Saturday, June 4, 2016

জীবনের উদ্দেশ্য-এবং বিধেয়---

জীবনের সবথেকে বড় রহস্য-জীবনের উদ্দেশ্য নেই-কিন্ত আবার উদ্দেশ্য বা গোল না থাকলে একটা দিন ও বাঁচা সম্ভব না। কারন আমাদের প্রতিটা একশনের পেছনেই ইঞ্জিন হচ্ছে জীবনের উদ্দেশ্য। এটা খুব গভীরভাবে না ভাবলে লোকে বোঝে না।

জীবনের একটা গোল, এবং তারজন্য কম্পিটীশন থাকবেই। না হলে আবার জীবনটা একটা উদ্দেশ্যহীন ভবঘুরে হবে। সেটা খুব বাজে কিছু না-যদি তার থেকে কবি সাহিত্যিকের জন্ম হয়। কিন্ত বাস্তব হচ্ছে, এদের অধিকাংশরই জীবন শেষ হয় ড্রাগে এবং আত্মহত্যায়। সেটাও কাম্য না।

এই জন্য সুস্থজীবনের জন্য সব থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ন-সামনে একটা গোল ঠিক করা। মুশকিল হচ্ছে অধিকাংশের সামনেই সেটা নেই। সবাই জানে প্রোগ্রামার থেকে সিনিয়ার প্রোগ্রামার, সেখান থেকে ডিরেক্টর, ভিপি-চাকরিতে প্রমোশন। গাড়ীর মডেল আপগ্রেড, বাড়ির সাইজ। এসব বস্তুবাদি লক্ষ্যেই ছুটে চলেছে সবাই।

বস্তুবাদি সাফল্যকে জীবনে উদ্দেশ্য করার কারন নিরাপত্তা। সবাই চাইছে খাদ্য,সেক্স, মেডিক্যাল, বাসস্থানের নিরাপত্তা। এই ক্যাপিটালিস্ট সমাজে টাকা ছাড়া কিছুইত মেলে না!!

একটা লেভেলে এই নিরাপত্তার দরকারকে অস্বীকার করি না-কিন্ত এগুলোকে জীবনের উদ্দেশ্য করলে মুশকিল। সুস্থ খাদ্যের দরকার সবারই-কিন্ত খাবার নামে দামী রেস্টুরেন্টের পেছনে টাকা ওড়ানো মানে আস্তে আস্তে জীবনের উদ্দেশ্যটাকে সেই বস্তুবাদি বস্তার বান্ডিলে ঠেলা।
যা মৃত্যুতেই শেষ। অনেক ডাক্তারই এটা জানেন। একজন লোক মরার আগে, প্রথমে সেই একটা অবিশ্বাসের মধ্যে দিয়ে যায়-যে সত্যিই মরতে চলেছে? একটা প্যানিকিং লেগে থাকে মৃত্যপথযাত্রীর চোখে মুখে। আস্তে আস্তে যখন আর মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে পারে না-তখন ছেড়ে দেয়। মৃত্যুর কয়েক মিনিট আগে বোঝে ওটাই আসল নিয়তি! সবাইত আর রবীন্দ্রনাথ হয় না-যে গীতাঞ্জলী লিখে অপেক্ষা করে সেই নিশ্চিত নিয়তির দিকে।

বরং জীবনের উদ্দেশ্য বা গোল হোক-কে কত সমাজকে ফিরিয়ে দিতে পারে-তার প্রতিযোগিতায়। কে কজন গরীব ছাত্রকে স্পনসর করতে পারল। কে কজন বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের দেখাশোনা করতে পারল। এনজিও খুলে রাস্তা পরিস্কার করার প্রতিযোগিতা হৌক পাড়ায় পাড়ায়। কে কটা মিস্টি প্রেম করতে পারল, তার প্রতিযোগিতা হৌক।

বলবেন চ্যারিটিতেও প্রতিযোগিতা? নিশ্চয় দরকার। এই একটা প্রতিযোগিতায় যদি বন্ধু বা অন্যের কাছে হেরেও যাই-কি ভীষন ভাল লাগে বোঝাতে পারব না। এই একটাই প্রতিযোগিতা আছে-ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতা-যেখানে হেরেও আনন্দ।

সৌদিতে তখন তেল পাওয়া যায়, ওটা তখনও একটা রাষ্ট্র হয় নি-নানান ট্রাইবাল গোষ্টি-নানান রাজ্যে রাজত্ব করত। এমন এক গোষ্টিসর্দারের আধুনিক ছেলে, তার সেকেলে বাবাকে বোঝাচ্ছে-কেন তেলের লিজ আমেরিকান কোম্পানীদের দেওয়া উচিত।

সর্দারপুত্র শুরু করছে এই ভাবে- এই " অমূল্য" তেল...।

ছেলে আর কিছু বলার আগেই, সর্দার তাকে কেটে দিয়ে বললো-হে পুত্র, তুমি তেলকে অমূল্য বলছ কেন? তেল ত কেনা যায়। যা কিছু কেনা যায়-তা কি করে অমূল্য হয়? ভালোবাসা, স্নেহ অমূল্য -কারন তা কেনা যায় না।

গাড়ী কেনা যায়। বাড়ী কেনা যায়। ব্যাঙ্ক ব্যালান্স কেনা যায়।

কিন্ত মানুষের স্নেহ আশীর্বাদ কেনা যায় না। মানুষের ভালবাসা কেনা যায় না। মানুষ অমৃতের সন্তান-তাই আমাদের লক্ষ্য বলে যদি কিছু থাকে- তা হৌক সেই অমূল্য রতনের সন্ধান। সাধারন মানুষের ভালোবাসা। যা কেনা যায় না-তাই অমূল্য ।

আমি প্রায় সাড়ে চার বছর আগে চাকরি ছেড়েছিলাম। জীবনের গোলটা বদলানোর দরকার ছিল। কর্পরেট লাইফের উদ্দেশ্যহীন অর্থহীন চাকরি করাটা মানসিক অত্যাচারেরর পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল। তখন একটা গোল ঠিক করেছিলাম- ভারতে ১০০ জনের জন্য চাকরি তৈরী করব। ব্যাবসা করার থেকেও সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এগিয়েছি বেশী। আমি এখন অনেক বেশী চাপে থাকি-অনেক বেশী কাজ-কিন্ত মানসিক দিয়ে অনেক বেশী সুখী।

জীবনকে উপভোগ করতে গেলে, বস্তুবাদি গোল থেকে দূরে থাকতেই হবে।













No comments: