Saturday, June 4, 2016

মৈনাককে কি আমরা চিনতাম ?

মৈনাককে কি আমরা  চিনতাম ?
******************

মৈনাক সরকার নামটি এখন সব আমেরিকান চেনে। খারাপ লাগলেও এটাই সত্য, যে বাঙালীকে  আমেরিকানরা চিনে গেল আধুনিক মিডিয়ার দৌলতে তিনি বিবেকানন্দও নন,  রবীন্দ্রনাথ ও নন। মৈনাক সরকার নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন প্রতিভাবান ছাত্র।

 কিন্ত মৈনাককে কি আমরা চিনি ? আলবৎ ।

  ভেবে দেখুন কি ধরনের "প্রতিভাবান" কেরিয়ারিস্টদের আমরা তৈরী করি সমাজে।  ছোটবেলা থেকে তারা বাবা মা নিকট "বন্ধুরা" শেখাচ্ছে-স্বার্থপর হতে। শেয়ারিং এর কনসেপ্ট নেই। আমি যা জানি, যা শিখছি-সব আমার! কেউ যেন কেড়ে নিয়ে যেতে না পারে!!  সেখানে জ্ঞানের প্রতি প্যাশন, সৃষ্টির আনন্দের স্থান নেই।  শুধুই হিসাব, আমি এগোলাম না পেছোলাম। আর এমন বিচ্ছিরি জাঁতাকল, ষাট বছরেও শেষ হয় না। আচ্ছা রিয়াটারত করলে? কতটাকা জমাতে পারলে? কোন পজিশনে রিটায়ার করলে? কেউ বলবে ন-আর কদিনই ত আছে। খাতায় নাম উঠে গেছে-এবার নতুন কি ভাবছ?

 ইনফ্যক্ট আই আই টি খরগপুরের দীর্ঘ একদশক জীবনে এত মৈনাক দেখেছি-হলফ করে বলতে পারি ক্যাম্পাসে বন্দুক সহজলভ্য বলে, এমন ঘটনা অনেক ঘটত। হবেই না বা কেন? গান, কবিতা, চিত্রকলা-জীবনের যার কিছু সুন্দর-কিছুইত এরা শেখে না। জীবন মানে এদের কাছে ম্যারাথন-আর সার্থকতা হচ্ছে সাইডলাইনে দাঁড়ানো পরিবারের লোকেদের হাততালি-যা তুই ওর ছেলেটাকে বিট করে দিয়েছিস ম্যারাথনে!! টোট্যালি একটা সিক সমাজ এবং পারিবারিক কালচারের মধ্যে দিয়ে আসে অধিকাংশ ছাত্ররা- যেখানে জ্ঞানের পিপাসা আর সৃষ্টির আনন্দের কোন স্থান নেই।

 অনেকে বলছেন গাইড-পিএইচডি ছাত্র সমস্যা। হতে পারে। পিএইচডি গাইড ছাত্র সব থেকে কঠিন সম্পর্কের একটি। কারন এখানে ছাত্রটি সম্পূর্ন ভাবে তার শিক্ষকের ওপর নির্ভরশীল।  প্রচুর ছাত্র মানসিক ভারসাম্য হারায় পি এইচ ডি করতে গিয়ে। একসময় আই আই টি সেনেটে পি এই চ ডি প্রতিনিধি ছিলাম। প্রায় ৩০% ছাত্রই মানসিক সমস্যায় ভুগত গাইডের জ্বালায়। উলটো দিকে ভাল গাইড ও প্রচুর আছে।

 কিন্ত এখানেই সেই লাইভ বম্ব। পি এই চ ডিই হৌক বা চাকরি-সবর্ত্রই লোকে পেছনে লাগবে। কেউ তোমার জন্য গোলাপ নিয়ে বসে নেই।  তার মানে কি এই প্রত্যেকের পেছনে বন্দুক নিয়ে লাগতে হবে? কোন লাভ নেই।  যারা আপনার জীবনে কাঠি করছে- আপনি রেগে আছেন?  জ্বলন্ত কাঠকয়লা ধরে বসে থাকলে তাতে হাতই পোড়ে।


 গোটা জীবনটাই কুরুক্ষেত্র।  অথবা ফুটবল মাঠ। পাস দিচ্ছেন, গোল খাচ্ছেন, গোল দিচ্ছেন-লোকে ল্যাং মারছে। পাস ধরছেন, ডজ করেছেন-সব কিছু মিলিয়েই ফুটবল!  কিন্ত কোন স্কুল, কোন ফ্যামিলি শেখায় সেটা? সবাই ভাবে হেঁটে হেঁটে গোল দেবে! মাঠে নেমেছ, অথচ ল্যাং খাবে না, হয় না কি!

কিন্ত জীবনে মারাদোনা সেই হতে পারে-যে হাজার ল্যাং খেয়েও, মারমারি পালটা মার না দিয়েই ডজ করে গোলটা দিয়ে আসতে পারে!  সেই আসল প্রতিভাবান!! সেই শিক্ষাটার অভাব চারিদিকে। আর হ্যাঁ সেই মারাদোনা হতে পারে, যে সৃষ্টির আনন্দে ভেসে যেতে পেরেছে।




No comments: