কিছুদিন যাবৎ তৃনমূল এবং কংগ্রেসের দিল্লীর নেতৃত্ব গোঁজ পার্থীদের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন। মমতা লিখছেন, সিপিএম বিরোধি ঝড়ে তারা উড়ে যাবেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়ত তাই হবে-কিন্ত কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা হবে না-পশ্চিম বঙ্গে গণতন্ত্রের স্বার্থেই তা হতে দেওয়া উচিত না। সিপিএমের ওপর তৃনমুলের প্রায় ৮০-১০০ টা সিটের এডভ্যান্টেজ আছে। সুতরাং ৫-৬ টি সিটে গোঁজেদের সমর্থন করলে মোটেও সিপিএমের সুবিধা কিছু হবে না। কিন্ত পশ্চিম বঙ্গের গণতন্ত্রের জন্যে তা অসীম দরকার।
প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন, তৃণমূলে আভ্যন্তরীন গণতন্ত্র বলতে কিছু নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদ্রোহের কারন, স্থানীয় পার্থী না দিয়ে, মমতা ঘনিষ্ঠ স্নো পাওডার মাখা সৌখিন তৃনমূলি- বা কোন কোন ক্ষেত্রে দুর্নীতি গ্রস্থ নেতাকে টিকিট দিয়েছে তৃণমুলি হাইকম্যান্ড। এবং এর মানে হলে, তৃনমূল একটি কেন্দ্রীয় টপ ডাউন এপ্রোচ চাইছে-যা গণতন্ত্রের জন্যে , ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরনের জন্য অত্যন্ত বাজে।
আমরা দুটি উদাহরন নিয়ে চর্চা করি ব্যাপারটা বোঝার জন্যে।
প্রথমে জলঙ্গিতে আসি। এখানে সিপিএম পদ্মা ভাঙার সব ঠিকেদারি টাকা এমন খেয়েছে-যে তারা হারবেই। সিপিএম নেতৃত্ব কিন্ত প্রাত্তন দুর্নীতিগ্রস্থ বিধায়ক- যিনি এবং তার পরিবার রাস্তার দুধারে তিন তালা প্রসাদ তুলেছেন জলঙ্গী বাজারের অদূরে, তাদের তাড়িয়ে নতুন মুখ স্কুল শিক্ষক আব্দুল রজ্জাক কে এনেছে। যিনি স্থানীয়-খুব জনপ্রিয় না-কিন্ত দুর্নীতির ধারে কাছে নেই।
আর কংগ্রেস তৃনমুলি জোট কি করল? তারা সোমেন মিত্র ঘনিষ্ঠ ইদ্রিস আলি, যিনি কোলকাতায় থাকেন-তাকে মাথার ওপর চাপাল। মনে রাখবেন, জলঙ্গিতে তৃনমূলের পঞ্চায়েত মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখতে হয়।
কে এই ইদ্রিস আলি? ইনি হচ্ছেন সেই হনু, যিনি তসলিমাকে কলকাতা থেকে তাড়ানোর জন্যে মূসলমানদের উস্কেছিলেন। এবং দাঙ্গা লাগানোর জন্যে পরে গ্রেফতার হন এবং তার জন্যে কংগ্রেস তাকে তাড়াতে বাধ্য হয়।
আর গোঁজ পার্থী কে? অধীর সমর্থিত সামসুজ্জোহা বিশ্বাস। তিনিই জলঙ্গীতে কংগ্রেসের মুখ।
কে এই সামসুজ্জোহা বিশ্বাস? গত দশ বছরে অন্তত ২৫ জন কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছে সিপিএমের হাতে এই জলঙ্গীতে। এখানে তৃণমূল ছিল না-এই সামসুজ্জোহা বিশ্বাসের নেতৃত্বেই মানুষ লড়াই করেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে এই জলঙ্গিতে।
এবার আপনারাই বলুন, আপনি যদি সিপিএম বিরোধি হন, তৃনমূল কংগ্রেসের চাপানো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজ নেতা কোলকাতার ইদ্রিস আলিকে ভোট দেবেন না সামসুজ্জোহা বিশ্বাসকে ভোট দেবেন? যিনি বিগত কয়েক দশক ধরেই সিপিএম অত্যচারের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন।
এবার সাগরদিঘিতে দেখুন। এখানে তৃনমূল পার্থী সুব্রত সাহা। যিনি সাগরদিঘির না। থাকেন জলঙ্গিতে। টিকিট পাওয়ার জন্যে কংগ্রেস ছেড়ে তৃনমূলে। সাগরদিঘিতে তৃণমুলের একটাও পঞ্চায়েত নেই। এখানে গোঁজপার্থী কংগ্রেসের আমিনুল ইসলাম। যিনি বহরমপুরে থাজলেও সংগঠক হিসাবে সাগরদিঘির রাজনীতির সাথে জড়িত। এখানে তিনিত ভোট পাবেন ই!
মনে রাখবেন এই লড়াই টা সিপিএম বনাম তৃণমূলের লড়াই না। লড়াই টা সিপিএমের পাটিকেন্দ্রিক ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে মানুষের জনবিদ্রোহ। এই লড়াই গণতন্ত্রের দাবিতে লড়াই।
কিন্ত মমতা টিকিট বেলানোর ক্ষেত্রে প্রমান করেছেন, গণতন্ত্র না, ফ্যাসিস্ট একনায়কতন্ত্রেই তার আস্থা বেশী। তাই স্থানীয় লোকেদের কথা, যারা তার নিজেদের দলের-তাদের কথাই শোনার প্রয়োজনবোধ করেন না। তিনি কি করে শুনবেন অন্য স্থানীয় লোকেদের কথা ?
সুতরাং মমতার ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দরকার। বোঝানো দরকার লড়াই টা মমতা বনাম সিপিএম না-লড়াই টা গনতন্ত্রের জন্যে। স্থানীয় মানুষের দাবী-ভাষাকে প্রতিষ্ঠার জন্যে। গোঁজ পার্থীরা জিতলে মমতা বুঝবেন, পশ্চিম বঙ্গের অধিশ্বর তিনি নন-জনগন। এবং জনগনের কথা শোনাটাই গনতন্ত্র। আর নিজেদের পেয়ারদোস্তদের জোর করে স্থানীয় লোকেদের মাথাতে বসানো হচ্ছে ফ্যাসিজম
No comments:
Post a Comment