Friday, June 19, 2015

উচ্চমাধ্যমিকের পর পেশাদারি জীবনে কি?

এই জুন জুলাই মাসটা বড় টেনশনের। যারা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করল তারা ত বটেই-তাদের বাবা মায়েরাও উদ্বেগ বায়ুতে কাত।

  জীবনে কি করিতে হইবে, কি করিলে এই মার্কেটে মোক্ষ লাভ হইবে, এমন উপদেশ দেবার ধক বা ইচ্ছা আমার নাই। আমি এক্ষনে শুধু কিছু আশার কথা শোনাইব।

  প্রথমেই বলি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আই টির কথা।  যাদবপুর, আই আই টি, শিবপুর বা সরকারি কলেজে না পেলে, বেসরকারি কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াতে আমি নিরুৎসাহিত করব। আমার অভিজ্ঞতা বলছে বেসরকারি কলেজগুলিতে শিক্ষক বা পরিকাঠামো কোনটাই নেই।  কিন্ত তাও এদ্দিন তারা চাকরি পেয়ে এসেছে -কারন ভারতে আই টি কর্মীর চাহিদা বেড়েছে বিপুল হারে। ফলে গরু গাধা সবাই গোয়াল পেয়েছে!  আগামী দিনেও এই চাহিদা থাকবে-কিন্ত ভালো ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যাথেমেটিক্স বেসিক ছাড়া, আই টিতে কেরানীগিরির চাকরি আর থাকবে না।  আই টি ফিল্ডে ব্যপকহারে অটোমেশন আসছে-যাতে প্রোগ্রামিং এর ক্ষেত্রে  হাই  এন্ড ম্যাথেমাটিকাল কোডিং এবং প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রে এপ্লিকেশন ইমপ্লিমেন্টেশনের জন্য এস এম ই বা সাবজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্টের দরকার বাড়বে।

 তাহলে যারা সরকারি কলেজে পায় নি, অথচ আই টি কর্মী হতে ইচ্ছুক-তাদের সামনে পথ কি?  আমি ত বলব তারা চোখকান বুঁজে ম্যাথেমেটিক্স বা ফিজিক্সে অনার্স নিয়ে ঢুকে যাও।  এটলিস্ট কিছু বেসিক শিখবে-যেটা বেসরকারি কলেজে কিছুই শিখবে না।  ব্যাচেলর ডিগ্রি করার পর, একটা এম সিএ করে নিলেও হবে, এম স সি করলেও ক্ষতি নেই। তবে ভালো আই টি কর্মী হতে গেলে, ব্যাচেলর ডিগ্রির পাশাপাশি-যেকোন ছোট কোম্পানীতে পার্ট টাইমে কোডিং এর কাজে ঢুকে যাও। কোডিং স্কিল এবং চর্চার জিনিস। যত প্রাক্টিস করবে, নতুন প্রজেক্ট করবে তত হাত এবং মাথা খুলবে। একদিকে বেসিক ম্যাথ স্কিলের ডেভেপলপমেন্ট অন্যদিকে কোডিং স্কিলের চর্চা করলে, খুব সহজেই মাস্টার ডিগ্রির পরেই ভাল চাকরি বাঁধা-এবং দুপাঁচ বছরের মধ্যে বাৎসরিক সাত-দশলাখ টাকার চাকরি পেয়ে যাবে। ভারতে আই টি কর্মী অনেক-কিন্ত ম্যাথ এবং বেসিক ভাল থাকা কোডারের অভাব সাংঘাতিক। হাই এন্ড কোডার হতে পারলে, মধ্য কেরিয়ারে ভারতে বছরে কুড়ি থেকে ত্রিশ লাখের চাকরি জলভাত। কিন্ত বেসিক ভাল না হলে প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারং কলেজ থেকে বিটেকের সার্টিফিকেট ঝোলালে কিছু হবে না। তবে প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে যদি একান্তই পড়তে হয়, পাশাপাশি যেকোন ছোট কোম্পানীতে ঢুকে যাও, যেখানে কোডিং শেখার চান্স আছে। কলেজকে গুলি মেরে কোডিং এ ডুবে থাক।

 এবার আসি ইলেকট্রনিক্স, মেকানিক্যাল ইত্যাদি ব্রাঞ্চগুলির কথায়। এই সব ব্রাঞ্চে চাহিদা ভারতে এখন ভালোই, মাইনেও অনেক বেড়েছে-কিন্ত  টপ আই টি কর্মীদের তুলনায় বেতন ৩০%।  ভারতে এই সব ব্রাঞ্চে সমস্যা হল পাবলিক কোম্পানী গুলি ছাড়া বাকী ইঞ্জিনিয়ারং কনসার্নগুলি মোটামুটি মারোয়ারীদের। সেখানে ডেভেলেপমেন্ট কিছু হয় না প্রায়- সবটাই রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এবং টাকা খাইয়ে তোলা প্রোজেক্টে কোন রকমে ডেলিভারি। মোদ্দা কথা এগুলো এখনো গ্লোবালাইজড হয় নি। ফলে এই সব ব্রাঞ্চে চাকরি থাকলেও, এগুলো স্যালারির দিক দিয়ে এখনো টপ আই টি জবের ধারে কাছেও নেই। এই সব ব্রাঞ্চে ঢুকলে চাকরি পাবে, তবে জব সাটিসফ্যাকশন নাও আসতে পারে। আর বিদেশ যাওয়ার সুযোগ কম-কারন একমাত্র আই আই টি ছাড়া এগুলোতে ভারতের যা স্টান্ডার্ড তাতে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স বা পি এই চ ডি পাওয়া কঠিন। সব থেকে বড় ব্যপার হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার আলটিমেট গোল হওয়া উচিত ভাল করে  কর্মক্ষেত্রে শিখে ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম খোলা। ভারতে এই কোর সেক্টরে সেভাবে কাজ শেখার স্কোপ নেই।

 এবার আসি পিউর সায়েন্সের কথায়।  পিউর সায়েন্সের মধ্যে সব থেকে বেশী ডিম্যান্ড কেমিস্টদের-বিশেষত অর্গানিক বা বায়োঅর্গানিক কেমিস্টদের যেহেতু ভারতে ফার্মা শিল্প এখন বুমিং।  ফার্মাতে কেমিস্টদের বেতন ও বেশ ভাল-আই টির সমপর্যায়ে।  বায়োলজিস্টদের ডিমান্ড বাড়ছে বায়োটেক শিল্পের জন্য।  ম্যাথেমেটিক্স নিয়ে পড়ে ডেটা সায়েন্সে চলে যাওয়া যেতে পারে-যেখানে এখন খুব ভাল ডিম্যান্ড। একমাত্র বেকার সাবজেক্ট ফিজিক্স।  তবে যারা ইন্টেলেক্টুয়াল পারসিউটে বিশ্বাসী- ব্রেইনের চর্চায় বিশ্বাসী-তাদের জন্য ফিজিক্স ঠিক আছে। ভাল না লাগলে, ফিজিসিস্টদের জন্য ফাইনান্সিয়াল মডেলিং মার্কেট খোলা আছে-যেখানে বেতন আই টির ও অনেক বেশী। তবে খুব বেশী প্যাশনেট এবং নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস না থাকলে ফিজিক্সে না ঢোকায় ভাল।  বা ঢুকলেও কোডিং শিখে আই টিতে সুইচ করা বেটার।  সায়েন্সে যারা ঢুকতে চাইছ-তাদের জন্য একটাই উপদেশ। এখানে শেখার প্যাশন না থাকলে শুধু চাকরি বা ডিগ্রি করার জন্য ঢুকো না। আর মাস্টার মশাই হওয়ার পথ ত খোলাই আছে। তবে দেওলিয়া সরকার আর কদ্দিন শিক্ষকদের বেতন দিতে পারবে, তাই নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। আদৌ, খালি হওয়া শিক্ষক পদ গুলি ভর্তি হবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কারন সরকারের দুরাবস্থা।

রিসার্চ লাইফ নিয়ে রোম্যান্টিসিজমে আমি বিশ্বাসী না। ৯৮% রিসার্চের কাজ  হয় পেপার পাবলিকেশনের জন্য-এগুলো বেকার সময় নষ্ট। এতে না পাবে টাকা, না আছে কেরিয়ার-না সত্যিই কিছু আবিস্কার করবে। সবটাই প্রায় চর্বিত চর্বন। ২% রিসার্চ যা টপ বিশ্ববিদ্যালয়ে বা ভালো ল্যাবে হয়, তাই একমাত্র কাজের। তবে ভারতে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং সায়েন্সের পি এই চ ডিএর জন্য এখন বাজার ভাল যেহেতু ভারতে অনেক মাল্টিন্যাশানাল ল্যাব তৈরী করেছে। রিসার্চকে স্কিল ডেভেলেপমেন্ট হিসাবে নিলে ঠিক আছে।

   ডাক্তার, ফার্মসিস্টদের ব্যপারে কিছু লেখার ক্ষমতা আমার নেই। আমি ওই লাইনের লোক না। তবে ফার্মাসিস্টদের বাজার বরাবর ভাল।

 সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বাইরে ইকনোমিক্সের বাজারদর এখন ভাল। অনেক সংস্থা, ব্যাঙ্ক ইকোমিস্ট রাখে এখন। একাউন্টিং এর বাজার চিরকাল থাকবে।

 আর্টস নিয়ে যারা পড়তে ইচ্ছুক-তাদের জন্য ও অনেক পেশাদারি বাজার খুলেছে। আইনজ্ঞদের বাজার কোনদিন যাবে না-তবে ল এর পেশাতে ২% উকিলের হাতে ৯৮% বাজার। বাকিরা বেকার।  এর বাইরে হিউমান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এবং পাবলিক রিলেশনের ডিমান্ড ও বাড়ছে। মার্কেটিং , বিজ্ঞাপনের কাজে ডিমান্ড বাড়তেই থাকবে। তবে মিডিয়া সংক্রান্ত সাংবাদিকতার পেশাটা আর নেই। ওখানে না আছে মাইনে, না চাকরির নিশ্চয়তা। মিডিয়াতে নেশা থাকা ভাল, পেশা করলে জীবনে নিশ্চয়তা নেই।

 আরেকটা গুরুত্বপূর্ন কথা হচ্ছে-এই চার বছরের বিটেক ডিগ্রির পরে কেরিয়ার থেমে গেলে মুশকিল আছে। চাকরির বাজারে, পেশাদারি ক্ষেত্রে  সারাজীবন শিখে যেতে হবে। শেখার কোন শেষ নেই।  কোন নতুন চাকরিতে ঢুকলে কোম্পানি ব্রান্ড, মাইনের পাশাপাশি, সব থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ন ফ্যাক্টর হওয়া উচিত, নতুন কি কি স্কিল শেখার স্কোপ আছে। কারন মাইনে, কোম্পানী-ক্যাপিটালিজমে এইসব অনিত্য। নিত্য একমাত্র স্কিল, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা।

 যাইহোক আমি যেভাবে জীবনকে দেখি, সেভাবে যে সবাইকে দেখতে হবে তার কোন মানে নেই।  জীবনে যে কোন উদ্দেশ্য থাকতে হবে তার ও কোন মানে নেই। কেও কবিতা লিখে, গান গেয়েও জীবন কাটাতে পারে। মোদ্দা কথা জীবনের যেহেতু কোন পরম উদ্দেশ্য নেই, জীবনটাকে নিরোগ রেখে উপভোগ করাটাই সব থেকে বুদ্ধিমানের কাজ। আর সেটা করতে গেলে টাকা ছাড়া উপায় নেই। তাই চাকরি বাকরি ধান্দার একটা গল্প দিলাম।









1 comment:

Unknown said...

Science Research niye apnar comment ta mante parlam na...Ha manchi ekjon science researcher kokhono IT professional der moto salary payna...but scientific research na hole IT industries er eto romromao thakto na...ar paper publish kora holo ekta highest scientific accomplishment ...jara dinrat amnobik porisrom ar sacrifice kore research kore tader kache paper publication e holo sobtheke boro tangible outcome...ar paper publishing kajtio khub sohoj kaj noy..tai ei kajtike "chorbito chorbon" bole generalize ba choto korben na plz..kono kichu abiskar korata holo sompurno relative bapar...apnar kache ja worthless, ekjon scietist er kache seta hoyto a small but important contribution to science... ar boro scientist/professor hole jekono job er theke seta anek besi rewarding ar sob job er theke SOMMANJONOK...accomplished scientist can get job anywhere in the world..so sob kichuke taka diye bichar korben na plz,..