Saturday, January 12, 2019

প্রাচীন সমাজের কাছ থেকে মুকেশ যা শিখলেন না


মুকেশ আম্বানীর মেয়ের বিয়ে শতাব্দীর "স্পেক্টকল" " মিরাকল" ইত্যাদি অনেক কিছুই হতে পারে, কিন্ত প্রশ্ন এবং বিতর্ক উঠবেই- ভারতীয় ধনকুবেরদের এই ধরনের ভালগার শো অব ওয়েলথ, আমাদের সমাজে কাম্য কি না। বিশেষত যেখানে ভারতে ধনী হওয়ার একমাত্র উপায় সরকারকে দুধেল গাভী হিসাবে দোয়ানো। ধনী হওয়া খারাপ না। কিন্ত ভারতের আইন কানুন সমাজটাই এমন, এখানে রাজনৈতিক দাক্ষিন্য ছাড়া, ধনী হওয়া শুধু কঠিন না, ইম্পসিবল।
প্রথমেই বলে রাখি, এই ধরনের নৈতিকতার প্রশ্নের শেষ বা সঠিক উত্তর বলে কিছু হয় না। কিছু মানুষ বিয়েতে এই ধরনের বিপুল খরচের পক্ষে, কিছু মানুষ বিপক্ষে - এবং উভয়েরই কিছু যুক্তিযুক্ত বক্তব্য আছে। এই বিবিধ মতের সুস্থ এবং অহিংস সহাবস্থান সবার প্রথমে কাম্য। তবে দুর্ভাগ্য এই যে ভারতে কমি, নাজি লিব্যারাল, ইসলামিস্ট এবং হিন্দুত্ববাদিরা অন্য মতকে শ্রদ্ধা করতে শেখে নি।
যারা বলছেন ভারতীয় ধনীদের এই ধরনের উদ্ভট কুৎসিত রকমের খরচে কোন আপত্তি নেই-তাদের মতামতকে ছোট না করেই আমি কিছু কিছু তথ্যের দিকে তাকাতে বলব ঃ
ওয়ারেন বাফে, যিনি মুকেশের চেয়েও ধনী বেশী,তিনি সারা জীবন তিন কামরার একটা ছোট বাড়ীতে থাকেন। সাধারন গাড়ী নিজে ড্রাইভ করনে। তার বিপুল সম্পত্তির সামান্য অংশই ছেলে মেয়েদের দিয়েছেন। আবার কাউকে কিছু দেন নি। তার অর্জিত সমস্ত সম্পদ শিক্ষা এবং গবেষনা খাতে ঢেলেছেন। বিলগেটস ও তার অর্জিত সম্পদ দিয়ে গোটা পৃথিবীর শিক্ষা, চিকিৎসা এবং কৃষি ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।
সেখানে আম্বানী বা বিড়লা ফ্যামিলির অবদান কি? ভারতে একমাত্র টাটারা টি আই এফ আর বা আই এস সি ব্যাঙ্গালোরের মতন বিশ্ববন্দিত গবেষনা প্রতিষ্ঠান তৈরী করে গেছেন। আম্বানী, বিড়লারা লাভ ছাড়া কিছু বোঝেন না। ব্যবসা করে লাভ করবেন, সেসব ঠিক আছে-কিন্ত কি ভাবে অর্জিত টাকা খরচ করবেন, তাই দিয়েই একমাত্র মানুষ চেনা যায়। যার জন্য আগের শতাব্দীর সব থেকে বড় ধনী আন্ড্রি কার্নেগি বলেছিলেন টাকা উপায় করা পাপ না-কিন্ত মৃত্যুর সময় ব্যঙ্কে প্রচুর টাকা থাকা নিশ্চয় ধৃষ্টতা। কারন ওই টাকা দিয়ে অনেক কিছুই তুমি করতে পারতে। এন্ড্রি কার্নেগী তার জীবনের সব সম্পদ পাবলিক লাইব্রেরী বানাতে দান করেছিলেন। তার অনুদানে আমেরিকাতে ২৫০০ এর বেশী পাবলিক লাইব্রেরী তৈরী হয়-কারন নিজের জীবন দিয়ে উনি বুঝেছিলেন জ্ঞান এবং বই ই সভ্যতাকে একমাত্র এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
এই বিগ ফ্যাট ওয়েডিং মোটেই ভারতীয় দর্শনের সাথে সামঞ্জস্য না। ধনের অহংকার কত অসার তা বোঝাতে উপনিষদে আমরা দেখি শ্রেষ্ঠী কোটি কর্ণের গল্প। শ্রেষ্ঠীর কানের দুলের হিরের দামই ছিল কোটি টাকার ওপরে। তার থেকে নাম কোটি কর্ন। তিনি অর্থের জোরে সব কিছুই কিনে নিতেন-ফলে অহঙ্কার ছিল প্রচুর। এহেন কোটিকর্ন একদিন বারনাসীর ঘাট ও কিনে নিতে চাইলেন। অভিলাষ ঘাটের প্রতিটা ইঁটে তার নাম লেখা থাকবে। এখানেই তার পরিচয় হয় এক সন্ন্যাসীর সাথে-যিনি বোঝান মৃত্যুকে যদি কোটি কর্ন কিনতে না পারেন, বাকী কোন কিছু কিনেই কোন লাভ নেই। তবে যা দিনকাল, ধনী লোকেরা বিজ্ঞানের সাহায্য অমরত্বও কিনতে পারবে বলেই মনে হয়-কিন্ত ভারতীয় দর্শনের নির্দেশ খুব পরিস্কার-অর্থের প্রয়োজন আছে বটে। কিন্ত অতিরিক্ত চাহিদা ব্যক্তি এবং সামাজ, উভয়ের পতনের কারন হতে পারে। আজকে অতিরিক্ত লোভ এবং ভোগের ফলে পৃথিবীটাকেই উচ্ছন্নে পাঠাচ্ছে জনগন।
আজকে ভারতে আপনি কি খাচ্ছেন, আপনার সন্তান কি শিক্ষা পাচ্ছে, আপনি কি ধরনের চিকিৎসা পরিশেবা পাচ্ছে, আপনি কি ধরনের বালি ইঁট কিনছেন-তার কোন কিছুর কি কোন গ্যারান্টি আছে? মানুষের সীমাহীন লোভ, যার মূল কারন ভোগবাদি চিন্তাধারা তা প্রায় সব কিছুই ধ্বংস করে দিয়েছে।
সুতরাং ভোগবাদকে কোন মতেই প্রশয় দেওয়া উচিত না। প্রাচীন ভারতীয় সমাজের নৈতিকতা উঁচু হওয়ার একমাত্র কারন- সেখানে ভোগবাদকে ঘৃণা করা হত।

No comments: