Saturday, December 21, 2019

দ্বিজাতি তত্ত্ব এবং দেশভাগে হিন্দুত্ববাদিদের ভূমিকা -২

কংগ্রেস এম পি এবং স্বঘোষিত সেকুলার ঐতিহাসিকদের চাপে-এটি এখন  হট টপিক।  শুধু জিন্না না, হিন্দু মহাসভা যা বিজেপির পূর্বসূরী-তারাও  নাকি মুসলিমলীগের মতন সমভাবে দায়ী দ্বিজাতি তত্ত্ব এবং দেশভাগের জন্য?

  এই প্রবন্ধে আমি তারই সত্যতা যাচাই করব।  হিন্দুত্ববাদের রূপকার  সাভারকার, লালা লাজপত রায়, এরা নাকি সবাই দ্বিজাতি তত্ত্বের ধারক বাহক?


 (১) ১৯৩৭ সালের লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের  নির্বাচনে গান্ধী নেহেরুর কংগ্রেসের সামনে মুসলীম লীগ বা হিন্দু মহাসভা কেউই দাঁড়াতে পারে নি।

    গান্ধী ওই যে ১৯১৭ সালে চম্পারন সত্যাগ্রহ নিয়ে মাঠে নামলেন- তারপরে মুসলীম লীগ বা হিন্দু মহাসভা  স্বতন্ত্রভাবে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ভারতে কোন প্রভাবই ফেলতে পারে নি। ১৯৪২ পর্যন্ত ভারতের ইতিহাস ন্যাক্কারজনক ভাবে গান্ধীময়।  এমন কি আর এস এসের জনক কেশব বালিরাম হেজগাউকর, ১৯৩০ সালে গান্ধীর লবন সত্যাগ্রহে জেল খেটেছেন গান্ধীবাদি হিসাবেই। আর এস এসকে কিন্ত আন্দোলনে নামতে দেন নি।   ১৯৩৭ এর লেজিসলেটিভ কাউন্সিল  ( রাজ্য ভিত্তিক)   এবং এসেম্বলীর (দেশ ভিত্তিক)   নির্বাচনে লীগ মুসলমানদের মধ্যে মোটে ৫% ভোট পেয়েছিল।   মুসলমান ভোট গেছিল কৃষক প্রজা পার্টির মতন নন-এলিট রিজিওনাল মুসলিম পার্টিগুলোর কাছের।  আর হিন্দু মহাসভা ?  এসেম্বলিতে মোটে ১২ টা সিট জিতে ছিল ( কং ৭০৭, লীগ ১০৫, ইউনিয়ানিসট পার্টি ১০১) । অধিকাংশ স্থলে ভোটে দাঁড়াবার ক্ষমতাই ছিল না হিন্দু মহাসভার ।

 ১৯২০-১৯৩৭ পর্যন্ত ভোটের  % বাহার দেখলে পরিস্কার, হিন্দু মহাসভার সেই রাজনৈতিক ক্ষমতা বা প্রতিপত্তিই ছিল না ভারতের ইতিহাসকে ঘোরানোর। সেই ক্ষমতা  মুসলীম লীগের ও ছিল না। ১৯৩৯ সালের পর লীগকে স্টেরয়েড দিয়ে বামন থেকে দৈত্য বানিয়েছিল চার্চিলের চাল, কংগ্রেসের ভুল আর জিন্নার নেতৃত্ব।  হিন্দু মহাসভার নেতৃত্বের না ছিল চার্চিল ( চার্চিল স্বঘোষিত হিন্দু বিরোধি ছিলেন ), না ছিল ইকবাল-জিন্নার লেভেলের নেতা।  আর কংগ্রেসের ভুল থেকে বেশী ফয়দা তোলার সম্ভাবনা ছিল না- কারন অধিকাংশ লোকজন কংগ্রেসকেই মেইনস্ট্রিম হিন্দুদের রাজনৈতিক দল ভাবত।  বৃটিশরা ভারত ভাগের সময় কংগ্রেসকেই তাই হিন্দুদের প্রতিনিধি হিসাবে দেখেছে, হিন্দু মহাসভার নেতারা পাত্তা পায় নি। কারন ১৯৩৭ এবং ১৯৪৬ এর নির্বাচনে তাদের ফল খুবই খারাপ ছিল।

১৯৪৬ সালে হিন্দু মহাসভার পারফর্মেন্স কি? নন মুসলীম ভোটের ৬% ও পায় নি।  ১৯৪৬ এর সংখ্যাটা এমন
   মোটসিট ঃ ১৫৮৫ঃ  কংগ্রেস ৯২৩, লীগ ৪২৫, কমিনিউস্ট পার্টি ৮ ( জ্যোতি বসু ও ছিলেন তাদের একজন )
  আর হিন্দু মহাসভা ?  মোটে ১৮ টা সিটে তারা লড়াই করে, সবকটাতে হেরেছিল!

  এস ইউ সি আই বা সিপিয়াইএম ল ও দু একটা সিট আজকাল জেতে। হিন্দু মহাসভা তখন এতই প্রান্তিক পার্টি যে সেটুকু ক্ষমতাও তাদের তখন ছিল না।

   কিন্ত এর ফল হল এই যে দেশভাগের কোন  বৈধ আলোচনাতেই বৃটিশরা হিন্দুসভার কাউকেই ডাকে নি। কংগ্রেস এবং লীগই প্রতিনিধিত্ব পেয়েছে।  শ্যামাপ্রসাদের ও   ইতিহাসকে ঘোরানোর কোন ক্ষমতা ছিল না-কারন উনিও ১৯৪৬ এর নির্বাচন থেকে প্রতিনিধিত্ব পান নি।

  দেশভাগের যা কিছু দায় তার পুরোটাই লীগ এবং কংগ্রেসের ওপরই বর্তায়।

(2)  এবার আসি মুসলীম লীগের সাথে  হাত মিলিয়ে  হিন্দু মহাসভার  ১৯৪৩ সালে সিন্ধ এবং নর্থ ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সে এবং বাংলায় সরকার গঠন।  অনেকেই এইজন্য হিন্দু মহাসভাকে দেশভাগের জন্য দায়ী করেন।

 এখানেও ইতিহাস বুঝতে ভুল হচ্ছে।
  ১৯৩৭ এর পরে আর কোন নির্বাচনই হয় নি। ১৯৩৯ সালে ভারতকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাথে জোর করে জড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে সমস্ত কংগ্রেস সরকার পদত্যাগ করে।

  এই অবস্থায় চার্চিলের নির্দেশে  কংগ্রেসকে দুর্বল করার জন্য,  বৃটীশরাজ    মুসলীম লীগ এবং হিন্দু মহাসভার নেতাদের হাতে প্রভিন্সিয়াল কাউন্সিলের ক্ষমতা দেয়।

  প্রশ্ন উঠছে হিন্দু মহাসভা কেন মুসলীম লীগের সাথে হাত মিলিয়ে ক্ষমতা চাটতে গেল? এমন কি ১৯৪৩ সালে সিন্ধ মন্ত্রীসভা প্রথম পাকিস্তানের প্রস্তাব পাশ করে। হিন্দু মহাসভা মৌখিক প্রতিবাদ করেই কাজ সারে। পদত্যাগ করে নি! কেন?

  হিন্দু মহাসভার এহেন কাজে  স্ট্রাটেজিক্যালি দুটো কারন ছিল।

  প্রথমত মুসলীম লীগ যেখানেই ক্ষমতায় আসত, সেখানেই মুসলমানদের জন্য আনুপাতিক হারে সংরক্ষন চালু করত।  যেহেতু শিক্ষাদীক্ষায় এগিয়ে থাকার জন্য সরকারি চাকরিতে হিন্দুদের প্রধান্য ছিল-ফলত মুসলীম লীগ কোন সরকারে ক্ষমতায় এলে সংরক্ষনের জন্য হিন্দুরা আর সরকারি চাকরি পেত না।

  দ্বিতীয়ত কংগ্রেসের নেতারা সবাই কুইট ইন্ডিয়া মুভমেন্টের ধাক্কায় জেলে।  জিন্না তখন সেই ভ্যাকুয়ামকে ভর্ত্তি করছেন মুসলীম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি দিয়ে। হিন্দু মহাসভা হিন্দু সাম্প্রদায়িক রাজনীতি দিয়ে জিন্নার পালটা চাল চালে। জিন্নাকে ঠেকাতেই হিন্দু মহাসভা এটা করতে বাধ্য হয়। ভুলে যাবেন না।  হিন্দু মহাসভা মন্ত্রীত্ব না নিলে ১০০% লীগের হাতেই ক্ষমতা যেত। কারন লীগ বা হিন্দু মহাসভা এই মন্ত্রীত্ব নির্বাচনের সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে পায় নি- বৃটিশ রাজের মনোনয়নের ভিত্তিতে পেয়েছিল।

 কিন্তু বিধিবাম এবং হিন্দুত্ববাদিদের জন্য বুমেরাং । কারন মুসলমানদের মধ্যে  ৭০% , ১৯৪৬ এর নির্বাচনে জিন্নাকে ভোট দিলেন। অর্থাৎ ভারতীয় মুসলমানদের ৭০%  ইসলামিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি সাপোর্ট করে মুসলীম লীগকে বড় পার্টী করে তুললেন। লীগ ইঁদুর থেকে বাঘ হল।

 কিন্ত হিন্দু মহাসভার সেই ভাগ্য নেই! ১৯৪৬ এর নির্বাচনে হিন্দুরা তাদের একটাও সিট দিল না! ৫% হিন্দু ভোট ও তারা পায় নি।  ভারতীয় হিন্দুরা    "ধর্মনিরেপেক্ষ কংগ্রেসেই"  আস্থা রাখল। কংগ্রেস তাদের ৯২% ভোট পেল ১৯৪৬ এর নির্বাচনে। হিন্দু মহাসভা বাজে ভাবে হারল।

 অর্থাৎ ১৯৪৬ এর নির্বাচনে যেখানে হিন্দুরা ধর্ম নিরেপেক্ষ স্টান্ড নিয়েছে, সেখানে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা সম্পূর্ন সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতেই ভোট দিয়েছে।


 ফলে হিন্দুদের প্রতিনিধি হিসাবেই শুধু কংগ্রেসই ছিল দেশভাগের টেবলে। কিন্ত তারা হিন্দুদের প্রতিনিধি হিসাবে জিন্নার সাথে ফাইটে গেলই না!  আমি এটাকেই মনে করি শতাব্দির সব থেকে কম চর্চিত কিন্ত বৃহত্তম বিশ্বাসঘাতকতা।

 মোদ্দা কথা ১৯৪৬ সালে  ভারতের হিন্দুরা কংগ্রেসে বিশ্বাস করে ঠকেছিল।  দেশভাগের সময় কংগ্রেস সম্পূর্ন ভাবেই হিন্দুদের  ( বিশেষ করে বাঙালী এবং পাঞ্জাবী)  সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে দেশভাগ মেনে নিয়ে।

  আর শ্যামাপ্রসাদ পশ্চিম বঙ্গের জন্মদাতা? না মশাই, তাকে হিন্দুরা সেই ক্ষমতা দেয় নি ১৯৪৬ সালে। আর তাই বৃটিশরাও তাকে কোন আলোচনার টেবলে ডাকে নি। তবে তিনি নিরলস ভাবে বাঙালী হিন্দুর স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করেছেন। চিঠি লিখে, জনমত গঠন করে।

(৩) এবার আসি দ্বিজাতি তত্ত্বের মালিকানা নিয়ে।  হিন্দু এবং মুসলমানরা শুধু ধর্ম আলাদা বলে দুটি আলাদা জাতি- তাদের আলাদা রাজনৈতিক ক্ষমতার দরকার , আলাদা ভূখন্ডের দরকার- এগুলি কি করে এল, তার ধারবাহিক ইতিহাস আমি আগের খন্ডে লিখেছি।

 এখানে কতগুলো ইতিহাস না বুঝলে, আবার গোল পাকাবে।
   
     জাতি বা নেশন স্টেটের ধারনা কিন্ত ইউরোপিয়। সুতরাং জাতি বলতে আমাদের দেখতে হবে কোন কোন স্টেটমেন্টে "নেশন স্টেটের" ধারনার ভিত্তিতে হিন্দু মুসলমানকে আলাদা করে দেখা হচ্ছে।   এবং সেটা তখনই ওঠে যখন স্বয়ত্বশাসন, বা স্বাধীন সরকার বা বৃটিশরা চলে গেলে কি হবে-তাই নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

   এই ভাবে ভাবলে, ভারতের ইতিহাসের তিনটে ধাপ।
   

    ১৮৮৫ ( কংগ্রেসের গঠন) থেকে ১৯১৭ ( গান্ধীর চম্পারন সত্যাগ্রহ) - স্বয়ত্ব শাসন দাবীর যুগ।
যেখানে প্রথম ভারত একটা  না একাধিক জাতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে তার বিতর্ক চলছে।

  ১৯১৭ ( চম্পারন সত্যাগ্রহ)- ১৯৪২ ( কুইট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট)- গান্ধীযুগ। গান্ধীই যখন ভারতীয় রাজনীতির শেষ কথা। সবাই তেনাতেই আচ্ছন্ন।  এই পর্বে ভারত ঢেলে ভোট দিয়েছে একজাতি একরাষ্ট্রের জন্য। দ্বিজাতি তত্ত্ব, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এই পর্বে হালে পানি পায় নি। শুধু গান্ধীর জন্য।

   ১৯৪২ ( ক্রিপস মিশন) - ১৯১৭ ( স্বাধীনতা) - দেশভাগ এবং স্বাধীনতার সময়।  যখন পাকিস্তানের দাবী নিয়ে সিরিয়াস আলোচনা মারামারি হচ্ছে। গান্ধীর প্রভাব মুসলমানদের মধ্যে ফিকে, কিন্ত হিন্দুদের মধ্যে তখন ও প্রবল।

  এখন নেশন স্টেটের প্রশ্ন যখন উঠছে, সেই সূত্র ধরে কিন্ত সৈয়দ আহমেদ খানই প্রথম ১৮৮৫  সালে  কংগ্রেসকে আক্রমন করে প্রথম, মুসলমানদের জন্য আলাদা  "জাতি" বা নেশন কথাটা আনেন। এবার দেখুন দ্বিজাতি তত্ত্ব নিয়ে কিভাবে আস্তে আস্তে সৈয়দ আহমেদ কড়া অবস্থান নিচ্ছেন- এবং "নেশন স্টেটের" ধারনার সাথে দ্বি"জাতির" প্রসঙ্গ আসছে।

   [১৮৮৩]
 Friends, in India there live two prominent nations which are distinguished by the names of Hindus and Mussulmans. Just as a man has some principal organs, similarly these two nations are like the principal limbs of India


[১৮৮৭]    Now suppose that all the English were to leave India—then who would be rulers of India? Is it possible that under these circumstances two nations, Mohammedan and Hindu, could sit on the same throne and remain equal in power? Most certainly not. It is necessary that one of them should conquer the other and thrust it down. To hope that both could remain equal is to desire the impossible and inconceivable.

   [১৮৯০]
  The aims and objects of the Indian National Congress are based upon an ignorance of history and present-day politics; they do not take into consideration that India is inhabited by different nationalities: they presuppose that the Muslims, the Marathas, the Brahmins, the Kshatriyas, the Banias, the Sudras, the Sikhs, the Bengalis, the Madrasis, and the Peshawaris can all be treated alike and all of them belong to the same nation. The Congress thinks that they profess the same religion, that they speak the same language, that their way of life and customs are the same... I consider the experiment which the Indian National Congress wants to make fraught with dangers and suffering for all the nationalities of India, specially for the Muslims

  এখানে বুঝতে হবে, হিন্দু-মুসলমানদের সংস্কৃতি আলাদা ইত্যাদি টাইপের সাম্প্রদায়িক দাবী করা মানেই দ্বিজাতি তত্ত্ব না।  দ্বিজাতি তত্ত্ব তখনই বলব যখন কেউ হিন্দু  বা মুসলমানদের জন্য আলাদা "নেশন স্টেট" এর দাবী করছে। তার আগে ওটা দ্বিজাতি তত্ত্ব হয় না। 

 ১৯০৫ সালে বাংলাভাগ হল। পূর্ব বাংলার মুসলমানরা সেই ভাগ সমর্থন করেছিল এই জন্যে যে  পূর্ব বাংলায় মুসলমানরা রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব পাবে । সেটাকে কি দ্বিজাতি তত্ত্ব বলা যাবে তাহলে?

   না। কারন বাংলা একটা প্রভিন্স। নেশন স্টেট না।  এই টুকু ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে নিয়ে, আমরা দেখি হিন্দুমহাসভার লোকজন দ্বিজাতি তত্ত্ব নিয়ে কি বলেছে।  যদিও তাদের কোন  প্রভাবই ছিল না যা ভোটেই প্রমানিত।

  আর আরেকটা কথা। দীর্ঘদিন ধরেই কংগ্রেস লীগ এবং মহাসভার দ্বৈত মেম্বারশিপ আলাউ করত। তিলক, মদন মোহন মালব্য এরা কংগ্রেস এবং মহাসভাতে- দুই প্ল্যাটফর্মেই ছিলেন । জিন্না একই সাথে লীগ এবং কংগ্রেস করেছেন ( ১৯১৩-২০)। 

 এর ও অনেক আগে ঋষি বঙ্কিম থেকে রাজ নারায়ন বসু, নব গোপাল মিত্র- এরা মুসলমানদের অস্পৃশ্য বা শত্রু সম্প্রদায় বলে মনে করতেন।  কিন্ত আমি আগেই দেখিয়েছি সাম্প্রদায়িকতা মানেই দ্বিজাতি তত্ত্ব না। তাদের জাতি থাকতে হবে।  সুতরাং এদের বক্তব্য সাম্প্রদায়িক। দ্বিজাতি তত্ত্ব না।

   এমন কি হিন্দুদের জন্য প্রদেশ ভাগ করার   " প্রশাসনিক"  দাবি ও দ্বিজাতি তত্ত্ব না।

 ১৯২৪ সালে লালা লাজপত রায়ের এই কোটেশনটি দেখিয়ে দাবী করা হয়, হিন্দুত্ববাদিরাই নাকি প্রথম দ্বিজাতি তত্ত্বের দাবী তোলে...

"Under my scheme the Muslims will have four Muslim States: (1) The Pathan Province of the North Western Frontier (2) Western Punjab (3) Sindh and (4) Eastern Bengal. If there are compact Muslim communities in any other part of India, sufficiently large to form a Province, they should be similarly constituted. But it should be distinctly understood that this is not a united India. It means a clear partition of India into a Muslim India and a non-Muslim India." 

কিন্ত  পুরো প্রবন্ধটি তারা দিতে নারাজ!

http://www.columbia.edu/itc/mealac/pritchett/00islamlinks/txt_lajpatrai_1924/11part.html


পুরো প্রবন্ধ না পড়ে, এখান ওখান থেকে কোট তুলে  ছিপে মাছে বদলে জুতো ওঠে!

 প্রবন্ধটি  সম্পূর্ন দেখলে তিনটে জিনিস দেখবেন

    লালা লাজপত রায়, জিন্না এবং লীগের তীব্র সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে "ধর্ম নিরেপেক্ষতার" দাবীতে এই প্রবন্ধ লিখছেন- এই লাইনগুলো বেমালুম ভুলে যাওয়া হল এই একই প্রবন্ধ থেকে

"c) From a national point of view, I strongly object to any communal distinction being adopted for Government service or in the Universities"

" The principle of clause (a) is both theoretically and practically a negation of the united nationhood. It provides for a complete division of India, as it is, into two sections: a Muslim India and a non-Muslim India. I say deliberately non-Muslim India, because all that the Muslims are anxious for, is a guarantee of their own rights. All the other communities they lump into one as non-Mushms. Let those who demand communal representation with separate electorates in all the representative institutions of [[212]] the land, honestly confess that they do not believe in nationalism or in a united India. The two things are absolutely irreconcilable.

"There are millions of Muslims who are exclusively at the mercy of their Muslim and Hindu landlords. What have the Muslim leaders done to improve their educational and economic position? Providing posts under the Government for a few educated Muslims is no remedy for the present condition. Safeguarding the interests of the few, and neglecting the interests of the many, is hardly a laudable thing, but that is exactly what Mian Fazl-i-Husain has achieved, and at such tremendous cost!"
"
The Muslims all over the world have yet to learn that there are other ways of making money and thriving economically than through and by Muslim rule. Those who are doing nothing to place modern progressive ideals before the Muslims, and simply emphasize ingenious dogmas, hair-splitting doctrines, and reliance on Government, can hardly be called good friends of the Muslims."

যারা লালাজির এই প্রবন্ধকে দ্বিজাতি তত্ত্বের পক্ষে লেখা বলে মনে করেন, তারা শিব এবং বাঁদরের পার্থক্য জানেন না।  কাকের মতন এখান ওখান থেকে কোটেশন খুবলে ইতিহাস লিখতে যান।

  লালাজি খুব পরিস্কার বলেছেন তিনি এক ধর্ম নিরেপেক্ষ ভারতের পক্ষে। কিন্ত  মুসলিম লীগের তোলা ভাই ভাই এর গৃহযুদ্ধ আটকাতে উনি প্রদেশ বিভাজনে রাজী আছেন।  তার ওই দ্বিজাতি তত্ত্বের কমেন্টটা নেহাতই "রিকাকশন", লীগের সাম্প্রদায়িক বিষ বাষ্পের বিরুদ্ধে।

 এবার আসি আরো চর্চিত সাভারকরের দ্বিজাতি কমেন্টে।

 India cannot be assumed today to be a unitarian and homogeneous nation, but on the contrary there are two nations in the main; the Hindus and the Moslems, in India.” [১৯২৫]

 এটা কি নতুন লাগছে ১৯২৫ সালে? স্যার সৈয়দ আহমেদ খান ১৮৮৩ সাল থেকে এই একই কথা বলে আসছেন। সাভারকর তার কথা মেনেছেন মাত্র - ৫০ বছর পর। 

  কিন্ত সাভারকর, মোটেও মুসলমানদের জন্য আলাদা ভূখন্ড বা  পাকিস্তানের দাবী মানেন নি। আম্বেদকর বলছেন 
   Mr. Savarkar... insists that, although there are two nations in India, India shall not be divided into two parts, one for Muslims and the other for the Hindus; that the two nations shall dwell in one country and shall live under the mantle of one single constitution;... In the struggle for political power between the two nations the rule of the game which Mr. Savarkar prescribes is to be one man one vote, be the man Hindu or Muslim. In his scheme a Muslim is to have no advantage which a Hindu does not have. Minority is to be no justification for privilege and majority is to be no ground for penalty. The State will guarantee the Muslims any defined measure of political power in the form of Muslim religion and Muslim culture. But the State will not guarantee secured seats in the Legislature or in the Administration and, if such guarantee is insisted upon by the Muslims, such guaranteed quota is not to exceed their proportion to the general population.


(৪) আমার এত কিছু লেখার দরকার হত না। কারন হিন্দুত্ববাদিরা স্বাধীনতার পূর্বে হিন্দুদের কাছেই পাত্তা পায় নি।ভোটের রেজাল্টেই তা পরিস্কার। সুতরাং কোন হিন্দুত্ববাদি নেতা কি বলেছেন সেকালে, তাতে দেশভাগের কিছু বদলাত না। যেহেতু বৃটিশরা হিন্দুত্ববাদি নেতাদের   দেশভাগের  আলোচনার টেবিলেই ডাকে নি। কংগ্রেসকেই হিন্দুদের প্রতিনিধি বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।
 
 সুতরাং দেশভাগের ১০০% দ্বায়িত্ব কংগ্রেস এবং মুসলীম লীগের।  ১৯৪৬ সালের ভোটের রেজাল্টই দেখাচ্ছে হিন্দুরা সম্পূর্ন ভাবে এক ধর্ম নিরেপেক্ষ ভারত চেয়েছিল। মুসলমানরা চায় নি।

  কিন্ত তার মানে কি দ্বিজাতি তত্ত্বে হিন্দুদের কোন দায় নেই?

  আছে। সেটা হচ্ছে জাত পাত, ছোঁয়াচের দায়। অধিকাংশ হিন্দুরা মুসলমানরা তাদের উঠোনে পা রাখলে উঠোনে জল দিত।  এতটা অবজ্ঞা, অবহেলা, ঘৃণা শুধু ধর্মের কারনে হিন্দুরাই করেছে। তারা হিন্দুত্ববাদি হিন্দু না। কংগ্রেসকে সাপোর্ট করা হিন্দুরাই করেছে। ফলে হিন্দুদের কোনদিনই মুসলমানরা বিশ্বাস করতে পারে নি। নইলে বাংলাতে ফরাজি আন্দোলন এত জনপ্রিয় কোনদিনই হত না।  হিন্দুদের কাস্টিস্ট কালচারের টক্সিন, নিঃসন্দেহে দ্বিজাতি তত্ত্বের অন্যতম ক্যাটালিস্ট। সেই ঐতিহাসিক দায় থেকে হিন্দুদের মুক্ত করছি না।

 ইতিহাস আমরা এই জন্যেই চর্চা করি-যাতে ঐতিহাসিক ভুলগুলো না করি আবার।






































No comments: