Monday, April 25, 2016

আজকের বাংলাদেশ, কালকের পশ্চিম বঙ্গ

(১)
জুলহজ মান্নানের রুপবান ম্যাগাজিনের কথা প্রথম দেখেছিলাম মুক্তমনার পাতায়। অভিজিত বাংলাদেশে প্রথম সমকামিতা বিষয়ে লেখালেখি শুরু করে ২০০৫-৭ সাল নাগাদ। সমকামিতা নিয়ে বাংলায় প্রথম কোন মননশীল বইটাও ওর লেখা। রুপবান ম্যাগাজিন যখন প্রকাশিত হয়-ও খুব খুশী ছিল। বাংলাদেশে আস্তে আস্তে অন্ধকার কেটে আলো আসছে-অনেক নতুন ছেলেমেয়েরা রক্ষণশীলতার খোলশ ছেড়ে নতুন বিশ্বের দিকে এগোচ্ছে-রূপবান ম্যাগাজিন প্রকাশের সময় অভিজিত এমনই ভেবেছিল।

কিন্ত সেই ২০১৪ থেকে আজ ২০১৬। মাত্র চোদ্দমাসে ধর্মান্ধ মুসলিমদের চাপাতির কোপে বাংলাদেশ এখন উটের পেছনে চেপে সপ্তম শতকের আরবের পাসপোর্টের জন্য বেহস্তের দরজায় দাঁড়িয়ে।

ইসলাম আর তার প্রফেটকে গালাগাল দিয়ে কিস্যু হবে না। কারন ধর্ম একটা উইক টেক্সট। যে যেমন ভাবে পারবে ব্যখ্যা করবে। প্রফেট একজন কাল্পনিক চরিত্র-১% ও ঐতিহাসিক প্রমান নেই তার অত্বিত্বের। এমন ধর্মের রূপকথার জগতে যে যেমন পারবে-সে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য ইসলামকে কাজে লাগাবে। উইক টেক্সট এবং কাল্পনিক প্রফেটদের নিয়ে এটাই সমস্যা যে তাহা রাজনীতির কাজে প্রচুর লাগে।

শেখ হাসিনা বলেই দিয়েছেন নাস্তিকদের দ্বায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে না। মানে নাস্তিকদের হত্যা করার সীলমোহরে ছাপ দিয়ে যদ্দিন স্বৈরতন্ত্র কায়েম রাখা যায় আর কি। নাস্তিকদের হত্যা যাক- বাংলাদেশে প্রতি সপ্তাহেই হিন্দুদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মারধোর আছেই। এবং সেগুলো করছে শেখ হাসিনার আওয়ামি লীগের লোকজনই-যারা আবার সেকুলার পার্টি নাকি। এর থেকেত ভারতের সাম্প্রদায়িক বিজেপির ট্রাক রেকর্ড অনেক ভাল।

প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের ঘটনা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় পশ্চিম বঙ্গ যেদিন মুসলিম প্রধান হবে সেদিন এই রাজ্যের হিন্দু, নাস্তিক এবং উদারমনা মুসলিমদের কি হবে? পশ্চিম বঙ্গের দুজন মুসলিম নেতার নাম ভাবুন-এই মুহুর্তে সবার প্রথমে মনে আসবে রেজ্জাক মোল্লা আর মহম্মদ সেলিমের নাম। এরা মুখ্যমন্ত্রী হলে আপনার বাকস্বাধীনতা, বা ধর্মীয় স্বাধীনতা অক্ষুন্ন থাকবে বলে মনে হয়? তসলিমা বিতাড়নের ক্ষেত্রে সেলিমের ভূমিকা কি ছিল? সেলিম রাজাবাজারে প্রকাশ্য জনসভায় তসলিমাকে শিয়ার চর-ইসলামের শত্রু বলে মুসলমানদের নাকি শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। আজকে শেখ হাসিনা "নাস্তিকদের জান মালের দ্বায়িত্ব নিতে পারবেন না" বলে বাংলাদেশের মুসলমানদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন। প্যাটার্ন ত এক। রেজ্জাক মোল্লাকে ছেড়ে দিলাম। উনি স্বগোষিত ইসলামের সেবক।

এর মানে এই অবশ্যই না মুসলমানদের মধ্যে প্রগতিশীলরা নেই। কিন্ত তাদের কে সবাই পেছনে ঠেলছে। পশ্চিম বঙ্গেই নজরুল ইসলামের মতন দক্ষ মুসলমান নেতা আছেন-কিন্ত তৃনমূল থেকে সিপিএম সবাই তাকে পানিশমেন্ট দিতেই ব্যস্ত ছিল। প্রগতিশীল মুসলমানদের না ঠাঁই দেয় সিপিএম, না তৃনমূল। তারা তুলে আনে চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক রক্ষণশীল রেজ্জাক মোল্লা বা মহম্মদ সেলিমের মতন লোকেদের। অথচ সইফুদ্দিন চৌধুরীর মতন আসল প্রগতিশীল মুসলিমরা কোনদিন নেতা হতে পারেন না। তাদের বহিস্কার, তিরস্কার করা হয়।

এর কারন এই যে মুসলমানদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ট লোক এত সাম্প্রদায়িক ( হিন্দুদের সংখ্যাগরিষ্ট লোকেরাও সাম্প্রদায়িক-কিন্ত তুলনায় কম), রক্ষণশীল সাম্প্রদায়িক নেতা ছাড়া ওই ভোট ব্লক কেউ টানতে পারে না। ফলে যেদিন পশ্চিম বঙ্গ মুসলমান প্রধান হবে-ধ্রুন এই ২০৩০-৪০ সালের মধ্যে-তখন একজন বিশিষ্ট সাম্প্রদায়িক মুসলিম নেতাই পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হবেন। যিনি শেখ হাসিনার মতন প্রকাশ্যেই বলার সাহস রাখবেন ইসলামের বিরোধিতা মানে খুন হলে সরকার দ্বায়িত্ব নেবেনা। পরোক্ষ ভাবে বুদ্ধিজীবি খুন উস্কে দেওয়া হবে। হিন্দুদের ঘরবাড়ি লুটতরাজ উস্কে দেওয়া হবে ভোটিং ব্লক খুশী রাখতে। যা বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে ধারাবাহিক ভাবে হচ্ছে। আজকে যারা বামেরা এইসব শুনে নাক শিঁটকাচ্ছেন-তারা ইসলামের হাতে সবার আগে বিলুপ্ত হবেন। যেমন হয়েছেন পাকিস্থান এবং বাংলাদেশে। দেশভাগের আগে এই দুই দেশেই কমিনিউস্ট আন্দোলন ছিল বেশ শক্তিশালী। বিশেষত চাষীদের মধ্যে। কিন্ত ইসলাম ধর্মের চাপে দুই দেশেই কমিনিউস্টরা এখন প্রান্তিক শ্রেনী। পাঁচ বার নামাজ পড়ে কমিনিউজম করার পারমিশন মেলে। এই ত অবস্থা মুসলমানদেশের লুপ্তপ্রায় কমিনিউস্টদের।

দুর্ভাগ্যজনক শোনালেও এটাই পশ্চিম বঙ্গের ভবিষ্যত।

(২)
কোন সমাধান আছে কি? ইনফ্যাক্ট পশ্চিম বঙ্গে যে ভোটিং ভায়োলেন্সে আজ আকন্ঠ ডুবে-তার সমাধান এবং সাম্প্রদায়িকতার সমাধান একসূত্রে বাঁধা। রাজ্যে চাকরি দরকার-শিক্ষার প্রসার দরকার, বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার দরকার। হিন্দুত্ববাদিদের দিয়ে পশ্চিম বঙ্গে ইসলামিস্টদের উত্থান আটকানো যাবে না। বিজ্ঞানমুখী প্রগতিশীল আন্দোলনই একমাত্র এটা রুখতে পারে। কিন্ত এই রাজ্যে বামেরা না প্রগতিশীল, না ধর্মের বিরুদ্ধে যাবে।  পশ্চিম বঙ্গে কোন শক্তিশালী যুক্তিবাদি বিজ্ঞানবাদি ব্লক নেই। যারা রাজ্যের বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত-তারা বেশ্যাজীবিদের অধ্ম। তাদের দিয়ে কিস্যু হবে না।


ফলে পশ্চিম বঙ্গে হিন্দু-মুসলমান গৃহযুদ্ধ সময়ের অপেক্ষা। রাজ্যটা আরেকটা কাশ্মীর হবে।


No comments: