দ্বিজাতি তত্ত্ব এবং দেশভাগ – ইতিহাসের পাতায় ফিরে দেখা
-বিপ্লব পাল ১২/১২/২০১৯
(১) ক্যাব নিয়ে
ভারতের রাজনীতি উত্তাল। এন আর সি নিয়ে সিরিয়াস রাজনীতি বোধগম্য হলেও ক্যাব রাজনীতির
পুরোটাই পলিটিক্যাল পারাফার্নেলিয়া-মানে যাকে বলে রাজনৈতিক নাটক।
ছোটবেলা থেকে
দেখে আসছি বাংলাদেশ থেকে হিন্দু বা মুসলমান যেই আসুক না কেন, দুই বছরের মধ্যে
পশ্চিম বঙ্গে রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড সবই পেয়ে যায়! ভারতে এসব জাল রেকর্ড পেতে
খরচ কত? কিছুই না! আর ক্যাব বলে কি না
ছবছরে নাগরিকত্ব? কি যে বলেন দাদা! ভারতে
এখনো কোন ব্লক চেইনবেইসড নাগরিক লিস্ট বা এন আর সি নেই। ফলে এমন মহান দেশে যা
দুর্নীতির শীর্ষে সেখানে ক্যাব থাকুক বা না থাকুক, ওপার বাংলা থেকে আসা কোন ধর্মের
মানুষদেরই নাগরিকত্ব পেতে কোন অসুবিধাই হবে না! আগেও হয় নি- ক্যাবের পরে ও না।
তাহলে ক্যাব নিয়ে
সোরগোল কেন? খুব সহজ। প্রফেসর তিওয়ারি আমাদের শিখিয়েছিলেন ম্যানেজমেন্টের ক্লাসে। “ক্ষমতা”
সর্বদা পলিটিক্যাল।
সামাজিক বা
ম্যানেজেরিয়াল- যাইহোক না কেন-“ক্ষমতা” টিকিয়ে রাখতে গেলে একটা একটাকার ইস্যুকে
হাজারটাকার বলে দেখাতে হয়! এত চমৎকাল ভানুমতীর খেল! বিজেপি “হিন্দুদের” জন্য কিছু
করছে দেখানোর সুযোগ পেল। আবার বিজেপি
বিরোধিরাও তাদের “মুসলমান প্রেম” দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে! এক্টিভিস্টরা চমৎকার অসহযোগ
আন্দোলন করছেন ফেসবুকে। কিছু মুসলিম দাঙ্গাবাজকে উস্কিয়ে পরিস্থিতি আরো জটিল করা হচ্ছে।
কি সুন্দর চমৎকার উইন-উইন রাজনৈতিক নাটক।
কিন্ত ভারতের মূল সমস্যা- জল নেই, বায়ু দূষন, জলে দূষন-সব চাপা পড়ে যাচ্ছে। লস ভারতের
সাধারন হিন্দু মুসলমান নাগরিকের।
কিন্ত ক্যাবের
দৌলতে, দ্বিজাতি তত্ত্বের ইতিহাস নিয়ে রাজ্যসভা এবং লোকসভাতে যে ঐতিহাসিক বিতর্ক দেখালাম,
সেখানে কংগ্রেস দ্বিজাতি তত্ত্ব এবং দেশভাগ জিন্না এবং হিন্দুমহাসভার ঘারে চাপাতে
চাইছে! তাদের মতে ১৯২৩ সালে সাভারকর টুনেশন থিওরী কথাটি প্রথম লেখেন। যা ২০ বছর বাদে জিন্না “এপ্লাই” করে দেখাবেন।
কপিল সিবাল সহ অনেক এম পির বক্তব্যে দেখলাম।
এরা ইতিহাস পড়েন নি। কারন সাভারকরের দ্বিজাতি তত্ত্বে কোন দুই আলাদা
রাজনৈতক ভূখন্ডের কথা লেখা নেই। বাবা সাহেব আম্বেদকর খুব পরিস্কার ভাবেই লিখেছিলেন
সাভারকর আর জিন্নার দ্বিজাতি তত্ত্ব শুধু নামেই এক- ধারনার দিক দিয়ে দুটি আলাদা
রাজনৈতিক ধারনা। সাভারকরের দ্বিজাতি তত্ত্বে কোন পাকিস্তান বা দেশভাগ নেই!
আমি লেখাটা এই
জন্যেই লিখছি- ভারতে দেশভাগ এবং দ্বিজাতিতত্বের
যে ইতিহাস পড়ানো হয় সেখানে কংগ্রেস হচ্ছে ধর্মনিরেপেক্ষ একজাতির ভগবান! আর
দেশভাগের যত দোষ জিন্না এবং শ্যামাপ্রসাদদের। এই ধরনের একমাত্রিক ইতিহাস চর্চা জাতির
জন্য আরো দুর্ভোগ বয়ে আনতে পারে।
দ্বিজাতি তত্ত্ব
নিয়ে জানতে গেলে, পাকিস্তানে লেখা দ্বিজাতি তত্ত্বের ইতিহাস অনেক বেশী ডিটেল্ড। ইনভলভড।
কারন ভারতের দৃষ্টিকোন থেকে দ্বিজাতি
তত্ত্ব একটা রাজনৈতিক বিপর্যয়- যার দায়
কেউ নিতে অপরাগ। পাকিস্তানে উলটো। এটা তাদের কাছে বিজয় এবং রাষ্ট্রের মূল
আইডিওলজি। ফলে সাফল্যে ভাগ বসাতে রাজী সবাই। এবং এই জন্যে পাকিস্তানের ইতিহাস
পড়লে, দ্বিজাতি তত্ত্বের যে ন্যারেটিভ নামে ্তা অনেকটা বেশী গভীর। যদিও সেই
ন্যারেটিভেও জল প্রচুর। তারা বৃটিশ তথা উইনস্টন চার্চিলের ভূমিকা একদম দেখায় না। কিন্ত বাস্তব হচ্ছে বিংশ
শতাব্দির এই বৃহত্তম বিপর্যয়ে ( দেশভাগ) চার্চিল ছিলেন প্রধান পুরোহিত। জিন্না
প্রধান সহকারি। গান্ধী ঘি সাপ্লাই করেছেন। আর নেহেরুর জনভিত্তি না থাকায়, গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন
নি-পুরোটাকেই ক্ষমতার লোভে মান্যতা দিয়েছেন।
এরপরেও আছে। আমি
সত্যিই ইতিহাস পড়ে অবাক। বৃটিশ যখন ১৯৪৮ সালে প্যালেস্টাইন ছাড়ে- তখন সেখানে
৫% ইহুদি, ৯৫% আরব। ইস্রায়েল বলে একটা ছোট
ফুটবল ফিল্ড, ইহুদিদের দিয়ে যায় বৃটিশরা। ইহুদিরা মানে নি, আরবের লোজজন ও মানে নি।
ইহুদিরা গৃহযুদ্ধের ফলে দুই মাসের মধ্যেই বৃহত্তর ইস্রায়েল রাষ্ট্র গঠন করে।
বৃটিশদের দেওয়া বর্ডার মানেই নি!
আর ভারতে ?
দেশভাগের সময় ৭৫% হিন্দু, ২৫% মুসলিম। সেনাবাহিনীর পুরোটাই প্রায় ভারতের
হাতে। নেহেরু বা গান্ধীর কোন বাধ্যবাধকতা
ছিল না পাকিস্তান মেনে নেওয়ার- সেনা ঢুকিয়ে অনাযাসেই পুরো অখন্ড ভারতের জন্ম হতে
পারত সেই সময়। পাকিস্তানের হাতে মিলিটারিই ছিল না দু-বছর। ইস্রায়েলের জনক বেন
গুরিয়ান বৃটিশদের দেওয়া সেটলমেন্ট মানেন নি। গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে নিজের দেশ গড়েছেন। সেখানেও চূড়ান্ত দাঙ্গা হয়েছে- ইহুদিরা বন্দুক
হাতে আরব দাঙ্গাবাজদের তাড়িয়েছে। আবার নিজেরাও পালটা দাঙ্গা করে জমি দখল করেছেন।
কারন বৃটিশদের দেওয়া সেটলমেন্ট মানার কোন দায় ইস্রায়েলের নেতৃত্বের ছিল না। বেনগুরুয়ানের রাজনৈতিক “ দৃঢ়তার”
১% ও গান্ধী বা নেহেরুর মধ্যে ছিল না। গান্ধীর “মহানতার” আর নেহেরুর দুর্বল
নেতৃত্বের দায় বইল ১৪০ লাখ মৃত হিন্দু-মুসলমান।
আরো কত শত লাখ ধর্ষিত নারী। বেনগুরিয়ানের নেতৃত্বের ২% গুন ও যদি কংগ্রেসের
নেতৃত্বের থাকত, দেশভাগের জন্য এত শত লাখ লোক প্রান হারাত না। বেনগুরিয়ান একটা অবৈধ
ইহুদি রাষ্ট্রের ধারনাকে মাত্র ৫% ইহুদিদের নিয়ে বৈধ করে নিল। আর আমাদের মহান গান্ধী
এবং নেহেরু, দ্বিজাতি তত্ত্বের মতন একটি অবৈধ ধারনার বিরুদ্ধে মিলিটারি নামাতে সাহসই
পেলেন না! এরা আবার আমাদের মহান নেতা ? ইস্রায়েল, আমেরিকার স্বাধীনতার ইতিহাস যত পড়ি-ততই
মনে হয় গান্ধী নেহেরুর মতন এত দুর্বল দুই নেতাকে এত বড় হিরো করে দেখানো স্বাধীনতাউত্তর কালে ভারতীয় রাষ্ট্র “ ম্যনুফ্যাকচার”
করেছে।
দুর্বলদের হাতে
জাতির নেতৃত্ব গেলে এটাই জাতির প্রাপ্য। এই জন্যেই স্টালিনকে গালাগাল দেওয়া
সত্ত্বেও আমি বুঝেছিলাম , লেনিন যে দুর্বল রাশিয়া স্টালিনকে ছেড়ে গিয়েছিলেন- সেখান
থেকে সোভিয়েত বাঁচাতে একজন আইরন ম্যানের দরকার ছিল। স্টালিনের মতন কঠোর শাসক না
পেলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই সোভিয়েত ভেঙে যেত জাতিদ্বন্দে। ভারতের ইতিহাসের সব থেকে দুর্ভাগ্য এই যে-
স্বাধীনতা আন্দোলনটা বৃটিশরা গৃহপালিত জীব “কংগ্রেসের” মাধ্যমে ম্যানেজ করেছে
দীর্ঘদিন। ফলে নেতাজির মতন দীপ্ত আইরন ম্যান নেতৃত্ব সেখানে তৈরী হয় নি। মহত্মাগান্ধীর
দুর্বল অহিংসার আধ্যাত্মিক সাধনাকে পলিটিক্যাল লাইন করার জন্যই দেশভাগ সম্ভব হয়।
নইলে ৫%, সাত লাখ ইহুদি যেখানে বৃটিশ পার্টিশন অগ্রাহ্য করার সাহস রাখে, ৭৫%,
ত্রিশকোটি হিন্দুদের সে সাহস হল না? কত কাপুরুষ ছিল নেহেরু-গান্ধির নেতৃত্ব?
আর এরাই স্বাধীনতার পর এমন ভারতের ইতিহাস নিজেরা লিখেছে,
নিজেদের ভগবান বানিয়েছে!
(২)
এবার আসি দ্বিজাতি
তত্ত্বের মূলে। তাহলেই বোঝা যাবে কেন নেহেরু বেনগুরিয়ানের পথেই সমাধান খুঁজতে
পারতেন-কিন্ত নিতান্ত অপদার্থ হওয়াতে করেন নি। এই জন্যেই বলে দুর্বলের হাতে
রাজনৈতিক ক্ষমতা দিতে নেই।
দ্বিজাতি তত্ত্বের উৎস খুঁজতে যেতে হবে মোঘল সাম্রাজ্যের
শেষ দিনগুলিতে। আওরঙ্গজেব সবে প্রয়াত। মোঘল সাম্রাজ্য ভাংছে। মারাঠা এবং শিখেরা
উঠে আসছে। রাজনৈতিক ক্ষমতা হারানোর সাথে সাথে উত্তর-পশ্চিম ভারতে মুসলমানদের একটা
বড় অংশ বৃহত্তর হিন্দু সমাজের দিকে আবার ফিরে আসছিল। আসলে হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির
মিশ্রনে একটা নতুন সংস্কৃতির জন্ম হচ্ছিল-যার ধারক উর্দু সংস্কৃতি।
প্রোটেক্টর মুঘল নেই।
মোল্লারা ক্ষমতা হারতে থাকেন। ভারতে হিন্দু রাজত্বে “ইসলাম” বিপন্ন এই ধুয়ো প্রথম তোলেন শাহ
ওয়াল্লিহ দেলোয়ায়ি ( ১৭০৩-৬২)। মুঘল নেই, এই অবস্থায় “ইসলাম” যাতে বিশুদ্ধ থাকে,
তার জন্য তিনি ভারতের নবাবদের কাছে ফতেয়া পাঠান যাতে তারা কঠোর আইন করেন- যে আইনের
আন্ডারে কোন মুসলিম হিন্দু অনুষ্ঠানে অংশ নিলে, শাস্তি পাবে। হিন্দুদের অনুষ্ঠান
আইন করে বন্ধ করার জন্য উপদেশ দেন।
শিয়াদের ও চরম শাস্তির বিধান দেন।
তার নির্দেশেই আমহেদ শা দুরানি অসংখ্য শিয়া ধর্মী মুসলমানদের হত্যা
করেছিলেন দিল্লী এবং কাশ্মীরে।
"Strict orders
should be issued in all Islamic towns forbidding religious ceremonies publicly
practiced by Hindus such as the performance of Holi and ritual bathing in the
Ganges. On the tenth of Muharram, the Shias should not be allowed to go beyond
the bounds of moderation, neither should they be rude nor repeat stupid things
in the streets or bazars".
শাহ ওয়াল্লিহ দেলোয়ায়ি খুবই গুরুত্বপূর্ন ফিগার দ্বিজাতি
তত্ত্বের ইতিহাসে। কারন তারই আদর্শ থেকে জন্ম নিল, আরো দুই ইসলামিক আন্দোলন- যা
দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রিকারসার। এরা হচ্ছেন – হাজি শরিয়াতুল্লাহ ( ১৭৮১-১৮৪০)।
বাংলার ফরাজি আন্দোলনের জনক। দ্বিতীয় জন সৈয়দ আহমেদ বরেল্ভি ( ১৭৮৬-১৮৩১)। যিনি
উত্তর ভারতে প্রথম জিহাদি ইসলামিক সেনার জন্ম দেবেন, শিখদের বিরোধিতা করতে । যার
উত্তরাসূরী আজকের দেওবান্দি স্কুল। তাছাড়া
আজকের তালিবানিদের ও পূর্বসূরী এই সৈয়স আহমেদ বরেল্ভি।
হাজি শরিয়াতুল্লাহ
এবং সৈয়দ বরলেভির ঐতিহাসিক পর্যালোচনা দরকার। কিভাবে কোম্পানীর শাসনের প্রথম
দিকে একট শক্তিশালী “ ইসলামিক
রেজিস্টান্ট” মুভমেন্ট গড়ে ওঠে। কারন ১৯৪৬ সালে নোয়াখালির দাঙ্গার ভিত লুকিয়েছিল বাংলার ফরাজি আন্দোলনে।
হাজি শরিয়াতুল্লাহ
বহুদিন মক্কায় ছিলেন এবং মক্কা থেকে বিশুদ্ধ ইসলাম কি জিনিস শিখে আসেন! বাংলায়
ফিরে দেখেলেন, বাঙালী মুসলমানেরা নামেই মুসলিম। ৯৫% আচার আচরন হিন্দুদের মতন। তার
ফ্যামিলিতেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার লোক নেই। কেউ দাড়ি রাখে না।হিন্দুদের সব
অনুষ্ঠানেই সব বাঙালী মুসলিম যোগ দেয়।
বাঙালী মুসলিমদের
“বিশুদ্ধ” মুমিন বানাতে ফরাজি আন্দলোনের শুরু। তীতুমীর ও ছিলেন ফরাজি। আসলে
কোম্পানীর শাসনে বাঙালী মুসলমান প্রজাদের অবস্থা উত্তরোত্তর এত খারাপ হতে থাকে,
ফরাজির মতন ধর্মীয় আন্দোলনকে কেব্দ্র করেই মুসলমানরা রেহিস্টান্স মুভমেন্ট
গড়েন। এই আন্দোলন ছিল হিন্দু, মুসলমান
জমিদার এবং বৃটিশ বিরোধি। অর্থাৎ একটা ক্লাস স্ট্রাগলকে কমিউন্যাল স্ট্রাগল গ্রাস
করে।
কিন্ত এটাই
দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তি। কারন জিন্না দাবী করলেন ভারতের মুসলমানদের খাদ্য, ভাষা,
আচার আচরন, সংস্কৃতি সব নাকি আলাদা! হাজি শরিয়াতুল্লাহর জীবন পর্যালোচনা করলে বোঝা
যাবে অষ্টদশ শতাব্দিতে ভারতীয় মুসলিম, বিশেষত বাঙালী মুসলমানরা একেবারেই হিন্দুদের
থেকে আলাদা ছিল না ( এখনো নেই প্রাক্টিক্যালি )। ফলে ফরাজি আন্দোলনের দরকার হল।
সৈয়দ বরলেভি ইসলামিক সশস্ত্র সংগ্রামের (জিহাদ) মাধ্যমে উত্তর ভারতের মুসলিমদের
একত্রিত করতে চাইলেন। হিন্দুত্বের প্রভাব থেকে আলাদা করতে চাইলেন। পাকিস্তান
মুভমেন্টের আধ্যাত্মিক গুরু, আলমা ইকবাল বা কবি ইকবাল “ভারতীয় মুসলমানদের” অষ্ঠাদশ
শতাব্দির এই প্রতিবাদি আন্দোলনের ফেজটাকে খুব ভাল করে ধরেছিলেন।
কিন্ত কেন- কেন মুসলিমরা ফরাজি আন্দোলনে যোগ দিয়ে বিশুদ্ধ
মুসলমান হওয়ার চেষ্টা করলেন? আলমা ইকবালের লেখা, কবিতা পড়লে এটা বোঝা যাবে। আসলে
যতদিন মুঘলরা ছিল- ভারতীয় মুসলমানদের ইসলামিক আইডেন্টিটির প্রোটেকশন নিয়ে ভাবতে হয়
নি। কারন তারাই রাজা। কোম্পানীর রাজত্বে ভিটে মাটি হারিয়ে ভারতীয় মুসলমান, বিশেষত
এলিট ক্লাসের মধ্যে এক অস্তিত্বের সংকট আসে। আর যারা গরীব মুসলমান ছিল- তারা দেখল
ইংরেজ এবং তার পোষ্য হিন্দু জমিদারদের অত্যাচার। ব্যবসা বানিজ্যের অবস্থা আরো খারাপ।
ইসলামিক আইডেন্টির মধ্যেই, মুসলমান পরিচয়টাকেই
আঁকরে ধরে বেচে থাকার চেষ্টা করলেন তারা। তাদের ইসলামিক “গ্লোরি” তখনো ধরে রেখেছে
পড়ন্ত অটোম্যান সাম্রাজ্য। আল্লামা ইকবাল থেকে
তৎকালিন ভারতীয় মুসলমানদের ওটিই ছিল শান্তনা- যে তুর্কীর মুসলমানরা মহান ইসলামক
জাতি গড়তে পারলে আমরাও পারব!
“The truth is that among the Muslim nations of
today, Turkey alone has shaken off its dogmatic slumber, and attained to
self-consciousness. She alone has claimed her right of intellectual freedom;
she alone has passed from the ideal to the real – a transition which entails
keen intellectual and moral struggle”
বৃটিশ শাসকরা এই
দুই আন্দোলনকে ধ্বংশ করে। কারন এরা ছিলেন বৃটিশ বিরোধি। কিন্ত এই ধ্বংশ স্তুপ থেকেই উদ্ভব স্যার সৈয়দ
আহমেদ খানের। যিনি ওই একই আদর্শে পরিচালিত হলেন। কিন্ত শত্রুর নিশানা এবার
হিন্দুরা। ফলে স্যার আহমেদ বৃটিশদের বন্ধু বানালেন। এখানেই দ্বিজাতি তত্ত্ব সরকারি
সিলমোহর পেল। কারন বৃটিশরা দেখল এর সরকারি স্বীকৃতি দেওয়া মানে, তাদের লাভ। ভারতের
রেজিস্টান্স মুভমেন্ট দুর্বল হবে। কারন ভারত রাষ্ট্রের ধারনা দুর্বল হবে।
(৩) আলিগড়ে
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা স্যার সৈয়দ আহমেদ খান, ১৮৮৩ সালের জানুয়ারী মাসে
পাটনায় প্রথম ঘোষনা করলেন হিন্দু এবং মুসলমান -দুটি আলদা জাতি। যদিও মুসলিমদের
জন্য আলাদা রাষ্ট্রের দাবী তখন ওঠে নি।
Friends, in India there live two prominent
nations which are distinguished by the names of Hindus and Mussulmans. Just as
a man has some principal organs, similarly these two nations are like the
principal limbs of India
কিন্ত চার বছর
বাদে, যখন কংগ্রেসের বয়স মোটে দুই বছর-তখন ১৮৮৭ সালেই স্যার সৈয়দ আহমেদ ইঙ্গিত
দিলেন-ভারতের পলিটিক্যাল সল্যুউশন হিন্দু-মুসলিমদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র
Now suppose that all the English were to leave
India—then who would be rulers of India? Is it possible that under these
circumstances two nations, Mohammedan and Hindu, could sit on the same throne
and remain equal in power? Most certainly not. It is necessary that one of them
should conquer the other and thrust it down. To hope that both could remain
equal is to desire the impossible and inconceivable.
এবার কংগ্রেসের নেতৃত্বে যত একটি “ভারতীয় জাতির”
ধারনাকে পুশ করা হচ্ছে-স্যার সৈয়দ আহমেদ প্রমাদ গুনছেন। একবছর বাদেই তার দাবি আরো
পরিস্কার হল যে ভারতীয় বলে কোন মনলিথিক জাতি হয় না।
The aims and objects of the Indian National
Congress are based upon an ignorance of history and present-day politics; they
do not take into consideration that India is inhabited by different
nationalities: they presuppose that the Muslims, the Marathas, the Brahmins,
the Kshatriyas, the Banias, the Sudras, the Sikhs, the Bengalis, the Madrasis,
and the Peshawaris can all be treated alike and all of them belong to the same
nation. The Congress thinks that they profess the same religion, that they
speak the same language, that their way of life and customs are the same... I
consider the experiment which the Indian National Congress wants to make
fraught with dangers and suffering for all the nationalities of India,
specially for the Muslims
যেহেতু স্যার সৈয়দ আহমেদ খান, সৈয়দ আমীর
আলি কংগ্রেসের ‘এক জাতি” তত্ত্বের প্রথম থেকেই বিরোধিতা করেছেন- সেহেতু ১৮৯০ সালেই
পরিস্কার হয়ে যায়, কংগ্রেসের পালটা রাজনৈতিক দল হিসাবে, একটি ইসলামিক দল তৈরী হবে।
সেই পক্রিয়া শুরুহয় ১৯০১ সাল থেকে। ১৯০৬ সালের ডিসেম্বরে গোটা ভারতের ৩০০০ মুসলিম
প্রতিনিধি নিয়ে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের প্রথম কনফারেন্স হয়। প্রথম থেকেই এদের
লক্ষ্য ছিল বৃটিশ বন্ধুত্ব বাড়িয়ে ইম্পিয়েল কাউন্সিলে মুসলিম প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো।
সেটা করার জন্য লীগ লন্ডনে “লবিস্ট” ও নিয়োগ করে। যাদের কাজ ছিল বৃটিশ পার্লামেন্টের
মাধ্যমে গর্ভনর জেনারেলকে চাপ দেওয়া। যাতে আরো বেশী মুসলিম প্রতিনিধিত্ব বাড়ে।
লীগ এই কাজে প্রথম তিন বছর অভূতপূর্ব
সাফল্য পায়। লীগের অধিকাংশ ডিমান্ডই মানা হল হাউস অব লর্ডেসের চাপে। লীগের
লবিস্টদের সাফল্য। গর্ভনর জেনারেলের
ইচ্ছার বিরুদ্ধে।
প্রথম তিন বছরে লীগের এই অভূতপূর্ব সাফল্যের কারনেই উত্তর ভারতের হিন্দুদের
মধ্যে তৈরী হয় সব কিছু মুসলমানরা নিয়ে গ্যালো টাইপের ‘প্যানিক” । পাঞ্জাবে মন্টি
মার্লো রিফর্মের পুরো ক্ষীরটা খেয়ে গেল লীগ। যার থেকে হিন্দু মহাসভা, আর এস এস সব কিছুর
জন্ম...।। কারন তদ্দিনে অনেক হিন্দুই আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছে- কংগ্রেসের
আদর্শবাদি পজিশনের জন্য বৃটিশরা লীগকেই সব সুবিধা দেবে। সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হবে হিন্দুরা!
ফলে ১৯০৯ সালেই মদন মহন মালব্য এবং লালা
লাজপত রায়, লাহোরে পালটা পাঞ্জাব হিন্দু মহাসভার অধিবেশন ডাকলেন। সাথে সাথে
হিন্দুদের জন্য একটা সারা ভারত হিন্দু মহাসভার গড়ার কাজ চলে। যা ১৯১৩ সালে
আম্বালাতে সম্পন্ন হয়। ১৯২০ সালে সাভারকর হিন্দু মহাসভাতে যোগ দিলেন। আবার কেশব
বালিরাম হেজগাউকর ১৯২৫ সালে হিন্দু মহাসভা ছেড়ে আর এস এস তৈরী করলেন। কারন তার মনে
হয়েছিল হিন্দুদের চরিত্র এবং দৈহিক গঠন এত দুর্বল হলে, কোন রাজনীতি বা রাষ্ট্রনীতির
উপযুক্ত তারা না। ফলে তিনি হিন্দুদের চরিত্র গঠনে জোর দিলেন।
সাভারকর ১৯২৩ সালে দ্বিজাতি তত্ত্ব – টু নেশন
থিওরী কথাটা তোলেন। কিন্ত তার দ্বিজাতি তত্ত্ব স্যার সৈয়দ আহমেদ বা জিন্নার
দ্বিজাতি তত্ত্ব না। আম্বেদকারের ভাষায়
Mr. Savarkar... insists
that, although there are two nations in India, India shall not be divided into
two parts, one for Muslims and the other for the Hindus; that the two nations
shall dwell in one country and shall live under the mantle of one single
constitution;... In the struggle for political power between the two nations
the rule of the game which Mr. Savarkar prescribes is to be one man one vote, be the man Hindu or Muslim. In his scheme a
Muslim is to have no advantage which a Hindu does not have. Minority is to be
no justification for privilege and majority is to be no ground for penalty. The
State will guarantee the Muslims any defined measure of political power in the
form of Muslim religion and Muslim culture. But the State will not guarantee
secured seats in the Legislature or in the Administration and, if such
guarantee is insisted upon by the Muslims, such guaranteed quota is not to
exceed their proportion to the general population।
এবার আরো মৌলিক প্রশ্নটা করা যাক। মুসলীম লীগ বা
হিন্দু মহাসভার জনভিত্তি কতটা ছিল? কতজন ভারতীয় দ্বিজাতি তত্ত্বে বিশ্বাসী এই দুই
দলের সমর্থক সেই সময়?
এর উত্তর খুব সোজা। গান্ধী ভারতের রাজনীতিতে
ঢোকার পর, এই দুটো দলের জনভিত্তিই আস্তে আস্তে দুর্বল হতে শুরু করে। কারন এরা ছিল
জমিদার এবং উচ্চশ্রেনীর প্রতিনিধি। গান্ধী হত দরিদ্র হিন্দু-মুসলমান ভারতীয়দের কাছে
পৌছানো মাত্রই লীগ এবং হিন্দু মহাসভা- এদের জনপ্রিয়তায় ভাঁটা নামে। লীগ এবং মহাসভার
এই এলিটেরা ছিলেন জন বিচ্ছিন্ন। কংগ্রেস গান্ধীপূর্ব কালে তাই ছিল। কিন্ত গান্ধী কংগ্রেসকে
আপামর ভারতের পার্টি বানালেন। যদিও ১৯২০ সাল থেকে লেজসলেটিভ কাউন্সিলের নির্বাচন হচ্ছিল,
কংগ্রেস নানান কারনে নির্বাচন বয়কট করে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত।
১৯৩৪ সালে প্রথম কংগ্রেস সম্পূর্ন ভাবে নির্বাচনে
অংশ নেয়। এই নির্বাচনে লীগ এবং হিন্দু মহাসভার প্রচুর ক্যান্ডিডেট পরাজিত হয়। জাতীয়
কংগ্রেস সর্বত্র জিতল। দুই নাম্বার পজিশনেও
ছিল কংগ্রেস ভাঙা আরেক কংগ্রেস ন্যাশানালিস্ট পার্টি। বাংলায়
৭ টার মধ্যে ৬ টা সিট পায় কংগ্রেস। লীগ বাংলায় পুরো সাফ।( জাতীয় কংগ্রেস ৪২, ন্যাশানাল
কংগ্রেস ১২, ইন্ডিপেন্টেন্ডেস ৪৩)।
অর্থাৎ গোটা ভারতবাসী – হিন্দু মুসমান নির্বিশেষে
লীগ এবং হিন্দু মহাসভাকে ছুড়ে ফেলে গান্ধীর ঐক্যবদ্ধ একজাতির ভারতের দিকেই ভোট
দিয়েছিল ১৯৩৪ সালে। দ্বিজাতি তত্ত্ব ত ওখানেই
কবরে শুয়ে যায়। কিন্ত কংগ্রেসের নেতারা সেটা করতে ব্যর্থ হলেন কেন?
১৯৩৪ সালের নির্বাচন পরিস্কার ভাবে দেখাচ্ছে,
গোটা ভারত ধর্ম নিরেপেক্ষ একদেশ চাইছে। দ্বিজাতি তত্ত্বের খলনায়কদের মুসলমানরাও
ভোট দেয় নি। তাহলে কিসের জাদুবলে মাত্র দশ বছরের মধ্যে অখন্ড ভারতের ধারনা দ্বিজাতি তত্ত্বের স্টিম রোলারে
পিশে মারা হল?
এই ইতিহাসটা না জানলে কেউ বুঝবে না, রাজনৈতিক
নেতা হিসাবে গান্ধী এবং নেহেরু কত বড় অপদার্থ ছিলেন!
কিন্ত কিছু ইন্ডিপেন্টেডন্ট মুসলিম পার্থী
জেতেন ১৯৩৪ এর নির্বাচনে। যাদের অনেকেই লীগের ছিলেন না। কিন্ত এদের সবাইকে একত্রিত
করে মুসলীম লীগের ছাতার তলায় আনলেন জিন্না। এটা হচ্ছে দ্বিজাতি তত্ত্বের সাফল্যের
দিকে প্রথম মাস্টার স্ট্রোক। কিন্ত এর পেছনে কংগ্রেসের ১০০% হাত আছে। সেই ইতিহাসটাই
লিখি। কেন। তাহলেই আপনার বুঝবেন কত বড় অপদার্থ ছিল গান্ধী এবং নেহেরু।
’৩৪
এই শেষ না। ’৩৭ এর নির্বাচনে আরো ভরাডুবি জিন্নার। ভারতীয় মুসলিমদের ৭৪% ভোট পেল কংগ্রেস,
৫% লীগ।
বাংলা, পাঞ্জাব, নর্থ ইস্টার্ন প্রভিন্স- যেখানে মুসলমানরা প্রায় ১০০%, লীগকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল ভারতীয় মুসলমানরা।
জিন্না খুবই দুঃখ পেলেন। ভারতীয় মুসলমানদের অসংবাদিত নেতা হওয়ার স্বপ্ন সেখানেই
প্রায় শেষ। নেহেরু তখন ৭০৬। জিন্না ১০৬। আর জিন্নার এই সিটগুলো মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত
সিট। অসংরক্ষিত সিটে মুসলমান এলাকাতেও লীগ নিদারুন ভাবে পরাজিত।
কিন্ত কেন?
এর কারন অনেক। মুসলীম লীগে তখন দুই ফ্যাকশন। একদল প্রোবৃটিশ, অন্যদল কংগ্রেসের
সাথে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিতে ইচ্ছুক। এরা সবাই সুটেড বুটেড মুসলিম এলিট ক্লাস!
সাধারন গরীব মুসলমানদের সাথে এদের কোন সম্পর্ক নেই। এদিকে তদ্দিনে গান্ধী ভারতের গরীব মুসলমানদের নয়নের
মণি।খিলাফত আন্দোলনের মাধ্যমে গান্ধী ভারতের সব মোল্লা এবং মৌলনাদের কাছাকাছি আসতে
পেরেছিলেন। বৃটিশ অত্যাচার বেড়ে চলেছে, অথচ
লীগ বৃটিশদের পা চাটছে- এটা মেনে নেন নি অধিকাংশ ভারতীয় মুসলমানরা।
ইনফ্যাক্ট গান্ধী মুসলমানদের মধ্যে কংগ্রেসকে এতটাই
জনপ্রিয় করে তুল্লেন যে দিওবান্দির মৌলনারা দ্বিজাতি তত্ত্বকে ইসলাম বিরোধি ঘোষনা
করে। কারন ইসলামের কোন থিওলজি স্কুলই জাতিয়তাবাদ সাপোর্ট করে না। ইসলাম দ্বীনের ধর্ম।
ভারতের মৌলনারা গান্ধীর দরিদ্র কবলিত জীবনচর্চায় আকর্ষিত হল-কিন্ত বিলাসী মুসলিম
জমিদার এবং ব্যারিস্টারদের দল লীগ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়।
মনে
রাখতে হবে আল্লামা ইকবাল ১৯৩০ সালে প্রথম পাকিস্তানের প্রস্তাবনা আনেন। কিন্ত দেখা
যাচ্ছে ভারতের মুসলমানরা এই দশকে সম্পূর্ন ভাবেই লীগকে বর্জন করেছে।
ইনফ্যাক্ট ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে মুসলমানদের মধ্যে কংগ্রেসের অভূতপূর্ব সাফল্যের
মধ্যেই ভবিষ্যতের ব্যর্থতার বীজ নিহিত। আর কংগ্রেসের ব্যর্থতার পুরো সুযোগ নিয়েছেন
মহম্মদ আলি জিন্না। সম্পূর্ন একহাতে ব্যাট করে হারা ম্যাচ জিতিয়েছেন জিন্নাহ।
জিন্না ছাড়া ওই খেলা কেউ খেলতে পারত না তখন।
১৯৩০ সালে ধরা পড়ে জিন্নার যক্ষা । শুধু তার বোন
ফতিমা জানত। জিন্না গোপন রেখেছলেন তার রোগ। যদি পাছে লোকে তাকে নেতা হিসাবে অসমর্থ ভাবে। ক্ষমতার
জন্য তিনি এতটাই লালায়িত। ১৯৪৮ সালে যখন তিনি মারা গেলেন এবং মাউন্টব্যাটেন জানলেন
তিনি যক্ষায় ভুগে মারা গেছেন- মাউন্টব্যাটেন শুধু একটাই কথা বলেছিলেন পারসোনাল সার্কলে!
যদি তিনি জানতেন জিন্নার যক্ষা আছে, তাহলে
ভারতের স্বাধীনতার দিন আরো দুবছর পেছাতেন ! কারন জিন্নার মৃত্যু হলে পাকিস্তান ভাগ
হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। মুসলমানদের মধ্যে আর কোন নেতাই ছিল না যে পাকিস্তান ছিনিয়ে
নিয়ে আসত পারত।
ভাবুন
১৯৩৭ সালে নেহেরু ৭০৭, জিন্না ১০৬! জিন্না ইনিংসে হারছেন! মুসলিমদের মধ্যে জিন্নার
ভোট ৫%, কংগেসের ৭৫%। ১৯৪৬ সালে সেটা হল জিন্না ৭৩%, কংগ্রেস ১১%। মাত্র ৯ বছরের মধ্যে
কি করে কংগ্রেস ভারতের মুসলমানদের আস্থা হারাল তার জন্যে বুঝতে হবে “জিন্নার” নেতৃত্ব
দেওয়ার ক্ষমতার পাশাপাশি নেহেরুর অপদার্থতা!
(৪)
জিন্না চরিত্রের সম্পূর্ন বিশ্লেষন ছাড়া
দ্বিজাতি তত্ত্ব এবং দেশভাগ বোঝা সম্ভব না।
জিন্না
কি দেশভাগ চেয়েছিলেন? আমি যেসব তথ্য প্রমান এবং ইতিহাসের ধারবাহিকতা দেখেছি-তাতে আমার
মতে জিন্না পাকিস্তানকে একটা নেজোশিয়েশন টুল হিসাবেই ব্যবহার করেছেন।
জিন্না ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে তার মুম্বাই এর
বাড়ি বিক্রি করে করাচিতে বাড়ি কেনেন। স্বাধীনতার মাত্র দুই সপ্তাহ আগে। তাহলেই বুঝুন!
শেষ দিন পর্যন্ত তার আশা ছিল নেহেরুর সাথে
একটা সমজোতা হবে। নেহেরুর সাথে তার বিরোধ কিন্ত পাকিস্তান নিয়ে না। এটাও ভারতের কংগ্রেস
রচিত ইতিহাস ভুল শেখায়।
১৯৪২এর ক্রিপস মিশন থেকে ক্যাবিনেট মিশন- জিন্না
নেহেরু/গান্ধী নেজোশিয়েশন তিনবার হয়েছে। তিনবারই একই প্যাটার্নে ডিসকাশন এবং সমঝোতা
ব্যর্থ।
সুতরাং জিন্নার আসল পজিশনটা বোঝা দরকার।
জিন্না চাইছিলেন দুর্বল দিল্লী। শক্তিশালী
প্রদেশিক শক্তি। দিল্লীর হাতে শুধু মিলিটারি, বিদেশনীতি এবং মুদ্রা থাকবে। সিভিল
এবং ক্রিমিন্যাল আইন থাকবে প্রদেশের হাতে। তার বক্তব্য ভারত “এক নেশন না”। দ্বিজাতি না, বহুজাতির
দেশ। বহুজাতির দেশ তখনই শক্তিশালী হয় যখন তাদের স্বয়ত্ব শাসন থাকে। তাছাড়া তার
বক্তব্য যেসব প্রদেশে মুসলমানরা প্রধান, সেখানে তাহলে ইসলামিক আইন কানুনে কোন
অসুবিধা হবে না। জিন্নার কাছে শক্তিশালী দিল্লী মানে সেখানে হিন্দুরা ছড়ি ঘোরাবে
মুসলমানদের ওপর।
নেহেরু চাইছিলেন শক্তিশালী দিল্লী। তারমতে
দিল্লী দুর্বল হলে দু দিনেই ভেঙে যাবে ইন্ডিয়ান কনফেডারেশন। নেহেরুর পজিশন ভুল ছিল।
ভুল ছিল না ইচ্ছাকৃত ভাবে ক্ষমতার লোভে এই ভুল করেছেন সেটা আমরা বিশ্লেষন করে দেখতে
পারি।
আমেরিকা সেই ৪৬ সালেও পৃথিবীর সব থেকে শক্তিশালী
দেশ। ১৭৭০ সালে আমেরিকার স্বাধীনতা লগ্নে ১০ টি ফাউন্ডিং স্টেট থেকে আমেরিকা কিন্ত
এই কনফেডারেশন রাষ্ট্রের ধারনা নিয়েই জন্মে ছিল। আমেরিকাতে প্রতিটা রাজ্যের আইন
আলাদা। ট্যাক্স আলাদা। তাতে কি আমেরিকা দুর্বল হয়েছে? নেহেরু এতবার আমেরিকা ভ্রুমন
করেছেন, আমেরিকার সংবাদপত্রে নিয়মিত কলাম লিখতেন, আর তিনি এটা জানতেন না কনফেডারেট
রাষ্ট্রও শক্তিশালী হতে পারে যেখানে আমেরিকা হচ্ছে কনফেডারেট রাষ্ট্রের সব থেকে বড়
উদাহরন ? বিশ্বাসযোগ্য?
আমার কাছে না। আমি মনে করি, ওই ৭০৭-১০৬ স্কোরেই
আছন্ন ছিলেন নেহেরু। ১৯৩৯ এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আর কোন ভোট হয় নি।
নেহেরুর মনে হয়েছিল এত মুসলমান যখন কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছে, তারা “এক জাতির’ শাসনই
চাইছে! এই খানেই ডাঁহা ভুল করেছিলেন পন্ডিতজি। ১৯৩৭ সালে মুসলমানরা বৃটিশ শাসনের
অবসানের জন্য কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছিল বিশেষত লীগ যখন বৃটিশদের পা চাটা কুত্তা ছাড়া
কিছু ছিল না। তার মানে এই না, যে বৃটিশরা চলে যাওয়ার পর তারা দিল্লীতে হিন্দু প্রভাবিত
কংগ্রেসের শাসনে থাকতে ইচ্ছুক ছিল। প্রতিটা কংগ্রেসের নেতা ১৯৩৭ এর নির্বাচনের
রেজাল্ট সম্পূর্ন ভুল ভাবে ব্যখ্যা করেছে। এই ঐতিহাসিক ভুল নিয়ে- ঐতিহাসিক ইয়ান
ট্যলবট লিখছেন
“The provincial Congress governments made no
effort to understand and respect their Muslim populations' cultural and
religious sensibilities”
১৯৩৭ সালের নির্বাচনী সাফল্যে পরে কংগ্রেসী
নেতাদের মাথা ঘুরে যায়। নেহেরু, নেতাজিরা কেউ সোভীয়েত, কেউ মুসোলিনীর মডেলে আধুনিক
স্যোশালিস্ট রাষ্ট্র গঠনের জন্য রুপরেখা বানাতে থাকেন। যা ছিল “হার্ডকোর” আধুনিক
সেকুলার স্টেট। অন্যদিকে মদন মোহন মালব্যের মতন হিন্দু নেতারা স্বাধীন ভারতে গোহত্যা
নিশিদ্ধ আইন ইত্যাদির খোয়াব দেখতে থাকলেন। মুসলিমদের রিয়াকশন হল- আরে এর মধ্যে আমরা
কোথায়???আমাদের শরিয়া আইনের কি হবে?
এটাই ছিল “ক্রাক”। ১৯৩৭ সালের পর জিন্না স্যুট ছেড়ে কুর্তা ধরলেন।
তার ভাষনে আল্লামা ইকবালের ইসলামিক আধ্যাত্মিক কবিতা আর এস্পিরেশন বারবার আসতে লাগল।
তিনি তখন ইকবালকে আধ্যাত্মিক গুরু মেনে নিয়েছেন। বাংলার ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টিকে
লীগে আত্মস্থ করলেন।
আসলে ১৯৩৭ সালে গোহারা হারার পর তিনি বুঝেছিলেন
এই উপমহাদেশের ধর্মান্ধ মুসলমানদের সেকুলার বানানোর চেষ্টা করলে, ওই ৫% ভোটই তার
প্রাপ্য। তারা ন্যাংটো ফকির গান্ধীকে বাছবে যে মৌলনা মৌলভীদের অন্ধ ইসলামিক হুঁকোই
তামাক জোটাতে পারবে। একশো বছর বাদে, ভারত বা বাংলাদেশে অবস্থার পরিবর্তন হয় নি। কংগ্রেস,
তৃনমূল, সিপিএম, আওয়ামী লীগ- যেদলই আসুক না কেন- মুসলমানদের সেকুলার রাষ্ট্রের পথে
টানলে কেউই ভোট পায় না। ফলে ইসলামের মৌলবাদি শক্তিকে আশ্রয় করেই সবাইকে ভোট পেতে হয়!
জিন্না বুঝলেন ১৯৩৭ সালে।
অথচ
ইতিহাসের নির্মম পরিহাস! জিন্না যখন ভারতের রাজনীতিতে ইনিংস শুরু করলেন আইনসভায় (১৯০৯),
প্রথম থেকেই তিনি এক্কেবারে রকস্টার! ্মাত্র পাঁচ বছর আগে কংগ্রেসে যোগ দেন
মুম্নাই অধিবেশনে। ১৯০৬ সালে যখন মুসলীম লীগ তৈরী হল, তখন নিজেই সংবাদপত্রে কলম ধরলেন
মুসলীম লীগের ধান্দাবাজদের বিরুদ্ধে।১৯১৪ সাল পর্যন্ত সমস্ত ভারতীয় আইনের খসড়াতেই
তার ভূমকা আছে। যার মধ্যে বাল্যবিবাহ রোধের আইন, ওয়াকফ আইন থেকে শুরু করে অনেক জনকল্যানকারি
প্রগেসিভ আইনের জনক তিনি। দাদাভাই নরৌজি, গোপাল কৃষ্ণ গোখলে ইত্যাদি আদি কংগ্রেস
নেতারা জিন্নাতে আচ্ছন্ন। ১৯১২ সালে তিনিই নির্বাচিত হলেন কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলের
নেতা যারা ভারতের দাবি দাওয়া নিয়ে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট যাবে। কিন্ত দূরত্ব বাড়ছিল
কংগ্রেসের হিন্দুত্ববাদি নেতাদের কাছ থেকে – গোখলে এবং লালা লাজপত রায় এরা জিন্নার
উত্থান সহ্য করতে পারছিল না। কিন্ত আইন সভায় বক্তা এবং বুদ্ধির দৌড়ে এতটাই এগিয়ে ছিলেন
জিন্না-গোখলে বা লালা লাজপত রায় তার প্রতিদ্বন্দী হিসাবে কল্কে পেল না। ১৯১৩ সালে
তিনি লীগের সদস্যপদ নিলেন। কিন্ত জানালেন কংগ্রেসই তার পার্টি। এদিকে মুসলীম লীগ
তাকে প্রেসিডেন্ট হতে আহ্বান জানাল। ১৯১৬ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হলেন। আবার ১৯১৭ সালে মুসলীম লীগ এবং কংগ্রেসের মধ্যে লখনৌ
প্যাক্টে সাইন করালেন যে ভারতের জন্য দুই পার্টীই একসাথে কাজ করবে!
কংগ্রেসে জিন্নার মেটিওরিক রাইজ, লীগের
রাজনৈতিক পজিশন ঢিলে করে দেয়। কারন লিগের বক্তব্য ছিল- কংগ্রেস হিন্দুদের পার্টি!
এদিকে জিন্না দিনে দিনে কংগ্রেসের মুখ হয়ে উঠছেন-ফলে লীগের ক্রিডেন্টশিয়াল হ্রাস
পাচ্ছিল। কিন্ত তাহলে ১৯১৬ সালে জিন্না কেন মুসলীম লীগের প্রেসিডেন্ট হতে রাজী হলেন?
এর কারন কংগ্রেসে তার মেন্টর নরৌজি এবং গোখলের মৃত্যু। সাল ১৯১৫। আফ্রিকাতে সোরগোল ফেলে, গান্ধী ঢুকলেন কংগ্রেসে। গান্ধী আসার পর জিন্না
বুঝলেন আস্তে আস্তে কংগ্রেসের ব্যাটন তার কাছ থেকে মহত্মা গান্ধীর কাছে চলে যাচ্ছে।
ফলে তিনিও আস্তে আস্তে কংগ্রেসের সাথে দূরত্ব তৈরী করছিলেন। এটা সম্পন্ন হল ১৯১৯
সালে। যখন গান্ধী খিলাফত আন্দোলনে কংগ্রেসকে জড়ালেন। এটা সম্পূর্ন অসহ্য মনে হল
জিন্নার। কারন তিনি ভারতের মুসলিম সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যেতে চান। আর এক
গান্ধী- যে এক হিন্দু ধর্মোন্মাদ -সে কিনা এখন মুসলিম মৌলবাদিদের ও পাত্তা দিয়ে কংগ্রেসকে
সব শ্রেনীর কাছে নিয়ে যেতে চাইছে! জিন্না বৃটিশদের থেকেও বেশী বৃটিশ। তিনি স্বপ্ন
দেখেন ভারত হবে বৃটিশদের মতন ঋজু জাতি। আর এই ফকির কিনা ভারতকে ধর্মীয় মধ্যযুগে
নিয়ে যেতে চাইছে- আর গোটা কংগ্রেস তার পেছনে!
ফলে
কংগ্রেস সহ্য হল না। এদিকে মুসলিম লীগে অসংখ্য ফ্যাকশন। শিয়া সুন্নী, ইসমেইল নানান
গ্রুপ। স্বরাজ পার্টি বলে নতুন দল তৈরী করলেন প্রগ্রেসিভ হিন্দুদের নিয়ে। সেটাও দাঁড়াল
না। ব্যক্তিগত জীবন সুখের হচ্ছেনা। ১৯২৯
সালে তার ডিভোর্স সম্পূর্ন। জিন্না রাজনীতিতেই উৎসাহ হারালেন। কি করবেন? এই সব
আকাট ধর্মান্ধদের নেতা হওয়ার জন্য তিনি রাজনীতিতে আসেন নি। ভগ্ন মনোরথে-ইংল্যান্ডে
ফিরে গিয়ে ব্যারিস্টার হিসাবে আবার পসার জমালেন। রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন
(১৯৩০-৩৪)।
কিন্ত লন্ডনেই সেকুলার জিন্না থেকে ইসলামিস্ট
জিন্নার জন্ম হল।লন্ডনে স্যার আল্লামা ইকবাল তাকে বোঝাতে সক্ষম হলেন ভারতের মুসলমানরা
জিন্না ছাড়া অনাথ। সাথে সাথে ইসলামিক আধ্যাত্মবাদের দিকেও তাকে টানতে সমর্থ হলেন
ইকবাল। এর মূল কারন জিন্নার ব্যক্তিগত বিষাদ। ১৯৩১ সালে বিয়ে করলেন পার্শী খ্রীষ্ঠান নেভিল
ওয়াদিয়াকে। মেয়ে ডিনা এই বিয়ে মেনে নেয় নি। সে লন্ডনে বাবাকে ছেড়ে মুম্বাইতে ফিরে
গেল। ডিনা ছিল জিন্নার প্রান। সম্ভবত এই মানসিক অশান্তি বা কঠিন অবস্থার মধ্যেই ইকবাল,
জিন্নার হৃদয়ে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করতে পারলেন তার সুললিত কবিতার মাধ্যমে।
১৯৩৪ সালে তিনি যখন আবার মুসলীম লীগের
প্রেসিডেন্ট হিসাবে ফিরলেন, তখন তিনি ইকবালে আচ্ছন্ন। ধর্মপ্রান মুসলমানদের আর হেয়
করেন না।
জিন্নার ভাগ্য খুলে গেল ১৯৩৯ সালে, যখন কংগ্রেস দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধে বৃটিশদের সাহায্য করতে অস্বীকার করে। অন্যদিকে জিন্না লীগের তরফ থেকে
পূর্ন সহযোগিতা জানালেন। চার্চিল প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ভাগ্য আরোই খুললো। কারন
চার্চিল জিন্নাকে খুবই পছন্দ করতেন। নেহেরুকে অপছন্দ। ভারত ছাড় আন্দোলনে কংগ্রেসের
নেতারা যখন জেলে, কংগ্রেস বিধ্বস্ত- জিন্না বৃটিশদের স্নেহ ভাজন হয়ে ঘর গুছিয়েছেন।
কংগ্রেসের অনুপস্থিতিতে গোটা ভারত ঘুরে মুসলমানদের মধ্যে পাকিস্তানের স্বপ্ন রোপন
করেছেন। নেহেরু প্যাটেল এই বিষবৃক্ষ কদ্দুর ছড়িয়েছে-টের ও পান নি!
নেহেরু গান্ধী প্যাটেল যখন জেল থেকে ছাড়া
পেলেন, মুসলমানরা আর গান্ধীর সাথে নেই। আগা খানের বাসায় শেষ রফার চেষ্টাও ব্যর্থ।
ফলে ডিরেক্ট একশন এবং দাঙ্গার ডাক দেওয়ার সাহস পেলেন জিন্না। সে দাঙ্গার ইতিহাস
সবার জানা।
কিন্ত এত দাঙ্গার পরেও ক্যাবিনেট মিশনের
(১৯৪৬) অখন্ড ভারতের প্রস্তাবে রাজী ছিলেন জিন্না। নেহেরু রাজী হলেন না ( ১০ ই জুলাই)। ক্রিপস মিশন
থেকে সেই একই কারন। দুর্বল দিল্লীর প্রধানমন্ত্রী হতে রাজী নন নেহেরু। এদিকে যে কোটি
কোটি লোক মারা যাবে, এত লোকের সর্বনাশ হবে, সেসব কিছু ভাবেন নি মহান পন্ডিতজি।
নিজের স্বার্থের জন্য কোটি কোটি লোকের সর্বনাশ করেছেন সেদিন। ভারতের ইতিহাস নিয়ে যখন
মাইক্রোস্কোপের তলায় দেখা হবে, ইতিহাসই বলে দেবে নেহেরু বাঙালী এবং পাঞ্জাবীদের কত
বড় সর্বনাশ করেছেন।
(৬) কিন্ত ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্টেই অখন্ড ভারতের
স্বপ্ন শেষ হয় নি। শেষ চেষ্টা চালিয়েছিলেন কিছু আমলারা। ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান ত জন্মাল। কিন্ত তাদের কোন
মিলিটারি ও নেই। কোষাগার ও নেই। সরকারি কর্মচারিদের কে মাইনে দেবে? কেই বা
দ্বায়িত্ব নেবে এক কোটি স্মরনার্থীর? দুই
দেশের মিলিটারি প্রধান তখন স্যার ডগলাস গ্রেসি। পাকিস্তানে এদিকে ওদিকে ট্রাইবালরা
খেপে উঠেছে। জিন্না গ্রেসিকে ডাকছেন। কিন্ত মাউন্টব্যাটেন সারা দিচ্ছেন না। সরকারি
কর্মচারি নেই। হিন্দু শিখদের মেরে তাড়ানোই ফসল কাটার লোক নেই পাকিস্তানে। কোষাগারে
টাকা নেই। ডিসেম্বর ১৯৪৭, পাকিস্তান প্রায় ভেঙে যায় দশা।
এবার পাকিস্তান বাঁচাতে উদ্যোগী হলেন মহান বাপুজি।
জানুয়ারী ১৯৪৮। পাকিস্তান যাতে তার প্রাপ্য টাকা পায়, তার জন্য আমৃত্যু অনশনে বসলেন!
ঐ টাকা আর একমাস না গেলে পাকিস্তান রাষ্ট্রটাই কোলাপ্স করত!
আর ভারতের লোকেরা কি ভাগ্য নিয়ে জন্মেছিল ভাবুন।
গর্ভনর জেনারেল মাউন্টব্যাটেন চাইছিলেন পাকিস্তান কোল্পাস করুক। তার সেনাপতি ডগলাস
গ্রেসি জিন্নার ডাকে ট্রাইবাল বিদ্রোহে সারা দিচ্ছিলেন না। আমলারা মাউন্টব্যাটেনের
প্রচ্ছন্ন প্রশয়ে পাকিস্তান যাতে কোলাপ্স করে তার চেষ্টাই করছিলেন।কারন তখন ও দুই
দেশের সেনাবাহিনী এক। দুই দেশ এক করতে সেনাবাহিনীর এক ঘন্টাও লাগত না।
কিন্ত বাধ সাধলেন মহত্মা! তিনি একাই পাকিস্তান বিরোধি চক্তান্ত্রে জল ঢাললেন।
এর কিছুদিন বাদেই গান্ধীকে গুলি করে হত্যা
করবে নথুরাম গডসে। গডসে ভুল করেছিলেন। আদর্শের মৃত্যু হয় না। হিন্দু মহাসভা বা আর
এস এস জিন্নার লেভেলে বা বেন গুরিয়ানের লেভেলে কোন হিন্দুত্ববাদি নেতা নামাতে পারে
নি। সেটা আর এস এসের সমস্যা। গান্ধীর না।
হিন্দুত্ববাদি সংগঠনগুলো বৃটিশদের পক্ষে থাকায় তারা সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দুদের সাপোর্ট
হারিয়েছিল। ফলে স্বাধীনতার সময় কংগ্রেস হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্ত
হিন্দুদের স্বার্থ রক্ষার কোন দায় কংগ্রেস নেয় নি। যেহেতু কংগ্রেস হিন্দুত্ববাদি সংগঠন না। এটাই ভারতের
স্বাধীনতার ইতিহাসের সব চেয়ে বড় ক্ষত। যা বিজেপির উত্থানে সব থেকে বড় সহায়ক।
ফল এই যে দেশভাগের সময় থেকেই হিন্দুরা
নিজেদের বঞ্চিত মনে করেছে। আজকের ক্যাব, ৩৭৭, এন আর সি সব কিছুই ওই ভুলে বাঁধা।
কিন্ত এই ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে কিস্যু হবে না।
ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে। যেখানে ধর্ম না, বিজ্ঞান প্রযুক্তিকে সামনে রেখে আধুনিক
রাষ্ট্র হবে। জল, বায়ুদুষনের সমস্যার সমাধান নেহেরুকে গালাগাল দিয়ে হবে? পাশাপাশি
মুসলমান সমাজকে বুঝতে হবে,ধর্ম ত্যাগ করে বিজ্ঞানের আশ্রয় না নিলে, তারা অন্ধকারেই
থাকবে চিরকাল।
2 comments:
কি অসাধারণ লেখা,এতক্ষণ পড়লাম।ফেডারেল রাস্ট্রের ধারণা নিয়ে জিন্নাহ ও নেহেরুর অবস্থান জেনে পুরো দেশভাগটা ধরতে পেরেছি বলে মনে হচ্ছে..বাকিগুলাও পড়তেছি।ভালো থাকবেন,আর আরো ভালো লেখা লিখে যান..
১) স্বরাজ দল চিত্তরঞ্জন দাশ আর মতিলাল নেহেরুর তৈরি। জিন্নার নয়।
২) জিন্নার দ্বিতীয় বিয়ে মেয়ে দিনা ওয়াদিয়ার মেনে না নেওয়া অসম্ভব কারণ সে নিজে দ্বিতীয় বিয়েরই প্রোডাক্ট। জিন্নার দ্বিতীয় স্ত্রী রত্তনবাই পেটিট পার্সি পেটিট ফ্যামিলির মহিলা, যার মেয়ে দিনা ওয়াদিয়া। আর নেভিল ওয়াদিয়া দিনার স্বামীর নাম।
চেক দিজ আউট।
Post a Comment