Saturday, January 12, 2019

সক্রেটিস এবং গণতন্ত্র

গণতন্ত্র নিয়ে ফ্রাস্ট্রেশন,  এথেন্সে গণতন্ত্রের শুরু থেকেই। গুরু সক্রেটিস গণতন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে সেই আড়াই হাজার বছর আগে, যা প্রশ্ন করেছেন, তা আজও প্রাসঙ্গিক।

   প্লেটোর রিপাবলিক, যা কিনা আজও রাজনীতির বাইবেল, তার ষষ্ঠ অধ্যায়ে আমরা পাই সক্রেটিস এবং তার ছাত্র এডিমেন্টাসের ডায়ালোগ।  সক্রেটিস এডিমেন্টাসকে বলছেন ধর আমরা  জাহাজে করে যাচ্ছি। জাহাজের দায়িত্ব,   সমুদ্রের অভিজ্ঞ ক্যাপটেনের হাতে দেবে, নাকি জাহাজের যাত্রীরা ভোট দিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে?

  সক্রেটিস বলছেন, এই রাষ্ট্র ত জাহাজের মতনই। পদে পদে তার বিপদ। বহিঃশত্রুর আক্রমন, দেশে অনাহার বেকারি অনুৎপদন - সব সময় উত্তাল সমুদ্রের মধ্যে দিয়েই চলে একটা রাষ্ট্র।  তাহলে জাহাজের দ্বায়িত্বে যদি আমরা অভিজ্ঞ ক্যাপটেনকে চাই, রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে কেন আমরা ভোট ভিত্তিক সিদ্ধান্তে যাচ্ছি? বিশেষত এটা যখন সবারই জানা, অধিকাংশ রাজনীতিবিদই নেতা কম, অভিনেতা বেশী?

  আরো ভাবুন। আপনার হার্টের সার্জারির জন্য হার্ট সার্জেন খুঁজছেন।  ট্যাক্সে গন্ডগোল হলে, অভিজ্ঞ একাউন্টান্ট।  সব কিছুতেই আপনার স্পেশালিস্ট দরকার। অথচ কি আশ্চর্য্য, যা কিনা আপনাকে সব থেকে প্রভাবিত করে - সেই রাজনীতির ক্ষেত্রে, আপনি কিন্ত স্পেশালিস্টদের স্থলে দক্ষ অভিনেতার হাতে আপনার সব থেকে গুরুত্বপূর্ন দ্বায়িত্বটি দিচ্ছেন। কারন রাষ্ট্র এবং সমাজের সাপোর্ট ছাড়া আপনি নাথিং।  সে ব্যবসাই করুন, বা অধ্যাপনা করুন। মসনদে গাম্বাট গেলে, আপনার কপালে দুঃখ আছে প্রচুর।

  আমেরিকার গণতন্ত্রের হাল দেখুন।  মেক্সিকান বর্ডারে ওয়াল বানানোর ঝগড়ায়, গর্ভমেন্টই বন্ধ। সরকারি কাজকর্ম সব বন্ধ।  একদিকে অতিডান গাম্বাট প্রেসিডেন্ট, অন্যদিকে গাম্বাট বামপন্থী মেজরিটি কংগ্রেস। মধ্যে খানে জনগণ তেলেভাজা। একটা রিয়ালিটি শোয়ের অভিনেতাকে পৃথিবীর সব থেকে শক্তিধর দেশের মাথায় বসালে,  কি হতে পারে, সেই সাক্ষাৎ ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি এখন।

 ভারতের হাল দেখুন। মোদি চৌকিদারি, সব কা সাথ সব কা বিকাশ ইত্যাদি বিশাল বপু অভিনয় করে, অনেক আশা জাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিছু সৎ ইচ্ছা হয়ত ছিল- কিন্ত ডিমনেটাইজেশন থেকে জিসটি-সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, তার এক্সিকিউশন সাংঘাতিক বাজে ছিল।  রাফাল ঘোটালা প্রমান করছে, দিল্লীতে যে অস্ত্র লবি কংগ্রেসের আমলে এক্টিভ, ছিল, বিজেপি আমলে তারাই প্রভু- বরং তারা আরো বেশী সাহসী হয়ে দুনাম্বারী করেছে। এখন ব্যর্থতা  থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে তিনি " গরীব" উচ্চবর্নের সংরক্ষনের রাজনীতিতে নেমেছেন।

  সংরক্ষনের রাজনীতি, সে গরীবদের জন্যই হৌক বা কাস্ট ভিত্তিকই হৌক- রাষ্ট্রের জন্য সর্বনাশ ছাড়া কিছুই না।

  সংরক্ষন রাজনীতিকে মেনে নেওয়া মানে, এটাও মেনে নেওয়া  সেই রাষ্ট্রে গরীব বা নীচু কাস্টের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা বা সামাজিক ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পায় না। বা ডিসক্রিমিনেশনের শিকার।
 সুতরাং সেই ক্ষেত্রে সরকারের প্রথম কাজ, এটা নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রের প্রতিটি সন্তান, সে যে কাস্টেই জন্মাক, যে গরীব ঘরেই জন্মাক- শিক্ষার ক্ষেত্রে যেন সমান সুযোগ পায়। সেটা না করে যখন , রিজার্ভেশনের রাজনীতি তৈরী করা হয়, যেখানে মেধার জায়গায়, আইডেন্টিটিকেই টানা হয়,  তার কনসিকোয়েন্স মারত্মক খারাপ।  কারন তা রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে বিভাজনের বিভেদের সৃষ্টি করে। 

 রিজার্ভেশনের রাজনীতি মানে এটা মেনে নেওয়া রাষ্ট্রে অসাম্য আছে, এবং সেই অসাম্যের দরুন, রাষ্ট্রের কিছু কিছু সন্তান " দুর্বল" হবে শিক্ষাগত যোগ্যতায় - কিন্ত যেহেতু তারা শিক্ষাগত ভাবে দুর্বলতর "রাষ্ট্রের অপদার্থতার" কারনে- তাদেরকেই দেশের গুরুত্বপূর্ন পদে দিতে হবে!

 অর্থাৎ এই সংরক্ষনের রাজনীতির বেসিকটা একটু ঘাঁটলে এটাই দাঁড়াচ্ছে - রাষ্ট্র বলছে, রাষ্ট্র অসাম্য  দূর করতে অপদার্থ, তাই অপদার্থ দেশে তৈরী হচ্ছে, এবং সেই অপদার্থদেরই চাকরি দিতে হবে- যাতে এই অপদার্থ সিস্টেম চলতে থাকে!!  এই কারনেই সক্রেটিস সেই আড়াই হাজার বছর আগেই লিখে দিয়েছিলেন কেন গণতন্ত্রে এই ধরনের অপদার্থতা চলতে থাকবে।

 তাহলে উপায় কি। ডিক্টেটরশিপ বা স্বৈরাচারিতা আরো বাজে। কিন্ত উপায় আছে।

  আজকে বিজনেসের ক্ষেত্রে আমরা বিগ ডেটা আনালাইটিক,  কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুযোগ নিচ্ছি। যাতে বিজনেস ডিসিশনে ভুল কম থাকে।  সরকারি ক্ষেত্রেও বিগ ডেটা আনালাইটিক, বিগ ডেটা সিম্যুলেশন ভিত্তিক সিদ্ধান্তের দিন সমাগত। যে কোন দেশের রাজনীতিবিদদের চেয়ে মেশিন অনেক অনেক বেশী ভাল সিদ্ধান্ত নিতে সমর্থ।

 রাজনীতির যা অবস্থা, প্রযুক্তিই একমাত্র ভরসা। অটোমেশনের ফলে শুধু শ্রমিকদেরই কেন চাকরি যাবে? রাজনীতিবিদ, যাদের পারফর্মান্স সব থেকে খারাপ, তাদেরকে অটোমেশন দিয়ে নির্বাসনে পাঠানো হৌক সবার আগে।













প্রাচীন সমাজের কাছ থেকে মুকেশ যা শিখলেন না


মুকেশ আম্বানীর মেয়ের বিয়ে শতাব্দীর "স্পেক্টকল" " মিরাকল" ইত্যাদি অনেক কিছুই হতে পারে, কিন্ত প্রশ্ন এবং বিতর্ক উঠবেই- ভারতীয় ধনকুবেরদের এই ধরনের ভালগার শো অব ওয়েলথ, আমাদের সমাজে কাম্য কি না। বিশেষত যেখানে ভারতে ধনী হওয়ার একমাত্র উপায় সরকারকে দুধেল গাভী হিসাবে দোয়ানো। ধনী হওয়া খারাপ না। কিন্ত ভারতের আইন কানুন সমাজটাই এমন, এখানে রাজনৈতিক দাক্ষিন্য ছাড়া, ধনী হওয়া শুধু কঠিন না, ইম্পসিবল।
প্রথমেই বলে রাখি, এই ধরনের নৈতিকতার প্রশ্নের শেষ বা সঠিক উত্তর বলে কিছু হয় না। কিছু মানুষ বিয়েতে এই ধরনের বিপুল খরচের পক্ষে, কিছু মানুষ বিপক্ষে - এবং উভয়েরই কিছু যুক্তিযুক্ত বক্তব্য আছে। এই বিবিধ মতের সুস্থ এবং অহিংস সহাবস্থান সবার প্রথমে কাম্য। তবে দুর্ভাগ্য এই যে ভারতে কমি, নাজি লিব্যারাল, ইসলামিস্ট এবং হিন্দুত্ববাদিরা অন্য মতকে শ্রদ্ধা করতে শেখে নি।
যারা বলছেন ভারতীয় ধনীদের এই ধরনের উদ্ভট কুৎসিত রকমের খরচে কোন আপত্তি নেই-তাদের মতামতকে ছোট না করেই আমি কিছু কিছু তথ্যের দিকে তাকাতে বলব ঃ
ওয়ারেন বাফে, যিনি মুকেশের চেয়েও ধনী বেশী,তিনি সারা জীবন তিন কামরার একটা ছোট বাড়ীতে থাকেন। সাধারন গাড়ী নিজে ড্রাইভ করনে। তার বিপুল সম্পত্তির সামান্য অংশই ছেলে মেয়েদের দিয়েছেন। আবার কাউকে কিছু দেন নি। তার অর্জিত সমস্ত সম্পদ শিক্ষা এবং গবেষনা খাতে ঢেলেছেন। বিলগেটস ও তার অর্জিত সম্পদ দিয়ে গোটা পৃথিবীর শিক্ষা, চিকিৎসা এবং কৃষি ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।
সেখানে আম্বানী বা বিড়লা ফ্যামিলির অবদান কি? ভারতে একমাত্র টাটারা টি আই এফ আর বা আই এস সি ব্যাঙ্গালোরের মতন বিশ্ববন্দিত গবেষনা প্রতিষ্ঠান তৈরী করে গেছেন। আম্বানী, বিড়লারা লাভ ছাড়া কিছু বোঝেন না। ব্যবসা করে লাভ করবেন, সেসব ঠিক আছে-কিন্ত কি ভাবে অর্জিত টাকা খরচ করবেন, তাই দিয়েই একমাত্র মানুষ চেনা যায়। যার জন্য আগের শতাব্দীর সব থেকে বড় ধনী আন্ড্রি কার্নেগি বলেছিলেন টাকা উপায় করা পাপ না-কিন্ত মৃত্যুর সময় ব্যঙ্কে প্রচুর টাকা থাকা নিশ্চয় ধৃষ্টতা। কারন ওই টাকা দিয়ে অনেক কিছুই তুমি করতে পারতে। এন্ড্রি কার্নেগী তার জীবনের সব সম্পদ পাবলিক লাইব্রেরী বানাতে দান করেছিলেন। তার অনুদানে আমেরিকাতে ২৫০০ এর বেশী পাবলিক লাইব্রেরী তৈরী হয়-কারন নিজের জীবন দিয়ে উনি বুঝেছিলেন জ্ঞান এবং বই ই সভ্যতাকে একমাত্র এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
এই বিগ ফ্যাট ওয়েডিং মোটেই ভারতীয় দর্শনের সাথে সামঞ্জস্য না। ধনের অহংকার কত অসার তা বোঝাতে উপনিষদে আমরা দেখি শ্রেষ্ঠী কোটি কর্ণের গল্প। শ্রেষ্ঠীর কানের দুলের হিরের দামই ছিল কোটি টাকার ওপরে। তার থেকে নাম কোটি কর্ন। তিনি অর্থের জোরে সব কিছুই কিনে নিতেন-ফলে অহঙ্কার ছিল প্রচুর। এহেন কোটিকর্ন একদিন বারনাসীর ঘাট ও কিনে নিতে চাইলেন। অভিলাষ ঘাটের প্রতিটা ইঁটে তার নাম লেখা থাকবে। এখানেই তার পরিচয় হয় এক সন্ন্যাসীর সাথে-যিনি বোঝান মৃত্যুকে যদি কোটি কর্ন কিনতে না পারেন, বাকী কোন কিছু কিনেই কোন লাভ নেই। তবে যা দিনকাল, ধনী লোকেরা বিজ্ঞানের সাহায্য অমরত্বও কিনতে পারবে বলেই মনে হয়-কিন্ত ভারতীয় দর্শনের নির্দেশ খুব পরিস্কার-অর্থের প্রয়োজন আছে বটে। কিন্ত অতিরিক্ত চাহিদা ব্যক্তি এবং সামাজ, উভয়ের পতনের কারন হতে পারে। আজকে অতিরিক্ত লোভ এবং ভোগের ফলে পৃথিবীটাকেই উচ্ছন্নে পাঠাচ্ছে জনগন।
আজকে ভারতে আপনি কি খাচ্ছেন, আপনার সন্তান কি শিক্ষা পাচ্ছে, আপনি কি ধরনের চিকিৎসা পরিশেবা পাচ্ছে, আপনি কি ধরনের বালি ইঁট কিনছেন-তার কোন কিছুর কি কোন গ্যারান্টি আছে? মানুষের সীমাহীন লোভ, যার মূল কারন ভোগবাদি চিন্তাধারা তা প্রায় সব কিছুই ধ্বংস করে দিয়েছে।
সুতরাং ভোগবাদকে কোন মতেই প্রশয় দেওয়া উচিত না। প্রাচীন ভারতীয় সমাজের নৈতিকতা উঁচু হওয়ার একমাত্র কারন- সেখানে ভোগবাদকে ঘৃণা করা হত।

শেখ হাসিনার জয়ে বাঙালী বুদ্ধিজীবিদের সমস্যা

শেখ হাসিনা জিতেছেন। কিন্ত বাঙালী বুদ্ধিজীবিদের তা নাপসন্দ। অভিযোগ রিগিং, বুথ ক্যাপচার। পশ্চিম বঙ্গবাসীরা এর থেকে দশগুন বৈজ্ঞানিক রিগিং দেখতে অভ্যস্ত।
সিপিএমের বৈজ্ঞানিক রিগিং এর তুলনায় আওয়ামী লীগ এখনো শিশু। কিন্ত তা সত্ত্বেও সিপিএম জমানা ৩৪ বছর টেকার মূল কারন গ্রহনযোগ্য বিরোধি পার্টির অভাব। হাসিনার জন্যও একই কথা সত্য। বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য বিরোধি পার্টি নেই। ভাল বিরোধি পার্টি থাকলে, সায়েন্টিফিক রিগিং জনগনই আটকে দেবে। যেমন পশ্চিম বঙ্গে লোকে দেখেছে পরিবর্তনের দিনগুলিতে।
ভারত, পশ্চিম বঙ্গ , বাংলাদেশ সর্বত্রই গণতান্ত্রিক স্বৈরাচারীতা বা একনায়কতন্ত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি। এর মূল কারন ভারত এবং বাংলাদেশের দুর্বল সংবিধান। যেখানে প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর হাতে প্রচুর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বিচার বিভাগের হাতে ক্ষমতা কম। বাংলাদেশে আবার শুধু লোয়ার হাউস আছে, আপার হাউস নেই। ফলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা একছত্র।
সুতরাং হাসিনা, মমতা, মোদি - একনায়কতন্ত্রের জন্য এদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। সংবিধানই এদের একনায়ক বানিয়েছে। সংবিধান বদলের প্রযোজন। বরং ইনারা দেশ এবং জাতির প্রতি যথেষ্টই দ্বায়বদ্ধ।
হাসিনা এবং মমতার এডমিনিস্ট্রেটিভ পারফর্মেন্স মোদির থেকে ভাল। মোদি পলিটিক্যালি রোম্যান্টিক লোক, অনেক কিছু উচ্চ চিন্তা ভাবনা করেন। কিন্ত এক্সিকিউশনে এসে লেজে গোবরে হৌন। সেই তুলনায় মমতা ব্যানার্জি এবং শেখ হাসিনা অনেক বেশী বাস্তববাদি ( সম্ভবত নারী বলেই ) এবং সংসার চালানোর ব্যপারটা ভাল বোঝেন। সুতরাং এদের বিকল্প এখনো দেখা যাচ্ছে না। যদ্দিন না হয়, এরা বিপুল ভোটে জিততেই থাকবেন। মোদির জন্যও তা সত্য। রাহুল গান্ধীকে বিকল্প হিসাবে বিরোধিরা স্বীকার না করলে, মোদি আবার জিতবেন। কিন্ত রাহুলকে বিকল্প হিসাবে স্বীকার করলে, এযাত্রায় মোদির আর চান্স নেই।
শেখ হাসিনা এবং মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে বাঙালী আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ৩৪ বছরের স্যোশালিস্ট শাসনে পশ্চিম বঙ্গে প্রায় সব কিছু ধ্বংস হয়েছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষতি আগে হয়েছে।শেখ হাসিনা পলিটিক্যাল স্টেবিলিটি দেওয়ার পরে, বাংলাদেশে এখন টাইগার ইকনমি। পশ্চিম বঙ্গের অর্থনীতিও দ্রুত গতিতে হালে ফিরছে। কারন সিম্পল-মমতা ব্যানার্জির স্ট্রাইক বন্ধ করতে পেরেছেন। ওইযে বল্লাম, রাজনৈতিক ট্রাবল সরিয়ে নাও, ইনফ্রাস্ট্রাচার দাও- বাকীটা বাঙালীরা বুঝে নিতে জানে।
বাংলাদেশের লোক বুদ্ধিমান এবং পরিশ্রমী। এমন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ঠেকে ছিল শুধু রাজনৈতিক স্থিরতার অভাবে। শেখ হাসিনা শুধু সেই টুকুই করেছেন। বাকীটা করেছে বাংলাদেশের বুদ্ধিমান পরিশ্রমী জনগণ। এবং এই ভোটে জনগণ শুধু সেটাই চেয়েছে। রাজনৈতিক স্থিরতা-বাকীটা তারা বুঝে নেবে।
পশ্চিম বঙ্গ এবং বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণের কাছে, একনায়কতন্ত্রের অভিযোগ বাতুলতা-কারন তারা চাইছে শুধু একটু রাজনৈতিক স্থিরতা। ভোটের প্যাটার্ন ও সেই অভিমুখেই।

বামপন্থী বন্ধ

এই দুদিনের বন্ধ সিপিএমের ডুবে যাওয়া জাহাজের আর্তনাদ ছাড়া কিছুই না। বাঙালীর পাওয়না উদবৃত্ত হয়রানি।
এই বন্ধের একটি দাবী নুন্যতম বেতন ১৮ হাজার টাকা করা। এটি ভাল দাবী। কারন শ্রমিকের নুন্যতম বেতন ক্রম থাকলে সেখানে কোয়ালিটি ভাল কাজ হয়। এটি সারা বিশ্বে প্রমানিত। কিন্ত ভারত সহ পশ্চিম বঙ্গের স্কুল কলেজ গুলিতে সরকারি সার্কুলারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রাইভেট চিচারদের মোটে ৫-১০ হাজার টাকা মাইনে দেওয়া হয়। এবং তা সিপিএম জমানা থেকেই চলছে। যার ফলে পশ্চিম বঙ্গ সহ গোটা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ন ধ্বংসের মুখে। ১০হাজার টাকার শিক্ষক কারা হয় সবাই জানে। তাদের কাছে ছাত্রছাত্রীরা কি শিখছে সেটাও অভিভাবকরা জানে।
সিপিএম তথা বামফ্রন্টের নেতাদের কাছে প্রশ্ন
(১) যদি নুন্যতম বেতন নিয়ে তারা সত্যিই চিন্তিত, তাহলে যেখানে অন্তত সরকারি নিয়ম আছে যেমন প্রাইভেট স্কুল কলেজে, সেখানে শিক্ষিক শিক্ষিকাদের নুন্যতম বেতন গ্যারান্টি দেওয়ার কাজে তাদের আগ্রহ কোনদিন দেখা যায় নি কেন ? অন্তত এমন একটা কাজ যেখানে তারা জনগণকে সাথে পেতেন!
সব থেকে বড় সত্য, এই সব প্রাইভেট স্কুল কলেজের মালিক পক্ষের অনেকেই সিপিএমের নেতাদের নিকট আত্মীয়। এখন রাজনীতি বদলেছে। তারাও রঙ বদলেছেন।
(২) যেখানে সরকারি আইন থাকা সত্ত্বেও নুন্যতম বেতন গ্যারান্টি নেই ( যা স্কুল কলেজের ক্ষেত্রে প্রমানিত), সেখানে ১৮,০০০ টাকা নুন্যতম বেতন আইন করে কি লাভ হবে?
চটকলে ধর্মঘট করে কি হবে? আরো দুটো চটকল বন্ধ হবে। যেখানে দরকার পাটের তন্তুর নতুন ব্যবহার, আরো নতুন ধরনের প্রোডাক্ট, সেখানে স্ট্রাইক সুইসাইড ছাড়া কিছুই না।
অর্থাৎ ব্যপারটা কি দাঁড়াল। বামপন্থীরা নতুন ভাবে কিছুই ভাবছেন না। পৃথিবী বদলাচ্ছে , তারা বদলাচ্ছেন না। তারা জাদুঘরে ডাইনোসর হতে চান।
মানুষ এবং শ্রমিকের বঞ্চনা চলছে। কিন্ত সেদিকে তাদের নজর কই। সেটা থাকলে প্রাইভেট স্কুল কলেজগুলিতে শিক্ষকদের যে শোষন করা হয়, সেটা নিয়ে আন্দোলন চোখে আসত। সেসব কিছুতে তাদের মন নেই। বরং যেটুকু পেশীবল বেঁচে আছে সেটা দেখিয়ে স্কুল বাস ভাঙচুর করছেন বাচ্চাদের ভয় দেখাতে।
বাঙালী বামেদের শিশুতুল্য ব্রেইন বলতাম আগে। এখন দেখছি, তারা বাচ্চা বুদ্ধির ও অধম।

আমেরিকান শাট ডাউন

আমেরিকাতে এখন গর্ভনমেন্ট শাটডাউন। সরকার চালানোর জন্য বরাদ্দ টাকা পাশ না হওয়ার জন্য, সরকারই বন্ধ! সরকারি কর্মচারীদের ও কাজ মাইনা বন্ধ। তবে সরকার খুললে তারা বকেয়া মাইনা পাবেন। কিন্ত গর্ভমেন্ট কনট্রাক্টররা টাকা পাবেন না। তারাই আবার এদেশে সংখ্যাধিক। আর আমাদের এই ওয়াশিংটন ডিসি এরিয়াতে ৯০% চাকরি সরকারি নইলে সরকারি কনট্রাক্টর। বলাই বাহুল্য এই গর্ভমেন্ট শাটডাউন হলে, এখানে রাস্তা ঘাট রেস্টুরেন্ট সব ফাঁকা থাকে।

আমেরিকাতে আসার পরে এটা চতুর্থ শাটডাউন। এর আগে একটা তিনমাসের শাট ডাউন দেখেছি ২০১১ সালে।

এবার শাট ডাউনের হেতু ট্রাম্প ওয়াল। ট্রাম্প বলছেন মেক্সিকান বর্ডারে প্রাচীর তোলার জন্য ৬ বিলিয়ান ডলারের বাজেট কংগ্রেসকে দিতে হবে। নইলে তিনি নতুন বাজেট পাশ করবেন না। ডেমোক্রাটরা তাকে মেক্সিকান ওয়াল বানানোর পয়সা দেবে না। এই নিত্য ন্যাস্টি ঝগড়া চলছে।

স্বৈরাচার ঠেকাতে আমেরিকাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা তিনটি বিভাগে বিভক্ত- প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস এবং সেনেট। যদ্দিন এই তিনটি একই পার্টির হাতে থাকে, শাট ডাউন হওয়ার সম্ভাবনা কম ( ট্রাম্পের জমানায় তাও হয়েছে একদিনের জন্য)। কিন্ত এর একটি, বিশেষত কংগ্রেস এবং প্রেসিডেন্ট দুই হাতে গেলে, শাট ডাউন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হতে পারে।

শাটডাউন মানে কিন্ত এই না, যে সরকারি কর্মচারীদের ছুটি। তাদের কাজে আসতে হবে, কিন্ত বেতন পাবেন সরকার খুললে। কিন্ত কিছু কিছু কর্মচারি যাদের বেতন খুব কম ( আমেরিকান সরকারি চাকরি, ভারতের মতন জামাই আদরের না ) , তাদের দিন আনি দিন খাই অবস্থা। তারা ছুটি নিয়ে অন্য কাজে ইনকাম করছেন। এর মধ্যে আছে এয়ারপোর্ট সিকিউরিটির লোকজন। ফলে সিকিউরিটি চেকিং এ এখন লম্বা লাইন।

আমাদের রাজধানী এরিয়াতে অর্থনীতি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। রেস্টুরেন্ট গুলো মাছি তাড়াচ্ছে। মলে, দোকানে লোক নেই। রাজধানী এরিয়াতে অধিকাংশ লোকই সরকারি চাকরি নির্ভরশীল।

ট্রাম্প বিজনেসম্যান হওয়ার জন্য আর্ট অব নেজোশিয়েন ভাল করেই জানেন। ট্রাম্প সাপোর্টারদের একটা বড় অংশ সরকার সর্বদা বন্ধ রাখতে পারলেই খুশি। ফলে এই বন্ধে ট্রাম্পের পোয়াবারো। চাপ ডেমোক্রাটদের ওপর। তারা ট্রাম্পের দাবি না মেনে বেশী দিন টিকবে না-কারন ডেমোক্রাটদের বেস গরীবরা। যাদের অনেকেই সরকারি সাহায্যে খাবার পায়। সরকারন বন্ধে সেসব এখন বন্ধ। সরকারি চিকিৎসা সাহায্য ও বন্ধ। বয়স্ক লোকেদের যা অপরিহার্য্য।

আমেরিকার জন্মই হয়েছিল বৃটিশ ট্যাক্সের বিরোধিতা করে। এই জন্যে এই দেশটা বড় গর্ভমেন্ট, ট্যাক্স এসব পছন্দ করে না। গর্ভমেন্ট শাটডাউন হলে খুশি হওয়ার লোক এদেশে অনেক।

আমেরিকান রাজনীতি পুরো ডামাডোলে। এর মূল কারন, গত দশ বছরে ডেমোক্রাট পার্টি চলে গেছে উগ্র বামেদের দখলে, আর রিপাবলিকান পার্টি গেছে উগ্র দক্ষিনপ ন্থীদের হাতে। এরা সবাই মাই ওয়ে অর হাইওয়ে, নীতিতে বিশ্বাসী। কোন আপসে এরা রাজী না।
আগে বাইপার্টিসান এগ্রিমেন্ট অর্থাৎ দুই দলই অধিকাংশ নীতির ক্ষেত্রে এক হত। এখন নতুনরা সংঘর্ষে বিশ্বাসী বেশী। সেটাই নাকি পলিটিক্যাল রাডিক্যালিজম।

আমেরিকাতে মধ্যপন্থী কোন নতুন দলের উত্থান না হলে , আর দুদিন বাদে এদেশে বছরের অধিকাংশ সময় সরকার বন্ধ থাকবে।