বর্নবাদ বিরোধি আন্দোলন ?? রিয়ালি?
- বিপ্লব ৬/২
- বিপ্লব ৬/২
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আমেরিকাতে যে "সোকল্ড" বর্নবাদ বিরোধি রায়োট ( মতান্তরে আন্দোলন) চলছে , তাতে সব থেকে বেশী লাভ ট্রাম্পের। বর্নবাদ বা বর্নবাদবিরোধি দলের লোকজন সুইং ভোটার না। সুইং ভোটার হচ্ছে তারা, যারা কিছুটা বর্নবাদি, আবার কিছুটা বর্নবাদ বিরোধি। সবটাই হাইব্রিড। অর্থনীতি, চাকরি তাদের মূল লক্ষ্য। তারা চায় সুন্দর সুস্থির চাকরিভর্তি আমেরিকা।
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু সবাই কে চোখ দিয়ে দেখাতে পারত, আমেরিকার জাস্টিস সিস্টেম কত পুরাতন,অচল পয়সা। এটা লিব্যারালদের সামনে একটা বড় সুযোগ ছিল সবাইকে দেখানোর যে ক্রিমিন্যাল জাস্টিস সিস্টেম আমেরিকাতে সম্পূর্ন ধ্বংসপ্রাপ্ত। এটার নতুন করে শুরু হওয়া দরকার।
সেসব না করে লিব্যারাল রাজনীতিবিদরা কেসটাকে পুরো রেসিজমের ঝোলে টানল। এতে তাদের লস বই লাভ দেখতে পাচ্ছি না।
- রেসিজিম নিয়ে খেলা করা, ভারতের ধর্ম নিয়ে খেলার সমান। সব শহরগুলিতে কালো গুন্ডারা লুঠপাট চালালো। সরি, এরা রাগী, বিদ্রোহী, এক্টিভিস্ট কেউ না। ধান্ধায় থাকা লুঠেরা। ফলে যে আন্দোলনটা একটা ভেঙে পড়া পুলিশ সিস্টেমের বিরুদ্ধে হতে পারত, তার বদলে আমেরিকা আবার পোলারাইজড। দুই দলে বিভক্ত।
- এক্ষেত্রে যুক্তি দিয়ে রেসিজমের কেস প্রতিষ্ঠা করা মুশকিল। ডেরেক বলে যে বদমেজাজি পুলিশ অফিসার এই খুন করেছে, সে এর আগেও ল্যাটিনো, রেড ইন্ডিয়ান গুলি করে মেরেছে। তার বিরুদ্ধে এমন ১০ টা কেস আছে। কিন্ত সব ক্ষেত্রেই তদন্ত করে দেখা গেছে-ডেরেকের দোষ নেই। সে "ক্রিমিন্যাল" মেরেছে। তার কোন সাসপেনশন বা শাস্তি হয় নি। এছারা এই ডেরেক একটা নাইট ক্লাবে পার্ট টাইম সিকিউরিটির কাজ করে। এদের বাউন্সার বলে। আমেরিকার নাইট ক্লাব মানে তরুন তরুনীরা নেশা করে নাচে। বাউন্সারের কাজ, কোন ছেলে জোর করে মেয়েদের গায়ে হাত দিলে, তাদের ঘার ধাক্কা দিয়ে ক্লাব থেকে বার করে দেওয়া। ইন্টারেস্টিং যে এই ক্লাবে কালো যুবক যুবতীদের ভীর বেশী। ডেরেক যদি এতই রেসিস্ট হয়, এই ক্লাবের মালিক তাকে ১৬ বছর এই
সেন্সিটিভ কাজে রাখল?? শুধু রাখেই নি সেই ক্লাব মালকিনের মতে ডেরেকের ওপর তার ভরসা সব থেকে বেশী।
সেন্সিটিভ কাজে রাখল?? শুধু রাখেই নি সেই ক্লাব মালকিনের মতে ডেরেকের ওপর তার ভরসা সব থেকে বেশী।
বেসিক্যালি যেটা ওই ক্লাবের মালকিন বলছে, এবং মিনিয়াপলিসের পুলিশ চিফ বলছে না- মোটামুটি সত্য এই যে ডেরেক হচ্ছে একজন এফেক্টিভ " পুলিশ"। কারন সে পেটাতে পারে। পেশী শক্তির ব্যবহার করে। এর জন্য দেখা যাচ্ছে ডেরেক সফল।
কেউ বলছে না, পুলিশ হিসাবে ডেরেকের সাফল্যটাই আমেরিকা সহ তৃতীয় বিশ্বের পুলিশের মূল সমস্যা। সবাই পুলিশ বলতে বোঝে শক্তির ব্যবহার। যে গিয়ে পিটিয়ে কাজ করে নেবে।
এখানেই "পুলিশ" মধ্যযুগীয় পেয়াদা। পুলিশ কাউন্সেলর না। তার কাজ পেশী প্রদর্শন। মারা। ভয় দেখানো। পুলিশের এই ভূমিকা যদ্দিন থাকবে, বর্নবাদ বা রেসিজমের ভূত তাড়া করে লাভ নেই। পুলিশের হাতে বেঘোরে আরো অনেক প্রান বলিদান হওয়ার অপেক্ষায় লাইনে আছে।
বর্নবাদ বিরোধি আন্দোলন চলুক। ক্ষতি নেই। কিন্ত কেউ যদি বলে আমেরিকাতে বর্নবাদ বড্ডবেশী -আমি আপত্তি করব। আমেরিকার থেকে অনেক বেশী বর্নবাদি ভারতীয় ( হিন্দু মুসলমান সবাই), জাপানি, জার্মান এবং বৃটিশ লোকেরা। সুন্দর পিচাই, সত্য নাদেলা আমেরিকার সব থেকে বৃহত্তম কোম্পানীর সিইও হচ্ছেন। এটা এরা ভারতেও পেতেন না। সেখানে সিইও হত গুজরাতি বা মারোয়াড়ি মালিকের কোন অযোগ্য আত্মীয়।
আপনে বলতেই পারেন, এটা ওপর মহল। নীচে দেখুন মশাই। তাহলে এই তথ্যটাও রাখুন। আমেরিকাতে নাইজেরিয়ান অভিবাসীদের মধ্যে মাস্টার ডিগ্রির হার আমেরিকার গড়ের তিনগুন, তাদের ফ্যামিলি ইনকাম, আমেরিকার গড় ইনকামের ৩০% বেশী ( ভারতীয় অভিবাসীদের আয় আমেরিকান গড়ের প্রায় ৬০% বেশী)। নাইজেরিয়ানদের ৫০% মুসলিম এবং ১০০% কালো। যেসব বাঙালী ফেসবুকে আমেরিকার বিরুদ্ধে ডায়ালোগ দিচ্ছে, তারা যেন ভুলে না যায়, কোলকাতা বা দিল্লীতে নাইজেরীয় ছাত্র ছাত্রীদের কেউ বাড়ি ভাড়া দিতে চায় না। ভারত এতটাই রেসিস্ট।
আমেরিকাতে ব্ল্যাক পপুলেশনের দুটো ভাগ। যাদের পূর্বপুরুষরা দাশ ছিল। এরা হচ্ছে খাঁটি আদি কালো। আর যারা সম্প্রতি আফ্রিকা বা ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ থেকে এসেছে। মনে রাখবেন ওবামা দ্বিতীয় প্রজাতিভুক্ত। খাঁটি কালো না। এই দ্বিতীয় কালো চামড়ার লোকেরা ভারত বাংলাদেশীদের মতন এখানে উন্নতি করেছে। নাইজেরিয়ানদের উদাহরন দিলাম। আমেরিকাতে এত বর্নবাদ থাকলে ভারতীয় নাইজেরিয়ানরা এখানে কলা খেত। মাইক্রোসফট গুগুল চালাত না।
সমস্যা হচ্ছে সেই ১২% কালোদের নিয়ে যাদের পূর্বপুরুষরা দাস ছিলেন। এত সরকারি সাহায্য, এফারমেটিভ একশন, সরকারি চাকরি কিছু দিয়েই এদের টেনে তোলা যাচ্ছে না। কিছু হলেই বলবে এর কারন সিস্টেমেটিক রেসিজম। তাহলে ভারতীয়, নাইজেরিয়ান বাংলাদেশীরা খুব সাদা চামড়ার নাকি?
সমস্যাটা আমি এবার খোলাখুলি বলি। আমার ছেলের বয়স যখন এগারো, ক্লাস ফাইভে পড়ে- একদিন ধরলাম আচ্ছে তোর এই সাবজেক্টে গ্রেড খারাপ হচ্ছে কেন? বলে টিচার রেসিস্ট। আমাকে পছন্দ করে না।
আমি ত শুনেই আঁতকে উঠেছিলাম। কারন নিজের ব্যর্থতার দায় ঢাকতে যদি ছেলে এই বয়স থেকেই রাজনীতি শেখে, তাহলে ভবিষ্যত ঝড়ঝ্ররে। যাগগে সেই যাত্রায় ওকে বল্লাম, যদি সেটা সত্যিও হয়, যে শিক্ষক রেসিস্ট, তাহলেও অজুহাত দিয়ে লাভ নেই। কারন কোন শিক্ষক যদি তোমার প্রতি কঠোর হয়, সে আসলেই তোমাকে আরো ভাল করার জন্য উৎসাহিত করছে। সোজা কথা ব্যর্থতা নিজের কাঁধে নিতে শেখ। যে কাঁধ নিজের ব্যর্থতার দায় নিতে পারে না, সেই কাঁধ কোনদিন শক্ত হবে না।
কিন্ত সেদিন একটা ঝটকা খেলাম। বাড়িতে ত কোনদিন রেসিজম ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয় না। তাহলে একজন সাদা শিক্ষক রেসিস্ট হতে পারে এটা ও কোথায় শিখল?
এটা বুঝলাম কিছুদিন আগে। আমাদের কাউন্টিতে স্কুল পরিচালন সমিতি নিয়ে বিবাদ একদা বর্নবাদে পৌছায়। ত আমার এক বন্ধু বিবদমান দুইপক্ষকে এক টেবিলে বসিয়ে ছিল। সেখানে আমিও গেলাম। দেখালাম, দুইজন কৃষ্ণাঙ্গ মা দাবী করছে, তাদের ছেলে মেয়েরা ভাল গ্রেড পায় না, কারন সাদা শিক্ষকরা রেসিস্ট।
অর্থাৎ এইসব ফ্যামিলিতে ছোটবেলা থেকেই শেখানো হচ্ছে, তোমাদের কিছু হচ্ছে না-কারন রেসিজম। আমার ছেলের মতন, তাদের ছেলে মেয়েরাও আসলে পড়াশোনাতে ফাঁকি দিচ্ছে-কিন্ত তারাও দেখছে,অহ কি মজা! ফাঁকি দেওয়া সত্ত্বেও রেসিজমের কার্ড ফেলতে পারলেই কেল্লা ফতে। বাড়ির ফুল সাপোর্ট। তারপর একদিন ড্রাগ নিয়ে উচ্ছন্নে যাবে। কারন আশেপাশের পরিবেশটাই তাই।
বুঝলাম, আমার ছেলে কোত্থেকে এটা শিখছিল।
কিছুদিন আগে একটি কালো ছেলে ইন্টার্ন হিসাবে যোগ দেয়। হঠাৎ দেখি তিন মাস বাদে সে পদত্যাগ পত্র পাঠাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কি হল? সে বলে তার মনে হচ্ছে যেহেতু আশেপাশে সবাই সাদা, সবাই তার পেছনে কথা বলছে। সে একসময় মানল যে এটা খুব সম্ভবত তার মানসিক পরিস্থিতি। বাস্তবে হয়ত তেমন কিছু হচ্ছে না।
এই "ভিক্টিম" ভাবতে শেখা কোভিড-১৯ এর মতন সংক্রমক। আমি বলছি না, তারা বর্নবাদের শিকার না। কিন্ত যদি তারা বর্নবাদের শিকার হয়ও, নিজের ফেলিওরের জন্য বর্নবাদকে দোষ দিলে হিতে বিপরীত হবে। এটাই বাস্তব।
ভিক্টিম সাজার রাজনীতি শুরু হয়েছিল ক্রিষ্ঠানদের থেকে। যাদের হাতে গ্রীস এবং রোমান সভ্যতার উচ্চ দার্শনিক প্রতিষ্ঠানগুলি ধ্বংস হয়। ইসলাম, মার্ক্সবাদ, পোষ্টমড়ার্ন লিব্যারালিজম-সব কিছুই মানুষকে ভিক্টিম ভাবতে শেখায়। যা খুব ডেঞ্জারাস।
আমি বলছি না মালিক শ্রমিককে শোষন করে না। কিন্ত যদি শুধু শোষনের দিকটাই একজন শ্রমিক দেখে এবং সেটা ভেবে কোম্পানীর জন্য কাজ না করে, তাহলে অচিরে সেই কোম্পানীও ধ্বংস হবে এবং সেও বেকার হবে। যেটা পশ্চিম বঙ্গের শিল্প ধ্বংসের আসল সত্য।
মাইন্ডসেট খুব গুরুত্বপূর্ন। বর্নবাদ, শোষন সবই সত্য। কিন্ত শেষ সত্য না। শেষ সত্য হচ্ছে মানুষকে এর মধ্যে থেকেই উঠতে হবে । বাস্তবের পথে গোলাপের কাঁটাই থাকে, ফুল থেকে না। আর যারা রাস্তায় কাঁটা আছে, তাই এই রাস্তা ক্রস করা সম্ভব না বলে, তাদের জীবনে কোনদিন উন্নতি হবে না।
No comments:
Post a Comment