(১)
গণতন্ত্র থেকে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম বা বিবর্তন যে রাজনৈতিক নিয়তি তা রিপাবলিক গ্রন্থে ( অষ্ঠম খন্ড) বহুদিন আগে লিখে গেছেন মহামান্য প্লেটো। গণতন্ত্র কিভাবে গুন্ডারাজ নিয়ন্ত্রিত স্বৈরতন্ত্রের জন্মদাত্রী সেই প্রসঙ্গে প্লেটো লিখছেন -"গণতন্ত্রের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট হবে এই যে মানুষ আরো স্বাধীনতা ভোগ করতে চাইবে-এবং সেই স্বাধীনতার কলা ও মূলো দেখিয়ে জনপ্রিয় বিদ্রোহি নেতা ক্ষমতা দখল করবেন এবং গুন্ডারাজ / খুন জখমের ভয়ার্ত আবহ কায়েম করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরন করবেন। লোকে এই স্বৈরাচারের প্রতি চূড়ান্ত রুষ্ট হবে-কিন্ত অসহায় হয়ে দেখবে, শাসক বদলানোর কোন উপায় নেই।"
ইনফ্যাক্ট ১৯৭২-৭৭ এর কংগ্রেস আমল থেকে সিপিএম, সিপিএম থেকে তৃনমূল, প্রতিটা ক্ষেত্রেই সরকার গুলো তৈরী হয়েছিল, গণতান্ত্রিক অধিকার এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। তাদের ক্ষেত্রে প্লেটোর বাণী খেটেছে কিনা, তার নির্ধারনের দায় আপনাদের। একটা বড় প্রশ্ন, জনগণের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা সত্যিই কতটা এসেছে?
এখানে আনন্দবাজার এবং বাংলার বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায় মানুষকে ভুল পথে চালিয়েছে এবং এখনো চালাচ্ছে। পার্লামেন্টিয় রাজনীতিতে ভোটের মাধ্যমে শাসক বদলিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা দেওয়া যায় না। এটাও আশা করা ভুল যে রাজনীতিবিদরা তাদের জন্য কাজ করবে নিঃস্বার্থ ভাবে। ইনফ্যাক্ট এথেন্সের গণতন্ত্র নিয়ে শুধু প্লেটো না এরিস্টটল, সত্রেটিস সবাই হতাশাই ব্যক্ত করেছেন। সুতরাং শুধু ভোট দেওয়ার ক্ষমতা এলেই জনগনের হাতে আসল ক্ষমতা এল এসব আকাশ কুসুম কল্পনা।
জনগণের হাতে ক্ষমতা গণতন্ত্রও দিতে পারে নি-অতীতের কমিউনিজম ত পারেই নি। আমেরিকাতেও জনগণ বৃহৎ বিজনেসের হাতে জিম্মি। এর কারন মোটেও এই না যে এই বৃহৎ কর্পরেশনগুলো রাজনৈতিক নেতাদের কিনে নেয়। তা হয়ত নেয়- পশ্চিম বঙ্গ সহ যেখানেই যে তন্ত্রই কায়েম হৌক না কেন, যে পার্টি বা নেতা সিংহাসনে বসুন, ক্ষমতার চাবিকাঠি ব্যবসায়ীদের হাতেই থাকবে। এর মূল কারন উৎপাদনের দখল যাদের হাতে ক্ষমতা সব সময় তাদের হাতেই থাকবে। জনগণের হাতে উৎপাদনের চাবিকাঠি না থাকলে কি তন্ত্র, কে শাসক, তাতে কিস্যু যায় আসে না।
এই অবস্থার পরিবর্তন আসতে পারে একমাত্র কমিউনিটি ভিত্তিক উৎপাদনে। যা আস্তে আস্তে চেষ্টা করতেই হবে নইলে শেষের সেদিন আরো ভয়ংকর। প্রথমেই চিকিৎসার কথায় আসি। সরকারি হাসপাতালের বেহাল অবস্থা। বেসরকারি হাসপাতালে ঢোকা মানে জিন্দা জবাই হতে গলা বাড়ানো। ইনফ্যাক্ট শিক্ষার অবস্থাও তাই। সরকারি স্কুলে ক্লাস হয় না-আর বেসরকারি স্কুল মানে পকেট্মার ম্যানেজমেন্ট।
এর উল্টোদিকটাও আমেরিকাতে দেখছি। কিছু সাইনিং রেখা আছে-যা আসলে ভারতও ছিল- সমাধান আমাদের সামনেই ছিল-কেউ সমাধানটা দেখতে চায় নি। এর সমাধান অবশ্যই হাঁসপাতাল এবং স্কুলগুলো সরকারি বা বেসরকারি হাতে না রেখে স্থানীয় কমিউনিটির হাতে থাকুক। অবশ্যই নির্বাচিত কমিটি হতে হবে। স্থানীয় নির্বাচনে-পঞ্চায়েতে, মিউনিসিপালিটিতে বা স্কুল কমিটি ইত্যাদিতে পার্টির ইন্টারভেনশন আইন করে বন্ধ করা উচিত। ভারতে এই মর্মে অনেকেই আবেদন তুলেছেন-কিন্ত যারা জনপ্রতিনিধি তারা সবাই পার্টির লোক। তারা স্থানীয় নির্বাচনে পার্টি বিহীন বোর্ডের ধারনার পক্ষে ভোট দিয়ে নিজের পার্টির ক্ষতি করবেন কেন? ফলে ভারতে জনগণের ভবিষ্যত হয় সরকারি হাসপাতালে কুকুরের সাথে বেড শেয়ার করা নইলে বেসরকারি হাসপাতালে এসি রুমে নিজেকে ডাকাতের হাতে তুলে দেওয়া।
আমি যেখানে থাকি সেখানে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য দুটোই কমিউনিটি ভিত্তিক। যেহেতু দুটো ক্ষেত্রেই খরিদ্দার এবং বিক্রেতা আপনি নিজে-খুব স্বাভাবিক ভাবেই দুটি ক্ষেত্রেই জনগনের কথা ভেবেই হাসপাতাল এবং শিক্ষা চলতে বাধ্য। এখানে ঘুঘুর বাসা তৈরী হতেই পারে কিন্ত যেহেতু দিনের শেষে সবাইকেই কমিউনিটিতে কোথাও না কোথাও মুখ দেখাতে হয়-সেহেতুে একাউন্টেবিলিটি অনেক বেশীই থাকে। সব থেকে বড় কথা যিনি নেতা-দিনের শেষে তার ছেলে মেয়েও কমিউনিটি স্কুলেই যাচ্ছে, তিনিও সেই একই হাসপাতালের ওপরেই ভরসা করছেন।
জ্যোতিবসু যখন আমেরিতে ভর্তি থাকতেন বা সিপিএমের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের ছেলেমেয়েরা নামী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হত বা পরবর্তীকালে অনেক নেতার ছেলে মেয়েরাই প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ে এখন আমেরিকান কোম্পানীতে চাকরি করে ফেসবুকে বামপন্থী ফলাচ্ছে--- আমি এই জন্যে প্রতিবাদ করেছিলাম, আজও করি। সিস্টেম ঠিক করতে গেলে, সিস্টেমের নেতাদের সেই সিস্টেমের প্রথম ক্রেতা বা ভোক্তা হতে হবে। তা না হলে সবটাই ফাঁকি। এবং ফাঁকিবাজি জিনিস বেশীদিন চলে না-সিপিএম ও চলে নি।
মমতা ব্যার্নার্জি পশ্চিম বঙ্গের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ঠিক করতে পারবেন কি না জানি না-তবে তার পার্টির নেতারাও যদি নার্সিং হোমে ভর্তি হোন এবং নিজের ছেলেমেয়েদের বেসরকারি স্কুলে পাঠান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যে পশ্চিম বঙ্গ যে তিমিরে ছিল-সেখানেই থাকবে।
(২)
পশ্চিম বঙ্গের সব থেকে বড় সমস্যা বেকারত্ব। এটা শুধু পশ্চিম বঙ্গ না-গোটা বিশ্বজুড়েই সমস্যা। পশ্চিম বঙ্গে এটা বেশী-কারন রাজনৈতিক অস্থিরতার এবং ভ্রান্ত আদর্শবাদিদের উৎপাতের কারনে এখানে শিল্প আসা একটু চাপের। কিন্ত শিল্প আসলেই বেকারত্ব ঘুচবে এমন নয় আজকের দিনে। কারন এখনকার শিল্পে অটোমেশন বেশী-শ্রম নির্ভর শিল্পের কোন ভবিষ্যত নেই । তবে শিল্প আসলে যেটা হবে-সেটা হচ্ছে কাঁচামাল ইত্যাদি সাপ্লাই এর জন্য ছোট ছোট ব্যবসা তৈরী হবে। যেটা ভীষন দরকার।
কিন্ত পশ্চিম বঙ্গে শিল্পের মূল সমস্যা (১) উদ্যোগী লোকের অভাব (২) ক্যাপিটাল নেই বাঙালীদের কাছে। এ এমন জাত যে এদের সিনেমাও তৈরী হয় অবাঙালীদের ক্যাপিটালে (৩) জাতিগত মানসিকতা চাকরি করার
তবে সিলভার সাইনিং ও আছে । বর্তমানে জ্ঞান ভিত্তিক শিল্পে ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট কম লাগে। সেই সব শিল্পে কিন্ত বাঙালী ভাল করতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে করছেও। এক্ষেত্রেই সরকার ভূমিকা রাখতে পারত-ব্যপক ভাবে "স্কিল ট্রেনিং" এর ব্যবস্থা করে।
কিন্ত মুশকিল হচ্ছে পশ্চিম বঙ্গের বেকারদের সেই একই কলা এবং মূলো দেখানো হচ্ছে-সেই এস এস সি এবং প্রাইমারী স্কুলের চাকরি। একটা জাতির লোকেদের যদি মূল উদ্দেশ্য হয় স্কুলের চাকরি জোটানো-সেই জাতির ভবিষ্যত সিন্ডিকেট। কারন স্কুলের চাকরি পাবে একশো জনে একজন। বাকী নিরানব্বই জন কি করবে? সুতরাং সিপিএম-কংগ্রেস জোট যে এস এস সি এবং টেট নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছেন-সেটাতে তাদের রাজনৈতিক দেওলিয়াপনায় প্রকট। এই যে এত জোট জোট হচ্ছে- আমি যদি প্রশ্ন করি-পশ্চিম বঙ্গে চাকরি সৃষ্টিতে তাদের প্ল্যান কি? কেউ বলতে পারবে না। শাসক দলের ও সেই প্ল্যান কি-সেটাও অবশ্য কেউ জানে না। এটাই নিঠুর বাস্তব।
সামনের দিন মোটেই ভাল না। পশ্চিম বঙ্গে সেই নেতা এবং নেতৃত্বই নেই যে রাজ্যের জন্য লং টার্ম চিন্তা ভাবনা করবে। হয়ত সেসব চিন্তা ভাবনা করে ক্ষমতায় আসা যায় না।
দিনকাল সত্যিই হতাশার। ডাক্তারের হাতে মানুষ মরছে। ইঞ্জিনিয়ারদের গাফিলতিতে ব্রীজ ভেঙে মরছে। শিক্ষকদের হাতে পঙ্গু ছাত্র সমাজ। শুধু রাজনীতিবিদদেরই কেন দোষ দেওয়া হচ্ছে বুঝছি না। সবাই ত যে যার মতন করে কালো টাকা তৈরী এবং আইনকে কলা দেখাতে ব্যস্ত।
অদ্ভত-সত্য অদ্ভত। সবাই চাইছে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষক রাজনীতিবিদ এরা সৎ নির্লোভ ভগবানের অবতার হৌক। কিন্ত নিজেরা সবাই আইন ভেঙে কালোটাকা বানিয়ে যাব। তাই কখনো সম্ভব? ক্যন্সার যখন গোটা দেহে ছড়ায়-তখন কি তা দেহের কোন অঙ্গকে বাদ দেয়?
গণতন্ত্র থেকে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম বা বিবর্তন যে রাজনৈতিক নিয়তি তা রিপাবলিক গ্রন্থে ( অষ্ঠম খন্ড) বহুদিন আগে লিখে গেছেন মহামান্য প্লেটো। গণতন্ত্র কিভাবে গুন্ডারাজ নিয়ন্ত্রিত স্বৈরতন্ত্রের জন্মদাত্রী সেই প্রসঙ্গে প্লেটো লিখছেন -"গণতন্ত্রের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট হবে এই যে মানুষ আরো স্বাধীনতা ভোগ করতে চাইবে-এবং সেই স্বাধীনতার কলা ও মূলো দেখিয়ে জনপ্রিয় বিদ্রোহি নেতা ক্ষমতা দখল করবেন এবং গুন্ডারাজ / খুন জখমের ভয়ার্ত আবহ কায়েম করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরন করবেন। লোকে এই স্বৈরাচারের প্রতি চূড়ান্ত রুষ্ট হবে-কিন্ত অসহায় হয়ে দেখবে, শাসক বদলানোর কোন উপায় নেই।"
ইনফ্যাক্ট ১৯৭২-৭৭ এর কংগ্রেস আমল থেকে সিপিএম, সিপিএম থেকে তৃনমূল, প্রতিটা ক্ষেত্রেই সরকার গুলো তৈরী হয়েছিল, গণতান্ত্রিক অধিকার এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। তাদের ক্ষেত্রে প্লেটোর বাণী খেটেছে কিনা, তার নির্ধারনের দায় আপনাদের। একটা বড় প্রশ্ন, জনগণের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা সত্যিই কতটা এসেছে?
এখানে আনন্দবাজার এবং বাংলার বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায় মানুষকে ভুল পথে চালিয়েছে এবং এখনো চালাচ্ছে। পার্লামেন্টিয় রাজনীতিতে ভোটের মাধ্যমে শাসক বদলিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা দেওয়া যায় না। এটাও আশা করা ভুল যে রাজনীতিবিদরা তাদের জন্য কাজ করবে নিঃস্বার্থ ভাবে। ইনফ্যাক্ট এথেন্সের গণতন্ত্র নিয়ে শুধু প্লেটো না এরিস্টটল, সত্রেটিস সবাই হতাশাই ব্যক্ত করেছেন। সুতরাং শুধু ভোট দেওয়ার ক্ষমতা এলেই জনগনের হাতে আসল ক্ষমতা এল এসব আকাশ কুসুম কল্পনা।
জনগণের হাতে ক্ষমতা গণতন্ত্রও দিতে পারে নি-অতীতের কমিউনিজম ত পারেই নি। আমেরিকাতেও জনগণ বৃহৎ বিজনেসের হাতে জিম্মি। এর কারন মোটেও এই না যে এই বৃহৎ কর্পরেশনগুলো রাজনৈতিক নেতাদের কিনে নেয়। তা হয়ত নেয়- পশ্চিম বঙ্গ সহ যেখানেই যে তন্ত্রই কায়েম হৌক না কেন, যে পার্টি বা নেতা সিংহাসনে বসুন, ক্ষমতার চাবিকাঠি ব্যবসায়ীদের হাতেই থাকবে। এর মূল কারন উৎপাদনের দখল যাদের হাতে ক্ষমতা সব সময় তাদের হাতেই থাকবে। জনগণের হাতে উৎপাদনের চাবিকাঠি না থাকলে কি তন্ত্র, কে শাসক, তাতে কিস্যু যায় আসে না।
এই অবস্থার পরিবর্তন আসতে পারে একমাত্র কমিউনিটি ভিত্তিক উৎপাদনে। যা আস্তে আস্তে চেষ্টা করতেই হবে নইলে শেষের সেদিন আরো ভয়ংকর। প্রথমেই চিকিৎসার কথায় আসি। সরকারি হাসপাতালের বেহাল অবস্থা। বেসরকারি হাসপাতালে ঢোকা মানে জিন্দা জবাই হতে গলা বাড়ানো। ইনফ্যাক্ট শিক্ষার অবস্থাও তাই। সরকারি স্কুলে ক্লাস হয় না-আর বেসরকারি স্কুল মানে পকেট্মার ম্যানেজমেন্ট।
এর উল্টোদিকটাও আমেরিকাতে দেখছি। কিছু সাইনিং রেখা আছে-যা আসলে ভারতও ছিল- সমাধান আমাদের সামনেই ছিল-কেউ সমাধানটা দেখতে চায় নি। এর সমাধান অবশ্যই হাঁসপাতাল এবং স্কুলগুলো সরকারি বা বেসরকারি হাতে না রেখে স্থানীয় কমিউনিটির হাতে থাকুক। অবশ্যই নির্বাচিত কমিটি হতে হবে। স্থানীয় নির্বাচনে-পঞ্চায়েতে, মিউনিসিপালিটিতে বা স্কুল কমিটি ইত্যাদিতে পার্টির ইন্টারভেনশন আইন করে বন্ধ করা উচিত। ভারতে এই মর্মে অনেকেই আবেদন তুলেছেন-কিন্ত যারা জনপ্রতিনিধি তারা সবাই পার্টির লোক। তারা স্থানীয় নির্বাচনে পার্টি বিহীন বোর্ডের ধারনার পক্ষে ভোট দিয়ে নিজের পার্টির ক্ষতি করবেন কেন? ফলে ভারতে জনগণের ভবিষ্যত হয় সরকারি হাসপাতালে কুকুরের সাথে বেড শেয়ার করা নইলে বেসরকারি হাসপাতালে এসি রুমে নিজেকে ডাকাতের হাতে তুলে দেওয়া।
আমি যেখানে থাকি সেখানে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য দুটোই কমিউনিটি ভিত্তিক। যেহেতু দুটো ক্ষেত্রেই খরিদ্দার এবং বিক্রেতা আপনি নিজে-খুব স্বাভাবিক ভাবেই দুটি ক্ষেত্রেই জনগনের কথা ভেবেই হাসপাতাল এবং শিক্ষা চলতে বাধ্য। এখানে ঘুঘুর বাসা তৈরী হতেই পারে কিন্ত যেহেতু দিনের শেষে সবাইকেই কমিউনিটিতে কোথাও না কোথাও মুখ দেখাতে হয়-সেহেতুে একাউন্টেবিলিটি অনেক বেশীই থাকে। সব থেকে বড় কথা যিনি নেতা-দিনের শেষে তার ছেলে মেয়েও কমিউনিটি স্কুলেই যাচ্ছে, তিনিও সেই একই হাসপাতালের ওপরেই ভরসা করছেন।
জ্যোতিবসু যখন আমেরিতে ভর্তি থাকতেন বা সিপিএমের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের ছেলেমেয়েরা নামী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হত বা পরবর্তীকালে অনেক নেতার ছেলে মেয়েরাই প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ে এখন আমেরিকান কোম্পানীতে চাকরি করে ফেসবুকে বামপন্থী ফলাচ্ছে--- আমি এই জন্যে প্রতিবাদ করেছিলাম, আজও করি। সিস্টেম ঠিক করতে গেলে, সিস্টেমের নেতাদের সেই সিস্টেমের প্রথম ক্রেতা বা ভোক্তা হতে হবে। তা না হলে সবটাই ফাঁকি। এবং ফাঁকিবাজি জিনিস বেশীদিন চলে না-সিপিএম ও চলে নি।
মমতা ব্যার্নার্জি পশ্চিম বঙ্গের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ঠিক করতে পারবেন কি না জানি না-তবে তার পার্টির নেতারাও যদি নার্সিং হোমে ভর্তি হোন এবং নিজের ছেলেমেয়েদের বেসরকারি স্কুলে পাঠান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যে পশ্চিম বঙ্গ যে তিমিরে ছিল-সেখানেই থাকবে।
(২)
পশ্চিম বঙ্গের সব থেকে বড় সমস্যা বেকারত্ব। এটা শুধু পশ্চিম বঙ্গ না-গোটা বিশ্বজুড়েই সমস্যা। পশ্চিম বঙ্গে এটা বেশী-কারন রাজনৈতিক অস্থিরতার এবং ভ্রান্ত আদর্শবাদিদের উৎপাতের কারনে এখানে শিল্প আসা একটু চাপের। কিন্ত শিল্প আসলেই বেকারত্ব ঘুচবে এমন নয় আজকের দিনে। কারন এখনকার শিল্পে অটোমেশন বেশী-শ্রম নির্ভর শিল্পের কোন ভবিষ্যত নেই । তবে শিল্প আসলে যেটা হবে-সেটা হচ্ছে কাঁচামাল ইত্যাদি সাপ্লাই এর জন্য ছোট ছোট ব্যবসা তৈরী হবে। যেটা ভীষন দরকার।
কিন্ত পশ্চিম বঙ্গে শিল্পের মূল সমস্যা (১) উদ্যোগী লোকের অভাব (২) ক্যাপিটাল নেই বাঙালীদের কাছে। এ এমন জাত যে এদের সিনেমাও তৈরী হয় অবাঙালীদের ক্যাপিটালে (৩) জাতিগত মানসিকতা চাকরি করার
তবে সিলভার সাইনিং ও আছে । বর্তমানে জ্ঞান ভিত্তিক শিল্পে ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট কম লাগে। সেই সব শিল্পে কিন্ত বাঙালী ভাল করতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে করছেও। এক্ষেত্রেই সরকার ভূমিকা রাখতে পারত-ব্যপক ভাবে "স্কিল ট্রেনিং" এর ব্যবস্থা করে।
কিন্ত মুশকিল হচ্ছে পশ্চিম বঙ্গের বেকারদের সেই একই কলা এবং মূলো দেখানো হচ্ছে-সেই এস এস সি এবং প্রাইমারী স্কুলের চাকরি। একটা জাতির লোকেদের যদি মূল উদ্দেশ্য হয় স্কুলের চাকরি জোটানো-সেই জাতির ভবিষ্যত সিন্ডিকেট। কারন স্কুলের চাকরি পাবে একশো জনে একজন। বাকী নিরানব্বই জন কি করবে? সুতরাং সিপিএম-কংগ্রেস জোট যে এস এস সি এবং টেট নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছেন-সেটাতে তাদের রাজনৈতিক দেওলিয়াপনায় প্রকট। এই যে এত জোট জোট হচ্ছে- আমি যদি প্রশ্ন করি-পশ্চিম বঙ্গে চাকরি সৃষ্টিতে তাদের প্ল্যান কি? কেউ বলতে পারবে না। শাসক দলের ও সেই প্ল্যান কি-সেটাও অবশ্য কেউ জানে না। এটাই নিঠুর বাস্তব।
সামনের দিন মোটেই ভাল না। পশ্চিম বঙ্গে সেই নেতা এবং নেতৃত্বই নেই যে রাজ্যের জন্য লং টার্ম চিন্তা ভাবনা করবে। হয়ত সেসব চিন্তা ভাবনা করে ক্ষমতায় আসা যায় না।
দিনকাল সত্যিই হতাশার। ডাক্তারের হাতে মানুষ মরছে। ইঞ্জিনিয়ারদের গাফিলতিতে ব্রীজ ভেঙে মরছে। শিক্ষকদের হাতে পঙ্গু ছাত্র সমাজ। শুধু রাজনীতিবিদদেরই কেন দোষ দেওয়া হচ্ছে বুঝছি না। সবাই ত যে যার মতন করে কালো টাকা তৈরী এবং আইনকে কলা দেখাতে ব্যস্ত।
অদ্ভত-সত্য অদ্ভত। সবাই চাইছে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষক রাজনীতিবিদ এরা সৎ নির্লোভ ভগবানের অবতার হৌক। কিন্ত নিজেরা সবাই আইন ভেঙে কালোটাকা বানিয়ে যাব। তাই কখনো সম্ভব? ক্যন্সার যখন গোটা দেহে ছড়ায়-তখন কি তা দেহের কোন অঙ্গকে বাদ দেয়?
No comments:
Post a Comment