহাভারত পরেছি-ততই মুগ্ধ হয়েছি। কারন বর্তমানের রাজনীতিতে ওই লেভেলের মানবিক
গুনাবলির ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। ভেনে দেখুন।
রামের মতন শক্তিশালী পরমবীর রাজাকেও প্রজাদের মান রাখতে স্ত্রী ত্যাগ কর্তে হয়েছে।
তিনি নিজের মত প্রজাদের ওপর চাপাতে পারেন নি-চেষ্টাও করেন নি।
অন্যদিকে আওরঙ্গজেব
ও ধার্মিক মুসলমান ছিলেন-কিন্ত তিনি ইসলামের সৈনিক হিসাবে ভারতজুরে ইসলামের প্রতিষ্ঠায়
সারা জীবন যুদ্ধ করেছেন -জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যুদ্ধ করেছেন। ধার্মিক মুসলমান শাসকদের
কাছে ইসলাম মানেই রাজনৈতিক। কারন ইসলাম একই
সাথে আধ্যাত্নিক রাজনৈতিক মতবাদ। ফলে তাদের মধ্যে সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী দেখা যায়
না- তারা সবাই যোদ্ধা-ইসলামের বিস্তারে যুদ্ধ করে গেছেন।
ইসলামের লক্ষ্য যেখানে রাজনৈতিক, ভারতের শ্বাস্বত
দর্শন, ধর্ম কিন্ত আধ্যাত্মিক এবং তার ভিত্তি ত্যাগ। দুটো সম্পূর্ন ১৮০ ডিগ্রির আলাদা
সংস্কৃতি।
কিন্ত বর্তমানে
হিন্দুরা যেভাবে মুসলমানদের মতন কট্টর হিন্দুপনা শুরু করেছে, তাতে মনে হচ্ছে, তারা
আর হিন্দু নেই। তারা সবাই ইসলাম গ্রহন করেছে। কারন হিন্দু ধর্মপালনে এই ধরনের সাম্প্রদায়িকতা
নেই- অসহিষ্ণুতা নেই। সবটাই ব্যক্তিগত সাধনা।
পারসোনাল জার্নি।
বিজেপির সম্পূর্ন
ভারত জয় মানে, এই উপমহাদেশে ইসলামের বিজয় সম্পূর্ন। কারন এই ধরনের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা
ইসলামিক সংস্কৃতি। গোটা ভারতে এখন সেটাই প্রতিষ্ঠিত, এবং যা দেখছি হিন্দুরা সেই ইসলামি
সংস্কৃতিই চাইছেন।
বিজেপি মতালম্বী
হিন্দুদের বক্তব্য মুসলমানদের মতন কট্টরপন্থা
ছাড়া নাকি হিন্দু ধর্ম টিকবে না!
এই ব্যাপারে আমার মত খুব স্পষ্ট। কোন ধর্মই টিকবে
না। ইসলাম, খ্রীষ্ঠান, হিন্দু ধর্মের ব্রাঞ্চ-কোন কিছুই না। ইউরোপের অধকাংশ উন্নত দেশে
নিধার্মিকরাই এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ। আমেরিকাতে ১৯৮৯ সালে নিধার্মিকের সংখ্যা ছিল ৮%। ২০১০
সালে সেটা হয়েছে ২০%। ২০৩০ নাগাদ ৩৪% হবে। মুসলমানদের মধ্যেও প্রচুর শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা
ধর্ম ছেড়েছেন-কিন্ত ভয়ে প্রকাশ করেন না। ধর্মের কোন উপযোগিতাই এখন নেই-সবটাই অপকারিতা।
তাও ধর্ম টিকে আছে পলিটিশিয়ানদের জন্য। কারন ধর্মের আফিং না থাকলে, তারা খাবে কি? মানুষের
জন্য কাজ করা কঠিন। তার থেকে ধর্মের নামে দাঙ্গা লাগিয়ে, ভয় দেখিয়ে ভোটে জিতে তিনপুরুষের
ভবিষ্যত উদ্ধার করা সহজ। সেই জন্যেই ধর্ম টিকে আছে। রাষ্ট্র রাজনীতি জোর করে ছোট বেলা
থেকে এটা মাথায় ঢোকাচ্ছে। কোন বাচ্চা ধার্মিক হয়ে জন্মায় না। তাকে ধার্মিক করে গড়ে
তোলা হয়। পরিবার, স্কুল, স,মাজ, রাষ্ট্র এই
কাজটা করে।
সমস্যা একটাই।
এই উপমহাদেশের পুরোটাই পাকিস্তান হতে চলেছে। বিদ্যাবুদ্ধি প্রযুক্তির অভাবে এরা আস্তে
আস্তে সবাই চীনের ভ্যাসাল স্টেট হয়ে যাবে। পাকিস্তানে সেই প্রসেস সম্পূর্ন। বাংলাদেশ
পা বাড়িয়েছে। আমেরিকা হাত তুলে নিলে ভারতের একই হাল হবে।
ধর্মান্ধতা
এবং রাষ্ট্রের উন্নতি একই সাথে সম্ভব না। কোন উদাহরন নেই। ধর্মান্ধতা একটা দেশকে টেনে
নামাবেই।
No comments:
Post a Comment