Saturday, June 20, 2015

প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং সাম্রাজ্যবাদ

অতীত থেকে না-বর্তমান থেকেই শুরু করি।

  আজকের এই আই টি বিপ্লব, ফেসবুক, গুগল, কম্পুটারের পেছনে, কাজ করে মূলত দুটো বেসিক প্রযুক্তি। প্রথমটা হচ্ছে সিলিকন টেকনোলজি-যা একটা কয়েনের মধ্যে এনেদিচ্ছে কোটি কোটি যন্ত্রগণকের শক্তি। আর দুই-ইন্টারনেটে বেসিক টেলিকম নেটওয়ার্ক-যা কোটি কোটি কম্পিটিং ডিভাইসকে কানেক্ট করছে।

   এই দূটি প্রযুক্তিই আমেরিকান মিলিটারি গবেষনার ফসল। ইন্টারনেট প্রযুক্তি শুরু হয়েছিল 1977 এ ডারপার আরপানেট প্রজেক্ট থেকে (https://en.wikipedia.org/?title=ARPANET)। ডারপা হচ্ছে আমেরিকাতে প্রতিরক্ষার জন্য ভবিষ্যতের প্রযুক্তির নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার জন্য তৈরী রিসার্চ গ্রান্ট এজেন্সি। শুধু ইন্টারনেট ই না- ডারপা দিয়েছে, আরো অনেক যুগান্তকারি প্রযুক্তি- যেমন মেমস-যে সেন্সর প্রযুক্তির জন্য আজ বদলে যাচ্ছে সার্জারি থেকে মেশিনপত্রের মেইনটেনান্স।

                 সিলিকন চিপের বাজারজাত করার পেছনে যে কোম্পানীটি ১৯৬০ সালে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছিল-তারা হচ্ছে ফেয়ার চাইল্ড সেমিকন্ডার। এই কোম্পানীটিও মূলত শুরু হয়েছিল কোল্ড ওয়ারের সময় স্যাটেলাইট ও রকেট প্রযুক্তিতে সোভিয়েতকে টেক্কা দিতে নাসার জন্য । উইলিয়াম শকলে বেল ল্যাব থেকে বেড়িয়ে তৈরী করেন ফেয়ারচাইল্ড সেমিকন্ডার। উদ্দেশ্য সিলিকন চিপ -বা চিপের মধ্যে গোটা ইলেকট্রনিক্স সার্কিট পুরে দেওয়া। সুবিধা করতে পারেন নি প্রথমে। সুবিধা এনে দিল, ঠান্ডা যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে নাসার এপোলো প্রজেক্ট। এপোলোর গাইডেন্স সিস্টেমের সাইজ ছোট করতে, সিলিকন চিপস ছাড়া গতি ছিল না। নাসার বিরাট অর্থানুগ্রহ না পেলে, সিলিকন চিপ্স কবে যে সাফল্যের মুখ দেখত কেও জানে না। আর সিলিকন চিপসে জন্ম দশ বছর পেছলে, ইন্টারনেট আর ফেসবুকের জন্ম ও দশ বছর পিছিয়ে যেত।

 আমেরিকাতে অধিকাংশ নতুন কম্পুটার এবং ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তি আসে মিলিটারির অর্থানুগ্রহে। মূলত দুটি চ্যানেল আছে। একটা হচ্ছে ডারপা-যেখানে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে রিসার্চ গ্রান্ট দেওয়া হয়। দ্বিতীয়টা হল এস বি আই র। এখানে ছোট ছোট স্টার্টাপ গুলোকে মিলিটারীর কাজে লাগে এমন উদ্ভাবনের জন্য গ্রান্ট দেওয়া হয়। এস বি আই আর, অন্য ফেডারেল এজেন্সিগুলোও দেয়-তবে সিংহ ভাগ আসে মিলিটারি থেকে। আমার কাছে  থাকা এস বি আই এরে তথ্য বলছে, গত দুই দশকের উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিগুলির সিংহ ভাগ এসেছে এস বি আই এরে গ্রান্টে চলা রিসার্চ থেকে।


এবার অতীতের দিকে তাকানো যাক । সাম্রাজ্যবাদি শক্তির ঐতিহাসিক সিকোয়েন্সটা মোটামুটি এরকম -
পার্সিয়া-গ্রীক-রোমান- আরব-মোঙ্গল-অটোম্যান-স্প্যানিশ-বৃটিশ-আমেরিকা।

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে যারা যখন মাস্টার রেস হয়েছে-তাদের পেছনে দুটি শক্তি কাজ করেছে। প্রথমটা প্রযুক্তি-দ্বিতীয়টা শক্তিশালী শাসন ব্যবস্থা, আইনের শাসন। আজকের আমেরিকা তার ব্যতিক্রম না। কালকে চীন এবং ভারত যদি প্রযুক্তিতে এগোতে পারে, তারাই মাস্টার রেস হবে।

আলেক্সজান্ডারের সাম্রাজ্যবাদি শক্তির উৎস কি? অধিকাংশ যুদ্ধে কম সৈন্য নিয়ে কি করে বিপক্ষকে হারাতেন আলেজান্ডার ?  সেই ইতিহাস ঘাঁটলেও প্রযুক্তির মুখটাই দেখা যাবে। গাওয়ামুলের যুদ্ধে দারায়ুস-৩ এর বিপক্ষে  আলেক্সান্ডার জিতলেন কি করে? তার সেনাবাহিনীর সংখ্যা ছিল অর্ধেক। দারায়ুসের হাতে ছিল ভয়ংকর পার্সিয়ান রথ, যার চাকাতে বন বন করে ঘুরত তলোয়ার।  পার্সিয়ান রথের আক্রমন ঠেকাতে গ্রীকরা আবিস্কার করে সারিসা-যা হচ্ছে একুশ ফুট লম্বা বর্শা।  বর্শা একুশ ফুট লম্বা হলেই সারিসা হত না-দূর থেকে রথ বা ক্যাভিলারি ঠেকাতে দরকার হত একুশ ফুটের একটা রড যা হবে হাল্কা এবং শক্তিশালী। রথ বা ঘোড়ার ধাক্কায় ভাংবে না। শুধু এই প্রযুক্তির জোরেই পারস্যের বিখ্যাত রথ এবং ঘোড়সোওয়ার বাহিনীকে কাহিল করে দেয় ম্যাসিডোনিয়ানরা। পারসিক সম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষের ওপর শুরু হয়, গ্রীক সাম্রাজ্য।

 লিওয়ানার্ডো ভিন্সি থেকে রেনেসাস যুগে বিজ্ঞান প্রযুক্তির উত্থানের রহস্যটা কি? নিছক গবেষনা? সরি -ইতিহাস তা বলে না। লিওনার্ডো দ্যা ভিন্সি ফ্লোরেন্সের নগরপালকে একাধিক চিঠি লিখেছিলেন-যার সার সংক্ষেপ- অটোম্যানরা যখন খুশি শহরটা দখল করতে পারে-আর তাদের ঠেকাতে তিনি এমন সব অস্ত্রবানাবেন-যাতে নগর সুরক্ষিত থাকবে-তাই সেই সব অস্ত্র এবং প্রযুক্তি বানাতে তাকে অর্থ সাহায্য দেওয়া হৌক।

 পাথর থেকে ব্রোঞ্চ-ব্রোঞ্চ থেকে লোহা-সভ্যতার এই যে অগ্রগতি-সবই ত নতুন অস্ত্র বানাতে গিয়ে।

 এর পাশাপাশি চিকিৎসার অগ্রগতি অবশ্যই হয়েছে মিলিটারী কারন ছাড়াই।  কিন্ত যন্ত্র সভ্যতার অগ্রগতি সম্পূর্ন মিলিটারির জন্য। জেমস ওয়াট স্টিম ইঞ্জিন বানিয়ে ফেলতেই, স্টিম ইঞ্জিন গবেষনাতে সব থেকে বেশী খরচ করেছিল বৃটিশ নেভি। রাইট ভাই রা প্লেন বানাতেই, সেই প্লেন মানুষের যোগাযোগের অনেক আগেই , বোম ফেলার জন্য কাজে লাগাতে নেমে যায় ফেঞ্চ, বৃটিশ, জার্মান এবং আমেরিকানরা। ১৯১২-১৫ সাল পর্যন্ত বিমান বিদ্যায় সব কাজ হয়েছে কি করে প্লেনকে যুদ্ধবিমান হিসাবে গড়ে তোলা যায়।  এবং বিমান প্রযুক্তির প্রাথমিক সব আবিস্কার হয়েছে এই যুদ্ধবিমান বানাতেই। ট্রান্সপোর্টের প্রয়োজনে কাজে লাগানো হয়েছে অনেক বাদে। বিমান প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি হয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রয়োজনে।

 না, সাম্রাজ্যবাদকে সমর্থন জানাতে এই পোষ্ট না। এই পোষ্ট সেই সব বাল্যখিল্য জনগণের জন্য, যারা ফেসবুকে, ইন্টারনেটে দিনরাত সাম্রাজ্যবাদি আমেরিকাকে গালাগাল দিচ্ছেন-সেই সাম্রাজ্যবাদের প্রয়োজনে আবিস্কৃত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়েই!  প্রযুক্তির উন্নয়নে সাম্রাজ্যবাদের যা অবদান আছে, আর কোন কিছুর তা নেই। এটাই দুর্ভাগ্যজনক ইতিহাস। এটা যদি না জানেন-তাহলে ইতিহাসের প্রাথমিক জ্ঞান নিয়েই সন্দেহ উঠবে। 

1 comment:

Unknown said...

কে বলেছে যে অভিজিৎ রায় আর আমাদের মধ্যে নেই । দাদা, পোস্টের সংখ্যাটা কি একটু বাড়ানো যেতে পারে ? অভিনন্দন সুন্দর পোস্টের জন্য ।