কালবেলা সিনেমাটা দেখলাম, মানে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল। সমরেশের উপন্যাসটা পড়েছিলাম ছাত্রবেলাতে । অনিমেশ মিত্র চরিত্রটা দেখতে দেখতে বার বার মনে হচ্ছিল, কিভাবে একটা ভ্রান্ত আদর্শবাদ সমাজ রাষ্ট্র ব্যক্তির কালহন্তক হয়ে ওঠে। আরো মনে হচ্ছিল অনির লেভেলে না হলেও, ওই ভ্রান্ত লেনিনবাদের ফাঁদে পা দিয়ে আরো কত যুবক যুবতী সর্ব্বোনাশ আজও হচ্ছে।
গরীবদের শোষন থেকে উদ্ধার এবং সাম্যবাদী সমাজের স্বপ্ন আমিও দেখি। সাম্যবাদি শোষনমুক্ত সমাজের প্রশ্নে বামেদের সাথে আমার কোন মত পার্থক্য নেই। প্রশ্ন হচ্ছে কোন লেনিনবাদি বিপ্লব কি ইতিহাসে কোন শোষনমুক্ত সমাজের জন্ম দিয়েছে? যেখানেই কমিনিউজম, সেখানেই মৃত্যু, দুর্ভিক্ষ, শ্রমিক কৃষকশ্রনীর গণহত্যাটাই বাস্তব ইতিহাস। চেসেস্কু, কিম জঙের মতন রাজতন্ত্রের জন্ম হয়েছে । নক্সালবাড়ির দুর্ঘটনা একটা ছোট খাট ব্যপার।
গরীবদের শোষনমুক্ত করতে, কমিনিউস্ট বিপ্লবের পথেই ভাবতে হবে কেন? কেন ল্যাটিন আমেরিকার বামপন্থা লেনিনবাদকে ১০০% মাইনাস করে মার্কেট, কোয়াপরেটিভ এবং মানুষের উদ্যোগী উপযোগকে কাজে লাগিয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে? কেন আম আদমি পার্টি মাত্র এক বছরেই যা করে দেখাল, লেনিনবাদিরা আশি বছর ধরেও সেই জনভিত্তি পেল না ভারতে?
একটা গল্প বলি। তিন বছর আগে আগ্রা থেকে দিল্লী ফিরছিলাম। লম্বা পথে ড্রাইভারের সাথে খোশগল্প হচ্ছিল। ওর মাইনে মোটে সাত হাজারটাকা, সাথে প্রতি ট্রিপের জন্য এক্সট্রা খাওয়ার খরচ। আর কিছু ওভার টাইম। পরিবার থাকে হরিয়ানার গ্রামে। মাসে একদিন ছুটি। আমি বল্লাম গ্রাম ছেড়ে, এই কঠিন জীবনে কেন? বললো, সাব, সেখানে ত তাও খেতে পাই দুবেলা পেটভরে। তার মালিকের ৩৯ টা গাড়ি! কথা প্রসঙ্গে ও জিজ্ঞেস করল, আমি কি করি। তখন ব্যবসা সবে শুরু করেছি। ড্রাইভারটা শুনে বললো ও নিজে গাড়ি কিনে চালাতে চায়। তাহলে ওর রোজগার সাত হাজারের জায়গায় ত্রিশ হাজার হবে। দিল্লীতে ভাড়ার গাড়ীর খুব ডিম্যান্ড। কিন্ত তার জন্য মিনিমাম দুলাখের ইনভেস্টমেন্ট। সেই টাকা ওর নেই। কিন্ত ওর বিশ্বাস ও একদিন গাড়ীর মালিক হবেই-গ্রামের জমি বেচেই হবে। কারন ওর যে মালিক-সেও ওর গাওয়ালী ভাই- একদিন দিল্লীতে গাড়ী চালাত। আজ কোটি টাকার মালিক।
আমি যত গরীব মানুষের সাথে মিশেছি-সবার আকাঙ্খা মোটামুটি একরকম। একটু পুঁজি নিয়ে, তারা শ্রমিক থেকে মালিক হয়ে স্বাধীন ব্যবসা করতে চায়। দারিদ্রের মূল কারন দুটো- গরীবদের পুঁজি আর স্কিলের অভাব। মুশকিল হচ্ছে রাষ্ট্র আবার এই দুটোর দ্বায়িত্ব নিতে চায় না। বা নিলেও নমো নমো করে নেবে। যে রাষ্ট্র এর দ্বায়িত্ব নেয়, সেখানে ক্যাপিটালিস্ট সিস্টেমেও গরীব প্রায় নেই। যেমন জাপান । জাপান ১৯৩০-৪০ সালের মধ্যেই দারিদ্র প্রায় সম্পূর্ন রূপে দূর করে। সেই সময় জাপানের জিডিপি বেড়েছে ৩০-৫০% হারে।
দারিদ্রমুক্ত সমাজ মার্কেট ছাড়া সম্ভব না। কমিনিউস্ট চীন ও মার্কেটের পথেই দারিদ্র দূর করেছে, লেনিনের লেজ ধরে বসে থাকে নি। প্রশ্ন হচ্ছে এই মার্কেটের মধ্যে কিভাবে গরীবদের হাতে পুঁজি এবং স্কিল দেওয়া যায়। ল্যাটিন আমেরিকার বামপন্থায়, ইভো মরালেস যেমন এই দুটি প্রশ্নের সমাধানে কোয়াপরেটিভ এবং কোয়াপরেটিভের মাধ্যমেই সরকারি পুঁজি ও স্কিলের ব্যবস্থা করেছেন প্রান্তিক লোকেদের জন্য। কিন্ত বেচার কাজটা ওই লোকেদের করতে হবে। সরকার সেখানেও তাদের জন্য ভাল মার্কেট বানিয়ে দিয়েছে।
ভারতের সমস্যা হচ্ছে এখানের বামেরা একদম নিম্নমেধার। অথবা ভারতের ক্রনিক সমস্যা হচ্ছে এরা শুধু ফলোয়ার হতে ভালোবাসে - নিজেদের সমস্যাকে যে নিজেদের মতন সমাধান করতে হবে তাতে এদের বিশ্বাস নেই। নক্সাল আন্দোলন ও ওইরকমের হঠকারিতাই ছিল। আমি বরাবর শুনে এসেছি নক্সালরা নাকি খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। যেটা মেলাতে পারি নি-সেটা হচ্ছে এত গুলো মেধাবী ছাত্রর কেও নাটের গুরু লেনিনের লেখা যে পুরো ঢপবাজি সেটা বুঝতে পারে নি? লেনিনের সর্বাধিক বিখ্যাত লেখা " সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর" -পড়লে যেকোনো সচেতন ব্যক্তির তিনটি প্রশ্ন তোলা উচিত (১) ওই লেখাটার থিসিসের ৮০% হবসন থেকে ঝাড়া, বাকী ২০% শোধনবাদিদের বিরুদ্ধে লেনিনের গালাগালি (২) ওই লেখাতে কোন ডায়ালেক্টিক লজিকই নেই-থিসিসের বিরুদ্ধে এন্টিথিসিস সাজিয়ে কোন সিন্থেসিস নেই-পুরোটাই ইন্ডাক্টিভ লজিকে ভর্তি-যা মার্ক্সবাদের বিশ্লেষন পদ্ধতি না (৩) হচ্ছে (২) এর কারনে সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে লেনিন এবং মার্ক্সের বক্তব্যেও অনেক ক্ষেত্রে ১৮০ ডিগ্রী বিরোধ।
প্রশ্ন হচ্ছে সেই কালে প্রেসিডেন্সী কলেজের এতগুলো মেধাবী ছাত্র যারা নাকি মার্ক্সবাদ চর্চা করত, তাদের কাছে লেনিনের ঢপবাজি ধরা পড়লো না কেন? তাদের কি মেধার অভাব ছিল?
তা মোটেও না। আমার মনে হয় যেটা হয়েছে, প্রাক ইন্টারনেট যুগে সোভিয়েতকালে -যেটা কালবেলার সময়-তখন লেনিনবাদের ধাপ্পাবাজি ধরা কঠিন ছিল-কারন কমিনিউজম সংক্রান্ত সব তথ্য, উপাত্ত নিয়ন্ত্রন করত সোভিয়েত ইউনিয়ান। আমার বাড়ি, প্রতিবেশীদের বাড়িতে লেনিন মার্ক্সবাদের গাদা গাদা বই ছিল। ওসব যতবার পড়ার চেষ্টা করেছি-কিস্যু বুঝি নি। মার্ক্সবাদ জলভাতের মতন বুঝতে শুরু করি এই সেদিন ২০০৩ কি ২০০৪ সাল থেকে-যবে থেকে উইকি এসেছে। কারন উইকির দৌলতে প্রথম অনেক দর্শন শাস্ত্রের আর্টিকল পেলাম, যেখানে অনেক ব্যাপার জার্গন ছাড়া জলভাতের মতন সহজ করে বোঝানো হয়েছে। কালবেলার অনির কাছে ওইসব আর্টিকেল ছিল না।
আমার ধারনা ইন্টারনেটের যুগ আগে এলে, নক্সালবাড়ির দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।
গরীবদের শোষন থেকে উদ্ধার এবং সাম্যবাদী সমাজের স্বপ্ন আমিও দেখি। সাম্যবাদি শোষনমুক্ত সমাজের প্রশ্নে বামেদের সাথে আমার কোন মত পার্থক্য নেই। প্রশ্ন হচ্ছে কোন লেনিনবাদি বিপ্লব কি ইতিহাসে কোন শোষনমুক্ত সমাজের জন্ম দিয়েছে? যেখানেই কমিনিউজম, সেখানেই মৃত্যু, দুর্ভিক্ষ, শ্রমিক কৃষকশ্রনীর গণহত্যাটাই বাস্তব ইতিহাস। চেসেস্কু, কিম জঙের মতন রাজতন্ত্রের জন্ম হয়েছে । নক্সালবাড়ির দুর্ঘটনা একটা ছোট খাট ব্যপার।
গরীবদের শোষনমুক্ত করতে, কমিনিউস্ট বিপ্লবের পথেই ভাবতে হবে কেন? কেন ল্যাটিন আমেরিকার বামপন্থা লেনিনবাদকে ১০০% মাইনাস করে মার্কেট, কোয়াপরেটিভ এবং মানুষের উদ্যোগী উপযোগকে কাজে লাগিয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে? কেন আম আদমি পার্টি মাত্র এক বছরেই যা করে দেখাল, লেনিনবাদিরা আশি বছর ধরেও সেই জনভিত্তি পেল না ভারতে?
একটা গল্প বলি। তিন বছর আগে আগ্রা থেকে দিল্লী ফিরছিলাম। লম্বা পথে ড্রাইভারের সাথে খোশগল্প হচ্ছিল। ওর মাইনে মোটে সাত হাজারটাকা, সাথে প্রতি ট্রিপের জন্য এক্সট্রা খাওয়ার খরচ। আর কিছু ওভার টাইম। পরিবার থাকে হরিয়ানার গ্রামে। মাসে একদিন ছুটি। আমি বল্লাম গ্রাম ছেড়ে, এই কঠিন জীবনে কেন? বললো, সাব, সেখানে ত তাও খেতে পাই দুবেলা পেটভরে। তার মালিকের ৩৯ টা গাড়ি! কথা প্রসঙ্গে ও জিজ্ঞেস করল, আমি কি করি। তখন ব্যবসা সবে শুরু করেছি। ড্রাইভারটা শুনে বললো ও নিজে গাড়ি কিনে চালাতে চায়। তাহলে ওর রোজগার সাত হাজারের জায়গায় ত্রিশ হাজার হবে। দিল্লীতে ভাড়ার গাড়ীর খুব ডিম্যান্ড। কিন্ত তার জন্য মিনিমাম দুলাখের ইনভেস্টমেন্ট। সেই টাকা ওর নেই। কিন্ত ওর বিশ্বাস ও একদিন গাড়ীর মালিক হবেই-গ্রামের জমি বেচেই হবে। কারন ওর যে মালিক-সেও ওর গাওয়ালী ভাই- একদিন দিল্লীতে গাড়ী চালাত। আজ কোটি টাকার মালিক।
আমি যত গরীব মানুষের সাথে মিশেছি-সবার আকাঙ্খা মোটামুটি একরকম। একটু পুঁজি নিয়ে, তারা শ্রমিক থেকে মালিক হয়ে স্বাধীন ব্যবসা করতে চায়। দারিদ্রের মূল কারন দুটো- গরীবদের পুঁজি আর স্কিলের অভাব। মুশকিল হচ্ছে রাষ্ট্র আবার এই দুটোর দ্বায়িত্ব নিতে চায় না। বা নিলেও নমো নমো করে নেবে। যে রাষ্ট্র এর দ্বায়িত্ব নেয়, সেখানে ক্যাপিটালিস্ট সিস্টেমেও গরীব প্রায় নেই। যেমন জাপান । জাপান ১৯৩০-৪০ সালের মধ্যেই দারিদ্র প্রায় সম্পূর্ন রূপে দূর করে। সেই সময় জাপানের জিডিপি বেড়েছে ৩০-৫০% হারে।
দারিদ্রমুক্ত সমাজ মার্কেট ছাড়া সম্ভব না। কমিনিউস্ট চীন ও মার্কেটের পথেই দারিদ্র দূর করেছে, লেনিনের লেজ ধরে বসে থাকে নি। প্রশ্ন হচ্ছে এই মার্কেটের মধ্যে কিভাবে গরীবদের হাতে পুঁজি এবং স্কিল দেওয়া যায়। ল্যাটিন আমেরিকার বামপন্থায়, ইভো মরালেস যেমন এই দুটি প্রশ্নের সমাধানে কোয়াপরেটিভ এবং কোয়াপরেটিভের মাধ্যমেই সরকারি পুঁজি ও স্কিলের ব্যবস্থা করেছেন প্রান্তিক লোকেদের জন্য। কিন্ত বেচার কাজটা ওই লোকেদের করতে হবে। সরকার সেখানেও তাদের জন্য ভাল মার্কেট বানিয়ে দিয়েছে।
ভারতের সমস্যা হচ্ছে এখানের বামেরা একদম নিম্নমেধার। অথবা ভারতের ক্রনিক সমস্যা হচ্ছে এরা শুধু ফলোয়ার হতে ভালোবাসে - নিজেদের সমস্যাকে যে নিজেদের মতন সমাধান করতে হবে তাতে এদের বিশ্বাস নেই। নক্সাল আন্দোলন ও ওইরকমের হঠকারিতাই ছিল। আমি বরাবর শুনে এসেছি নক্সালরা নাকি খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। যেটা মেলাতে পারি নি-সেটা হচ্ছে এত গুলো মেধাবী ছাত্রর কেও নাটের গুরু লেনিনের লেখা যে পুরো ঢপবাজি সেটা বুঝতে পারে নি? লেনিনের সর্বাধিক বিখ্যাত লেখা " সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর" -পড়লে যেকোনো সচেতন ব্যক্তির তিনটি প্রশ্ন তোলা উচিত (১) ওই লেখাটার থিসিসের ৮০% হবসন থেকে ঝাড়া, বাকী ২০% শোধনবাদিদের বিরুদ্ধে লেনিনের গালাগালি (২) ওই লেখাতে কোন ডায়ালেক্টিক লজিকই নেই-থিসিসের বিরুদ্ধে এন্টিথিসিস সাজিয়ে কোন সিন্থেসিস নেই-পুরোটাই ইন্ডাক্টিভ লজিকে ভর্তি-যা মার্ক্সবাদের বিশ্লেষন পদ্ধতি না (৩) হচ্ছে (২) এর কারনে সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে লেনিন এবং মার্ক্সের বক্তব্যেও অনেক ক্ষেত্রে ১৮০ ডিগ্রী বিরোধ।
প্রশ্ন হচ্ছে সেই কালে প্রেসিডেন্সী কলেজের এতগুলো মেধাবী ছাত্র যারা নাকি মার্ক্সবাদ চর্চা করত, তাদের কাছে লেনিনের ঢপবাজি ধরা পড়লো না কেন? তাদের কি মেধার অভাব ছিল?
তা মোটেও না। আমার মনে হয় যেটা হয়েছে, প্রাক ইন্টারনেট যুগে সোভিয়েতকালে -যেটা কালবেলার সময়-তখন লেনিনবাদের ধাপ্পাবাজি ধরা কঠিন ছিল-কারন কমিনিউজম সংক্রান্ত সব তথ্য, উপাত্ত নিয়ন্ত্রন করত সোভিয়েত ইউনিয়ান। আমার বাড়ি, প্রতিবেশীদের বাড়িতে লেনিন মার্ক্সবাদের গাদা গাদা বই ছিল। ওসব যতবার পড়ার চেষ্টা করেছি-কিস্যু বুঝি নি। মার্ক্সবাদ জলভাতের মতন বুঝতে শুরু করি এই সেদিন ২০০৩ কি ২০০৪ সাল থেকে-যবে থেকে উইকি এসেছে। কারন উইকির দৌলতে প্রথম অনেক দর্শন শাস্ত্রের আর্টিকল পেলাম, যেখানে অনেক ব্যাপার জার্গন ছাড়া জলভাতের মতন সহজ করে বোঝানো হয়েছে। কালবেলার অনির কাছে ওইসব আর্টিকেল ছিল না।
আমার ধারনা ইন্টারনেটের যুগ আগে এলে, নক্সালবাড়ির দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।
No comments:
Post a Comment