বিশ্বজুরে গ্লোবালাইজেশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ অব্যাহত। আজ বৃটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ান থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার নির্বাচনে এবার সেন্টার থিম - প্রোটেকশনিজম। অদ্ভুত ভাবে হিলারী এবং ট্রাম্প -দুজনেই গ্লোবালাইজেশনের বিরুদ্ধে অনেক কিছু বলছেন। যদিও এই এইচ ওয়ান বি ভিসা বিল ক্লিনটনের অবদান। অথচ এখন আমেরিকাতে প্রবল ভাবেই চীন এবং ভারত বিরোধি হাওয়া। ট্রাম্পত সরাসরি বলছে ভারতীয়রা আমেরিকার চাকরি খাচ্ছে। আগে যা ছিল বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদ-এবার প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে-সেটাই মুখ্য ইস্যু। ট্রাম্প জিতবে না-কিন্ত জিতলে ভারতের আই টিতে যারা চাকরি করে-তাদের কপালে দুঃখ আছে।
গ্লোবালাইজেশনের ফলে ভারত এবং চীন লাভবান হয়েছে এই নিয়ে সন্দেহ থাকা উচিত না। ভারতের হোয়াইট কলার আই টি স্যালারি সম্পূর্ন ভাবেই আমেরিকা এবং ইউরোপের বিজনেস থেকেই আসে। কিন্ত আমেরিকার লোকজন মনে করে -ওই চাকরিগুলো তাদের হতে পারত! কিন্ত বাস্তব যদিও অন্যকিছু! কারন আমেরিকাতে বছরে মোটে ৮০,০০০ ইঞ্জিনিয়ার বের হয়। তাই দিয়ে আমেরিকার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনফ্রাস্টাকচার টেকানো মুশকিল। আর আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ারদের অধিকাংশই মিলিটারি এবং সরকারি চাকরিতে চলে যায় যেহেতু সেখানে সিটিজেন না হলে চলে না। তাহলে বেসরকারি ক্ষেত্রে আমরা আমেরিকাতে ইঞ্জিনিয়ার পাব কোত্থেকে?
প্রোটেকশনিজম বনাম গ্লোবালাইজেশনের যুদ্ধটা নতুন কিছু না। সেই যবে থেকে স্টিম ইঞ্জিন আবিস্কার হয়েছে, তবে থেকেই চলছে। কার্ল মার্ক্স এবং আব্রাহাম লিঙ্কনের লেখাতে প্রচুর রেফারেন্স পাবেন-কিভাবে সেকালও বৃটেন এবং আমেরিকাতে শ্রমিকরা অন্যদেশের লো-কস্ট শ্রম নিয়ে ক্রদ্ধ ছিল। মার্ক্স গ্লোবালাইজেশনের পক্ষে ছিলেন। কারন তার বক্তব্য ছিল- গ্লোবালাইজেশন না হলে ইন্টারন্যাশানালিজম এবং ক্যাপিটালিজমের পূর্ন বিকাশ হবে না। আর সেটা না হলে সমাজতন্ত্র আসা অসম্ভব। অন্যদিকে আব্রাহাম লিঙ্কন, প্রোটেকশনিজমের পক্ষে ছিলেন। উনার আমলে ইউরোপ থেকে আসা অনেক দ্রব্যেই প্রচুর ট্যারিফ বসানো হয়। আমি অবাক হলাম, কালকে নিউ ইয়ার্কে ট্রাম্প আব্রাহাম লিঙ্কনের কোট তুলে দিলেন প্রোটেকশনিজমের পক্ষে।
মুশকিলটা অন্য জায়গায়। এই গ্লোবালাইজেশনের ফলে আমেরিকার ধনী শ্রেনী আরো ধনী হয়েছে। মধ্যবিত্ত শ্রেনী সম্পূর্ন ধ্বংসের মুখে।
অন্যদিক ও আছে। অটোমেশন এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দৌলতে সস্তার লেবার এখন অটোমেটশনের আওতাই। খুব অবাক শোনালেও-আমেরিকার অনেক কোম্পানী, আর এন্ডি ভারত থেকে করালেও, ম্যানুফ্যাকচারিং আমেরিকা থেকেই করাচ্ছে । কারন আর এন্ডি ম্যানপাওয়ার ইন্টেনিসভ কিন্ত ম্যানুফ্যাকচারিং এখন অটোমেটেড। চিনেও ম্যানুফাকচারিং এর ব্যপক অটোমেশন চলছে। ভারত অনেক পিছিয়ে-কিন্ত ভারতেও শ্রমিক শ্রেনী সংকুচিত হবে ক্রমশ আধুনিক যন্ত্রের কাছে।
সস্তার লেবারের জন্য যে গ্লোবালাইজেশন আমরা দেখেছি - তার গঙ্গাপ্রাপ্তি এখন নিশ্চিত । এই যে এত কল সেন্টার-এগুলো আগামী বিশ বছরে সব বন্ধ হবে-কারন উন্নত এ আই, কাস্টমার সার্ভিসের প্রশ্নের উত্তর দেবে। কিন্ত হাইস্কিল লেবারের গ্লোবালাইজেশন অব্যাহত থাকবে। সেটা আটকানো যাবে না।
No comments:
Post a Comment